জলপদ্ম পর্ব -২০

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|২০|
মরিচবাতির আলোয় সারা বাসা জ্বলজ্বল করছে।ছাঁদের ডেকোরেশন সহ সবকিছুই কমপ্লিট।শুধুমাত্র বাসার এরিয়ায় মরিচবাতি লাগানো বাকি রয়েছে।মেজো বাবা চেয়েছিলো তনায়া আপুর গা’য়ে হলুদের প্রোগ্রাম টা কমিউনিটি সেন্টারে করার জন্য।কিন্তু,এতে বেঁকে বসেছে মেজো’মা।মেজো’মার এক কথা এতো বড় বাসা থাকতে শুধু শুধু কেনো কমিউনিটি সেন্টারে যাবো।শুধু তাই নয়,বাড়ি থেকে নানান মেহমান আসবেন তাদের সুবিধার দিকটা বিবেচনা করেই মেজো’মা কমিউনিটি সেন্টারে গা’য়ে হলুদের প্রোগ্রাম টা করতে একদম নারাজ ছিলো।মেজো বাবা ব্যপার টা বুঝতে পেরে মেজো’মার সাথে সহমত হয়েছে।আরো একদিন কেটে গেলো।রক্তিম ভাইকে সম্পূর্ণ ভাবে ইগনোর করে চলেছি।এই একটা দিনেও রক্তিম ভাই কম পরিশ্রম করেন নি আমার সাথে কথা বলার জন্য।রঞ্জন ভাইয়া আর সিফাত ভাইয়া কে বলেও লাভের লাভ কিছুই হয় নি।রাত টুকু বেঁচে গিয়েছি তনু আপুর জন্য।রাতে,তনু আপু আমার সাথেই ছিলো।বাবলু ভাইয়া আজকে আসবেন।কাজের জন্য তনু আপুর সাথে আসতে পারেন নি।তাই,তনু আপুকে ফুফা,ফুপির সাথে পাঠিয়ে দিয়েছেন।বাগানের দিকটা থেকে সরে আসলাম।বড়রা সবাই সেখানে কাটাকুটিতে ব্যস্ত।আর,প্লাস্টিকের একটা চেয়ারে বসে দাদি সবাইকে বলে দিচ্ছে কোনটা করলে ভালো হয় বা কীভাবে করলে ভালো হয়।রিমিও এতোক্ষণ ছিলো আমার পাশে।কিন্তু,ওয়াশরুমের বেগ আসায় সেও চলে গিয়েছে।অবশ্য,যাওয়ার এই তো কথা।ওয়াশরুমের সাথে নো কমপ্রোমাইজ।বাসার ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম,তারিন আপু খুব তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং টেবিল থেকে পানির বোতল টা নিয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেলন।ব্যাপার টা দেখার জন্য রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।হাতে,ব্ল্যাক কফির সরঞ্জাম দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না এই ব্ল্যাক কফিটা যে রক্তিম ভাইয়ের জন্য।যা দেখে আমার খুব রাগ হলো।যেভাবে কাজ করছে মনে হচ্ছে,জামাই টা তার আর বউটা সে।একপ্রকার জোরে চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,চুন্নি একটা।অন্যের জামাই নিয়ে টানাটানি না করে শান্তি নেই।আর রক্তিম ভাইটাও কেমন লুচ্চা।বিয়ে করার পরও অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি কমলো না বরং একটু একটু করে বেড়েই যাচ্ছে।সিফাত ভাইয়াকে লুচ্চা উপাধি না দিয়ে রক্তিম ভাইকে দেওয়া উচিত ছিলো।মুখ ভেঙচি কেটে রুমে চলে আসলাম।রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে।বিছানার একপাশে তনু আপু বিভোরে ঘুমিয়ে আছে।ঘুমিয়ে থাকার তো কথাই,সারা রাত বাবলু ভাইয়ার সাথে ফোনালাপ করেছে।সে কি কষ্ট তাদের!একটা রাত যেনো তাদের কাছে হাজার হাজার বছরের সমান।অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের মনে হয় এই এক সুবিধা।ভালোবাসার কোনো কমতি থাকে না।ইশশ!আমার বিয়েটাও যদি অপরিচিত একজনের সাথে হতো তাহলে খুব ভালো হতো!!কথাটা ভাবতেই নিজেই নিজের কপাল চাপড়িয়ে বললাম,ধুর!কি আবোলতাবোল বকছি!!

দুপুরে খাওয়া শেষে সবাই তনায়া আপুর রুমে আড্ডায় বসার ফন্দী আঁটছে।কথাটা শুনতেই তনায়া আপুর মুখটা চুপসে গিয়েছে।বেচারি যে,ভেবে নিয়েছিলো বাবু ভাইয়ার সাথে প্রেমালাপ করবে সেটা আর হলো না।সবাই ব্যপার টা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে।আবির ভাই মুখ বেঁকিয়ে বললো,
‘সবুরে মেওয়া ফলে তনায়া।একটু সবুর কর পেয়েই তো যাবি তোর বাবু কে,মাঝখানে শুধু আজকের দিনটা।তারপর তোর বাবুকে কোলে নিয়ে ফিডার খাওয়াবি।আর মুখ দিয়ে সামুদ্রিক মাছের মতো চোঁ চোঁ শব্দ করে বলবি,খেয়ে নাও আমার বাবুটা।বউ তোমার জন্য অনেক কষ্টে রান্না করে নিয়ে এসেছি।’

আবির ভাইয়ের কথা শেষ হতে পারলো না তার আগেই হেসে সবাই কপোকাত।আবির ভাই সবার দিকে একপলক তাকিয়ে তনায়া আপুর দিকে তাকালো।তনায়া আপু কটমট চোখে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে।কিছুক্ষণ এইভাবে চুপ থেকে বসে,হাতে থাকা কুশন টা দিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো।আবির ভাইও কম না,আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো।তাই মাথাটা নিচু করে নিতেই কুশন টা গিয়ে পড়লো শিলা আপুর ঠিক নাক বরাবর।নাকে এসে ঠেকতেই শিলা আপুর চশমা টা চোখ থেকে কিছুটা নেমে আসলো,সেই সাথে সামনের চুল গুলোও কিছুটা অগোছালো হয়ে গেলো।কারণ,শিলা আপু আবির ভাইয়ের পিছনে বসেছিলেন।এমন হওয়ায় তনায়া আপু দৌড়ে গেলো শিলা আপুর নিকট।আর,এদিকে আবির ভাই হাবলার মতো তাকিয়ে আছে শিলা আপুর দিকে।পরক্ষণেই,শিলা আপুর নাক থেকে চশমা টা তোলে ঠিক করে পড়িয়ে দিতে গেলেই শিলা আপু জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠলেন,
‘ফাজিল কোথাকার।নিজের মাইর গুলো আমাকে খাইয়েছেন।অসভ্য লোক একটা।’
বলেই থেমে যান নি শিলা আপু।দুড়ুমদুড়ুম করে আবির ভাইয়ের পিঠ বরাবর পরপর দুটো কিল বসিয়ে দিলেন।হুট করে আঘাত পাওয়ায় আবির ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘কি খাও গো শিলা তুমি।এতো শক্তি কোথা থেকে আসলো।মেরুদণ্ড টা মনে হয় বাঁকা হয়ে গিয়েছে।কি এমন খাও বলো না!আমিও একটু খেয়ে তোমার মতো শক্তিশালী হই।’

শিলা আপু সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন।আর,এদিকে আবির ভাই মুখটা ভোঁতা করে তাকিয়ে আছে শিলা আপুর যাওয়ার দিকে।কিছু একটা ভেবে আবির ভাইও ছুটলো শিলা আপুর পিছনে।দু’জনের ঝগড়া দেখে আমারও খুব হাসি পেলো।আড্ডার মাঝেই বড়’মা হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে আমার কাছে আসলো।এসেই তাড়া দিয়ে বলতে লাগলো,
‘রিমঝিম!এই প্যাকেট টা রক্তিমকে দিয়ে আয় তো।’

বড়মা’র কথায় কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।রক্তিম ভাইয়ের কাছে গেলে মনে হয় না আস্ত ফিরে আসতে পারবো।একা পেয়ে যদি থাপ্পড় টাপ্পড় দিয়ে বসেন! কথাটা ভাবতেই শুকনো কয়েক ঢোক গিললাম।বড়মা পুনরায় বললো,
‘কি হলো রিমঝিম!বসে আছিস কেনো।দিয়ে আয় রক্তিম কে।’

অপর পাশে বসা তারিন আপু কিছুটা মিষ্টি গলায় বললেন,
‘আমাকে দিন আন্টি।আমি নিয়ে যাচ্ছি।’

‘তুমি যাবে তারিন?ঠিক আছে তুমি যাও তাহলে।’

রঞ্জন ভাইয়া সাথে সাথেই কিছুটা চেঁচিয়ে বললেন,

‘রিমঝিম তুমিই যাও।তারিন তুই আমাদের সাথে বস,কিছু কথা আছে।’

রঞ্জন ভাইয়া চালাকি করে তারিন আপুকে আঁটকে দিলেন।আমার দিকে টেডি স্মাইল নিয়ে তাকালেন।ইশারায় বললেন,
‘রিমঝিম যাও তাড়াতাড়ি।আন্টি অনেকক্ষণ হলো প্যাকেট টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।’

বড়মাও প্যাকেট টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘এতো ভয় পাস কেনো আমার ছেলেকে।’

‘তোমার ছেলে একটা বাঘ বড়’মা।’

‘বাঘ হলে তোরেই তো।’

আমি অবাক চোখে তাকালাম বড়মা’র দিকে।বড়মা মুচকি হেসে প্যাকেট টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।বড়মা’র মতিগতিও ভালো ঠেকছে না।
—-
রক্তিম ভাইয়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছি,রক্তিম ভাই যখন দরজা টা খোলবেন তখনি প্যাকেট টা সাথে সাথে হাতে ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে আসবো।ভাবনা অনুযায়ী দরজায় টোকা মারতেই দরজা টা খোলে গেলো।ভিতরে মুখ ঢুকিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে নিলাম রক্তিম ভাই রুমের ভিতরে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।রক্তিম ভাই ওয়াশরুমে আছেন কথাটা ভেবে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।গুটিগুটি পা’য়ে প্যাকেট টা সোফার টি-টেবিলের উপরে রেখে এসে উল্টো ঘুরতেই একটা বড়োসড় ধাক্কা খেলাম।সামনে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম ভাই খাম্বার মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মুখ,চোখ শক্ত করে।রক্তিম ভাইকে আচমকাই সামনে দেখে মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম,
‘রক্তিম ভাই আপনি না ওয়াশরুমে ছিলেন।’

রক্তিম ভাই আমার কথার পিঠে কিছু বললেন না।বরং,ধীর গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।রক্তিম ভাই ঠিক আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন।চোখ,দুটো লাল হয়ে আছে।রক্তিম ভাইয়ের এরূপ চাহনি দেখে আমতাআমতা করে বললাম,
‘রক্তিম ভাই!আপনাকে ভীষণ ভয় লাগছে আমার।এইভাবে প্লিজ তাকাবেন না।ভয়ংকর দেখতে লাগে।’

‘বাহ্!!তাই বুঝি মিসেস রক্তিম,আমাকে আপনার ভয় লাগছে।’

আমি সাথে সাথে মাথা দুলিয়ে বললাম,

‘হ্যাঁ!রক্তিম ভাই আপনাকে ভীষণ ভয়ংকর লাগছে সেই সাথে অদ্ভুতও।’

‘তাহলে!এতোদিন আমার কথা কেনো শুনিস না ফাজিল কোথাকার।তোকে যখন বলেছিলাম আমার কথা শোনার জন্য তখন কোথাই ছিলো তোর এই ভয় ঢর।’

রক্তিম ভাইয়ের জোর গলার কথা শুনে আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম।জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।রক্তিম ভাই এবার আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন।যার ফলে,আমি আরো গুটিয়ে নিয়েছি নিজেকে।রক্তিম ভাই আগের ন্যায় বলতে লাগলেন,
‘তোকে কিন্তু আমি ছাড়বো না রিমঝিম।তুই আমাকে এই কয়েকটা দিন জ্বালিয়ে মেরেছিস।আমার কতোটা কষ্ট হয়েছে তা তোকে বুঝিয়ে দিবো।’

গলায় একটার পর একটা চুমু খেতে লাগলেন রক্তিম ভাই।একদম উন্মাদের মতো আচরণ করছেন।গলা ছেড়ে ঠোঁটের পাশে ঠোঁট বুলাতেই রক্তিম ভাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।গলার চারপাশ টা জ্বলছে,রক্তিম ভাইয়ের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলোর প্রকোপে আমার গলার চারপাশ টা লাল হয়ে আছে।আয়নায় নিজের কিছুটা অবয়ব দেখতে পেলাম।রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম,
‘দাড়ি কেটে একদম আমার কাছে আসবেন না।আপনি তো কিছু বুঝতে পারেন না,যা বুঝি সব তো আমিই বুঝি।এই যে,গলা টা এখন মাত্রাতিরিক্ত ভাবে জ্বলছে।’

দরজার কাছে আসতেই রক্তিম ভাই কানের কাছে হিসহিসিয়ে বলে গেলেন,
‘আজকে রাতে,আমি কিছুই শুনবো না ডিয়ার।সুদেআসলে সব হিসেব আমি আদায় করে নিবো।কাল রাতেই নিয়ে নিতাম,শুধুমাত্র তনু আপু ছিলো বলে বেঁচে গেলে।তবে,তুমি ছাড় পাবে না,এই কয়েকদিনে খুব কষ্ট দিয়েছো।আজকে বুঝবে তুমি মিসেস রক্তিম।’

‘ছি ছি!নির্লজ্জ,দূষিত,খারাপ পুরুষ একটা।কথার ছিরি দেখলেই গা গুলিয়ে আসে।আসতে দিবো না আপনাকে আমার কাছে।শুধু ইটিশপিটিশ করার ধান্দা।’

রক্তিম ভাই ঠোঁট কাঁমড়ে হেসে উঠলেন।সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম।রক্তিম ভাইয়ের কথাটা ভেবেই লজ্জায় মুখটা নামিয়ে নিলাম।লোকটা না আসলেই অসভ্য।মুখে কোনো কথাই আটকায় না!!
—-
বাবলু ভাইয়ার সাথে নিহান ভাইয়াকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম।কিছুদিনের জন্য নিহান ভাইয়া উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলেন।নিহান ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হতেই মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টানলাম।নিহান ভাইয়াও হাসলেন।রক্তিম ভাই পাশেই বসে আছেন।ভ্রুজোড়া কুঁচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।নিহান ভাইয়া হাত উঁচু করে আমাকে হাই জানালেন।আমিও কম কিসে!মুচকি হেসে মুখ দিয়ে ইশারায় হাই বললাম।ব্যাস!!রক্তিম ভাই যেনো এতেই রাগে ফেটে যাচ্ছেন।যাক আমার কি তাতে!তবে,আমার বেশ মজা হচ্ছে রক্তিম ভাইকে দেখে।বুঝুক একটু বউকে অন্য কারোর সাথে কথা বলতে দেখলে কেমন অনুভব হয়।আমারও তো হয়েছিলো,ওইদিন রাতে রক্তিম ভাই আর তারিন আপুকে একসাথে দেখে।মনে হয়েছিলো,কেউ আমার হৃদয়ে সজোরে আঘাত করেছে।গা’য়ে হলুদের তোরজোর শুরু হয়ে গিয়েছে।একটু পরেই সবাই শাড়ি পড়া আরম্ভ করবে তাও আবার বাঙালী নিয়মে।মানুষের সমাগম থেকে রিমি আমাকে টেনে নিয়ে আসলো।হাতে দু’টো শাড়ি।রিমি আমাকে টেনে তোলার আগেই রক্তিম ভাইয়ের সাথে চোখের ইশারায় কি যেনো বললো।তা আমার চোখ এড়ায়নি।এই দু’ভাই বোন মিলে নিশ্চয় কোনো চুক্তি করেছে।সন্দেহ জনক কারবার সব!রিমি টানতে টানতে করিডোরের দিকটায় নিয়ে এলো।হাতে একটা কলাপাতার রঙের শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘তুই আমার রুমে চলে যা রিমিঝিম।আমি তোর রুমে যাচ্ছি।’

‘কেনো?তোর রুমে আমি যাবো কেনো?’

‘কারণ,তোর রুমে আমি এখন তনু আপুকে সাজিয়ে দিবো।আজকে,বাবলু ভাইয়া আমাকে চুপিচুপি বলেছেন তনু আপুকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে।আর,তুই তো এতো মানুষজনের মধ্যে শাড়িও পড়তে পারবি না।এইজন্যই তোকে আমার রুমে যেতে বলেছি।’

‘বাবলু ভাইয়া তো আমাকে বললেন না।আমি যে উনার শালি হয় তা কি ভুলে গেলেন নাকি।’

‘উফফ!রিমঝিম!বাবলু ভাইয়া আমাকে কাছে পেয়েছে তাই বলেছেন।এমনকি তোর নামটাও বলেছিলেন।কিন্তু,এখন তো আর সময় নেই হাতে।একটু পরেই তুই তনায়া আপুকে মেহেদী পড়িয়ে দিবি তার জন্য তো তোকে আগেভাগে তৈরি হতে হবে।তাই তো বলছি শীগগির গিয়ে আমার রুমে তৈরি হয়ে নে।’

রিমির কথায় মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম।কারণ,রিমি ভুল কিছু বলে নি।তনায়া আপু সহ বাকি সবাইকেই আমার মেহেদী দিয়ে দিতে হবে।এই কাজ টা আমার উপর পড়েছে।এমনকি,সবাইকে দেওয়ার পর মা,বড়মা সহ দাদিও দিবে বলেছে।সেই হিসেবে দেখতে গেলে আমার হাতের আজকে বারোটা বেজে যাবে।কেউ আমাকে নিস্তার দিবে না।
—-
রিমির রুমে ঢুকে দরজা টা বন্ধ করে দিয়েছি।শাড়িটা বিছানার উপর রেখে দিয়ে টি-শার্ট টা খোলে ইনার টা ঠিক করে ব্লাউজ টা পড়ে নিলাম।আচমকাই চোখ পড়লো বেলকনির দরজাটার দিকে।রক্তিম ভাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি কয়েক কদম পিছিয়ে গেলাম।চিৎকার দিতে গিয়েও পারলাম না।ব্যাপার টা ভালো দেখাবে না।রক্তিম ভাই আয়েস করে সিগারেট ফুঁকছেন।নাক,মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।রক্তিম ভাই মুচকি হেসে বললেন,
‘ভয় পেয়েছিলে মিসেস রক্তিম?আমাকে এইখানে একদন্ডও আশা করো নি তাই তো।’

‘তার মানে এইটা আপনার আর রিমির প্ল্যান ছিলো রক্তিম ভাই।এইজন্য,লিভিং রুমে দু’ভাইবোন ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলছিলেন।ব্যাপার টা আমি বুঝেও ধরতে পারি নি।’

‘একদমই!তুমি যা বুঝেছো তাই সঠিক।’

‘যাই হোক না কেনো আপনি বের হয়ে যান এখান থেকে।বাসা ভর্তি মানুষজন।যে কেউ দেখে নিলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।’

রক্তিম ভাই,তেড়ে আসলেন আমার দিকে।কোমর টা চেপে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে নিলেন।কটমট চাহনি নিক্ষেপ করে বললেন,
‘ওই নিহানের সাথে তোর এতো কথা কিসের রিমঝিম।তুই জানিস না আমি এইসব সহ্য করতে পারি না।’

‘কি লাগছে তো এখন।ঠিক আমারও এইরকম লেগেছিলো,যখন আপনি ওই তারিন আপুর সাথে চিপকে ছিলেন।আর,আমি তো শুধু কথা বলেছি,যদি জড়িয়ে ধরতাম তাহলেই ভালো হতো।’

‘কি বললি তুই রিমঝিম।আরেকবার রিপিট কর বলছি কথাটা।’

‘উফফ!রক্তিম ভাই সরুন তো!সিগারেটের স্মেল আসছে।’

‘আসুক!পারলে তোকে আমি সিগারেট খাওয়াবো হারামির বাচ্চা।বর থাকতে অন্য ছেলের সাথে কথা বলা তাও আবার বরের সামনে।’

‘নিজে মনে হয় খুব সাধু।আমি কথা বললেই দোষ।আর,আপনি যে তারিন আপুর হাতে খেয়েছেন সেটা আসলে কিছুই না।যত দোষ আমার বেলায়।জানেন রক্তিম ভাই এখন ইচ্ছে হয় আবার অবিবাহিত হয়ে যেতে।কিন্তু,এখন তা আর সম্ভব না।চাইলেই পারবো না।তবে,আফসোস হয় কেনো আপনাকে বিয়ে করেছি।যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে শয়তানি।’

রক্তিম ভাই আমাকে ছিটকে বিছানার মধ্যে ফেলে দিলেন।রুমে পর্দা গুলো টেনে দিয়ে প্রায় অন্ধকার করে ফেলেছেন।আমার পাশের জায়গা টা দখল করে নিয়ে আমাকে চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলেন।আলতো কণ্ঠে বলে উঠলেন,’সরি রাতের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলাম না।’আমি যতই নাড়াচাড়া করছি চলে আসার জন্য ততই আমাকে নিজের সাথে জাপটে ধরে রেখেছেন।আলতো হাতে কোমর টায় স্লাইড করছেন।মাথা তোলে নাভিতে কয়েকটা গাঢ় চুম্বন খেলেন।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।নিস্তব্ধ রুমটায় দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দই শোনা যাচ্ছে।পাল্লাক্রমে উঠানামা করছে।আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।রক্তিম ভাই কাছে আসলেই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে।দূরে ঠেলে দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।মানুষ টা যে আমার।শুধুই আমার।ভালোবাসলে আমাকেই বাসবে,আর বকলে আমাকেই বকবে।তার উপর,আমরা এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছি।আমাকে কাছে টেনে নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রক্তিম ভাইয়ের আছে।সেখানে আমি মানা করার কেউ না।এমনকি,আমার মানাতেই রক্তিম ভাই শুনবেন না তা আমার অজানা নয়।রক্তিম ভাই আমার হাতদুটো বিছানায় চেপে ধরলেন।বুকে মুখ গুঁজে দিয়েছেন।উফফ!রক্তিম ভাইয়ের অবাধ্যতা ক্রমশই বেড়েই যাচ্ছে।পা,দুটো ছটফট করতেই রক্তিম ভাই পা দুটোকে আঁটকে দিলেন।কানের লতিতে পরপর কাঁমড় বসালেন।রক্তিম ভাইয়ের হাতের বাঁধন হালকা হতেই আমি ঠেলেঠুলে রক্তিম ভাইকে সরিয়ে দিলাম।পাশ ফিরে শরীর টাকে গুটিয়ে হাত দিয়ে মুখ টাকে ঢেকে ফেললাম।লোক টা ভারী দুষ্টু।এই অবেলায় আমাকে আবার গোসল করতে হবে।রক্তিম ভাই পাতলা কাঁথা টা দিয়ে আমাকে সহ নিজেকে ঢেকে নিলেন।কাঁথার নিচেও তার হাত দুটো থেমে নেই।রক্তিম ভাই বেশ রোমান্টিক মুডে আছেন।যার,এক ডোজ আমাকে বুঝিয়ে দিলেন।পরের ডোজ অতি নিকটেই।কিন্তু,আমাকে এখন উঠতে হবে না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।রক্তিম ভাই আমার মতিগতি বুঝতে পেরে ফোন টা হাতে নিয়ে রিমিকে ফোন দিয়ে বললেন,
‘শোন রিমি!তোর ভাবি আমার সাথে,পারসোনাল টাইমে আছে।সো!তাকে এখন কেউ যেনো ডাকাডাকি না করে।সেটার দায়িত্ব তোকে দিলাম আমি।দায়িত্ব টা যত ভালো ভাবে পূরণ করতে পারবি ততো তাড়াতাড়ি ফুপি হতে পারবি।একটা বাচ্চা যখন আধো আধো গলায় তোকে ফুপি বলে ডাকবে তখন তোর কেমন অনুভূতি কাজ করবে তা নিশ্চয় তুই বুঝতে পারছিস।তাই,সেই অনুযায়ী দায়িত্ব টা কমপ্লিট কর।’

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফোন টা রেখে দিয়ে আমাকে পুনরায় চেপে ধরলেন।নাকে নাক ঘঁষে বললেন,
‘একটা বাচ্চা নেওয়াই যায়।তাকে মানুষ করার ক্ষমতা আমার আছে।আল্লাহ সেই ক্ষমতা অনেক আগেই আমাকে দিয়ে রেখেছেন।এখন শুধু বেবির আম্মু রাজি হলেই হলো,তাহলে এখন কোনো আর প্রটেকশন ব্যবহার করবো না।’

আমি লজ্জায় রক্তিম ভাইয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম।এখনো কলেজের গন্ডি টাই পার করতে পারলাম না সেখানে আবার আরেকটা বাচ্চা।রক্তিম ভাইয়ের মাথা নির্ঘাত আলুথালু হয়ে গিয়েছে।না হলে,কি আর এইসব বলতেন।
—-
আজকে ছাঁদের পরিবেশ টাই অন্যরকম।তনায়া আপুর গা’য়ে হলুদের প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই হলুদ,সবুজ শাড়ি পাঞ্জাবীতে সজ্জিত থাকলেও তাদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হলাম আমি।শাড়ি পড়ার সাহস হয় নি।শাড়ি পড়লেই পেটে,কোমরে রক্তিম ভাইয়ের ভালোবাসার চিহ্ন গুলো ভেসে উঠার একটা ভয় ছিলো।তাই,সাহস আর হয়ে উঠে নি।সিল্কের একটা গাউন পড়ে আছি।সবাই যখন আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আমি কেনো শাড়ি পড়ি নি তখন রিমি এসে ইনিয়েবিনিয়ে আরেক কথা বলে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।সেসব দেখে রক্তিম ভাই শুধু মুচকি মুচকি হাসছিলেন।তনায়া আপুর দু’হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর নাচের প্রোগ্রাম হবে।আবির ভাই নাকি কোকা কোলা গান দিয়ে নাচবে।তনায়া আপুর গা’য়ে হলুদ উপলক্ষে এই গান দিয়ে কমপক্ষে দশবারে মতো নাচ প্র‍্যাক্টিস করেছে।রক্তিম ভাই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।মাঝেমধ্যে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে।শুধু তাই নয়,ঠোঁট দিয়ে ইশারা করে চুমুর যেনো বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন।যার ফলে,এইখানে থাকতে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।পাশ থেকে তনায়া আপু নাক ফুলিয়ে বললো,
‘তোর লজ্জার জন্য না জানি আমার মেহেদী টা ভেস্তে যায়।আমাকে মেহেদী দিয়ে দেওয়ার পরেই না হয় লজ্জা পাস।’

তনায়া আপুর কথা শুনে মনে মনে বলে উঠলাম,
‘এই রক্তিম ভাই টাও খুব বজ্জাত।সবার সামনে এইভাবে আমাকে হেনেস্তা করার কোনো মানে আছে!!আমি যে লজ্জা পাই উনি কি বুঝেও না বুঝার ভান করে এইসব করেন!!’

সব কিছুর মাঝে আরো একটা কথা কি!!!!!!তারিন আপু খুব ফুঁসছেন।রাগে সুন্দর মুখশ্রী টা একদম টসটসে হয়ে আছে।অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।মনে হচ্ছে আমাকে চোখ দিয়েই শেষ করে দিবেন।হঠাৎ অনুভব করলাম,আমার খুব ভালো লাগছে!খুব ভালো বললেও ভুল হবে,তবে মাত্রাতিরিক্ত ভালো বললে ঠিক হবে।কারণ,আমার ঠিক সেইরকমই লাগছে।কেমন যেনো ইচ্ছে করছে মুক্ত আকাশে পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here