#গোপন_বিয়ে
#৯ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি কাঁদতে কাঁদতে পথ হাঁটছি।জানি না কোথায় যাবো! আমি তো আর ছেলে মানুষ না যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে গিয়েই রাত পার করে দিতে পারবো!এই দেশে এখনও মেয়েরা নিরাপদ নয়।দিনের বেলাতেই রাস্তা ঘাটে গাড়িতে ছেলেদের থেকে কত রকম অশালীন কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি কিংবা প্রস্তাব যে শুনতে হয়! তাছাড়া সেদিন রাতেও তো কত বড় ঘটনা ঘটে গেল আমার সাথে!
‘
আচমকা ইমতিয়াজ ভাইয়াকে সামনে পেয়ে আমি চমকে উঠলাম। তিনি অস্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,’নাতাশা, কাঁদছো তুমি!’
বলে তিনি আমার কাছে এসে আমার দু চোখ মুছে দিয়ে বললেন,’আমি আগেই জানতাম এমন কিছুই হবে। এই জন্যই এগিয়ে এসেছি। একবার ভেবেছিলাম নিতুলদের বাড়িতে যাবো। কিন্তু যাইনি এই ভেবে যে তখন ওরা আমায় ফাঁসিয়ে দিতে পারতো।’
আমি ইমতিয়াজ ভাইয়াকে জাপটে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো আবার কেঁদে উঠলাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’কেঁদোনা। তোমাকে শক্ত হতে হবে। প্রতিবাদ শিখতে হবে। এই দেশের মেয়েরা যেদিন প্রতিবাদ করতে শিখবে।সত্যটা প্রকাশ্যে বলে দিতে শিখবে। সেদিন আর মেয়েদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।বুঝেছো?’
আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,’হু।’
ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার বললেন,’তাহলে চোখের জল মুছে ফেলো।’
আমি চোখের জল মুছে ফেললাম বা হাতের পিঠ দিয়ে।
তারপর তিনি বললেন,’আপাতত আমার বাসায় চলো। ওখানে থেকেই বাকী প্লান আর অ্যাকশনে আমরা যাবো। ওই শয়তান আর ওর মাকে উচিত শিক্ষা দিবো।’
আমি চুপ করে রইলাম।
ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,’নাতাশা, তুমি কী এখনও নিতুলকে ভালো বাসো?’
নিতুলকে ভালোবাসি কথাটা শুনে আমার মাথা আগুন হয়ে গেলো। আমি রাগে ক্ষোভে জোর গলায় বললাম,’ভাইয়া, প্লিজ আমার সামনে এই কুকুরটার নাম আপনি উচ্চারণ করবেন না। আপনি জানেন ও আজ কী করেছে?’
‘কী করেছে?’
‘আমার পেটে থাকা ওর নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছে।’
ইমতিয়াজ ভাইয়া কথাটা শুনে খুব একটা অবাক হলেন না। তিনি মৃদু হেসে বললেন,’ যে নিজের ভালোবাসাকেই অস্বীকার করে ফেলে। নিজের স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।তার থেকে তুমি আর কী ভালো আশা করো?’
আমার আবার কান্না পেয়ে গেছে। আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।
ইমতিয়াজ ভাইয়া এবার আমায় বড়সড় একটা ধমক দিলেন।ধমক দিয়ে বললেন,’বললাম না কাঁদবা না।কার জন্য কাঁদছো? মানুষ মানুষের কাছ থেকে দুঃখ পেলে কাঁদে।মন খারাপ করে। কিন্তু অমানুষের কাছ থেকে দুঃখ পেলে কেউ কাঁদে না।’
আমি আবার চোখ মুছে ফেললাম।
তারপর হাঁটা ধরলাম আমরা। আমাদের গন্তব্য ইমতিয়াজ ভাইয়ার বাড়ি।
‘
বাসায় ফিরে আমি অদ্ভুত এক কান্ড করলাম।
হাতের চুড়ি খুলে ফেলতে লাগলাম। ইমতিয়াজ ভাইয়া তা দেখে আমায় এমন ধমক দিলেন! বললেন,’চুড়ি খুলতেছো কেন?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’আমি এখন আর কারো বিয়ে করা বউ না ভাইয়া। আমার হাতে চুড়ি রাখার প্রয়োজন নাই।’
ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,’ কিন্তু তুমি একজন মা। মায়ের হাতে চুড়ি থাকায় কোন নিষেধ নাই।’
আমি মনে মনে ভাবলাম ইমতিয়াজ ভাইয়া তো ভুল বলেননি। আচ্ছা ইমতিয়াজ ভাইয়ার মতো এতো ভালো মানুষ অন্য পুরুষ গুলো হয় না কেন?
‘
সকাল বেলা অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো।নিতুল এসে বসে আছে বাসায়।বাসায় আমি একা। ইমতিয়াজ ভাইয়া বাজার করতে গিয়েছেন।
নিতুল এসে কাচুমাচু করে বললো,’নাতাশা,আমি সরি! অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। আমি মাফ চাইছি তোমার কাছে।আমায় মাফ করে দেও প্লিজ!’
আমি কথা বললাম না।ওর সাথে কথা বলতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না। বরং আমার ইচ্ছে হচ্ছে নিতুল যেন আমার সামনে থেকে এক্ষুনি বিদেয় হয়।
নিতুল আমায় চুপ করে থাকতে দেখে আমার দু হাত এসে ধরে ফেললো।ও আমার হাত ধরতেই ওর থেকে একটানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,’তোকে এতো বড় সাহস কে দিয়েছে রে কুকুর আমার হাত ধরার?’
সে তবুও কাচুমাচু করে বলতে লাগলো,’প্লিজ রাগ রেখো না। মাকে আমি সব বুঝিয়ে বলেছি।মা-ই আমাকে পাঠিয়েছে তোমায় নিয়ে যেতে।আর তুমি তো আমায় অনেক ভালোবাসো।তুমিই তো বলেছিলে আমার জন্য তুমি সব করতে পারো!’
আমার ভীষণ রাগ পাচ্ছে এখন। ইচ্ছে করছে ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এক্ষুনি বাসা থেকে বের করে দিতে।
তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,’হাত ছাড়ো বলছি।হাত ছেড়ে দাও আমার!’
‘তুমি যতোক্ষণ আমায় ক্ষমা না করো ততোক্ষণ আমি তোমার হাত ছাড়বো না।’
আমি ওকে সাবধান করে দিয়ে বললাম,’ভাগ্য ভালো তো এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও। ইমতিয়াজ ভাইয়া যদি এসে তোমায় এখানে দেখে তখন কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।এখান থেকে আস্ত তুমি যেতে পারবেনা!’
নিতুল হঠাৎ চটে গেলো।সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে আমার হাতে এক ঝাঁকি দিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’এই ডাক্তারটাই সব খেলার মূল। তুমি এর জন্য আমার সাথে এমন করছো।মানে তোমার কাছে আমার চেয়ে ওই ডাক্তারটা বেশি?’
‘হুম বেশী। কারণ তুমি আমার কিছু হওনা। কিন্তু ওই ডাক্তারটা আমার ভাই।’
‘ভাই না নাগর এটা আমি খুঁজে বের করবো।আর শালাকে আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো!’
এই কথা বলে নিতুল বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি পেছন থেকে তখন তাকে বলে দিলাম,’দেখা যাবে কে কাকে শিক্ষা দেয়!’
‘
#চলবে