#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৪||
রেহান আফরানের কপালে গান ধরে দাড়িয়ে আছে পাশে রিহা বুঝাচ্ছে রেহানকে কিন্তু রেহান এক দৃষ্টিতে আফরান আর ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আফরান রিহার হাত ছেড়ে গান বের করে রেহানের দিকে ধরে ।
রেহান বাকা হেসে রিহার দিকে তাকায়।রিহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
_” আফরান তুমি গান ব্যাবহার করো ?
রিহা যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না ।রেহান এক হাত দিয়ে রিহাকে নিজের দিকে টেনে বলে
_” রিহ্ন বেবি তুমি আরো অনেক কিছু জানো না ।তোমার আব্বুকে জিজ্ঞেস করো আমাকে কেনো ঢুকতে দেয়নি আর গায়ে হাত দেওয়ার অর্ডার কেনো দেওয়া হইছে জিজ্ঞেস করো
রেহানের কথা শুনে রিহা ওর আব্বুর দিকে তাকাতেই আফরান বলে
_” আমি বলেছি।আমরা কেউ চাই না এই গুন্ডার সাথে তোমার যোগাযোগ থাকুক ।
আফরানের কথায় রেহান জোড়ে হেসে দেয়।রিহা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
একদিকে ওর আব্বু অন্য দিকে স্বামী।সব সমস্যার সমাধান রেহান করতে পারে ।রিহা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই অনেকগুলো কালো গাড়ি এসে থামে রিহাদের বাসায় সামনে।
গাড়ি থেকে কিছু কালো পোশাক পড়া লোক বেরিয়ে চারিদিক ঘিরে ধরে।রেহান ওদের উদ্দেশ্যে বলে
_” বয়েস আমার শ্বশুর আব্বু আর তার টাকায় চলা কুত্তা কে সসম্মানে বাসার ভিতরে পাঠিয়ে দাও আর হা কারোর গায়ে যেনো কোনো হাত না দেওয়া হয় কারণ এটা আমার জানেন জান
শেষের কথাটা রিহার দিকে তাকিয়ে বলে ।আফরান এগিয়ে আসতে গেলে কালো পোশাক পড়া লোকগুলো আটকিয়ে দেয়।রেহান আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে রিহাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে রওনা দেয়।
লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখে আফরান লাফালাফি করছে ।
রিহা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে রেহান শুধু একটা কথা বলছে
_” ভালোবাসি
বাসায় এসে রেহান রিহার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায় ।রিহাকে কিছু বলতে না দিয়ে রেহান বলে
_” ভালোবাসি!শুধু এই টুকু জেনে রাখো খুব ভালোবাসি ।
রিহা এবার বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলে
_” কিসের ভালোবাসা ? আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন আপনি কি সেদিন আব্বুকে ভয় দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করেছিলেন ? হ্যা অথবা না
রেহান মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে ।রেহানের উত্তর না পেয়ে রিহা আরো রেগে যায় ।
_” আমি আপনাকে কিছু বলছি আর আপনি হাসছেন । গ্রেট! আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।যা বুঝার বুঝেছি
রিহা চলে যেতে গেলে রেহান হাত ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে । গালে হাত দিয়ে বলে
_” রাগে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায় ।তোমার ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়। এতোটাই রেগে আছো যে আমার আঘাত তোমার চোখে পড়ছে না।
রিহার এখন খেয়াল হলো রেহানের অনেকটা কেটে গিয়েছে।রিহা কিছু বলতে যাবে রেহান ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়
_” হুসসস কোনো কথা না। আমি বলবো তুমি শুনবে ।তোমাকে যখন আনতে যাই আমাকে ঢুকতে দেয় না ।অনেক জোর করার পর আমায় মারতে থাকে।তুমি ভালো করেই জানো ওমন দুইজন কে আমি নিজেই শেষ করতে পারি তবুও চুপ ছিলাম তোমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাতে। হ্যাঁ আমি তোমার আব্বুকে উনার বিজনেস নিয়ে ভয় দেখিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি কিন্তু আমি যদি সত্যি অসৎ হতাম তাহলে তোমাকে আব্বুকে অনেক আগেই মেরে ফেলতাম ।আফরান তোমার ভার্সিটিতে তোমাকে বিরক্ত করতো সেটা জেনেও তোমাকে বা আফরানকে কিছু বলিনি। সেদিন তোমাকে কিডন্যাপ করা হইছিলো তুমি আর তোমার আব্বু মিথ্যে বলছিলে তবুও তোমাকে কিছু বলিনি।একটু ভেবে দেখো তোমার আব্বু ঠিক হলে বাঁধন কে কেনো মারবে।সে তোমার ভালো চাইলে কোনো ঝামেলা ছাড়া অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিতো আবার আমার বাড়ি পাঠিয়ে আমার ক্ষতি করতে চাইতো না।
রিহা অবাক হয়ে শুনছে ।রেহান আবার বলতে শুরু করে
_” তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো আমি কে।এইসব কথা জানা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না।রিহা আমি বলছি না তোমার আব্বু ভুল বা তোমার ভালো চায় না।হয়তো তোমার আব্বু কোনো ঝামেলায় আছে তাই এমন করছে সেটা তোমাকে বের করতে হবে । সবসময় নিজের দিক দিয়ে না মাঝে মাঝে অন্যের দিক দিয়েও দেখতে হয়।
রিহার মাথা যন্তনা করছে। কি হচ্ছে সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।কে ভুল কে সঠিক কিছু বুঝতে পারছে না ।
রেহান রিহার অবস্থা বুঝতে পেরে রিহাকে কোলে তুলে নেয় ।হটাৎ এমন কাজে রিহা কিছুটা ঘাবড়ে যায় ।
রেহান করুন কণ্ঠে বলে
_” আজকে প্লীজ না করো না।আজ তোমাকে আমার দরকা র খুব করে দরকার।প্লীজ
রিহা কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করে নেয়।রেহান উত্তর পেয়ে রিহাকে বিছানায় শুয়ে দেয় ।রিহাকে নিজের সব টুকু দিয়ে ভালোবাসতে থাকে ।
____________________________________
আফজাল সাহেব রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।আফরান সেই থেকে বলছে রিহা কে আনতে যাবে কিন্তু আফজাল সাহেব কিছু বলছে না।
আফরান উঠে কিছু বলতে যাবে তার আগে আফজাল সাহেব একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
_” কে বলেছিল রেহানের গায়ে হাত তুলতে ? রিহা কে কত কষ্ট করে বুঝিয়ে রাখছিলাম এখন কি হলো? রেহান তো নিয়ে গেলো
আফরান গালে হাত দিয়ে বলে
_” আমি কি করে বুঝবো রে
আফজাল সাহেব আরেকটা চর মারতে গিয়েই থেমে যায় ।হুংকার ছেড়ে বলে
_” আমার চোখের সামনে থেকে দুর হয়ে যা ।এমন ইউজলেস আমার দরকার নেই।যা
আফরান সোজা বেরিয়ে যায় রুম থেকে ।
আফজাল সাহেব চেয়ারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে ।
এদিকে রেহানের বুকে রিহা শুয়ে আছে।রেহান গভীর ঘুমে মগ্ন কিন্ত রিহার চোখে ঘুম নেই।
_” আব্বু কি মিথ্যে বলছে নাকি রেহান ? কিন্তু রেহানকে আমি ভালো করে চিনি আব্বুর কথার সাথে তো রেহানের কোনো মিল নেই।এর মধ্যে আফরান কিছু করছে না তো ।কি করবো? উফফ মাথাটা ফেটে যাচ্ছে।আল্লাহ প্লীজ উপায় দেখাও
রিহা উঠতে গেলে রেহান আরো জড়িয়ে ধরে।রিহা লজ্জায় ডাকতেও পারছে না।
রিহা আবার উঠার চেষ্টা করে তবুও পারছে না।এবার জোড়ে ধাক্কা দিতেই রেহান ছেড়ে চোখ মেলে তাকায় ।
রিহা কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।রেহান হটাৎ এমন করায় কিছু বুঝলো না।আবার শুয়ে পড়ে।
রেহান গোসল করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রেহানের সামনে যাবে কি করে এইসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে উকি মারে।
আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হতে গেলেই রেহানের কণ্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায়।
_” এভাবে চোরের মত বেরিয়ে যাওয়ার কি আছে? আমি তো!অন্য কেউ তো আর না
রিহা কোনো কথা না বলে চুল শুকাতে থাকে ।আপাতত রেহানের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে নিজেই লজ্জায় পড়া।রেহান হাতের উপর মাথা দিয়ে রিহা কে দেখছে
রিহার সেদিকে খেয়াল নেই। নিজের কাজ শেষ করে ফাস্টেড বক্স এনে রেহানের পাশে বসে।
রেহান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
_” কি করছো তুমি ?
