#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের বেবীকে দেখতে না পেয়ে আমি কেঁদে উঠি। আমার কান্না শুনে রুদ্রিক দৌড়ে ছুটে এসে আমার হাত ধরে বলে,
—“কাজল, কি হয়েছে আমাকে বল? কাঁদছিস কেনো তুই এইভাবে? ”
রুদ্রিককে আকড়ে ধরে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
—“রুদ্রিক আমাদের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ। ”
কথাটি শুনে রুদ্রিকের মাথাও কাজ করা যেনো বন্ধ হয়ে যায়। রুদ্রিক বেডের দিকে তাঁকিয়ে দেখে তাদের মেয়ে নেই।
কিছুক্ষন আগেও তাদের ছোট্ট মেয়ে বিছানায় কি সুন্দর ঘুমাচ্ছিলো। কোথায় গেলো তাদের ছোট্ট মেয়ে? রুদ্রিক নার্সদের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলে,
—-“আমার মেয়েকে আপনাদের কাছে রেখে গিয়েছিলাম? কোথায় আমার মেয়ে? ”
নার্সরা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিয়ে বলে,
—“স্যার আমরা শুধু পাঁচ মিনিটের জন্যে বাইরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি বেবী নেই। ”
রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,
—“জাস্ট স্টপ ইট! এইসব লেম এক্সকিউজ দেওয়া বন্ধ করুন। এতোটা ইররেস্পন্সেবল আপনারা কীভাবে হন? ছোট বাচ্ছাকে রেখে কীভাবে চলে গেলেন? ”
রুদ্রিকের চিৎকার শুনে ডক্টররা চলে এসে বলে,
—-“কি হয়েছে মিঃ শেখ আপনি হঠাৎ এতো উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন কেন? ”
রুদ্রিক রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে বলে,
—“আমার একদিনের শিশু আমার বেবীকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ আর আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন আমি কেন উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি? আমি জাস্ট আপনাদের ওয়ার্ন করে দিলাম। আমার বেবীকে না পেলে আমি কিন্তু সত্যি এই হসপিটালটাকেই বন্ধ করে দিবো। এই রাফসিন শেখ রুদ্রিকের এক মিনিটও লাগবে নাহ। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক যেতে নিলে, আমি রুদ্রিকের হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,
—–“রুদ্রিক আমাদের বেবীর কিছু হবে নাহ তো? ”
রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে,
—-“আমি আমাদের পরীকে ঠিক ফিরিয়ে আনবো। আমাদের পরীর কিচ্ছু হবেনা। ”
রুদ্রিক কাউকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে যায়।
রুদ্রিক বেড়িয়ে যেতেই আমি মাথা ধরে বসে পড়ি। আমার ছোট্ট মেয়েটা কোথায় গেলো?
সাদি ভাইয়া, সিথি, দিয়া ও লাজুক হসপিটালে চলে আসে।
রুদ্রিককে বেড়েতে দেখে লাজুক আংকেল রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বলে,
—-“রুদ্রিক পুলিশ স্টেশন থেকে তোমার কাছে ফোন এসেছিলো?”
—“হুম ইশানি শেখ আজকে পালিয়েছে। সবথেকে বড় কথা মাহির আহমেদ বেঁচে নেই। আমার ইশানি শেখের উপরেই সন্দেহ হচ্ছে। ”
দিয়া সবকিছু শুনে বলে,
—-“আপাই যদি এই বাচ্ছা অপরহনের কাজটা সত্যি করেই থাকে তাহলে আমরা তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো নাহ। ”
দিয়ার কথা শুনে রুদ্রিজ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
—“আমি জানি এই কাজ ইশানি শেখের ছাড়া আর কারো হতে পারেনা। উনি নিজের স্বামীর মৃত্যুর জন্যে আমাদের দায়ী করছে। তাই তো প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। উনি কি ভেবেছে এইসব করে আমার বেবীকে অপহরন করে আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবে? আমি আমার সন্তানের কিচ্ছু হতে দিতে দিবো নাহ।
আমার বাচ্ছার গাঁয়ে একটুও আঁচ লাগলেও আই জাস্ট কিল হার। ”
কেবিনে বসে থেকে রুদ্রিক ও বাকি সকলের কথাই আমার কানে আসলো। তার মানে ইশানি শেখ প্রতিশোধপরায়নতা হয়ে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন যদি আমার মেয়ের যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে তখন?
আমার কান্নাগুলো যেনো গলায় দলা পাঁকিয়ে আসছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। আমি হাতড়ে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলি। আমার মেয়েটা নিশ্চই বিপদে আছে। আমি এখানে কীভাবে বসে থাকবো? নাহ তা কিছুতেই হতে পারেনা আমি জানি আমার মেয়েটা নিশ্চই কাঁদছে। আমার বুকে কষ্ট হচ্ছে। তখনি আমার ফোনে একটি ছোট্ট মেসেজ আসে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ইশানি শেখের মেসেজ। মেসেজ লেখা,
—-“কাজল, তোমার মেয়ে এখন আমার কাছে। চিন্তা করোনা তোমার মেয়ে আমার কাছেই সেফ আছে। আর এই হসপিটালেই আছে। তুমি শুধু একটা কাজ করো। নিজের মেয়েকে পেতে কষ্ট করে হসপিটালে টপে অর্থাৎ ছাদে চলে এসো। ”
মেসেজ টা দেখে আমি তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালাম। ইশানি শেখ ছাদেই আছেন। নাহ আমি দেরী করলে চলবে নাহ। আমার এখুনি যেতে হবে।
কথাটি ভেবে আমি আমি উঠতে নার্স এসে বলে,
—-“ম্যাম আপনার সবে সিজারি করা হয়েছে। এই অবস্হায় আপনার হাঁটাচলা করা ঠিক হবে নাহ।”
আমি ক্ষিপ্ত গলায় বললাম,
—“আমার সদ্যজাত দুধের শিশু কি অবস্হায় আছে কে জানে? তাকে পাওয়া যাচ্ছে আর আমি মা হয়ে এখানে বসে থাকবো? ওয়াট দ্যাল হেল? সরুন আপনি আমার সামনে থেকে। ”
নার্সকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়েই আমি কেবিন থেকে সোজা দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যেতে থাকি।
কাজলকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে রুদ্রিক, সাদি, সিথি ও দিয়া অবাক। তারাও কাজলের পিছনে পিছনে ছাদে চলে যায়।
কাজল ও রুদ্রিকের বাচ্ছা নিয়ে ছাদের একেবারে কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন ইশানি শেখ। আজ সকলেই সে পালিয়ে এসেছে হসপিটালে। বরখা পড়ে সে লুকিয়েই বাচ্ছাটাকে একপ্রকার চুরি করে ছাদে নিয়ে এসেছে।
কারো পায়ের শব্দ পেতেই ইশানি শেখ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে কাজল। কাজলকে দেখে ইশানি শেখ বিদঘুটে হেঁসে দিয়ে বললেন,
—-“অবশেষে তুমি এলে কাজল? ”
আমি তাঁকিয়ে দেখি আমার বাচ্ছাটাকে নিয়ে ইশানি শেখ একেবারেই ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এইভাবে চলতে নিলে তো আমার বাচ্ছাটার ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমি এগোতে নিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে ইশানি শেখ বললেন,
—“একদম এগোবে নাহ নাহলে আমি কিন্তু তোমার বাচ্চাকে ফেলে দিবো। ”
কথাটি শুনে আমি থেমে গেলাম। আমার সদ্যজাত সন্তান কেঁদে যাচ্ছে। আমি মা হয়ে কীকরে সহ্য করি?
