জোয়ার ভাটা পর্ব -১৯

#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
পর্ব-১৯

টিপটিপ করে পানির শব্দ ভেসে আসছে। ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে জল। মার্জান আধো চোখ খুলে নিজের অবস্থান দেখে উঠতে চাইলো। সারা শরীরের তীব্র ব্যথায় দাঁড়াতে অক্ষম সে। নিজেকে ওয়াশরুমে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে খানিক চমকালো ওঁ। মুহুর্তেই মনে পড়তেই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো। কোনো রকম ঝড়না বন্ধ করে বেড়িয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। হোটেল রুমের আলমিরা থেকে তয়লা বের করে নিজেকে মুছতে লাগলো তাতে। ধীরে পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে বসলো বিছনায়। পার্স থেকে ফোনটি বের করতে স্তম্বিত হল ওঁ। সোফিয়ার ১০০+ কল আর কিছু মেসেজ দেখে। মার্জানের ভ্রু জোরা কুচকে গেলো। পরক্ষণেই মনে পড়লো আজ ওদের শো এর রেটিং আসার কথা। সোফিয়ার এত কল আর মেসেজ দেখে কিছু ঘাবড়ে গেলো সে। সোফিয়ার লাষ্ট মেসেজ দেখে আত্মা এবার ধুকপুক করছে যেন,

” ইয়ার মার্জান? কোথায় তুমি? কত বড় ঘটনা ঘটে গেছে, যেখানেই থাকো জলদি অফিসে আসো।”

মার্জান এবার ঘামতে লাগলো। রিয়ানার শো কি তাহলে স্কোর বেশি করেছে? মার্জানে শো টা কি তাহলে এখানেই শেষ হচ্ছে? মার্জান এবার হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো। সোফিয়াকে ফোন দিলো ও, ফোন বন্ধ। মার্জান হাটতে পারছে না ঠিক মতো। গায়ে জ্বর চলে এসেছে সারা রাত পানির নিচে থাকার জন্য। মার্জান কোনো রকম প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটলো অফিসে। অফিসে ঢুকতে সবাই মার্জানের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সায়ান নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে মার্জানের সামনে এসে দাঁড়ালো। থমথমে মুখ দেখে গলা শুকিয়ে কাঠ ওঁর। সায়ানকে ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

” আমাদের শো চলবে তো স্যার?”

সায়ান সরাসরি তাকালো মার্জানের দিকে। এর পরেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো বাচ্চাদের মতো, যেন অনেক দিন অপ্রত্যশিত কোনো খেলনাটি হাতে নাগালে পেলো ও। বলল,

” মার্জান আমাদের শো পুরো সুপার ডুপার হিট হয়ে গেছে।রেটিং স্কোর হাই। ইনফ্যাক্ট তোমার জন্য অনেক শো থেকে অফার আসছে।”

মার্জানের মুখে হাত চলে গেছে, অবাকতায় আকাশচুম্বী। হাটু গেড়ে বসে পড়লো মাটিতে, হু হু করে খুশির কান্নাটা কেঁদে উঠলো ওঁ। সোফিয়া কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে ঝাপটে ধরলো ওঁকে। কারো কান্না দেখলে ও নিজেও খুব কান্না করে। আজ তার ব্যতিক্রম হলো না। মার্জানের সাথে তাল মিলিয়ে ওঁর থেকে দিগুণ বেগে কান্না শুরু করলো ওঁ। একে বারে হেঁচকি তোলা কান্না। মার্জানের কান্নাটা সোফিয়া কান্ডে চট করেই থেমে গেছে। ড্যাবড্যাব করে দেখছে সোফিয়াকে। সোফিয়া ক্যার দেখি মার্জানের চোখের জল টুকু মুছে দিতে দিতে ক্রোদনরত কন্ঠে বলে উঠলো,

” ডোন্ট ক্রাই বেবি, ডোন্ট।”

মার্জান ভেবে ফেলো না ওঁ কি বলবে। তখনি সায়ান জানালো,

” আমার তরফ থেকে সকলকেই ট্রিট”

