কুঁড়েঘর ২ পর্ব – ২২+২৩

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩৭।

নিশাদ অফিসে যাওয়ার পথেই রিধিশাকে পিক করে নেয়। রিধিশা চুপচাপ বসে বসে চোখের পানি ফেলছে আর চোখ মুচছে। নিশাদ মিরর দিয়ে রিধিশাকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু রিধিশা মুখ এমনভাবে রেখেছে যে দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
রিধিশা ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকে রাখছে। নিশাদের সামনে কাঁদতে চায় না কিন্তু বেহায়ার মতো চোখের পানি পড়ছে। রিধিশার বুক ভারী হয়ে আসে।
তার অনুভূতি গুলোও অপূর্ণ থেকে যাবে এভাবে? রিধিশার বুকের ভেতর পুড়ে যাচ্ছে নিশাদের বিয়ের কথা ভাবতেই। নিশাদ সত্যিই যদি বিয়ে করে নেয়? নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রিধিশার।

নিশাদ ফাকা রাস্তায় বাইক থামিয়ে নেমে দাঁড়ায়। রিধিশাও নেমে আড়ালে চোখ মুছে নেয়। নিশাদ রিধিশার হাত চেপে কাছে এনে বললো
” কি? কাঁদছো কেনো? আজকে কি কিছু বলেছি? কিছুই তো বলিনি আমি তাহলে কাঁদছো কেনো? অন্যকেউ কিছি বলেছে?” রিধিশা নিশাদের থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো
” কোথায় কাঁদছি আমি? চোখে বেশি দেখছেন নাকি?”
নিশাস রাগি গলায় বললো
” আমাকে বয়রা মনে হয় তোমার? কান্নার আওয়াজ ঠিকই আমার কানে এসেছে। বলো কি হয়েছে?”

রিধিশা মুখ ঘুরিয়ে জোড়ানো গলায় বললো
” কিছু না অফিসে চলুন দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।” নিশাদ রিধিশার হাত চেপে বললো
” এই যে দেখো, তুমি কি হয়েছে সেটা না বললে যাচ্ছি না এখান থেকে। চাকরি গেলে যাবে আজকে।”
রিধিশা হাত ছাড়িয়ে বললো
” চাকরি চলে গেলে দুদিন পর বিয়ে করে কি খাওয়াবেন বউ’কে?” নিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নিশাদ সন্দেহহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” তুমি বিয়ের কথা শুনে কাঁদছো?”

রিধিশার চোখ টলমল করে উঠে পানিতে। কান্না ভেজা গলায় অন্যদিকে ঘুরে বললো
” আপনার বিয়ের কথা শুনে আমি কেনো কাঁদবো? মিলি’কে করুন বা যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুন আমার কিছু না।” রিধিশার পেছনে দাঁড়িয়ে নিশাদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিশাদ পেছন থেকে রিধিশার ওড়না টেনে বললো
” আচ্ছা চলো আমরাই বিয়ে করে ফেলি তারপর তুমি আর আমি সারাদিন ঝগড়া করবো।”

রিধিশা চোখ মুছে নাক টেনে বললো
” মজা করেন? ফালতু ছেলে একটা।”
” আরে আমি একদম সিরিয়াস। তুমি আর আমি বিয়ে করে ফেলবো সত্যি সত্যি। তুমি না করতে চাইলে জোড় করেই বিয়ে করবো বুঝেছো?” রিধিশা পাত্তা না দিয়ে বললো
” অফিসে দেড়ি হয়ে যাবে, চলুন।” নিশাদ বাইকে বসে স্টার্ট দিতে দিতে বললো
” আমি কিন্তু সিরিয়াস কথা বলছি মনে রেখো কিন্তু! নিশাদ উল্টো পাল্টা কথা বলে না, ওকে?”

রিধিশা বেখেয়ালি মাথায় নিশাদের কথা শুনলো না। অফিসে আসতেই দুজন কাজে লেগে পড়ে।
কয়েক ঘণ্টা পেড়িয়ে যায়। রিধিশা মলিন চেহারায় চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে। নিশাদ বারবার রিধিশার দিকে তাকাচ্ছে। রিধিশার চুপচাপ সহ্য হচ্ছে না তার।
মেয়েটা কথাও বলছে না কোনো। নিশাদ রিধিশার চেয়ার টান দিয়ে কিছুটা কাছে নিয়ে আসে। রিধিশা ভয়ে চমকে উঠে নিশাদের দিকে তাকায়।

