গুমোট অনুভুতি পর্ব ২৮

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৮(প্রথমাংশ)

ইনান এতোক্ষন অনেক সাহস নিয়ে কথাগুলো বলার চেষ্টা করলেও কোথাও একটা যেনো জড়িয়ে যাচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারছেনা কিভাবে শুরু করবে!ইনানের ইতস্ততভাব দেখে সায়ান ওর থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো, সুর্যের আলো প্রায় কমে যাচ্ছে। পশ্চিম আকাশে হাল্কা রক্তিম আকার ধারণ করছে তা দেখে সায়ান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। ও কিছু বলবে তার পুর্বেই ইনান হঠাৎ বলে উঠলো

“আমি জানিনা বিষয়টি জিজ্ঞেস করা আদোও ঠিক হচ্ছে কিনা আমার তবে বন্ধু হিসেবে আমি তোর ভালো চাই। তোর লাইফে যা চলছে তা কি ঠিক হচ্ছে?কিছু ভেবেছিস সে ব্যাপারে!”

“কিসের কথা বলছিস তুই?”

“তোর,চন্দ্রিকার আর রুশির কথা বলছি। তোকে আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি যে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না, তোকে যেকোন একটা বেছে নিতে হবে। আর যদি দুইজনকেই চাস তবে কেউই সুখে থাকতে পারবে না, না তুই, না চন্দ্রিকা আর না রুশি।তুই আমাকে এটা বল তুই চন্দ্রিকাকে নিজের কাছে কেনো রাখতে চাস?”

“কারণ আমি ওই লোকটির মতো হতে চাইনা যে ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা রক্ষা করেনা। নিজের দায়িত্ব যে পালন করতে পারেনি, আমি আমার দায়িত্ব থেকে পিছ পা হতে চাইনা। তাহলে তার আর আমার পার্থক্য কোথায়?”

“যদি তুই চন্দ্রিকা চাস তবে রুশিকে ছেড়ে দে,ওকে কেনো তোদের জীবনের সাথে জড়াচ্ছিস? ওকে ওর মতো থাকতে দে, ওকে নিজের সাথে বেধে ওর লাইফ নষ্ট করিস না”

কথাটা বলার প্রায় সাথে সাথেই সায়ান ইনানের কলার চেপে ধরলো, চেহারায় রাগ ফুটে উঠেছে। ইনানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো

“কেনো ওকে ছেড়ে দেয়া না ছেড়ে দেয়া নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা কেনো?আমি ওকে ছেড়ে দিলে কি তোর কাছে নিয়ে যাবি?তবে শুনে রাখ রুশি যদি নিজে থেকেও চায় তবুও আমি তাকে তোর হতে দিবো না।ও আমার বিয়ে করা বউ! এই কথা যতো তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকাতে পারবি ততই তোর মঙ্গল। আমি বেঁচে ও কোনদিন তোর হবে না, আমি হতে দিবো না!”

শেষের কথাটা সায়ান জোরেই বলেছে, খালি যেনো ওর কথাগুলো প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সায়ান ইনানের কলার ছেড়ে দিলেও ইনান তব্দা মেরে বসে রইলো। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, কাঁপা গলায় বললো

“তুই সবটা জানতি?তাহলে এমন ভান করে ছিলি কেনো যে কিছুই তোর জানা নেই!”

সায়ান মুখ ঘুরিয়ে নিলো, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। ও কখনো চায়নি যে ইনান বা রুশির কেউ একজনও জানুক যে ওদের সম্পর্কে সবটা জেনে গেছে। ও জানে ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না, আর হয়তো উল্টো পালটা কিছু করবে যা কারোই কাম্য নয়।

সেদিন সায়ানদের বাগান বাড়িতে শুধু সামুই ইনান আর রুশিকে একসাথে দেখেনি বরং সায়ানও ছিলো সেখানে।সায়ানদের রুমের বারান্দা থেকে বাগান স্পষ্ট দেখা যায়,রুশিকে হঠাৎ করে ইনানের বাগানের কোনায় যাওয়ার দৃশ্য বারান্দা থেকে ওর চোখে ঠিকই পড়েছিলো আর স্বামী হিসেবে বিষয়টি ও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। খুব দ্রুত নিচে নেমে আসে আর আসতেই এক কোনায় সামুকে চোখে পড়ে। তারপর ওদের সম্পুর্ণ কথাগুলো ও শুনতে পায়,ইনানের উপর সায়ান প্রচণ্ড রাগ হয়েছিলো সেদিন। মাত্র কয়েকদিন পুর্বে যে ওর বোনের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে সে আজ অন্য মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে বলছে সে ওই মেয়েটিকে ভালোবাসে! আর সবচেয়ে বড় কথা সেই মেয়েটি ওর নিজের স্ত্রী!

