#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন
|১৪|
বারান্দার দোলনাটা বাহারী রকমের ফুল দিয়ে সাজানো।রক্তিম ভাই আমাকে কোলে নিয়ে দোলনাটায় ধপাস করে বসে পড়লেন।আমি শুধু এপাশ ওপাশ করে দোলনাটা দেখছি।দোলনাটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।বারান্দার লাইটটা মৃদু আলোতে জ্বলছে।সেই আলোতে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি রক্তিম ভাইয়ের ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসি।রক্তিম ভাইকে আজকে অন্যরকম স্নিগ্ধ লাগছে।ইচ্ছে করছে এইভাবে যেনো বাকিটা সময় চেয়েই থাকি।কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই রক্তিম ভাই আমার হাত টা শক্ত করে ধরে নিলেন।হাতের ভাঁজে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,
‘হাতে মেহেদী পড়ো নি কেনো?আজকে তো আমাদের বিয়ে রিমঝিম।’
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।রক্তিম ভাইয়ের তুমি সম্বোধন টায় লজ্জা যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।তার মানে মানুষ টা সত্যিই বিয়ে করে ছাড়বেন।ব্যাপার টা মনে আসতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি একধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।রক্তিম ভাইয়ের এরূপ চাহনি দেখে আমি অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম।শুকনো কয়েক ঢোক গিলে বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাহিরের অন্ধকারের রাস্তাটার দিকে চোখ নিক্ষেপ করে তাকালাম।অন্ধকার রাস্তাটায় দেখার মতো কিছুই নেই শুধু অন্ধকার ছাড়া।তাও,আমার তাকিয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগছে।অত্যন্ত রক্তিম ভাইয়ের নেশাযুক্ত চাহনি থেকে রেহাই পাবো।রক্তিম ভাই ফোন টা বের করে খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা টাইপ করছেন।নিঃস্তব্ধ এই পরিবেশে টাইপ করার শব্দ টা আমার কানে খুব বাজেভাবে ঠেকছে।অন্যসময় ভালো লাগলেও এখন একদন্ডও ভালো লাগছে না।কিছুক্ষণ পর ফোনটা বারান্দার কার্ণিশের উপর রেখে দিলেন।নিজের সাথে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘এই সময় টাকে খুব উপভোগ করতে ইচ্ছে করছে।ক্যালেন্ডার পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে ইচ্ছে করছে, রক্তিম-রিমঝিমের বিয়ের তারিখ।’
ইশশ!মানুষ টার এইসব কথা শুনলে মনটা উতালপাতাল করে উঠে।সারা শরীর আমার কাঁপছে।ভীষণ ভাবে কাঁপছে।মনে হচ্ছে,কাঁপাকাঁপির ফলে একসময় ভূমিকম্পের মতো দোলনা টাই নড়েচড়ে উঠবে।যতটুকু সম্ভব মাথাটা নিচু করে রেখেছি।রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছি না।রক্তিম ভাইয়ের শীতল হাতজোড়া আমার গলার কাছে স্পর্শ করতেই আমি ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে দিয়ে মুখটা নিকটে নিতেই দরজার টকটক আওয়াজে রক্তিম ভাই আমাকে কোল থেকে নামিয়ে ঠাস করে দোলনার পাশের জায়গা টায় বসিয়ে দিয়ে,দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।আচমকাই এমন হওয়ায় আমি কিছু ভঁড়কে উঠলাম।অনুভব করলাম কোমরে চিনচিনে ব্যথা।শুধু তাই নয়,দোলনার স্টিলের রুলার গুলোও জায়গা মতো গিয়ে লেগেছে।ব্যথার তাড়নায় চোখ,মুখ কুঁচকে গিয়েছে।আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতেই সুস্মিতা আপু,শিলা আপু আর রিমি তিনজনে মিলে আমাকে ধরে পুনরায় ঠাস করে দোলনায় বসিয়ে দিলো।এবার একটু জোরেই লেগেছে।আসলে তিনজনের ধকল টা নিতে পারি নি।রিমি তার মেহেদী যুক্ত হাতে ফুঁ দিতে দিতে বললো,
‘আজকে থেকে তুই আমার ভাবি হয়ে যাচ্ছিস রিমঝিম।তলে তলে যে এতোকিছু হবে তা ভাবতেও পারি নি।’
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম রিমির দিকে।রিমি মুচকি হেসে ভ্রুজোড়া নাড়িয়ে বললো,
‘চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই ভাবি।আপাতত আপনাকে মেহেদী দিয়ে দিতে হবে।না হলে,ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা পাবো কীভাবে!’
‘রিমি তুই সব জানতিস।একবারও বলিস নি কেনো আমাকে!’
‘বললে কি আর!তোকে ভাইয়ার জন্য বিরহ অবস্থায় দেখতে পেতাম।’
সুস্মিতা আপু হেসে দিয়ে বললেন,
‘রিমি!শুধু কি রিমঝিম এই বিরহ অবস্থায় ছিলো নাকি!আমাদের রক্তিমও কি কান্ডকারখানা টাই না ঘটালোঃ।’
আমি আঁড়চোখে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।নির্বিকার ভঙিমা করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।ফোন টিপছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন।রক্তিম ভাইয়ের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম,
‘কি কান্ডকারখানা ঘটিয়েছেন রে রক্তিম ভাই।’
রিমি সটান করে মুখ ভেঙচি মারলো।আমার অতি নিকটে এসে ফিসফিস কণ্ঠে বললো,
‘সেইসব বলা যাবে না।বলা নিষিদ্ধ আছে।সময় মতো,সঠিক মানুষের কাছ থেকেই জেনে নিতে পারবি।’
আমি এবার অসহায় চোখে তাকালাম রিমি সহ সবার দিকে।শিলা আপু চশমা টা ঠিক করে বললেন,
‘এবার এইসব কথা বাদ দিয়ে রিমঝিমের হাতে মেহেদী পড়ানো শুরু করি।না হলে,রক্তিম আমাদের উস্টা দিয়ে বারান্দা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিবে।’
শিলা আপু আমার পাশে বসে পড়লেন।ডান হাতে লতার একটা ডিজাইন উঠাতেই রক্তিম ভাই শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
‘শিলা!আমার নামটা সুন্দর করে লিখে দিস তো।এমনভাবে লিখে দিবি যাতে করে আমার নাম টা দেখে আমি নিজেই বলে উঠি,বাহ্!অনেক সুন্দর নাম তো।নামের কারণে হাতের মেহেদী টাও একদম ফুটে উঠেছে।’
রক্তিম ভাইয়ের কথার শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো।আর,আমি লজ্জায় তাকাতেও পর্যন্ত পারছি না।এরিমধ্যে তনায়া আপু দৌড়ে এসে আমার সামনে বসে পড়লো।বাম হাত টা দিয়ে আরেকটা ডিজাইন তুলতে লাগলো।আবির ভাই বাঁশি বাজাতে বাজাতে এসে হাজির হলো।হাতে বেলুন।কিন্তু,বেলুনের মধ্যে লিখা হ্যাপি বার্থডে।বেলুনটা দেখে আমার খুব হাসি পেলো।রক্তিম ভাইয়ের বিয়েতে হ্যাপি বার্থডের বেলুন।কথাটা ভেবেই জোর গলায় হাসতে গিয়েও হাসতে পারলাম না।ব্যাপার টা তখন বেমানান লাগবে।আবির ভাই রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘রক্তিম এই হ্যাপি বার্থডের বেলুন গুলো দিয়ে চালিয়ে দে না আজকের দিনটা।এই বেলুন গুলো ছাড়া আর পায় নি।আশেপাশের দোকান গুলোও বন্ধ ছিলো।’
রক্তিম ভাই দাঁতে দাঁত পিষে বললেন,
‘এইটা বিয়ে নাকি জন্মদিনের অনুষ্ঠান তাই ভাবছি আমি।আর,আজকের দিনটা চালিয়ে দিবো মানে কি!আমি কি এরপর আরো বিয়ে করবো নাকি যে আজকের দিনটা এই বেলুন দিয়ে চালিয়ে দিবো।এক কাজ করিস!তুই তোর বিয়েতে জন্মদিনের ড্রেস পড়ে বিয়ে করতে বসিস তাহলে ব্যাপার টা কিন্তু খুব ভালো হবে।’
আবির ভাই কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো শিলা আপুর দিকে।এদিকে,শিলা আপু হাসতে হাসতে আমার উপর ঢলে পড়ে যাচ্ছেন।শুধু তাই নয়,বাকিদেরও এই অবস্থা।আবির ভাই সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
‘আমার মান-সম্মান টার তেরোটা বাজিয়ে দিলো রে।এদিকে আর থাকা যাবে না।’
কথাটা শেষ করেই ধপাধপ্ পা’য়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।আবির ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমিও নিঃশব্দে হেসে উঠলাম।
—-
চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।সবাই আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।সেদিকে আমার কোনো দিক বেদিক নেই।আমি নিজের মতো কেঁদেই যাচ্ছি।রক্তিম ভাই অনেকক্ষণ হলো কবুল বলে দিয়েছেন।এদিকে আমি যেনো কিছুতেই বলতে পারছি না।মনের ভিতর অপরাধ বোধ কাজ করছে।পরিবারের মানুষ গুলোকে এইভাবে ধোঁকা দিচ্ছি আমি।যখন জানতে পারবে তাদেরকে না জানিয়ে এইরকম একটা কাজ করে নিয়েছি তখন তাদের সামনে দাঁড়াবো কোন আক্কেলে!ব্যাপার টা ভাবতেই অপরাধ বোধ যেনো মনের ভিতর আরো ঝেঁকে বসেছে।তনায়া আপু আমার কাঁধে হাত রাখতেই আমার কান্নার বেগ দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।ঠোঁট কাঁমড়ে কান্নাটাকে আঁটকানোর বৃথা চেষ্টা করছি।তনায়া আপু মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘কিরে রিমঝিম!কি হলো?তুই চুপ করে বসে আছিস কেনো।’
আমি তাও কিছু বলতে পারছি না।আগের ন্যায় চুপটি মেরে বসে আছি।কাজী সাহেব এবার আমাকে পরোক্ষ করে বললেন,
‘মেয়ে!তুমি কি বিয়েতে রাজি না?তোমাকে কি জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আমাকে বলো!আমি তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।এই অন্যায়ের প্রতিবাদ আমি করবো।’
পরমুহূর্তেই কাজী সাহেব সটান করে দাঁড়িয়ে গেলেন।টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লেন।আমার দিকে মিষ্টি হেসে বললেন,
‘বলো মা!তুমি কি এই বিয়েতে রাজি না?’
রক্তিম ভাই কটমট চোখে তাকালেন আমার দিকে।কাজী সাহেব আরো কিছু বলতে নিলেই রক্তিম ভাই কথার মাঝে বলে উঠলেন,
‘পাত্রী রাজি আছে।রাজি না থাকলে কি আর এইখানে বসে থাকতো।আপনি চুপচাপ বসে বাকি কাজ গুলো করতে থাকুন।’
রক্তিম ভাই এবার আমার কাছে এসে শরীর ঘেঁষে বসে পড়লেন।মুচকি হেসে বললেন,
‘কে বললো আমি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করছি।তোর বড়বাবা জানে রিমঝিম।বাবাই তো আমার মনে সাহস জুগিয়েছে।’
রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।শেষে কিনা বড়বাবাও আছে।তাও,আবার বড়বাবাই রক্তিম ভাইকে সাহস জুগিয়েছে।এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ আমি একটুও টের পেলাম না।এখন মনে হচ্ছে,যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই।রক্তিম ভাই আমার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললেন,
‘এবারও কি আমাকে ঝুলিয়ে রাখবি রিমঝিম।’
রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম।মুচকি হেসে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কবুল বলে দিলাম।আমার কবুল বলার পরপরই রক্তিম ভাই অতি আনন্দে আমাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলেন।বাকিরা সবাই হাসলেও কাজী সাহেব মুখ বেঁকিয়ে বললেন,
‘কি দিন আসলো রে বাবা।বউ কবুল বললেই জড়িয়ে ধরতে হয়।আর বউও তো দেখি এখন দিব্বি খুশি।’
রক্তিম ভাই পাঞ্জাবীর কলার টা টেনেটুনে বললেন,
‘এইসব আপনি বুঝবেন না।আগের দিনের বিয়ের মতো নাকি,বউ কবুল বলেই প্যাঁচপ্যাঁচ করে কাঁদতে হবে।’
আবির ভাই রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে এসে কাজী সাহেবের পাশে বসে পড়লো।একটা রসগোল্লা নিজে খেয়ে নিয়ে আরেকটা কাজী সাহেবের মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,
‘আমার বিয়েটাও আপনি করিয়ে দিবেন।আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।’
বলেই শিলা আপুর দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মারলো।শিলা আপু নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছেন আবির ভাইয়ের দিকে।আবির ভাইয়ের কান্ডকারখানা দেখে সবারই হাসতে হাসতে বেগতিক অবস্থা।
—-
শুনশান রাস্তা দিয়ে গাড়িটা ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।রক্তিম ভাই এক হাত দিয়ে আমার কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছেন।আরেক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছেন।আমাদের পিছনেই আরো দুটো গাড়ি আসছে।গাড়ি দুটোতে বাকিরাও আছে।কিছুদূর এগিয়ে যেতেই রক্তিম ভাই সজোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলেন।এমন হওয়ায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললেন,
‘গাড়ি থেকে নেমে পড় রিমঝিম।’
চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললাম,
‘এইখানে কেনো নামবো রক্তিম ভাই।চারপাশে তো কিছুই নেই।’
‘তোকে কে বললো এইখানে কিছুই নেই।তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়।’
রক্তিম ভাইয়ের কথা অনুসরণ করে সুড়সুড় করে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।আমি নামতেই বাকি গাড়ি দুটো এসে ব্রেক কষলো।আবির ভাই আর বাবু ভাইয়া একসাথে নামছে দেখে আমি কিছুটা টাসকি খেলাম।দু’জনেই হেসে হেসে কথা বলছে একে অপরের সাথে।শুধু তাই নয়,দু’জনের মুখেই ললিপপ।আবির ভাই বাবুর ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।আমার কাছে এসেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
‘তোর যে এতো সতীন হবে আমি আগে বুঝি নি রে রিমঝিম।একদিকে,তারিন আর অন্যদিকে বেবি।আহারে!বেবির জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।যখন শুনবে আমাদের রক্তিম ভাই এখন বিয়াত্তা বেডা তখন না জানি কি করে বসবে।সেই কষ্টেই এখন বাবুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি।’
বাবু ভাইয়া আবির ভাইয়ের হাত টা ঠেলা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন।দাঁত কটমট করে বললেন,
‘একমন চালের বস্তা আমার কাঁধে দিয়ে রেখেছিস।কাঁধ টার বারোটাই বেজে গিয়েছে।মনে রাখিস আমি তোর বোন জামাই।’
আবির ভাই হাত টাকে বাবু ভাইয়ার কাঁধে আরো একটু চেপে দিয়ে বললো,
‘আর তুই শোন,আমি তোর শালা।তাও,সম্পর্কের দিক দিয়ে বড় হই।এইজন্য,আমি যা বলবো বা করবো তা সব তোর মেনে নিতে হবে।’
বাবু ভাইয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।সেই সাথে আবির ভাইও।দেখেই বোঝা যাচ্ছে দু’জন যে দু’জনকে একমুহূর্তের জন্য হলেও সহ্য করতে পারে না।
—-
রক্তিম ভাই আমার চোখ জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছেন।রক্তিম ভাইয়ের কথা অনুসারে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই রক্তিম ভাই আমার চোখ জোড়া খোলে দিলেন।সামনে তাকাতেই আমি যেনো আঁতকে উঠলাম।বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি সামনের জাঁকজমকপূর্ণ জায়গা টার দিকে।ছোট্ট একটা পুকুরের মধ্যিখানটায় রয়েছে সুন্দর একটা ছনের বাড়ি।বাড়িটার সামনে বড় করে লেখা জলপদ্ম।তার সোজা বরাবর একটি রাস্তা।রাস্তাটা মরিচবাতির আলোয় চিকমিক করছে।পুকুরের পানিতে ফুটে আছে অসংখ্য পদ্মফুল।অত্যধিক খুশিতে আমার চোখ দুটি পানিতে চিকচিক করছে।রক্তিম ভাই আমার কাছে এসে আমাকে পুনরায় কোলে তোলে নিলেন।সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,
‘পুরোপুরি কমপ্লিট করতে পারি নি।তার আগেই তুই সব ভেস্তে দিলি রিমঝিম।তাই,এখন এইসব আমাকে কোনোমতে ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রক্তিম ভাইয়ের দিকে।এমতাবস্থায় বললাম,
‘এইসব কি আমার জন্য রক্তিম ভাই।’
‘জ্বি মিসেস রক্তিম।এই জলপদ্ম বাড়িটা আপনার নামে।মনে ছিলো আপনি বলেছিলেন,পদ্ম বিলের মাঝখানে যদি একটা বাড়ি হতো তাহলে আমি সারাটা জীবন হাসি মুখেই কাটিয়ে দিতাম।সেদিনের পর থেকেই আমি মনে মনে প্ল্যান করে নিয়েছিলাম তোর এই ইচ্ছেটা আমি যেভাবেই হোক পূরণ করবো।’
রক্তিম ভাইয়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।এইজন্যই রক্তিম ভাই সেদিন বলেছিলেন,সব ইচ্ছাই পূরণ করে দিবো তোমার প্রেয়সী।তখন রক্তিম ভাইয়ের কথাটা পাত্তা দিয়েও পাত্তা দেয়নি।আর এখন,রক্তিম ভাই আমার সেই ইচ্ছেটাকেই পূরণ করে দিলেন।কথাটা ভেবেই আমি রক্তিম ভাইয়ের গালে চট করে চুমু খেয়ে বসলাম।রক্তিম ভাই আঁড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।আমি লজ্জায় মাথা টা নিচু করে নিলাম।
বাকিরা সবাই জলপদ্মের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই রক্তিম ভাই উল্টো ঘুরে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘তোদের একটাকেও যেনো আর এইখানে না দেখি।বিদায় হ আমাদের আশপাশ থেকে।’
সবার মুখটা কেমন নেতিয়ে গিয়েছে।সিফাত ভাই মালা দুটো এগিয়ে নিয়ে এসে বললেন,
‘রক্তিম মালা দুটোও কি নিবি না?’
রক্তিম ভাই মাথা নাড়িয়ে বললেন,
‘উঁহুহু!দরকার ছিলো বউয়ের।তা পেয়েও গেলাম।এখন মালা দিয়ে কি করবো।এক কাজ কর!এই দুটো মালা পড়ে তুই ঘুরতে থাক।’
সিফাত ভাই হাসিমুখে তাকালেন রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম পুনরায় সামনের দিকে হাঁটতে লাগলেন।রক্তিম ভাই ঘুরতেই সিফাত ভাই চট করে একটা মালা রিমিকে পড়িয়ে দিয়ে রিমির হাতজোড়া ধরে ঘুরতে লাগলেন।এমন হওয়ায় রিমি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়লো।রিমি দ্রুত গতিতে সিফাত ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,সিফাত ভাইয়ার পেটে সটান করে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।দূর থেকে আমি তাদের কান্ডকারখানা দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসছি।
চলবে..