#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৫
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
নিজের রুমে আসতে নিলেই বিভোরের সাথে মুখোমুখি হতে হয় স্পর্শীতার। খেয়াল করে বুঝলো মাত্রই ফ্রেশ হয়েছে ও। স্পর্শীতার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। স্পর্শীতা হালকা কেশে বলল,”কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এইরকম হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকা লাগবে না।”
স্পর্শীতার এহেন কথায় বোকা বনে গেলো বিভোর। মেরুদণ্ড সোজা করে বলল,”হাহাহা!হাও ফানি আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি?আমি তোমার পিছনের সেই প্রজাপতির দিকে তাকিয়ে আছি আর তুমি কিনা ভাবো তোমার দিকে হাহাহা!”
কিছুটা লজ্জিতবোধ করলো স্পর্শীতা। কিছু না বলেই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো। বিভোর প্রশ্ন করতে যেয়েও পারলো না অতঃপর গুনগুন করতে গান গাইতে গাইতে চলে গেলো।
__________
রুমে ঢুকেই ঠেস দিয়ে দরজা বন্ধ করলো স্পর্শীতা। লাগেজ থেকে নিজের টাওয়াল নিয়ে শাওয়ার নিতে গেলো। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেলো। আগেই এই বারান্দাটা খেয়াল করেছিলো কিন্তু ভিতরে ঢুকে নি একদিনের আশ আজই মিটিয়ে নিলো। বারান্দায় দেখতে পেলো অনেকগুলো গাছ আরেকটা দোলনাও আছে। দোলনাটা অদ্ভুত সুন্দর করে লাইটানিং করা বিভিন্ন নকল ফুল দিয়ে সাজানো। লাইটিংটা অবশ্য রাতের বেলায়ই জ্বলে। স্পর্শীতা গুনগুন করতে করতে রেলিং ধরে দাড়ালো। এই বারান্দা থেকে দূরের অনেক কিছুই দেখা যায়। বিভোরদের বাসা একদম রাস্তার সামনে না। বিভোরদের বাসাটার পাশে বাসা খুব কম মানে এক দুটি আছে। জায়গাটাও বেশ সুনসান/নিরব পরিবেশের মধ্যে।
স্পর্শীতার গাছগুলোতে হাত বুলালো। হুট করে মাথায় এলো বিভোর কি প্রকৃতি প্রেমিক?ঠিক ওর মতো?স্পর্শীতা হেসে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলো।
বিছানায় রাখা একটা মিষ্টি রঙের শাড়ি। প্রথমে এই শাড়িটা ওর চোখে পড়েনি মাত্রই পড়লো। ভাবলো ওর শাশুড়ি নিশ্চয়ই রেখে গিয়েছিলো ও নিজেই খেয়াল করে নি। শাড়িটি পড়ে মায়াদের রুমে গেলো। ওরা এখনো আগের মতো বসে গল্প করছে এইবার মানুষ দুইজনের থেকে চারজন হয়েছে। সাদাফ আর বিভোরও ওদের সাথে যোগদান করেছে। স্পর্শীতাকে দেখে সবাই হা হয়ে গেলো। বিশেষ করে বিভোর। ওর আঁখি জোড়া যেনো সরছেই না এই রমনীর থেকে। সাদাফ বিভোরের কানের কাছে এসে ধীরে বলল,”তাকিয়ে থেকো না বাছা!নজর লেগে যাবে তো ভাবীর দিকে।”
সাদাফের কথায় বিভোরের ধ্যান ভাঙে। গরম চোখ করে সাদাফের দিকে তাকালো। সাদাফ চোখ টিপ মেরে সরে এলো নাহলে আজ আর ওর রক্ষা নেই!
বিভোর স্পর্শীতার থেকে চোখ সরিয়ে গম্ভির হয়ে বসলো। মায়া আর তানহা হেসে বলল,”ভাবী তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নতুন নতুন বউ বউ!”
স্পর্শীতা এক গাল হেসে ছোট আকারের সোফায় যেয়ে বসলো। ওরা আগের ন্যায় আবার গল্প করতে লাগলো। তানহা আর মায়াও স্পর্শীতার সাথে বসে ওর সাথে গল্প করছে। এরই মাঝে নিচের কলিংবেল বেজে উঠলো স্পর্শীতার উঠতে নিলে মায়া বাঁধা দিয়ে বলে,”তোমার উঠা লাগবে না রুমা আপু দরজা খুলে দিবে।”
স্পর্শীতা জবাবে মাথা নাড়িয়ে ফের বসলো। হুট করে রুমা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলে,”আপামনি আপনাগো চাচা,চাচি,দাদি আইছে!”
মায়া ভ্রুকুচকে বলল,”ওহ!আমরা আসছি তুমি যাও।”
রুমা যেতেই বিভোরের উদ্দেশ্যে মায়া বলে উঠলো,”ভাইয়া তুমি ভাবীকে নিয়ে যাও আমি সাদাফ ভাই আর তনু আসছি।”
বিভোর কপাল কুচকে বলে,”আমি?আমি কেনো?তোরা ওকে নিয়ে নিচে আয় আমি একা যাই!”
মায়ার সাথে বিভোর কথায় না পেরে বাধ্য ছেলের ন্যায় স্পর্শীতাকে নিয়ে নিচে যায়। স্পর্শীতা নিরব দর্শক ছিলো। নিচে যেতেই একজন বয়স্ক মহিলার কথা শোনা যায়
“শেফা!বিভোরের পাশে মাইয়াডা কেডায়?”
শাশুড়ির আপায়্যনএ ব্যস্ত শেফা আক্তার। কাজ বাদ দিয়ে বললেন,”বিভোরের বউ স্পর্শীতা!”
