###__ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল__###
পর্ব_১২
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
রুবির ফোনটা দেখে মুখে বিরক্তি চলে আসে ইরফানের । ফোনটা সে ইচ্ছে করেই রিসিভ করেনি । তাই রুবি ফোন দিয়েই যাচ্ছে তো দিয়েই যাচ্ছে । এই যাবত ১০ বার ফোন দিয়ে ফেলেছে । তাই বাধ্য হয়েই ইরফান ফোনটা রিসিভ করে নেয় ।
– হ্যালো ,
– হ্যাঁ কি হয়েছে ?
– ফোন ধরতে তোমার এতক্ষন লাগে ?
– আমি কি আপনার ফোনের আশায় বসে আছি নাকি ?
– তা কার আশায় বসে আছো , তোমার আরেক বউয়ের দিকে ?
– তোমার মত আজাইরা কাজ নাই আমার , ওকে ?
– কাল শুক্রবার , আমায় এসে নিয়ে যাবা ।
– কেন ? যেমন গেছো , তেমনই আসবা , আর হ্যাঁ আমি গ্রামে আসছি ।
– বাহ বাহ , আমি নেই আর এই সুযোগে ?
– এই সুযোগে মানে , কি এই সুযোগে ?
– কয়বার গেছো তার সাথে বিছানায় ,
– তোমার মত থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমি কিংবা সে বসে নেই , অত্যন্ত জরুরী কাজে গ্রামে আসছি আর সেও আসছে আমার সাথে ।
– বাসরটা পারলে করে নিও ,
– হ্যাঁ করবো , তোমার সমস্যা ? তোমার সাথেও তো করি , এখন না হয় তার সাথেও করলাম ?
– করো , তোমার মত পুরুষ কয়জন আছে যে এক সাথে দুইটাকেই খায় ।
– স্যাট আপ ইউ ফুল , লজ্জা করে না নিজেকে এত স্বস্তা বানাতে । এই তোরা কি খাওয়ার জিনিস যে আমি খাই ? আর হ্যাঁ এখজ বললে তো বলতে হয় জানতিস তো যে আমি বিবাহিত , আমি বিবাহিত জেনেও কেন প্রেম করছিস , কেন ফাঁদে ফেললি ।
– খবরদার তুই তুকারি করবা না ।
– চুপ , একদম চুপ , ফোন দিবি না আপাতত ।
এইসব বলে লাইন কেটে দেয় ইরফান । বেলী এতক্ষন পাশের রুম থেকে সব শুনতে পেয়েছে । আর সে বুঝেও গেছে কে ফোন দিয়েছে । ভাগ্য ভালো ছিল বেলীর মা বাহিরে ছিলেন । বেলী আর তার পর ইরফানের সামনে যায় নি । ইরফান মোবাইলের ফ্লাইট মুড অন করে মোবাইল চার্জে ফেলে রাখে । বেলীও এই সুযোগে বাহিরে চলে যায় । গ্রামের কিছু চাচি মামি খালা ভাবীরা উঠানে বসা ছিল । বেলীকে দেকে তারা ঠাট্টা জুড়ে দেয় । তাদের মধ্যে একজন ভাবী বেলীকে ইংগিত করে অনেক প্রশ্ন করে । যা সব মজার ছিল ।
– কিরে বেলী স্বামীরে পাইয়া আমাগোরে ভুইলাইবম গেছিস ?
– না গো ভাবী , কাউরেই ভুলি নাই ।
– এহহহহহ কইলেই হইলো , মাইনষে তো একটা ফোনও করে ,
– ভাবী আমি মোবাইল চালাই না গো ।
– এহহহহ কস কি , জামাই মোবাইল দেয় না ?
– দিতে চায় আমিই নেই না , প্যারা লাগে ।
– ওই বেলী ,,,,,,,,?
– জ্বি চাচি ,
– এক বছর হইয়া যাইতাছে নানি কবে বানাবি ?
