#জানি_তুমি_ফিরবে
২+৩
[২য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
— আমি বিয়ে নিয়ে কোনো নাটক করিনি। আমার বাবার কথায় আপনার মতো একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করতে হইছে। নাহলে আমার কোনো ইচ্ছে ছিলনা যে আমি শেষে একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করবো। আমার অবস্থা এতোটাও খারাপ না হয়নি।
–আপনি আমাকে বার বার বিধবা বলে অপমান করছেন?
— হাহা আপনার কি অপমানবোধ আছে? আমি আর আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিনা আমি ঘুমব।
এই কথা বলে ধ্রুব মাতাল অবস্থায় খাটের উপরে শুয়ে পড়লো। তিশার চোখের পানি টলমল করছে ধ্রুবর এমন ব্যবহারে। তিশা গিয়ে সোফায় শুয়ে থাকে। তিশা ঘুমাতে গিয়েও ঘুমাতে পারছেনা। ধ্রুবর বলা কথা গুলো বার বার মনে পড়ছে তিশার। তিশা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় তিশার। তিশা ফ্রেশ হয়ে এসে বসে থাকে। একটু পরে সে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি রান্না করছে। তিশা তার শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে সালাম করে বলল — মা আমাকে দিন আমি রান্না করে দিচ্ছি।
— না মা তুমি রেস্ট নাও। আর তুমি এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আসতে গেলে কেন?
— ঘুম ভেঙে গেছে। আর আমি সব সময় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যাই।
— ওহ আচ্ছা।
— মা আমি আপনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে চাই।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তারা বউ শ্বাশুড়ি মিলে রান্না করতে শুরু করলো। রান্না শেষ করে ধ্রুবর আম্মু বলল — বউমা তুমি গিয়ে ধ্রুবকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দাও।
— ঠিক আছে মা।
এই কথা বলে তিশা ধ্রুবর রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে ধ্রুব এখনো ঘুমিয়ে আছে। তিশা ধ্রুবকে ডাকতে থাকে। কিন্তু ধ্রুব কোনো রেসপন্স করছেনা। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এবার তিশা আর কোনো উপায় না পেয়ে ধ্রুবকে একটা ধাক্কা দিতেই ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যায়। আর সে রাগী চোখ নিয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে বলল — কি সমস্যা আপনার?এতো সকাল সকাল আমাকে ঘুম থেকে ওঠালেন কেন?
— অনেক বেলা হয়েছে নাস্তা করবেন না? উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসুন।
–আপনি গিয়ে খেয়ে নিন আমার লেট হবে।
— আমি একা খেতে গেলে সবাই কি ভাব্বে? দেখুন আমাদের মধ্যে যাইহোক না কেন ওনাদের বুঝতে দেওয়া যাবেনা। নাহলে ওনারা খুব কষ্ট পাবে।
— পেলে পাবে আমার কিছু করার নাই। আমি তাদের কথায় বিয়ে করছি তার মানে এটা নয়যে তাদের কথায় আমাকে চলতে হবে।
— আজকের দিনটা না হয় সবার সাথে নাস্তা করবেন প্লিজ৷
ধ্রুব আর কোনো কথা না বলে মুখে একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে সে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে দুজনে এক সাথে নাস্তা করতে চলে গেলো। দু’জনকে এক সাথে দেখে ধ্রুবর বাবা-মা খুশি হয়ে যায়। আর তাদের দিকে তাকিয়ে মিজান সাহেব তার স্ত্রীকে বলল — দেখেছো দু’জনকে খুব ভালো মানিয়েছে।
ধ্রুব আর তিশা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তারপর সবাই নাস্তা খাওয়া শুরু করে দিল। নাস্তা খেতে খেতে মিজান সাহেব বলল — ধ্রুব তোর কি কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?
— বুঝলাম না?
