কুয়াশায় ঘেরা আধার পর্ব -০৭

#কুয়াশায়_ঘেরা_আঁধার
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত

–তুমি মা হতে পারবে নুহা। কিন্তু তুমি সেটা কোনোদিন ও জানবে না।

বলেই আড়ালে হেসে উঠলো কেউ একজন। হাসতে হাসতে ব্যাক্তিটি আবারো বলে উঠলো….

—খান বাড়ি তে অন্ধকার নেমে আসবে। সিনথিয়া বেগমের সারাজীবনের অ’হংকার আমি ধুলোয় মিশিয়ে দিব। খুব শিঘ্রই।
____________________________________________
সন্ধ্যা নামতেই চারদিকে আলিশা বিছানা থেকে নেমে পড়লো। দরজাটা বাইরের থেকে আটকানো থাকে সব সময়। আলিশা রুমের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো সব মাত্র সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৪৫ মিনিট। এখনো গার্ড রা আসতে অনেক দেরি। নিশ্চয়ই সন্ধ্যার নাস্তা দিতে কেউ একজন আসবে।।আলিশার মাথায় হুট করেই একটা বুদ্ধি আসলো। এখন ৭ টা বাজা অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। আলিশা ততক্ষনে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। আজ ওকে লাস্ট একটা রিস্ক নিতেই হবে। এতে যা হওয়ার হবে। এত দিকে ভাবলে সারাজীবন ওকে এই বন্দী দশায় পঁ’চে ম/রতে হবে।
আলিশা দরজার আড়ালে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো আর তখনি ওর নজর টেবিলের উপরে থাকা ওর ঘড়িটার দিকে যায়। আলিশা ঘড়িটা তুলে নিতেই ওর চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। ঘড়িটা যে নুহা দিয়েছিলো। নুহার দেওয়া প্রথম উপহার ছিলো এটা। আলিশা ঘড়িটা হাতে পড়ে নিয়ে মনে মনে ভাবলো…..

-ভাইয়া, বউমনি, স্মৃতি আপু, মা,আবরার তোমরা সবাই কেমন আছো খুব জানতে ইচ্ছে করছে আমার? আবরার প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।

আলিশা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো। হঠাৎ করেই ওর কানে দরজা খোলার শব্দ ভেসে আসতেই আলিশা লাফিয়ে দাড়িয়ে পড়ে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। দরজা খুলে কেউ একজন ভেতরে আসতেই আলিশা তাকে আঘাত করতে গিয়েও থেমে গেলো। এটা যে ওর পরিচিত মুখ। আলিশা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো….

—আবরার?

আলিশার কন্ঠস্বর পেতেই আবরারের হার্ট বিট থেমে গেলো। কতদিন পর নিজের প্রিয় মানুষ টার গলা শুনলো ও? আবরার পেছনে ফিরে আলিশার কান্না মাখা শুকনো মুখটা দেখতেই ওর চোখ পানি টলমল করে উঠলো। আবরার কে দেখেই আলিশা কোনো কথা না বলে ঝাপটে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আবরার ও আলিশাকে শক্ত করে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো। আলিশা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো…..

—আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো প্লিজ। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে। আমি মায়ের কাছে যাব আবরার। প্লিজ, আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে। আমি এখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকব না।

আলিশা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উঠলো। আবরার আলিশার দুই গালে আলতো করে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…..

—নিয়ে যাব। তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি এসেছি। আমরা এখান থেকে চলে যাব। তুমি ভয় পেও না প্লিজ।

বলেই আবারো জড়িয়ে ধরলো আলিশাকে। আলিশা কান্না করতে করতে হেচকি তুলে ফেলছে।

—আলিশা বোন আমার তুই ঠিক আছিস।

নিহানের গলা পেয়েই আলিশা দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো নিহান দাড়িয়ে আছে। আলিশা নিহান কে দেখেই ভাইয়া বলে গিয়ে নিহান কে জড়িয়ে ধরলো। নিহান বোনের কপালে চু’মু দিয়ে ঝাপটে ধরলো। আলিশাকে নিহান নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।

–তুই ঠিক আছিস। তোর কোথায় আ’ঘাত করেছে ওরা বল আমাকে? ওদের একেকটাকে আমি নিজের হাতে খু /ন করব।

নিহানের কথা শুনে আলিশা হেচকি তুলতে তুলতে বললো……

—ভাইয়া আমি এখানে আর থাকব না। আমাকে প্লিজ, মায়ের কাছে নিয়ে যাও। আমি বাসায় যাব। প্লিজ, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।

নিহান আর আবরার মিলে আলিশাকে শান্ত করে রওনা দিলো। সারা রাস্তা আলিশা আবরারের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে গেছে।
____________________________________________
–তোমার গেম ওভার তৃধা। এক্ষুনি মন চাচ্ছে তোমাকে গ/লা টি/পে মে/রে ফেলি। এত কষ্ট করে এত খেটে আমি এত প্লান করে এত কিছু করলাম আর তোমার একটা ভুলে আমার সব-কিছু ন’ষ্ট হয়ে গেলো।

সামনে থাকা ব্যাক্তিটির রাগ দেখে তৃধা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। উপরোক্ত কথাগুলো শুনে তৃধা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো……

—শোনো, আমি নিহান কে পাওয়ার জন্য এসব কিছু করেছি। আলিশাকে কিডন্যাপ করে টর্চা’র তুমি করেছিলে। ওদের সম্পত্তিও তুমি নিয়েছিলে আমার নাম ব্যবহার করে। আমাকে দোষী করেছো সবার কাছে। শুধু মাত্র নিহান কে ভালোবাসি বলে কিছু বলেনি। এখন তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি সবার কাছে সবটা বলে দিব। ভুলে যেওনা আমার কাছে সমস্ত প্রুভ আছে। আমি কি করতে পারি তোমার ধারনার বাইরে। ইউ নো হু আই এম?

বলেই বেড়িয়ে গেলো তৃধা। তৃধা বেড়িয়ে যেতেই মেয়েটা রাগে হাতে থাকা মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলো। রাগে ফোসফাস করছে মেয়েটা।

—আজকেই হবে তোমাদের সবার জীবনে শেষ রাত।

বলেই হা হা করে হেসে উঠলো মেয়েটি।
____________________________________________
নুহা বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আর নুহার মা নুহার সমস্ত কিছু গুছিয়ে দিচ্ছে আজ নুহা হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। মেয়েটার মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সন্তানের থেকে মা ডাক শোনার থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হয়ে গেলো মেয়েটা। নুহার ভেতর টা ভেঙে চূড়ে গেছে। কিন্তু উপর টা সুন্দর। হাজার কষ্ট লুকিয়ে রেখে হাসি মুখে চলার অদ্ভতু ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় মেয়েরা। বুকে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে নুহা ও আজ হাসি মুখে আছে। কি হতো যদি সবটা সুন্দর হতো? নুহা বসে বসে এইসবেই ভাবছিলো হঠাৎ করে দরজার দিকে চোখ যেতেই নুহার মুখে হাসি ফুটলো। আলিশা দৌড়ে এসে নুহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে উঠলো। নু্হা কাঁদছে না। বরং ওর মুখে হাসি। নুহার মুখে হাসি দেখে নিহান ঠিকি বুঝতে পারছে ওর কষ্টের গভীরতা বিশাল।

—বউমনি আজ শুধু তোমার জন্য আমি সবটা ফিরে পেয়েছি। আমি সবটা পেয়ে গেছি আর তুমি সবটা হারিয়ে ফেলেছো।

আলিশার কথা শুনে নুহা একটু হেসে বললো…..

—সব পাওয়াতে সুখ থাকেনা। সব কিছু পেতে নেই। সব পেয়ে গেলে না পাওয়ার সুখ অনুভব করতে পারতাম। না পাওয়ার বিষাদ থেকে দূরে সরে যেতাম।

নুহার শক্ত কথা শুনে নিহান এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে। নিহানের কেনো যেনো নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। নুহা আর আলিশা নিজেদের মতো করে কথা বলছে। হঠাৎ করেই রুমের ভেতর স্মৃতি ঢুকলো। স্মৃতিকে দেখেই নুহা চওড়া করে হাসলো। স্মৃতি অশ্রুসিক্ত চোখে নুহার কাছে এসে বলে উঠলো….

—কি করে পারিস সবটা মেনে নিতে? আমার মা, আমার ভাই তোর সাথে এত বড় অন্যায় করলো আর তুই নিমিশেই সব ভুলে ওদের আগলে নিলি?

স্মৃতির কথা শুনে নুহা শব্দ করে হাসলো। নুহার হাসির মাঝে রহস্যের ঘ্রান পাচ্ছে স্মৃতি। এই হাসির মানে অন্য কিছু। নুহা হেসে স্মৃতির দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে উঠলো…..

— আপনরা যখন পেছন থেকে ছু/ ড়ি মা/রে। তখন পরিস্থির স্বীকার হওয়া ব্যাক্তিদের দোষ দিয়ে কি লাভ? এই যে যেমন ধরো, তোমার এই সুন্দর মুখের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে একটা বিশ্রি চেহারা তাইনা।

নুহার কথা শুনে উপস্থিত সবাই নুহার দিকে নুহার দিকে অবাক চোখে তাকালো। নুহা সবার বিস্ময় ভরা চাহনী উপেক্ষা করে বললো…..

—আমি জাস্ট একটা উদাহরণ দিলাম। ভয় পাওয়ার কারন নেই।

নুহার কথা শুনে স্মৃতির দম আটকে যাচ্ছিলো। এতক্ষনে স্মৃতি হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নুহা আজ নিহান দের বাড়ি যাবে। সব খেলা আজ শেষ করতে হবে। তৃধার অধ্যায় এখানে ক্লোজ করতে হবে। নুহার কেনো যেনো মনে হচ্ছে অন্য কোনো ঝড় আসতে চলেছে। সেই ঝড়ের নাম কি? এই ঝড়ে কাকে কেড়ে নিবে নুহার জীবন থেকে?
স্মৃতি রুমের থেকে বেড়িয়ে এসে রহস্য ময় একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো……

—-নিজেকে অনেক চালাক ভাবো তাইনা নুহা। কিন্তু তুমি তো জানোনা আজ তোমার জীবনে কত বড় ঝড় আসতে চলেছে?

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here