কথাটা শুনে বেলীর মনটা হাহাকারে ছেয়ে যায় । অপরদিকে গেঞ্জিবার টাউজার পরে ইরফানও ঘর থেকে নামছে এমন সময় এই কথাটা ইরফানেরও কানে যায় । সে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় । বেলীর দিকে তাকিয়ে আছে সে । বেলী একদম স্তব্ধ হয়ে আছে । কোন কথা বলছেনা । চুপ করে আছে ,
– বিয়ের পরে যার কপালে স্বামী সুখের বদলে জুতার বারি জুটে তার কি সন্তান সুখ মানায় ? আমার স্বামীটাই তো আমার নাই , সে তো অন্যের । যে আমার না তার কাছে সন্তান চাই কিভাবে ? আর আমার নিজেরই তো ভরসা নাই , আজ আছি কাল নেই , এর মাঝে অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভাবাও উচিত না । একটা প্রাণকে আনতে হলে দুটো প্রাণের মিলন লাগে , সেই দুটো প্রাণেরই তো মিল নাই , সেখানে সন্তান কামনা করি কিভাবে ? (মনে মনে)
বেলীর ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে আরেক ভাবীর ডাকে ।
– ও বেলী ,,,,,,,,?
– হে ,
– তা তোর স্বাস্থ্য এমন কেন ?
– কেমন ভাবী ?
– অসুস্থ অসুস্থ লাগে মনে হয় কত রাইত ঘুমাও না ?
– নাহ ভাবী ঠিকই তো আছি ।
– নাকি আমাগো জামাই রাইতে ঘুমাইতে দেয় না ?
কথাটা বলে সবাই এক সাথে হেসে উঠে । বেলী বুঝেও চুপ করে আছে । অপরদিকে ইরফান দূর থেকে সবটাই শুনতেছে যা বেলী দেখেনি ।
– ওই বেলী ,
– হে ,
– কও না ,
– কি
– জামাই রাইতে কেমনে আদর করে ?
– আইচ্ছা , তাও কইতাম এহন ?
– হ , কও আমরা হুনি ।
– তাইলে হুনো , রফিক ভাই যেমনে রাইতের আন্দারে তোমারে আদর করে তার থাইকাও আরও হাজার গুন বেশি আদর আমার জামাই আমারে করে , তবে আমার ঘরে আন্দার থাহে না আলো থাহে । বুঝলা কিছু ?
বেলীর এমন কথায় সেই ভাবী একদম চুও হয়ে যায় । ইরফান বেলীর মুখে এমন কথা শুনে আটাশ হয়ে যায় । বেলী এমন কথাও বলতে পারে যা তার সম্পূর্ণ অজানা ছিল । অবশ্য বেলী এই কথাটা দিয়ে কি বুঝিয়েছে তা ইরফান খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছে । বেলী সঠিক জায়গায় সঠিক কথাটাই বলেছে কিন্তু কেউ বুঝতে পারে নি শুধু ইরফান ছাড়া । ইরফান সেখান থেকেই বেলীকে ডাক দেয় ,
– বেলী,,,,,,,,,,?
ইরফানের গলার আওয়াজ পেয়ে সবাই ঘরের দরজার দিকে তাকায় । সাথে বেলীও । সবার এইভাবে তাকানো দেখে ইরফান কিছুটা হলেও লজ্জা পেয়ে যায় । তবুও আবার বেলীকে ডাক দেয় সে ।
– বেলী একটু রুমে আসো তো ?
এইটা বলে ইরফান ঘরের ভেতরে চলে যায় । ইরফানের ডাকে বেলীর কলিজার পানিটুকু শুকিয়ে যায় । সে ভাবছে তার কোন অন্যায় হয়ে গেছে নাকি হঠাৎ এইভাবে ডাকছে । এখন যদি এইখানে মারধর করে তাহলে তো ওর মা এইসব সহ্য করতে পারবে না । তার থেকে বরং গিয়ে ও-কে শান্ত করার জন্যে আপাতত তাকে ঘরের ভেতর যেতে হবে । বেলী সেখান থেকে উঠে ঘরের ভেতর চলে যায় ।
– জ্বি কিছু বলবেন ?
– ওনারা কি সব বলতেছে ?
– তেমন কিছু না ,
– আর ওইটা কি বললা ?
– কোনটা ?
– হাজার গুন বেশি আদর আমার জামাই আমারে করে , তবে আমার ঘরে আন্দার থাহে না আলো থাহে – এইটা ।
– তাহলে কি বলা উচিত ছিল ?
-………………..
– আমি তো মিথ্যা বলি নাই ,
– সত্যি কি বললা তাহলে ?
– রফিক ভাই অনেক ভালো মানুষ , বউকে অনেক ভালোবাসে । শহরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে । মাসে একবার বাড়ি আসে । আর যত দিন থাকে ততদিন সকালে নাকি ভাবীর ভেজা চুল থাকে , এখনও থাকে । এখন প্রশ্ন হলো আমি কেন এই কথা বললাম ?
– হ্যাঁ ,
– আপনিও তো আমাকে আদর করেন , তবে রফিক ভাইয়ের মত না । আপনার আদর গুলাতে আমার দম বন্ধ হয় আবার রফিকের ভাইয়ের আদরেও ভাবীর দম বন্ধ হয় । তফাৎ টা কই জানেন ? রফিক ভাইয়ের আদরে ভাবীর দম বন্ধ হয় সুখের তাড়নায় আর আপনার আদরে আমার দম বন্ধ হয় যন্ত্রণার তাড়নায় । ভাবী সুখ পায় উষ্ণ স্পর্শে আর আমি সুখ পাই আপনার হাতের থাপ্পড় , লাথি , ঘুষিতে । হলো না এটা আদর , বলেন ?
-……………………
– বাহিরে চাচি বললো , তাদের নানি বানাবো কবে ? আমি তো আর বলতে পারি না সেই সুখটা আমার জন্যে না । কারন আমার কাছে তো আমার মানুষটাই নাই । আমি তো আর বলতে পারি না যে আমার স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সুখেই তো আছে । আমি তো আর বলতে পারি না যে আমি আমার স্বামীর ঘরে বান্দির মত থাকি । বলেন কিভাবে বলি ?
আজ ইরফান স্তব্ধ । বেলী তার কথা দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে সে তার প্রতিটা দিন কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিন পার করে । বেলী কথাগুলো বলে বেরিয়ে যায় । আর ইরফান সেখানেই বসে থাকে । সব কিছু আগে থেকেই এলোমেলো ছিল আজ আরও গোলমেলে লাগছে তার কাছে ।
রাত প্রায় ১১ টার উপর বাজে । বেলীর মা তার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পেরেছে মেয়ে জামাইয়ের জন্য ততটুকুর বেশি আয়োজন করেছেন । ইরফান ছোট বেলাতেই মাকে হারিয়েছে৷। আজ মা থাকলে হয়তো এতটা উচ্ছন্নে যেতো না সে । আজ মা থাকলে হয়তো সেও বুঝতো একজন নারীর কাছে তার স্বামীর মূল্য কতটা আর একজন স্বামীর কাছে তার স্ত্রীর মূল্য কতটা । নিজের মেয়েকে আর মেয়ে জামাইকে একসাথে বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন তিনি । ভাতের লোকমা মুখে দিয়ে ইরফান বুঝে যায় বেলী এত ভালো রান্না কার কাছ থেকে শিখেছে । অসম্ভব ভালো রান্না করেছে বেলীর মা । ইরফান চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে যায় রুমে ।
ইরফান চলে গেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন বেলীর মা । মেয়ের মুখে আগের মত আর হাসি নেই । তার বেলীফুল কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন ।
– বেলীফুল ,
– হে ,
– তুই ভালো আছিস তো মা ?
– হ্যাঁ মা আমি ভালো আছি ।
– জামাই ভালাবাসে নিরে মা ?
– অনেক মা , সে আমায় অনেক ভালোবাসে ।
– যাক আলহামদুলিল্লাহ ,
– হু
– একটা কথা কইতাম ?
– কও না মা ,
– বেশি দেরি হইলে আর বাচ্চা কাচ্চা হয় না রে মা । এইবার একটা বাচ্চা নিয়া নে ?
মায়ের মুখেও একই কথা শুনে দমে যায় বেলী । কি করে বুঝাবে সে , সে স্বামীর ঘরে থেকেও অনিশ্চিত ভবিষ্যত তার । মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বেলী স্মিত হেসে বলে ,
– মা , আগে ঢাকা ফিরি , তারপর ভাববো কেমন ?
– আইচ্ছা ।
– মা ময়নার কি খবর গো ?
– বিয়া হইছে , শ্বশুরবাড়িতে থাহে । জামাই মাশাল্লাহ অনেক ভালা । ঠিক আমার মাইয়ার জামাইর মত ।
– সুখে আছে , তাই না মা ?