সায়ান রাগে ফেটে পড়েছিলো কিন্তু রুশির কথা শুনে ওর রাগটা কমে যায়। বুঝতে পারে ইনান এক পাক্ষিক ভাবে রুশিকে চাচ্ছে রুশি নয় এমনকি রুশি ওকেও চায়না। না চাইতেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যায় তবে ইনানের প্রতি রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো, আর যাইহোক যে ওয়াদা ভাঙ্গে তাকে ওর কখনোই পছন্দ নয়। নিজের বোনের সাথে এমন ব্যাবহার দেখে সায়ান ইনানের দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সামুর করুণ চাহনিতে দমে যায়। ও ভাবতেই অবাক লাগছিলো যে সামুকে ভালোবাসে না সামু তার জন্য এতোটা করেছিলো কেনো, কেনো চায়না সে জানুক? আর যাইহোক যে ভালোবাসে না তার সাথে কি করর সুখি হবে ও?কেনো থাকতে চায় এমন মানুষের সাথে!ভালোবাসে বলে?ভালোবাসা কি এতোই অসহায়!

সায়ান তখন রুশির দিকে তাকায়, দেখে ওর চোখ জোড়া টলমল করেছিলো। কতটা অসহায় লাগছিলো ওকে!রুশি এদিকেই এগিয়ে আসছিলো, সায়ান নিজেকে সামলে রুশির দিকে এগিয়ে গেলো। ওই মুহুর্তে সবথেকে বেশি গুরত্বপুর্ণ কাজ এটাই মনে হয়েছে যে রুশিকে সামলাতে হবে, ওকে বুঝাতে হবে যে ইনান ওর চোখের পানি ডিজার্ভ করে না। ওকে এমন কিছু বলতে হবে যাতে ওর মাইন্ড ডিস্ট্রেক্ট হয়ে যায়।আর তাই করেছিলো ও, যদিও রুশি কেঁদেছিলো হাল্কা তবে তাতে ওর মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে ছিলো।

এরপর থেকে এই জিনিসটা ওকে কুড়ে কুড়ে খেতো যে রুশি অন্যকাউকে ভালোবাসে! রুশির মন জুড়ে অন্যকারো বসাবাস, যেখানে ততদিনে রুশিকে ছাড়া ও অন্যকিছু ভাবতেই পারছিলো না সেখানে অন্য কোন ছেলেকে নিয়ে ভাববে এটা মেনে নিতে পারছিলো না।ও এটা প্রচুর ভেবেছে আর শেষে ভাবলো রুশির সাথে সরাসরি কথা বলা উচিৎ! ও হয়তো সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারবে না যে তুমি ইনানকে ভালোবাসো?আর যদি বাসো তবে কতোখানি বাসো?কিন্তু এটা তো জিজ্ঞাস করাই যায় যে রুশির মনে কেউ আছে কিনা আর সেটা ভেবেই সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলো যে ‘রুশি কাউকে কখনো ভালোবেসেছিলো কিনা?’

