জলপদ্ম পর্ব -১৮

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|১৮|
বিছানার মাঝখানে গোল হয়ে বসে উপন্যাসের কয়েকটা বই ঘাটাঘাটি করছিলাম,এমন সময় রিমি হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসলো।এসেই খড়খড়ে গলায় বলতে লাগলো,

‘তোর জামাই তুই সামলাতে পারিস না।তার কখন কি লাগবে তুই দেখতে পারিস না।সবকিছুতেই আমাকেই কেনো অর্ডার দেওয়া হবে।যদি আমাকেই অর্ডার দিতে হয় তাহলে তুই আছিস কি করতে?’

রিমির কথা শেষ হওয়ার তার মিনিট পাঁচেক পর বললাম,

‘তোর ভাই তাই তুই করবি।সেখানে আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’

রিমি ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো আমার দিকে।মনে হচ্ছে,গিলে খাবে।কিছুটা তেড়ে এসে কাটকাট গলায় বললো,

‘উপন্যাস পড়া বাদ দিয়ে তোর স্বামীর কাছে যা।ভাইয়ার যাবতীয় জিনিসি গুলো এখন তুই করবি।এটাই সুযোগ কাজে লাগাও।পরে যখন,বাসার সবাই চলে আসবে তখন আফসোস না করলেই হয়।’

রিমি এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো শেষ করে আমার হাত থেকে উপন্যাসের বই গুলো নিয়ে নিলো।দরজার সামনে যেতে যেতে বললো,

‘উপন্যাস আমার পড়া উচিত।কারণ,আমি একজনকে খুব করে অনুভব করি।এখন,আমার তাকে আরো বেশি করে অনুভব করতে ইচ্ছে করছে।সময়ের মূল্য দিতে আমি জানি।তাই তো এখন,এই সময়টাকে আমিও কাজে লাগাবো।তুইও কাজে লাগা রিমঝিম।’

রিমি চলে যেতেই ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে রক্তিম ভাইয়ের নাম দেখে চটজলদি করে রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই রক্তিম ভাই একনাগাড়ে বলতে লাগলেন,

‘আসতে এতো সময় লাগে।রিমি কি খবর পাঠায় নি?’

তার মানে,রিমিকে রক্তিম ভাই পাঠিয়েছেন।আর,রিমি এসে কি জ্ঞান টাই না দিয়ে গেলো।ভাই বোন দুটোই এক।রন্ধ্রে রন্ধ্রে শয়তানি।

‘কি হলো?কথা কি কানে যায় না?’

রক্তিম ভাইয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম,

‘আসছি রক্তিম ভাই।’

‘আসার আগে,সকালের নাস্তা চাই।একটু ভারী খাবার নিয়ে আসবি।কাল রাত থেকে কিছু খায় নি।তার উপর আমার কম ধকল যায় নি।তোর থেকে তো বেশি কষ্ট আমি করেছি।তুই তো শুধু আমাকে খাঁমচে শেষ করে দিয়েছিস।খাঁমচি দেওয়া কি কোনো ব্যাপার হলো নাকি।সেই হিসেবে দেখতে গেলে,পরিশ্রম টা আমিই করেছি।অবশ্য,সবসময় আমাকেই করতে হবে তাও জানি আমি।আচ্ছা!সেসব কথা বাদ,এখন আমার নাস্তা রেডি চাই কয়েকমিনিটের মধ্যেই।’

রক্তিম ভাইয়ের বেসামাল কথায় ফোনের এপাশেও আমি লজ্জায় নেতিয়ে যাচ্ছি।মাথা নিচু করে রেখেছি।মনে হচ্ছে,সামনে তাকালেই রক্তিম ভাইয়ের আদুরে মুখখানা দেখতে পাবো।রক্তিম ভাই পুনরায় গলা পরিষ্কার করে বলতে লাগলেন,

‘আমার কথায় এতো লজ্জা পেতে হবে না।আমি যা বলেছি একদম ন্যায্য কথা বলেছি।অবশ্য,তোদেরকে যতই বলবো লজ্জা পাস না তোরা ততই লজ্জা পাবি।এটাই হলো তোদের স্বভাব।আর,সবচেয়ে বড় কথা লজ্জা তো নারীর ভূষণ।এখন,আর সহ্য হচ্ছে না রিমঝিম।তাড়াতাড়ি খাবার বানিয়ে আমার রুমে চলে আয়।মনে হচ্ছে আমি কতদিনের অভুক্ত প্রাণী।’

‘আসছি রক্তিম ভাই।’

‘তুই আসছি বলতেই তো অনেকটা সময় খেয়ে নিয়েছিস।তুই অলস কেনো রিমঝিম?শেষে কিনা আমি একটা অলস প্রকৃতির মেয়েকে কে বিয়ে করেছি।এখন তো মনে হচ্ছে,তোর অলসতার জন্য না জানি আমার বাচ্চাগুলো হাগা-মুতা যুক্ত কাঁথায় বড় হয়।’

‘আপনি কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছেন রক্তিম ভাই।আমার তো এখন মনে হচ্ছে,আপনি একজন হাগা-মুতার বিশেষজ্ঞ।’

‘সেটা কি তুই আজকে জানলি।আমি তো সেদিনেই হাগা-মুতার বিশেষজ্ঞ হয়েছি যেদিন তোকে প্রথম কোলে নিয়েছিলাম আর ওইদিনেই তুই টুপ করে আমার কোলে সবুজ কালারের হাগা করে দিয়েছিলিস।জানিস রিমঝিম তখনও আমার এতোটুকুও অস্বস্তি বোধ হয় নি।’

‘উফফ!রক্তিম ভাই আপনি থামুন তো।আমি খাবার নিয়ে আসছি।’

বলেই ফোনটা তাড়াতাড়ি কেটে দিলাম।না হলে,কথার পর কথা বলতেই থাকবেন।খোলা চুল গুলোকে হাত খোঁপা করে রান্নাঘরের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।রান্নাঘরে গিয়ে পড়লাম আরেক বিপদে।ভারী খাবার কি করবো তাই ভাবছি।চোখের সামনে ভাত আর ইলিশ মাছের তরকারি দেখেই তা একটা প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে দিয়ে,চুলোয় ফ্রাইপ্যান বসিয়ে দিলাম।চপিং বোর্ডে তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে আঙুলের একটু কোণা কেটে গিয়েছে।সেদিকে এতো পাত্তা না দিয়ে কোনোমতে একটা ডিম ভাজা করে রক্তিম ভাইয়ের রুমের দিকে অগ্রসর হলাম।
—-
রক্তিম ভাইয়ের রুমের দরজা বন্ধ দেখে জোর গলায় চেঁচিয়ে বললাম,

‘রক্তিম ভাই দরজা টা খুলুন।আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।’

তার এক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তিম ভাই দরজা টা খোলে একটা ঝাড়ি দিয়ে বললেন,

‘সামান্য একটা খাবার নিয়ে আসতে তোর এতো দেরি হলো!পাক্কা বিশ মিনিটের মতো সময় লাগিয়েছিস তুই।’

রক্তিম ভাইয়ের ঝাড়ি খেয়ে আমার হাসি উজ্জ্বল মুখ টা একদম মিহিয়ে গিয়েছে।সাথে সাথেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো।রক্তিম ভাই হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে বললেন,

‘ভিতরে আয়।’

‘আমি কেনো ভিতরে আসবো রক্তিম ভাই।আপনি খাবার চেয়েছেন,খাবার তো দিয়ে দিয়েছি।তাহলে,এখন কেনো আসবো?’

রক্তিম ভাই কটমট করে তাকালেন আমার দিকে।এমতাবস্থায় বললেন,

‘তোকে দিয়ে আমার পা টেপাবো এইজন্য আসতে বলছি।’

আমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে রক্তিম ভাইয়ের কথার পিঠে বললাম,

‘আমি পারবো না রক্তিম ভাই।আপনা পা দুটো খুব শক্ত।টিপতে গেলে হাত ব্যথা হয়ে যাবে।’

‘রিমঝিম!আমার রাগ উঠার আগেই তুই যদি রুমে আসিস তাহলে তোর জন্যই ভালো হবে।না হলে কিন্তু,কাল রাতের মতো কাঁমড়ে শেষ করে দিবো।’

‘আপনি তো খুব অসভ্য রক্তিম ভাই।কথায় কথায় শুধু নিজেকে অসভ্য প্রমাণ করছেন।আর আমাকে লজ্জায় ফেলছেন।লজ্জা-শরম আমার আছে আপনার না থাকলেও।’

রক্তিম ভাই জোরে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে,দরজা টা বন্ধ করে দিলেন।এমন হওয়ায় আমি অনেকটা হকচকিয়ে গেলাম।রক্তিম ভাইয়ের হুটহাট কাজ গুলো আমাকে প্রচন্ড ভয় পাইয়ে দেয়।এই যে এখন ঠিক এমন টাই হলো।রক্তিম ভাই আমার হাত টা ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন বিছানার মাঝখান টায়।বসার ওয়ার্ন দিয়ে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন।কাবার্ড থেকে কিছু একটা নিয়ে এসে আমার সামনে বসে পড়লেন।ভাতের প্লেট টা হাতে নিয়ে বলতে লাগলেন,

‘খাবার খাস নি কেনো?’

আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিলাম রক্তিম ভাইয়ের হাবভাব।খুব মনোযোগ সহকারে ইলিশ মাছের কাঁটা ছাড়াচ্ছেন।হুট করেই দু’জনের চোখাচোখি হতেই আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।রক্তিম ভাই মুচকি হাসলেন।তা,আমি অনুমান করছি।মুখের সামনে খাবার টা ধরে বললেন,

‘আমাকে দেখার ঢের সময় পাবি রিমঝিম।এখন আমার কথার উত্তর দে।’

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,

‘খাবার টা তো আপনার রক্তিম ভাই।তাহলে,আমার মুখের সামনে কেনো খাবার ধরে আছেন।আমি তো আপনার জন্য নিয়ে এসেছি।’

‘তোর আর আমার আলাদা বলতে কিছুই নেই।আমি আর তুই এখন এক মানুষ।আমাদের আত্না এখন এক হয়ে গিয়েছে।যা আমার সবই তোর।যেমন তোর সবকিছু আমার আর আমার সবকিছু তোর।তাই,এই খাবার টাও আমি আর তুই মিলে খাবো।তার আগে আমি আমার উত্তর চাই।খাবার খেলি না কেনো?’

কাঁদো কাঁদো মুখ করে রক্তিম ভাইয়ের কথার জবাবে বললাম,

‘খাবো কীভাবে বলুন তো।আপনিই তো ঠোঁট জিহবা কাঁমড়ে কেটে দিয়েছেন।খেতে গেলেই তো জ্বালা অনুভব করি।’

রক্তিম ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন।প্লেট টা বিছানায় রেখে বাম হাত দিয়ে আমার গাল টিপে বললেন,

‘এইটা কোনো ব্যপার না মিসেস রক্তিম।ঠিক হয়ে যাবে।আপাতত,এখন খেয়ে নাও।খাওয়ার পর আমি ব্যথার পিল খাইয়ে দিচ্ছি।’

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালাম।রক্তিম ভাই সযত্নে খাইয়ে দিতে লাগলেন।তবে,রক্তিম ভাইয়ের মুখে সেই মুগ্ধকর হাসিটা লেগে আছে।মানুষ টা হাসলে এতো সুন্দর কেনো লাগে!!রক্তিম ভাই কি বুঝেন না উনার হাসি যে আমাকে দিশেহারা করে দেয়!!
—-
কলেজ শেষ করে আমি আর রিমি রাস্তার মোড়ের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই দেখা হলো রক্তিম ভাই আর রক্তিম ভাইয়ের বন্ধুমহলের সবার সাথে।সবাই মোড়ের দিকটায় বসে আড্ডায় মশগুল হয়ে আছে।আজকে,তারিন আপুও আছে।আমাকে দেখেই সূক্ষ্ম এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালেন।এইভাবে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলেন।আমি সেদিকে একটুও গুরুত্ব দেয় নি।চুপচাপ ফুচকা স্টল টার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।কিছুটা সামনে আগাতেই রঞ্জন ভাইয়া আর সিফাত ভাইয়ার কথার আওয়াজ শুনতে পেলাম।নিজেদের মতো হেসে যাচ্ছেন।আমি তাদের দিকে একপলক তাকাতে গেলেই রক্তিম ভাইয়ের চোখের উপর চোখ পড়ে গেলো।রক্তিম ভাই বুকে হাত গুঁজে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি তাড়াতাড়ি মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।তবে,বেহায়া মন টা বারবার ইচ্ছে করছে রক্তিম ভাইকে দেখার জন্য।অবশেষে আরেক পলক রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকাতেই রক্তিম ভাই সুযোগ বুঝে একটা চোখ টিপ মেরে বসলেন।আচমকাই এমন হওয়াই আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।পাশ ফিরে রিমির দিকে তাকালাম।রিমি নাক ফুলিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।রিমির নাক ফোলানো দেখে মনে হলো তার আসল কারণ হলো সিফাত ভাইয়া।সিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম,সিফাত ভাইয়া ফোনে টাইপ করছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন।যে কেউ প্রথম দেখলেই ধারণা নিয়ে নিবে,সিফাত ভাইয়া প্রেম করছেন।আচ্ছা!রিমিও কি সেটা ভেবে নিয়েছে!!কথাটা মনে আসতেই রিমিকে ঠেস দিয়ে বললাম,

‘কিরে রিমি?তুই হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলি কেনো?’

