#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৬
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
কেউ যে স্পর্শীতার অজান্তে রান্নাঘরে ঢুকলো তা স্পর্শীতা টের পেতেই পিছনে ঘুরলো। অবাক হয়ে চেয়ে রইলো বিভোরের পানে। ও এইখানে কেনো?জিজ্ঞেস করবে বলে যেই না মুখ খুলবে বিভোর মুখ বেকিয়ে বলে,”পানি খেতে এসেছি।”
স্পর্শীতা উত্তরে কিছু না বলে পুনরায় রান্না করতে লাগলো। বিভোর পানি খেতে খেতে স্পর্শীতাকে খোঁচা মেরে বলে,”রান্না করতে পারো না তো রান্না করো কেনো?বুঝেছি নিজেকে সবার চোখে অনেক ভালো সাজাতে চাও তাই তো?”
স্পর্শীতা শুনেও না শোনার ভান করে বসে রইলো। যা বিভোরের কাছে অনেক অপমানজনক। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”উত্তর নেই তাই না?নাকি উত্তর দিতে ভয় পাও।”
স্পর্শীতা পিছনে মুখ না ঘুরিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল,”এমন কোনো প্রশ্নই ছিলো না যে উত্তর দিতে ভয় পাবো।”
বিভোর বলল,”তো উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”
স্পর্শীতা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,”প্রয়োজনবোধ করছি না।”
বিভোর বুঝতে পারলো মেয়েটা অনেক ঘাড়ত্যাড়া। ও কিছু না বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়। স্পর্শীতা অতি মমনোযোগ দিয়ে রান্না শেষ করে। সব পরিবেশন করতেই যাবে রুমা এসে বাঁধা দিয়ে বলে,”নতুন ভাবী তুমি রাখো আমি নিয়া যাইতাছি।”
স্পর্শীতা কিছু না বলে সরে আসে। রুমা খাবার পরিবেশন করে। স্পর্শীতা বলে,”আমি ডেকে আনছি সবাইকে!কোন রুমে তারা?”
রুমা স্পর্শীতাকে বলল,”তোমার যাওয়া লাগবো না ওরা নিজেই আসতাছে। আমি কইয়া আসছিলাম আসার সময়।”
“আচ্ছা।”
সবাই নিচে এসে টেবিলে বসলো। তানহা,বিভোর,সাদাফ,মায়া আর ও ওরা পরে খাবে ভেবে ঠিক করেছে। স্পর্শীতা সবাইকে খাবার বেরে দিলো। শেফা আক্তার ও রোকসানা আমিন গম্ভির হয়ে বসে আছেন। দুইজনে এক লোকমা পোলাও মুখে দিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলেন। স্পর্শীতার শশুড়ও বাহির থেকে এসে ওদের সাথেই খেতে বসেছেন। উনি মুখে দিয়েই প্রশংসা করলেন ওর। বললেন,”বাহ অনেক মজা হয়েছে!এইরকম খাবার কতো বছর পর খেলাম।”
স্পর্শীতা জবাবে মুচকি হাসে। ফুলি আমিনও খাবার খেয়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে দেন কিন্তু স্পর্শীতা রোকসানা আমিন আর শেফা আক্তারের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য অধির আগ্রহে বসে আছে। শেফা আক্তার মুখ খুলেন এইবার। তিনি গম্ভির সুরে বলেন,”ভালো হয়েছে।”
এইটা শুনেই যেনো স্পর্শীতার কলিজায় পানি ফিরে এসেছে ও এইবার রোকসানা আমিনের দিকে তাকায়। ওর তাকানো দেখে উনি বলেন,”ভালোই হইছে!”
স্পর্শীতার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু সবার সামনে যে নাঁচতে পারবে না সে। সবার খাওয়া শেষ হতেই। বাকিরা খেতে বসে। বিভোর বাদে সবাই স্পর্শীতা প্রশংসা করতে থাকে। মায়া বিভোরকে চুপ দেখে বলে,”ভাইয়া কিছু বল!”
“কি বলবো?”
“ভাবী বল খাবার কেমন হয়েছে!উনি কত কষ্ট করে আমাদের জন্য বানিয়েছে।”
বিভোরের অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্পর্শীতার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসির রেখা টেনে বলে,”ভালো হয়েছে!”
স্পর্শীতা বলল,”ধন্যবাদ।”
বলে নিজের খাবার খেতে থাকে। সবাই খাওয়া শেষে উঠে যায়। ওরা শুনেছে বিকালে ওদের কাজিনরা আসবে।
~এদিকে~
“মেয়ের শশুড়কে ফোন দিয়ে বলো যেনো কাল পরশু স্পর্শীতাকে আর বিভোরকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিক!”
তেজ দেখিয়ে কথাটা বললেন তাফিদা বেগম নিজের স্বামীর উদ্দেশ্যে। আফতাব সাহেব বলেন,”স্পর্শীতা গিয়েছে মাত্র একদিন হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি বললে খারাপ ভাববে না?”
তাফিদা বেগম উত্তরে রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে যান। উপায় না পেয়ে আফতাব সাহেব তাহসীন সাহেবকে ফোন দেন। কিছুক্ষন কথা বলে ওদের দুইজনের আসার কথা বললেন। উনি বলল,”আচ্ছা ঠিকাছে!পাঠিয়ে দিব ওদের পরশু।”
নিজের মেয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করতেই উনি বলেন ভালো আছে। আফতাব সাহেবের স্বস্তি মিলে তাহসীন সাহেবের কথায়। তিনি ফোন রেখে রাফিদা বেগমকে ডাক দেন। তাফিদা বেগম গম্ভির মুখে এসে বললেন,”কিছু লাগবে?”