যখন বুঝতে পারলো রুশির কাছে ইনান ভালো বন্ধু ব্যতীত অন্যকিছু নয়, ও ইনানকে দেখে এইজন্য মন খারাপ করেছিলো কারণ বন্ধু বলতে তখন শুধু ইনানই ছিলো আর সে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াতে অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। ও ঠিক কতোটা খুশি হয়েছে ওর জানা নেই আর তাই সামুর সাথে ইনানের বিয়ে নিয়ে কোন ঝামেলা করেনি।ও জানে ইনানের ভালোবাসা এক পাক্ষিক আর সেটা ভুলা খুব কষ্ট হবে। এইজন্য ওর পাশে সামুকে প্রয়োজন,ইনান সামুকে একদিন মেনে নিতে বাধ্য হবে এটা ও বিশ্বাস করে। এতে ওর বোন ভালো থাকবে আর ওর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না, কারণ রুশি ইনানকে ভালোবাসে না এটা যেমন সত্যি তেমনি রুশি ওকেও ভালোবাসে না আর কোন একদিন যদি দুজনের একজনকে বেছে নিতে হয় তখন ইনানকে বেছে নেয়ার এক পার্সেন্ট চান্সও রাখতে চায়না। রুশি তার শুধুমাত্র তার, অন্যকারো না এমনকি রুশি চাইলেও না।

সায়ানের হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়াতে ইনান শান্ত স্বরে বললো

“আমি জানিনা তুই কতোটুকু জানিস,আমি রুশিকে ভালোবাসতাম হয়তো এখনো বাসি কিন্তু ভবিষ্যতে আমি ওকে ভালোবাসতে চাইনা। লাইফে এমন একজনকে পাওয়া খুব কষ্টকর যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। আমি হয়তো অনেক সৌভাগ্যবান তাই আমার লাইফে এমন একজন আছে যে পাগলের মতো ভালোবাসে আর আমি তাকে হারাতে দিতে চাইনা। এটা ঠিক যদি রুশি তোর বউ না হয়ে অন্যকারো হতো তবে আমি তাকে কখনোই ওই ব্যাক্তির হতে দিতাম না কিন্তু সে তোর ওয়াইফ আর আমাদের সম্পর্ক আমার ভালোবাসার থেকে অনেক বেশি দামি। আমার জীবনে তোর মতো বন্ধু আমি আর পাবো না হয়তো রুশির মতো কাউকেও না। আর আমি হয়তো ওকে চাইতাম যদি ও আমার কাছে আসতে চাইতো কিন্তু ও নিজেই চায়না। রুশি আমাকে…”

“বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবে না, রুশির লাইফে তুই শুধুমাত্র একজন ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নয়।”

ইনান কিছু বললো না কিন্তু বুকের ব্যাথাটা তীব্র হয়ে গেলো। ও যতোই বলুক যে রুশিকে নিয়ে ভাববে না কিন্তু জীবনের প্রথম প্রেম ভোলা যায় না। ও হয়তো ভুলবে না, রুশিকে হয়তো ভালোবেসে যাবে আজীবন কিন্তু সামুকে তার থেকে বেশি ভালোবাসতে চায়! এই কয়দিনে ওর ভালো থাকার ঔষুধ হয়ে গেছে সামু, মন খারাপ হলেই সবার আগে সামুর কথা মাথায় আসে। এই মুহুর্তেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি, সব ভালোলাগা গুলো এখন সামুকে ঘিরে হয়ে গেছে। সামু অনেকটা চঞ্চল প্রকৃতির তাই তাকে ভালো না বেসে থাকাই যায়না, ও হয়তো পারবে না সামুকে না ভালোবেসে থাকতে!
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৮(শেষাংশ)

ইনানের চোখেমুখে বিষণ্ণতা ফুটে উঠলেও এটা ভেবে ও খুশি হচ্ছে সায়ান আগের থেকে বদলে গিয়েছে, রুশির প্রতি ওর অনুভুতির পরিবর্তন ঘটেছে। একমাস পুর্বে সায়ানকে তার বউ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর সে বলেছিলো যে মেয়েটি শুধুমাত্র তার দায়িত্ব, তার সম্পুর্ণ খরচ ও চালাবে তবে বউয়ের মর্যাদা দিতে পারবে না।অথচ আজ যখন রুশিকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছে তখন রেগে গেছে আর নিজের বউ বলে পরিচয় দিতে এক সেকেন্ডও সময় নেয়নি যেখানে আগে মেয়ে ছাড়া অন্যকিছু বলতো না!

