#এসো_আমার_গল্পে
#Part_08
#Writer_Ayana_Ara (ছদ্মনাম)
স্পর্শীতাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতে দিয়ে বিভোর বলে উঠলো,”কি আসলে নকলে করছো?আমি তোমাকে আসলে নকলস করতে বলে নি যা সোজাসুজি বলেছি তার উত্তর দেও।”
“সেটাই এতক্ষন ধরে বলতে চাচ্ছি বলতে তো দিচ্ছেন না উলটা আমার সময় নষ্ট করছেন!”
বিভোর ভ্রুকুচকে বলে,”বাহ আমার চোখে চোখ রেখেও কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন না মিসেস বিভোর।”
স্পর্শীতা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আপনি কোনো ভাল্লুক বা বাঘ নয় যে আপনার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হয় পাবো বুঝলেন মিস্টার বিভোর।”
স্পর্শীতার এহেন কথায় বিভোর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।মেয়েটাকে যত বোকা ভেবেছিলো ততটা বোকা না। স্পর্শীতা বিভোরের পাশ কেটে যেতে নিলে বিভোর হাত ধরে বলে,”আগে বলে যাও এইখানে কেনো এসেছিলে।”
“বলতে ইচ্ছে করছে না।”
বিভোর বলল,”তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছা দিয়ে আমার কিছুই আসে যায় না।”
স্পর্শীতা এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,”তাতে আমার কি?আমি তো বলবো না সাহস থাকলে নিজে ভিতরে যেয়ে জিজ্ঞেস করেন কেনো এসেছিলাম।’
গটগট পায়ে চলে গেলো। বিভোর হেসে দরজার ওপার থেকে সরে আসলো। সবই শুনেছে ও আর এটাও জানে কেনো স্পর্শীতাকে এতো হাসি খুশি দেখাচ্ছে। খালি ওকে জ্বালাতে ওর ভালো লাগে।
স্পর্শীতা কিচেনে এসে রাগে কাঁপছে। কেনো রাগ লাগছে নিজেও জানে না হয়তোবা এতক্ষন যা হলো তার জন্য বিভোরের উপরে রাগ করেছে। কিন্তু এতে বিভোরের কি যায় আসে?রুমা স্পর্শীতাকে রেগে থাকতে দেখে ওর কাছে বলে,”নতুন ভাবী?রাইগা আছো কেন?বিভোর ভাইজান কিছু কইছে।”
স্পর্শীতা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,”না?কি বলবে আমাকে?”
স্পর্শীতা চাচ্ছে না এতক্ষন যা হলো তা কেউ জানুক আর রুমা জানা মানে পুরো পৃথিবী জানা তাই আরো চাচ্ছে না রুমাকে কিছু বলতে। এমন ভান করছে যেনো কিছুই হয়নি। রুমা সন্দিহান চোখে স্পর্শীতাকে একনজর দেখলো। স্পর্শীতা বুঝতে পেরে রুমার দিকে হাসলো।
“আজ তুমি রান্না করবে?নাকি আমি?”
“বড় ম্যাম সাহেবকে জিজ্ঞেস কইরা আসি।উনি যদি কয় আমি তাইলে আমি রানমু নাইলে তুমি।”
রুমা জিজ্ঞেস করতে চলে গেলো শেফা আক্তারের কাছে। স্পর্শীতা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
কিছুক্ষন পরেই রুমা আসলো। বলল,”আইজকা আর তোমার রান্না করা লাগবো না আমিই করমু।”
“সাহায্য তো করতে পারি?”
স্পর্শীতার এখন কিছু করার নেই শুধু শুধু বসে থাকার চেয়ে ভালো রুমার কাজে হালকা পাতলা সাহায্য করুক। আর ও নিজেও বিভোরের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না আপাতত।
রুমা মানা করা সত্ত্বে করতে চাইলো তাই আর পরে রুমা মানা করলো না।
রুমাকে রান্নার কাজে সাহায্য করলো যার জন্য খুব দ্রুতই রান্না শেষ হলো। বিকালের দিকে মেহমানরা চলে যাবে সাথে সাদাফ আর তানহাও যাবে। ওদের থাকতে বলে ওরা মানা করে। কেউ আর জোর করে নি থাকার জন্য।
টেবিলে সব পরিবেশন করে সবাইকে ডাকলো। সবাই খেতে বসে টুকটাক গল্প করতে থাকে। স্পর্শীতাও ওদের সাথেই খেতে বসে। খাওয়া শেষে সব কিচেনে রেখে গোছগাছ করে রুমে আসে। রুমা না করেছিলো কিন্তু স্পর্শীতা করতে দেয়নি বরং ওকে ঠেলে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়।
হল রুমে যেয়ে দেখলো সবাই বসে গল্প করছে। এক পর্যায়ে তাহসীন সাহেব বিভোরের উদ্দেশ্যে বলে,”অনেকদিন’ই বিশ্রাম নিলে। এইবার একটু অফিসে এসে আমার কাজে টুকটাক সাহায্য ও তো করতে পারো।”
ভ্রুকুচকালো বিভোর।
“হ্যা পারি!”
“মুখে বললেই তো হলো না!”
শেফা আক্তার পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠেন,”আহা এইসব বিষয় এখন ছাড়ো তো!এইসব নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে!”
