ডাকপাড়ি পর্ব -৪২+৪৩+৪৪

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪২
#আফনান_লারা
________
এক মূহুর্তের জন্য সারথি আনাফের কথাটা বিশ্বাস করে ফেলেছিল।তাই সবার আগে চেঁচিয়ে বলে ফেললো “অসম্ভব।”

আনাফ খিলখিল করে হাসছে।সারথি ওর হাসি শুনে বলে,’মজা করছেন তাহলে?’

‘দেখতে চেয়েছিলাম তোমার রিয়েকশান।দেখা হয়ে গেছে।তবে এটা ভেবো না যে আমি তোমায় বিয়ে করছিনা।বিয়ে করবোই।সব কিছুর একটা সময় থাকে সারথি।একটা সঠিক সময় আসবে,দুটো সঠিক মানুষের মিলনের জন্য।অপেক্ষায় থাকো’

‘আমার স্বাদ নেই আপনাকে বিয়ে করার’

‘ কিন্তু জানো? আমার অনেক স্বাদ।তোমাকে বিয়ে করে লাল শাড়ী পেঁচিয়ে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যাবো’

সারথি আবারও চেঁচিয়ে বললো,’আপনি একটা খারাপ লোক!’

‘বিয়ে করা বর সজীব তোমায় ছোঁয়নি বলে সে ভাল আর আমি বিয়ের পর ছোঁবো বলে আমি খারাপ??তোমরা মেয়েরা যে এত ভুলভাল আইন তৈরি করো!!এটার জন্য তোমাদের তো একটা আইন দেখিয়ে জেলে পুরা উচিত’

সারথির কথা হাওয়া হয়ে গেছে আনাফের ধমক খেয়ে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে আবার বললো,’আমরা কোথায় যাই?’

‘তোমায় কেন বলবো?’

‘আজব তো!আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন আর আমাকেই বলবেন না?’

‘না বলবোনা।আর একবার জানতে চাইলে অদ্ভুত একটা নাম বলে দিব।পরে তুমি নিজেই রাগ করবে’

‘কি নাম?’

‘বাসর ঘর’

সারথি প্রচণ্ড রেগে গেলো।রাগে চুপ করেই থাকলো আর কিছুই বললোনা।
আনাফ যাচ্ছে তার নানুর বাড়ি। মায়ের চাইতে বেশি ফ্রি সে তার নানুর সাথে।
সারথিকে একবার নানুর কাছে নিয়ে যাবে।নানুকে দেখাবে।
এই ভেবে সে নানুর বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
বেশিদূরনা আবার বেশি কাছেওনা।মোটামুটি জার্ণি করতে হয়।

সারথি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে থেকে আবারও জানতে চাইলো তারা কোথায় যাচ্ছে।
আনাফ হেসে উড়িয়ে দিলো তাও বললোনা।
নানুরবাড়িতে যেতে এখনও অনেকসময় বাকি বলে আনাফ হাইওয়েতে থামালো গাড়ী।সারথি বললো তারা কি পৌঁছে গেছে।আনাফ জবাবে বললো’নাহ’

গাড়ী থেকে বেরিয়ে সারথির হাত ধরে বের করে সামনের একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো সে।

চায়ের কথা বলে আনাফ এক দৃষ্টিতে সারথিকে দেখছিল।সারথি তার খোলা চুলগুলোকে বেঁধে হঠাৎ বলে উঠলো,’আপনার জন্য কি মেয়ের অভাব?’

‘এটা কেন বললা?’

‘জেনেশুনে কেউ অন্ধ মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেনা আমি যতদূর জানি’

‘আমি তো ফ্লার্ট করছিনা।আমি প্রেম করছি।’

‘আচ্ছা যাই হোক।প্রেম করছেন মানলাম কিন্তু কেন?আপনি জানেন আপনি হাত বাড়ালেই সুন্দরী ডাক্তার পাত্রীর লাইন লেগে যাবে?’

‘জানি’

‘তাহলে আমায় কেন চুুজ করছেন?’

‘কারণ আমি ডাক্তার বউ চাইনা।সুন্দরের মধ্যে সাদাসিধা ঘরণী,গৃহিনী টাইপের একটি মেয়ে চাই’

সারথি আরও কিছু বলতে যাবে অমনি একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেলো।দূর থেকে ছুটে এসে আনাফের সামনে এসে বললো,’আনাফ স্যার রাইট?’

‘ইয়েস।হু আর ইউ?’

‘স্যার আমি নীলা।চিনতে পেরেছেন?’

‘কোন নীলা?’

‘যাকে আপনি উনিশবার ব্লক করেছেন সেই নীলা’

আনাফের কাশি এসে গেলো কথাটা শুনে।সারথি ফিক করে হেসে দিছে।ওর হাসি শুনে নীলা মেয়েটি সারথির দিকে বিরক্ত চোখে তাকালো তারপর আবার আনাফের দিকে চেয়ে ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে বললো,’ফেসবুকের ফ্রেন্ড হই।চা খাওয়াবেন না?’

‘না।আমি পরিচিত হওয়া ছাড়া কারোর চায়ের বিল দিই না’

‘আরে কতই যাবে,বিশ টাকা মাত্র!’

‘জ্বী না।এই রেস্টুরেন্ট হাইওয়েতে করা।হাইওয়ের রেস্টুরেন্টে চায়ের দাম পঞ্চাশের নিচে হয়না’

‘এত বড়লোক হয়ে এত কিপটামো কেন করছেন?আচ্ছা এই আপুটা কে?আপনার কি হয়?আমি তো জানি আপনি অবিবাহিত ‘

আনাফ সারথির ডান হাত টান দিয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো,’আমার ওয়াইফ।কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করার শখ হলো তাই করে ফেললাম।আপনার কোনো সমস্যা আছে নীলা আপু?’

নীলার যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।আনাফের উপর সে রীতিমত দিওয়ানা ছিল।আজ এই শুভদিনে এই কথা শুনতে হবে কে জানতো!
————-
শাহেদ তার বড় বোনকে নিয়ে ফারাজদের বাসায় এসেছে।পূর্ণতা তার রুমেই ছিল।সে জানেনা শাহেদ আসার কথা।শাহেদকে দেখেই চিনেছেন বেলায়েত হোসেন।সুন্দর করে আপ্যায়নও শুরু করলেন তিনি।রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তা বানাতে বলে শাহেদের সাথে তার ছোট বোন নিয়ে আলাপ শুরু করলেন এবার।
শাহেদের বোন ইন্টার পাশ করেছে এই বছর।দেখতে শুনতে ভালই।ব্যবহার ও ভাল।সব শুনে বেলায়েত হোসেনের ভালই মনে হলো।তিনি দেখতে চাইলেন সেই মেয়েটির ছবি।পরে শাহেদ বললো তার বোন কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে।
বেলায়েত হোসেন খুশি হয়ে ফারাজকে ডাকতে চলে গেছেন।পূর্ণতা সেসময় রুম থেকে বেরুলো।চুল আঁচড়াচ্ছিল এতক্ষণ। বাবার সাথে কথা আছে।চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে কিনা সেটা জানা দরকার তার কাছ থেকে।এইসব ভাবতে ভাবতে সে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল।পূর্ণতাকে দেখে শাহেদ তার বড় বোনকে ফিসফিস করে বললো,’আপা দেখো।এই মেয়েটির কথা বলছিলাম’

পূর্ণতা শাহেদকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো,’শেষমেশ আসলেন তাহলে!’

শাহেদ মুচকি হেসে পূর্ণতাকে বসতে বলে।শাহেদের বোন ওকে ভাল করে দেখে ফিসফিস করে বললো,’মেয়ে তো কালো!’

শাহেদ তখন গলার আওয়াজ কমিয়ে বললো,’কালো না আপা।এটাকে শ্যামলা বলে।দারুণ একটা রঙ’

‘তুই ও তো শ্যামলা।বাচ্চাকাচ্চা সব শ্যামলা হবে’

‘শ্যামলা শ্যামলা একসাথ হয়ে ফর্সা জন্ম নেয় জানোনা?আমাদের বাবা মাও তো দুজনেই শ্যামলা,তুমি এত ফর্সা হলা কেমনে বলোতো?’