মানুষ বদলে যায়, খুব দ্রুত বদলে যায়। কিন্তু সবারটা আমরা বুঝতে পারিনা, যারটা চোখে পড়ে তাকে হয়ত বলি তুমি বদলে গিয়েছো নাহয় আমাদের নোটিস করার সময় কই?মানুষের এই বদলানোর স্বভাবটা সবসময় খারাপ হয়না, কিছু কিছু সময়ে তা ভালোর জন্যই হয়। এই যে আজ ইনান রুশি অন্যকারো হওয়া সত্ত্বেও তা মেনে নিচ্ছে, আজ থেকে আরো কয়েকদিন পুর্বেও তা অসম্ভব ছিলো ওর জন্য। ও রুশিকে ছাড়ার কথা ভাবতেও পারতো না কিন্তু এখন ও ছেড়ে দিয়েছে তাও স্বেচ্ছায়। কতটা বদলে গেছে ও আর ওর চিন্তা ধারাও।যেখানে সামুর সাথে মাত্র কয়েকদিন থেকে ও এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে সেখানে সায়ানের বদলে যাওয়া কি স্বাভাবিক নয়?

ওতো একমাস থেকেছে একটা মেয়ের সাথে যার সাথে ওর বিয়ে হয়েছে, যে ওর সন্তানের মা হতে চলেছে। তার প্রতি মায়া জন্মানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়, তাছাড়া কোন নারীর প্রতি এটা সায়ানের প্রথম অনুভুতি তাই সায়ান চাইলেও এর থেকে বেরুতে পারবে তবে সায়ান তা বুঝতে পারছে না।সায়ানকে বুঝানো খুব দরকার অন্তত রুশির জন্য কারণ ও মনে প্রাণে চায় রুশি ভালো থাকুক, ওর ছোট্ট একটা পরিবার হোক যেটার কথা রুশি প্রায় উল্লেখ করতো। ওইযে একটা ছেলে আরেকটা ছেলের মন খুব ভালোভাবে পড়তে পারে আর সে যদি লাভ রাইভাল হয় তবে তো কথাই নেই!সায়ানের জেলাসিতে স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে ও রুশিকে কতোটা চায়। ইনান সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো

“যদি রুশি তুই না ছাড়িস তবে চন্দ্রিকাকে কেনো রেখেছিস নিজের সাথে?ও কেনো শুধু শুধু আশা দিচ্ছিস?ওতো এটা ভেবেই বসে আছে যে কোন একদিন তুই ওকে বিয়ে করবি তাহলে এই মিথ্যে আশা কেনো দিচ্ছিস ওকে??”

“আমি ওকে ওয়াদা দিয়েছি যে আমি সবসময় ওর পাশে থাকবো আর ওকে ভালোবাসবো। আমি সেই ওয়াদা থেকে কি করে মুখ ফিরিয়ে নিবো?আমি যে তাহলে ওই লোকটার মতো হয়ে যাবো কিন্তু আমিতো তার মতো হতে চাইনা!”

সায়ান দুহাতে নিজের চুল মুঠ করে ধরলো,রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে এই দোটানার কারণে,ও রুশিকে কখনোই ছাড়তে পারবে আর না চন্দ্রিকাকে! রুশিকে ও ছাড়তে চায়না আর চন্দ্রিকাকে ছাড়তে পারবে না। দুটো কথার মধ্যে অনেক পার্থক্য, একজনকে ছাড়া ওর বেচে থাকা অসম্ভব মনে হয় কিন্তু আরেকজনকে ও ছাড়তে পারছে না, নিজের বিবেকের কাছে হেরে যাচ্ছে!

ইনান সায়ানের অবস্থা দেখে একটু বিচলিত হলো, কারণ সায়ানের অবস্থা সবটা না বুঝতে পারলেও কিছুটা ও বুঝতে পারছে। দায়িত্ব আর ভালোবাসার মাঝে যেকোন একটা বেছে নেয়া কোন দিনই সহজ নয়,কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দায়িত্ব কে আর ভালোবাসা কে? ইনান সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো

“তোর কাছে ওয়াদার মুল্য অনেক বেশি! কারণ তুই তোর বাবার মতো হতে চাস না কিন্তু তুই হয়তো জানিসনা যে তুই নিজের অজান্তেই তার মতো হয়ে গেছিস। সে যে ভুলটা করেছে তুই ঠিক একই কাজ করছিস যদিও পরিস্থিতি ভিন্ন!”

