#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ৬]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
তিশা ধ্রুবর ফোনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনে হাত দিবে এমন সময় ধ্রুব ফোন হাতে নিয়েই কল রিসিভ করে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তিশা কিছুক্ষণ বসে থেকে সেও ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে ধ্রুব রুমে জামা কাপড় চেঞ্জ করে রেডি হচ্ছে। দেখেই মনে হচ্ছে কোথাও যাবে ধ্রুব। তিশা চুল মুছতে মুছতে ধ্রুবর কাছে গিয়ে বলল — আপনি কি কোথাও বের হচ্ছেন?
— হুম।
— ওহ নাস্তা খেয়ে যাবেন আপনার জন্য নাস্তা রেডি করে রাখছে।
— আমি বাহিরে খাবো।
— বাহির খাবারে অনেক সমস্যা হতে পারে। খেয়ে যান বাসা থেকে।
— এতো আধিক্ষেতা আমার ভালো লাগে না ওকে? আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমার কোনো বিষয় নিয়ে আপনি কথা বলবেন না। আমার যেটা ইচ্ছে আমি সেটাই করবো। আমি নিজের মতো থাকতে পছন্দ করি। আমাকে আমার মতো থাকতে দেন। সো নেক্সট টাইম আমার কোনো কিছু নিয়ে আপনি জোর খাটাবেন না। আমি আপনাকে এমন অধিকার দেয়নি যে আপনি আমার উপরে জোর খাটাবেন।
তারপর ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। তিশা খাটের উপরে বসে রইলো অনেক্ষন। আর তিশা মনে মনে ভাবতে থাকে ধ্রুবর কি অন্য কারোর সাথে রিলেশন আছে? ধ্রুবর ব্যবহার দেখে এমন মনে হয় সে হয়তো অন্য কাওকে ভালোবাসে। না হলে সে কেনো তার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করে? আর কি আছে ওই নাম্বারে যে ওই নাম্বার থেকে কল আসলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়! আর অন্য যেকোনো নাম্বার থেকে কল আসলে তো উনি রুমে বসেই কথা বলে। নাকি ওই নাম্বার টা ওনা গার্লফ্রেন্ড এর? ওনার যদি অন্য কারোর সাথে রিলেশন থাকে তাহলে তো আমি এখানে খুজলে কোনো ক্লু তো অবশ্যই পাবো।
এসব ভাবতে ভাবতে তিশা দাঁড়িয়ে গেলো। আর সে পুরো রুম খুজতে থাকে। কিন্তু ওই রকম কোনো কিছুই ফেলো না তিশা।
অন্যদিকে ধ্রুব তার বন্ধুদের কাছে চলে গেলো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ করে তার একটা বন্ধু বলল — ধ্রুব আজকে তুই আমাদের খাওয়াবি।
— কোন উপলক্ষে?
— কোনো উপলক্ষ বুঝিনা। তুই যা গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে আয় আমাদের জন্য।
— ওকে ঠিক আছে।
এই কথা বলে ধ্রুব সবার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আনতে চলে গেলো রাস্তার ওপাশে। আইসক্রিম নিয়ে ধ্রুব বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা পার হচ্ছে। এমন সময় একটা ট্রাক খুব দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। গাড়িটি খুব জোরে জোরে হর্ণ বাজাতে থাকে। কিন্তু হর্ণ এর শব্দ ধ্রুবর কান অব্দি আসছেনা। ট্রাক যখন ধ্রুবর খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন ধ্রুবর বন্ধুরা দেখে ধ্রুব ধ্রুব বলে চিৎকার করতে থাকে। এবার ধ্রুব সবার চিৎকার শুনে আর ট্রাকের দিকে তাকাতেই সাথে সাথে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধ্রুব রাস্তার এক পাশে ছিটকে পড়ে। ধ্রুবর পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। তার শরীরে অনেক যায়গা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। ধ্রুবর চোখ ধিরে ধিরে ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে। তার চোখ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। একটু পরে ধ্রুব তার চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ধ্রুবর বন্ধুরা তাড়াতাড়ি করে ধ্রুবর কাছে ছুটে আসে। আশেপাশে অনেক মানুষ জোড় হয়ে যায়। ধ্রুবর বন্ধুরা ধ্রুবকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে চলে যায়। হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন নার্স আর ডাক্তার চলে আসে। ধ্রুবর এমন অবস্থা দেখে ধ্রুবকে সাথে সাথে আইসিইউতে নিয়ে চলে যায়। ধ্রুবর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেওয়া হয়।
ধ্রুবর বন্ধুরা ধ্রুবর বাসায় কল করতেই ধ্রুব আম্মু ফোন রিসিভ করলো। তার তাকে ধ্রুবর এক্সিডেন্ট এর কথা বলার সাথে সাথে তিনি একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তার চিৎকার শুনে তিশা আর মিজান সাহেব বের হয়ে এসে দেখে ধ্রুবর আম্মু অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরের উপর পড়ে আছে৷ তিশা তার শ্বাশুড়ির চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনল। ধ্রুবর আম্মু মিজান সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দিল।
— কি হয়েছে তোমার হঠাৎ করে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে কেন?