নিশাদ শান্ত গলায় শুধালো
” রিধিশা বেশি মন খারাপ?” রিধিশা নিশাদের দিকে তাকালো। নিশাদের দৃষ্টি তার পানেই ছিলো। রিধিশা মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরে। নিশাদের মোলায়েম কণ্ঠ শুনে নিশাদকে সব বলে দিতে ইচ্ছে করলো কিন্তু বললো না। ঢোক গিলে ভাঙ্গা গলায় উত্তর দেয়
” নাহ, মন খারাপ না আমার।” নিশাদ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো। উঠেই রিধিশার হাত টেনে বললো
” চলো ব্রেক টাইম দিছে খেয়ে আসি।” রিধিশা হাত ছাড়িয়ে নিতে চেয়ে বলল্য
” খাবো না আমি। খিধে নেই আমার।” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” কি সমস্যা তোমার? খাবে না আবার বলবেও না কি হয়েছে।”

রিধিশা রেগে বললো
” আমাকে একা থাকতে দিন! যান এখান থেকে প্লিজ!” নিশাদ শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। নিশাদ যেতে যেতেই রিধিশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ফ্লোরে কেউ নেই এখন সবাই অফিসের ক্যান্টিনে চলে গিয়েছে। রিধিশা কিছুক্ষণ কাঁদার পর কান্না থেমে যায় ধীরে ধীরে। চোখ মুছে কাজ করতে থাকে। খুধা পেলেও যাবে না সে।

নিশাদ বার্গারের প্যাকেটে একটু আওয়াজ করে টেবিলের উপর রাখে। হাতে থাকা আরেকটা বার্গার খেতে খেতে বললো
” উমম, আজকের বার্গারের টেস্ট’টা অন্যরকম লাগছে একদম। একজনের জন্য এনেছিলাম। খুধা পেলে খেতে পারে।” রিধিশা কোণা চোখে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
নিশাদ বার্গার’টা রিধিশার দিকে ঠেলে দেয়। রিধিশা মুখ ফুলিয়ে নিয়ে খেতে থাকে চুপচাপ। নিশাদ হালকা হাসলো।

কিছুক্ষণ পর ব্রেক টাইম শেষ হতেই একে একে সবাই এসে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এক ঘণ্টা পর বিজয় স্যার আসে। ফ্যামিলি প্রবলেমের জন্য আজকে অফিসে আসতে পারেননি মাত্রই এসেছে। বিজয় স্যার এসেই নিশাদকে কেবিনে যেতে বললো। নিশাদ কয়েকটা ফাইল নিয়ে চলে যায়।

“মিস রিধিশা!” রিধিশা চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে নিশাদের বয়সি একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। রিধিশা দাঁড়িয়ে বললো
” জি, কে আপনি?” ছেলেটা উত্তরে ইতস্তত করে বললো
” আ আমি সাওন। একটু হেল্প করতে পারবেন? আমি আসলে আজকে নতুন। কাউকে বলতে পারছি না তাই আর কি।” রিধিশা মিহি হেসে বলল
” ইটস ওকে, বলুন কি সমস্যা?” সাওন খুশি হয়ে একটা ফাইল দেখিয়ে সমস্যা বের করে দেখায়। রিধিশা সাওনকে তার সমস্যা বুঝিয়ে বলতে থাকে।

এরমাঝে নিশাদ বিজয় স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। নিজের কেবিনের কাছে এসে রিধিশা আর সাওনকে দেখে। রিধিশাকে হাসি মুখে কথা বলতে দেখে মাথার ভেতর আগুন জ্বলে উঠে।
“এতোক্ষণ ধরে এই মেয়ের সাথে কথা বললাম তখন কান্না ছাড়া কিছু করলো না আর এখন কথা বলার আগেই হাসি ফুটছে?” নিশাদ মনে মনে কথা গুলো ভেবে দাঁতে দাঁত চেপে দুজনের কাছে গেলো।
দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে রিধিশার উদ্দেশ্যে বললো
” কি করছো এখানে?” রিধিশা সাওনের ফাইল দেখিয়ে বললো
” এখানে একটু সমস্যা হচ্ছিলো বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

নিশাদ সাওনের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো
” বুঝেছো তো? নাকি আমি বুঝিয়ে দেবো?” সাওন মাথা নেড়ে বললো
” বুঝেছি। রিধিশা অনেক ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে।” নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে হেসে রিধিশার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার সাওনের দিকে তাকিয়ে বললো
” খুব ভালো। এরপর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।” সাওন মাথা নেড়ে চলে গেলো।

