এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব -০৭

#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#সপ্তম_পর্ব

মিথীলা কে দেখে অবাক হয়ে যায় সাফোয়ান তাও আবার কেমন করে তাকিয়ে আছে।

– আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তা সাথের মেয়েটা কে তোমার ছোট বোন বুঝি?

সানাকে ছোট বোন বলায় সানা হা করে তাকিয়ে থাকে। ভিতরে ভিতরে রাগে ফেটে যায় সে। নিজের জামাইর বোন ডাকে কি বেক্কল মহিলা। সাফোয়ানের মিথীলার করা সব অন্যায়ের কথা মনে পরে যায়।

– না মিট মাই লাভলি ওয়াইফ সি ইজ সানা।

মিথীলা এবার জোরে হেসে ফেলে সাফোয়ানের কথা শুনে। মিথীলার হাসির মানে কেউ বুঝতে পারছেনা৷

– আরে মজা কইরো না,মনে হয় ছ্যাকা খেয়ে তুমি পাগল হয়ে গেছো এইটুকু বাচ্চা মেয়েকে বউ বলছো।

এবার বুঝা গেলো যে মিথীলা সানা আর সাফোনের বিয়ের কথা বিশ্বাস করে নাই।

– এইযে আন্টি আপনি বুড়া দেখে সবাইকে বাচ্চা ভাববেন স্বাভাবিক। আর এমন ডা*য়ে*নীর মতো হাসছেন কেন। আপনার হাসি কত ভ*য়*ং*কর সবাই ভয় পাবে তো।

মিথীলার হাসি হাসি মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। চোখ মুখে দেখা গেলো রাগের আভাস। এবার রেহানা আর সাফোয়ান দুইজন হেসে ফেললো। সানা যে মিথীলা কে আন্টি ডাকবে সবার ভাবনার বাহিরে ছিলো৷

– সাট আপ ইডিয়েট মেয়ে তুমি জানো আমি কে?

– সরি আন্টি আমি জানিনা আপনি কে বাট আপনি কি ভুলে গেছেন আপনি কে?আল্লাহ এটা স্বাভাবিক আন্টি বয়সের সাথে সাথে মানুষের স্মৃতি শক্তি লোপ পায় শুনেন নাই?

সানা একটার পর একটা অপমান মিথীলা কে করেই যাচ্ছে৷ সানাকে কেউ বাচ্চা ডাকলে সানার ভালো লাগেনা একদম।রাগে কি বলে সে নিজেই বুঝতে পারেনা।

– সানা চুপ থাকো, চলো আমাদের লেট হয় যাচ্ছে।

– সাফোয়ান আজ রাতে আমার সাথে দেখা করো কথা আছে অনেক।

– কেনো তোমার সেই সুন্দর বড়লোক হাসবেন্ড কই যে তাকে রেখে আবার আমার সাথে কথা আছে?

– এই আন্টি আমার বর আপনার সাথে কোথাও যাবেনা। এইযায়গা থেকে চলে যান। এই আপনি তাড়াতাড়ি চলুন তো এই পচা বুড়া আন্টির সাথে আর কথা বলতে হবে না।

– সিরিয়াসলি তুমি বিয়ে করে ফেলছো তাও আবার এইরকম কার্টুন কে?

মিথীলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সাফোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সাফোয়ান এতোদিন পরে নিজের ভালোবাসার মানুষ ক্র দেখে তার মধ্যে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কি উত্তর দিবে সে। সানা তার স্ত্রী এইবার সানা যেমনই হোক। সানাকে অপমান করা মানে তাকে অপমান করা। অন্যদিকে মিথীল

– মাইন্ড ইউর টাংগ মিথীলা সানা আমার স্ত্রী ভালোভাবে কথা বললে বলবা আচ্ছা থাক দরকার নাই। আমার স্ত্রী আবার যার-তার সাথে কথা বলেনা। এটা স্টেটাস এর সাথে যায়না আমাদের। গার্ডস রাস্তা পরিষ্কার করো আমরা যাবো৷।

