কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব -২৯

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কি হয়েছে?এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?আগে শান্ত হয়ে বস।” মেহেক রিফাকে বিছানাতে বসাই।রিফা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

” বল এবার ঘটনা কি?এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?মনে হচ্ছে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে এসেছিস।”

” বইন তার থেকেও বড় কিছু হয়েছে।”

” তো কি হয়েছে সেটা তো বল।”

” শোন না ইভান কিছুদিন ধরে জোর করছে যে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে যেন বাসায় বলে দিয়।সে তো বিয়ের প্রস্তাবও পাঠাবে বলছে।কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।এর জন্য সে কাল থেকে আমার ফোনও ধরছেনা।”

” বাহ্ তাতো খুব ভালো।তো এতে সমস্যা কোথায়?”

” আরে এখানেই তো সমস্যা।ইভানের এখনো ইন্টার্নি করা বাকি আছে।ও এখানো প্রতিষ্ঠিত নয়।এই মূহূর্তে বাড়িতে যদি আমাদের কথা বলি তাহলে যদি বাবা-মা আমাদের মেনে না নেয় আর আমার বিয়ে অন্যকোথাও দিয়ে দে।”

” রিফু ফিউচার ইস ফিসচার।তোর ফিউচারে কি হবে তা না ভেবে প্রেজেন্টটাতে গুরুত্ব দেয়।বর্তমানটাতে ইনজয় কর।তুই কিন্তু জানিস না কি হবে।তবে নেগেটিভ কিছু না হয়ে পজিটিভ কিছুও তো হতে পারে।তাই ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে এতো চিন্তা করিসনা।”

” কিন্তু বাবা-মা যদি আমার কথা না শুনে তো?তুই কিছু কর বইন।”

মেহেক কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,” আচ্ছা আমি আপুনির সাথে কথা বলে দেখবো।আপুনি তাহলে দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবে।যদি দুলাভাইকে রাজি করানো যায় আমার মনে হয়না আঙ্কেল-আন্টি আর মানা করবে।”

” থ্যাংক ইউরে বান্ধবী।”

২ দিন পর,

” আরে বইন একটু পরেই তো তোর হাবীর সাথে দেখা করবি।এবার তো চ্যাটিং বন্ধ কর।”

” ধুর একটু প্রেম করতে দেতো।”

” নে তৈরি হওয়া শেষ।”

” এতো তাড়াতাড়ি!”

” গত ২ ঘন্টা যাবৎ তোকে সাজাচ্ছি আর তুই বলছিস তাড়াতাড়ি।রিয়েলি?এবার আয়নায় দেখ।”

” হুম ঠিক আছে।”

” জানিস তোরে আজ খুব সুন্দর লাগছে।ইভান ভাইতো চোখই সরাতে পারবেনা।”

” ও তাই নাকি?তাহলে চল চল ইভানকে দেখিয়ে আসি।”

” এ কেমন মেয়েরে বাবা।শোন তুই কোন ডেটে যাচ্ছিস না বরং তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।একটু তো লজ্জা পা।”

” লজ্জা পাওয়ার কি আছে?কোথাও কি লেখা আছে যে দেখতে আসলে লজ্জা পেতে হবে?”

” বইন তোর সাথে কথায় আমি পারবোনা।চল এবার তোর হাবী নয়তো তোকে না দেখতে পাওয়ার বিরহে পাগল হয়ে যাবে”।

মেহেক রিফাকে নিচে নিয়ে আসে আর ইভানের সামনাসামনি সোফাটাতে বসিয়ে দেয়।রিফাকে দেখে তো ইভান তার থেকে চোখই সরাচ্ছেনা।

” ভাইয়া এভাবে দেখবেন না,নজর লেগে যাবে তো।আর আপনার পাশে আপনার বাবা মাও কিন্তু আসে।” ইভানের কানে ফিসফিস করে বলে মেহেক।মেহেকের কথা শুনে ইভান তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয় আর তা দেখে মেহেক মিটিমিটি হাসে।

রিফা রুমে ইভানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে রিফা।কিছুক্ষণের জন্য তাদের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে।

” খুব তো বলেছিলে বাড়িতে নাকি কেউ মানবেনা,তোমার বিয়ে দিয়ে দেবে এটা সেটা।এখন কারা মানলো শুনি?”