নিশাদ রেগে রিধিশার টেনে এনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। রিধিশা রেগে বললো
” আরে! কি ধরনের অসভ্যতাম এটা?” নিশাদ রিধিশার দিকে ঝুকে রেগে বললো
” অসভ্যতাম কাকে বলে সেটা ভালো করে দেখিয়ে দেবো সুযোগ পেলে। এতো কিসের হেসে হেসে কথা বলছিলে ওই ছেলের সাথে? আমি এতোক্ষণ ধরে কথা বলার চেষ্টা করছি কথা তো দূড় কান্নাই বন্ধ করলে না। আবার নামও বলে দিয়েছে রিধিশা।”

রিধিশা নিশাদের হাতে কলমের গুঁতো দিয়ে বললো
” কোন পাগলা গারদের পাগল আপনি? কলিগের সাথে কি রেগে রেগে কথা বলবো নাকি? আর চোখ কি বাড়ির আলমারিতে গুছিয়ে রেখে এসেছেন? সবার গলার আইডি কার্ড চোখে পড়ে না আপনার? আমি কারো সাথে কথা বললে আপনার সমস্যা কি?একদম এসব নাটকীয় কাহিনী করবেন না!”

নিশাদ মুখ ফুলিয়ে রেখে বললো
” আমি ছাড়া তুমি কারো সাথে কথা বলবে না। ঝগড়া করলেও আমার সাথে করবে, মারামারি, হাসি-মজা কান্না করলেও আমার সাথেই করবে। অন্য কারো সাথে না বুঝেছো?” রিধিশা সরু দৃষ্টিতে তাকায়। নিশাদ গা ঝেড়ে গম্ভীর হয়ে বললো
” তাকিয়ে আছো কেনো? কাজ করো! আর সিনিয়র এর কথা শুনতে হয়। আমি সব জায়গায় তোমার সিনিয়র।” রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে কাজে মন দেয়।

___________

টিউশনি পড়াতে এসে আজকে নিশাদকে দেখতে পেলো না কোথাও।
আজকে ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে অপেক্ষা করছিলো। জোতি ক্লাসে এসেজ একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো রিধিশার হাতে। রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি এটা?” জোতি মেকি হেসে বললো
” তোর জন্য সারপ্রাইজ। বাসায় গিয়ে দেখবি কেমন?”
রিধিশা ব্যাগ এদিক ওদিক করে দেখে বললো
” সারপ্রাইজ কিসের? আর এতো ভারী কেনো ব্যগটা? আমার তো বার্থডেও না আজকে।”
” আরে বার্থডে ছাড়া কি গিফট সারপ্রাইজ দেওয়া যায় না নাকি?”
” আচ্ছা বাবা বুঝেছি।”

ছুটির পর লেকের পার এসে কৃষ্ণচূড়া ফুল কুড়িয়ে নিলো আজকে অনেক গুলো। রিধিশা বারবার চারপাশে তাকাচ্ছিল নিশাদের খোঁজে কিন্তু কোথাও দেখা নেই তার।
বাসায় এসে ফুলগুলো দিয়ে একটা ক্রাউন বানিয়ে মাথায় পড়লো। তারপর জোতির দেওয়া ব্যাগটা খুললো। ব্যাগ খুলতেই রিধিশা চোখ বিস্ময়ে ছেয়ে যায়। লাল টুকটুকে একটা ভারী কাতান শাড়ি। রিধিশা সাথে সাথে জোতি’কে ফোন করলো।
“কিরে এসব কি দিয়েছিস? লাল বেনারসি? আজকে কি আমার বিয়ে নাকি? এসব কেন দিয়েছিস?”

জোতি হেসে বললো
” আরে এমনি দিয়েছি। আমার অনেক ইচ্ছে হচ্ছিলো তোকে কিছু গিফট দেই তাই দিয়েছি। আজকে অফিসে পড়ে যাবি কিন্তু এটা!” রিধিশা চোখ বড় বড় করে বললো
” কি! এটা পড়ে অফিসে যাবো? আমাকে দেখলে সবাই বলবে বিয়ে করতে গিয়েছি অফিসে। তোকে মনে হচ্ছে ডক্টর দেখাতে হবে। এটা কেমন অদ্ভুত রকমের ইচ্ছা তোর? গিফট দেওয়ার ইচ্ছে হলে কাজের কিছু দিতি! আমার বিয়ে কোন কালে হবে সেটাও জানি না। এতোদিনে তো এই শাড়ি’টা ইঁদুরের পেটে চলে যাবে।”

” ধুর তুইও না বেশি বেশি ভাবিস। আসল কাজেই লাগবে তুই যা এখন অফিসে যা। যখন দরকার হবে তখন এমনি পড়বি তুই।”
জোতি কল কেটে দিলো। টু টু শব্দ শুনে রিধিশা মুখ লটকিয়ে রাখে।
ব্যাগ থেকে আরো জিনিস বের করলো। শাড়ির সাথে খুব সুন্দর কিছু অর্নামেন্স রয়েছে। রিধিশা সব গুছিয়ে রেখে বেরিয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে।

