খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -০১

ছেলেতো প্রবাসী দুই দিন পর দেশে আইসা কি করবো? সেইতো অটো নয়তো মানুষের মেশিন ঘরে কাম করে খাইতে হইবো। প্রবাসী ছেলের কাছে আমি আমার ভাগনি যুথি কে কিছুতেই বিয়ে দিবো না। তার উপর আবার ছোট ভাই বিয়ে করে ফেলছে ছেলের তো অনেক বয়স ও হবে।

কি বলেন ভাইজান এগুলো? আজ কাল বিদেশি পোলারা কতো টাকা রোজগার করে সেই বিষয়ে আপনার কোনো ধারণা আছে? আর দেশে নিশ্চই পুঞ্জি ছাড়া এসে পরবো না। আর ছেলে মানুষের কাজের অভাব পরে? ছেলে কয়দিন পর মাইয়ারে ও নিয়ে যাইবো সাথে।কি কার্ড জানি কয়? ঐটা পাইবো কয়েকদিনের ভিতর।

মাইয়া রাজ রানী হইয়া থাকবো। বিদেশি টাকায় জিনিস পত্র সব পাইবো। পোলায় যেই বিল্ডিং টা করছে ঐটা দেখলেই তো আপনার মাথা ঘুরে যাইবো মিয়া।এক পায়ে রাজি হইয়া যাইবেন বিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিশ্রমি পোলা।

যুথিকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা তো আমরা এখনো করি নাই। তার উপর ওর বয়স ই বা কতো? কয়েকদিন আগে মাত্র মেট্রিক পরীক্ষা দিলো।

আপনার ভাগনিরে দেইখা কেউ বলবো বয়স কম? গায়ে গতোরে বাইরা তো পুরাই বেডি গো লাহান দেখতে। তাছাড়া মাইয়া মাইনষের এতো বয়স হওয়া লাগে না।

পোলার বয়স নিয়া ও চিন্তা করবেন না। বেশি না মাত্র আটাইশ বছর।এইটা কোনো বয়স হইলো মিয়া? কিছু দিন আগে আমাগো চম্পারে দিলাম না ওর জামাইর বয়স তো পয়ত্রিশ বছর। চম্পায় তো আপনাগো যুথির থেইকা ও ছোট।

আগে না দেইখাই না করে দিয়েন না।আজকাল কার বাজারে ভালো ছেলে পাওয়া খুবই মুশকিল। একটা মিলাইতে গেলে আরেকটা পাওয়া যায় না। আর তাছাড়া এই পোলার সব দিক দিয়াই আছে। যেমন দেখতে,তেমন তার ব্যবহার।টাকা পয়সা,বাড়ি পড়াশোনা সব দিক দিয়াই আছে। আর কি চাই আপনার?

আর আপনার ভাগনি তো থাকে মামার বাড়ি।তাও এতো ভালো সম্বন্ধ পাইতাছেন।কোথায় লুফে নিবেন তা না করে না করে দেন?

সময় নেন ভাইজান।

আচ্ছা আমি বাড়িতে কথা বলে দেখি। আলোচনা করে আপনাকে জানাবো।

কালকের মাঝে জানাবেন আমায়।

এর মধ্যে যুথি হাতে করে শরবত নিয়ে আসে। মামার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। তারপর ঘটকের দিকে তাকায়।

ঘটক মহাশয় ও সেই সময় যুথির দিকে তাকায়। দুইজনের চোখাচোখি হতেই চোখ রাঙায় যুথি।

ব্যাটা ব’দ।সে কিছুতেই এখন বিয়ে করবে না।

কিন্তু একি ঘটক ব্যাটা যুথির চোখ রাঙানিতে কোনো পাত্তা ই দিলো না।

ঘটক রহমান এই জীবনে অনেক বিয়েই দিয়েছেন। এমন কতো ঘটনার সম্মুক্ষীন হয়েছেন। তাই তিনি যুথির চোখ রাঙানিতে পাত্তা দিলেন না। এই যে মেয়ে টা হাতে করে এখন শরবত নিয়ে এসেছে এটায় ও ভে’জাল আছে কিছু উনার মন বলছে।

আসলেই যুথি এই শরবতে মরিচ গুঁড়ো আর লবণ মিশিয়ে নিয়ে এসেছে।

যুথি মা শরবত টা রেখে তুই যা।আমরা বড়রা এখানে কথা বলছি। যুথিকে শরবত নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মামা কথাটা বলে উঠে।

যুথি মামার কথায় সম্মতি জানায়। যতো যাই করুক মামা কে যথেষ্ট সম্মান করে।একটু ভয় ও পায়।

যুথি যেতে যেতে শুনতে পায় ঘটক রহমান বলছে ছেলের নাম ইরহান।

নামটা যেন কয়েক বার যুথির কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। মনে মনে কয়েকবার নাম টা আওড়ায় যুথি ইরহান,,,,,ইরহান।

এটা আবার কেমন নাম?
ধ্যাত যেরকম নামই হোক তাতে আমার কি? আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।

নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে যুথি বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এখন বাড়িতে থাকলে ঘটক ব্যাটা কে খু/ন করতে ইচ্ছে করবে।

ছেলে সম্পর্কে আরো সব বলবো।আমি এখন উঠি। আপনি আমায় আগে সিধান্ত জানান।

ছেলে তো দেশে আসে নাই এখনো তো এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে?

দেশে না আসলে নাই।এইটা হইলো ডিজিটাল যোগ মোবাইল আছে কি করতে? সব খবরাখবর নিয়ে মোবাইলে শুভ কাজ সেড়ে ফেলবেন।

নানা কি বলেন এগুলো? ছেলে দেশে আসুক আমরা ও খোঁজ খবর নেই। নয়তো পরে যদি ছেলে আমাদের মেয়ে কে পছন্দ না করে।পরে কি হইবো?

এমন কতো দেখছি মোবাইলে বিয়ে করে পরে দেশে আইসা আর ছেলে মেয়ে কে পছন্দ করে না।তাই যা হওয়ার সামনা সামনি হওয়াই ভালো। ছেলেরে দেশে আসতে বলেন।

ঠিক আছে। আগে আপনি আমায় আপনার সিধান্ত জানান।
আজ তাহলে উঠি।

শরবত টা খেয়ে যান।

নাহ্ আমার অভিজ্ঞতা বলছে এই শরবত খেলে আমার বিপদ হবে।

মানে?

কিছু না আসছি আমি।আমার অনেক কাজ আছে। কথাটা বলেই ঘটক রহমান বেরিয়ে পরে।

এতো সময় দরজার আড়ালে থাকা যুথির মামি বেরিয়ে আসে। সবই শুনেছেন তিনি।

এতো ভাব নেওয়ার কি আছে বুঝলাম না। সব শুইনা তো ভালোই মনে হয়েছে। রাজি হচ্ছেন না কেন? আর কই দিবেন? এমন সম্বন্ধ কি রোজ রোজ আসবো?

আপনার ভাগ্নি যেই কার্জকলাপ করে। মানুষ শুনলে প’লাইবো। যদিও বা বিয়ে করে “এক দরজা দিয়ে নিয়ে আরেক দরজা দিয়ে আইনা ফেরত দিয়ে যাইবো আপনার ভাগ্নিরে।”

ছেলের সৎ মা।ভাইয়েরা সব সৎ। এমন ঘরে কি বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে?

চুপচাপ শুধু রাজি হয়ে যান। ছেলে ঠিক থাকলে এসব সমস্যা কিছুই না। আর আমাদের যুথির জন্য এটাই ঠিক আছে। এসব সৎ হলেই বা কি? সবাই তো আর খারাপ হয় না। আর খারাপ হলেই বা কি? আমাদের যুথি যেই বা”ঘা তেঁতুল দুই দিনে সব ঠিক করে ফেলবো।

আচ্ছা আমি আগে খোঁজ খবর নেই। ছেলে কেমন জানি।

এতো তামশা করার কি আছে বুঝলাম না। এতোদিন তো অনেক দেখলেন ভাগ্নি কে।শুধু ভাগ্নির কথা ভাবলে চলবে? আমাদের ও একটা মেয়ে আছে তার কথা ও ভাবতে হবে।

তাছাড়া আজ কাল বিদেশে অনেক অনেক বেতন।এমন রোজ রোজ পাইবেন না।হাত ছাড়া করবেন না বেশি বুঝে।

আমার ভাগ্নিরে নিয়ে সব সময় তোমার সমস্যা। যুথি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিছে বুঝতে পারি না।

কেন আমি কি এখন খারাপ চাইতেছি আপনার ভাগ্নির?

তুমি চুপ থাকো।আমাকে ভাবতে দাও।ভাইবা শুইনা সিধান্ত নিতে হবে। এটা এক-দুই দিনের খেল না।এটা একটা বিয়ে সারাজীবনের প্রশ্ন।

ভাবেন।বলেই মুখ বা”কিয়ে চলে যায় যুথির মামী।

—————————–

যুথি বাড়ি থেকে বের হয়ে তার বান্ধবী সীমার কাছে এসে পরে। সীমাদের বাড়ি থেকে সীমা কে নিয়ে তারপর একটু ঘুরতে বের হয়।

দুইজন ই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পড়াশোনায় এতোটা ভালো না হলেও খারাপ ও না দুইজন। মাঝামাঝি পর্যায়ের স্টুডেন্ট তারা।

আজ যুথি কম কথা বলছে। সীমা ই বকবক করে যাচ্ছে।

সীমা যুথিকে কিছু সময় নিয়ে লক্ষ করে। কি হয়েছে কিছু বুঝতে পারছে না।

“এই যুথি তোর কি হয়েছে রে?”

“কিছু না।”

আরে বলনা।তোর মামি কিছু বলেছে?

নারে।

তাহলে?

একটা মেয়ের হাসি খুশি দিনটা নষ্ট করার জন্য শা*লার একটা ঘটকই যথেষ্ট।

সীমা হা করে যুথির দিকে তাকিয়ে বলে,,, তোকে দেখতে এসেছিল নাকি? কতো টাকা পেলিরে? আমাকে কিন্তু খাওয়াতে হবে। এই ছেলে কি করে? বাড়ি কই? দেখতে কেমন?

থাম বইন। শুধু ঘটক আসছে।আমি কিছু জানি না শুধু নামটা শুনছি।

কি নাম?

ইরহান।

#চলবে,,,,,?

#খড়কুটোর_বাসা_২
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna_Islam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here