#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৯
ইলিশমাছের গরম গরম তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছে তিহান।বেগুন আলু দিয়ে করা ইলিশমাছ টা আজকে একটু বেশিই স্বাদ হয়েছে।ছেলেকে তৃপ্তিভরে খেতে দেখে আফিয়া তার প্লেটে আরেকটু তরকারি তুলে দিয়ে বললেন,
—“”দুপুরে খাসনি তাইনা?”
তিহান অমায়িক হাসলো।আফিয়া নিমিষেই বুঝে গেলো তার হাসির মানে।গ্লাসে পানি ঢেলে তিহানের সামনে দিয়ে ক্ষুন্ন কন্ঠে বললো,
—“কেন এমন করিস?সবার খেয়াল রাখতে পারিস অথচ নিজের বেলায় যত অবহেলা।”
তিহান আবারো হেসে বললো,
—“এটা অবহেলা না মা।দেখো,আমি যদি আজ দুপুরে খেতাম তাহলে কি আর এমন রাম ক্ষুধা লাগতো বলো?আর এতো ক্ষুধা লেগেছে বলেই খাবারটার স্বাদ কয়েকরুন বেড়ে গিয়েছে।খাবারটা আরো বেশি মজার লাগছে।দুপুরে খেয়ে নিলে তো আর এতটা স্বাদ উপভোগ করতে পারতাম না।তাইনা?’Every action has an equal and opposite reaction.’বুঝলা?”
আফিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে তেঁতে উঠে বললো,
—“হয়েছে,ওতো বোঝা লাগবে না আমার।তোর এই পটল তোলা কথাবার্তা তোর কাছেই রাখ।”
আফিয়ার কথা শুনে ভাত চিবানো বন্ধ করলো তিহান।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
—“পটল তোলা কথাবার্তা মানে?”
ছেলের প্রশ্নে আফিয়া বোকা হেসে বললো,
—“জানিনা।মুখে আসলো তাই বলে দিলাম।”
হাস্যেজ্জ্বল কন্ঠে”তুমিও না মা।”বলে আবারো খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো তিহান।বাস্তবিকই প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে তার।পেটভরে খাওয়া শেষ করে পানির গ্লাসটা হাতে তুলে নিতেই আফিয়া টেবিল গোছাতে গোছাতে বললো,
—“আতিয়া কে বলে এসেছি।তোহা আজ আমাদের এখানেই থাকবে।”
—“কেনো?”
—“এমনিই ইচ্ছে হলো।তোর সমস্যা হবে?তাহলে থাক।”
ঢকঢক করে পানি গিলে নিয়ে আস্তে করে গ্লাসটা টেবিলে রাখলো তিহান।তারপর নিচু গলায় বললো,
—“নাহ্,ঠিকাছে।”
বলে আগের মতোই শান্ত স্বাভাবিকভাবে হাতটা ধুয়ে রুমে চলে গেলো।মনের চাঁপা খুশিটা নিজের প্রশস্ত বুকের মাঝেই খুব যত্নে চাঁপা পরে রইলো।
॥
এখনো ঘুমে আছে তোহা।গভীর ঘুমে।শুধু শরীরের ভাবভঙ্গিটা পরিবর্তন হয়েছে।একটু আগে গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছিলো।আর এখন আস্টেপিষ্ঠে তিহানের কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
এতক্ষণ ঘুমের কারণে তৈলাক্ত হয়ে গেছে মুখ।থুতনির আর ঠোঁটের উপরের জায়গাটায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।আঙ্গুলের উল্টোপিঠ দিয়ে খুব সন্তর্পণে ঘামটা মুছিয়ে দিয়ে নিষ্পলক দৃষ্টিতে কয়েকমিনিট চেয়ে থেকে তিহান।
ঠোঁটের কোঁণে ছোট্ট হাসির মলিন রেখা।
পাশের টেবিল থেকে ফোনটা নয়নে সোফায় যেয়ে সটান হয়ে শুয়ে পরলো সে।পিঠ ব্যাথা করছে।একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু সোফায় ঘুমানো আর না ঘুমানো তার কাছে সমান।আরাম করে সোয়া না গেলে আর কিসের ঘুম!একবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে কান্ত,পরিশ্রান্ত নয়নজোড়া বন্ধ করলো সে।
কিন্তু দেহ কি আর সেসব নিয়ম মানে।তার অবসন্ন দেহ সোফাতেই মানিয়ে নিল একচোঁট ঘুমিয়ে নেয়ার জন্য।মস্তিষ্ক শান্ত হয়ে ঘুমে বিভোর হয়ে আসতেই মেয়েলি কন্ঠের মিষ্টি ডাকে আবারো ঘুমন্ত মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো তার।কপালে ভাঁজ ফেলে চোখ খুলতেই আবছাভাবে তোহাকে দেখতে পেলো সে।তার দিকে ঝুঁকে গিয়ে
নিচু স্বরে ডাকছে তোহা,
—“তিহান ভাই,আপনি খাটে গিয়ে ঘুমান।আপনার কষ্ট হচ্ছে এখানে।”
কপালে ভাঁজ আরো খানিকটা গাঢ় হলো তিহানের।কন্ঠে ধমকের রেশ তুলে সে বললো,
—“তোকে কি আমার কষ্ট হিসেব করতে বলেছি?বেশি কথা না বলে যা তো।জ্বালাস না।”
বলে চোখ বুজতে নিলে তোহা আবারো বলে উঠলো,
—“আমাকে বকা দিচ্ছেন,দেন।তবুও খাটে যেয়ে ঘুমান।সত্যি খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে।”
—“তিহু,সিরিয়াসলি আমি চড় বসিয়ে দিবো তোকে।মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু।”
তাদের কথোপকোথন আরো বাড়ার আগেই আফিয়ার কন্ঠ শোনা গেলো।তা শোনামাত্রই তোহা দ্রুত সরে গিয়ে তিহানের থেকে নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে দাড়ালো।সেকেন্ডের মাঝে গলা বাড়িয়ে তিহানকে ডাকতে ডাকতে সেখানে উপস্থিত হলো আফিয়া।ততক্ষনে উঠে বসেছে তিহান।তার চোখজোড়া ঘুমঘুম হলেও বার কয়েক পিটপিট করে পলক ফেলে সেটাকে লুকিয়ে ফেললো সে।গলা ঝেঁড়ে সাবলিল কন্ঠে বললো,
—“বলো মা।কোনো দরকার?”
আফিয়া কিন্চিৎ হেসে বললো,
—“আসলে বাবা,তোহার তো বেগুনে এ্যালার্জি।ইলিশের তরকারি তো ও খেতে পারবেনা।আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।আর ফ্রিজেও মুরগি টুরগি কেনা নেই যে রেঁধে দিবো।তোর বাবাতো কাল সকালে বাজারে যাবে।
সাড়ে নয়টা বাজতে চললো।ওর ক্ষুধা পেয়েছে নিশ্চয়।তুই একটু কষ্ট করে ওর জন্য মোড়ের দোকান থেকে বিরিয়ানি নিয়ে আয়।।”
তোহা এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো সব শুনলেও এ পর্যায়ে এসে আপত্তি করে বললো,
—“না না খালামনি।দরকার নেই।আমি এখন এমনেও বাসায় যাবো।বাসায় যেয়েই খেয়ে নিবোনে।চিন্তার কিছু নেই।”
—“তোকে বাসায় যেতে দিলেতো যাবি।তোর মা কে বলে এসেছি আমি,আজকে এখানেই থাকবি।”
তোহা কাতর নয়নে তাকালো।এই ক্লান্ত শরীরে তিহান আবার মোড় পর্যন্ত যাবে বিরিয়ানি আনতে ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার।মিনমিনে কন্ঠে আফিয়ার দিকে চেয়ে সে বললো,
—“তিহান ভাইতো খুব ক্লা…”
বলার আগেই তিহান জোরালো কন্ঠে ঝাঁড়ি দিলো,
—“তুই অনেক বেশি কথা বলিস তিহু।চুপ করে বসে থাকতে পারিস না?যওসব” বলে ড্রেসিং টেবিল থেকে মানিব্যাগটা পকেটে ভরে বেরিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললো,
—“আর কিছু খাবি?”
মৃদু গতিতে দু’পাশে মাথা নাড়ালো তোহা।তিহান আর কোনো কথা না বলে দ্রুত বেরিয়ে পরলো।তিহান বেরিয়ে যেতেই আফিয়া বসলো তিহানের বিছানায়।তোহাকে পাশে বসিয়ে মূহুর্তেই নানা আলাপে আড্ডা জুড়ে দিলো সে।
________________
কোনোরকম ঠেসেঠুসে একপ্লেট বিরিয়ানি খেয়ে হাঁফিয়ে উঠেছে তোহা।হাত ধুয়ে যেয়ে তিহানের বিছানায় বসতেই তিহান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
—“আবার এখানে কেন?যা তোর জন্য বরাদ্দ রুমে যা।”
তোহা নির্বিকার ভঙ্গিতে চেয়ে হাই তুলে বললো,
—“খালামনিতো এখানেই আসতে বললো।”
তিহান ভ্রু কুচকে তাকালো।প্রশ্ন করার আগেই আফিয়া এসে বললো,
—“তুই ড্রইংরুমে ঘুমাতে পারবি না তিহান?গেস্টরুমটাতো পরিষ্কার করা হয়নি।ধুলোটুলো জমে আছে।তাছাড়া কাল দেখলাম ফ্যানটাও নষ্ট হয়েছে।”
তপ্ত শ্বাস ছাড়লো তিহান।মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললো,
—“পারবো মা।তুমি নিশ্চিন্তে যেয়ে ঘুমাও।”
আফিয়া স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে প্রস্থান করতেই উঠে দাড়ালো তিহান।ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে তোহার পাশ থেকে বালিশ নিতে গিয়ে অনেকটাই কাছাকাছি এসে পরলো দুজনে।তোহা থমকালো।শ্বাস আটকে তিহানের দিকে তাকাতেই তার জ্বলজ্বল ঘোর লাগা চাহনীর বিপরীতে দৃষ্টি নেমে গেলো তার।
তিহান আরো একটু কাছে এসে নেশাক্ত কন্ঠে বললো,
—“এমনেও এ ঘরে ঘুম হবেনা আমার।তোমার শরীরের তীব্র মেয়েলি ঘ্রাণটা একদম মস্তিষ্কের নিউরনে গিয়ে ঠেঁকছে।আজ তো নয়ই,বরং আগামী দুইদিনও এ ঘরে ঘুমানো অসম্ভব।একেবারেই অসম্ভব!”
~চলবে~