#কাঞ্জি
#পর্ব-১৫
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
হলুদ শাড়ির নিচে কারো হাতের ছাপ।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এমনটা দেখে ভীষণ কান্না পেল আবৃতির।বাড়ির সবাই তখন লনে উপস্থিত। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। গানের শব্দ ভেসে আসছে নিচ থেকে।নিশ্চয়ই কিছু সময়ের মাঝে বর পক্ষের লোকও চলে আসবে। আবৃতির আর যাওয়া হবে না। শাড়িটাও নষ্ট হয়েছে। সে ভেবে পাচ্ছে না এই স্মার্ট মেহেদী বাসায় এলো কোথায় থেকে?আগামী কাল মেহেদীর অনুষ্ঠান। আজ তো কোনো ভাবেই মেহেদীর বাইরে থাকার কথা নয়। আরো একটি কথা তাদের জন্য হারবাল মেহেদী আনা হয়েছে। শাহরিয়ারের প্রতি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বসে পড়লো সে।শাহরিয়ার রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“ভিতরে আসবো?”
“না।”
“কেন?”
“এটা কেমন ব্যবহার শাহ্? আমি আর শাড়ি পরতে পারবো?”
“দরজা খুলবে না কি জানালা দিয়ে আসবো?”
আবৃতি দেখলো জানালা খোলা রয়েছে। শাহরিয়ার সেদিকে যেন আসতে না পারে তাই দ্রুত জানালার কাছে চলে গেল।এক হাতে স্লাইডিং করতেই শাহরিয়ার ধরে ফেলল।রুমের ভিতর লাফিয়ে পড়ে বলল,
“ফ্ল্যাটটা ফাঁকা। তাই চিৎকার করেও লাভ হবে না।সো এই হুমকি কাজে দিবে না। ”
“আমি হুমকি দিবো ক্যান?”
“গ্রামের মাইয়্যা ক্যান কেমন শব্দ?বলো কেমন? তোমার তো আবার অভ্যেস আছে কামড় দিয়ে ঘড়ি বানিয়ে দেওয়ার।আসো আজকে তোমার হাতে বানিয়ে দেই।”
শাহরিয়ার সত্যি সত্যি আবৃতির হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।অবাকের চূড়ায় উঠে আবৃতি জিজ্ঞেস করলো,
“ফাজলামো করছেন আমার সাথে?”
“তোমার মোহরানা শোধ করলাম।এবার বলো কবুল।”
“আশ্চর্য সব কথার ধরণ আপনার। এক মিনিট আপনি কি ভাবছেন আপনার এসব কথা বলার কারণে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার সাথে কি করেছেন?”
“আমি কি করেছি?”
“এই যে মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছেন।”
“প্রমাণ আছে?যদি আমি লাগাতাম তবে আমার হাতে রঙ লাগতো না?”
“কি করে লাগবে?আপনার হাতে গ্লাভস পরা ছিল আমি কি দেখিনি?”
“বাহ্ আমার বৌ তো ভীষণ চালাক।”
আবৃতির মন ভালো হলো না।ওয়াশরুম থেকে গা ধুয়ে কামিজ পরে বেরিয়েছে অনেক আগেই।মন খারাপ থাকতে দেখে শাহরিয়ার বলল,
“এই শাড়িটা পরো।”
“হলুদে গোলাপি শাড়ি?”
“তো হলুদ কাঞ্জিভরম পরো।”
আবৃতিকে অবাক করে দিয়ে তার সামনে সাত রঙের সাতটি শাড়ি রাখলো সে।আবৃতি জানে এই মানুষটার শাড়ির প্রতি ভীষণ রকমের ভালোবাসা কাজ করে।আবৃতি বিনা বাক্যে শাড়িটি হাতে নিয়ে বলল,
“বাইরে যান, আমি পরে আসছি।”
শাহরিয়ারের নিছক আবেদন, “আমি পরাই?”
“কেউ দেখে ফেলবে।তাছাড়া আমার পেটের দিকটায় রঙ হয়ে গেছে।”
“শাড়ি বাদে সব পরে দেখো রঙ বুঝা যাবে না।”
ব্লাউজ পরার পর আবৃতি খেয়াল করলো তার পেট,পিঠের কোনো অংশই অনাবৃত নেই। স্মিত হাসলো সে। বাইরে বেরিয়ে আসার পর শাহরিয়ার বলল,
“আমি কেবল কুচি ধরবো বাকিটা তুমি পরে নাও,আমাকে ডাক দিও কেমন?আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।”
শাহরিয়ার যখন এলো তখন আবৃতির শাড়ি পরা শেষ। কুচি ঠিক করে দিয়ে শাহরিয়ার একটা বেলীর মালা পরিয়ে দিলো চুলে।হাতের চুড়ি খুলে একটা ঘড়ি। আবৃতির শাড়ির সাথে অনেকটা মিলিয়ে সে পাঞ্জাবীর উপর কটি পরেছে।বাইরে বেরিয়ে আসার আগে ফোনে আবৃতির কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।
তারা দুজন যখন নিচে নেমেছে আবৃতিকে দেখে রিমঝিম এবং ওয়াজিফা বলল,
“তুমি শাড়ি বদলেছো কেন?”
“আমার শাড়িতে যেন কিসের রঙ লেগেছে। ”
“তাই বলে সবার থেকে আলাদা পড়বে?এটা কেমন হলো?”
“ওয়াজিফা আপু বাদ দাও। দেখেছো শাহরিয়ার ভাইয়ের সাথে আপুর শাড়ির কি মিল। মনে হচ্ছে ওরা দুজন কাপল।”
রিমঝিমের কথায় চমকে উঠলো ওয়াজিফা। সে হচকচিয়ে তাকালো আবৃতির দিকে। আবৃতির হাত তখন কানের পিঠে চুল গুঁজে দেওয়ার জন্য উঠেছে। সেই হাতে জ্বলে উঠেছে একটা ঘড়ি। একই ঘড়ির মেইল ভার্শনটা দেখা যাচ্ছে শাহরিয়ারের হাতে।কান্না এসে গলায় আটকে গেল তার।
মন খারাপ করে ফুপুর পাশে যেতেই সবটা বলতে হলো তাকে।শাহরিয়ারের মা বুদ্ধিমতি।মেয়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান নষ্ট হতে দিলো না।সময় সুযোগ বুঝে আবৃতিকে টেনে ফ্ল্যাটে নিয়ে এলো।
“এই ঘড়িটা কে দিয়েছে? ”
“কোন ঘড়ি?”
“চুরি করেছিস?”
“আমি কেন চুরি করবো?”
“যে মেয়ে অন্যের ভালোবাসা চুরি করতে পারে সে ঘড়িও চুরি করতে পারে।”
“কি সব বলছো?”
“ঘড়ির মতো মানুষটাও ওয়াজিফার আবৃতি।রক্ত কখনো বেঈমানী করে না।শেষ অবধি তুইও তোর বাবার পথেই হাটছিস।তোর জন্যও আরো একটা জীবন নষ্ট হবে।”
চলবে( এডিট ছাড়া, যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন।)
#ছবিয়ালঃankitaww