চলবে……#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩৮।

অফিসেও আজকে নিশাদের দেখা পেলো না। রিধিশা চিন্তিত হয়ে উঠে নিশাদের কথা ভেবে। কাজ করে কোনক রকমে অফিসের সময়টা কাটালো রিধিশা। অফিস থেকে বেরিয়ে রিকশা ধরে বাসার উদ্দেশ্যে যেতে থাকে। রিকশা দিয়ে বাসায় আসার পথে উঁচুনিচু টক্কর খাওয়ায় রাস্তায় রিকশাচালক কোনোরকমে জায়গাটা পার হয় কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় শেষ জায়গায় এসে সামনে থেকে আসার একটা গাড়ির সাথে জোড়ে ধাক্কা খায়। রিধিশা টান না সামলাতে পেড়ে উল্টে পড়ে যায় কিন্তু রিকশা’টা পড়তে পড়তে আটকে নিয়েছে রিকশাওয়ালা।

রিধিশা এরকম রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় মারাত্মক ব্যাথায় উঠেও বসতে পারলো না। রিকশাওয়ালা দৌঁড়ে এসে রিধিশাকে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু রিধিশা উঠতে পারে না। রাস্তার কয়েকটা গাড়ি বন্ধ হয়ে কয়েকজন বেরিয়ে আসে রিধিশাদের কাছে। একজন মেয়ে রিধিশার কাছে দৌঁড়ে এসে চিন্তিত হয়ে বললো
” কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন? দেখি উঠুন উঠুন!” রিধিশা মেয়েটার মুখের পানে একবার তাকিয়ে তার সাহায্যে ব্যাথা নিয়ে কোনো রকমে উঠে দাঁড়ায়। যেই গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিলো সেই গাড়ির ড্রাইভার এসে রিধিশার অবস্থা দেখে বললো
” আপনি চলুন আমার সাথে আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।”

রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” নাহ দরকার নেই আমি চলে যাচ্চি।” মেয়েটা রেগে বললো
” এই মেয়ে এই অবস্থায় যাবে কি করে তুমি? চুপচাপ চলো হসপিটালে নিয়ে যাবে।” মেয়েটা রিধিশাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আসে। মেয়েটা চলে যেতে নিলে রিধিশা তাকে আটকে ভীতু গলায় বললো
” আপু আপনি যাবেন আমার সাথে? আমি তো একা ” মেয়েটা রিধিশার দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো
” ঠিকাছে, যাচ্ছি।”

ড্রাইভারকে লোকেরা বকাবকি করছিলো। ড্রাইভার সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলে টাকা দিতে চাইলে রিকশাওয়ালা রেগে বললো
” ফাজলামো পাইছেন? বড়লোক দেইখা কি যা ইচ্ছা করবেন? এক্সিডেন্ট করাইয়া এখন টাকা দেখান আমাগো! আপনারে তো পুলিশের কাছে দেওয়া উচিত।”

ড্রাইভার অসহায় গলায় বললো
” ভাই, প্লিজ! ক্ষমা করবেন। আমি ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করাইনি। আমি টাকা’টা ঘুষ হিসেবে দিচ্ছি না। আপনিও ব্যাথা পেয়েছেন এই টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে নেবেন আর বাকি টাকা থাকলে ফলমূল কিনে নিবেন।” রিকশা ওয়ালার হাতে তাকা দিয়ে দ্রুত গাড়িতে বসে পড়ে।

ড্রাইভার হসপিটালের উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাচ্ছে চুপচাপ।রিধিশার বা হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তবে কোনো রকমে হাটতে পারে।মেয়েটা বারবার তাড়া দিচ্ছে ড্রাইভারকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রিধিশা ঘাড় হেলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ব্যাথায় হাত বা অবশ হয়ে রয়েছে। ভয় এখনও কাবু করে রেখেছে। নিশাদের কথা মনে পড়ছে বারবার রিধিশার। নিশাদ এই রাস্তায় এসে রিধিশার জন্য খুবই সাবধানের সাথে বাইক চালাতো।
আজকে নিশাদ নেই দেখেই হয়তো এক্সিডেন্ট’টা
হয়েছে। রিধিশা মুখ শুকিয়ে ফেলে।

