#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৪||
রিহা গালে হাত দিয়ে রেহানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে।রেহানের সেইদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ও ওর মতো কাজ করে যাচ্ছে।
বেশকিছুক্ষণ পর রেহান হাতের কাগজ টা দেখে রিহার সামনে ধরে বলে
_”নাও তোমার ফ্রম ফিলাপ করা শেষ।কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে।
রিহা গালে হাত দিয়ে বলে
_”সেটা ভালো করে বললে হতো।আমি কি বাচ্চা নাকি যে বুঝবো না
রেহান বাকা হেসে বলে
_”তুমি ভালো কথার মেয়ে না।ভালো ভাবে বলতে গেলে তো তোমার কাছে অসভ্য।তোমাকে ঠিক করার জন্য প্রতিদিন দুইবার করে (হাত দিয়ে মার দেখায়) দিতে হবে
রিহা কটমট করে এগিয়ে আসতে গেলে রেহান বলে
_”আরেকটা খাবে নাকি ?
রিহা কিছু না বলে ফ্রম নিয়ে দেখতে থাকে।আর রেহান হাসছে
একটু আগে রিহার ডিভোর্সের কথা শুনে রেহানের মাথা গরম হয়ে যায়।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে গালে একটা বসিয়ে দেয়।রেহান রিহার ভার্সিটির অ্যাডমিশন পেপার নিয়ে আসছিলো কিন্তু রিহার ডিভোর্স ডিভোর্স শুনে ওর নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়।
রিহা কে আর কিছু না বলতে দিয়ে রেহান নিজেই ফ্রম ফিলাপ করে দেয়।
রেহান বাইরে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো।রিহা ভার্সিটির ভর্তির কাজটা হাতে নিয়ে দেখছে।ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে রিহা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাইলে ওর আব্বু বারণ করে। আফরান কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবে।বিয়ে ঠিক ছিল আফরানের সাথে রিহা ওর আব্বুর মুখের উপর কখনো কিছু বলেনি।যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে ওর আব্বু ওর সব।আফজাল সাহেব অনেকটা গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ।উনার মনের ভিতর কি চলছে সেটা কেউ বলতে পারবে না।বিয়ের জন্য পড়ালেখা বন্ধ করাতে রিহা অনেক কষ্ট পেয়েছিল তবুও ওর আব্বুর মুখের উপর কিছু বলতে পারেনি।রিহা খুব ভালো স্টুডেন্ট না আবার খুব খারাপ স্টুডেন্ট না।দুইটার মাঝখানে।
পড়ালেখা করতে রিহার খুব ভালো লাগে বিশেষ করে নতুন কিছু জানতে।ওর আব্বু যেটা বুঝলো না সেটা যে রেহান এভাবে পূরণ করবে ভাবতে পারেনি।রিহার এখন রাগ হচ্ছে না উল্টো ভালো লাগছে।
_”লোকটা যতটা খারাপ নিজেকে দেখায় ততোটা খারাপ না।একটু একটু ভালো আছে।উফফ ভাবতেই কেমন লাগছে কাল থেকে আবার ভার্সিটিতে যাবো নতুন ফ্রেন্ডের সাথে।ইসস লামি আর রো কে যদি পেতাম।জানিনা ওরা কেমন আছে? ফোনটা ও তো নেই।
রিহার খুশি লাগছে আবার খারাপ ও লাগছে ওর ফ্রেন্ডের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলে ভালো হতো।
রিহার ভাবনার মাঝে কেউ কলিংবেল বাজাচ্ছে।রিহা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে নিচে যায়।দরজা খুলতেই একজন মধ্যবয়স্ক লোক রিহার দিকে তাকিয়ে আছে ।
রিহা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
_”কে আপনি?
লোকটা মুখের হাসি বজায় রেখে বলে
_”রেহান বাবা বাসায় নেই ? তুমি কি রেহান বাবার বউ ?
রিহা লোকটার হাসি দেখে সব বিরক্ত ভুলে হাসি মুখে বলল
_”জি আপনি কে?
লোকটা হাসি মুখে জবাব দেয়
_”আমি এই বাসায় কাজ করি।কয়দিন ছুটিতে গিয়েছিলাম।
রিহা ছোট করে ওহ বলে লোকটাকে ভিতরে আসতে বলে।লোকটা ভিতরে এসে বলে
_”বউ মনি আপনি মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।এতে আপনার কোনো দোষ নেই বর্তমানে সবাই এইভাবে ডাকাতি করে।
রিহা বিড়বিড় করে বলে
_” #গ্যাংস্টারের বাড়িতে নাকি ডাকাতি কথাটা হাস্যকর।
_”কিছু বললেন বউ মনি?
_”না আচ্ছা আপনার নাম কি?
লোকটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলে
_”রফিক বউমনি ।রেহান বাবা রফিক চাচা বলে ডাকে।
_”আপনার পরিবারে কয়জন আছে ?