ইনানের কথা শুনে সায়ান রেগে যায় আর কড়া গলায় বলে

” আমি ওই লোকটার মতো কখনো ছিলাম না আর কখনোও হবোও না। ও আমার মাকে চিট করেছে, তাকে দেয়া ওয়াদা সে রাখেনি, আমি তার মতো কখনোই না”

“তুই তার ব্যাতিক্রম কি করে?রুশিও তো তোর বউ তাইনা আর তুই তাকে ঠকাচ্ছিস!চন্দ্রিকা তোর বউ নয় তোর প্রেমিকা আর রুশি তোর বউ। তাই যদি তুলনা করিস তবে তোর মায়ের জায়াগায় কিন্তু রুশি আছে, চন্দ্রিকা নয়। আর তোর বাবার মতো তুইও কিন্তু নিজের বউকে ঘরে রেখে বাইরের প্রেমিকাকে বেছে নিতে চাইছিস! তাহলে তুই ই বল তোর বাবা তোর মাঝে পার্থক্য কোথায়? স্যরি টু সে বাট তোর বাবার মতো একই কাজ তুই রিপিট করছিস।”

শেষের কথাটা ইনান ইচ্ছে করেই জোর দিয়ে বলেছে, সায়ানের বোঝা উচিৎ কৃতজ্ঞতার বসে কারো সাথে সারাজীবন থাকা যায়না, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা গেলেও আর যাইহোক তাকে ভালোবাসা যায়না তাই এমন ওয়াদার কোন ভিত্তি নেই, এটা সায়ান এবং চন্দ্রিকা দুইজনকেই বুঝতে হবে তাছাড়া একটা কথা খুব প্রচলিত আছে,
“প্রমিসেস আর মেড টু বি ব্রোকেন” তাই একটা ওয়াদার উপর ভিত্তি করে কখনো কারো জীবন থেমে থাকতে পারে না, এটা নিতান্তই হাস্যকর বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে সায়ান মুহুর্তেই চুপ হয়ে গেলো, বিষয়টি এভাবে কখনো ও ভেবে দেখেনি। আসলেই তো রুশি ওর বউ সেতো বাইরের কেউ নয়, তাই চন্দ্রিকাকে করা ওয়াদার মুল্য ওর বউয়ের থেকে বেশি কি করে হতে পারে?চন্দ্রিকা তো ওর বউ নয় তাহলে ও তো সেই বাইরের একজনের জন্যই নিজের বউকে মেনে নিচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক পার্থক্য তো খুব বেশি নয়! সায়ানকে চুপ থাকতে দেখে ইনান আবার বললো

“তুই বল কোন ছেলে একজনকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিলো কিন্তু কোন এক কারণে সে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও পরে সে তার স্ত্রীকে ভালোবেসে ফেলেছে এবং তার সাথে থাকতে চায়। তাহলে এখন বল নিন স্ত্রীকে ভালোবাসা সত্ত্বেও তার কি ওই মেয়ের কাছে ফিরে যাওয়া উচিৎ? শুধু তাকে একসময় বিয়ে করবে বলেছে বলে!এতে কি আদোও তিন জনের একজনও সুখি হতে পারবে?”

সায়ান মাথা নাড়ালো, কেউ কি সুখি হতে পারবে না। এর চেয়ে ভালো ওই মেয়েকে বুঝিয়ে বলা যদিও তার একটু কষ্ট হবে কিন্তু এক সময় সে অন্যকাউকে মেনে নিয়ে সুখে থাকবে।

“সেই ছেলেটির জায়াগায় তুই থাকলে কি করতি?”

“নিজের ভালোবাসাকে মেনে নিতাম এতে তিনজনই একসময় সুখি হতাম”

“তাহলে তোর এখন কাকে মেনে নেয়া উচিৎ?”