অপমানে মিথীলার চেহারা লাল হয়ে যায়। সাফোয়ান তাকে এই প্রথম এভাবে অপমান করলো তাও আবার নতুন আসা এই মেয়ের জন্য। যেই সাফোয়ান তার উপর জোরে আওয়াজ করে কোন কথা বলে নাই আজ সে এইভাবে বলছে। মিথীলা রাগি চোখে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। মনে হচ্ছে সানাকে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিবে। মিথীলার রাগী চোখ দেখে সানা ভেংচি মারলো।

– তোমাকে আমি দেখে নিবো সাফোয়ান?

– বাহ মিথীলা তুমি ভুলে যাচ্ছো এই সাফোয়ান কে? আইল ফিল পিটি ফর ইউর হাসবেন্ড যে তোমার মতো বউ পেয়েছে।

– সাট আপ সাফোয়ান।

– এই আন্টি আপনি চুপ থাকুন।

সানা রাগে সাফোয়ান কে টেনে ওখান থেকে চলে গেলো। সাফোয়ান মনে মনে একটু শান্তি পেলো। আর যাইহোক এই মিথীলার থেকে যেভাবেই হোক দূরে থাকতে হবে। পাস্ট ইজ পাস্ট। মিথীলা তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো সে তা ছাড়ে নাই। তাই এখন নিজের ফিউচারে ফোকাস করবে।

– সানাকে নিয়ে রেহানা তুমি বাসায় যাও আমার কাজ আছে একটু।

– না আমি একা যাবোনা আপনি ও চলুন আমার সাথে ।

– আমার কাজ আছে সানা জিদ কইরো না৷

– অই ডা*য়ে*নী আন্টির থেকে দূরে থাইকেন। অই আন্টির ভাইবস আমার একটু ও ভালো লাগে নাই।

সানা রেহানার সাথে গাড়িতে করে চলে গেলো। সাফোয়ান গার্ডস কে কিছু ইশারা দিয়ে সেও মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে বেক সীটে বসেছে সানা,আর সামনের সীটে রেহানা। কুদ্দুস গাড়ি ড্রাইভ করছে আর রেহানা কে দেখে যাচ্ছে। রেহানাও চুপি চুপি চোখে কুদ্দুস কে দেখে যাচ্ছে। সানা জিনিসটা খেয়াল করা শুরু করলো। কিছুক্ষন সানা কুদ্দুস আর রেহানার কাজকর্ম খেয়াল করে তাদের উদ্দেশ্য করে বললো।

– আপনারা এভাবে চোখ লুকোচুরি খেলছেন কেনো? আপ্নাদের কথা থাকলে মুখে বলুন।

– আব কই ভাবিজান আমরা কি করলাম।

– আমি দেখচতেছি আপ্নারা গাড়ির লুকিং গ্লাস ভুল ডাইরেকশনে রেখেছেন।

– ভাবিজান প্লিজ এসব আবার ভাইজান রে বইলেন না।

– আব আচ্ছা তবে আমার এক শর্ত আছে।

– কি শর্ত ভাবিজান বলুন আমি আপনার সব শর্ত মানতে রাজি।

সানার কথায় অনেক ভয় পেয়ে যায় কুদ্দুস। কুদ্দুসকে এইভাবে দেখে নিজের হাসি থামাতে পারেনা রেহানা। রেহানার প্রচুর হাসি পাচ্ছে কুদ্দুস কে ভয় পেতে দেখে। এমন সাস্থ্যবান ব্যাক্তিও কাউকে ভয় পায়।সানাও এটার খুব ভালো সুযোগ উঠালো।

– বেশি আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে বাসায় যাওয়ার আগে৷ অনেকদিন আমি ফুচকা খাইনা।

– ভাবিজান বাহিরে খাওয়া লাগবে না,আমি বরং সব কিছু কিনে এনে দিবো রেহানা আপনাকে বানিয়ে দিবে।