রিহা কোনো উত্তর দেয় না ।রেহান এবার গাল চেপে বলে
_” আমি কিছু বলছি কানে যাচ্ছে না ? উত্তর দাও
রিহা রেহানের মত করে রেহানের গাল চেপে বলে
_” আপনি দেন ? আমি যে কত প্রশ্ন করি এর সঠিক উত্তর দিয়েছেন ? তাহলে আমার কাছ থেকে আশা করেন কি করে
রেহান ছেড়ে দিয়ে বলে
_” কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ?
রিহা তুলোতে ওষুধ লাগিয়ে রেহানের কাটা অংশে লাগাতে লাগাতে বলে
_” আপনি অর্ধেক কথা কেনো বললেন ? মানলাম আব্বু মিথ্যে কথা বলছে তাহলে তো আপনি জানেন কেনো বলছে ? আমাকে কি বলছেন
রেহান রিহার হাতে চুমু খেয়ে বলে
_” আমি সত্যি জানিনা।তবে আমি যা জানি সেটা তোমাকে কাল বলবো না দেখাবো।আমরা কাল সিলেট যাচ্ছি
রিহা অবাক হয়ে বলে
_” আপনার কি মাথা ঠিক আছে? লামিয়া বাঁধন ভাইয়ার এই অবস্থা।এদিকে আব্বুর শরীর ভালো না আর আপনি
রেহান কিছু না বলে উঠে দাড়ায় ।ওয়াশরুমে ঢুকার আগেই রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_” রেডী হয়ে নাও হসপিটালে লামিয়া একা আছে ।
রিহা পিছন থেকে কিছু বলছে কিন্তু রেহান কোনো কথা না শুনে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রিহার এখন খুব রাগ হচ্ছে বকতে বকতে রেডী হতে লাগলো।
রেহান তুয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে দেখে রিহা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে ।
_” কিহলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ?
রিহা চিল্লিয়ে বলে
_” আপনার কি আমার কথার কোনো দাম নেই? আমি কিছু বলছি আর আপনি
রেহান ধমক দেয় কিন্তু রিহার দমবার পাত্রী না উল্টো রেহানকে আরে ধমক দেয়।
_” দেখো তোমার যা প্রশ্ন আছে সব ওখানে গিয়ে প্রুফ সহ পেয়ে যাবে আর বাঁধনের চিকিৎসা করানোর জন্য যাচ্ছি।তোমার আব্বুকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না একদিনের মধ্যেই চলে আসবো।
রিহা আরো কোনো কথা বলে না।আপাতত নিজের মাথাটা ঠান্ডা রাখতে হবে ।একটা দিনের তো ব্যাপার ।
_” কাল সত্যি আমার প্রশ্নের উত্তর পাবো ত ?
