#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৮
– হ্যাঁ ভাবি তুমি যাও,আমি এক্ষুনি ওকে নিয়ে নিচে আসছি।আহমেদ সাহেব মৃদু হেসে বলেন,
– অধরা মা খালি হাতে চলে এলে যে? মিম কোথায়? সব মেহমান যে এসে পরেছে? ও মৃদু হেসে বলেন,
– কি বলি বড় আব্বু? বলুন তো? যার বউ সে নিজেই নিজের হাতে বউকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসবে বলেছে।ইরাদ হাসতে হাসতে বলে,
– আসবে বলছ কি? পিছনে ফিরে দেখো অলরেডি এসে পরেছে।ইমান মিমকে নিয়ে ওর দুই খালার মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে বলে,
– খালা মণি দেখ তোমাদের বউ মা কে পছন্দ হয়েছে? লায়লা বেগম মিমের হাতে চুমু খেয়ে বলে,
– কে বলেছে আমাদের ইমানের বউ সুন্দরী না? আমার তো বেশ মনে ধরেছে? মিম তাকে সালাম করতে চাইলে লায়লা বেগম বলেন,
– থাক মা,সালাম করতে হবে না।মাশাআল্লাহ্ দু’জনকে বেশ মানিয়েছে।রুজিনা ইয়াসমিন হাসতে হাসতে বলেন,
– মা আমরা কিন্তু তোমার বড় শাশুড়ির দুই বোন ঠিক আছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– মা কিছু দিন আগেই আমাকে লায়লা খালাম্মার ছোটো বেলার গল্প বলেছে।তখন হৃদিকা এহসান কে দেখে লায়লা বেগম বলেন,
– ভালোই তো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তোদের শাশুড়ি বউয়ের মধ্যে? হৃদিকা এহসান হাসতে হাসতে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
– কি যে বলো না আপা? মেয়ে ছাড়া ছেলের বউ হিসেবে আমি আজকাল ভাবতেই পারছিনা ওকে।মেয়ে টা এতো মিশুকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসর জমিয়ে সবার মন ভালো করে দেবে।মিম একটু চিন্তিত হয়ে বলে,
– মা রিক্ত কোথায়? একবারো দেখতে পেলাম না মেয়ে টাকে?
– সে তোর বাবার কোলে বসে দু’হাত দিয়ে পাকন পিঠে খাচ্ছে।তার পছন্দের পিঠে তুই আজ বানিয়ে দিয়েছিস যে? রুজিনা ইয়াসমিন হাসতে হাসতে বলেন,
– বাহ!
বউ মায়ের তো বেশ যোগ্যতা? এখন আর পিঠে কিনে খেতে হবে না বাহির থেকে।তখন কেউ একজন মিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
– জান বাচ্চা পাখি টা? মিম খুব অবাহ হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।অতঃপর নিজেই নিজের হাতে চিমটি কেটে ছুটে গিয়ে আনানের বুকে ঝাপিয়ে পরে কিল ঘুসি মারতে মারতে বলে,
– শয়তান ছেলে তুই কেন আসোনি আমার বিয়ে তে?আনান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ক্ষমা করে দে বোন আমার ভুল হয়ে গেছে।তুই তো ভালো করেই জানো পাসপোর্ট নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় আসতে পারিনি তোর বিয়েতে।আমরা একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।তুই ভাবতেও পারবিনা আমার কত খারাপ লেগেছে? লিরা মিমকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে,
– তোমরা ভাইয়া তোমার বিয়ের দিন সারাদিন কান্নাকাটি করেছে।একে তো আসতে পারেনি তার ওপরে কাজের চাপ লোকটা একদম অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।লিখন মিমকে বলে,
– জানো ফুফি আমার কত কষ্ট হয়েছে? মিম লিখন কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– মা কোথায়? সায়ান ভাইয়া,ভাবি আর জালিজ কোথায়? ওরা আসেনি তোমাদের সাথে? মাহি আলম চৌধুরী এসে মেয়েকে কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে বলেন,
– বোকা মেয়ে আমার দেখি? এভাবে কান্না করতে আছে? ইমান মিমকে ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিতেই আনান একটা জুয়েলারি বক্স এগিয়ে দেয় ওর কাছে।মিম অভিমান করে বলে,
– আমার লাগবে না এই সব তুমি তো আবার চলে যাবে বিদেশে।ইমান পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
– ভাইয়া এবং ভাবি আর কোথাও যাচ্ছে না।একেবারের জন্যে ফিরে এসেছে এই দেশে।মিম ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে আনানের মুখের দিকে।আহান মৃদু হেসে বলে,