.
হসপিটালে আসতেই রিধিশাকে কেবিনে নিয়ে যায়। রিধিশার পাশে উমায়রা চুপচাপ বসে আছে। রিধিশা তাকে যেতে দেয়নি এখনও। নার্স রিধিশার হাতে রক্ত পড়া বন্ধ করে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। এরমাঝে একজন ডক্টরও আসলো। সে রিধিশাকে দেখে অবাক হয়ে বললো
” আরে মিস রিধিশা! এক্সিডেন্ট করে আসলেব কি করে?”রিধিশা বোকার মতো কিছুক্ষক তাকিয়ে থাকার পর তাকে চিনতে পারলো। জ্বরের সময় এই হসপিটালেই এই ডক্টরই তাকে দেখেছিলো।

রিধিশা ইতস্তত বোধ করে বললো
“গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে এক্সিডেন্ট হয়েছে।” ডক্টর জিজ্ঞেস করলো
” আপনার হাসবেন্ড কোথায়?”
ডক্টরের কথায় রিধিশা চোখ বড়বড় করে তাকায়। উমায়রাও অবাক হয়ে রিধিশার দিকে তাকালো।
বিরবির করে বললো
“এতো ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে? ভাবা যায়? আমি এখনও বিয়ে করতে পারলাম না। ছি! উমায়রা shame on you.”

রিধিশা অবাক হয়ে বললো
” আমার হাসবেন্ড কে? আমার তো বিয়েই হয়নি।” ডক্টর থতমত খেয়ে বললো
” হাসবেন্ড না? তাহলে আপনার জ্বরের সময় যে ছেলেটা ছিলো কি যেনো নাম…।” ডক্টর মনে করতে করতে রিধিশা চট করে বললো
” নিশাদ!”
” হ্যা। উনাকে তো আপনার হাসবেন্ডই ভেবেছিলাম। আপনার জন্য এতো অস্থিরতা আর যত্ন করেছেন আপনার। বুঝেছি উডবি হয়তো তাই এতো টান। কিন্তু উনি জানেন না আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছে?”
রিধিশা মাথা নেড়ে না বোঝালো।

ডক্টর রিধিশার পায়ের ব্যান্ডেজও করে দিলো। হাতের ব্যান্ডেজ করতে থাকে। রিধিশা বারবার ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে। রিধিশা ব্যাথাতুর চেহারায় বললো
” ডক্টর হাতে ব্যাথা করছে অনেক। হাত নাড়াতে পারছি না কেনো?”
” জোড়াল চোট তাই। সময় লাগবে ঠিক হতে। আজকে হসপিটালে থাকতে হবে। আপনার হাতে পায়ের অবস্থা বেশি ভালো না।”
রিধিশা নাকচ করে বললো
” না, না বাসায় যাবো আমি।”
উমায়রা উঠে এসে বললো

” আরে ডক্টর বলছে থাকতে। তোমার থাকতেই হবে। এই অবস্থায় বাসায় কি করে যাবে?”
রিধিশা বললো
” গাড়ি দিয়ে যাবো আমি কিন্তু হসপিটালে থাকতে পারবো না আমি।” উমায়রা কিছুক্ষণ জোরাজুরি করার পরও রিধিশার একই কথা। উমায়রা ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুমি দেখি নাছরবান্দা একটা মেয়ে।” রিধিশা মুখ ফুলিয়ে তাকায়।
রিধিশার ফোন বেজে উঠে। রিধিশা কান দিলো না সেইদিকে। ব্যাগ থেকেও খুললো না ফোনটা। দুই ঘন্টা ধরেই ফোন বাজছে মাঝে মাঝে। কিন্তু রিধিশার সেদিকে খেয়াল দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
কেবিনে সেই ড্রাইভার’টা আসলো। রিধিশাকে বাসায় দিয়ে আসার কথা বললো আর রিধিশার কাছে অনেক বার ক্ষমা চায়।

.
বাড়ির সামনে গাড়ি থামালে উমায়রা রিধিশাকে বের হতে সাহায্য করে আসে। রিধিশা দেখলো এখন আর নড়তে পারছে না ভালো করে। রিধিশা অসহায় দৃষ্টিতে উমায়রার দিকে তাকায়। উমায়রা রেগে বললো
” একদম ভালো হয়েছে। এমনিই হওয়া উচিত ফোমার সাথে। জেদি মেয়ে আজকের রাতটা হসপিটালে থাকলে মরে যেতে নাকি?” রিধিশা মাথা নিচু করে নেয়। উমায়রা বললো
” হয়েছে এখন মন খারাপ করে কি হবে? কষ্ট করে বাসায় যেতে হবে তো!”