বিনিময়ে রেহান আয়নায় একটা লুক দেয় রিহা আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রেহান বিড়বিড় করে বলে
_” সোজা কথার মেয়ে না।স্টুপিড !
___________________________________
রিহা লামিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে ।লামিয়া বাঁধনের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা ছাড়া খেয়ে নিচ্ছে ।
রেহান বাইরে গিয়েছে ।লামিয়া রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_” তোর গলায় কিসের দাগ ?
রিহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।লামিয়া হয়তো রিহার মুখ দেখে বুঝতে পারছে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” ভাইয়া কে ভুল বুঝিস না কখনো।তুই কাছে পাচ্ছিস তাই দাম দিচ্ছিস না অথচ অনেকে কান্না করে ও পায় না ।
লামিয়ার কথায় রিহা মুচকি হাসি দেয়।
_” হ্যাঁ কাল দূরে গিয়েই বুঝতে পারছি ।একটা রাত ওকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না সেখানে সারাজীবন কি করে পারবো।দোষ যদি রেহানের হয়ে থাকে তাহলে আমি ওকে ভালো করার চেষ্টা করবো।কাউকে ছেড়ে যাওয়া তো তার ভুলে শাস্তি হতে পারে না।স্বামী ভুল করলে স্ত্রী শুধরে দেবে আর স্ত্রী ভুল করলে স্বামী শুধরে দেবে এটাই তো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন। যাই হোক আমি রেহানকে ছাড়তে পারব না কিন্তু আব্বু।ব্যাপার না আব্বু তো আমাকে ভালোবাসে আমার সুখেই তো আব্বুর সুখ।আব্বুকে আমাদের সাথে রাখবো (মনে মনে)
রিহা মনে মনে ভেবে মুচকি হাসি দেয়।লামিয়ার গলায় ভাত আটকে যায়।রিহা তাড়াতাড়ি পানি আনতে গেলে দেখে ৩জন গার্ড বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।
রিহা ওদের পানি আনতে বললে ওরা চলে যায় ।এদিকে লামিয়ার অনেক কষ্ট হচ্ছে ।
গার্ডগুলো পানি আনলে লামিয়া পানি খায় ।
হটাৎ রিহার ফোনে মেসেজ আসে রিহা মেসেজটা দেখে বাইরে যায় ।
হসপিটালের বারান্দা দিয়ে হাত ছিলো হটাৎ একটা হাত রিহাকে টেনে রুমের ভিতর নিয়ে যায়।এমন ঘটনায় রিহা লোকটার বুকে গিয়ে পড়ে
#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৫||
রিহা নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে অবাক হয়।
_”আফরান তুমি ?
আফরান রিহার এক হাত ধরে বলে
_” আংকেল অনেক অসুস্থ্য রিহা।তোমাকে বার বার দেখতে চাইছে।তুমি কাল গেলে আর তো আসলে না ।আমি জানি ওই গুন্ডা তোমাকে আটকে রেখেছে।তুমি চিন্তা করো না আমরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।
কথাটা বলে রিহাকে নিয়ে যেতে গেলে ।রিহা হাত ছাড়িয়ে দেয়।
_” কি হলো রিহা ? চলো আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।
রিহা কোনো কথা না বলে দাড়িয়ে আছে ।আফরান রিহার কোনো রেসপন্স না পেয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_” তাহলে কি তুমি রেহানকে ভালোবাসতে শুরু করেছো? টেল মি রিহা !
