#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৭
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
বিভোর কিছু বলতে যেয়েও বলল না। গম্ভির হয়ে বসে রইলো। স্পর্শীতা একবার আড়চোখে বিভোরের দিকে তাকালো। মনে মনে বলল এই লোক এমন কেনো?কিপটা লোক একটা।
অতঃপর সবার ইচ্ছায় বিভোরকে নিজের টাকায় ওদের জন্য আইস্ক্রিম কিনে দিতে হয়। টাকা খরচ করতে কষ্ট লাগলেও খরচ করতেই হলো নাহলে সবাই ওকে কিপটা ভাববে যে টাকা খরচ করতে চায় না।
.
সবাই তৃপ্তি সহকারে আইস্ক্রিম খাচ্ছে আর বিভোর বাংলার পেঁচার মত মুখ করে আইস্ক্রিম খাচ্ছে। সবাই ওর পকেট খালি করেই ছাড়লো শেষে। সাদাফ বিভোরের মুখ দেখে হেসে বলে,”এমন করে আছিস কেন?পেঁচা একটা!”
বিভোর গরম চোখ করে সাদাফের দিকে তাকায় তা দেখে সাদাফ বলে,”এহ!এমন চোখ করে তাকাইস না ভয় পাই না তোরে আমি!”
বিভোর বলল,”তোকে ভয় দেখানোর জন্য চোখ গরম করি নাই।”
সাদাফ কিছু না বলে হেসে চলে গেলো।
৬.
রাত ১০ঃ০০ টা ছুঁই ছুঁই। সাধারণ দিনে সবাই ৯ঃ০০ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তো কিন্তু বাড়িতে মেহমান আসলে কি তা পারা যায়?তারা তো পারলে ভোর ৫ঃ০০ টা পর্যন্ত জাগিয়ে রাখে। এইবারো তাই সবাই ঘুমে পড়ে যাচ্ছে আর ওরা গল্প করেই যাচ্ছে কিন্তু স্পর্শীতার চোখ ঘুম নেই ও আগ্রহ নিয়ে ভুতের গল্প করতে ব্যস্ত বিভোরের কাজিনদের সাথে। বিভোর বিরক্ত নিয়ে বসে আছে। এরা আর কতো গল্প করবে?ডিনার করে যেই গল্প শুরু করছে মনে হয় না ভোরের আগে ছাড়া পাবে। কিছুক্ষন চুপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,”আচ্ছা আমি আর স্পর্শীতা ঘুমাতে যাই তোরা থাক।”
বিভোরের এক কাজিন (আহি) বলে উঠে,”তোমার যেতে হলে তুমি নাঈমকে নিয়ে যাও ভাবী আমাদের সাথে থাকবে আজ রাত।”
বিভোর বিরক্তি নিয়ে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করলো। শান্ত হয়ে স্পর্শীতার হাত ধরে বলল,”উঠো!”
স্পর্শীতা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে এইখানে ও কিছুই বুঝছে না। বিভোর ফের মৃদু স্বরে বলল,”কি হলো দাড়াতে বললাম না?”
বিভোরের কথায় উঠে দাড়ালো না চুপ করে বসে রইলো। সবাই অবাক চোখে বিভোরের দিকে তাকিয়ে আছে। আরেকবার স্পর্শীতার দিকে। স্পর্শীতার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিভোর রেগে ওকে পাঁজকোলে তুলে নেয়। আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। হা হয়ে বিভোরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। নাঈম বলে উঠে,”বিভোর দেখি বউয়ের আঁচল ছাড়তেই রাজী না।”
ওর কথায় সবাই হেসে কুটিকুটি।
স্পর্শীতাও এইরকম ঘটনায় লজ্জায় পড়ে যায়। ছি ওরা কি ভাববে?স্পর্শীতা বিভোরের বুকে কিল,চিমটি যা আছে সব দিতে থাকে তাও যেনো কোনো লাভ হয় না। স্পর্শীতা আশে পাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে এইখানে কেউ আছে কিনা। কেউ নেই দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। বিভোর ওকে রুমে এসে নামিয়ে দেয়। স্পর্শীতা ক্ষিপ্ত গলায় বিভোরকে বলে,”আজব তো!হঠাৎ কোলে নেওয়ার মানে কি?আমাকে কি কাঠপুতুল পেয়েছেন আপনার হাতের?যেইভাবে ইচ্ছে সেইভাবে চালাবেন।”
স্পর্শীতার কথা ভ্রুক্ষেপ না করে রুমে ঢুকলো। স্পর্শীতা রাগে ফুসফুস করতে করতে রুমে গেলো। স্পর্শীতার ঢুকতেই বিভোর বলল,”সমস্যা কি?সবার সাথে এতো বন্ধুত্ব করতে হবে না।”
স্পর্শীতা ছোট ছোট চোখ করে বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি যার সাথে ইচ্ছে কথা বলল আপনি কে নাক গলানোর?”
বিভোর একবার স্পর্শীতার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে এসে ঝুঁকে বলে,”হাসবেন্ড!তোমার হাসবেন্ড আমি।”
বিভোরের কথায় স্পর্শীতা মুখ ঘুরিয়ে বলে,”এক বছর আগে কোথায় ছিলেন?তখন মনে ছিলো না আপনি আমার হাসবেন্ড!”