রোকসানা আমিন অবাক হওয়ার ভান ধরে বলেন,”ওমা!আমি তো ভাবছিলাম ছেলেরে আবার বিয়া দিবি এখন দেখি আগের বউরে আইনা রাখছোছ তা মাইয়া এদিকে আহো একটু দেখি তোমারে।”
শেষের কথাটা স্পর্শীতার উদ্দেশ্যে বলে উঠেন রোকসানা আমিন। স্পর্শীতা ধীর পায়ে উনার সামনে যায়। উনি স্পর্শীতাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে বলেন,”বউ মানুষের মাথায় ঘোমটা না কে?জানো না শশুড় বাড়ির মানুষের সামনে আইলে ঘোমটা দিতে হয়।”
পাশ থেকে বিভোরের ফুপি বলে উঠলো,”আহা আম্মা!বাদ দেন না ছোট মানুষ!”
স্পর্শীতা লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো।বিভোর ভ্রুজোড়া কুচকে একবার দাদি ও স্পর্শীতার দিকে তাকালো। স্পর্শীতা দ্রুত মাথা ঘোমট আদিতে নিলে বিভোরের ফুপি বলে উঠেন,”থাক মা ঘোমটা দেওয়া লাগবে না আম্মা এখনো পুরান আমলে বাস করছ উনার এইসব বিষয়ে ধারণা নেই। তুমি বসো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
স্পর্শীতা বসলো বিভোরের চাচি স্পর্শীতার থুতনি ধরে তার দিকে তাকিয়ে বলে,”বাহ!বউমা দেখি ভারী মিষ্টি!জানো আমি কে?তোমার চাচি শাশুড়ি।”
স্পর্শীতা কিছু বলল না। বিভোরের জাস্ট অসহ্য লাগছে সব!ও বুঝতে পারছে না স্পর্শীতাকে ওরা এমন নিখুঁত ভাবে দেখছে যেনো সাথে করে কিনে নিয়ে যাবে।বিভোরের ফুপি বিভোরকে নড়চড় করতে দেখে বলেন,”কিরে বিভোর!বউকে নিয়ে যেতে এতো তাড়া দেখাচ্ছিস কেনো!”
বিভোর বিরক্তিকর চাহনি তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে,”কিছুই না ফুলিফুপু!”
রোকসানা আমিন নাতনি ও নাতনির বউয়ের দিকে তাকিয়ে শেফা আক্তারকে বলেন,”রান্না শেষ নাকি শেফা?”
শেফা আক্তার রান্নাঘর থেকে খুন্তি চালাতে চালাতে বললেন,”না আম্মা!বাকি এখনো।”
“তয় বাকি রান্না নাত বউ করবো তুমি রাইখা এইখানে আহো।”
রোকসানা আমিনের এইরকম কথায় সবাই চমকালো। রোকসানা আমিন ভাবনাভাবান্তর ছাড়া পান চিবুচ্ছেন। বিভোরের ফুপি বলে উঠেন,”আম্মা এইসব কি বলছেন?নতুন বউ দিয়ে রান্না করাবেন।”
রোকসানা আমিন রেগে বললেন,”কিয়ের নতুন বউ হ?আমাগো সময় বিয়ার দিনই পারলে শাশুড়ি রানতে পাঠায়!আর ওর কি কাল বিয়া হইছে যে রানতে পারবো না?আরো এক বছর আগে হইছে।”
মায়ের কথায় আর কথা বলতে চেয়েও পারলেন না ফুলি আমিন। শেফা আক্তারও কথা বাড়ালেন না৷ তিনি স্পর্শীতার কাছে এসে আস্তে করে বললেন,”কিচেনে আসো আমার সাথে!”
স্পর্শীতা উঠে ধীর পায়ে উনার আদেশ মতো রান্নাঘরে গেলো। শেফা আক্তার গম্ভির সুরে বললেন,”আজকের বাকি রান্না তুমি করবে তোমার দাদি শাশুড়ির কথা অনুযায়ী!”
স্পর্শীতা মিনমিন স্বরে বলল,”কি রান্না করবো?”
“রুমা বলে দিবে যা যা রান্না করতে হবে যদিও সব রান্না শেষ দুই একটা আইটেম বাকি রান্না।”
বলে বড় বড় পা ফেলে রান্নাঘর প্রস্থান নিলেন। স্পর্শীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমা দিকে তাকায়। রুমা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,”দাড়াও সব জিনিস বাইর কইরা দেই নতুন ভাবী!”
বলে সব প্রয়োজনীয় জিনিস বের করলো সাথে কি বানাতে হবে তাও বলল। বাধ্য হয়ে স্পর্শীতা খুন্তি নাড়িয়ে সব বানাতে লাগলো। না বানালে তো আবার তার দাদি শাশুড়ি খেঁপবেন। রুমা সব জিনিস স্পর্শীতাকে দেখিয়ে দিয়ে হল রুমে চলে গেলেন। স্পর্শীতা হালকা ঝুঁকে দেখলো সবাই হল রুম থেকে চলে যাচ্ছে। মনে হয় উপরের ঘরে গল্প করতে যাচ্ছে।
সবাই যেতেই স্পর্শীতা নিজের কাজে মন দিলো যদিও যেইগুলা বানাতে বলেছে এইগুলা ও বানাতে পারে। নিজের মায়ের কাছে সবই শিখেছে। মাঝে মাঝে যখন তার মা তার নানাবাড়ি যেতো তখন টুকটাক খাবার ও’ই বানাতো ওর ভাই আর আব্বুর জন্য। আজ সবাইকে খুব করে মনে পড়ছে স্পর্শীতার। কিন্তু কি?চাইলেও তো যেতে পারবে না। স্পর্শীতার ভাবনার মাঝে কেউ একজন রান্নাঘরে ঢুকলো…….
#চলবে
[