— ধ্রুব।
— ধ্রুবর কি হয়েছে?
— ওগো ধ্রুব নাকি এক্সিডেন্ট করছে।
ধ্রুবর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে তিশার আর মিজান সাহেবের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
মিজান সাহেব বলল — কি বলছো এসব? কে বলছে তোমাকে এসব?
— আমাকে ধ্রুবর বন্ধু ফোন দিয়ে বলল।
এবার তাড়াতাড়ি করে মিজান সাহেব সেই নাম্বারে আবার কল দিলো। সাথে সাথে কল রিসিভ করলো ধ্রুবর বন্ধ সিয়াম।
সিয়াম কল রিসিভ করে বলল — হ্যালো।
— বাবা আমার ছেলের কি হইছে?
— আংকেল ধ্রুবর এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। আমরা ওঁকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসছি। ওর চিকিৎসা চলছে।
— কি বলছ এসব?
— আমি সত্যি কথা বলছি।ধ্রুব অবস্থা অনেক খারাপ আংকেল। আপনারা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসুন।
— কোন হাসপাতাল আমরা এক্ষনি আসছি।
— আমি হাসপাতালের এড্রেস মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন।
এই কথা বলে সিয়াম ফোন কেটে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সিয়াম হাসপাতালের এড্রেস মিজান সাহেনের ফোনে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিলো।
এই দিকে তিশা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুতুলের মতো। মনে হচ্ছে একটা সত্যিকারের পুতুল যার কোনো প্রাণ নেই। মিজান সাহেব তিশার দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা কোনো নড়াচড়া করছেনা। সে এক দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখের পাতা ও নাড়ছেনা।
মিজান সাহেব তিশার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলল — আমাদের সাথে হাসপাতালে চল মা।
তিশা কোনো কথা বলল না। এবার সবাই মিলে বের হয়ে গেলো। সবাই গাড়িতে উঠে বসে গেলো। ধ্রুবর আম্মু কান্না করেই যাচ্ছে। আর মিজান সাহেব তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
মিজান সাহেব বলল — দেখো আমাদের ছেলের কিছুই হবে না। এই ভাবে কান্না করো না।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা সবাই হাসপাতালে পৌছে গেলো। মিজান সাহেব তিশা আর তার স্ত্রীকে নিয়ে সিয়ামের কাছে চলে গেলো। সিয়াম আর তার কয়েকজন বন্ধু আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মিজান সাহেব সিয়ামকে বলল — বাবা আমার ছেলে কোথায়?
সিয়াম মুখে কোনো কথা না বলে আইসিইউর দিকে দেখিয়ে দিলো আঙ্গুল দিয়ে।
জামাল সাহেব আইসিইউর দরজার সামনে চলে গেলো। ছোট একটা গ্লাস দিয়ে দেখা যাচ্ছে ধ্রুবকে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আর কয়েকজন ডাক্তার ধ্রুবর পরিক্ষা করছে। আর ধ্রুব পুরো শরীরে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে। মিজান সাহেব তার ছেলের এমন অবস্থা দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা। তার নিজের অজান্তেই তার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু হয়ে গেলো। মিজান সাহেব আর তার ছেলের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারছেনা।
সে দরজা থেকে ধিরে ধিরে সরে গিয়ে সিয়ামের কাধের উপরে হাত রেখে বলল — কি ভাবে এমন হলো বাবা,?
তারপর সিয়াম মিজান সাহেবকে সব কিছুই বলল।মিজান সাহেব তার স্ত্রীর কাছে চলে যায়।
মিজান সাহেবর স্ত্রী কান্না করতে করতে বলল — আমি আমার ছেলেকে দেখবো প্লিজ আমাকে আমার ছেলের কাছে নিয়ে যান। আমি আমার ছেলেকে একটি বার দেখতে চাই।
— ওর চিকিৎসা চলছে এখন। একটু পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসবে। কিছু হবে না আমাদের ছেলের চিন্তা করোনা।
একটু পরে ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলল — রোগীর বাড়ির লোক কারা?
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই ডাক্তারের কাছে চলে গেলো।
চলবে?