কুদ্দুসের কথায় রেহানাও সম্মতি জানালো। কারন বিপদের হাত- পা নাই তাছারা সাফোয়ানের পারমিশন ছাড়া এভাবে রাস্তায় খাওয়ানো ঠিক হবেনা এই ভয় দুজন বললো। কিন্তু সানা তো আর কথা শুনার মতো বাধ্য মেয়ে না। তাই তার সোজা কথা ফুচকা না খাওয়ালে সব বলে দিবে। বাধ্য হয়ে বেচারা কুদ্দুস রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে ফুচকা খেতে নিয়ে যায় সানা আর রেহানা কে। ফুচকা ওয়ালার সামনে গিয়ে বলে।

– মামা অনেক ঝাল দিয়ে আর বেশি টক দিয়ে দুই প্লেট ফুচকা দিবেন।আর রেহানা আপু আর ভাইয়া আপ্নারা ঝাল খাবেন কি না?

সানা একাই দুই প্লেট তাও ঝাল দিয়ে নিচ্ছে।যদি সানা অসুস্থ হয়ে যায় কোনো ভাবে তাহলে সাফোয়ান কুদ্দুস কে যে কি করবে৷ আর বেচারা কুদ্দুস পরছেও চিপায়৷ মনেমনে কুদ্দুস আওড়লে।

– আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়৷

– কিছু বললেন ভাইয়া?

– আরে না ভাবি,মামা আমাদের জন্য ও দুই প্লেট ঝাল কম দিয়ে বানান।

ফুচকা নিয়ে মনের আনন্দের খেয়ে যাচ্ছে সানা। নাক মুখ লাল হয়ে আসছে ঝালে তার। তবুও খাওয়া থামাচ্ছেনা সে। রেহানা আর কুদ্দুস খাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। এইদিকে দুই প্লেট ফুচকা শেষ করে আবার এক প্লেট নাগা মরিচের বেশি করে দিয়ে বানালো। ৪ টা ফুচকা খাওয়ার পর নাক দিয়ে চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করছে সানার। টিশু দিয়ে নাক মুচ্ছে আর খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছে৷ সব গুলো ফুচকা ফিনিশ করে দোকান থেকে পানি নিয়ে খেলো। সানাকে ঝালে খুব ভালোভাবে পেয়ে বসেছে।

– কুদ্দুস ভাইয়া আমি বাসায় যাবো।

কুদ্দুস আর রেহানার খেয়াল হলো সানার কথা৷ সানার দিকে তাকিয়ে দেখে সানার চেহারা লাল হয়ে আছে ঠোট হাল্কা ফুলে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে। সানা ঝালে ফোপাঁতে লাগলো। কুদ্দুস বিল দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। সানা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে ঝালে দুনিয়া ঘুরতেছে তার। কেনো যে এতো ঝাল খেতে যায় সে৷ বাড়িতে গিয়ে দেখে অলরেডি সেখানে সাফোয়ান বসে আছে। ওদের আসতে লেট হয়ে যাওয়ায় তিনজন চোরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। সানা দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।

– কুদ্দুস আর রেহানা আপনাদের আমি পরে দেখছি আগে আসোল জন কে দেখে আসি।

সাফোয়ান গিয়ে দেখে সানা পানি খাচ্ছে। আশেপাশে কিছু খুজছে৷ সানাক্ব টেনে নিজের দিকে ঘুরালো সাফোয়ান।

– আমাকে মারার হলে বা বকার হলে পরে বইকেন। আগে কিছু করেন আমার ঝাল লাগছে প্রচুর হেল্প মি।
সাফোয়ান সানার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি ঝালে কেমন করছ,ফোলা লাল ঠোট কাপছে। সাফোয়ান তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সানা সাফোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সাফোয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে সানার দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক ফেলত্ব ভুলে যায়। সানা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। সানাকে চমকে দিয়ে সাফোয়ান….

#চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here