#জলছবি
#পার্ট_৩০
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
লুবনার জ্ঞান ফিরলো অনেক পরে। চোখ মেলে সকলের উদ্বিগ্ন মুখের দিকে চাইলো। তারপই অভিমানে মুখ সরিয়ে নিলো। সাহানারা সেই কখন থেকে নিরবে কেঁদে যাচ্ছেন। মেয়ের জ্ঞান ফিরার পরও তার কান্না কমলো না। আমিনুল হক এসিতে বসেও দরদর করে ঘামছে। নিস্তেজ লুবনাকে দেখে প্রথমে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ভাগ্যিস তার ডাক্তার বন্ধুটির বাড়ি কাছেই ছিল। তিনি এসে চেইক করে জানালেন, মেজর কিছু নয়, জাস্ট সেন্সলেস! দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফল। তার সাথে টেনশন।
আমিনুল হক লুবনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“এমন ছেলে মানুষী কেন করেছিস মা? এতক্ষণ কেউ না খেয়ে থাকে? তোর কি চাই সেটা আমায় বললেই তো হতো! আমি তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রেখেছি? এত জেদ!”
লুবনা বাবার হাত মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ডাক্তার চলে যাওয়ার পর তাকে খাওয়ানোর জন্য অনেক জোর করা হলেও সে কোনোরূপ হেলদুল করলো না।
আমিনুল হক অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত একজন ব্যক্তি। সবচাইতে বড় কথা, তিনি একজন বিখ্যাত বিজনেসম্যান। এই সফলতা তো আর এমনি এমনি আসেনি, তাই না? মানুষকে কনভেন্স করার কৌশল তার খুব ভালো জানা আছে। তিনি হাঁক ছেড়ে মেইডদের মধ্য থেকে একজনকে বললেন, এই জসিম? মকবুলকে বল, গাড়ি বের করতে। আমি আর আমার মা এখন হসপিটাল যাব। আমার মেয়ের বন্ধুটির জ্ঞান ফিরেছে শুনলাম, তাকে তো দেখতে যাওয়া প্রয়োজন। কী বলো মা?”
শেষের প্রশ্নটি তিনি লুবনার দিকে ছুড়ে দিলেন। লুবনা এক প্রকার উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“বাবা? ফয়সালের জ্ঞান ফিরেছে? তুমি সত্যি বলছো, বাবা?”
তিনি হেসে পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললে,
“হ্যাঁ। জলদি খেয়ে নাও, আমরা হসপিটাল যাব।”
সাহানারা মিনমিনে স্বরে বললেন,
“এই মাঝরাতে না গিয়ে, কাল সকালে গেলে হয় না?”
আমিনুল হক তেঁতে উঠে বললেন,
“তুমি চুপ থাক, ইডিয়েট!”
লুবনার সকল রাগ, অভিমান গায়েব হয়ে গেল এক নিমিষে। খুশিতে আত্মভোলা হয়ে গেল। ফয়সালের জ্ঞান ফিরেছে শুনেই সকল ক্লান্তি, অসুস্থতা গায়েব। আরো বেশি খুশি লাগছে বাবা নিয়ে যাবেন শুনে।
লুবনারা যখন হসপিটাল এসে পৌঁছাল তখন রাত তিনটা অতিক্রম করেছে। আমিনুল হক বললেন,
“তুমি যাও, আমি নিচেই অপেক্ষা করছি। চলে এসো দ্রুত।”
লুবনা খুশি মনে সায় জানিয়ে হসপিটালের ভেতর ছুটে গেল। আমিনুল হকের মনের রাগটা, বুদ্ধিটা টের পেলো না কোনোক্রমেই!
কেবিনের সামনে এসে লুবনার গলা ধরে এলো। মনে হচ্ছিল কত যুগ পর দেখবে ছেলেটাকে!
সৃজন, নিষাদ তখনও সজাগ। যদি কিছুর প্রয়োজন হয় বন্ধুর? সে কারণেই থেকে যাওয়া। মেয়েগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা থেকে গিয়ে।
কিন্তু এতো রাতে লুবনাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো দুজন। নিষাদ বলল,
“কিরে, এত রাতে তুই? ফোন অফ ছিল কেন? হুট করে এলি যে?”
সৃজন ক্ষীণ সন্দেহের স্বরে প্রশ্ন করলো,
“এই পালিয়ে-টালিয়ে আসছিস নাকি? বড়লোকেগো তো আবার পালানোর ব্যাতিক আছে। হাছা কইরা ‘ক তো, পালাইছিস-টালাইছিস নাকি?”