রিমি আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমার হাত টা ধরে ফুচকা স্টলটার কাছে নিয়ে গিয়ে সামনের মোড়া টায় বসে পড়লো।আমিও আয়েশি ভঙ্গিমা করে বসে পুনরায় বললাম,

‘কিরে বল রিমি,কি হয়েছে তোর।তুই আবার সিফাত ভাইয়াকে ভুলভাল ভাবছিস না তো এইভাবে মুচকি মুচকি হেসে টাইপ করছে বলে।’

রিমি চোখ গরম করে তাকালো আমার দিকে।নাক ফুলিয়ে বললো,

‘ওই লুচ্চা যা ইচ্ছা তাই করুক তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।পারলে,উনি দশ টা মেয়ের সাথে কথা বলুক বা প্রেম করুক তাতে আমার কি!!আমার কিছুই না।’

রিমির গর্জে উঠা কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পেয়ে আমি আর কিছু বলার সাহস পায় নি।চুপ করে বসে রইলাম।রিমি চেঁচিয়ে ফুচকাওয়ালা কে বললো,

‘মামা!আজকেও অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি ঝাল দিবেন।’

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রিমির উদ্দেশ্য বললাম,

‘তুই কি পাগল হয়েছিস রিমি?আরো ঝাল খাবি কীভাবে?প্রতিদিনই আমাদের ফুচকা খেয়ে বেসামাল অবস্থা হয়ে যায় আর সেখানে তুই আরো ঝাল খাবি।তুই কি ঠিক আছিস রিমি?’

রিমি সিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার কথার উত্তরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘আমি একদম ঠিক আছি রিমঝিম।আজকে ঝাল খেয়েও আমার মনের ঝালা মিটবে না।’

রিমির কথার পরিপ্রেক্ষিতে এতোটুকু আন্দাজ করতে পারছি,সিফাত ভাইয়ার এইভাবে মুচকি মুচকি হেসে টাইপ করাটাকে রিমির কাছে খুব অসহ্যকর লাগছে।রিমির কান্ডকারখানা দেখে মুচকি হেসে বললাম,

‘সিফাত ভাইয়ার উপর খুব রাগ হচ্ছে তোর রিমি?’

রিমি আনমনেই বলে উঠলো,

‘না কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে মন চাচ্ছে মিস্টার লুচ্চাকে।দেখ না!কীভাবে এতো হেসে হেসে ফোনে টাইপ করছে।’

‘তাতে তোর কি?তুই তো সিফাত ভাইয়াকে সহ্যই করতে পারিস না।তাহলে,হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেলো।আচ্ছা!রিমি প্রেমে পড়লি নাকি সিফাত ভাইয়ার?’

রিমি চমকে উঠলো।সিফাত ভাইয়ার থেকে সটান করে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো।আমতাআমতা করে বলতে লাগলো,

‘তুই কি পাগল রিমঝিম!আমি এই লুচ্চার প্রেমে পড়বো অসম্ভব।আমি তো একদন্ডও সহ্য করতে পারি না।দেখলেই পিত্তিজ্বলে যায়।’

আমি মাথা নাড়ালাম শুধু।রিমিকে আর ঘাটায় নি।বেচারি আমার প্রশ্ন শুনে এমনিতেই অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছে।তাই এখন চুপ থাকাই ব্যাটার।
—-
ছাঁদে বিশাল বড় আড্ডা বসেছে।তনায়া আপু আর বাবু ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে।সবাই ছাঁদে থাকলেও আমি এখনো রুমে আছি।একটু পরেই ছাঁদেই যাবো।তবে,বরাবরের মতো আজকেও খাবার নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব টা আমার ঘাড়েই পড়েছে।শুধু তাই নয়,সেটার অর্ডার রক্তিম ভাইয়েই দিয়েছেন।আয়নায় বসে,চুল গুলোকে গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।দু’তলার এই জায়গা টায় আজকে কেউ নেই।বড়রা সবাই নিচে আছে।তনায়া আপুর বিয়ের জন্য যাবতীয় কাজ করছে।আজকেও হঠাৎ করে ফোনের ম্যাসেজ টোন টা বেজে উঠায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।ফোন টা সামনে ধরতেই ভেসে উঠলো একটি এসএমএস।যেখানে লিখা আছে,

‘খুব খুশি তুমি তাই না রিমঝিম।তবে,এই খুশি আমি বেশিদিন থাকতে দিবো না।একটু উড়ে নাও!সময় মতো ডানা গুলো কেটে দেওয়ার জন্য আমি আছি তো।সবার তো এক সময় থাকে না বলো।এই যেমন ধরো!তুমি সবসময় সুখী থাকবে না!!’

দ্বিতীয় বারের মতো সেই নাম্বার থেকে এইরকম আরেকটা টা ম্যাসেজ পেয়ে এবার আমি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম।ম্যাসেজে ঠিকভাবে প্রকাশ পায় নি কি নিয়ে এতো ক্ষোভ আমার উপর!আর কেই বা এই ম্যাসেজের বিপরীতে আছে।অনেক ভেবেও তার কোনো উত্তর পায় নি।আমার ভাবনার মাঝেই সুস্মিতা আপু এসে বললেন,

‘এই রিমঝিম!এইখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?তোমার জন্য তো সবাই অপেক্ষা করছে।’

সুস্মিতা আপুর কথায় ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলাম।জোরপূর্বক হেসে বললাম,

‘এইতো আপু আমি ওইদিকেই চাচ্ছিলাম।পিজ্জা টা চলে আসলেই আমি নিয়ে যেতাম।’

‘পিজ্জা তো চলে এসেছে অনেক আগেই।তাই তো আমাকে রক্তিম নিচে পাঠালো।চলো আমার সাথে!একসাথেই যাই।’

আমি ছোট করে উত্তরে ‘ওহহ’ বলে সুস্মিতা আপুর সাথে এগিয়ে গেলাম।তবে,আমার মন এখনো ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে।শুধু মাথায় খেলছে,কে হতে পারে এই ম্যাসেজের বিপরীতে!!
—-
ছাঁদে বসে সবাই আড্ডায় মশগুল হয়ে আছে।আড্ডা জমে উঠেছে গানের কলির মাধ্যমে।সবাই যখন গানের কলি খেলায় ব্যস্ত তখন আমি রক্তিম ভাইকে খোঁজতে ব্যস্ত।আশেপাশে তাকিয়ে রক্তিম ভাইকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম।আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে নিচে চলে আসলাম।উদ্দেশ্য রক্তিম ভাইয়ের রুম।রক্তিম ভাইয়ের রুমে গিয়েও হতাশ হলাম।সেখানে,রক্তিম ভাইয়ের ছাঁয়া টুকুও পেলাম না।রক্তিম ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে পুনরায় ছাঁদে চলে আসলাম।তবে,এখন খেয়াল করে দেখলাম তারিন আপুও নেই।ব্যাপার টা এতো ঘাটাঘাটি করি নি।সবাই আড্ডায় ব্যস্ত থাকলেও আমি ছাঁদের এককোণে গিয়ে দাঁড়ালাম।মৃদু কম্পনে মাতাল করা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।আমি জোরে একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সামনের দিকে তাকালাম।কিন্তু,সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখবো বলে কখনোই ভাবি নি।তারিন আপু রক্তিম ভাইয়ের বুকে শক্ত করে মাথাটা চেপে ধরে রেখেছেন।রক্তিম ভাইয়ের হাত টাও তারিন আপুর পিঠ জুড়ে বিচরণ করছে।এইভাবে দু’জনকে দেখে আমি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়লাম।চারপাশ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।রক্তিম ভাইয়ের উপর খুব অভিমান ঝেঁকে বসেছে।আর,কিছু না ভেবে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।আমার কান্না তীব্র থেকে তীব্রতর হতেই সবাই আড্ডা থামিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি আরেকপলক রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম।ছাঁদের কার্ণিশ থেকে সরে আসতে নিলেই রক্তিম ভাইয়ের কণ্ঠ জোড়া আমার কানে এসে ঠেকলো।রক্তিম ভাই যে আমার নাম ধরে ডাকছেন তা আমি শুনতে পাচ্ছি।কিন্তু,সেদিকে আমি পাত্তা না দিয়ে এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।রুমের দরজা,জানালা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে নিচে বসে পড়লাম।চোখের সামনে সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠতেই এক চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।মনে মনে বিরবির করে বলতে লাগলাম,
‘রক্তিম ভাই!কেনো আমাকে কষ্ট দিলেন।আমি তো আপনাকে ভালোবাসি।নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে এইভাবে অন্যকারোর সাথে দেখলে সে কি ঠিক থাকতে পারে বলুন!আমি কিন্তু ঠিক নেই রক্তিম ভাই।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!!’

চলবে..
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here