– পাগলির পাগলামো গুলো গেলো না।সেই আগের মতোই আছে? আদিব চৌধুরী খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বড় ছেলের মুখের দিকে।কিন্তু আনানের তাকে নিয়ে এল চুল ও আগ্রহ নেই কারণ সে জানে তার বাবা কি করেছে তার মায়ের সাথে।মিহা এগিয়ে এসে আনানকে জিজ্ঞেস করে,
– ভাই তুই কি ভুলে গেছিস আমাকে? আনান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
– আমি কারো ভাই না।আমি এবং সায়ান কখনো পছন্দ করতাম না তোমাকে।তুমি দয়া করে তোমার এই ভালো মানুষি গুলো অন্য কারো সাথে গিয়ে দেখাও।এসব করে লাভ হবে না আমাদের সাথে।
আদিব সাহেব ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলে।আনান কিছু টা রেগে গিয়ে বলে,
– থার্ড ক্লাস লোক একটা।আমার কোনো কথা বলার ইচ্ছে নেই আপনার সাথে।তখন নূর জাহান এগিয়ে এসে বলেন,
– বাবা তোরা আমার জন্যে কষ্ট দিস না এই লোকটা কে।
– আপনি আমার রাস্তা ছাড়ুন,নষ্টা মহিলা কোথাকার।একবারো তাকিয়ে দেখেছেন নিজের দিকে? আমরা তিন ভাই বোন দাঁড়িয়ে থেকে আবার আমাদের মায়ের বিয়ে দেবো।এই লোকটা স্ত্রী হিসেবে ডিজার্ভ করে না আমাদের মা কে।বিয়ে হয়ে এসেই আপনি নিজের স্বামীকে খেয়েছেন তারপরে নজর দিয়েছে আদিব চৌধুরী এবং তার ভাইদের দিকে।আমার সেজো চাচা এবং ছোটো চাচা অনেক বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন।তাই কেটে পরেছেন সুযোগ বুঝে আর এই লোকটা তো প্রথম থেকেই চরিত্রহীন।দয়া করে আমার মুখ খোলাবেননা ঠিক আছে? আদিব সাহেব স্থির হয়ে চুপচাপ তাকিয়ে আছেন ছেলের মুখের দিকে।একটু পরেই এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে এসে বলে,
– দেখি আমার ছোটো ছেলের (ইমান) বউ কোই? তোমরা কোথায় রেখেছ তাকে? মিম উঠে এসে তাকে সালাম করতে যাবে তার আগেই ভদ্রমহিলা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি কি চিনতে পারছ মা আমাকে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– তুমি বোধহয় বড় আম্মু তাই না? তখন মিসেস নয়ন তাঁরা নিজের হাতের বালা জোড়া খুলে পরিয়ে দেয় ওর হাতে।আহমেদ সাহেব এগিয়ে এসে মিমের মাথায় হাত রেখে মিসেস নয়ন তাঁরা কে বলে,
– চার মাস বাদে তোমার স্বামী,সন্তান ও শশুর বাড়ির কথা মনে পরেছে? মিসেস নয়ন তাঁরা হাসতে হাসতে বলেন,
– তুমি ও তো নিতে যাওনি আমাকে? যাই হোক আমার রাস্তা ছাড়ো আমার অনেক গল্প করার আছে নতুন বউ মায়ের সাথে।মিম তাকে হৃদিকা এহসান ও মাহি আলম চৌধুরীর মাঝে বসিয়ে বলে,
– বড় আম্মু তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো ঠিক আছে? তখন মিসেস এনা খান দৌড়ে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– সবাই আমার ব্যাটার বউকে দেখতে এসেছে আমি দেখবো না তাকে? রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে বলেন,
– তোর মা কে সামলে রাখতে পরিনি মা।সে কি যেন দিতে চায় তোকে? আনমনে মিসেস এনা এটা-সেটা বকতে বকতে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখা একটা চাবি দিয়ে দেয় মিমের হাতে।মিম কৌতুহল বশত মিসেস এনা কে জিজ্ঞেস করে,
– মা এটা দিয়ে কি হবে? হৃদিকা এহসান এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলেন,
– এটা মা আমাদের বাড়ির লকারের চাবি।অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থাকে ওটাতে।মিহা এসব শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
– ও কি পারবে এতো কিছু সামলাতে? মিসেস এনা খান হঠাৎ সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের মতো বলে ওঠেন,
– কেন নয় বউ মা? তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে তাতে? কিছু জিনিস আছে যেটা নিজে থেকে অর্জন করে নিতে হয়।ছলচাতুরীর দ্বারা ছিনিয়ে নেওয়া যায় না তাকে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিখে।ফিক করে হেসে দিয়ে এনা খান বলে,