এবার হৈ চৈ শুরু হলো সকলের মাঝে। মেকি গুমোট আর থমথমে পরিবেশ মুহূর্তেই মুখোশ খুলে আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মার্জান এবার স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো। ওঁদের আনন্দ মুহূর্তটা নষ্ট করতে আগম ঘটল হিল পায়ে টকটক করে রিয়ানার। বরাবরের মতোই পেটের মাঝে হাতে রেখে এসে দাঁড়ালো ওঁর সামনে। মার্জান কিছুতেই বুঝতে পারে না, আসলেই কি মেয়েটি প্রেগনেন্ট? তাহলে এত উঁচু হিল কিভাবে পরে ওঁ? তাও আবার অত বড় পেট নিয়ে? মার্জান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। ক্ষিপ্ত হয়ে রিয়ানা বলে উঠলো,

” এন্টারটেইনমেন্ট জগতে তো টিকে গেছো? কিন্তু বাস্তব জগতে হেরে গেছো তুমি মার্জান।”

বলেই নিজের পেটের উপর হাত বুলাতে লাগলো। মার্জান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,

” আমি কোথায় হেরেছি, আর কোথায় জিতেছি? সময় তা প্রমাণ দিচ্ছে।”

রিয়ানা কিড়মিড় করে তাকালো,

” উড়ছো তো? উড়ো? এই জগত তোমার কত দিন সাথে থাকে আমি দেখবো। মনে রেখো আমি এই জগতের নাম করা অভিনেত্রী। ”

মার্জান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে হাসলো, রিয়ানার কানের কাছে কিছুটা এগিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
” আমার যা মনে রাখার তা আমি মনে রাখবো… আমার এক মাত্র ইচ্ছে, ছিটকে ফেলবো তোমাকে এই জগত থেকে আর সকলের সামনে মুখোশ খুলবো তোমাদের!”

মার্জানের কথাটায় ঘাবড়ে যায় রিয়ানা নিজেকে সামলে দূরে সরে আসে। মার্জানকে উদ্দেশ্যে বলে,

” তোমার স্বপ্নে”

মার্জান ঠোঁট দু’টি উঁচু করে কুটিল হাসলো। রিয়ানা পাত্তা না দিয়ে সবাইকে জানালো,

” আমার বেবি সাওয়ারে তোমাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ। ইস্প্যাশালি তোমার জন্য মার্জান।”

বাঁকা হাসলো রিয়ানা। মার্জান জানে আবার নতুন কোনো ফন্দি সে হয়তো আটবে। তবুও এবার যাবে। রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

” হ্যাঁ আসবো তো অবশ্যই। সব থেকে বড় গিফট তুমি আমার থেকেই পাবে।”

রিয়ানা এবার চিন্তায় পড়ে গেলো। মার্জানের কথার মানেটা কি? ধরতে পাড়ছে না কোনো মতেই।

—————–

অন্ধকার চারপাশ। নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। রক্তে মাখা হাত-পা নিয়ে মাটিতে বসে আছে গ্রীষ্ম। চোখ জোড়া বড্ড লাল টুকটুকে। বাহিরের শূন্য দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে ওঁ। পায়ের শব্দে হুঁশ ফিরে ওঁর। একজন বৃদ্ধা যে সফেদ সেলোয়ার সুট পড়া। মাথায় কাপড়। গৌড় বর্ণের দেহ জানান দিচ্ছে, বৃদ্ধার যৌবন কালে অনেক সুন্দরী ছিলেন। বৃদ্ধি পাশেই বসলেন গ্রীষ্মের। গ্রীষ্ম এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো, শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

” আমার কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছেন?”

বৃদ্ধা হতাশার শ্বাস ছাড়লো,

” তোমার কাছে প্রতিবার আমিই ভুল, তাই কেনো মনে হয় গ্রীষ্ম।”

গ্রীষ্ম ঘাড় ঘুড়িয়ে চাইলো। বৃদ্ধা চোখের দিক দৃষ্টি নিবিড় করে বলে উঠলো,

” আপনি কি জানেন না দাদিজান? কেন খেলছেন আমাদের সাথে??”

দাদিজান এবার দাঁড়িয়ে গেলেন। গ্রীষ্মের পুরো ঘর জোড়া পায়চারি করতে করতে বলে উঠলেন,

” তুলতুলকে ভুলে গেলে তুমি? এতো সহজে? ওঁর রিপ্লেসমেন্ট পেয়েছো বলে?”

গ্রীষ্ম চকিতে তাকালো। দাদিজান হাসলো,
” আমি সব জানি গ্রীষ্ম। তোমার ভাই সেইম কাজটাই করে ছিলো, আর দেখো, আজ ও নেই।”

গ্রীষ্ম হাতের মুঠ শক্ত করে ফেললো। সোজা হয়ে বসলো ওঁ,

” আপনি যদি পুরোনো কথা তুলতে আসেন তাহলে আমি কথা বলতে ইন্টারেস্ট নই।”

বলেই উঠে যেতে নেয় ওঁ। তখনি আবার ডাকে দাদিজান,

” গ্রীষ্ম আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিতে চাই।”

” আর মা?”
দাতিজান চুপ হয়ে গেলেন। ওনার মুখটা ফেকাসে হয়ে গেলো। গ্রুপ তা দেখতে পেয়ে হাসলো। বললো,

” যে বাড়িতে আমার মায়ের জায়গা নেই, ওখানে আমি কখনো পা ফেলবো না।”

দাদিজান চেঁচালেন,

” গ্রীষ্ম, ভুলে যেও না আষাঢ় আর তুলতুলের গুম হওয়ার কারণ তোমার মা।”

” আমি মানি না.. বুঝলেন, আমি মানি না…! আপনি আসতে পারেন!”

বলেই গটগট পায়ে চলে গেলো গ্রীষ্ম। দাদিজান ওখানেই চোখের জল ছেড়ে দিলেন। বিড়বিড় করে বলে উঠলেন,

” ভূঁইয়া বাড়ি ওঁর অংশিদার হারাবে? তা কিভাবে মানবে উনি?”

বলেই দাদিজান নিজেও ধীরে ধীরে নেমে চলে গেলেন সেখান থেকে।

—————–
বাংলাদেশের অরূপ সৌন্দর্য এক মাত্র দেখা মিলে এখন শহরের বাহিরে… গ্রাম সাইডে। যদিও দালানকোঠার আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে। মার্জান গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। বড় বড় পাহাড় পর্বত আর গাছ-পালা ফেলে এগুচ্ছে সে। মার্জান বুকের মাঝে শক্ত করে হাত চেপে ধরে আছে। এত দিন পরে টগরের দেখা পাবে ভেবেই মনে কোনে আনন্দের রেশন। তবুও কোথাও একটা যেন ঠিক নেই মনে হচ্ছে মার্জানের। পাশেই রাফান বসা ওঁর। মার্জানকে ভাবুক দেখে কথা পাড়লো ওঁ,

” মার্জান ডোন্ট বি সেড। আন্টি নিশ্চই ভালো আছেন?”

মার্জান চোখের ইশারায় বোঝালো ওঁ ঠিক আছে আবারো বাহিরে তাকিয়ে রইলো সে। ঘন্টা পাঁচেক পাড় হতেই গন্তব্য পৌঁছায় তারা। কাঙ্ক্ষিত বাড়িটিতে পৌঁছে মার্জানের বুক ধকধক করতে লাগলো। ওঁর মা ঠিক আছে তো? মার্জান দরজা ধাক্কা দিলো। একটি ১৬/১৭ বছর বয়সের মেয়ে দরজা খুলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো,

” কি চাই?”