” আমার কি দোষ বলো।আমি তো গল্পে এরকমই পড়েছি।”

” হায়….পাগলি।ওটা গল্প ওর এটা বাস্তব।গল্পের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাকে কোনভাবে আবারো জীবিত করা যায় কিন্তু বাস্তবে তা হয়না।বুঝতে পেরেছো।”

” হুম।কিন্তু বাড়ির সবাই রাজি হয়েছে শুধু মাত্র মেহুর কারণে।ও যদি ভাবীকে না বোঝাতো তাহলে এসব হতো না।”

” হুম ঠিক বলেছো।মেহেক আসলেই খুব ভালো আর মিষ্টি একটা মেয়ে।”

” হুম ঠিক বলেছো।ভালো,মিষ্টি তবে খুব সহজসরল।সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে নেয়।যার কারণেই তো আজ ও এতোটা কষ্ট পাচ্ছে।”

” হুম মেহেকের সাথে যা হয়েছে তা জেনে খুব খারাপ লেগেছে।তবে আমি আশা করি ওর লাইফে এর থেকেও ভালো কেউ আসবে।যে ওকে খুব ভালোবাসবে।”

এদিকে দরজার বাইরে,

রিফার রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছে মেহেক।দরজা ভেতর থেকেই বন্ধ তাও রিফা তাকে এখানে পাহারাদারের মতো বিনা বেতনের চাকরি ধরিয়ে দিয়েছে।

” এখানে কি করছো মেহুপরী?”

হঠাৎ কারো কথা শুনে চমকে যায় মেহেক এবং ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়।পেছন ফিরে মেহেক দেখে সৌন্দর্য দাঁড়িয়ে আছে,এটা দেখে মেহেকের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।

” ও আপনি।আমি তো মনে করেছি কোন জ্বিন ভুত এলো নাকি।”

” তুমি এই কাঠফাঁটা রোদের মধ্যে ভুত দেখবে ভেবেছো?ভুতরা এখন এসির মধ্যে আরাম করে ঘুমাচ্ছে।যখন সূর্য ডুবে চাঁদ উঠবে তখন তারা আসবে।”

” আপনি কি করে জানলেন ভুতরেরা এসি ছেড়ে ঘুমাচ্ছে?হতেও তো পারে তারা ফ্যান ছেড়ে ঘুমাচ্ছে।”

” হতেও পারে।এবার বলো তুমি এখনে কি করছো?”

” রিফা বলেছে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিতে।”

” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

” জ্বি বলুন।”

” তোমার সম্বন্ধ ঠিক না হওয়াতে কি তুমি কষ্ট পেয়েছে?”

” না কষ্ট কেন পাবো?ওনারা ভাঙলে আমি নিজেই ভেঙে দিতাম।ওই মাম্মাস বয়কে বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার ছিলনা।”

” ও আচ্ছা।তুমি তাহলে এখানে পাহারাদারি করো আমি বরং আসি।বাই বাই।”

সৌন্দর্য পকেটে হাত গুঁজে চলে যেতে থাকে।তার মুখে হাসি লেগে আছে তবে তা মেহেক দেখেনা।
.
.

নিজের রুমে বসে বই পড়ছে মেহেক।ইভান আর রিফার বিয়ের কথা পাকা হয়ে গিয়েছে।পরশুদিনই তাদের এঙ্গেজমেন্ট।এঙ্গেজমেন্ট রিফার বাড়িতেই হবে তাই বাড়ির সবাই এখন প্রিপারেশন নিচ্ছে।

” কি করছিস মৃদু?”