— আমি হানিমুনের কথা বলছি। তিশাকে নিয়ে হানিমুন থেকে ঘুরে আয় কিছুদিনের জন্য। তোদের যেখানে ইচ্ছে যেতে পারিস।
— বাবা আমার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নাই। আর আমি কাল থেকে অফিসে জইন করবো।
— গরে নতুন বউ রেখে তুই অফিস করবি মানে কি?তুই এখন অফিসে যেতে হবে না। আর আমরা খুব তাড়াতাড়ি নাতিনাতনির মুখ দেখতে চাই।
এই কথা শুনে ধ্রুব আর খাবার না খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে। মন মরা হয়ে খাবার টেবিলে বসে থাকে তিশা। ধ্রুবর বাবা-মা ধ্রুবর এমন কাজ দেখে অবাক হয়ে গেলো। আর তিশার দিকে তাকিয়ে দেখে সে মন খারাপ হয়ে করে বসে আছে।তিশার এমন অবস্থা দেখে মিজান সাহেব বলল – মা ধ্রুব একটু এমনি চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলেটা খুব রাগি হলেও তার মন অনেক ভালো।
তিশা কিছু না বলে খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। তিশা রুমে গিয়ে দেখে ধ্রুব কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে। ধ্রুব তিশাকে দেখে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। তিশা এসবে কান না দিয়ে রুমের সব কিছু ঘুছিয়ে ঠিক করতে থাকে। রুম ঘুছিয়ে তিশা খাটের এক কোণে বসে থাকে। অনেক্ষন পরে ধ্রুব রুমে আসলে তিশা ধ্রুবকে বলল — আপনার এই ভাবে সবার সামনে থেকে উঠে আশা ঠিক হয়নি। আপনার এমন ব্যবহার সবার কাছেই খারাপ লাগছে।
— তো আমি কি বসে বসে তাদের ড্রামা দেখবো নাকি? আমার কোনো কাজে নাগ গলাতে আসবেনা বলে দিলাম। আর আমি আপনাকেও সহ্য করতে পারছিনা আপনি দোয়া করে আমার সামনে আসবেন না।
এই কথা বলে ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। তিশা বসে বসে কান্না করতে থাকে। তিশা বুঝতে পারছেনা ধ্রুব কেন তার সাথে সব সময় এমন খারাপ আচরণ করে? দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে আসলো কিন্তু ধ্রুব এখনো বাসায় ফিরে আসেনি। তিশা ধ্রুবকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ধ্রুব ফোন রিসিভ করছেনা। ধ্রুবর আম্মু রহিমা বেগম তিশার কাছে এসে বলল — বউমা ধ্রুব তো এখনো বাসায় ফিরে আসেনি।
— হ্যাঁ মা, আমি ফোন দিচ্ছি ফোন ও রিসিভ করছেনা। মনে হয় কোনো কাজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেছে।
— এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা। বউমা আমার ছেলেকে ঠিক করার দ্বায়িত্ব কিন্তু তোমার। তুমি ওঁকে ঠিক করবে।
তিশা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।তিশাকে এই ভাবে দেখে রহিমা বেগম বলল — তোমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
— না মা।
— ওহ আচ্ছা, তুমি থাকো আমি আসছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।
তারপর রহিমা বেগম রুম থেকে চলে গেলো। রহিমা বেগম যাওয়ার পরে তিশা আরো অনেকবার ধ্রুবকে ফোন দিলো কিন্তু কোনো রেসপন্স ফেলো না। তারপর সে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিজের রুমে শুয়ে পড়লো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো কিন্তু এখনো বাসায় ফিরে আসেনি ধ্রুব। ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে গেলো কিন্তু ধ্রুবর আসার কোনো নাম নেই। সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো।
তিশা তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলল — আপনারা ঘুমিয়ে পড়ুন আমি ওনার অপেক্ষায় থাকবো। আপনারা এই ভাবে রাত জেগে থাকলে আপনাদের শরীর খারাপ করবে। আপনারা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
ধ্রুবর বাবা-মা আর কিছু না বলে তারা নিজেদের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আর তিশা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধ্রুবর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দরজার কলিং বেলে এর শব্দ শুনে তিশা তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেখে ধ্রুব মাতাল হয়ে আছে আর তার সাথে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের কাধের উপরে ভর দিয়ে আছে ধ্রুব। ছেলেটা আর মেয়েটা তিশাকে দেখে চিনতে পারলোনা।
তিশা তাদের কাছে গিয়ে বলল – ওনার কি হয়েছে?