“যাকে ভালোবাসি তা…”

সায়ান থমকে গেলো, ওর তাকেই মেনে নেয়া উচিৎ যাকে ও ভালোবাসে।কিন্তু ও কাকে ভালোবাসে?রুশির সাথে ওর পরিচয় বেশিদিনের নয় কিন্তু এখনি মনে হয় ওকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব, রুশির শাসন কথা বলা আর মুহুর্তেই মুখ ফুলানো এগুলো দেখা ছাড়া ওর দিন চলে না। যেখানে খান বাড়ির সাথে ওর কোন সম্পর্ক ছিলো না সেখানে রুশির জন্য ও এ বাড়িতে থেকেছে, রুশি কথা শুনে মায়ের সাথে কথা বলেছে।তার থেকে বড় কথা ইনানের সাথে রুশিকে দেখে ওর কষ্ট হয়েছিলো প্রচণ্ড কষ্ট কিন্তু কই চন্দ্রিকার সাথে থাকতে তো এমন হয়নি! ওর সাথে মাসের পর মাস কথা না বললেও ওর কিছু যায় আসেনি, কখনো নিজ থেকে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি,কখনো তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করেনি তাহলে?
ওকি রুশিকে ভালোবাসে?হ্যা এই অনুভুতি গুলো যদি ভালোবাসার হয় তবে ও রুশিকে ভালোবাসে।

সায়ান হুট করে উঠে দাঁড়ালো, দ্রুত পকেট থেকে চাবি বের করলো তারপর গাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করলো। কিছু একটা ভেবে দৌড়ে ইনানের কাছে ছুটে আসলো তারপর জড়িয়ে ধরলো আর বললো

“থ্যাংকস!ইটস আ বেস্ট থিং টু হ্যাভ আ বেস্টফ্রেন্ড লাইক ইউ”

ইনান সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো

“আমি তোর জন্য কিছু করিনি, আমি চাই রুশি ভালো থাকুক আর আমি জানি ও তোর সাথে ভালো থাকবে কিন্তু মনে রাখিস যদি ভুলেও ওকে কষ্ট দিস তবে ওর ছায়াটুকুও আর দেখতে পাবিনা।রুশি আমাকে বন্ধু ভাবে আমি জানি, তাই বন্ধু হিসেবে ওর কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না”

সায়ান জবাবে হাসলো তারপর মাথা নাড়িয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে গেলো। এই মুহুর্তে রুশির সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন, ওকে বলতে চায় যে ও রুশিকে কতটা চায়! ওর বউ হিসেবে শুধু রুশিই আছে, চন্দ্রিকা ওর দায়িত্ব সেটা পালন করবে তবে জরুরি নয় তাকে বিয়ে করতে হবে। আশাকরি চন্দ্রিকা এই জিনিসটা বুঝতে পারবে আর না পারলেও ওর কিছু করার নেই। ভালোবাসার কাছে সবাই অসহায় হয় আর ও নিজেও তাই!

ঘরে ঢুকতেই রুম অন্ধকার দেখলো, সায়ান কিছুটা অবাক হলো। রুশি কি তাহলে রুমে নেই?এই সন্ধ্যা বেলা কোথায় গিয়েছে? নিচেও তো দেখলো না। সায়ান লাইট জালাতেই রুশিকে বারান্দা থেকে আসতে দেখলো আর দেখেই ও খুশি হয়ে গেলো। কিছুটা হেসে বললো

“এই সন্ধ্যায় লাইট অফ কেনো? আমাকে ভয় দেখাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে নাকি?”

রুশি সায়ানের দিকে তাকালো তারপর ক্লান্ত স্বরে বললো

“আমি ভনিতা করে কথা বলতে পারিনা তাই সরাসরি বলছি আই ওয়ান্ট ডিভোর্স!আমি চাই আপনি আমাকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিয়ে দেন”

কথাটা বলার সাথে সায়ানের মুখে ঝুলে থাকা হাসি মিইয়ে গেলো, হাতে থাকা চাবির থোকা পড়ে গিয়ে ঝনঝন আওয়াজ হতে লাগলো। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, ও যা শুনেছে তা আদোও সত্যি নাকি কোন হ্যালুসিনেশন!

#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#চলবে
(আমি জানি আপনারা হয়তো রাগ করছেন ছোট করে দেই বলে কিন্তু আমি ঠিক মেনেজ করতে পারছিনা। একটু অগোছালো হয়ে গেছে সবকিছু,সবটা গুছিয়ে বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো।স্যরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here