রিহা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
_” না না! আফরান কে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমি রেহানকে ভালোবাসি।কে মিথ্যা বলছে সেটা আমি জানিনা।রেহান তো বলেছে কাল সব কিছু বলবে।এখন যে করেই হোক আফরান কে ম্যানেজ করতে হবে ।আল্লাহ তুমি আমার আব্বুর আর রেহান কে সুস্থ্য রেখো।দুইজনেই তো আমার জান (মনে মনে )
আফরান রিহার উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।রিহা আফরানের দিকে তাকিয়ে বলে
_” দেখো তুমি এভাবে এখানে এসে ঠিক করোনি।তার থেকে বড়ো কথা আমি এখন যেতে পারবো না।রেহানের কাছ থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে ।লামিয়ার অবস্থা ও ভালো না।প্লীজ তুমি একটু আমাকে বুঝার চেষ্টা করো । জাস্ট দুইদিন দাও।
আফরান কি বলবে বুঝতে পারছে না ।রিহাকে বেশি জোড় করলেও অন্য রকম হতে পারে।আফরান চুপ থাকতে দেখে রিহা বলে।
_” তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো? দেখো লামিয়া কে সামলানোর জন্য আমার সময় লাগবে । আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড
আফরান কিছু একটা ভেবে রিহার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে
_” আই ট্রাস্ট ইউ।নিজের ফ্রেন্ডকে সামলিয়ে নাও দুইদিন পর আমরা চলে যাবো অনেক দূরে।নিজের খেয়াল রেখো
আফরান রিহাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে রিহা পিছিয়ে যায়।আফরান মন খারাপ করে চলে যেতে গেলে রিহা পিছন থেকে বলে
_” আব্বুর খেয়াল রেখেন।আমি সময় পেলে খোজ নেবো আর নিজের ও খেয়াল রেখেন।
আফরান খুশি হয়ে মাথায় হুডি দিয়ে বেরিয়ে যায়।আর রিহা ভাবতে থাকে
_” আচ্ছা সবাই বলে যে সঠিক হয়ে থাকে তার মনে ভয় থাকে না ।তেমনি রেহান তো সবার সামনে দিয়ে আমায় নিয়ে আসছিল।এদিকে আফরান লুকিয়ে লুকিয়ে আসছে।ব্যাপারটা হলো আফরান আব্বুকে কিছু ভুলিয়ে বলে নি তো।উফফ রিহা তুই কত বোকা ফিল্মে দেখিস না ।নায়ক নায়িকা বিয়ে হলে এক্স বয়ফ্রেন্ড ভিলেন হয় ।
রিহা এইসব ভাবতে ভাবতে করিডোর দিয়ে হাঁটছিলো হটাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় ভালো করে তাকিয়ে দেখে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ।
রিহা আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে ।রিহা তাড়াতাড়ি উঠে দৌড় দেয়।
_” কপালটা খারাপ। মানুষ হিরোদের সাথে ধাক্কা খায় আর আমি দেয়ালের সাথে ।
রিহা বিড়বিড় করে কেবিনের দরজা খুলতে দেখে লামিয়া নেই।
এদিকে
রেহান নিজের কেবিনে বসে ফোনে কথা বলছে তখনই দরজায় কেউ নক করে ।রেহান সেদিন না ফিরে ভিতরে আসতে বলে
লোকটা ভিতরে এসে কিছু ফাইল রেহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
_” স্যার আপনি আফজাল সাহেবের সব ডিটেইলস চেয়েছিলেন সেগুলো নিয়ে আসছি ।
রেহান ফোন কেটে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে বলে
_” আর কি কি জানতে পেরেছো ?
ম্যানেজার সাহেব রেহান কে বলতে শুরু করে।
_” স্যার আফজাল সাহেবের এই কয়েক বছরে নিজের ফ্যাক্টরির কোনো উন্নতি করতে পারেনি।মূলত এতদিন যেভাবে চলেছে সেটা অনেক আগের সাফল্যের উপর ।একসময় আফজাল সাহেবের বিজনেস সবার কাছে পরিচিত ছিল কিন্তু বর্তমানে কেউ চিনে না বললেও চলে ।শ্রমিকদের বেতন ঠিক মত দেয় না বলে অভিযোগ এসেছিল ।অনেক টাকা দিয়ে সেখানের সব কিছু বন্ধ করে ঢাকা এসে আশ্রয় নিয়েছে।উনার ব্যাংক ব্যালেন্সে অনেক টাকা আছে কিন্তু প্রতি বছর উনি মোটা অঙ্কের কিছু টাকা বিদেশে পাঠায় । কার কাছে পাঠায় ?কেনো পাঠায় ? এই ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। আরেকটা কথা সত্যি অবাক না হয়ে পারা যাবে না ।
রেহান অধির আগ্রহে প্রশ্ন করে
_” কি ?