ছেলেটার নাম জয়। জয় বলল — আসলে ও একটু বেশি ড্রিংকস করে ফেলছে।
— ধন্যবাদ আপনাদের। আমি ওনাকে রুমে নিয়ে যাই এবার।
মেয়েটা বলল — আপনি কে? আপনাকে তো এই বাসায় আগে কখনো দেখিনি।
তিশা কিছু বলতে যাবে তখনি ধ্রুব বলল — ও আমাদের বাসায় কাজ করে। তোরা এখন আমাকে আমার রুমে নিয়ে যা তো। কাজের মেয়ের সাথে এতো কথা বলার প্রয়োজন নেই।
ধ্রুব মুখে এমন কথা শুনে তিশা আর কোনো কথা বলল না।
চলবে,
#জানি_তুমি_ফিরবে
[৩য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ধ্রুবর মুখে কাজের মেয়ে কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগে তিশার। তিশা কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে রুমের দিকে চলে গেলো। মাতাল অবস্থায় খাটের উপরে শুয়ে থাকে ধ্রুব। তিশা ভালো করে ধ্রুবকে খাটের উপরে শুয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে থাকে। আর ধ্রুবর বলা কথা গুলো মনে পড়ে তিশার চোখ বিজে আসলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে তিশা। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিশা সবার জন্য নাস্তা রেডি করে ধ্রুবর জন্য চা নিয়ে এসে ধ্রুবর পাশে রেখে অন্য কাজ করতে চলে যায় তিশা।
অনেক্ষন পরে ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যায়। আর সে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তিশা তার জন্য চা রেখে চলে গেছে। ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে চা পুরো ঠান্ডা হয়ে আছে। এসব দেখে ধ্রুব চিৎকার দিতে শুরু করে। ধ্রুবর চিৎকারের শব্দ শুনে তিশা তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে আসে। রুমে এসে বলল — কি হয়েছে এই ভাবে চিৎকার করছেন কেন আপনি?
ধ্রুব মুখে কোনো কথা বলে চায়ের কাপ সোজা তিশার দিকে ছুড়ে মারে আর বলতে থাকে – এসব কি? চা এমন ঠান্ডা হয়ে আছে কেন?
— চা তো অনেক আগে দিয়ে গিয়েছিলাম তাই ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি গরম করে এনে দিচ্ছি।
— আমি আর চাই খাবোনা।
এই কথা বলে ধ্রুব নিজের ফোন বের করে ছাদের উপরে চলে গেলো। তিশা নিজের রুম পরিষ্কার করতে থাকে। এমন সময় মিজান সাহেব রুমে এসে তিশাকে বলল — তিশা ধ্রুব কোথায়?
— উনি তো ছাদে গিয়েছে মনে হয়।
— ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। আর হ্যাঁ শোনো।
— জ্বী বলুন!
— তোমার বাবা কল দিয়েছে। সে মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে তার বাসায় যেতে বলছে। তুমি আর ধ্রুব গিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসো।
এমন সময় ধ্রুব ও রুমে প্রবেশ করলো। ধ্রুব বলল – কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে বাবা?
— তুই তিশাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য তিশার বাড়ি থেকে ঘুরে আয়।
— আমি যেতে পারবোনা। উনি গেলে যেতে পারে। আমার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
— তিশা একা যাবে মানে কি? নতুন বিয়ে হইছে তোদের তোরা এক সাথে যাবি। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না তোরা রেডি হয়ে নে আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি গাড়ি রেডি রাখতে।
এই কথা বলে ধ্রুবকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন মিজান সাহেব। এদিকে রাগে শরীর জ্বলতে থাকে ধ্রুবর। কেউ আর কারোর সাথে কথা না বলে রেডি হয়ে নেয় দুইজনে। রেডি হয়ে নিচে চলে আসে তারা। ধ্রুবর বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা দুজনেই। একটু পরে ড্রাইভার তার নিজ গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে। তিশা আর ধ্রুব দুজনেই চুপচাপ হয়ে বসে আছে। ধ্রুব তার ফোন নিয়ে ব্যাস্ত আর তিশা বাহিরের দৃশ্য দেখছে। ধ্রুব একটু তিশার দিকে তাকাতেই দেখলো তিশার চুল গুলো হাওয়ায় ভাসছে। বার বার তিশার চুল তিশার মুখের সামনে চলে আসছে। আর তিশা বার বার হাত দিয়ে তার চুল সরিয়ে দিচ্ছে। এসব ধ্রুব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ধ্রুব যে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা তিশা এখনো খেয়াল করলো না। একটু পরে ধ্রুব আবার নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
একটু সামনে যেতেই তিশা ড্রাইভারকে বলে গাড়ি দাড় করালো।
ধ্রুব বলল — এখানে গাড়ি দাড় করালেন কেন?