রফিক চাচা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_”একটা বউ ছিলো কিন্তু কান্সেরে মারা গেছে।আর আছে একটা ছেলে সেও বউ নিয়ে আলাদা থাকে।
রিহার খুব খারাপ লাগছে।বর্তমানে কিছু ছেলে মেয়ে বুড়ো শশুর শাশুড়ি কে বোঝা মনে করে তারা এটা ভেবে দেখে না তারা ও একসময় বুড়ো হবে।কিছু কিছু কর্মের ফল দুনিয়াতে ভোগ করতে হয়।যে সন্তান তার স্ত্রীর কথা শুনে বাবা মা কে আলাদা করে দেয় সে মেরুদন্ডহীন।
রিহা কিছু সময় রফিক চাচার সাথে গল্প করে।মানুষটা খুব খুব মিশুক তাকে দেখে বুঝা যায় না তার মনে এত কষ্ট।সত্যি বলে যে যত বেশি হাসি খুশি তার অতীত তত ক্ষতবিক্ষত।
সন্ধ্যার দিকে রেহান ফিরে এসে দেখে রিহা সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে ।রেহান রফিক চাচাকে সালাম দেয়।
রিহা এখনো খেয়াল করেনি রেহান আসছে।রেহান রিহার পাশে প্যাকেট রেখে রুমে যায় ফ্রেশ হতে।রফিক চাচা রিহার কাছে নাস্তা দিয়ে রেহানকে ডাক দেয়।
রেহান ফ্রেশ হয়ে রিহার পাশে বসতে বসতে রিমোট কেরে নেয়। রিহা চিল্লাতে গেলে রেহানকে দেখে বলে
_”আপনি কখন এলেন?
রেহান একবার রফিক চাচার দিকে তাকায় তো একবার রিহার দিকে।
রফিক চাচা হেসে বলে
_” টিভি দেখছিল তাই হয়তো খেয়াল করেনি।
রেহান বাকা হেসে বলে
_”জানেন চাচা আমি একটা বাচ্চা কে বিয়ে করে নিয়ে আসছি।আল্লাহ জানে কখন বাল্যবিবাহের জন্য পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়।
রিহা রেহানের কাছে এসে হাত নিজের কাছে নিয়ে জোড়ে একটা কামড় দেয়।
রেহান চিল্লাতে ও পারছে না।রিহা কামড় দিয়ে বলে
_”বাচ্চা যখন বললেন এখন বাচ্চারা কি কি করে সেটা সহ্য করেন।
রেহান তাকিয়ে দেখে লাল হয়ে গিয়েছে।রেহান কি একটা ভেবে বললো
_”লাভ বাইট? আই লাইক ইট। কিন্তু আমি একা কেনো পাবো তোমার ও তো পাওনা
রেহান এগিয়ে আসতে গেলে রিহা এক ছুটে সোজা ঘরে।রেহান ও পিছন পিছন যায় ।রিহার পিছনে ছুটছে আর রিহা এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে।
এক পর্যায়ে রেহান ধরতে পারে রিহা কে।দুই হাত নিজের এক হাতের মধ্যে নিয়ে বলে
_”এখন আপনাকে কে বাঁচাবে ?
রিহা হাফিয়ে হাফিয়ে বলে
_”ছাড়ুন বলছি। নাহলে কিন্তু চিৎকার করবো
রিহার কথায় রেহান হাসিতে ফেটে পড়ে।হাসি থামিয়ে বলে
_”আমার রুম সাউন্ডপ্রুফ তাই তো চিন্তা।এখন শাস্তির জন্য তৈরি হয়ে যান মিসেস রেহান।
রিহা ছোটফট করছে রেহান রিহার গলায় হাত দিয়ে নিজের আরো কাছে আনে।রিহা মাথা দিয়ে না না করছে
রেহান মুচকি হেসে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।রিহার রাগ হচ্ছে সাথে সুরসুরি লাগছে রেহান হটাৎ জোড়ে কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয়।
রিহা রাগে রেহানের চুল ধরে টান দেয়।রেহান চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে
_”এই তুমি কি পাগল হলে ? জানো আমার চুলের উপর কত মেয়ে ক্রাশ খায় আর তুমি সেই চুল ধরে টান দিলে তোমাকে তো জেলে দেওয়া উচিত।
রিহা আয়নায় নিজেকে দেখছে আর বলছে
_”আর আপনি যে আমার গলায় দাগ করলেন।এখন ছেলেরা আমার উপর ক্রাশ খাবে কি করে? লাল হয়ে গিয়েছে।শয়তান একটা
রিহা হটাৎ হাতে টান অনুভব করে।রিহা কে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে ।
রিহা শুধু তাকিয়ে আছে আর রেহান গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে
_”তুমি রেহান চৌধুরীর সম্পদ ।আর নিজের সম্পদ কে রক্ষা করতে এই রেহান খুব ভালো করে জানে।তোমাকে পাওয়ার জন্য এত কিছু করছি সেই আমি কি করে অন্য কারোর নজর তোমার উপর সহ্য করবো? উড়তে দিয়েছি ঠিক কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে
রেহানের কথা মাঝে রিহা বলে
_”আমি তো পা দিয়ে হেঁটে বেড়াই।উড়ে তো বেড়াচ্ছি না
রেহান হেসে দেয় রিহা নিজেকে ছাড়াতে নিলে রেহান আরো চেপে ধরে তখনই রেহানের ফোন বেজে উঠে ।
রেহান বিরক্ত নিয়ে না দেখেই ফোন কানে ধরে।ওপাশ থেকে বলে
_”রেহান আমি ভিডিও কল দিয়েছি তুই কানে ধরলো কেনো ?