ম্যানেজার সাহেব বলে
_” উনার একমাত্র মেয়ে রিহা ।এত টাকার মালিক হয়েও রিহাকে সরকারি স্কুলে ,কলেজে পড়িয়েছে।এত ভালো ভালো স্কুল,কলেজ থাকতে ।না মানে এইসব বড়লোক গুলো তো বড় বড় জায়গা পছন্দ করে।
লাস্টের কথাটা ম্যানেজার সাহেব মাথা নিচু করে বলে ।রেহান গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
হটাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় রেহান ভাবনা বাদ দিয়ে ফোন ধরে হ্যাল্লো বলার আগেই ঐপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসে ।
রেহান অস্থির হয়ে বলে
_” রিহা কি হয়েছে? এমন করে কান্না করছো কেনো ? বলো আমায় ?
রিহা কান্না করতে করতে কথা বলতে পারছে না ।রেহান আবার বলে
_” রিহা জান আমায় বলো নাহলে বুঝবো কি করে? কি হইছে আমি আসছি
রিহা নাক টেনে টেনে বলে
_” লামিয়া কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ।আমি হসপিটাল খুঁজে দেখেছি কোথাও নেই।আমার খুব ভয় করছে বাঁধন ভাইয়ার জন্য ও নিজের কোনো ক্ষতি করলো না তো ।
কথাটা বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ।রেহানের নিজের গালে দুইটা থাপর দিতে ইচ্ছা করছে ।অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে বলে
_” লামিয়া বাসায় গিয়েছে ।তুমি হসপিটাল খুজেছো কিন্তু বাসায় একবার ফোন দিতে পারলে না ।
রিহা কান্না থামিয়ে বলে
_” আপনি জানলেন কি করে ?
রেহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে
_” রিহা আমি একটু ব্যাস্ত আছি ।তুমি বাসায় ফোন দিয়ে খোজ নাও
রিহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রেহান কেটে দেয়।
রিহা ভাবতে থাকে কি করে ফোন দেবে।বাসার নাম্বার তো রিহার কাছে নেই।
কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখে বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে ।
রিহা মুচকি হাসি দিয়ে বলে
_” আপনারা কি লামিয়া কে দেখেছেন ? যে আমার সাথে ছিল
একজন বলে
_” জি ম্যাডাম । একটু আগে আপনার খোজ করছিলো ।বাসায় নাকি কি দরকার ।
রিহা আবার রেহানকে ফোন দেয় ।রেহান ফোন ধরে কিছু বলার আগেই রিহা বলতে থাকে
_” আমি জানি আপনি খুব ব্যাস্ত।কিন্তু আমার ছোট একটা প্রশ্নের উত্তর দিলে আর বিরক্ত করবো না।ছোট একটা প্রশ্ন! এখন আপনি রেগে যাবেন আমায় কিছু বলবেন তারপর আবার রাগ হবে আমি কিছু বলবো ।এইসব বলাবলি না করে সোজা কথায় উত্তর দিলে সময়,কথা দুটোই বেচে যাবে ।
এক দমে কথাগুলো বলে রিহা জোরে জোড়ে নিশ্বাস নেয়।রেহান ওপাশ থেকে হেসে দেয়।
রিহা বুঝলো পরিবেশ ঠান্ডা আছে তাই নিজে হেসে বলে
_” আমি প্রশ্ন করি ?