“স্পর্শীতার শশুড়কে ফোন দিয়ে বলেছি উনি বলেছে পরশু পাঠিয়ে দিবে ওদের দুইজনকে।”
আফতাব সাহেবের এহেন কথায় তাফিদা বেগম বেজায় খুশি। উনি খুশি মনে চলে যান স্পর্শকে খবর দিতে যে তার বোন পরশুদিন আসছে আর যেনো মন খারাপ না করে থাকে।
৫.
বিকাল হতেই বিভোরের বাকি আত্মীয়রা এসে পড়ে। ওরা এসে প্রথমে স্পর্শীতার সাথে দেখা করে কিছুক্ষন কথা বলে বিভোরের কাছে যেয়ে বলে,”চুপি চুপি বউকে নিয়ে আসলি জানাইলি ও না?”
বিভোর কড়া চোখে নাঈমের দিকে তাকায়। নাঈম ঢোক গিলে বলে,”তোর এই চোখ ভয় পাই না আমি!এমনে তাকাবি না বুঝলি!”
বিভোর আড়চোখে তাকায় কিছু বলে না। স্পর্শীতার সবার মাঝে অনেক অস্বস্তিবোধ হতে থাকে কিন্তু ওরা তো ওরাই স্পর্শীতার সাথে গল্প করতে থাকে। স্পর্শীতাকে বারবার এত নড়চড় করতে দেখে মায়া ওর অস্বস্তিবোধ বুঝতে পেরে বলে,”এসেই তোরা গল্প শুরু করে দিলি?ভাবী তোদের চিনে না আগে তোরা পরিচিত হয়ে নে পরে নাহয় আড্ডা জমা।”
মায়ার কথাও ঠিক ভেবে স্পর্শীতার সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। পরিচয় হওয়ার জন্য হালকা স্বস্তি বোধ করে স্পর্শীতা। সবাই ওকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আর ও বাধ্য হয়ে তার উত্তর দিচ্ছে। এর মাঝেই তার দাদি শাশুড়ির বয়সী একজন মহিলা এসে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,”সর সর নাত বউরে দেহি আমিও।”
সবাই সরে যেতেই উনি স্পর্শীতার পাশে বসে বলে,”ওগো অনেক সুন্দর তুমি!যেমন হুনছিলাম তারথেকেও অনেক মিষ্টি নাম তোমার স্পর্শীতা তাই না?”
স্পর্শীতা উনাকে চিনতে পারে না কিন্তু তবুও বলে,”জ্বী।”
উনি একটা হাসি দিয়ে বলেন,”আমারে চিনো না তাই না?আমি তোমার দাদি শাশুড়ির ছোট বইন।”
স্পর্শীতা এইবার বুঝতে পারে উনি কে। ও বলে,”ওহ।”
উনি কিছুক্ষন স্পর্শীতার সাথে গল্প করে চলে যান। বিভোর বিরক্তি নিয়ে সোফায় বসে আছে। মনে মনে ভাবছে এরা এতো কথা কিভাবে বলে এক একটা বাচাল!”
মনে কথা মনেই রয়ে গেলো কাউকে বলা হলো না। এক পর্যায়ে বিরক্তি শেষ সীমা ছাড়িয়ে যায় ওদের কথা শুনতে শুনতে। ও বুঝে না মানুষের অন্যের ম্যারিড লাইফে এতো নাক গলাতে ইচ্ছে করে কেন?বিভোর নিজেকে শান্ত রেখে মায়াকে ডেকে বলল,”এই টপিক ছাড়া কি আর তোদের কাছে কোনো টপিক নেই?”
মায়া কিছু না বুঝার মতো করে বলল,”মানে?কিসব বলছিস তুই ভাইয়া?”
বিভোর দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”এরা অন্যের ম্যারিড লাইফ নিয়ে কথা বলছে কেন?এই টপিক চেঞ্জ করে কথা বল নাহলে কিন্তু….
বিভোরকে সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতে দিয়ে মায়া বুঝে যায় কি বলতে চাচ্ছে। ও বলে,”আচ্ছা ওয়েট আমি কিছু করছি।”
বলেই ও এসে সবাইকে বলে,”গাইস তোরা কে কে আইস্ক্রিম খাবি?”
সবাই একসাথে হাত উঠিয়ে বলে আমি!স্পর্শীতা ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে রইলো। মায়া হেসে বলল,”ঠিকাছে। আজকে আইস্ক্রিম ট্রিট বিভোর ভাইয়া দিবে।”
এই কথায় যেনো সবাই আরো খুশি হয়ে যায়। সবাই একসঙ্গে বলে উঠে,”ইয়েএ।”
বিভোর বিরক্ত নিয়ে বসে রইলো এখন এই মায়া ওর পজেট খালি করাবে। ওর মন চাচ্ছে পারলে মায়াকে ধরে আছাড় দিতে। নিজের রাগকে যথা সম্ভব সংযত রেখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো
সবাই উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ওরা জানতে চায় সত্যিই কি বিভোর ওদের আইস্ক্রিম খাওয়াবে নাকি। বিভোর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে……..
#চলবে??
[ ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং]