জলপদ্ম পর্ব -১৬

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|১৬|
‘তোমাকে আমি ছেড়ে দিবো না রিমঝিম।তুমি আমার সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছো!এতোটুকুন একটা মেয়ে হয়ে আমার সাথে লড়তে আসা টা একদমই তোমার উচিত হয় নি।শুরু যেহেতু তুমিই করেছো শেষ টা আমার হাতেই হবে।শুধু তাই নয়,শেষে আমিই জিতবো।সেদিন,আমি মন খোলে হাসবো।আর তুমি কেঁদেও কোনো কুল পাবে না।জানো!রিমঝিম আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!আমি যা ভেবেছি ঠিক তার উল্টো হলো।তোমার মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মধ্যে নেই।আমি কোন দিক দিয়ে কম রিমঝিম!!এমন কোনো ছেলে নেই যে আমার দিকে কামনার দৃষ্টি নিয়ে তাকায় নি।কিন্তু,আমার সবকিছু শুধুমাত্র একজনের জন্য অক্ষত রেখেছিলাম,আর সেই একজনকেই তুমি কেঁড়ে নিয়েছো।আমি তোমার সবকিছু শেষ করে দিবো রিমঝিম!!’

পুরো ম্যাসেজ টা পড়ে আমার ভ্রুকুটি কুঁচকে গেলো।কে দিয়েছে এই ম্যাসেজ!আর,আমার নাম্বার এই বা পেলো কীভাবে!আর,যেই এই ম্যাসেজ টা পাঠিয়েছে তার যে আমার উপর খুব ক্ষোভ আছে তাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই আমার।কারণ,ম্যাসেজের নমুনাই তাই বলে দিচ্ছে।কিন্তু,আমি কি এমন করেছি বা কিই কেঁড়ে নিয়েছি যার জন্য এইরকম একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলো।কি নিয়ে ক্ষিপ্ত আছে তাও তো ক্লিয়ার করে কিছুই বললো না।খুব কিউরিওসিটি বাড়ছে!জানার আগ্রহ দ্বিগুণ হচ্ছে কে এই ম্যাসেজের উল্টো পিঠে আছে।এইভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর এই নাম্বারে ফোন দিয়ে কানে চেপে ধরলাম।উঁহুহু!ফোন টা সুইচ অফ আছে।আমার এই আগে ভাবা উচিত ছিলো,কেউ এইরকম একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে ফোন অন করে রাখবে না।এইসব ভাবতে ভাবতে মাথা টা কেমন ব্যথা হয়ে গিয়েছে।তার উপর কাল সারা রাতও রক্তিম ভাই আমাকে ঘুমোতে দেন নি।চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসতেই রক্তিম ভাই আমাকে ধমকে বলেছিলেন,মিসেস রক্তিম ঘুমালে কিন্তু থাঁপড়িয়ে দাঁতের পাটি খোলে দিবো।যাতে ঘুম না আসে তার জন্য চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে থাকবে।তখন রক্তিম ভাইয়ের কথা মতো চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে থাকার সত্ত্বেও কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমার চোখ দুটিতে ঘুমেরা ভীড় করে চলেছিলো।আমি রক্তিম ভাইকে বোঝাতে না চাইলেও রক্তিম ভাই ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন।গলার ভাঁজে মুখ গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন,কীভাবে ঘুমকে টাটা করতে হয় তা আমার জানা আছে।আর,এখন আমি সেটাই করবো।বিয়ে করেছি বউকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য,আর বউ কিনা আমাকে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ছে।যখন,সবাই শুনবে রক্তিমের বাসর রাতে রক্তিমের বউ ঘুমিয়ে পড়েছিলো তখন আমার মান-সম্মানের কী হবে!!এতোদিন যারা আমার উপর ক্রাশ,বাঁশ খেয়ে এসেছে তারা তো তাদের এই ক্রাশ বয় কে দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে।রক্তিম ভাইয়ের এরূপ কথা শুনে আমি টাসকি খেয়ে বলেছিলাম,রক্তিম ভাই!আপনি কি আপনার বাসর রাতের গল্প সবাইকে বলে বেড়াবেন।লোকে কী ভাববে বলুন তো!রক্তিম ভাই আমার কথার পিঠে বলেছিলেন,জীবনে প্রথমবার বাসর করছি তা কাউকে বলবো না তাই কখনো হয়।অনুভূতি টা প্রকাশ করবো না!রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে আমি শুধু ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম।মনে মনে ভেবেছিলাম,লোকটা বিয়ে করে নির্ঘাত পাগল হয়েছে।
গাড়ির দরজা টা ঠাস করে শব্দ হওয়ায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই আমার পাশের জায়গা টা দখল করে বসে আছেন।আমার কাঁধে মাথা রেখে বললেন,

‘মিসেস রক্তিম!মাথা টায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।মনে হচ্ছে, ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে।’

সামনের ড্রাইভিং সিটে বসা আবির ভাই দাঁত কেলিয়ে বললো,

‘ঢং!বউয়ের কাঁধে মাথা রাখার ধান্দা।আজ আমরা অবিবাহিত বলে।’

আবির ভাইয়ের কথায় রক্তিম ভাই মুচকি হেসে বললেন,

‘আমার বউ,আমার বউয়ের কাঁধ,সবই যদি আমার হয় তাহলে মাথাটা তো আমিই রাখবো তাই না,,নাকি তুই রাখবি!!তুই রাখলে শিলা মানবে আবির??’

আবির ভাই চট করে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে অসহায় মুখ করে বললো,

‘রক্তিম!তোর কানা বান্ধুবী তো আমাকে পাত্তাই দেয় না আবার তুই মানার কথা বলছিস।’

‘দাঁড়া শিলাকে বলছি,তুই ওকে কানা বলেছিস।’

‘আমি বুঝি না রক্তিম!তুই আমার ভাই নাকি শত্রু।’

কথাটা বলেই আবির ভাই ঠোঁট দুটো ফুলিয়ে মন দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলেন।রক্তিম ভাই আর আবির ভাইয়ের কথা শুনে আমার খুব হাসি পেলেও পরমুহূর্তেই তা গায়েব হয়ে গেলো।তার কারণ রক্তিম ভাই।রক্তিম ভাই চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।ব্যাপার টা আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।রক্তিম ভাইয়ের মাথায় হাত রেখে বললাম,

‘রক্তিম ভাই কি হয়েছে আপনার।এমন করছেন কেনো?’

রক্তিম ভাই মিনমিনে গলায় বললেন,

‘পানির বোতল টা দে তো রিমঝিম।খুব মাথা ব্যথা করছে।’

আমি তাড়াতাড়ি করে পানির বোতল টা দিতেই রক্তিম ভাই আবির ভাই কে গাড়ি থামাতে বলে বাহিরে বের হয়ে পড়লেন।আমি সরু চোখে তাকিয়ে আছি রক্তিম ভাইয়ের দিকে।রক্তিম ভাইয়ের হাবভাব আমার ভালো ঠেকছে না।এইরকম তো আগে কখনো হতে দেখি নি।রক্তিম ভাইয়ের কিছু হলো না তো বা আমার থেকে কিছু লুকিয়ে রাখছেন না তো!!মাথায় বোতলের পানিটা ঠেলে রক্তিম ভাই ক্লান্ত হয়ে পুনরায় বসে পড়লেন।রক্তিম ভাইয়ের চেহারা টা কেমন মলিন হয়ে আছে।আমি আর না পেরে বললাম,

‘রক্তিম ভাই!আপনার কিছু হয়েছে।আপনাকে কেমন যেনো লাগছে।’

রক্তিম ভাই মাথাটা চেপে ধরে বললেন,

‘আমি ঠিক আছি রিমঝিম।কাল রাতে ঘুম হয় নি বলে হয়তো মাথাটা ব্যথা করছে।’

আমি আর কিছু না বললাম না।কিন্তু,মন শুধু একটা কথাই বলছে রক্তিম ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে,যা আমি জানি না।কারণ,রক্তিম ভাইয়ের সুন্দর মুখশ্রী টা যে হঠাৎ করেই মলিন হয়ে গেলো।
————-
কেটে গেলো কয়েকটা দিন।রক্তিম ভাই ভার্সিটির হলে চলে গিয়েছেন প্রায় এক সপ্তাহের মতো হলো।আমারও পুরো দমে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে।প্রাইভেট,কোচিং মিলে আমিও পড়ার মধ্যে ডুবে আছি।রাত হলেই রক্তিম ভাইয়ের সাথে কথা বলায় বিভোর হয়ে থাকি।তবে,এমন কোনো দিন নেই আমি পড়া নিয়ে রক্তিম ভাইয়ের কাছে বকা খায় নি।প্রি-টেস্ট এক্সামে ম্যাথে কোনোমতে টেনেটুনে পাস করায় রক্তিম ভাই সেদিন রাগ করে বলেছিলেন,রিমঝিম তোর আমাকে বিয়ে না করে ম্যাথম্যাটিকস কে বিয়ে করা উচিত ছিলো।তাহলে,আমার প্রতি যেভাবে ঝুঁকে আছিস ঠিক সেভাবে ম্যাথের দিকে ঝুঁকে থাকলে অনেক টা লাভবান হতিস।অত্যন্ত ম্যাথে ভালো করতে পারতিস।শুধু তাই নয়,এটাও বলেছিলেন!রিমঝিম আমি আবারও বলছি এইভাবে ম্যাথ করে কখনো ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবি না।ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে ম্যাথম্যাটিকসে পাঁকা আমের মতো টসটসে হতে হয়।কাঁচা কস হওয়া আমের মতো হলে চলবে না।আর,আমি রক্তিম ভাইয়ের সেসব কথাগুলি এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম।মনে মনে বলেছিলাম,তখনের টা তখন দেখা যাবে।

কলেজ ট্রেসের ওড়না টা পড়ছি আর কানে হেডফোন গুঁজে রক্তিম ভাইয়ের সাথে কথা বলছি।রক্তিম ভাই আমাকে পড়াশোনা নিয়ে অনেক জ্ঞান দিচ্ছেন।আর,আমি হু হু করে শুধু জবাব দিয়ে যাচ্ছি।শেষে রক্তিম ভাই কড়া গলায় বলে উঠলেন,

‘এইবারের এক্সামে যেভাবেই হোক তোর ভালো করতে হবে রিমঝিম।আমার স্বপ্ন তুইও ইঞ্জিনিয়ার পড়বি।শুধু আমার স্বপ্ন না ছোট বাবা,ছোট মা’রও স্বপ্ন।তুই তাঁদের কথা ভেবে নিজেকে তৈরি করে নে রিমঝিম।’

আমি এবারও বেখেয়ালি ভাবে জবাবে শুধু ‘হু’ বললাম।রক্তিম ভাই আমার ‘হু’ শোনার কিছুক্ষণ পরেই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,

‘এখন ঠিকই আমার কথা গুলো তেঁতো লাগছে তোর কাছে রিমঝিম।কিন্তু,এইটা তোকে নিয়ে আমার স্বপ্ন।আমি যখন থাকবো না তখন তুই ঠিকই আফসোস করে বলবি,কেনো রক্তিম ভাইয়ের কথা টা শুনি নি।’

আমার বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।রক্তিম ভাই!থাকবো না!এই কথাটা দ্বারা কি বুঝিয়েছেন,,আমি চটজলদি করে বলে উঠলাম,

‘রক্তিম ভাই!আপনি থাকবেন না মানে!আপনি কোথায় যাবেন আমাকে ছেড়ে।আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়ছি না রক্তিম ভাই।আমি আপনাকে ভালোবাসি!খুব ভালোবাসি।’

রক্তিম ভাইয়ের কোনো কথার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না।তবে,শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ টা আমার কানে এসে লাগছে।রক্তিম ভাইকে চুপ থাকতে দেখে আমি নিজেই পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,

‘বলুন না রক্তিম ভাই!আপনি আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে যাবেন?’

রক্তিম ভাই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলেন।এমতাবস্থায় বললেন,

‘বোকা!আমি কোথাও যাচ্ছি না তোকে ছাড়া।রক্তিম শুধু রিমঝিমের।’

রক্তিম ভাইয়ের কথাতেও আমার মন কিছুতেই শান্ত হলো না।বরং!ডুকরে কেঁদে উঠলাম।ক্রন্দনরত গলায় বললাম,

‘রক্তিম ভাই!আপনি কবে আসবেন।আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।’

‘উঁহুহু!এখন আমি আসছি না রিমঝিম।তোকে অনেক শক্ত হতে হবে।সামনে অনেক কঠিন দিন আসছে।যেগুলো তোর নিজেকেই সামলিয়ে চলতে হবে।’

‘মানে!কি বলতে চাইছেন রক্তিম ভাই।’

রক্তিম ভাই আচমকাই ফোন টা কেটে দিলেন।আমি হ্যালো!হ্যালো!করেও ফোনের অপাশে রক্তিম ভাইয়ের কথার কোনো আওয়াজ পেলাম না।হঠাৎ করেই কি হয়ে গেলো রক্তিম ভাইয়ের!কাল রাত অবধি তো রক্তিম ভাই ঠিক ছিলেন,কতো সুন্দর করে কথা বলছিলেন!আর,আজকে কি এমন হয়ে গেলো মানুষ টার।ফোন টা সাইড টেবিল টার উপরে রেখে দিয়ে একগ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।মাথা যেনো তালগোল পাঁকিয়ে গিয়েছে।শরীর টাও কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে।
——-
কলেজের শেষে গেইট দিয়ে বেরোতেই চোখে পড়লো ফুচকার দোকান টার দিকে।অন্যদিন ফুচকা খাওয়ার জন্য মনটা আকুপাকু করলেও আজ মোটেও করছে না।সব কিছুতেই কেমন বিতৃষ্ণা লেগে আছে।কলেজের ক্লাস গুলোতেও মন বসাতে পারি নি।বারবার শুধু রক্তিম ভাইয়ের কথা গুলো মনে পড়ে গিয়েছে।সেই সাথে বুকে অসহনীয় ব্যথা।আমার পাশে রিমি আপনমনে বকবক করে যাচ্ছে।টপিক্স হলো সিফাত ভাইয়া কে নিয়ে।আমার সেদিকে কোনো ধ্যান ধারণা নেই।আমি আছি রক্তিম ভাইয়ের চিন্তায়।রিমি আমার হাতে টোকা দিয়ে বললো,

‘চল!আজকেও একপ্লেট ফুচকা প্রতিযোগিতা হয়ে যাক।আজকে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল থাকবে।’

আমি একরাশ অনিহা নিয়ে রিমিকে বললাম,

‘রিমি!আজকে আমার একদন্ডও ভালো লাগছে না।আমি খাবো না ফুচকা।তুই খেতে চাইলে খা,আমি পাশেই দাঁড়িয়ে থাকবো।’

‘এইটা হয় না রিমঝিম।খেতে হলে আমরা একসাথেই খাবো।’

‘প্লিজ!রিমি আমাকে একদম জোরাজোরি করবি না।আমার ভালো লাগছে না।’

‘তোর কিছু হয়েছে রিমঝিম।মুখ টা এইরকম করে রেখেছিস কেনো?ভাইয়ার সাথে কোনো সমস্যা হয়েছে।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করায় আমি অভিমানে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।চোখ দুটো টলমল করছে।ঠোঁট কাঁমড়ে শুধু কান্না আঁটকানোর চেষ্টা করছি।রিমি আমার মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতেই টপ করে দু’গাল বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রদানা গড়িয়ে পড়লো।রিমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো।চোখের পানিটুকু মুছিয়ে দিয়ে বললো,

‘আহারে!আমার ভাবিটা।ভাইয়ার জন্য কেঁদেকেটে অস্থির।ভাইয়াকে আমি আজকেই ফোন করে শাসিয়ে বলবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসতে!তার একমাত্র প্রেয়সী যে খুব কষ্টে আছে।’

আমি তড়িঘড়ি করে রিমির হাত ধরে বললাম,

‘মোটেও এই কাজ টা করবি না তুই রিমি।রক্তিম ভাইকে এইসব বলে বিব্রত করার কোনো মানেই হয় না।’

‘তাহলে প্যাঁচপ্যাঁচ করে কান্না করা বন্ধ কর।আমার কাছে এইসব অসহ্যকর লাগে।’

আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললাম,

‘এই যে কান্না করছি না।হাসছি!তুই নিজেই দেখে নে।’

রিমি এবার আমাকে জোর করে টেনে ফুচকার দোকান টার সামনে নিয়ে গেলো।দু’প্লেট ফুচকা অর্ডার দিলো মাত্রাতিরিক্ত ঝাল দিয়ে।আমি আর কিছু বললাম না,চুপ করে এককোণায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
—-
পড়ন্ত বিকেল!ছাঁদের কার্ণিশে হাতদুটো ঠেস দিয়ে রেখেছি।সামনের অদূরে তাকিয়ে থাকলেও আমার চোখের সামনে শুধু বিল্ডিং এর স্তুপ দেখা যাচ্ছে।শহরে তেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখা যায় না।তনায়া আপুর গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।আমার নাম ধরেই ডাকছে।আমি কিছুটা সামনে আগাতেই তনায়া আপু সিঁড়ির ঘরে এসে হাজির হলো।আমার দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বলতে লাগলো,

‘তুই কি রক্তিম ভাইকে মেরে ফেলবি নাকি রিমঝিম।কখন থেকে তোকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।ফোন বন্ধ কেনো তোর?না পেয়ে আমাকে ফোন করেছে।বুঝতে পারছিস!কতোটা চিন্তায় ছিলো রক্তিম ভাই!’

কথাগুলো বলেই তনায়া আপু কিছুক্ষণ চুপ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো।তারপর,ফোন টা আমার হাতে দিয়ে বললো,

‘এই নে কথা বল!রক্তিম ভাই লাইনে আছে।কখন থেকে ছটফট করছে তোর সাথে কথা বলার জন্য।’

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তনায়া আপুর থেকে ফোন টা নিয়ে কানে চেপে ধরলাম।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে আমতাআমতা করে বললাম,

‘হ্যালো রক্তিম ভাই।’

ফোনের অপাশে রক্তিম ভাই কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলেন,

‘তোর খবর আছে রিমঝিম।ফোন বন্ধ করে আমাকে চিন্তায় ফেলা তাই না!এবার দেখ আমি এসে তোর কি হাল করি।এই রক্তিম কে বা কি করতে পারে তা তোকে আমি হারে হারে চিনিয়ে দিয়ে যাবো।মনে রাখিস কথাটা।’

রক্তিম ভাই কথাটা বলেই খট করে লাইন টা কেটে দিলেন।আমি রক্তিম ভাইয়ের কথাগুলো নিজের মনে মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে আওড়িয়ে মুখটাকে অসহায় করে তাকালাম তনায়া আপুর দিকে।তনায়া আপু স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে উঠলো,রক্তিম ভাইকে কেনো যে রাগিয়ে দিলি তুই রিমঝিম!এখন এসে তোর কি হাল করে কে জানে।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে তোকে নিয়ে!
আমি আর না পেরে তনায়া আপুর হাত দুটো ধরে, কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,
‘তনায়া আপু চিন্তা তো আমারও হচ্ছে!!’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here