লুবনা এসবের উত্তর না দিয়ে খুশি ধরা কন্ঠে বলল,
“ফয়সালকে দেখবো।”
নিষাদ বলে,
“আর সময় পাস নাই, না? কয়টা বাজে দেখছিস? ও তো মেবি ঘুমাচ্ছে। জাস্ট দেখে চলে আয়।”
লুবনা খুব মেনে নেওয়ার মতন করে মাথা নাড়ায়। নার্স সব দেখেটেখে বেড়িয়ে আসার পরই লুবনা ভেতরে যায়।
সৃজন সন্দিগ্ধ হয়ে বলে,
“এই দুইটার কাহিনী কী ক’ তো? দুইটার মধ্যে কী চলে?”
নিষাদ হেসে ফেলে বলে,
“টেম্পু চলে।” একটু থেমে বলে, “ওদের কথা বাদ দে। নোলকের কাহিনী কিছু বুঝছিস? মাইয়া যে কেমন আওলায় গেছে!”
সৃজন গোয়েন্দা টাইপ ভাব নিয়ে বলে,
“হুম, গভীর চিন্তার বিষয়।”
নিষাদ পিঞ্চ মেরে বলে,
“সাবধান, বেশি গভীরে যাইস না আবার!”
সৃজন নিষাদের বাহুতে আলতো থাপ্পড় মেরে বলে,
“যাহ, শালা।”
“আমার বড় বোন নাই।”
সৃজন দুঃখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলে,
“থাকলেও লাভ হইতো না। তখন আবার তুই ভিলেন ভাই হয়ে যাইতি। আমার আর এই জিন্দেগিতে মিঙ্গেল হওয়া হইলো না! বেদনার জীবন!”
নিষাদ একগাল হেসে নিশিতাকে টেক্সট করতে করতে বলে,
“আহ-হারে! স্যাড স্টোরি। দুক্কু পেলুম!”
সৃজন নিষাদকে ল্যাং মেরে নিজের চুল দু’হাতে আওলা-ঝাওলা করতে করতে কোথায় যেন যায়!
লুবনা নিঃশব্দে ভেতরে এসে ফয়সালের বেডের পাশে দাঁড়ায়। ফয়সালকে ঐ ঘুমন্ত অবস্থাতে দেখেই ঝড়ঝড় করে কেঁদে ফেলে। মনে হচ্ছে যেন কত কাল পরে দেখছে! আলতো করে ফয়সালের গালে হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গে ফয়সাল জেগে যায়। ঘুম খুব পাতলা ওর। লুবনার দিকে চাইতেই চমকে উঠে। শান্তি অনুভূত হয়। লুবনার মুখপানে চেয়ে ঘুম জড়ানো দুর্বল কন্ঠে বলে,
“লুবু!”
ফয়সালের কন্ঠ শুনে লুবনার কান্নার বেগ বাড়ে বৈ কমে না। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যায়।
প্রথমে যেমন খুশি হয়েছিল এবার তেমন বিরক্ত হলো ফয়সাল। তার সেই চিরাচরিত কথার ধরনেই বলল,
“এই মাইয়া? তোর জামাই মরছে? কান্দস ক্যান? ফাউল!”
লুবনা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো। ফয়সালের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“খুব মিস করেছি ফয়সাল! কেমন আছিস, বেয়াদপ?”
ফয়সাল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আলালের দুলালি আমারে ভালো থাকতে দিল কই? মাঝরাইতে জ্বালাইতে চইলা আসছে। এই বড়লোকগুলার লাইগা দুনিয়ায় শান্তি নাই। ইশশ আমার কাঁচা ঘুমটা!”
লুবনার চোখ বেয়ে তখনও অশ্রুধারা বয়। যেন পুরো একখানা সমুদ্র তার চোখে!
ফয়সাল বিরক্ত হয়ে বলে,
“এই ফ্যাঁচফ্যাঁচ করবি না তো, একদম চোখ গেলে দিব।”
লুবনা নিজের চোখ মুছে দু’হাতে।
ফয়সাল মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর চোখ বন্ধ করে বলে,
“এই মেয়ে? কাজ কর, একটু মাথাটা টিপে দে। কান্নাকাটি করে মাথা ধরিয়ে ফেলছিস। ঝটপট ভালো করে দিয়ে বিদায় হ। আমার চোখে এখন অনেক ঘুম, বুঝলি?”
লুবনা হতভম্ব! এই ছেলেটা এমন কেন? এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেও কি দারুন স্বাভাবিক! হায় আল্লাহ্! এই ছেলের জন্য কি-না পাক্কা একদিন একরাত দুঃখ বিলাস করে কাটিয়ে দিয়েছে?
.
রুম আবছা অন্ধকার। জানালার পর্দা ভেদ করেই পরন্ত বিকালের অল্পকিছু আলো কনার পদচারণ সমস্ত রুম জুড়ে। আলগা দরজার কপাট খুলতেই আরো কিছু আলোক রেখা হুঁ হুঁ করে প্রবেশ করলো রুমটিতে। এই যৎসামান্য আলোতেই স্পষ্ট দৃশ্যমান মানবটিকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর মানবদের একজন বলে আখ্যায়িত করলে বিশেষ ভুল হবে না। সুন্দর মুখখানার একপাশ আলো ছায়া অন্যপাশ অন্ধকার। চোখে চশমা নেই। কেন নেই চশমাটা? দুঃখ লাগে ভারী!
খাটের সাথে আধশোয়া অবস্থাতেই শুয়ে আছে চমৎকার মানুষটি। এক পায়ের উপর আরেক পা সমান করে রাখা। বন্ধ চোখ, বুকের উপর বন্ধ বই! সে কি ঘুমাচ্ছে?
নোলক কাঁপা হাতেই দরজার কপাট ধরল। গড়িয়ে নিচে নেমে এলো দু’খানা চুড়ি! কাচের চুড়ির ছন্দ খেলে গেল সঙ্গে সঙ্গে। পা নাড়াতেই লং-স্কার্টটি ফ্লোর ছুঁল, মৃদু আওয়াজ তুললো এক পায়ের নূপুরটা। টলমলে চোখ, নকশা আঁকা মুখ।
“নোলক! আসো, ভেতরে আসো। দরজায় দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
নোলক চমকে উঠে, থমকে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করতেই টলমলে অশ্রুকণা ফ্লোরে পড়ে। সে কি তবে দেখলে পেল? এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় আদ্রর কাছে। বসে আদ্রর পায়ের পাশে। নিস্তব্ধ রুম ঝনঝন করে উঠে। নোলক খুব দরদ নিয়ে সুধায়,
“আপনি আমায় দেখতে পেলেন?”
আদ্র বলে,
“তোমায় দেখতে দৃষ্টি লাগে না মেয়ে!”
নোলক মায়া মায়া মুখ করে তাকায়। আদ্র’র দৃষ্টি অন্যদিকে। নোলক আর কোন প্রশ্ন করে না। আদ্র একটু থেমে বলে,
“তোমার পারফিউমের ঘ্রানটা খুব নাকে লাগে নোলক। তোমার মতোই ছটফটে ঘ্রানখানা। ঝট করে মস্তিষ্কে হানা দেয়। মাথা ধরে যায় আমার। কি সাংঘাতিক, ভেবেছ?”
“আর দিব না।”
“কী দিবা না?”
“এই বিচ্ছিরি পারফিউম।”
“কেন দিবা না?”
“আপনার অসস্তি হয় তাই!”
আদ্র হাসে। ইশশ, কি সুন্দর! ছেলেটা জানে? তার হাসি এত সুন্দর! সে হাসলে তার চোখ হাসে, হাসে সমস্ত মুখ! সে কী জানে, সে হাসলে হাসে অন্যকারো মন!
“আমার তো তোমার সব কিছু জুড়েই অসস্থি নোলক! তোমার হাতের চুড়ি, তোমার চোখে কাজল, তোমার পায়ের নূপুর, তোমার হাতের ছোঁয়া, তোমার চঞ্চলতা! এই সবকিছুতেই তো আমার অসস্তি নোলক! পুরো তুমিটাই তো আস্ত একটা অসুখ! কী করবে নোলক? কী হবে তোমার?”
কী ভয়ানক খারাপ লাগে নোলকের। টসটসে অশ্রুকণা এবার আদ্রর পায়ের পাতায় পড়ে।
কম্পন খেলে আদ্রর সমস্ত শরীর, মন জুড়ে। এ ব্যাথা, চোখের ব্যাথার কাছে খুবই নগণ্য। বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসে করুন এক দীর্ঘশ্বাঃস। মিহি কন্ঠে বলল,
“কেন আসো বারবার নোলক? কেন বাড়াচ্ছ টান?”
“টান আছে আমার প্রতি আপনার? এই….এইটুকুনু? আছে, বলুন?”
চোখে হাত বুলায় আদ্র। একটা ঢোক গিলে বলে,
“তুমি আমায় পাথর ভাবো, নোলক? তোমার মতো দেখাই না বলে, আমায় তুমি পাথর ভাবো?”
“দেখান না কেন? একটু দেখান!”
একটু থেমে নোলক আবার বলে,
“আমায় আপনি আপনার কাছে রেখে দিবেন প্লিজ? আপনার মনের এইটুকুনু টান হয়ে থেকে যাই না, প্লিজ?”
আদ্র এবারও হাসে। আগের মতো থেকেই এক হাঁটু ভেঙে আরেক পা সমান রেখে বলে,
“তুমি খুব অবুঝের মতো কথা বলছ নোলক। বাচ্চাবাচ্চা আবদার!”
“আপনি তো খুব বোঝেন, আমায় বুঝতে পারেন না ক্যান?”
“কারণ আমি তোমার মতো অবাস্তব চিন্তা করি না। অবুঝ নই যে!”
এরপর বেশ খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতায় কাটে দুটো মানুষ, দুটো মন। সইতে না পেরে নোলকই বলে,
“এই আবদারটা রেখে দিন। আর কিছু তো চাইছি না।”
“তুমি কী চাইছো তুমি তা নিজেও জান না নোলক। সব কিছু চাইতে নেই।”
নোলকের খুব অভিমান লাগে। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। আদ্র তা বুঝতে পারে। খুব আদুরে স্বরে বলে,
“আমার চশমাটা একটু খুঁজে দিবা, নোলকরানী?”
নোলক নাক টেনে কান্না সামলায়, নিজেকে সামলায়। তারপর বলে,
“না। লাগবে না চশমা। আপনাকে চশমা ছাড়াই বেশি সুন্দর লাগে, বিশ্বাস করুন! প্লিজ চশমা পড়বেন না। চশমা পড়লে আপনায় ক্যাবলাকান্ত লাগে। সত্যি বলছি।”
আদ্র হেসে ফেলে। আওয়াজ করে হাসে। তারপর বলে,
“কিন্তু আমি যে চশমা ছাড়া একটুও দেখি না চঞ্চলাবতী! তোমার চঞ্চলতা দেখিনা কতদিন! মানুষ হাসির মায়ায় পড়ে, আমি তোমার কান্নার মায়ায় পড়েছি নোলকরানী। সেই কবে! আজ এমন নাক টেনে কাঁদছ, আর আমি দেখতে পাচ্ছি না। খুব আফসোস হচ্ছে নোলক।” বলেই তার সেই চমৎকার হাসিটা দেয়।
নোলক খুবই বিস্মিত হয়। হাতের উল্টোপাশ নাকে ঠেকিয়ে, কপাল কুঁচকে, দুঃখী হওয়ার মতন করে বলে,
“আবদার করে কান্না দেখতে চাচ্ছেন, ছিঃ! আপনি খুব নিষ্ঠুর, খুব।”
“তুমি আমার সামনে অথচ তোমায় দেখতে পাচ্ছি না। এই যে এসে, পাশে বসে কুটকুট করে কথা বলছ, কাঁদছ, অভিমান করছো, মায়া বাড়াচ্ছ। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। এটা কী বড় শাস্তি নয়? এখন বল, কে বেশি নিষ্ঠুর?”
কাঁদতে কাঁদতেইই হেসে ফেলে নোলক। খুব জোর দিয়ে বলে,
“শুনুন? আমি এবার আর আপনার কোনো কথাই শুনবো না। আপনি আমায় রাখতে না চাইলেও জোড় করে থেকে যাব। সবসময় আপনার কথা হবে কেন? আপনি খুবই পঁচা, লেখক সাহেব! আপনার কথা আমি আর শুনব না।”
আদ্র নোলকের কাছে ঝুকে বলে,
“চোখে না দেখতে পাওয়ায় একটা ভালো হয়েছে, জানো?”
নোলক আদ্র’র ঐ হাসিহাসি মুখখানায় চায়। অন্যরকম চাওয়া!
আদ্র বলে, নিচু স্বরে বলে,
“আজকাল আমার চোখে একটা অতি চমৎকার ছবি ভাসে নোলক, রাত, দিন, সারাক্ষণ। একটা মেয়ের ছবি, একটা চঞ্চলাবতীর ছবি, চোখভর্তি কাজল, মুখভর্তি মায়ার ছবি! একলা আমি, আর দূরে দাঁড়ান সেই মেয়েটার করুন মুগ্ধতার এক জলছবি।”
নোলক ফ্যাঁচফ্যাঁচ কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“আমি আপনায় একবার জড়িয়ে ধরি, প্লিজ?”
“তুমি খুব বাচ্চা নোলক। বাস্তবতা একদমই বোঝ না। উদ্ভট কথা বল, অযৌক্তিক আবদার কর! কবে একটু ম্যাচিউর হবা, বলতো মেয়ে?”
“কখনোই না। আমার সকল অবুঝপনার ম্যাচিউরিটি যে আপনি!”
“হাতটা দাও তো নোলক, একটু ধরি।”
আদ্র’র দু’হাতে হাত রাখে নোলক। চোখের সকল পানি এবার আদ্রর হাতে পড়ে।
ইশশ, জলে আঁকা এই জলছবিটা বন্ধি করে রাখা যেত যদি, কেমন হতো তবে?…..(চলবে)
#জলছবি
#পার্ট_৩১
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
এরপরের একমাস কাটতে লাগলো নোলকের যথেচ্ছা কর্মকান্ডে। আদ্র’র কোনোরূপ বারনের ধার ধারলো না সে। রোজ একবার আদ্রর কাছে আসতে লাগলো। একটা সময় কলেজ শেষে আদ্র’র কাছে আসা রোজকার রুটিন হয়ে দাঁড়াল। একজন স্বতঃস্ফূর্ত চঞ্চল মেয়ের পাল্লায় পড়ে আদ্র’রও বাধা দেয়ার সাধ্য নেই!
ডাক্তারের কাছে চেকাপ করাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও ইশানের থেকে নিয়ে নিলো নোলক। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই এক প্রকার জোড় করেই হসপিটাল নিয়ে যায়। আদ্র বিরক্ত থেকে মহাবিরক্ত হওয়ার ভান করেও রেহাই পায় না। হাল ছেড়ে দিয়ে বলে,”এমন কেন করো নোলক! আমার কোনো কথাই শুনছো না! আশ্চর্য!”
ইশান অন্যরকম হেসে বলে,
“আমি এখন ঝাড়া-হাত-পা অগ্নিশর্মা। অগ্নিকন্যার হাতে যখন আদ্র পড়েছে, এখন আমার আর কোনো চিন্তা নাই। বাছাধন এবার টাইট হয়ে যাবে একদম! হা হা হা!”
আদ্র তবুও কঠিন, গম্ভীর।
রোজ দেখা করতে এসে নোলক প্রথমে যেই কাজটি করতো তা হলো, আদ্র’র কপালে হাত রাখা। চোখ না মেলেই আদ্র বলতো,
“এমন কেন করছো, নোলক? রোজ রোজ কেন আসো?”
খামখেয়ালি নোলক আদ্র’র চাইতেও দ্বিগুণ বিতৃষ্ণা প্রকাশ করার মতন করে বলতো,
“আমার ইচ্ছে। চুপচাপ শুয়ে থাকুন তো! আপনাকে চুপ থাকলেই বেশি ভাল্লাগে। কথা বলবেন না। কথা বললে রাগী টিচার দেখায়!”
বলেই শরীর দুলিয়ে হাসতে লেগে যেত।
আদ্র পেরে উঠে না। হাল ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে। পুরোনো অভ্যাস মতোই বলে,
“চশমাটা একটু খুঁজে দাও তো নোলকরানী! পাচ্ছি না। কোথায় যে রাখলাম!”
নোলক আদ্র’র বালিশের পাশ থেকে চশমাটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে।
“পারবো না খুঁজে দিতে। অযথা চশমার কি কাজ? চশমা পড়লে আপনাকে ক্যাবলাকান্ত লাগে।”
আদ্র হাসে। চশমাটা তার কোনো কাজেই লাগে না। শুধু নোলকের মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্যই বলে। কি যে ভালো লাগে তার!
নোলক ততক্ষণে আদ্রর চশমা নিজের চোখে পড়ে। চারদিক ঝাপসা দেখে। উফ! এত পাওয়ার! কি ভেবে যেন তৃপ্তির হাসি হাসে। হাতের ওই দু’চারটে চুড়ি সমেত হাত দু’খানা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে,
“এইযে শুনুন? আমার একটা বুদ্ধি এসেছে।”
“কী বুদ্ধি শুনি?”
“আপনার চশমাটা আমি পড়বো। তারপর আমি আর আপনি দূরে, অনেক দূরের অচিনপুরে চলে যাবো। এরপর দুজন দুজনার কাউকেই দেখতে পাবো না। শুধুই অনুভব করবো। কেমন হবে বলুন তো? সুন্দর না বুদ্ধিটা?”
আদ্র আওয়াজ করে হাসে। বলে,
“পাগল তুমি নোলক! কেমন পাগলীদের মতো কথা বলো!”
আদ্র’র মুখের হাসি দেখলেই নোলকের দুনিয়াটা শান্তি শান্তি লগে। অমন হাসি দেখতে হলে, পাগল হতেও দোষ নেই।
দুটি মানুষ কথা কয়, কত স্বপ্ন বুনে। যদিও সেই স্বপ্নের বেশিরভাগই নোলকের দখলে।
কখনো কখনো চুড়ি, নূপুর এনে তাড়া দিয়ে বলে,
“দিন তো দিন, এগুলো আমায় পরিয়ে দিন। এক্ষুনি চলে যেতে হবে, সামনে এক্সাম, আমার এখন অনেক তাড়া! জলদি করুন।”
হতভম্ব আদ্র বাধ্য বালক হয়ে, চঞ্চল মেয়েটার কথা মানে। ঝুনঝুন শব্দে চুড়ি পরায়, নূপুর পড়ায়। পরাতে পরাতেই বলে,
“কেন যে এসব পড় নোলক! সারাক্ষণ মাথায় বাজতে থাকে। আমায় তুমি শান্তি দাও না। কি মজা পাও বলো তো।”
মুগ্ধ হয়ে নোলক সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কথায় আছে, যারে ভালো লাগে তার সব কিছুই ভালো লাগে, ভালো লাগতেই হয়। একপ্রকার বাধ্যবাধকতা যেন! এই যে যেমন আদ্রর অমন অভিযোগও নোলকের কাছে শ্রুতিমধুর লাগলো! আনমনে বলে,
“ভাগ্যিস আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, লেখক সাহেব! নয়তো আমি এমন করে চাইতাম কি করে? কি না কি ভেবে বসতেন!”
আদ্র বিনিময়ে মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে বলে, তোমায় আমি অনুভবে দেখি যে মেয়ে! তোমার চোখের মুগ্ধতা সব আমার চোখের স্নিগ্ধতা। শুধু মুখ ফুটে কইতে পারি না। উফফ, দহন!
এরপর টানা দু’দিন এলো না নোলক। আদ্রর এতে খুব একটা ভাবান্তর না হলেও নোলকের খুব উশখুশ লেগেছে, তবুও আসেনি আজ আসবে বলে।
সন্ধ্যা আগে আগে নোলক এলো। আজ সে কলেজ থেকে আসেনি। বাসা থেকে এসেছে। খুব মিষ্টি করে সাজল। আদ্র দেখতে পাবেনা যেনেও। গোলাপি রঙের একটা শাড়ি, হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে মাখামাখি কাজল। কি চমৎকার দেখাচ্ছে নোলককে!
আজ একটা স্পেশাল দিন। নোলকের জন্মদিন। এই দিনে তার সাথে দেখা না করলে দিনটা সত্যিকার অর্থে স্পেশাল হবে কি করে?
বাহিরে তখন মেঘলা আকাশ। এই এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব। দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই আদ্র বলল,
“নোলক এসেছো?”
নোলক এগিয়ে গিয়ে বলে,
“হু! কেমন আছেন?”
নোলকের এই কেমন আছেন এর বিপরীতে আদ্র বলল,
“শুভ জন্মদিন চঞ্চলাবতী। শুভ হোক তোমার জন্মজীবন নোলকরানী। বসো নোলক, কিন্তু আমার তরফ থেকে তোমার জন্য কোনো গিফট নেই যে! আমার তোমায় দেয়ার মতো কিছুই নেই।”
নোলকের চোখ ভিজে উঠে। মনে করার চেষ্টা করে, এত খুশি, এত খুশি সে শেষ কবে হয়েছিল?
বাহিরে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ হয়। অজানা আতংকে ভ্রু কুঁচকে আসে আদ্র’র। হঠাৎ-ই খুব কঠিন হয়ে বলে,
“এই অসময়ে কেন এসেছো? সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে, বৃষ্টি হবে। চলে যাও নোলক। পরে যেতে অসুবিধে হবে।”
নোলকের কি হয় কে জানে! বলে,
“বৃষ্টি হলে হোক, যাব না আমি।”
“অযথা জেদ করবে না। যাও।”
“যদি না যাই?”
আদ্র খানিক রুক্ষ স্বরে বলে,
“যাবে না কেন? অদ্ভুত কথা বলবে না নোলক। বাসায় যাও।”
একটু আগের খুশি খুশি মনটা এবার বিষাদে রূপ নিলো। কি ভীষণ অভিমান খেলে গেলো অবুঝ মনটাতে।
“আমি কী আপনাকে জ্বালাচ্ছি? এমন কেন করছেন?”
“যদি বলি জ্বালাচ্ছো! যাবে তুমি? সময় নষ্ট কোরো না। যাও নোলক। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। জ্বালাও কেন এতো?”
এই এবারের মতো রাগ আর অভিমান আর কখনো হয়নি নোলকের। কাজল কালো চোখ টলমল করে উঠলো। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হলো সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি নামলো একজোড়া অভিমানী চোখজুড়ে!
তারপর? তারপর নোলক তার পায়ের নূপুরটা খুলে ছুড়ে মারলো, হাতের চুড়িগুলো খুলে ছুড়ে ফেললো। ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল রুম জুড়ে, কিছু ভাঙলো হাতে। ভাঙা চুড়ির কিছু অংশ হাতে ঢুকে রক্ত গড়াল, তাতেও কিছু গেলো আসলো না। অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো মুছতে মুছতেই বেড়িয়ে এলো হোস্টেল থেকে। বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে নেমে এলো রাস্তায়। কি তুমুল বৃষ্টি! সেই বৃষ্টিতেই ভিজে একাকার হয়ে গেলো অভিমানী মেয়েটি।
আদ্রর বাড়ি থেকে নোলকের বাসার দূরত্ব দের ঘন্টার। এই দের ঘন্টার পুরোটা পথ নোলক বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই গেলো। ভয়ানক রাগ আর অভিমানে যেন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে মেয়েটা। রিকশাওয়ালা বারবার করে বলতে লাগলো,
পলিথিনটা প্যাঁচাইয়া লন আফা। হুড ফালায় রাখছেন ক্যান। আরে আফা ভিজ্জা যাইতাছেন তো। এই সময়ের জ্বর কিন্তুক মেলা খারাপ হয়। তাত্তারি পলিথিনটা প্যাঁচাইয়া লন।”
এসব কোনো কথাই নোলকের কর্নপাত হলো না। তার শুধু মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি তার মরে যাওয়া উচিত! এই নিষ্ঠুর মানুষটার সামনে আর দ্বিতীয়বার পড়া উচিত নয় কিছুতেই নয়, কোনো পরিস্থিতেই নয়! নোলকের চোখের পানি, বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যায়।
কি আশ্চর্য মানুষের আবেক-অনুভূতি।
উৎফুল্ল মন নিয়ে বের হওয়া নোলক যখন ভেজা চুপচুপে শরীর আর অস্বাভাবিক বিষন্ন মন নিয়ে বাড়ি ফিরলো তখন নবনী অবাক না হয়ে পারলো না। অবাক চোখে বোনের দিকে চেয়ে রইলো।
অমন অদ্ভুত শরীর মন নিয়েই নোলক মৃদু হাসলো। কি আশ্চর্য গুন মেয়েটির!
নবনীকে কিচ্ছুটি বলার সুযোগ না দিয়েই ডিরেক্ট ওয়াশরুমে চলে গেলো। খুব শান্তভাবেই ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে নামাজ পড়লো। তারপর নবনীকে ডেকে নরম আওয়াজে বলল,
“আপু আমি ঘুমাচ্ছি, প্লিজ ডেকো না।”
.
নোলক চলে যাওয়া বেশকিছুক্ষন পর ইশান এলো।
আদ্র তখনও চোখ বুজেই ছিল। নোলকের কথা, নোলকের আবদার সব কেমন তীরের মতন বিঁধে অন্তরে। উহ! দুর্বিষহ! মেয়েটা কি বৃষ্টিতে ভিজেই চলে গেলো? চলে যেতে বলে কি ভুল করেছে? কত ভাবনার আনাগোনা আদ্র’র মন জুড়ে!
রুম জুড়ে ভাঙা চুড়ির বিস্তর আনাগোনা দেখে ইশান প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো,
“নোলক এসেছিলো?”
আদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“হুম।”
“কখন গেলো?”
“একটু আগে।”
“ওহ!”
ইশান হাতের কাগজপত্র গুলো টেবিলে রাখে। হাত মুখ ধোয়। ক্লান্তি ঝাড়তে এক গ্লাস পানি খায়। শার্ট চেঞ্জ করে টিশার্ট পরে।
এই পুরো সময়টায় আদ্র চুপ থেকে হঠাৎ-ই বলে,
“এত রাগ, এত জেদ, এত অভিমান! কিচ্ছু বুঝতে চায়না মেয়েটা! কি করি বল তো?”
ইশান হাসে। তারপর বলে,
“ও যা চায় তাই কর না। কেন অভিমান বাড়াস মেয়েটার। ওর মতো করে যত্ন তোরে কেউ করতে পারবে না। ভালোবাসলে এত পিছুটান নিয়ে ভাবতে হয় না। তুই এবার ভাবা বন্ধ করে দে তো।”
“নোলকের মতো ইম্যাচিউর টাইপ কথা বলিস না ইশু। ওর অনিশ্চিত জীবন চাই না আমি। ও খুব ইনোসেন্ট দোস্ত। জটিলতার মারপ্যাঁচে পড়ে গেলে পাগল হয়ে যাবে মেয়েটা। ও জাস্ট একটা ফ্যান্টাসির মাঝে আছে। ভাবছে সব কিছু খুব সহজ। কিন্তু এটা ভাবতে চাচ্ছে না, সব কিছু এত্তো সহজ নয়। অনেক বেশি কমপ্লিকেটিভ। মেয়েটা কী সুন্দর একটা জীবন ডিজার্ভ করে না, বল?”
ইশান এক এক করে ফ্লোরে পরে থাকা ভাঙা চুড়িগুলো তুলতে তুলতে বলে,
“জোর করে এতো বিজ্ঞদের মতো ভাবা বন্ধ কর। ফ্যান্টাসিটাকেই রিয়ালিটিতে রূপ দে। তোর চোখের দ্যুতি হতে চাওয়া মেয়েটাকে আর জ্বালাসনে। তোর মতো এত জোশ মানুষ পাশে থাকলে ওর জীবন অটোমেটিক সুন্দর হয়ে যাবে। এত কেন জটিল ভাবিস সব কিছু?”
“তোদের মতো সব সহজ ভাবতে পারি না আমি।”
“চাস না বলে পারিস না। একবার চেয়ে দেখ।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আদ্র বলে,
“আজ নোলক খুব কষ্ট পেয়েছে দোস্ত। বাট ট্রাস্ট মি, আমি ওকে হার্ট করতে চাইনি। কিন্তু ও এতো জেদ করে যে….!”
“কষ্ট দিয়ে কষ্ট পাচ্ছিস?”
আদ্র কিছু প্রতিক্রিয়া করে না। ইশান বুঝতে পারে অনুভূতি। খুব করুন করে চায়। করুনা হয় নিজের প্রতিও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই উঠে এসে আদ্রর বাহুতে হাত রেখে বলে,
“বাদ দে এখন এসব। কাল একবার স্যরি বলে দিস। অগ্নিশর্মার সব রাগ গলে পানি হয়ে যাবে দেখিস।”
আদ্র মনে মনে বলে, কিছু ঠিক হওয়া লাগবে না, কিচ্ছু না। চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে। এই দীর্ঘশ্বাঃসকেই তার খুব আপন লাগে।
.
রাত একটা পঞ্চাশ। নবনীর ঘুম ঘুম পেলো। বুকশেল্ফে বইটা রেখে পানি খেলো। শুতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাতি নিভাতে গিয়ে চোখ পড়লো নোলকের উপর। দেখলো নোলক কেমন করছে! মৃদু কাঁপছে। পাতলা কাঁথাটা আঁকড়ে ধরছে।
নবনী দ্রুত কাছে এসে নোলকের গায়ে হাত রাখতেই চমকে উঠলো। এত গরম, এত গরম শরীর! নবনী আর্তনাদ করে ডাকলো,
“বোন? এই বোন? আল্লাহ্! শরীর পুড়ে যাচ্ছে!”
নোলক আধো আধো স্বরে বলল,
“আপু, শোন? তাকে বলে দিস, আমি তাকে নিজ থেকে আর কখনোই জ্বালাবো না!”……(চলবে)
(রিচেইক দেইনি।)
(নিরবরা ইচ্ছে হলে একটু সরব হবেন।)