ইশানি শেখ আবারো বলতে লাগলেন,
—“আমার স্বামী মাহির নাহ মারা গেছে জানো? আমাকে রেখে সেই দূরে চলে গেছে আমাকে একা করে। শুধুমাত্র তোমাদের জন্যে। আমি তোমাদের কীকরে সুখে থাকতে দেই বলো? আমি তোমার এবং রুদ্রিকের মেয়েকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিবো হু আমি ফেলে দিবো।তাও তোমারই চোখের সামনে।”
কথাটি বলে ইশানি শেখ খিলখিল করে হেঁসে উঠে। ইশানি শেখকে দেখেই মনে হচ্ছে উনার মাথা ঠিক নেই। এই অবস্হায় আমাকে কিছু করতেই হবে নাহলে আমার মেয়ের ক্ষতি হয়ে যাবে। কথাটি ভেবে আমি দৌড়ে ছাদের কিনারে গিয়ে ইশানি শেখের থেকে আমি আমার বাচ্ছাকে কেড়ে নিতে চাইলে, ইশানি শেখ আমার সার্জারি করা জায়গাতে ধাক্কা দেয় এতে আমি ব্যাথা সহ্য না করে পড়ে যেতে নিলে,
ইশানি শেখ আমাকে ধরে ফেলেন। আমি একেবারে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। ইশানি শেখ হাত টা ছেড়ে দিলেই আমি পড়ে যাবে।
ততক্ষনে রুদ্রিক ও বাকি সবাই চলে আসে। কাজলকে এই অবস্হায় দেখে রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,
—“ইশানি শেখ কি করছেন? আমার কাজল আর আমার বেবীকে ছেড়ে দিন বলছি। ”
ইশানি শেখ বললেন,
—“নাহ আমি তো ছেড়ে দিবো নাহ কাজলকে। রাফসিন শেখ রুদ্রিক তুমি আমার মাহিরকে জেলে পাঠিয়েছিলে তাইনা?আমার মাহিরকে? আমার মাহির অনেক অভিমান নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন তুমি দেখবে নিজের ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে গেলে কেমন লাগে।
দিয়া ও সিথি কেঁদে উঠে। সিথি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—-“পিপি? তুমি এতোটা খারাপ হয়ে গেলে কীভাবে?”
—“তোরাই আমাকে বাধ্য করেছিস আর শুন রুদ্রিক
আর ভূলেও এগোনের চেষ্টা করিস নাহ। তোর বউ একি কাজ করতে গিয়ে এখন পস্তাচ্ছে। ”
রুদ্রিক এগোতে নিচ্ছিলো ইশানির কথা শুনে থেমে যায়।
রুদ্রিক অসহায় দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাঁকায়। কাজল কেঁদে উঠে। ছোট্ট বেবীটাও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
রুদ্রিক কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—“আমার কাজলকে কিংবা আমার বেবীকে কিছু করোনা। তোমার সব শ্রত্রুতা তো আমার সাথে ইশানি শেখ। তাহলে ওদের কেনো এর মধ্যে টানছো? ”
রুদ্রিকের অসহয়তা দেখে ইশানি শেখ পৌচাশিক আনন্দ পায়।
ইশানি শেখ হেঁসে বললেন,
।—” এইতো এই কান্নাই তো আমি চেয়েছিলাম। তোমাদের এইবার আমার কষ্টটা উপলব্ধি করাবো। আমি তো নিজের সময় কাঁদতেও পারেনি। এতোটা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি।
আমি সো সরি রুদ্রিক। তোমরাই আমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করলে। ”
কথাটি বলে ইশানি শেখ হাতটা আলগা করতেই, রুদ্রিক কিছু না ভেবে নিচে নেমে যায়। উদ্দেশ্য নিজের প্রেয়সীকে প্রানে বাঁচানোর চেস্টা,কিন্তু ততক্ষনে ইশানি শেখ কাজলের হাত ছেড়ে দেয়।
কাজল দুতলা ছাদ থেকে পড়ে যায়। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়! ছোট্ট বাচ্ছাটা কী বুঝে কে জানে? সে আরো জোড়ে চিৎকার করে কেঁদে দেয়।
রুদ্রিক নিচে এসে দেখে কাজলের মাথা থেকে তাজা রক্ত বেয়ে চারদিকে ছিটিয়ে গেছে। কাজল নিজের রক্তাক্ত হাত দিয়ে রুদ্রিকের দিকে নিজের হাতটা কোনোরকম বাড়িয়ে দেয়। রুদ্রিকের পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেছে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এই অবস্হায় দেখে। পা ও যেনো চলছে নাহ।
[নীচের কথাগুলো পড়বেন]
_______
ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাইয়া ফেলি চকিতে
আঁশ না মিটিতে হারাইয়া
পলক না পড়িতে হারাইয়া
হৃদয় না জুড়াতে
হারাইয়া ফেলি চকিতে
মাঝে মাঝে দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা?
#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব-৪৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রক্তাক্ত অবস্হায় রাস্তায় পড়ে আছে কাজল। কাজলর রুদ্রিকের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে ডাকে। রুদ্রিজ কাজলের কাছে গিয়ে,কাজলকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বলে,
—“কাজল তুই কথা বলছিস না কেন? প্লিয় একটু কথা বল? ”
আমার চোখজোড়া খুলতে যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমি কোনোরকম উঠে বসতে গিয়ে, পড়ে যেতে নিলে রুদ্রিক আমাকে ধরে তার কোলে আমার মাথা রাখে। রুদ্রিকের চোখের জলটুকু আমি মুছিয়ে দিয়ে বলি,
—–“তুমি এইভাবে কেঁদো নাহ রুদ্রিক। তোমাকে এইভাবে দেখলে তো আমার বড্ড কষ্ট হয়। ”
এইদিকে,
দিয়া ইশানির থেকে বাচ্ছাটা কেড়ে নিয়ে, ইশানির গালের ঠাস করে চর লাগিয়ে বলে,
—-“তুই কি সত্যি মানুষ আপাই? ছিহ এতোটা খারাপ তুই। তোকে যত দেখি আমি অবাক হয়ে যায়। মানুষ এতোটা খারাপ কী করে হয়? শেষে কিনা নিজের প্রতিশোধের জন্যে একটা ছোট্ট বাচ্ছাকেও ছাড়লি নাহ।
সিথি এসে কটাক্ষ করে বলে,
—-“কাকে কি বলছো? এই মহিলা কি আদোও মানুষ?”
ইশানি শেখ তাদের কটাক্ষ করা কথা শুনে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া করলো নাহ। বরং নীচে নেমে চলে গেলো। ইশানি শেখকে যেতে দেখে লাজুক বলে উঠে,
—“ইশানি শেখ আবার পালিয়ে যাচ্ছে নাহ তো? ”
লাজুকের কথা শুনে সাদি বলে উঠলো,
—-“তাহলে তো আমাদের এখুনি মহিলার পিছনে যেতে হবে। ”
সাদি ইশানি শেখের পিছনে ছুটলো। লাজুক,দিয়া ও সিথি বাচ্ছাটাকে নিয়ে পিছনে ছুটলো।
ইশানি শেখ গেটের কাছে এসে থেমে যায়।
সিথি দিয়া লাজুক ও সাদি কাজলকে রক্তাক্ত অবস্হায় দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সিথি মুখ চেপে কেঁদে উঠে।
সিথির কাছে নিজের বাচ্ছাকে দেখে আমি মুখ থেকে কষ্ট করে হলেও আওয়াজ বের করতে চেস্টা করলাম। অবশেষে বলে উঠলাম,
—-“আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো? ”
কাজলের প্রশ্নে সবাই অবাক হয়। এই অবস্হাতেও নিজেত সন্তানের কথা একটিবারও ভূলেনি। হয়তো মা একেই বলে
রুদ্রিক ও কাজলের মেয়ে অনাবরত কেঁদে যাচ্ছে।
মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে রুদ্রিক ও কাজলের দুজনের বুকটা মোচর দিয়ে উঠে। রুদ্রিক পড়েছে বিপাকে। একজায়গায় তার ভালোবাসা অন্যজায়গায় তার সন্তান।
দিয়া সিথির থেকে বাচ্ছাটা নিয়ে বলে উঠলো,
—–“কাজল কোনো চিন্তা করিস নাহ। তোর বাচ্ছা সেফ আছে। ”
দিয়া পিপির কথা শুনে আমি যেনো নিশ্চিন্ত হয়ে রুদ্রিকের বুকে শক্ত কড়ে আকড়ে ধরলাম। রুদ্রিক আমাকে জড়িয়ে ধরে।
পেটে ভেজা অনুভব করতেই রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে কাজলের পেট থেকে রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছে। রুদ্রিক ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
—“কাজল, তোর সার্জিরা করা জায়গায়তে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ”
রুদ্রিক চিৎকার করে সকল নার্সদের ডাকতে থাকে। ওয়ার্ডবয় এবং নার্সসহ ডক্টররা চলে আসে।
ডক্টররা এসে বলে,
—–“ওহ মা গড! উনার মাথা থেকে এবং সিজার করা জায়গা থেকে অনাবরত রক্ত ছিটকে পড়ছে। মনে হয় পড়ে যাওয়ার কারনে সিলিগুলো কেটে গেছে। উনাকে দ্রুত আবারোও, ওটিতে নিয়ে যেতে হবে।
রুদ্রিক ডক্টরের কথা শুনে কাজলকে উঠাতে যেয়েও থেমে যায়। কাজলের রক্তমাখা দেহের দিকে তাঁকিয়ে থাকা রুদ্রিকের পক্ষে সম্ভব নাহ। রুদ্রিক ঠোট কামড়ে কেঁদে উঠে।
ওয়ার্ডবয় কাজলকে স্টেচারে উঠিয়ে নেয়। নার্সরা কাজলের মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে দেয়।
রুদ্রিককে ঘাবড়ে যেতে দেখে আমি নিজের অক্সিজেন মাক্সটা খুলে ফেলে। ডক্টরা বললেন,
—-“কি করছেন কি মিসেস শেখ?
রুদ্রিক আমার কাছে এসে মিয়ে যাওয়া গলায় বলে,
—-“কাজল, তুই কি পাগল হয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিস। ”
আমি রুদ্রিকের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলি,
—-“ভয় পেয়ো নাহ রুদ্রিক। তোমাকে তো শক্ত হতে হবে বলো? আমাদের মেয়েটার কী হবে? তুমিই তো আমাদের মেয়ের এখন সব। আমি যদি না থাকি তাহলে…….