– হ , শ্বশুরবাড়ির সবাই অনেক ভালা ।
– ওহ ,
ময়না বেলীর খুব ভালো একজন বন্ধু । স্কুলে এক সাথে পড়াশোনা তাদের৷। কলেজেও সেইম । শুধু বেলী পরীক্ষা দেয় নাই আর ময়না পরীক্ষা দিয়েছে । ময়নারও বিয়ে হয়েছে । তার সাথে দেখা করার খুব শখ বেলীর ।
[ বিঃদ্রঃ একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের সন্তান অনেক কিছু হয় । এইবার হোক সে ছেলের বা মেয়ের । এখানে বেলীর মায়ের ইচ্ছেটাও অযুক্তির না । বয়সকালে সব বাবা মা-ই চান নাতি নাতনির মুখ দেখতে । নাতি/নাতনি নানুমনি বলে ডাক দেবে । শুনে মায়ের প্রাণ জুড়াবে । এটাই আমাদের সমাজের সামাজিকতা । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে বেলীর মা ভুল না । কিন্তু যেখানে যার নিজের অস্তিত্বেরই ঠিক নেই সেইখানে নতুন অস্তিত্ব কিভাবে আসবে ? আজ আবেগের বশে এক রাতের সুখে একটা নতুন অস্তিত্ব আসবে হয়তো ঠিক কিন্তু কাল যখন বিবেক বলবে সরে যাও তখন এই অসহ্যকর দুনিয়াতে অনাগত ভবিষ্যতের মাঝে এক নিষ্পাপকে নিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা কোথায় । অসহায়ত্বের ফায়দা সবাই নিতে চাইবে কিন্তু সাহায্যের হাতটা কেউ বাড়িয়ে দিবে না । এখানে আবেগ না বিবেক চলে , আর যেখানে বিবেকই বিবেকের কাছে ঘৃণিত সেখানে নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস ডগমগানো ]
রাতের অন্ধকারটা বড্ড দ্বিধা জাগায় মনে । দিন শেষে এই রাতটাই আছে যার কাছে একা নিঃসঙ্গ মনটা ভিখারী হয়ে রয়ে যায় । সারাদিন কি কি করা হয়েছে আর কি কি করা হয় নি তার হিসাব নিকাশ গুলো এই রাতের বেলাতেই খুব মনে পড়ে । আজ ইরফানের চোখে ঘুম নেই । আজ বেলী তার পাশে শুয়ে আছে । তবুও তার চোখে ঘুম নেই । গ্রামে এসে দুজন আলাদা ঘুমালে সবার নজর কাড়বে এই জিনিসটা । আর এইসব ব্যাপার গুলো সবার নজরে একটু বেশিই পড়ে ।
বেলী ওইদিকে মুখ করে শুয়ে আছে । কিন্তু বড্ড অস্থির লাগছে নিজের কাছে বেলীর । চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পড়ছে তার৷ তবে নিঃশব্দে । কি আছে তার কপালে ? কিভাবে পারি দিবে বাকি জীবনটা । সবে তো মাত্র জীবনের শুরু । তার উপর আবার আজ রুবির ফোনের আলাপ পেয়ে মনটা ছোট হিয় গেছে তার । হয়তো এবার ঢাকা গেলে আবারও শুরু হবে আগের মত । যন্ত্রণা গুলো চাপা কিন্তু অনেক কষ্টের । না পারা যায় কাউকে বলতে না পারা যায় কাউকে দেখাতে শুধু পারা যায় নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতে ।
পরদিন সকাল থেকেই সব রান্নার আয়োজন করা হয় । ইরফান আর তার বাবা রহমান আলী সবটা তদারকি করছে । বেলী আজ ঘর থেকে বের হয় নি । ঢাকাতে কোরআন শরীফের ২৭ পারা শেষ দিয়ে আসছিল । আজকে হুজুরদের মিলাদের সাথে সেও বাকি তিন পারা শেষ দিয়ে কোরআন খতম করে বাবার আত্মার শান্তির জন্যে দোয়া চাইবে । সকাল সকাল মায়ের সাথে সব কাজ শেষ করে গোসল দিয়েই আগে ১০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আর তারপর কোরআন শরীফ নিয়ে বসে যায় বেলী । গুনগুন করে কোরআন শরীফ পাঠ করে বেলী । এর মাঝে কয়েকবার ইরফান রুমে এসেছিল দরকারে । যতবার এসেছে ততবারই দেখেছে বেলী কোরআন পাঠ করতেছে । কোরআন পাঠ শেষ করে যোহরের পরে নামাজ আদায় করে তারপর বেলী রুম থেকে বের হয় । এদিকে বেলীকে দেখে বেলীর মা বলে ,
– বেলীফুল ,,,,,?