মেহেক পেছন ফিরে দেখে সৃষ্টি হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” কিছুনা না আপুনি।তুই কেন কষ্ট করে আনতে গেলেছি খাবার?আমার খিদে লাগলে আমিই খেয়ে নিতাম।”

” আমি জানি তুই কত খাস।এবার চুপচাপ খাবারটা খেয়েনে।”

মেহেকও আর কোন কথা না বলে খাবার খেতে থাকে।খাবার খেতে খেতে মেহেকের মনে হয় সৃষ্টি থাকে কিছু বলবে।

” কিরে আপুনি কিছু বলবি?”

” শোন না তোকে একটা কথা বলার ছিল।কিন্তু যদি তুই মন খারাপ করিস তাই বলছিনা।”

” কিরে কি হয়েছে একটু খোলসা করে বলতো।”

” পরশু দিনতো রিফার এঙ্গেজমেন্ট।আমি চাইছি অনুষ্ঠানে যেন মামী,নানী,নাইরা আর নক্ষত্র ভাইয়া আসুক।”

” হ্যাঁ তো আসুক না।এতো এতো চিন্তার কি আছে?”

” তোর খারাপ লাগছেনা।এতো কিছু হলো….”

” আপু আমি তোকে আগেই বলেছিলাম আমি ওসব মনে রাখিনি।আর যা করেছে সব মামা করেছে এতে ওদের দোষ কোথায়?”

” তাহলে তুই প্লিজ মামীর সাথে কথা বল।আমি মামীকে অনেক বার বলেছি কিন্তু মামী আসতে রাজিই হচ্ছে না।”

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল সকালে ওদের কাছে যাবো।তুমি চিন্তা করোনা,আমি ওদের রাজি করেই তবে ছাড়বো।”
.
.
.

মেহেক সকাল সকাল মেহেকের মামীর কাছে চলে আসে।আসলে তারা এখনো ঢাকায় মেহেকের মামীর বাপের বাড়িতেই আছে।সৃষ্টি থেকে ঠিকানা নিয়ে মেহেক সেখানেই চলে আসে।মেহেককে দেখে তার মামী খুশি হয়,সেইসাথে তার নানীও।তারা দুজন মেহেকের খুব আদরযত্ন করে।মেহেক অনেক কষ্ট করে তার মামী আর নানীকে এঙ্গেজমেন্টে আসার জন্য মানিয়ে নেয়।মেহেকের যাওয়া আগে একবার নাইরার সাথে দেখা করে যেতে চাই।সে জানতে পারে নাইরা রুমেই আছে।মেহেকও হাসিখুশিভাবে নাইরার সাথে দেখা করার জন্য রুমে চলে আসে তবে রুমের সামনে এসে থেমে যায়।

” কেন তুমি আমায় বোঝোনা বলোতো?তুমি কি বোঝোনা তোমার এই অবহেলা আমি সহ্য করতে পারছিনা।আমার হৃদয়টা যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।”

মেহেক নাইরার কথা শুনে পুরো বিষয়টা বুঝতে না পারলেও কিছুটা হলে আন্দাজ করতে পারেছে কারণ সেও এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।মেহেক খানিকটা পিছিয়ে যায় আর নাইরার নাম।ধরে ডাকে।মেহেকের শব্দ শুনে নাইরা তাড়াতাড়ি চোখের জ্বল মুছে নেয় আর ফোনটাও বালিশের তলে লুকিয়ে ফেলে।

” আরে আপু তুমি এখানে।চলো তো আজ তোমার সাথে গল্প করবো।কতদিন হলো তোমার সাথে ঠিক মতো কথা বলা হয়নি।”

” আচ্ছা।”

” হুম তবে তার আগে তুমি আমার যখন তোমার হাতের স্পেশাল কফিটা নিয়ে এসো তো।ওটা ছাড়া গল্প জমবেনা।”

” আচ্ছা তুই বস আমি আসছি।”

নাইরা চলে যেতেই মেহেক নাইরার ফোনটা খুঁজতে শুরু করে এবং একসময় পেয়েও যায়।তবে নাইরার ফোনে লক দেওয়া যার ফেলে অনেক চেষ্টা করেও
মেহেক লক খুলতে পারেনা।

চলবে….

(দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here