মার্জান পাত্তা দিলো না। মেয়েটিকে ঠেলে ভিতরে চলে গেলো। মেয়েটি চেচা-মেচি করে আসতে লাগলো পিছন থেকে। কিন্তু মার্জানের খেয়াল নেই সেদিকে।মার্জান ওঁর মায়ের ঘরে গেলো। টগরের নিথর দেহ বিছানায় পরে থাকতে দেখে ফুপিয়ে উঠলো। কিন্তু পরক্ষণেই আতকে উঠলো। মার্জানের মায়ের ঘরের খাটের তলায়… কেউ সাপের ঝুঁড়ি রেখে গেছিলো। প্যারালাইজড টগরের শরীরে পেঁচিয়ে যেতে লাগলো তা। মার্জান তা দেখে এক চিৎকার করলো। পিছন থেকে এত দিন দেখ ভাল করা কাজের মেয়েটা ছুটে বাহিরে চলে গেলো। ঠিক তখনি ফেরেস্তার মতো কোথা থেকে হাজির হলো রাফান। এবং টগরের কাছে গেলো। সাপ গুলো দূরে সরিয়ে পাঁজো কোলে নিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় ছোবল মারলো রাফানের হাতে। রাফান আহ্ করে উঠলো। মার্জান ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু রাফান নিজেকে সামলে টগরকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। ততক্ষণে গ্রামের লোকজন জড় হয়ে গেছে। হাট্টা-গাট্টা যুবক এসে মারতে লাগলো সাপ। কিন্তু এদিকে রাফানের চোখের সামনে ঘোলাটে হয়ে উঠলো। পরমুহূর্তেই মুখ থুবড়ে পড়লো মাটিতে…সময় নষ্ট না করেই হাসপাতালে আনা হয় ওঁকে। ডাক্তার বিস্মিত সুরে জানায়,

” আফ্রিকান জঙ্গলের একটি বিষাক্ত সাপ কামড় দিয়েছে রাফানকে, ওঁকে বাঁচাতে হলে একটা বিশেষ রকমের এন্টিডোট লাগবে যা শাহ্ ফার্মা থেকে পাবে, তাও আবার শাহ্ ফার্মা সহজে এটি সেইল করে না।”

মার্জান এখন কি করবে? ও জানে এই কাজে একজন ব্যক্তি ওঁকে সাহায্য করতে পারবে, কিন্তু ওঁ কি করবে? বেঁকে বসবে না তো?

—————

চার দেয়ালে বন্দি থাকা গ্রীষ্ম নিজ ঘর ছেড়ে আজ নিজের ভাইয়ের ঘরে প্রবেশ করলো। পুরোনো স্মৃতি তাজা হতে লাগলো ওঁর। গ্রীষ্ম আষাঢ়ে বিছানার পাশে বসলো। পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি ডায়রি বেড় করে পাতা উল্টাতে লাগলো। একটি পাতায় এসে থমকে গেলো ওঁ। তুলতুল, আষাঢ় আর গ্রীষ্মের একত্রে হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ওঁ যখন ১৬/১৭ বছর তখনের। ওঁর হারিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে তোলা। সেদিন ওঁদের দু’ ভায়ের বার্থে পার্টি ছিলো। সারা দিন আর রাত আনন্দ উল্লাসে কেঁটে গেছিলো। কিন্তু হটাৎ কি হলো? সব উলোটপালোট হয়ে গেলো।গ্রীষ্মের চোখের কোনে জল জমা হয়ে গেলো। পরমুহূর্তেই ওঁর শরীর গরম হতে লাগলো। গ্রীষ্ম বুঝে গেলো, ও নিজেকে হারাতে চলছে। চট জলদি ওখান থেকে সরে এলো। নিজ ঘরে এসে ঠান্ডা পানি ছেঁড়ে দিলো মাথার উপর। এর পর চোখ বুজতেই ভেসে উঠলো মার্জানের মুখখানা। কত মিল তুলতুল আর মার্জানের। এ-জন্যই তো প্রথম দেখাতেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলোওঁ। আটকে পড়ে ছিলো নজর মার্জানের মুখখানায়। শুধু তফাৎটা মুখের তিলের। তুলতুলের মুখের ডান পাশে ওঁর দাদিজানের মতো একটা তিল আছে। হবেই বা না কেন? দাদি জানের এক মাত্র আদরের নাতনি বলে কথা। তুলতুল হচ্ছে ওঁদের বংশের একটি মাত্র মেয়ে ওঁর ছোট চাচার ঘরের। আর কোনো সন্তান নেই ওনাদের কিন্তু ওই কাল রাত্রি সব তছনছ করে দিলো। গ্রীষ্ম এখনো খুঁজে চলেছে তুলতুল আর আষাঢ়কে। গ্রীষ্ম এবার বেড়িয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। শরীরটা এবার ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।কিন্তু রেডি হয়ে নিচে আসতেই বড় রকমের শক্ড খায় ওঁ,

” তুমি এখানে?”