– হে মা ,
– জামাই ডাকে ,
– আচ্ছা
মায়ের কথায় ঘরের সাইডে যায় বেলী । গিয়ে দেখে ইরফান সেখানে দাঁড়িয়ে আছে । বেলীকে দেখে ইরফান বেলীর সামনা সামনি হয়ে দাঁড়ায় । বেলীর চোখ মুখ ফুলে একাকার । হয়তো আজকেও কেঁদেছে মেয়েটা । আসলেই আজ বেলী অনেক্ষণ কেঁদেছে । আজকের দিনেই বেলীর বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছিলেন । তাই কষ্ট গুলো আবারও মনে পড়ে গেছে তার ।
– খতম হয়েছে ?
– জ্বি ,
– কান্না করছিলা ?
– নাহ ,
বরাবরের মতই এবারও এড়িয়ে যায় বেলী । তাই ইরফানও আর জোড়াজুড়ি করে নাই ।
– হুজুররা চলে আসবে , আমি আর বাবা হুজুর আর পুরুষদের খাওয়াবো । তুমি মহিলা আর বাচ্চাদের দিকটা দেখো ।
– জ্বি আচ্ছা ।
বলে মাথা নাড়ে বেলী । এবারও ইরফান বেলীর মুখের দিকে চেয়ে আছে । পুরো মুখটাই মায়াবী । একদম শান্ত , ওর মতই হয়তো ওর চোখের পানি গুলো । ঝরতে তাড়াহুড়ো করে না , ওর মতই শান্ত হয়ে ঝরে । বেলী সেখান থেকে বলে যায় ।
সবাই খানার কাজে লেগে যায় । বেলী সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে । হঠাৎ করেই কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দেয় ,
– বেলীইইইইইইই,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
জোরে ডাক দেয়ায় বেলী পিছনে তাকায় । দেখে ময়না দাঁড়িয়ে আছে । নিজের প্রিয় বান্ধবী যার কথা কাল রাতেও সে তার মাকে বললো আজ সেই বান্ধবীই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । বেলী দ্রুত হেটে গিয়ে ময়নাকে জড়িয়ে ধরে । আর ময়নাও পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে নেয় বেলীকে ।
– কেমন আছিস বেলীফুল ?
– আমি ভালো আছি , তুই কেমন আছিস ময়না পাখি ?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ ।
– বিয়ে করে রানী হয়ে গেছিস ।
– তুইও তো কম রানী হোস নাই ।
– তাই , আয় খেতে বস । আজ আমি নিজে ভাত বেড়ে খাওয়াবো তোকে ।
– খাবো , তোর সাথে অনেক কথা আছে । তোর জামাই কই ?
– আছে , তুই আয় না বস ।
– বসবো , অনেক কথা আছে তোর সাথে ।
– আচ্ছা শুনবো , আগে খেতে বস ।
ময়না অনেক তাড়া দিচ্ছে বেলীকে । হয়তো খুব জরুরী কথা ছিল তার । তাই কোন রকম খেয়ে বেলীকে নিয়ে বাড়ির পাশের পুকুর ঘাটে নিয়ে যায় ময়না ।
– জানিস , কি হইছে ?
– কি ?
– সে ফোন দিছিলো আমারে ?
– কে ?
– রাজু ভাই ।
নামটা শুনে বেলীর বুকে একটা পাহাড় পড়ে যায় । এমনিতেই তো সে মরে আছে তার উপর ময়না এসে খারার ঘা টা দিয়েই দিলো । সেই সময়ে বেলীর পায়ের নিচ থেকে মনে হচ্ছিল সব মাটি সরে যাচ্ছে ।
চোখ থেকে আপনা আপনি গাল বেয়ে দু ফোঁটা পানি পড়ে যায় বেলীর ।
.
.
চলবে…………………