— আপনি গাড়ি থেকে নামুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ধ্রুব আর কোনো প্রশ্ন না করে গাড়ি থেকে নেমে তিশার পিছনে হাটতে শুরু করে। একটু সামনে যেতেই তিশা দাঁড়িয়ে যায় আর সে ধ্রুবকে বলতে থাকে — দেখুন আমাদের সম্পর্ক টা যেমনি হোক না কেন প্লিজ আমার মা-বাবার সামনে একটু অভিনয় করবেন। যাতে তারা না বোঝে আমাদের সম্পর্ক টা ঠিক নাই। তারা যদি এসব বুঝে তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। আমি চাইনা আমার জন্য আমার মা-বাবা কষ্ট পায়। সবার সাথে একটু ঠিক ভাবে কথা বলবেন। প্লিজ আমাকে শুধুই এই টুকু হেল্প করুন।
— ঠিক আছে।
— ধন্যবাদ।
— হুম এবার চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো। তারপর ড্রাইভার আবার তার নিজ গতিতে গাড়ি চালাতে শুরু করে দিলো। তিশা এখনো একটু ভয় পেয়ে আছে ধ্রুবর জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা বাসায় পৌছে গেলো। গাড়ির শব্দ শুনে তিশার মা-বাবা বেরিয়ে চলে আসে তাদের রিসিভ করার জন্য। তিশা নেমে তার মা-বাবাকে সালাম করলো। ধ্রুবও সালাম করতে যাবে এমন সময় হেলাল সাহেব ধ্রুবর হাত ধরে বলল — লাগবেনা বাবা দোয়া করি তোমরা সুখী হও।
ধ্রুবকে সালাম করতে দেখে তিশা অনেক অবাক হয়ে গেলো। আর সে মনে মনে অনেক খুশি হলো। তিশা ভাবতেও পারেনি যে ধ্রুব তার মা-বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে।
হেলাল সাহেব বলল — তা বাবা তুমি কেমন আছো?
হেলাল সাহেবের স্ত্রী বলল — আগে ওদের ভিতরে নিয়ে আসেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে নাকি?
তারপর সবাই মিলে বাসায় ভিতরে চলে গেলো।
তিশার আম্মু বলল — তোমরা কথা বলো আমি গিয়ে নাস্তা রেডি করে নিয়ে আসি।
হেলাল সাহেব বলল — তা বাবা তোমার মা-বাবা কেমন আছে?
— জ্বী সবাই ভালো আছে। আপনার শরীর ঠিক আছে?
— হুম বাবা।
তখন হঠাৎ করে একটা লোক তাদের সামনে চলে আসে। আর লোকটার নাম তুহিন। তুহিন তিশার মামা। তার আবার একটা সমস্যা আছে উনি কানে কম শোনেন। তুহিন বিয়ের সময় আসতে পারেনি তাই ধ্রুবর সাথে তুহিনের পরিচয় হয়নি। তুহিন এসে হেলাল সাহেবের পাশে বসলো।
হেলাল সাহেব ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল — ধ্রুব বাবা ও হচ্ছে তুহিন আমার এক মাত্র শালা। বিয়ের সময় আসতে পারেনি।
— ওহ আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
তহিন কোনো কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে বলল — তো কেমন আছো জামাই?
— ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন মামা?
— আরে না জামাই আমি একটু আগে খেলাম এখন আবার কি খাবো? তোমরা খাও আমার খিদে নাই।
তুহিনের কথা শুনে ধ্রুব হা হয়ে তাকিয়ে আছে৷ সে কি বলল আর উত্তর কি বলল! তখন তিশা একটু জোরে বলল — মামা উনি আপনাকে খাবার খেতে বলে নাই কেমন আছেন সেটা জিজ্ঞেস করছে।
— ওহ আচ্ছা। আমি ভালো আছি জামাই।
হেলাল সাহেব বলল – ওহ বাবা তোমাকে বলতেই ভুলে গিয়েছি ও একটু কানে কম শুনে।
তহিন বলল — জামাই তুমি কি করো?
— আমি বাবার ব্যাবসার দেখাশোনা করি।
— কি? দুনিয়ায় কি আর কোনো কাজ নাই শেষ মেস আমার দুলাভাই একটা রিকশা আলার কাছে আমার এক মাত্র ভাগনি কে বিয়ে দিয়েছে।
হেলাল সাহেব বলল — কি বলিস তুই এসব? ও ব্যাবসা করে সেটা বলছে।
— ওহ, সরি বাবা কিছু মনে করোনা। তা তোমার বাসার সবাই কেমন আছে?
— ভালো।
— খালু! জামাই আমি তোমার মামা হই খালু না। আমি তোমার শ্বশুরের এক মাত্র শালা। আর আমি তোমার এক মাত্র মামা শ্বশুর খালু ডাকো কেন?
তিশা — উফফফ মামা উনি ভালো বলছে।
এই দিকে তুহিনের কথা শুনে ধ্রুব রাগ উঠে যাচ্ছে। সে কিছু না বলে সহ্য করছে সব কিছু। আর রাগে তার শরীর ফেটে যাচ্ছে। আর মনে মনে বলছে – এ আমি কোথায় এসে পড়লাম। আমি বলি একটা আর উনি বলে আরেকটা।
এর মধ্যে তিশার আম্মু সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। নাস্তা খাওয়া শেষ করে ধ্রুবকে নিয়ে তিশা তার রুমে চলে যায়।
চলবে?