‘মা গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা হলুদ দুধে মিক্স করে খেয়েছিল আমার বেলায়’

‘তো আমি পূর্ণতাকে প্রতিবার গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা হলুদ দুধে মিশিয়ে খাওয়াবো’

শাহেদের আপা ঠাস করে নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি মারলেন
শাহেদ পূর্ণার দিকে হেসে চেয়ে আছে।পূর্ণতা ওদের দুজনের ফিসফিস কিছুই বুঝলোনা তাও দাঁত কেলিয়ে রাখলো।
——–
বেলায়েত হোসেন ফারাজকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসেছেন। শাহেদ ফারাজকে দেখে হাত মেলালো।পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে জায়গা খালি করতে।ফারাজ সেই পাশে বসলো এবার।
শাহেদ ফারাজের সাথ স্বাভাবিক ভাবেই কথা শুরু করে।
শাহেদের বড় বোন শায়লা তখন উঠে এসে পূর্ণতাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছিলেন।
পূর্ণতা বিষয়টা বুঝতে পারলোনা কেবল হাসিমুখে চেয়ে রইলো ওনার মুখের দিকে।

‘তোমার বয়স কত?’

‘২৩’

‘সত্যি?’

‘হুম।কয়েক মাস আগে ২৩হইছে।’

‘ভালই তো বয়স হইছে।বিয়ে করোনা কেন?’

‘আমি পড়ালেখা করে ভাল পোস্টের চাকরি করতে চাই।এখন বিয়েতে ইচ্ছুক না’

‘তার মানে তুমি বিয়ে করতে চাওনা এখন?’

‘হুম,চাইনা’

শায়লা খুশি হয়ে শাহেদের সামনে এসে বললো পূর্ণতা বিয়ে করতে চায়না।শাহেদ বেশ বুঝতে পারছে আপা কিছু একটা কান্ড ঘটিয়েছেন।তাই সে আপার কথার তোয়াক্কা না করে ফারাজকে আপার সাথে কথা বলতে বলে নিজেই পূর্ণতার কাছে গেলো কথা বলার জন্য।
———–
নীলা কিছুতেই মানছেনা সারথি আনাফের স্ত্রী। এক প্রকার তামাশা শুরু করে দিয়েছে সে।
আনাফ বিরক্ত হয়ে সারথিকে নিয়ে চলে যেতে চাইলো তাও পারলোনা।নীলা ওদের দুজনকে নড়তেই দিচ্ছেনা।বকবক করেই যাচ্ছে।
শেষে বাধ্য হয়ে আনাফ বললো,’দেখুন আপু।আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।দয়া করে নব বিবাহিত দম্পতিকে বিরক্ত করে গুনাহর ভাগিদার হইয়েন না’

নীলা রেগে গিয়ে বললো,’আমি জানি আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।আমি কিছুতেই মেনে নেবোনা আপনি বিবাহিত ‘

সারথি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আনাফ আর নীলা তর্কাতর্কি করেই চলেছে।শেষে আবার আনাফ সারথির হাত ধরে নীলার সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলো।ওকে গাড়ীতে বসিয়ে আনাফ নিজে ড্রাইভিং সিটে বসতেই নীলা এসে জানালার কাঁচে হাত দিয়ে বললো,’আমাকে আনব্লক করবেন তা নাহলে আরও উনিশটা আইডি খুলবো।আমাকে তো চিনেননা’

আনাফ নীলার কথা এড়িয়ে কাঁচ উঠিয়ে গাড়ী স্টার্ট করে চলে এসেছে ওখান থেকে।এবার সারথি বললো,’মেয়েটি আপনাকে খুব ভালবাসে’

‘এটাকে ভালবাসা বলেনা,পাগলামি বলে’

‘পাগলামি মানেই ভালবাসা।যে ভালবাসায় পাগলামি থাকে সেটাই তো টিকে থাকে’