– কি অবস্থা? সবাই ভয় পেয়েছে।ইয়ে কি মজা? কি মজা? আমি কুতকুত খেলবো বাচ্চাদের সাথে।রায়হান সাহেব তারপর বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে নিয়ে যায় অনুষ্ঠান থেকে।মিম মন খারাপ করে ইমানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– জানো আমার কথা গুলো শুনে মনে হয়েছিল যেন মা একদম সুস্থ হয়ে গেছে? ইমান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– বুঝতে পেরেছি তুমি একটু ভয় পেয়েছ।শুধুশুধু চিন্তা কোরো না ঠিক আছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– অনেকক্ষণ যাবত রাদ ও ইরাদ ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি না।ওরা কোথায় গেছে? ইমান ওকে আস্বস্ত করে বলে,
– ধরে নাও তোমার জন্য সারপ্রাইজ আনতে গেছে? মিম ব্রু কুঁচকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে ইমানের মুখের দিকে।তারপর হঠাৎ ও খেয়াল করে দেখো,
– মাহি আলম চৌধুরীর বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখা ছবির লোকটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমান মৃদু হেসে বলে,
– পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমার বড় মামা মর্তুজা ইয়াসির খানের সাথে।মিম তাকে সালাম করতে চাইলে মর্তুজা সাহেব ওর কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
– তুমি আমার মেয়ের মতো মা।সালাম করতে হবে না তোমাকে।মিম মৃদু হেসে প্রশ্ন করে,
– মামা মামী আসেনি আপনার সাথে? মর্তুজা সাহেব আড়চোখে একবার মাহি আলম চৌধুরী কে দেখে বলেন,
– এখনো বিয়ে করিনি মা।মামী আসবে কোথা থেকে? প্রিয় মানুষ টাকে নিজের করে পেলে হয়তো তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ে আমারো থাকতো ঠিক আছে? ও মন খারাপ করে বলে,
– আপনি কষ্ট পেয়েছন মামা?
– কোই না তো? বরং তোমাকে দেখে আমার মন জুড়িয়ে গেল।যাই হোক আমি মেয়ে মানুষের কেনাকাটা অত বুঝিনা।এই ব্রেসলেট টা কেমন হয়েছে মা দেখ?
– অসম্ভব সুন্দর।আমি আসি তুমি একটু তোমার ভাগ্নের পাশে বসো? মিম তারপর মাহি আলম চৌধুরীর কাছে এগিয়ে এসে বলে,
– ওখানে কেন মা? এখানে বসো? আসো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ইনি আমার মামা শশুর মর্তুজা ইয়াসির খান বাংলাদেশের বিজনেস টাইকুনের মধ্যে একজন নিশ্চয়ই আগে তার নাম শুনেছ? দু’জন দু’জনের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে ছিল।ইমান ফিসফিস করে মিমকে বলে,
– আমাদের দায়িত্ব শেষ বউ এবার ঘরে চলো? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– তুমি আগে থেকেই জানতে? অথচ লুকিয়ে গেছ? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– কি আর করি বলো? হোমমিনিস্টারের আবদার কি এভাবে অগ্রাহ্য করা যায় বলো? মিম মিটিমিটি হেসে বলে,
– ভণিতা না করে স্পষ্ট করে বলুন তো কি চাই? ইমান ফিসফিস করে বলে,
– ঘরে চলো।বাচ্চার মা হতে চাও,বাচ্চা কি এমনে এমনে হয় বলো? তখন হঠাৎ হৃদিকা এহসান এসে ইমানকে বলে ওঠে,
– আজকাল বাবা কি হয়েছে তোর? মিম কোথায়? তুই কাকে কি সব বলো? রাদ হাসতে হাসতে ফিসফিস করে ইমানের কানে কানে বলে,
– ভাইরে ভাই আমি কিন্তু “গে” নই।বউয়ের সাথে ফটোশেসনে চলো।ইমান মনমনে বলে,”বুঝতে পারলাম না সামনেই তো ছিল? তা কখন পালিয়ে গেলো?” অধরা মিমকে দেখে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে,
– কি রে ছোটো? তুই এভাবে কেন হাঁপাচ্ছ? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– ভাইরে ভাই তোমার যে দেবর? কথা দিয়েই আমাকে প্রেগন্যান্ট করে দেবে বুঝেছ? নিপা হাসতে হাসতে বলে,
– ওহ তাহলে তাই তো বলি? আমার ছোটো ভাইয়ের মুখ কেন কালো? রাতে ভালো তার সেবাযত্ন করিস ছোটো অাফটার অল স্বামীতো? মিম মনেমনে বলে,”নির্লজ্জ কোথাকার? মায়ের সামনে ওই সব কেউ বলে? অসহ্য।একদিন না একদিন বোধ হয় আমি ঠিক এই ব্যাটার টাক ফাটিয়ে দেবো?”