রেহান জোড়ে হেসে বলে
_” তুমি আর বড়ো হলে না ।আচ্ছা শুনি কি তোমার প্রশ্ন
রিহা ফোন নাম্বার চাইতে রেহান গম্ভীর কিন্ত বলে
_” তোমার বুদ্ধি কি সব পিকনিকে গিয়েছে ? লামিয়ার কাছে ফোন দিলে তো হয় ।স্টুপিড !
রিহা আস্তে আস্তে বলে
_” এত ছোট কারণে কেউ এমন করে।সোজা বললে তো হয় ।আমি তো এখন বিরক্তির কারণ হবো।নতুন পাইছেন তো?
রেহান নিম্ন কণ্ঠে বলে
_” রিহা জান তুমি জানো আমার কাজের সময় ফোন দেওয়া পছন্দ না।আচ্ছা সরি! বাসায় এসে আদর করে দেবো।লাভ ইউ। উম্মমাহ
রিহা ফোনের সাউন্ড কমিয়ে দেয়।এতক্ষণ লাউস্পিকারে কথা বলছিল ।
বডিগার্ড হাসছে।রিহা একটু দূরে গিয়ে বলে
_” এই আপনার লজ্জা সরম কি ঘুরতে গিয়েছে ? এমন বেসরম হলেন কবে থেকে? মানুষ জনের সামনে ছি !
রেহান হেসে বলে
_” আমি কি জানি তুমি লাউস্পিকারে কথা বলছো।আর আমি আমার বউকে বলছি অন্য মেয়েদের তো না।এখন আমার রিপ্লাই দাও ।ফাস্ট ।
রিহা প্রতি উত্তরে বলে
_” আই লাভ মি
কথাটা বলে ফোন কেটে দেয়। লামিয়ার নাম্বারে ফোন দিতেই ফোন ধরে।
রিহা চিন্তিত সুরে বলে
_” লামি তুই ঠিক আছিস? শরীর খারাপ করছিলো নাকি হটাৎ এভাবে চলে আসলি।
ওপাশ থেকে লামিয়া বলে
_” আমি ঠিক আছি ।কাল তো সকালে আমাকে যেতে হবে তাই ব্যাগ গুছিয়ে রাখছি ।তোকে খুঁজছিলাম কিন্তু পায়নি।
_” তোকে এইসব করতে কে বলেছে ? তোর শরীর এমনি ভালো না ।আচ্ছা আমি আসছি
লামিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_” সবসময় তো ওর সব কিছু আমি গুছিয়ে দিয়েছি এখন ও আমি করবো ।তুই চিন্তা করিস না আমি ঠিক আছি ।আমাকে ঠিক থাকতে হবে বাঁধনের জন্য।আমি কিছুক্ষন পর আসবো ।
রিহা তাড়াতাড়ি বলে
_” থাক ।তুই এক কাজ কর একটু অপেক্ষা কর রেহান আসলে ওর সাথে আসিস।বেচারা অনেক কষ্ট করছে ।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তোকে নিয়ে আসবে আর কিছু খাইয়ে দিস ।চাইলে এতক্ষণ ঘুমাতে পারিস ।
লামিয়া কিছু বললো না ।রিহা ফোন কেটে মুচকি হেসে বলে
_” যাক রেহানের জন্য হলেও যদি একটু রেস্ট করে।
রিহা গিয়ে বাঁধনের কেবিনে বসে।
লামিয়া শুয়ে আছে আর বাঁধনের সাথে কাটানো স্মৃতি ভাবছে ।
_” কত সুন্দর ছিল আমাদের সপ্ন।কবে তুমি সুস্থ্য হবে আর কবে আমরা এক হবো ।প্লীজ তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাও ।প্লীজ
হটাৎ লামিয়ার ফোনে কেউ ফোন দেয়।লামিয়া চোখের পানি মুছে বলে
_” এই মেয়েটার ঘুম হবে না।উফফ রিহা
ফোন হাতে নিয়ে দেখে unknown number। লামিয়া ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে
_” আপনার স্বামী বাধনকে কে মেরে জানেন ? যদি জানতে চান তাহলে এক্ষুনি আমার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যান।
লামিয়া অবাক হয়ে বলে
_” কে আপনি ? আর আপনার কথায় আমি কেনো যাবো ?