“তোমার ঘাড়ত্যাড়া ছেলেকে বলে দিও আমার কথাই শেষ কথা। স্পর্শীতাদের বাড়ি থেকে এসে যেনো আমার সাথে অফিসে যায় কাজ করতে।”
কর্কশ গলায় কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন। বিভোর চুপচাপ বসে ফোন টিপতে থাকে। এমতাবস্থায় স্পর্শীতার হাসি পেলো। ঠোঁট চেপে হাসি সামলালো। মনে মনে বলল,”কি ছেলে রে!এতো কথার পরও অতি সুখে ফোন টিপছে।”
স্পর্শীতা বিভোরের দিকে ধ্যান দিলো না আর।
.
বিকাল হতেই এক এক করে সব মেহমান যেতে লাগলো। স্পর্শীতার এখন পুরো বাড়ি খালি খালি লাগছে আগে তানহা আর মায়ার সাথে কত কথা বলতো কিন্তু তানহা আর সাদাফ তো চলে গিয়েছে। এখন শুধু ওর সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য মায়া রয়েছে। স্পর্শীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
৭.
পরেরদিন খুব দ্রুতই ঘুম ভাঙ্গলো স্পর্শীতার। হয়তোবা নিজের বাড়ি যাবে ভেবে। হাসি মনে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। বিভোরকে ডাকার সময় মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি তৈরি করলো।
নিজের ফোনে ৫ সেকেন্ডের টাইমার সেট করে সাউন্ড বাড়িয়ে বিভোরের কানের পাশে রেখে দ্রুত বেরিয়ে আসলো। বেরিয়ে আসতে চিৎকার শুনে পিছনে ফিরলো। ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো স্পর্শীতার। বিভোর ভয় পেয়েছে আওয়াজে?দ্রুত কাছে যেয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,”কিছু কি হয়েছে আপনার?ভ-য় পেয়েছেন!”
বিভোর ধীর গলায় বলে,”কিসের আওয়াজ ছিলো ওটা?”
বিভোরের বলতে বলতে ওর চিৎকার রুমের ভিতর তড়িঘড়ি করে সবাই ঢুকল। শেফা আক্তার ছেলেকে দেখে কাছে এসে বলেন,”কি হয়েছে বিভোর?কিছু কি হয়েছে চিৎকার করলি কেন?”
বিভোর কিছু বলল না। শেফা আক্তার স্পর্শীতার কাছে এসে ওর দুবাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,”কি করেছ তুমি?এমন করলো কেনো ও?বলো!”
স্পর্শীতা ভয়ে পেয়ে সব খুলে বলল। সব শুনে মায়া এগিয়ে এসে বলল,”তোমার উচিত হয়নি এমন করা! ছোট বেলা থেকেই কোনো শব্দ জোরে হলে ভাইয়া খুব ভয় পায়। আর তুমি তো ফোনটা তার কানের সামনে রেখে দিয়েছিলে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিকই।”
মায়ার কথায় স্পর্শীতা ভয় পেলো। মনে মনে এক অপরাধবোধ কাজ করলো। এমনটা না করলেও পারতো ও। শুধু শুধু লোকটাকে কষ্ট দিলো।
শেফা আক্তার বিভোরের পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলল,”মায়া যা পানি নিয়ে আয় বিভোরের জন্য।”
মায়া যেতেই শেফা আক্তার স্পর্শীতার দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন যা তাহসীন সাহেবের চোখে এড়ায় নি তিনি শেফা আক্তারের উদ্দেশ্যে বললেন,”বাদ দাও কাহিনিটা ও৷ কি জানতো নাকি?”
শেফা আক্তার কর্কশ গলায় বলেন,”না জানলেও কি করা লাগে এইগুলা?”
“ছোট মানুষ বুঝে নি হয়তো। তোমার এতটা রিয়েক্ট করা উচিত না।”
শেফা আক্তার কিছু বলতে যাবেন তার আগেই মায়া অয়ানি নিয়ে এলো। উনি বিভোরকে পানি খাইয়ে মাথা একটা বালিশের সাথে ঠেকিয়ে দিলেন। উঠে স্পর্শীতার কাছে এসে গম্ভির গলায় বললেন,”আজ বিভোর অসুস্থ আজ তোমার আর ও কোথাও যাওয়া হবে না। বুঝতে পারলে কি বলতে চাচ্ছি আমি?”
মনে মনে স্পর্শীতা মন খারাপ করলেও কিছু বলল না। ওরই দোষ সব!না এমন কিছু করতো আর না বিভোর অসুস্থ হতো। খুব কান্না পেলো। নিজেকে সামলে শেফা আক্তারের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গেলে। বিভোর ধীর গলায় বলে উঠে,”আমি ঠিক আছি। হালকা বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবো। এতো চিন্তা করো না। আর স্পর্শীতা একটু পরই আমরা বের হবো যা ব্যাগ গুছিয়ে ছিলে তা আবার ঢুকিয়ে রেখো না আলমারিতে।”
শেফা আক্তার বাঁধা দিয়ে বললেন,”তুই অসুস্থ হয়ে পরেছিস বুঝলি?তাও কিভাবে যেতে চাস বলছিস?কোথাও যেতে দিবো না তোকে এই অবস্থায়।”
বিভোর শুনলেও তা কানে না নিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো যেনো ও কিছু শুনেই নি।
#চলবে
[রিচেক দেওয়া হয়নি,,ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং]