— বাবা আমি কিছুতেই এই বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবোনা। আমার কি এমন কম আছে যে আমাকে শেষে একটা বিধবা মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে?
— মেয়েটার বিয়ের ৫ দিন পরেই তার স্বামী এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। মেয়েটা দেখতেই খারাপ না। শিক্ষিত স্মার্ট আর খুব ভদ্র একটা মেয়। এমন মেয়ে লাখে একটা মিলে বাবা।
— তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসেনা। আমি কিছুতেই একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করতে পারবোনা। তাকে বউয়ের অধিকার দিতেও আমি পারবোনা বাবা। আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন। আমি আপনার এই কথা রাখতে পারলাম না।
এই কথা বলে ধ্রুব এখান থেকে চলে গেলো। মিজান সাহেব চিন্তায় পড়ে গেল এখন সে কি করবে। এই দিকে সে তো তিশার বাবাকে কথা দিয়ে দিছে সে তিশাকে তার ঘরের বউ করে নিয়ে আসবে। সে কোন মুখে তিশার বাবাকে না করে দিবে?
অন্যদিকে তিশা তার মা-বাবাকে বলছে — তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে এতো উঠেপড়ে লাগলে কেন?আমি কি তোমাদের কাছে বোজা হয়ে গিয়েছি?
তিশার বাবা হেলাল সাহেব বলল — দেখ মা আমরা তোর ভালোর জন্য তোর বিয়ে দিতে চাইছি। তোর সামনে ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। আমরা কি চিরকাল বেচে থাকবো? আমাদের কিছু হয়ে গেলে তখন তোর কি হবে? তখন তোকে কে দেখে রাখবে? আমাদের তো বয়স হচ্ছে মা।
— বাবা, তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করেছো। যদি বিয়ের পরে আবার কোনো ঝামেলা হয় তখন কি হবে?
— কোনো ঝামেলা হবেনা। ছেলেটা অনেক ভালো। দেখতেই খারাপ না। অনেক ভালো একটা ছেলে।
–বাবা আমি আর বিয়ে করতে চাইনা। আপনি না করে দিন। আর ছেলেটা যদি যানে আমি বিধবা তখন কি ছেলেটা আমাকে মেনে নিবে?
— ছেলেকে তোর ব্যপারে সব কিছুই বলা হয়েছ। মা তুই আর না করিস না প্লিজ। তুই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যা। ছেলে ও তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
— সরি বাবা আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না
এই কথা বলে তিশা নিজের রুমে চলে গেলো।
তিশার বাবা আর ধ্রুবর বাবা ছোট বেলার বন্ধু। হেলাল সাহেব মিজান সাহেবকে কল দিল।
মিজান সাহেব কল ধরে বলল — কিরে ওই দিকের কি অবস্থা? তোর মেয়ে কি বিয়েতে রাজি হয়েছে?
— না, মেয়েকে তো রাজি করাতেই পারছিনা। তার এক কথা সে এখন বিয়ে করবেনা।
— ধ্রুব ও বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছেনা।
— কিছু একটা করতে হবে আমাদের। কিন্তু কি করা যায়?
দুজনেই চিন্তা করতে থাকে। কি করলে ধ্রুব আর তিশা বিয়ে করতে রাজি হবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে মিজান সাহেবর মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে। তারপর সে বুদ্ধির কথা বলল হেলাল সাহেবের কাছে।
হেলাল সাহেব মিজান সাহেবের কথা শুনে বলল — এটা কি ঠিক হবে? জোর করতে গেলে যদি কোনো সমস্যা হয়ে যায় তখন কি হবে? আর ওরা যদি আমাদের কথায় রাজিও হয়ে যায় বিয়ের পরে কি ওঁরা সুখে থাকতে পারবে?
— আরে এতো চিন্তা করিস কেন? দেখবি ওরা ঠিকই দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলবে।
— তাই যেনো হয়, আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারবো না বন্ধু।
— তোর মেয়ে কি একা তোর মেয়ে? তিশা তো আমারো মেয়ে। তোর এতো কিছু চিন্তা করতে হবেনা তোর মেয়ে আমার বাড়িতে এসে সুখেই থাকবে। আর দেখবি ঠিকই তারা এক সাথে থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
— তাই যেনো হয়। আমার মেয়েটা এমনি অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি আর আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারবোনা।
— তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। তোকে যেটা বলছি তুই সেটা কর আর তোর মেয়েকে রাজি করা তাড়াতাড়ি।
তারপর কল কেটে দেয়।
মিজান সাহেব ধ্রুবর কাছে গিয়ে বলল — ধ্রুব তুই কি আমার কথা রাখবি না? আমি যে সবাইকে বলছি তাহলে আমি এই মুখ মানুষের সামনে কি করে দেখাবো? তার ছেয়ে ভালো আমি মরে যায়। কারণ আমি অপমান সহ্য করতে পারবোনা। এমন অপমানের থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো।
— বাবা কি বলছ এসব?
— ঠিকি বলছি।
এসব বলছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ধ্রুবর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব তার বাবার চোখের পানি দেখে আর না করতে পারেনি। তারপর ধ্রুব তার বাবাকে বলল — বিয়ের ব্যবস্থা করুন আমি বিয়েতে রাজি।
এই কথা বলে ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। ধ্রুব বের হওয়ার পরে মিজান সাহেব একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
ওনার স্ত্রী বলল – কি ব্যাপার একটু আগে দেখলাম কান্না করছেন এখন দেখি আবার হাসছেন।
— সেটা তুমি বুঝবেনা। আমি গিয়ে ওইদিকের খবর নিয়ে আসি।
তিশাও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো তার বাবার ইমোশনাল কথা শুনে। আর খুব ভালো ভাবে তাদের বিয়েও হয়ে যায়। বিয়েতে দুই পরিবারের সবাই খুশি থাকলেও ধ্রুব মোটেও খুশি না, কারণ তার সাথে একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে তার বন্ধুদের ও লজ্জায় বিয়ের দাওয়াত দিতে পারেনি। কারণ তার বন্ধুরা যদি যানে সে একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করছে তাহলে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। আর মজা নিবে। সেই ভয়ে ধ্রুব তার বন্ধুদের বিয়েতে ইনভাইট করে নাই।
এই দিকে তিশা কোণে সেজে বসে আছে বাসর ঘরে। তিশা এটা দ্বিতীয় বাসর হলে-ও সে অনেক ভয় পেয়ে আছে। কারণ সে এখনো ধ্রুবকে দেখে নাই। আর মানুষটা ঠিক কেমন হবে সে সেটা নিয়েও অনেক চিন্তিত। তিশা একটা ঘুমটা টেনে বসে আছে খাটের উপরে। কোণের সাজে তিশাকে অসাধারণ সুন্দরী লাগছে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। পড়নে লাল শাড়ি যেনো ঠিক একটা লাল পরি। অপেক্ষা করছে তার স্বামী ধ্রুব কখন বাসর ঘরে আসবে। কিন্তু ধ্রুবর তো কোনো খোঁজ নেই। দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো। কিন্তু ধ্রুব এখনো বাসর ঘরে আসে নাই। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে তিশার চোখেও অনেক ঘুম। তার উপরে সারাদিন অনেক দখল গিয়েছে। মেয়েটা ঘুমুতেও পারছেনা। কিছুক্ষণ পর পর তার চোখে বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। তাও সে জেগে থাকার চেষ্টা করে বসে থাকে ধ্রুবর অপেক্ষায়।
সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করলো ধ্রুব। তিশা দরজার শব্দ শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার স্বামী এসেছে। সে উঠে ধ্রুবর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় ধ্রুব পা সরিয়ে নেয়। তিশা অবাক হয়ে গেলো ধ্রুবর এমন কাজ দেখে। তারপর তিশা নিজে থেকেই দাঁড়িয়ে গেলো। আর সে বুঝতে পেরেছে ধ্রুব ড্রিংকস করে বাসায় এসেছে। তার মুখ থেকে কেমন বাজে একটা গন্ধ অনুভব করতে পারে তিশা।
তিশা বলল — আপনি ড্রিংকস করে এসেছেন?
তখন ধ্রুব বলল — বাড়িটা আমার, আমার বাড়িতে আমি কি ভাবে আসবো তার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে নাকি? দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তার মানে এই নয় যে আমি একটা বিধবা মেয়ের সাথে থাকব। আর একটা বিধবা মেয়েকে নিয়ে সংসার করবো। আমি আপনাকে কখনো স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা।
ধ্রুবর মুখে এমন কথা শুনে তিশার মন খারাপ হয়ে গেলো। তিশা ধ্রুবর মুখে এসব কথা শুনবে সে আশা করেনি। তিশা মন খারাপ করে বলল — তাহলে আপনি কেন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে গেলেন? আপনি না করেন নাই কেন? যে আপনি এই বিয়েতে রাজি না! আপনি এটা বললেই তো আর আপনাকে কোনো বিধবা মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে হতোনা।
— আমি আমার বাবার জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আমি এই বিয়ে করার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আর আমি বিয়ে করতেও চাইনি।
এই কথা বলে ধ্রুব মাতাল অবস্থায় হাটতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো তখন তিশা ধ্রুবকে ধরে ফেললো।
ধ্রুব রাগী চোখ নিয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে বলল — আপনার সাহস তো কম না আমাকে স্পর্শ করছেন! নেক্সট টাইম আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবেননা। আপনি আপনার মতো থাকবেন আমি আমার মতো থাকবো ওকে?
–আমাদের তো বিয়ে হয়েছে। এখন তো আর কিছু করার নেই আমাদের। আমাদের তো এখন এক সাথে থাকতে হবে। আর আপনি আপনার বাবাকে না করতে পারলে আমাকে বলতেন আমি এই বিয়ে ভেঙে দিতাম। কেন শুধু শুধু বিয়ের নাটক করলেন?
চলবে?
#জানি_তুমি_ফিরবে
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