রুদ্রিক আমার মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—–❝তুই প্লিয চুপ কর। একদম মেরে ফেলবো কাজল তোকে। একটাবার যদি এইসব কথা মুখে আনিস।
তুই রাফসিন শেখ রুদ্রিককের প্রতিটা হ্রদস্পন্দন আছিস। তুই আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে রয়েছিস। একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে তোকে বাঁচতে হবে। আমাকে আমাদের পরীর জন্যে হলেও তোকে বাঁচতে হবে। ❞
রুদ্রিকের কথা শুনে আমার চোখজোড়া বন্ধ হতে শুরু করে দিলো। হয়তো আমি নিজের জ্ঞান ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। তবুও রুদ্রিকের হাতটা শক্তকরে চেপে ধরে রাখলাম।
কাজলের চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে রুদ্রিক ডক্টরদের উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
—–❝আমার কাজলের চোখ বন্ধ হয়ে গেলো কেনো? কি হলো আমার কাজলের? ডক্টরস আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন? ❞
কাজলের মুখে পুনরায় অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে ডক্টর বলে উঠেন,
—-“আপনার ওয়াইফ জ্ঞান হারিয়েছে।
অলরেডী অনেক ব্লাড লস হয়ে গেছে। এখন যদি দ্রুত ওটিতে নিয়ে না যাওয়া হয়, তাহলে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ”
ডক্টর ওয়ার্ডবয়দের ইশারা করে কাজলকে নিয়ে যেতে। কাজলের হাত আলগা হয়ে যেতেই রুদ্রিক অসহায় হয়ে কাজলের হাত শক্ত করে চুমু খায়।ডক্টরের কথা শুনে ওয়ার্ডবয় কাজলকে নিয়ে যেতে থাকে। রুদ্রিক কাজলের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে থাকে।
কাজলকে নিয়ে যেতেই ইশানি শেখ জোড়ে জোড়ে হেঁসে বলে উঠে,
—-“কি মজা কি মজা কাজল এখন ঠিক মরবে। রুদ্রিক এইবার বুঝবে মজা। কি মজা। মাহির তুমি শুনতে পারছো? আমি তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছি কি মজা। ”
ইশানি শেখ জোড়ে জোড়ে হাত তালি দিতে লাগলো। দিয়া, সাদি, লাজুক ও সিথি ইশানি শেখের অবস্হা দেখে বুঝতে পারছে ইশানি শেখ সত্যি একজন সাইকো হয়ে উঠেছে।
রুদ্রিকের নাকের ঢগা লাল হয়ে উঠেছে রাগে। রুদ্রিক আর সহ্য করতে না পেরে ইশানি শেখের গলা চেপে ধরে বলে,
—-“তোর জন্যে আমার কাজল এতোটা কষ্ট পাচ্ছে। আমার একদিনের বাচ্ছাটা তার মাকে পাচ্ছে নাহ। তোকে জাস্ট খুন করে ফেলবো ইশানি শেখ। তোকে আমি বাঁচতে দিবো নাহ।, ” (লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
রুদ্রিককে ভয়ংকর পরিমানে রেগে আছে। সাদি ও লাজুক এগিয়ে যায় রুদ্রিককে আটকাতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ। রুদ্রিককে তারা কিছুতেই আটকাতে পারছে নাহ।
সাদি বলে উঠে,
—-“রুদ্রিক ছেড়ে দে এইভাবে করলে কিন্তু মারা যাবে। তুই জেলে চলে যাবি। কাজলের তখন কি হবে? ”
রুদ্রিক ইশানি শেখের গলা আরো চেপে ধরে বলে,
—“গেলে যাবো কিন্তু এই মহিলার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমার কাজল আজ শুধু এই নিকৃষ্ট মহিলার জন্যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। ”
লাজুক আর না পেরে বলে,
—–“জাস্ট সটপ রুদ্রিক! পুলিশ আসছে। পুলিশ উনাকে উনার যোগ্য শাস্তি দিবে। ”
লাজুকের কথায় কোনোরকম কাজ হলো নাহ। অবশেষে পুলিশ এসে রুদ্রিককে ছাড়িয়ে নিলো। ইশানি শেখ গলা ধরে কাঁশতে তবুও তার হাঁসি থামে নাহ।
সে হেঁসেই যাচ্ছে। হয়তো পাগল হয়ে গেছে বলে
পুলিশ তাকে একপ্রকার টেনে হিচড়েই নিয়ে
। রুদ্রিক রাগে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