মার্জান আমতা আমতা করতে লাগলো। নিজেকে বড্ড দোষী মনে হচ্ছে। গ্রীষ্ম ঘন্টা খানেক আগ পর্যন্ত রেগে থাকলেও ওঁর অ্যাসিস্ট্যান্টের পাঠানো ভিডিও দেখে পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেছিলো সে। ওই ভিডিওতে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলো মার্জান অন্য একটি মেয়েকে রুমে ঢুকিয়ে বেড়িয়ে যেতে। কিন্তু রাগটা ওঁর এখানে নয়.. রাগটা ওঁর এই জায়গায়, কেন মার্জান ওঁকে বলল না কিছু। কেন মার্জান ওঁকে চায় না? কেন? মার্জান এবার মুখ খুললো,

” আই নিড অ্যা হেল্প। এর বদলে আপনি যা চাইবেন তাই হবে।”

গ্রীষ্ম বাঁকা হাসলো, ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠলো,
” যা চাইবো তাই?”

মার্জান শিউরে উঠলো। ওঁর কাছে কোনো পথ খোলাতো নেই। ওঁতো প্রথমে শীপ্রার কাছেই গেছিলো। কিন্তু ওঁদের বাসায় তালা দিয়া। রাফি নিজেও আউট ওফ টাউন। ওঁকে ফোন দিয়েও লাভ নেই। কি করবে না করবে ভেবেই এখানে আসা। গ্রীষ্ম ছাড়া আর কোনো রাস্তায় যেন দেখছে না মার্জান। গ্রীষ্ম এবার ওঁর কাছাকাছি এলো। মার্জানকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে চুটকী বাজালো মুখের সামনে, মার্জান ভয় ভয় দৃষ্টিতে তাকালো ওঁর দিকে। গ্রীষ্ম মার্জানকে এভাবে নাস্তানাবুদ করতে পেরে সেই মজা পাচ্ছে। কিন্তু মুখ তার তখনো গম্ভীর। মার্জানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গ্রীষ্ম আরো কাছে চলে গেলো। মার্জানের কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

” আর ইউ রেডি?”

মার্জান চোখ বড় বড় করে ফেললো। কি করতে চাইছে গ্রীষ্ম মার্জানের সাথে? সত্যি মার্জানকে ওঁ সাহায্য করবে? নাকি ছয় বছর আগের রাত আবারো আসবে? শুধু এবার হয়তো তফাত হবে সজ্ঞানে! কিন্তু মার্জান তা মোটেও চায় না। মার্জানের বড়বড় চোখ জোড়ায় নেমে এলো তীক্ষ্ণতা। তা দেখে হো হো করে হেসে ফেললো গ্রীষ্ম। পরক্ষণেই দাম্ভিক পূর্ণ মুখখানা ঠান্ডা, শীতল হয়ে গেলো। মার্জান এবার ঘাবড়ে গেলো। তোতলানো সুরে বলে উঠলো,

” আপনার কি চাই?”

কুটিল হাসি ফুঁটিয়ে বলে উঠলো,

” আমার তোমাকে চাই।”

বলেই মার্জানের আরো কাছে চলে গেলো। হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

” খুব করে চাই। অনেক কাছে চাই । আমার পাশে চাই।”

মার্জান শিউরে উঠলো। চোখ তুলে তাকাবার সাহস আর করলো না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। তা দেখে রেগে গেলো আবার গ্রীষ্ম। ঝটকা মেরে সরিয়ে দিলো তাকে। থমথমে কন্ঠে বলে উঠলো,

” তবে তোমার ইচ্ছায় জান..।”

বলেই উপড়ে চলে গেলো সে। মার্জান শুধু গ্রীষ্মের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো। কি চায় এই লোকটা? কেন এত রহস্য এই লোকের মাঝে? কেন মার্জান যত যত ভাবে এই লোকটিকে নিয়ে ততই নিজেকে হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ওঁর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে এখনো প্রশ্ন…

” ওঁ রাতে কি গ্রীষ্ম ছিলো? যদি হয়? তাহলে কেন মনে নেই ওঁকে??? নাকি ওঁর ভুল?”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here