বিভোর সরে দাঁড়িয়ে বলে,”তোমার সেটা না জানলেও চলবে ঘুমাতে যাও।”
স্পর্শীতার রাগে গা থরথর কাঁপছে। প্রথমে প্রশ্নের উত্তর দিলো না আবার বলছে ঘুমাতে যাও!হুহ! মনে মনে বিভোরকে কঠিন উপাধি দিলো। মুখে তা বলল না শুধু বলল,”অসম্ভব আমি শুতে পারবো না আপনার সাথে এক বিছানায়।”
বিভোর হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বলে,”এক্টিং করো না। কাল যেইভাবে শুয়েছিলে সেইভাবেই শুবে।”
স্পর্শীতা আমতা আমতা করে বলে,”কাল কোনো উপায় না পেয়ে শুয়েছিলাম।”
বিভোর ভ্রুকুচকে বলে,”আজ ঘুমানোর জন্য কি কোনো উপায় পেয়েছো। আমি কিন্তু আমার বিছানায়ই শুবো এখন তুমি কোথায় শুবা তুমি জানো।”
কথাগুলো বলতে বলতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। স্পর্শীতা কিছুক্ষন চিন্তা করে বিভোরের মাথার পাশের একটা বালিশ আর আলমারি থেকে কিছু একটা বের করে মেঝেতে পেতে শুয়ে পড়ে। বিভোর না পেরে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এই মেয়ে এখন মেঝেতে শুবে?
স্পর্শীতা বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,”হাসছেন কেনো?আমি কি কোনো হাসির কথা বলেছি?”
বিভোর হেসে বলল,”তুমি এখন মেঝেতে শুবা?লাইক সিরিয়াসলি!”
স্পর্শীতা বলল,”আপনার সাথে এক বিছানায় শোয়া থেকে এইটা এক হাজার গুণ ভালো।”
বিভোর ঠোঁট হেসে বলল,”দেখা যাক!”
স্পর্শীতা বিভোরের কথার মানে বুঝলো না চুপ করে রইলো।
প্রায় এক ঘন্টা ধরে ও এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু চোখ লেগে আসলেও একটুর জন্য ভেঙে যাচ্ছে। দুঃখে কান্না পাচ্ছে ওর। এখন না ঘুমালে কালকএ দ্রুত উঠতে পারবে না। উঠতে না পারলে বকাও খেতে পারে তার শাশুড়ির কাছে। আবার কালকে ওর বিভোরের আত্মীয় স্বজনেরা চলে যাবে। রান্নাও তার করতে হবে।কেনো জানি স্পর্শীতার ইচ্ছে করছে নিজের চুল ছিড়তে।
প্রায় আধা ঘন্টা পর স্পর্শীতা ঘুমাতে সফল হয়।
____________
সকালে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ও তো মেঝেতে শুয়েছিলো তাহলে কে বিছানায় শুয়েছে?বিভোর না তো। পাশে তাকাতেই বিভোরকে না দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো ওকে বিভোর বিছানায় এনে শুয়েছে। নিজের ফোনে টাইম দেখে বুঝলো আজ উঠতে দেরী করে ফেলেছে ও।দ্রুত বিছানা থেকে উঠে কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। আজ হয়তো তার নিস্তার নেই ওই শাশুড়ির হাত থেকে। নিচে যেয়ে দেখলো সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসে পরেছে। ভয়ে স্পর্শীতার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো। এখনই বকা খাবে। ওকে অবাক করে দিয়ে ওকে ইশারা করে সবাই খেতে ডাকলো। ভয়ে ভয়ে সামনে গেলো।কিন্তু কেউ ওকে কিছু বলল না দেখে মনে মনে অনেকটাই শান্তি পেলো।
নাস্তা করে কিচেনে এসে দেখলো রান্নার তোড়জোড় চলছে। ও কিছু করতে গেলে ওর শাশুড়ির গম্ভির স্বরে বলা কথাটা কানে আসলো,”তোমার কিছু করতে হবে না আর তোমার শশুড় তোমাকে ডেকেছিলো তুমি বরং তার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করো কেনো ডেকেছিলো!”
স্পর্শীতা মাথা নেড়ে কিচেন প্রস্থান করলো। তাহসীন সাহেবের রুমের উদ্দেশ্যে বের হয়। ভাবছে তাকে কেনো ডেকেছিলেন তিনি?কিছু কি হয়েছে। ভাবতে ভাবতে তাহসীন সাহেবের রুমের সামনে এসে দাড়ালো। কড়া নাড়তেই কেউ ভিতরে আসতে বলল। ভিতরে ঢুকলো ও। তাহসীন সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,”ডেকেছিলেন?”
তাহসীন সাহেব ইশারা করে বললেন সোফায় বসতে। উনার ইশারা পেয়ে স্পর্শীতা সোফায় যেয়ে বসলো। নতজানু হয়ে হাত কচলাতে লাগলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাহসীন সাহেব এমন কিছু বললেন যা শুনে স্পর্শীতার খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছে করছে। এতোটা খুশি ও জীবণেও হয়নি। খুশি মনে বের হয়ে কাউকে দেখে ভীষণ অবাক হলো। উনি এইখানে কেনো?এতো অবাক হলো যেনো ওকে এইখানে আশা করে নি। ও ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো,”আপনি এইখানে কেনো?”
“আমার বাসা এটা তাই না?আমি এইখানে আসতে পারি না?”
স্পর্শীতা জোরপূর্বক হেসে বলল,”না মানে….
#চলবে
[রিচেক দেওয়া হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং]