খড়কুটোর বাসা ২ পর্ব -১২

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam

ইরহান দেশে এসেছে দুই দিন হয়ে গেছে। সকলের সাথে গল্প গুজব করে দিন কাটছে তার। এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছে।

রাত আটটার দিকেই সকলে রাতের খাবার খেয়ে ফেলেছে। যুথি আর লিমা বাদে যে যার রুমে চলে গেছে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। যুথি আর লিমা সকল কিছু গুছিয়ে রাখছে। যদিও তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ভালো করে তেমন কথা হয়নি। লিমা জানি একটু কেমন টাইপ।মুখ দেখই যেনো বোঝা যায় অহংকারী অহংকারী।

যুথি যে তার বড় জা সেইটা মানতেই চায় না। অন্যান্য জায়েরা কি সুন্দর মিলে মিশে বোনের মতো চলে।আর এই মেয়ে। যুথির সাথে কথা বললে যেনো মুখ খ’সে পড়ে যাবে এমন ভাব। যুথি ও তাই আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। দরকারে কি এমন মানুষের সাথে কথা বলার? যে আমাকে পাত্তা দিবে না আমিও তাকে পাত্তা দিবো না সিম্পল। তাই চুপচাপ যার যার মতো কাজ করে।

যুথির সকল কাজ শেষ করে দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা প্রায় বেজে গেছে। তাই হাত ধুয়ে উড়নায় মুছতে মুছতে নিজেদের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার পাশে আসতে আসতেই কারেন্ট চলে যায়।

যা কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলো না? বলেই যুথি অন্ধকার হাতড়ে রুমে ঢুকার চেষ্টা করে। আপনি কি রুমে আছেন?

যুথি যেখানে আছো চুপচাপ দাঁড়াও আমি লাইট জ্বালাচ্ছি। পড়ে যাবা অন্ধকারে। পরে ব্যাথা পাইবা বলেই ইরহান মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে চার্জার লাইট খুঁজে বের করে।

উফফ এই গরমেও কারেন্ট যাওয়া লাগে? এই লোকদের দিনের বেলা কারেন্ট নিয়ে সখ মিটে না নাকি।

যুথির কথা শুনে ইরহান শব্দ করে হেসে ফেলে।তাতে যুথি থতমত খেয়ে যায়।ইরহান পাশে কথার তালে কি বলে ফেলেছে। ভাগ্যিস বকা শুরু করেনি কারেন্টের লোকদের তাহলে কি হতো?

যুথি??

হুু।

আজ কি পূর্ণিমা নাকি? বাইরে কি সুন্দর জোসনার আলো।

পূর্ণিমা ই মনে হচ্ছে। জোসনার আলোতে চারদিক আলোকিত হয়ে আছে।

ইরহান কি যেনো একটা ভাবে।তারপর চট করে বলে,,যুথি শীতল পাটি আর হাত পাখা নিয়ে আসোতো আমি দাদির রুম থেকে আসছি। বলেই ইরহান বেরিয়ে যায়।

যুথি বুঝলনা ইরহান এখন শীতল পাটি দিয়ে কি করবে।তাও কোনো প্রশ্ন না করে ওয়ারড্রবের উপর থেকে হাত পাখা নিয়ে বসার ঘরে এগিয়ে যায়। ঐখানে গিয়ে আলমারির চিপা থেকে শীতল পাটি বের করে।

এরমধ্যে দাদির গলা শুনতে পায়। কই নিয়ে যাচ্ছিস আমায় আমার কইতর। নিজের কইতরি কে রেখে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করিস নি তো?

হ্যা বুড়ি তোমাকে নিয়ে অজানায় পালিয়ে যাবো আমি।
ইরহান যুথির হাত থেকে পাটি টা নিয়ে যুথি কে বলে, দিনা আর ইশান কে ও যেনো ডেকে আনে। সাথে লিমা কে ও যেনো বলে বাইরে যাওয়ার জন্য সকলে বসে গল্প করবে।

যুথি ইরহানের কথা মতো লিমা কে গিয়ে বলে,,লিমা সাথে সাথে না করে দেয় তার মশার কামড় খাওয়ার নাকি কোনো সখ নেই। যুথি মুখ ভেংচি দিয়ে এসে পরে। তারপর দিনা আর ইশান কে নিয়েই বাইরে আসে।

ততক্ষণে ইরহান পাটি বিছিয়ে দাদি কে নিয়ে উঠোনে বসে পরেছে। চারদিকে জোসনার আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। জোনাকি পোকার আলো সাথে পরিবেশ টা কি সুন্দর। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।

মনে অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি করছে। যুথিরা আসতেই ইরহান ওদের বসতে বলে। সকলেই বসে পরে।

ইশান খুশি মনে বলে উঠে ভাই কতোদিন পর। তুমি ছাড়া এসব কিছুই উপভোগ করা যায় না।

ইরহান দাদিকে বলে,,দাদি শুরু করো।

দিনা আর যুথি শুধু দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে।

ইরহানের দাদি আগের দিনের গল্প বলা শুরু করে।
রাতে সকলেই কম বেশি ঘুমিয়ে পরে।পরিবেশ টা নীরব।উঠোনে জোসনার আলো। তার মধ্যে পাটি বিছিয়ে সকলে মিলে দাদির থেকে আগের কার দিনের গল্প শোনার মাঝে আলাদা এক অনুভূতি ই কাজ করে। বাড়ির পাশের ঝোপ ঝাড়ে আবার জোনাকি পোকার আলো মিটমিটিয়ে জ্বলছে।
যুথি কখনো এরকম সুন্দর মুহূর্তের সাথে পরিচিত হয় নি।হবেই বা কি করে? ওর তো দাদি,নানি কেউ ই নেই।

যতোটুকুই গল্প শুনেছে তা মামার থেকে মাঝে মাঝে। কিন্তু এমন অসাধারণ অনুভূতি হয়নি।

ইরহান গল্প শুনতে শুনতে দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।

দাদি গল্প বলার মাঝখানে বলে উঠে কিরে ভাই নিজের বউ রেখে আমার কোলে কেন মাথা রেখেছিস? দেখ হয়তো তোর বউ ভিতরে ভিতরে জ্বলছে।

যুথি বলে মোটেও না।

বুঝলে দাদি আমার বউ এতো হিংসুটে না।

আমার অনেক ভালো লাগছো গো যুথি বলে উঠে।

ইরহান বলে ছোট বেলা আরো মজা করতাম লোকোচুরি খেলতাম।

ইশশ আর বইলেন না।

এরমধ্যে দাদি আরেকটা ভৌতিক টাইপ গল্প বলে। সকলেই মন দিয়ে শুনে। দিনা কিছু টা ভয় পেতে থাকে।

ইশান বুঝতে পারে দিনা ভ’য় পাচ্ছে। তাই মজা করে বলে,, বিয়ান দেখেন তো আপনার পিছনে কি?

এটা শোনার সাথে সাথে দিনা ওমাগোওও বলে যুথির হাত খা’মচে ধরে।

ইরহান এক ধমক দেয় ইশান কে। শুধু শুধু মেয়েটা কে কেন ভ’য় দেখাচ্ছে।

এরমধ্যে কারেন্ট চলে আসে। তাদের গল্পের আসর শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর যে যার রুমে চলে যায়।

———————————–

যুথি মনে প্রাণে চেষ্টা করছে ইরহানের সাথে সহজ হতে।আস্তে আস্তে তার জড়তা কাটছে ও। যুথি নিজেই নিজেকে বোঝায় নিজের মানুষের সাথে কিসের জড়তা?

তার উপর আবার লোকটা তার পরম আপন জন।

আজ ইরহান যুথিরা বেড়াতে যাবে যুথির মামার বাড়ি। যুথির মামা ফোন দিয়ে পা’গল বানিয়ে ফেলছে ভাগনি জামাই কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার উপর দিনা ও এসেছে অনেক দিন হয়েছে। স্কুল মিস যাচ্ছে।

ইরহান,যুথি আর দিনা রেডি হয়ে বের হয় যুথির মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে। দাদিকে অনেক করে বলেছে সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয় নি।

দোকান থেকে ইরহান নানা ধরনের ফল,মিষ্টি আর বিদেশ থেকে নিয়ে আসা কয়েক ধরনের প্রসাধনী নিয়ে নেয়।

ইরহান ঐ বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে তাকে যুথির মামা মামি খাওয়ার উপরে রেখেছে।একটার পর একটা করে খাওয়াচ্ছে। ইরহানের কোনো কথা শুনছে না।

যুথিকে বলেও থামাতে পারে নি।যুথি আরো বলে দিয়েছে চুপচাপ জামাই আদর গ্রহন করুন।

যুথির মামার বাড়ি দুই দিন থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

মাঝ রাস্তা থেকে ইরহান যুথি কে নিয়ে অন্য দিকে যেতে থাকে। যুথি জিজ্ঞেস করলে বলে,,গেলেই দেখতে পাবে।

ইরহান যুথিকে নিয়ে একটা কাজি অফিসে যায়।যুথি তখনও কিছু বুঝতে পারেনি। পরে গিয়ে জানতে পারে ইরহানের এক বন্ধু বিয়ে করবে।সকলেই রাজি কিন্তু মেয়ের বাবা শুধু রাজি না।তাই মেয়ের মা নিজেই বলেছে বিয়ে করে নিতে।

যুথি বেশ অবাক হয় তবুও চুপচাপ ওদের সবকিছু দেখতে থাকে। ইরহান আর ওর আরেকটা বন্ধু সাক্ষী হিসেবে সাইন করে।

সব ঝামেলা মিটিয়ে চলে যেতে নিলে ইরহান আটকে দেয়। আরেকটা বিয়ে নাকি বাকি।

সকলেই ইরহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।

তারপর ইরহান বলে উঠে,,, ভাবছি আমিও আমার যুথি রানী কে আরেকবার বিয়ে করে নিবো। কি বলিস তোরা?

সকলেই ইরহানের কথায় হইহই করে উঠে।

যুথি বেশ লজ্জা পায় এতে।লোকটা কি পা’গল হলো নাকি? কি বলছে এসব।

ইরহান কানে কানে বলে,, চলো বউ আমরা আবার বিয়ে করে নেই। ঐসময় তো আমি পাশে ছিলাম না এখন আছি।মুহূর্ত টা কে নতুন করে উপভোগ করো।

#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here