ইশানি শেখকে মেরে ফেললে হয়তো রাগটা কমতো।
___________________
ও.টিতে কাজলের অপরাশেন চলছে।
কাজলের বাবা-মা, রুদ্রিকের বাবা-মা এসেছে। কাজলের বাবা-মা অনাবরত কেঁদে চলেছে। রুদ্রিকের বাবা-মা তো মুখও দেখাতে পারছে নাহ ইশানির কর্মজান্ডে। দিয়ার কোলে বাচ্ছাটা এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
ছুটকিও কেঁদে যাচ্ছে।
রুদ্রিক এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। সাদি রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে আছে।
ডক্টর ওটির থেকে বাইরে এসে বলে,
—-“পেশেন্ট এর অবস্হা ভালো নাহ। দুদুবার অপারেশন করা হচ্ছে। তারমধ্যে মাথাতেও গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে। প্রচন্ড ব্লাড লস হয়ে গেছে
ও পজিটিভ রক্ত লাগবে। না হলে রোগীকে বাঁচানো যাবে নাহ। তারমধ্যে আমাদের কাছে এখন ও পজিটিভ রক্ত ও নেই।”
কথাটা শুনে সকলে আরো ভয় পেয়ে যায়। তনয় এসে বলে,
—-“আমার রক্তেত গ্রুপ ও পজিটিভ। আমি রক্ত দিব। ”
তনয়কে দেখে সবাই অবাক হয়। ছুটকি তয়নের দিকে তাঁকায়। হ্যা ছুটকির ইনফরমেশনে তনয় এসেছে। কাজলের বাব-মা তনয়ের কাছে এসে বলে,
—“বাবা তুমি এসেছো? কিন্তু তোমাকে কে জানালো?”
—-“আপাতত সেসব কথা না হয় বাদ দেই। এখন রক্ত দেওয়াটা বেশি প্রয়োজনীয়। ”
কথাটি বলে তনয় ডক্টরের সাথে চলে যেতে নিলে। রুদ্রিক তাকে চোখের ইশারায় তাকে ধন্যবাদ জানায়।
_______
হসপিটালে শেষ প্রান্তে ছুটকি কেঁদে যাচ্ছে কান্না যেনো তার থামছেই নাহ। নিজের বোনকে এই অবস্হায় দেখে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে। তনয় রক্ত দিয়ে এসে দেখে ছুটকি কাঁদছে। তনয় ছুটকির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—-“তুমি এখনো সেই ছিচকাদুনি রয়ে গেলে। চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
প্রায় ২ঘন্টা হয়ে গেলো ভিতরে অপরেশন চলছে। নার্স বাইরে আসতেই লাজুক ও সিথি তার কাছে গিয়ে বলে,
—-“ভিতরে কি অবস্হ এখন? ”
নার্স বললেন,
—“এখনো অপারেশন চলছে। খুবই ক্রিটিকাল পেশেন্ট। ডক্টর নিজে কিছু না বললে কিচ্ছু বলা যাচ্ছে নাহ। ”
রুদ্রিকের ধৈর্য্যের বাঁধ যেনো পড়ছে। রুদ্রিক সরাসরি নার্সকে টপকিয়ে অপারেশন থিয়েটায়ে যেতে নিলে, নার্স আটকে বলে,
—-“স্যার কী করছেন কি? অপরাশন চলছে। ”
রুদ্রিক চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,
—-“আই ডোন্ট কেয়ার ওকে? আমি দেখবো আমার ওয়াইফের এখন কি অবস্হা। প্রায় ৪ ঘন্টা হতে চললো। আই কান্ট ওয়েট এনিমর
আমি আর কিছুতেই ওয়েট করবো নাহ।”
কথাটি বলে রুদ্রিক অপারেশন থিয়াটারে চলে গেলো। সিথি সাদির কাছে এসে বলে,
—“ভাইয়ূ কি করছে,? ভাইয়ূকে তো আটকাতে হবে। ”
সাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—-‘বলে লাভ নেই। কেননা রুদ্রিক এখন নিজের মাঝে নেই। ‘
রুদ্রিক থিয়াটার রুমে প্রবেশ করতেই সকল ডক্টররা তার দিকে তাঁকায়। ডক্টর এগিয়ে এসে বলে,
—-“আপনি এই অপারেশন থিয়াটারে কীভাবে ঢুকলেন? ”
ডক্টরের প্রশ্নের কোনোরকম জবাব না দিয়ে রুদ্রিক কাজলের দিকে এগিয়ে যায়। কাজলের শরীরের সাথে কাটা-ছেড়া করা হচ্ছে। কাজলের হার্টব্রিটও একেবারে স্লো হয়ে গেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইরকম অবস্হায় দেখে রুদ্রিক নিজেকে আর সামলাতে পারলো নাহ। সে একপ্রকার ছুটে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্রিককে ছুটে বেড়িয়ে যেতে সবাই হতবাক!
