#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন
|১৭|
রাত তিনটা বেজে পনেরো মিনিট।টেবিলে বই খোলে বসলেও মন কিছুতেই পড়ার মধ্যে স্থির রাখতে পারছি না।পাশেই ফোনটা নিজের মতো বেজে যাচ্ছে।ফোনের স্ক্রিনে রক্তিম ভাইয়ের নাম টা দেখে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।মনে মনে আওড়াতে লাগলাম,এতক্ষণে রক্তিম ভাইয়ের মনে হলো আমার কথা।অন্যদিন তো তার আরো আগেই ফোন দিতেন।তাছাড়াও,এতো রাতে রক্তিম ভাই কার সাথে কথা বলছিলেন!!যার জন্য বারবার ওয়েটিং দেখাচ্ছিলো।রক্তিম ভাই জানেন না,আমি এইসময়ে উনাকে ফোন দেই।উফফ!!রক্তিম ভাইয়ের যে কি হলো!কেমন একটা খাপছাড়া ভাব নিয়ে আছেন।ফোনের রিংটোন টা পুনরায় ভেজে উঠতেই আমি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলাম।এবার ফোনটা অনবরত বেজেই যাচ্ছে।যার ফলে,আমার মাথা ব্যথা উঠে যাওয়ার উপক্রম।একরাশ অভিমান নিয়ে ফোনটা কানে চেপে ধরে চুপ করে বসে রইলাম।ফোনের অপাশে রক্তিম ভাইও নিশ্চুপ হয়ে আছেন।শুধু নিঃশ্বাস উঠানামার আওয়াজ পাচ্ছি।রক্তিম ভাই জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়তেই ফোনের এপাশে গড়গড় একটা শব্দ হয়ে উঠলো।এমন হওয়ায়,আমি আরো চুপ হয়ে গেলাম।রক্তিম ভাই কিছুক্ষণ থেমে বললেন,
‘তুই কি আমাকে মেরে ফেলবি রিমঝিম?’
রক্তিম ভাইয়ের এরূপ কথায় আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।কি এমন করলাম যার পরিপ্রেক্ষিতে রক্তিম ভাই আমাকে এই কথাটা বললেন।তবে,মরে তো যাচ্ছি আমি।রক্তিম ভাইয়ের অবহেলা যে আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না।কি এমন হলো যার জন্য এতো টা পাল্টে যাচ্ছেন।আমার কষ্ট গুলো যেনো বুঝেও বুঝতে চাচ্ছেন না।এখন,মনে হচ্ছে বিয়ে না হলেই ভালো হতো।অত্যন্ত তখন হারানোর একটা ভয় থাকতো।
‘কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেই তুই মুখে একদম সুপার গ্লু লাগিয়ে দিস কেনো রে?’
‘কি হয়েছে কি আপনার রক্তিম ভাই।এই মাঝরাতে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছেন কেনো?কানে এসে লাগছে তো।মনে হচ্ছ,কানের পর্দা ছিঁড়ে যাবে।’
‘আমি এর চেয়েও দ্বিগুণ গলায় চেঁচিয়ে কথা বলবো,তাতে তোর কি রে।বেয়াদব মহিলা!কখন থেকে যে তোকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি তুই কি শুনতে পাস নি।নাকি তুই নিজে বয়রা হয়ে গিয়েছিস।’
‘শুনতে পেয়েছি বলেই তো এখন ধরেছি।’
‘আমি এখনের কথা বলছি না রিমঝিম!আমি তখনের কথা বলছি।কেনো ফোন ধরছিলি না?’
‘ধরে নি ভালো করেছি।আমি ফোন না ধরলেও আপনার তো কথা বলার সঙ্গীর অভাব হবে না।কেনো একটু আগেই তো ফোন ওয়েটিং এ ছিলো।কার সাথে এতো কথা বলছিলেন আপনি?আর এখন আমাকেই কেনো ফোন দিয়েছেন?তার সাথেই কথা বলুন না।’
‘আমি তো এখন তোর সাথে কথা বলছি না,আমি বলছি আমার বউয়ের সাথে।এখানে কার বাপের কি?’
‘দেখুন রক্তিম ভাই!এইসব কথা বললে আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি গলে যাবো তাহলে কিন্তু আপনি ভুল ভাবছেন।আমি গলছি না।’
‘রাত-বিরেতে স্বামীর সাথে ঝগড়া করতে লজ্জা লাগে না?কেমন বউ তুই!!’
‘ফোন রাখছি আমি রক্তিম ভাই।’
ফোনের অপাশে রক্তিম ভাইয়ের গলা এখন কিছুটা চওড়া হলো।এমতাবস্থায় বলে উঠলেন,
‘ফোন রাখলে কিন্তু ভালো হবে না রিমঝিম।কথাটা মনে রাখিস।আমি এখন ভিডিও কল দিবো রিসিভ না হলে কুরুক্ষেত্র বাজিয়ে দিবো।এই রক্তিম কি জিনিস তা তো একটু হলেও বুঝিস।তাই চুপচাপ আমি যা বলবো তাই করবি।’
রক্তিম ভাই ফোনটা ঠাস করে কেটে দিয়েছেন।কি হুমকি ধামকি টাই না দিলেন।ঢং!আমি ফোন রিসিভ না করলে কুরুক্ষেত্র বাজিয়ে দিবেন।আমিও কম নাকি,আমিও দেখে নিবো রক্তিম ভাই কি করতে পারেন।বেশ জোরে একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফোনটা সুইচ অফ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।কাল সকালে কোচিং,প্রাইভেট,কলেজ সবকিছুই আছে।আপাতত,এখন খুব সিরিয়াস হয়ে পড়তে হবে।কয়েকদিন পরে যে,দরজায় পরীক্ষার চৌদ্দগুষ্টি কড়া নাড়বে।
—-
পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে আমার ঘুমের রেশ হালকা হয়ে গিয়েছে।সবেমাত্র সাতটা বাজে।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।রাতের কথা মনে পড়তেই বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে পাওয়ার বাটন অন করতে না করতেই ম্যাসেজের একটার পর একটা টোন বেজেই যাচ্ছে।এই ম্যাসেজ টোন ফ্রেশ মুডের বারোটাই বাজিয়ে দিয়েছে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে ম্যাসেজ গুলো চেক করে আমি বিরক্তিতে কুঁকড়ে গেলাম।প্রায় একশোটার উপরে ম্যাসেজ এসেছে রক্তিম ভাইয়ের নাম্বার থেকে।তাও আবার,রাগী ইমোজিতে ভরপুর।মেজাজ টাই গেলো চটে।সারারাত ধরে রক্তিম ভাই আমাকে রাগীর ইমোজি পাঠিয়েছেন।কেনো!একটু রচনা টাইপ বাক্য লিখে পাঠালে কি এমন হতো!!!অত্যন্ত আমি পড়ে তো শান্তি পেতাম।ফোনটাকে পুনরায় বন্ধ করে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম।মনে,মনে ভেবে নিয়েছি একসপ্তাহ ধরে আমি আমার ফোনটাকে বন্ধ করে রাখবো না হলে টেবিলের ড্রয়ারে তালা দিয়ে রাখবো!তখন দেখবো রক্তিম ভাই কি করেন আমাকে না পেয়ে।কথাটা ভেবেই আমার মুখে একটা বিস্তর হাসি ফুঁটে উঠলো।রক্তিম ভাইকে টাইট না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি মিলবে না।
ফুটপাতের সামনেই একটা চা স্টল পড়ে।সেখানের কাটের বেঞ্চিটায় বসে সিফাত ভাইয়া আপনমনে চা আর পাউরুটি খেয়ে যাচ্ছেন।আর,এদিকে রিমি মাথা নিচু করে বকবক করেই যাচ্ছে।রিমির হাতে একটা চাপড় দিয়ে বললাম,
‘সামনে তাকিয়ে দেখ রিমি!সিফাত ভাইয়া বসে আছেন।’
আমার কথা শেষ হতে না হতেই রিমি চট করে মাথাটা উপরে তোলে সামনে তাকালো।সিফাত ভাইয়াকে দেখে তার চোখ,মুখ কুঁচকে গিয়েছে।তার উপর কড়া রোদ।গ্রীষ্মের সিজন হলে যা হয় আর কি!!রিমি আমার হাত টা ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।আমরা চা স্টল টার কাছে যেতেই সিফাত ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন।আমাকে দেখে লম্বা একটা সালাম দিলেন।সালামের জবাব দেওয়া শেষ হতেই রিমি তাড়া দিয়ে বললো,
‘এই রিমঝিম চল তো!কলেজের দেরি হয়ে যাবে।এমনেই কোচিং থেকে আজকে আসতে লেইট হয়েছে।’
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতেই সিফাত ভাইয়া কিছুটা ঠেস দিয়ে বললেন,
‘ভাবি!আপনার বোনের তো হেব্বি রাগ।’
সিফাত ভাইয়ার মুখে ভাবি শব্দটা শুনে আমার খুব লজ্জা লাগলো।নিজেকে এখন অনেক বড় বড় লাগছে।লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলতেই সিফাত ভাইয়া পুনরায় বলে উঠলেন,
‘ভাবি লজ্জা পাবেন না প্লিজ।আপনার স্বামী আমাদের আগে থেকেই বলে দিয়েছিলো তার বউকে যেনো আপনি সম্বোধন করে ভাবি ডাকা হয়।না হলে আমাদের খবর করে দিবে।তাই তো!আপনাকে এইভাবে এইনামে ডাকা।না হলে কি আমারও ইচ্ছা করে বউয়ের সমান শালীকে ভাবি ডাকতে।’
সিফাত ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই রিমি নাক ফুলিয়ে সিফাত ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলো।রিমিকে এগিয়ে আসতে দেখে সিফাত ভাইয়া চটজলদি করে বেঞ্চিতে বসে পড়লেন।চা’য়ে পাউরুটি চোবাতে লাগলেন।সিফাত ভাইয়ার কান্ডকারখানা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।তবে,রিমির রণচণ্ডী রূপ দেখেও বেশ ভালো লাগছে।রিমি কটমটে দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে সিফাত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘আপনি এখানে কি করছেন মিস্টার লুচ্চা।’
সিফাত ভাইয়া পাউরুটিতে কাঁমড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
‘নিজের বউকে দেখতে এসেছিলাম।যাতে করে,আমার সকাল টা খুব ভালো যায়।’
‘তাহলে চা স্টলে বসে কি করছেন?দেখতে হলে আপনার বউয়ের বাসায় গিয়ে বসুন।’
সিফাত ভাইয়া চা টা একচুমুকেই খেয়ে নিলেন।চা খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি খেয়ে বেঞ্চি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।রিমির সামনে এসে চুলগুলো পরিপাটি করে বলতে লাগলেন,
‘আজকে আমার খুব খুশির দিন।আমার বউ আমাকে ইনডাইরেক্টলি দাওয়াত দিচ্ছে আমার শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার জন্য।’
রিমি কিছুটা তেড়ে গিয়ে বললো,
‘এই যে শুনোন,আমি আপনার বউ নই মিস্টার লুচ্চা।কিসব উল্টাপাল্টা বকছেন নিজের মতো করে।’
‘আমি ভুল কি বললাম,তুমিই তো একটু আগে বলেছো,নিজের বউকে দেখতে হলে তার বাসায় গিয়ে বসে থাকতে।আমিও সেই সূত্রেই বলেছি।’
সিফাত ভাইয়ার কথায় রিমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো আমার দিকে।এমতাবস্থায় বললো,
‘দেখলি রিমঝিম!কি অসভ্য উনি।আমি ঠিকই বলি,উনি একটা লুচ্চা।’
রিমি কথাটা শেষ করেই আমাকে টানতে টানতে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো।রিকশার হুড টা তোলে দেওয়ার বাহানা করে আরেকপলক তাকিয়ে দেখে নিলো সিফাত ভাইয়াকে।যা আমার চোখ এড়ায়নি।রিমির হাবভাব দেখে আমার খুব হাসি পেলো।বেচারি!কথাও শুনাবে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবেও।প্রেমের পূর্বলক্ষণ!!
—-
লিভিং রুমে আড্ডার রোল পড়ে গিয়েছে।গোসল করে খাওয়ার উদ্দেশ্যে রান্নাঘরে রওনা দিলাম।আজকে কলেজ থেকে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।বিজয়ের জন্মদিন ছিলো বলে কলেজ শেষে জব্বর একটা পার্টি হয়েছে।যার ফলে,বাসায় আসতেও মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে সেই সাথে অবেলাতেও গোসল করতে হয়েছে।রান্নাঘরের কাছে যেতেই একটা কণ্ঠ আমার কানে এসে খুব ভালোভাবে ঠেকেছে।তাড়াহুড়ো করে লিভিং রুমে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই পা’য়ের উপর পা তোলে বসে আছেন আর আমার দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।রক্তিম ভাইকে আচমকাই এখানে দেখে আমি যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি।মনে হচ্ছে,সবকিছুই থেমে গিয়েছে।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে তনায়া আপুকে পুনরায় বলে উঠলেন,
‘তনায়া তোকে কতক্ষণ ধরে বলছি আমাকে এককাপ কফি দিতে।মাথাটা ভীষণ চড়ে আছে।মাথাটাকে আমি আর চড়তে দিতে চাচ্ছি না।না হলে যে খুব খারাপ পরিণতি হবে।’
তনায়া আপু একলাফে উঠে পড়লো সোফা থেকে।এক দৌড়েই রান্নাঘরে চলে গেলেন।তবে,আমি কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাই।যার ফলে,আমার পিছনে থাকা ফুলদানি টা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।এমন হওয়ায় মা চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
‘এইভাবে রোবটের মতো এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস তুই।এইখানে দেখার মতো কি আছে রে?ভূত দেখলি নাকি রিমঝিম।’
মা’র কথায় আমি আনমনে বলে উঠলাম,
‘ভূত না তো মা যম।ভূতের থেকেও অনেক ডেঞ্জারাস।আজকে আমার খবর আছে মা।’
রক্তিম ভাইয়ের ঠোঁটে মিষ্টি একটা হাসি ফুঁটে উঠলো।যা আমার চোখ এড়ায় নি।তবে মা আমার কাছে এসে পিঠে একটা জোরে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
‘কি আবোলতাবোল বকছিস বল তো।ভূত,যম বলতে কিছুই নেই।এখন গিয়ে ভাত খেয়ে নে।’
‘মা আমার পেট ভরে গিয়েছে।আমি রুমে গেলাম।’
আমি আর সেখানে দাঁড়ায় নি।দৌড়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।দরজা টা বন্ধ করেই কয়েকগ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।চুপচাপ লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
—-
গভীর রাতে বারান্দার দিকটায় আওয়াজ পেতেই আমি কিছুটা ভঁড়কে গেলাম।তবে বেশি একটা পাত্তা দেই নি,কারণ বারান্দায় মাঝেমধ্যে ইঁদুরের দেখা পাই।ফুল গাছের টবের পিছনে লুকিয়ে বসে থাকে।ইঁদুর ভেবে আর সেদিকে যায় নি।কাঁথাটা ভালো করে দিয়ে উপরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মনের ইচ্ছামতো চোখ দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম।দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে চট করে বারান্দার দরজাটার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন।রক্তিম ভাইকে দেখে আমি তাড়াহুড়ো করে বিছানা ছেড়ে,উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।মুখ ফঁসকে বলে উঠলাম,
‘তার মানে ইঁদুর ছিলো না আপনি ছিলেন রক্তিম ভাই! আর,এতোক্ষণ আমিই আপনাকে ইঁদুর ভেবে এসেছি।আমার আগেই ভাবা উচিত ছিলো ইঁদুর এমন ধড়াম করে শব্দ করতেই পারে না।ইশশ!কি বোকা আমি!!’
কপাল চাপড়িয়ে কথা গুলো বলেও লাভ হলো না।রক্তিম ভাই ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলেন।আমার উপর উঠে কাঁথা টা মাথা পর্যন্ত মুড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন।রক্তিম ভাইয়ের এভাবে তেড়ে আসায় বুকের ভিতরের ঢিপঢিপ আওয়াজ টা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।রক্তিম ভাই মিনমিনে গলায় বললেন,
‘এখন ভয় পেয়ে লাভের লাভ টা কি হবে শুনি?ফোন টা সুইচ অফ কেনো রেখেছিলে?আমি যে বলেছিলাম ভিডিও কলে আসতে কেনো আসো নি?’
‘ইয়ে মানে রক্তিম ভাই,,,’
‘মানে মানে করেও লাভ নেই রিমঝিম।আমি আগেই বলেছিলাম,আমি কি জিনিস তা আমি হারে হারে বুঝিয়ে দিয়ে যাবো।’
রক্তিম ভাই একটানেই নিজের টি-শার্ট টা খোলে নিচে ফেলে দিলেন।রক্তিম ভাইকে খালি গা’য়ে দেখায় আমি হাত দিয়ে চোখ দুটি বন্ধ করে নিলাম।কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম,রক্তিম ভাই হাতজোড়া দিয়ে আমার পেটের আশেপাশে স্লাইড করছেন।যার ফলে,পেট,বুক থেকে আমার জামাটা উপরে উঠে গিয়েছে।লজ্জায় যেনো আমি চোখ দুটি আরো কুঁচকে নিলাম।রক্তিম ভাই আমাকে উল্টো ভাবে ঘুরিয়ে দিয়ে একটানেই ইনারের হুক গুলো খোলে দিলেন।যার ফলে আমার মুখ দিয়ে অস্পষ্টস্বরে বেরিয়ে আসলো রক্তিম ভাই।রক্তিম ভাই আমার কথার কোনো রিপিট করলেন না।বরং,আমাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন।আমার সারা শরীরে রক্তিম ভাইয়ের হাতের স্পর্শের ছোঁয়া পাচ্ছিলাম।যা আমাকে মাতাল করতে যথেষ্ট ছিলো।একটা সময় আমিও রক্তিম ভাইয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছি।নিজেকে ঠিক রাখার জন্য রক্তিম ভাইয়ের চুল গুলো আঁকড়ে ধরে রেখেছি।তাও,রক্তিম ভাই আমাকে মাতাল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।রক্তিম ভাই বিয়ের পর যেনো খুব দুষ্টু হয়ে গিয়েছেন।প্রতিটি ধাপে ধাপে রক্তিম ভাই আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন রক্তিম ভাই আসলে কি জিনিস।এই যে বুকের মাঝখান টা যেনো কাঁমড়ে শেষ করে দিয়েছেন।এতে তো রক্তিম ভাই বুঝিয়ে দিয়েছেন,তিনি যে বেশি সুবিধার মানুষ না,বলতে গেলে একটা রাক্ষস!!
—-
আয়নার সামনে বসে গলার চারপাশ টায় ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিয়ে কাঁমড়ের দাগ গুলো মুছে ফেলার বৃথা চেষ্টা করছি।চুল ভিঁজে থাকার কারণে জামাটা পিঠের সাথে লেপ্টে আছে।এখনো,ভোরের আলো ফুঁটে নি।ঘড়ির কাটা এখন সাড়ে চারটায়।রক্তিম ভাই বিছানার মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।একটু আগেই ঘুমিয়েছেন।এতোক্ষণ আমাকে জ্বালিয়ে এখন নিজে শান্তিমতো ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।রক্তিম ভাই এবার একটু বেশিই কষ্ট দিয়েছেন,হাঁটতে গেলেই তীব্র ব্যথা অনুভব করছি।পেটের কাছে জ্বালা অনুভব করতেই পাশে রাখা ওয়েনমেন্ট টা নিয়ে লাগিয়ে নিলাম।চুল গুলো দিয়ে পানি পড়ছে দেখে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।রক্তিম ভাইকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললাম,
‘আপনি না ঘুমিয়েছিলেন রক্তিম ভাই।’
রক্তিম ভাই দাঁত কেলিয়ে বললেন,
‘অতিরিক্ত খুশিতে ঘুম আসছে না আমার।বারবার শুধু রাতের কথা মনে পড়ছে।’
রক্তিম ভাইয়ের খাপছাড়া জবাবে আমি উল্টো ঘুরে বসে পড়লাম।রক্তিম ভাইয়ের দিকে এখন তাকানো মানে লজ্জায় পড়ে যাওয়া।তবে,আমি রেহাই পাই নি,রক্তিম ভাই ঠিকই রুমের লাইট অফ করে দিয়ে আমাকে পুনরায় বিছানায় নিয়ে গেলেন।গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে রাতের মতো আমাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন।ঢের শিক্ষা হয়েছে আমার!এখন থেকে রক্তিম ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থাকবো।
—-
তনায়া আপু আর বাবু ভাইয়ার বিয়ের ডেইট নিকটে চলে এসেছে।গ্রাম থেকে আত্নীয় স্বজনরাও চলে আসছেন।এইতো আর এক সপ্তাহ পর বিয়ে।বিয়ে উপলক্ষে সারা বাসা পরিষ্কার করা হচ্ছে।বড়োরা সবাই আজকে বাজার করতে গিয়েছে।সেই সাথে টুকটাক মার্কেটও করে আসবে।আমরা যাবো আর দু’দিন পর।সোফায় আমি রিমি আর তনায়া আপু বসে আছি।তনায়া আপু নেট থেকে মেহেদী ডিজাইন ডাউনলোড করছে।আর এদিকে,রিমিও বিভিন্ন লেহেঙ্গা দেখায় ব্যস্ত।আমি কোনোমতে কপাল টা ঠেস দিয়ে রেখেছি।ঘুমে আমার চোখদুটোর যায় যায় অবস্থা।আবির ভাই শিস বাজিয়ে সামনের সোফাটায় বসে পড়লো।তার কিছুক্ষণ পরেই,রক্তিম ভাই গোসল সেরে চুল গুলোকে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে এসে আবির ভাইয়ের পাশে বসে পড়লেন।আমার দিকে তাকিয়ে আছেন একধ্যানে।আবির ভাই গলা পরিষ্কার করে রক্তিম ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘কালকের রাত টা খুব জমজমাট ছিলো তাই না রক্তিম।’
আবির ভাইয়ের কথায় আমি কিছুটা নেতিয়ে গেলাম।আবির ভাইও কম না।রক্তিম ভাইয়ের কার্বনকপি।রক্তিম ভাই মাথা নাড়িয়ে বললেন,
‘তুই বুঝবি না এইসব।আগে বিয়ে হোক তারপর বুঝবি, একেকটা রাত বউ নিয়ে থাকা যে কতো মজার।’
‘তোর কানা বান্ধুবী টা যদি একটু বুঝতো আমাকে।তাহলে,আমিও তোর কানা বান্ধুবীকে ছাড় দিতাম না।নিজের বুকে শক্ত করে বেঁধে রাখতাম।’
অপাশ থেকে তনায়া আপু বলে উঠলো,
‘শিলা আপু একবার জানতে পারলে তোর বারোটা বাজিয়ে দিবে রে ভাইয়া।তাহলে,আমও যাবে ছালাও যাবে।দেখবি,তোর সামনে দিয়ে শিলা আপু আরেকজনের হয়ে গিয়েছে।’
‘রক্তিম থাকতে এইটা কোনো দিন হতেই দিবে না।রক্তিম আমাকে কথা দিয়েছে শিলা অনলি আমার।শুধু আমার।এই ব্যপারে যেকোনো সাহায্য রক্তিম আমাকে করবে।আমরা হলাম একে অপরের জানপ্রাণ।এই যেমন কাল,রক্তিম কে পাইপ বেয়ে রিমঝিমের রুমে পাঠাতে সাহায্য করেছি।সেইম,রক্তিমও আমাকে সাহায্য করবে।’
আবির ভাইয়ের কথা শুনে আমার চোখ দুটো আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো।তার মানে,রক্তিম ভাই পাইপ বেয়ে আমার রুমে এসেছিলেন।আর,তাতে সাহায্য করেছিলো আবির ভাই।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে বললেন,
‘নিজের প্রেয়সী কে কাছে পেতে হলে এমন অনেক কিছুই করতে পারবো আমি।এইটা একটা সামান্য ব্যাপার ছিলো।যদি বলে হিমালয়ের চূড়ায়ও যেতে হবে তাও রাজি আমি।’
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।রিমি ভিডিও করতে করতে বললো,
‘আমার ভাই যে এতো রোমান্টিক তা আগে জানা ছিলো না।আমি তো জানতাম আমার ভাই একটা পানসে প্রকৃতির মানুষ।যার মধ্যে রোমান্টিকের র টাও নেই।এখন দেখি তার উল্টো।তার মধ্যে সভ্যতার স টাই নেই।’
সবার হাসির রোল পড়ে গিয়েছে।তনায়া আপু এখন নিজের বিয়ের কথা বাদ দিয়ে আমার পিছনে এসে পড়লো।আমাকে এটা ওটা বলে খোঁছাচ্ছে।আমি আর না পেরে মুখে হাত গুঁজে সবার থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।পিছন ফিরে একবারও তাকায় নি।তাকালে হয়তোবা রক্তিম ভাইয়ের ঠোঁটের দুষ্টু হাসি দেখতে পেতাম।
চলবে..