ভিডিও কলের জন্য রিহা শুনতে পায়।রেহান ফোন সামনে ধরে বলে
_”আম্মু তুমি !
রেহানের আম্মু পাশে দেখে বলে
_”তোর পাশে কে রেহান ?
রিহা কে হালকা দেখা যাচ্ছিল।রেহান রিহাকে নিজের আরো কাছে এনে বলে
_”আম্মু ও
রেহান কে বলতে না দিয়ে মাইশা চৌধুরী বলে
_” আমি জানি।তোর থেকে ভালো চিনি।রিহা মা কেমন আছিস ? আমাকে মনে আছে ?
রিহা কিছুটা অসস্তি হচ্ছে।প্রথম দেখাতে কেউ তুই করে বলে।রেহান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে
_”আম্মু একটু ওমন।অল্প তে সবাইকে নিজের আপনজন মনে করে ।সালাম দাও
রিহা নিজের জড়তা কাটিয়ে সালাম দেয়।মাইশা চৌধুরী রিহাকে প্রাণ ভরে দেখছে যেনো কতো দিনের চোখের তৃষ্টা মিটাচ্ছে।
মাইশা চৌধুরী রিহার সাথে অনেক কথা বলছে রিহা শুধু উত্তর দিচ্ছে।রেহান পাশে গালে হাত দিয়ে বসে দেখছে ।
মাইশা চৌধুরী হটাৎ রেহানকে বলে
_”রেহান ওকে নিয়ে কবে আসবি? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
রেহান ফোনটা নিয়ে বলে
_”আম্মু ওর কাল থেকে ভার্সিটি শুরু।এখন সম্ভব না তবে খুব তাড়াতাড়ি আসবো।
মাইশা চৌধুরী মন খারাপ করে বলে
_”আমি মরলে নিয়ে আসবি ?
রেহান রেগে বলে
_”আম্মু এইসব কি ধরনের কথা ? এমন করলে কিন্তু আমি কখনো আসবো না
_”রাগ দেখিয়ে কি লাভ?যদি মানুষটা না থাকে
রেহান এবার আরো দুর্বল হয়ে পড়লো ছলছল চোখে ওর মায়ের দিকে তাকায়।রিহা পাশ থেকে বলে
_” আচ্ছা মামনি দুইদিন পর আমরা আসবো। এখন তুমি একটু হাসি দাও
মাইশা চৌধুরী রিহার কথায় অবাক হয় সাথে রেহান ও।রিহা দুইজনের এমন তাকানো দেখে বলে
_”কিহলো এমন করে তাকিয়ে আছেন কেনো?
রেহান বলে
_”তুমি আম্মুকে কি বললে ?
_”কেনো ?মামনি! তো আমি কি বলবো? অ্যান্টি কেমন একটা লাগে আর আম্মু তো বলতে পারবো না কারণ আমার একটাই আম্মু ।
মাইশা চৌধুরী বলে
_”আচ্ছা ঠিক তুই মামনি বলে ডাক কিন্তু প্রমিজ কর আসবি ?
রিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কেটে দেয় ।
পরদিন রিহা রেডী হয়ে বসে আছে আর রেহান রেডী হচ্ছে তো হচ্ছে ।রিহার এখন খুব রাগ লাগছে।
রিহা বিরক্ত নিয়ে বলে
_”আমি কি চলে যাবো ?যেতে ও দিচ্ছেন না আর নিজে ও তাড়াতাড়ি করছেন না।এবার আমি একাই চলে যাবো
রিহা ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে আসে।রেহান কে বকতে বকতে নিচে নেমে আসে ।
দরজার কাছে যেতেই কলিং বেল বেজে উঠে রিহা খুলে দেখে ডিলিভারি বয়।
রিহা কে দেখে বলে
_”এটা রেহান চৌধুরীর বাড়ি ?
রিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।ডেলিভারি বয় রিহাকে একটা পার্সেল দেয় আর সই করতে বলে।
রিহা পার্সেল নিয়ে রেহান কে ডাক দিয়ে বলে পার্সেল আসছে ।রেহান নিচে নামতে নামতে বলে
_”খুলে দেখো।ওটা তোমার জন্যই
রিহা কৌতূহল নিয়ে খুলে দেখতেই চোখ কপালে
চলবে
(