রিধিশা মাথা নেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা হজম করে কোনো রকমে গাড়ি থেকে বের হয়েই হাল ছেড়ে দিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। ব্যাথায় পা সহ হাত টনটন করে উঠে। রিধিশা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো
” আমি যেতে পারছি না।” রিধিশাকে কাঁদতে দেখে উমায়রার বেশ মায়া হলো। উমায়রা অবদার কতে বললো
” একটু সহ্য করো আর! বাসায় গেলেই হয়ে যাবে।”

“রিধিশা!”
নিশাদের গলা শুনে রিধিশা কেঁপে উঠে। চোখ বুলিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নিশাদ হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে আসছে তার কাছেই। নিশাদ রিধিশার কাছে এসেই রেগে বললো
” কোথায় ছিলে তুমি? কতো ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে? অফিস থেকে আসতে তিন ঘণ্টা লেগেছে তোমার? চিন্তায় সবাই মরে যাচ্ছে আর তোমার কোনো খোঁজই নেই।” রিধিশা আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে দেয়। নিশাদ চুপ করে যায়। উমায়রা’কে দেখে নিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উমায়রা বললো
” রিধিশার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। হসপিটালে ছিলো এতোক্ষণ।”

নিশাদ চমকে রিধিশার দিকে তাকায়। রিধিশার ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে খেয়ালই দেয়নি সে। নিশাদ অস্থির হয়ে রিধিশার কাছে এগিয়ে বললো
” এক্সিডেন্ট কিভাবে হয়েছে তোমার? আর কোথায় ব্যাথা পেয়েছো তুমি?” উমায়রা বললো
” আগে বাসায় নিলে ভালো হতো। দাঁড়াতে পারছে না ব্যাথায়।” নিশাদ রিধিশাকে এক হাতে জড়িয়ে হুট করে কোলে তুলে নিলো। রিধিশা খেয়াল হলো না সেদিকে। উমায়রা চোখ বড়বড় করে তাকায়। নিশাদ উমায়রা আর ড্রাইভারকে বললো
” আসুন আমার সাথে।”

নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে বাসায় বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। রিধিশা নিশাদের গলা জড়িয়ে রেখেছে। ব্যাথা যেনো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
দোতলার বাড়িওয়ালার ড্রইংরুমেই সবাই জোট বেধে ছিলো। নিশাদদের দেখে সবাই এগিয়ে আসে। রিধিশার রুম তালা দেখে হেনা রিধিশা’কে তাদের গেস্ট রুমে নিয়ে যেতে বললো। নিশাদ কোনো দিক না তাকিয়ে সেদিক চলে গেলো। হেনা উমায়রা আর ড্রাইভারকে নিয়ে বসায়।
উমায়রা সাজেদা বেগমের সাথে কথা বলতে থাকে। এখানে সূর্য, সাদি দুজনই ছিলো ড্রাইভারের কথা শুনে হিংস্র ভাবে তাকালো যেনো এখনই খেয়ে ফেলবে।

নিশাদ রিধিশাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। রিধিশা চোখ মুখ মুছে বসে অভিমানী গলায় বললো
” সারাদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আপনার জন্য আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে। আপনি জাননি কেনো আজকে?” নিশাদ অস্থিরতার মাঝেও রিধিশার কথা শুনে হেসে দিয়ে বললো
” আমি গেলে কি হতো?” রিধিশা আবার কেঁদে দেয়
” আপনি গেলে এক্সিডেন্টই হতো না। আর আমিও এতো ব্যাথা পেতাম না।” নিশাদ রিধিশার পাশে বসে রিধিশাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে।

তিন ঘণ্টা ধরে রিধিশার অপেক্ষায় ছিলো। রিধিশাকে আসতে না দেখেই ভয়ে হাত পা কাঁপছিল তাই। কলের উপর কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ তো হয়নি। নিশাদ রিধিশার হাত ধরে অস্থির গলায় বললো
” আর কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?” রিধিশা বলার আগেই বাইরে থেকে নিশাদের ডাক পড়ে।
নিশাদ দৌড়ে চলে গেলো। হেনা আর উমায়রা আসে রিধিশার কাছে। উমায়রা রিধিশার মাথা হাত বুলিয়ে বললো
” চলে যাচ্ছি। খেয়াল রেখো নিজের কেমন?”
” আজকে থেকে যাও আপু?”
” না গো বাসায় চিন্তা করবে তো মা, বাবা। আরেকদিন এসে দেখে যাবো।” রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” সাবধানে যেও।” উমায়রা হেসে বিদায় নেয়।

