#চন্দ্রাবতী
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চমকে উঠলো চন্দ্রা।ফ্রেশ হতে বাথরুমের দিকে যখন সে হেঁটে যাচ্ছে তখন আচমকা ধাক্কা লেগে গেল একজনের সাথে তার ।যার সাথে ধাক্কা লেগেছে সেও বাথরুম থেকেই বের হয়ে এসেছে।চন্দ্রা দু চোখ উপরের দিকে তুলে চমকে উঠলো।এতো সকালে মাহমুদ ভাই এখানে কী করে এলো?
মাহমুদ হা হা করে হেসে উঠে বললো,’ভয় পেয়েছো?’
চন্দ্রা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’না। অবাক হয়েছি।এটা কীভাবে পসিবল?’
‘অফকোর্স পসিবল। তোমার বারিষদার সাথে আমার ঝগড়া মিটে গেছে।আর সেই আমায় গিয়ে সকাল বেলা বাসায় নিয়ে এসেছে।’
চন্দ্রা এদিক ওদিক লক্ষ্য করে বললো,’শুনুন। এখন আর কথা বলা যাবে না। ওরা এসে দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
মাহমুদ হেসে বললো,’কিছুই হবে না কারণ ওরা কেউ বাসায় নেই।’
‘মানে?’
‘মানে হলো বারিষ আর আন্টি গিয়েছেন মন্দিরে পুজো দিতে। আঙ্কেল গিয়েছেন বাজারে। বাসায় শুধু আমি আর তুমি।’
চন্দ্রার তখন ইচ্ছে করছিলো আনন্দে চিৎকার করে উঠতে। কিন্তু সে নিজেকে সংবরণ করে বললো,’আপনি ঘরে গিয়ে বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
এই বলে চন্দ্রা বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর হালকা সাজগোজ করলো। মাহমুদ তাকে দেখে বললো,’তুমি খুব সুন্দর চন্দ্রাবতী!’
চন্দ্রা বললো,’ইশ শ্!আর পাম দিতে হবে না।’
‘তোমায় আমি শুধু শুধু পাম দিতে যাবো কেন?’
চন্দ্রা ফট করে বলে ফেললো,’কারণ আপনি আমায় ভালো বাসেন।’
কথাটা বলে চন্দ্রা জিহ্বায় দাঁত কামড়ে নত হয়ে গেল ।আর মাহমুদ খানিক সময় চুপ থেকে বললো,’তুমি খুব ভালো চন্দ্রাবতী। কারণ তুমি আমায় সহজেই বুঝতে পেরেছো।আই লাভ ইউ চন্দ্রাবতী।আই লাভ ইউ ভের্যি মাচ।’
চন্দ্রার চোখে জল এসে গেল।সে সেই জল মোটেও মুছলো না। সেই জলের সাথে তার গাল বেয়ে কাজল গলে পড়ছে। মাহমুদ এবার বসা থেকে উঠে চন্দ্রার দিকে এগিয়ে গেল।আর চন্দ্রার দুটো চোখ তার জামার হাতা দিয়ে মুছে দিতে দিতে বললো,’তুমি আমায় ভালোবাসো না না চন্দ্রাবতী?’
চন্দ্রা মুহূর্তে মাহমুদকে আঁকড়ে ধরে বললো,’ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।’
মাহমুদ এবার তার পিঠে হাত দিলো। তারপর চন্দ্রার ঠোঁটে তার ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,’আমার জীবন মরণ!’
চন্দ্রা দু চোখের পাতা বন্ধ করে বললো,’আমার রোমিও।’
তারপর ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা গেল দেয়ালটার পাশে। এবার চন্দ্রা কে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলো মাহমুদ। চন্দ্রা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো।
ঠিক তখন দরজায় কোন শব্দ না করেই সরাসরি ঘরে প্রবেশ করলেন অমল চ্যাটার্জী। তার হাতে বাজারের ব্যাগ। ঘরে ঢুকেই যখন তিনি নিজের ভাগ্নীকে একটা মুসলমান ছেলের সাথে প্রণয় দৃশ্যে দেখলেন তখন তার মাথা ঘুরে উঠলো। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বাজারের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিনি মাহমুদের কলার টেনে ধরে বললেন,’শুয়োর। আমার সরল মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে এসেছিস!’
বলেই তিনি দু দুটো চড় বসিয়ে দিলেন মাহমুদের গালে।আর এক হ্যাচকা টানে মাহমুদকে ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেললেন তিনি।
আর এদিকে ভয়ে জড়সড় হয়ে উঠছিলো চন্দ্রা।অমল এবার চন্দ্রা কে প্রচন্ড জোরে এক ধাক্কায় ফেলে দিলেন ফ্লোরে। তারপর আর্তনাদ করে বললেন,’তোর বাবা মার সাথে তোরও মরণ হলো না কেন রে পাপিষ্ঠা। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! মুসলমান একটা ছেলের সাথে —
আচ্ছা আমি মানুষকে মুখ দেখাবো কী করে বল তো!’
চন্দ্রা লজ্জায় এবং ভয়ে চুপিসারে কাঁদছে।সে সত্যিই আগে ভাবেনি প্রেমের পথটা এতো কঠিন। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছে।তার হঠাৎ ভয় হচ্ছে মাহমুদকে নিয়ে।সে কিছুতেই হারাতে পারবে না মাহমুদকে। কিছুতেই না।প্রয়োজনে মরে যাবে সে।
‘
মাহমুদ এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকলো না।সে জানে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তার আর চন্দ্রার দুজনের বিপদ হবে।তাই সে মনে চাপা কষ্ট নিয়েই হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।আর মনে মনে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলো। এই সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়বে না সে। ভালোবাসার জন্য সে এরচেয়েও বেশি কিছু করতে পারে।
‘
ভূবন বাসায় ফিরে আগুন হয়ে গেলেন।এমনিতে তিনি চন্দ্রা কে খুব ভালোবাসেন । কিন্তু মুসলমান ছেলের সাথে এমন কুকর্ম!
ভূবন রাগে কটমট করতে করতে দু হাতে টেনে ধরলেন চন্দ্রার চুলের মুঠো। তারপর বললেন,’বল, কতদিন ধরে ওর সাথে সম্পর্ক তোর?’
চন্দ্রা কিছু বলছে না। শুধু কাঁদছে।
বারিষের খুব কষ্ট হচ্ছে।চন্দ্রার কান্না তার সহ্য হয় না।তার বাঁ বুক টায় খুব ব্যাথা হয়! বারিষ এবার তার মায়ের পায়ে গিয়ে পড়লো। তারপর অনুনয় করে বললো,’মা,ওমা ছেড়ে দাও ওকে।ও আর এমন ভুল করবে না।’
ভূবন তার ছেলেকে জীবনে এতোটুকুও দুঃখ দেননি। ছেলের কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি। এবার তিনি কীভাবে ছেলের অনুনয় ফিরিয়ে দিবেন!
———————————————————————
ভূবন উঠে পড়ে লেগেছেন চন্দ্রার জন্য ছেলে দেখায়। এই সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর তার বিয়ে দিয়ে দিবেন। সংবাদ শুনে বাসায় এলেন বৃন্দাবন দাস। এবার তার পালা। তিনি মুখ খুলে বলেই ফেললেন—–
‘
‘
#চলবে
‘
‘