_____
হসপিটালের করিডোরে গিয়ে ধপ করে চিৎকার করে কান্না করে বসে পড়ে রুদ্রিক। কে বলেছে ছেলেরা কাঁদে না? ছেলেরাও কিন্তু কাঁদে। দিনশেষে নিজের প্রিয়মানুষের কাছে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে সকলেই বড্ড অসহায়। এই ভালোবাসার যেকোন মানুষকে অসহায় করে দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আজ রাফসিন শেখ রুদ্রিকও কাঁদছে তার কাজলের, জন্যে তার শুভ্ররাঙাপরীর জন্যে। তার ভালোবাসার মানুষটির জন্যে। রুদ্রিক একপলক তাঁকিয়ে দেখে গোধূলীর বেলা পড়ে গেছে,কিন্তু আজও গোধূলীর আকাশে মুগ্ধতা নেই কোনো সিদুরমাখানো রংয়ের স্পর্শ। আছে শুধু এক রাশ ধূসর বিষন্ন আকাশ। হয়তো সেই আকাশে মেঘ জমবে, হয়তো প্রকৃতিও মন খুলে কাঁদবে আজ রুদ্রিকের সাথে।
রুদ্রিক হাটু গেড়ে কাঁদছে তখনি কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পায়। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে সিথি। কোলে রুদ্রিক ও কাজলের সেই ছোট্ট পরী। সিথি বলে উঠলো,
—“ভাইয়ূ তুই না সেই গ্রেট রাফসিন শেখ রুদ্রিক? তুই আজকে কাঁদছিস? তুই ভেঁঙ্গে পড়লে কীভাবে হবে বল? ”
রুদ্রিক কান্নামাখা গলায় বলে,
—-“কি করবো বল? আমি যে পারছি নাহ রে বোন। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। ”
সিথি বলল,
—“ভাইয়া একটিবার নিজের পরীটার দিকে তাঁকিয়ে দেখ। তোর এবং কাজলের ছোট্ট পরী।
এক দিনের শিশু এখনো পর্যন্ত নিজের মায়ের স্পর্শ নিজের মাকে কাছে পাইনি। তুইতো ওর বাবা
এখন তুই-ই’ তো ওকে আগলে রাখবি তাইনা? মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিটি বিপদ দিয়ে প্রতিটা পদে পরীক্ষা নেন। তাই বলে কি আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে? ”
সিথির কথা শুনে রুদ্রিক নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। অদ্ভুদ ব্যাপার বাবার কাছে আসতেই মেয়ে কান্না থামিয়ে দিলো। একেই বলে রক্তের টান!
রুদ্রিক নিজের মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—“আমার পরী মা। তোমার বাবা আছে। তুমি কেঁদো নাহ প্লিয। তোমার মা ঠিক সুস্হ হয়ে ফিরবে দেখো। ”
সিথির চোখে ও জল।
আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছে দিয়া, লাজুক ও সাদি। তাদের চোখেও যেনো আজ জল। রুদ্রিকের এমন অবস্হা কারো কাম্য নয়। তখনি ডক্টর বেড়িয়ে এসে বলে,
বাকীটা আগামী পর্বে….