ওপাশ থেকে লোকটা বলে
_” আমি কে সেটা জানার প্রয়োজন নেই।জানি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না । দয়া করে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ চেক করেন
কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয়।লামিয়া ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে ।হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতেই দেখে কেউ বাধনকে পিছন দিক দিয়ে আঘাত করছে ।
লামিয়া ডুকরে কেঁদে উঠে ।রফিক চাচা তাড়াতাড়ি এসে দেখে লামিয়া কান্না করছে ।
লামিয়া কিছু না বলে বেরিয়ে যেতে গেলে দেখে রেহান আসছে ।রেহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই লামিয়া কান্না করে ।
রেহান হতভম্ব হয়ে যায় ।লামিয়াকে অনেক বুঝানোর পর ঠান্ডা হয়।
পরের দিন রিহা আর রেহান এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়ি করে সিলেটের দিকে রওনা দেয়।
রেহান আড় চোখে একবার রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_” আচ্ছা আমি তোমাকে নিয়ে বের হলেই তোমার মুখ ফুলে থাকে কেনো ? যখনই বের হই তখনই ফুলে রাখো ? ব্যাপার কি ?হুম!
রিহা কোনো কথা বলে না ।রেহান মুচকি হেসে বলে
_” আদর লাগবে ? এটার জন্য এত কিছু করার কি দরকার ? আমাকে বললে তো আমি দিয়ে দিতে পারি।
কথাটা বলে রিহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে গেলে রিহা হাত ধরে কামড় দেয়।
_” উফফ রাক্ষসী বউ আমার ।
রিহা হাতের আঙ্গুল উচু করে রাশভারী কণ্ঠে বলে
_” আপনি আমাকে মিথ্যা কেনো বললেন ? আপনি তো বলছিলেন লামিয়া আমাদের সাথে সিলেটে যাবে তাহলে ওকে আর ভাইয়া কে কেনো বিদেশে পাঠালেন ?আর ওদের একা কেনো ছেড়ে দিলেন ?
রেহান কিছু বলে না ।রেহানের চুপ করে থাকা দেখে রিহা বলে
_” আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন না ? আমার জন্যই কি ওদের দূরে
কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারে না গলায় আটকে যায়।রেহান কিছু বলতে যাবে হটাৎ বিকট শব্দ হয়।রেহান রিহা দুইজনে চমকে যায় ।
রেহান গাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখে টায়ার পাংচার হয়ে গেছে।পিছনে বডিগার্ডের গাড়ি ছিল সেটাও দেখা যাচ্ছে না ।
রেহান আশে পাশে তাকিয়ে রিহাকে বাইরে আসতে বারণ করে নিজে দেখতে থাকে।
রিহা মন খারাপ করে বসে আছে রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান চাকার কাছে বসে দেখছে ।রেহানের পিছনে একটা লাল আলো জ্বলছে ।
রিহা গাড়ি থেকে নেমে লাল আলো অনুসরণ করে তাকিয়ে রেহান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিকট শব্দ হয়
রেহান চমকে রিহার দিকে তাকায়।দুইজন দুইজনার দিকে তাকিয়ে আছে হটাৎ রিহা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
রেহান স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে ।মাঝে মাঝে আমরা আশা করি না এমন কিছু হলে মানুষের চলন শক্তি হারিয়ে ফেলে ।রেহানের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে ।
রিহার ডান হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে । আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ফেলে।রেহান রিহার কাছে গিয়ে রিহাকে ডাকতে থাকে ।
ততক্ষণে ওখানে মানুষজন চলে আসে।রেহান চিৎকার করে রিহার নাম ধরে ডাকছে ।
চলবে