হেনা রিধিশার পাশে বসে মন খারাপ করে বললো
“আজকেই এমন হতে হলো? এতো ভালো একটা দিনে!”
” ভালো দিনে মানে? তোমাদের ঘরে কি কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে?” হেনা হচকচিয়ে বললো
” না তো এমনি বলছি। তুমি রেস্ট করো কেমন? আমি নয়ন কে পাঠাচ্ছি।” হেনা রিধিশাকে ভালো করে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

.
সূর্য চিন্তিত হয়ে বললো
” কি করবি? বিয়ে টা কি আজকেই করবি নাকি ডিসিশন চেঞ্জ করবি?” নিশাদ শান্ত গলায় বললো
” বিয়ে তো আজকেই হবে। ভোর পাঁচটা বেজে গেলেও আজকে বিয়ে হবে।”
সাদি ফিসফিস করে বললো
” রিধিশা রাজি হবে?”
” হতেই হবে। আমি ফোন করলে কাজিকে এখানে নিয়ে আসিস।” সূর্য আর সাদি মাথা নেড়ে সায় দেয়।

রুমে গিয়ে নিশাদ রিধিশার পাশে বসে রিধিশার দিকে চোখ বুলায়। রিধিশা গুটি শুটি মেরে বসে আছে ব্যাথায়। নিশাদ চিন্তিত হয়ে বললো
” ডক্টর কি বলেছে?” ডক্টরের কথা মনে করে রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো
” আগেরবার উনি ভেবেছিলো আপনি নাকি আমার হাসবেন্ড। আর আজকে জিজ্ঞেস করেছে আপনার কথা।” নিশাদ বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে বললো
” আমি হাতের কথা জিজ্ঞেস করেছি।”
” জানি না আমি ঘুমাবো, ক্লান্ত লাগছে। আপনি আমাকে একটু রুমে দিয়ে যান।”

নিশাদ গলা ঝেড়ে বললো
” এখনই ঘুমালে বাকি কাজ কি করে হবে? এখনও অনেক কাজ বাকি তোমার। বলছি শাড়ি পড়তে পারবে কষ্ট করে?” রিধিশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” মানে? কিসের কাজ? আর শাড়ি কেনো পড়বো আমি?” নিশাদ শান্ত চাহনিতে বললো
” আজকে আমাদের বিয়ে।” রিধিশা চমকে উঠে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই বললো
” মজা করছেন তাই না? এতো রাতে মজা করছেন কেনো? আপনি বাসায় যান। আন্টিরা শুনলে খারাপ ভাববে।”

” রিধিশা আমি সিরিয়াস। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম কারণ আজকে আমাদের বিয়ে। একটু পর আমাদের বিয়ে হবে।” রিধিশা বিস্ময়ে চট করে উঠে বসে। বসতে গিয়ে হাতে আর পায়ে টান খেয়ে কুঁকড়ে উঠে। চোখ মুখ শক্ত করে বললো
” সমস্যা কি আপনার? কিসের বিয়ে কিসের কি? আমাদের বিয়ে মানে কি? আমি কোনো বিয়ে করছি না। আপনি যান এখান থেকে নাহলে আমি এখন চলে যাবো।”
” রিধিশা অযথা রিয়েক্ট করবে না। তোমার আমার বিয়ে হচ্ছেই আজকেই।” রিধিশা রেগে বললো
” মানে কি? মগের মুলুক পেয়েছেন? বললেন আর হয়ে গেলো? এসব বলার আগে আমার মতামত জেনেছেন?”

নিশাদ ঠান্ডা গলায় বললো
” মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল। তোমাকে তো আমি আগেও বলেছি তোমাকে আমি বিয়ে করবো।”
“মানে কি ওইসব কোনো কথা হলো? আমি তো ভেবেছি মজা করে বলেছেন। যাই হোক আমি বিয়ে করছি না মানে করছি না।” রিধিশা বিছানা থেকে নেমে যেতে নিলে নিশাদ রিধিশাকে আটকে বললো
” চুপ করে বসো। আমি যা বলছি চুপচাপ শোনো আমাদের দুজনেরই ভালো।” রিধিশা রেগে নিশাদের হাত ছাড়িয়ে নেয়।

নিশাদ রিধিশার রিধিশার ডান হাত ধরে বললো
” তুমি আমি, আমরা দুজন ভালো করেই আমরা একে অপরের অভ্যাসে পরিণত হয়েছি। তুমি আমাকে ছাড়া
এক দণ্ড চলতে পারো না আর আমিও তোমাজে ছাড়া এক দণ্ড চলতে পারি না। আমি আমার অভ্যাসকে জীবনের অংশ করে নিবো আজকে। একটু পর কাজি আসবে বিয়ে পড়াতে। মানসিক ভাবে তৈরি থেকো।”
রিধিশা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
” দেখুন বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। আমি বিয়ে করবো মান করবোই না। বিয়েকে ছেলে খেলা মনে করছেন নাকি?”

নিশাদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
” রিধিশা, বিয়ে ছেলে খেলা মনে করার মতো বিষয় না
যে চাইলেই মনে করা যাবে। আর একটাও কথা বলবে না। যদি না করো আমি বাইরে গিয়ে আন্টিদের বলবো তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না। এলাকায় আমাদের সম্পর্ক না জানলেও আমাদের একসাথে অনেকবার দেখেছে। যদি কিছু গিয়ে বলি তোমাকে সবাই কেমন চোখে দেখবে সেটা ভাবো। তোমার সম্মাব হানি হবে। আমি চাই না সেরকম কোনো কিছু করে তোমাকে বিয়ে করতে তাই চুপচাপ রাজি হয়ে যাও।”

রিধিশা নিঃশব্দে কেঁদে বললো
” আপনি এমন করবেন ভাবিনি কখনো। খুবই খারাপ আপনি।” নিশাদ রিধিশার গাল আঁকড়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো
” আমি অনেক ভালো বুঝেছো? আমার মতো ছেলে খুঁজে পাবে না তুমি। আমি কখনো তোমাকে বাজে ভাবে ছুঁইনি, তোমার পাশে থেকেছি, তোমার ভালো চাই আর তোমাকে আমার পাশে চাই।” রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশাদ রিধিশার ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকায়।

রিধিশা ধ্যানে ডুবে গেলো। নিজের ভেতরের অনুভূতি গুলোও তো মিথ্যা না। যদি এভাবেই পূর্ণ হয় ভালোবাসা তাহলে হোক না। নিশাদকে পাচ্ছে আর হয়তো নিশাদের ভালোবাসাও পাবে।
রিধিশা কিছুক্ষণ ভেবে নাক টেনে বললো
” ঠিকাছে বিয়ে করবো তবে আমার পরিবার ছাড়া বিয়ে করবো না আমি।” নিশাদ খুশি হয়ে গেলেও আবার ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো
” পরিবারকে কিভাবে নিয়ে আসবো? ওদের সাথে কথা বলে সব ঠিক করতেই দুদিন চলে যাবে। দুদিন আমি অপেক্ষা করতে পারছি না। এখনই বিয়ে করবো আমি। বিয়ের পর সবাইকে বলা যাবে।”
রিধিশা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো
” তাহলে অন্ততপক্ষে ভাইয়াকে জানাতে দিন! ভাইয়াকে না জানিয়ে বিয়ে করবো না।”

নিশাদ গম্ভীর রূপ ধারণ করে গলায় বললো
“না ভাইয়া হলে তো আরো আগে না। বউ এর ভাই রা বিয়ের দ্বিতীয় বাধা। তোমার ভাইয়া যদি রাজি না হয় তখন? আমি রিস্ক নেবো না। বিয়ে করবে তারপর সব ভাইয়া, আব্বু। এখন রেস্ট করো। তুমি কি বিয়ের শাড়ি’টা পড়তে পারবে নাকি এভাবেই বিয়ে করবে?”
রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” বিয়ের শাড়ি কোথায় পাবো?”
” মানে ? জোতি তোমাকে শাড়ি দেয়নি আজকে?”
রিধিশা দুপুরের কথা মনে পড়তেই চোখ বড়বড় করে বললো
” মানে ওটা আপনিই দিয়েছেন?” নিশাদ চোখের পলক ফেলে বললো
” জি ম্যাডাম।” রিধিশা ফুস করে নিশ্বাস ফেলে বললো
” আমি একটু আমার রুমে যাবো ভাবিকে ডেকে দিন।”

নিশাদ পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে বললো
” হাটতে তো পারছো না আবার এভাবে নেমে যাচ্ছো একটু একটু করে। ভাবি কি তোমাকে নিয়ে পারবে নাকি?”
” পারবে। আমি কষ্ট করে চলে যাবো।”
” আমি তো কষ্টই করতে দেবো না তোমায়।” কথা শেষ করে নিশাদ রিধিশাকে কোলে তুলে নিলো। রিধিশা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়। নিশাদ হেনাকে ডেকে বললো
” ভাবি একটু তালা’টা খুলে দাও না!” হেনা তড়িঘড়ি করে তালা খুলতেই নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে বিছায়া বসিয়ে দেয়।

চলবে…….

[ ২০০০+ শব্দের পর্ব দিলাম। আজকে তো বিয়ে হয়নি। সবাইকে দাওয়াত রইলো নিশাদ আর রিধিশার বিয়ের জন্য। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here