‘এক পাগলামি হয় মানুষটাকে নিজের করে না পেলেও একা একা পাগলামি করা।আর আরেক পাগলামি হলো মানুষটাকে পায়নি বলে সারাদিন জ্বালানো। নীলা দ্বিতীয়টা করছে।সেটাকে ভালবাসার জন্য পাগলামি বলেনা।আমার ভাষায় ছেঁসড়ামি বলে।কলেজ লাইফ থেকে এমন ১০০টা নীলাকে আমি পেছনে ফেলে এসেছি।সবাই চায় ডাক্তারের বউ হতে,সবাই চায় বড়লোক একটা ছেলে তার হাসবেন্ড হোক।আর আমরা যারা এগুলার অধিকারী তারা চাই একটা শান্তিযুক্ত
স্থানে।যে মানুষটার কাছে শান্তি পাবো সেই মানুষটাকেই দিনশেষে আমরা বিয়ে করি।বুঝলে?’
———
ডিভোর্স পেপারে সজীবের সই করা বাকি ছিল।সে সময় হাতে নিয়ে সইটাও করে ফেলেছে।লেভেন এতদিন যেটার অপেক্ষা করছিল সেটা মূহুর্তেই সত্যি হয়ে যাবে সে কখনওই ভাবেনি।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাবাকে রাজি করিয়ে সজীবের সাথে ওর বাসায় এসেছে লেভেন।বাবাকে রাজি করাতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।লেভেন অসুস্থ বলে তিনি অল্পতেই রাজি হয়ে গেছিলেন।
সজীব লেভেনকে বাসায় এনে ওর সেবাতে কোনো ত্রুটি রাখছিল না।ওকে বিছানায় বসিয়ে নিজেই সব করছিল।খাবার এনে বিছানায় বসে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সে লেভেনকে।লেভেন মুগ্ধ চোখে সজীবকে দেখতে দেখতে বললো,’জানো আমি ধরে নিয়েছিলাম তুমি হয়ত সারথিকে ছাড়তে পারবেনা,ওকে ভালবেসে ফেলেছো’

‘আর কি ভেবেছিলে?’

‘ভেবেছি তোমায় ভালবাসা হয়ত ভুল ছিল।কত বোকা ছিলাম!আসলে বোকাও না।আমরা যারা কাউকে অনেক করে চাই,অনেক বেশি ভালবাসি, তার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা।আমারও প্রতিবার এমনই হতো।বারবার মনে হতো তোমায় আমি হারিয়ে ফেলবো।কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই।আমি তোমায় নিজের করে পেয়ে যাব খুব শীঘ্রই।’
———-
নানুরবাড়িতে সারথিকে নিয়ে এসেছে আনাফ।নানু তখন নামাজ পড়ছিলেন।
আনাফ সারথিকে সোফায় বসিয়ে নিজে নানুকে দেখতে গেলো।নানু নামাজ শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই আনাফ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সারপ্রাইজ দিয়েছে।
নানু তো খুশিতে আটখানা হয়ে গেছেন।চিৎকার করে সবাইকে ডাকলেন আসার জন্য।
নানুর বাসায় আনাফের মামা -মামি,এক খালা আর মামাতো দুইটা বোন থাকে।
নানুর ডাকাডাকিতে সবাই ছুটে এলো।
আসার পথে সারথিকে সোফায় দেখে অর্ধেকজন ওখানেই থেমে গেছেন বাকিরা নানুর রুমে এসে হাজির।
চলবে♥
(পর্ব ছোট করে দেয়ার কারণ আজ ৭/৮দিন ধরে অসহ্যকর কাশি।সিরাপ দুইটা শেষ দিলাম তাও কাশি ভাল হয়নি।লিখতে অনেক কষ্ট হয়😰)#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪৩
#আফনান_লারা
________
শাহেদ কি কারণে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা বোঝেনি পূর্ণতা।আড় চোখে তাকিয়েছিল একবার
তারপর নিজেই একটু সরে দাঁড়ায়।ওমা! শাহেদ আরেকটু কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো এবার।পূর্ণতা বুঝে উঠতে পারছেনা কি করবে।শেষে হাসি মাখা মুখে বললো,’আপনার কিছু লাগবে?’

শাহেদ এতটা লজ্জা পাচ্ছিল পূর্ণতার কথায় যে কিছুই বলতে পারছিল না সে।পূর্ণতা একটা বাহানা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে।শাহেদ সেটা দেখে নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি বসিয়ে দিলো।লজ্জার কারণে চান্স মিস হলো তার।
ফারাজকে শায়লা মনমত প্রশ্ন করছে।বলতে গেলে একবারে পাগল করে ছাড়ছে।ফারাজ কথা বলতে বলতে ওর মুখটাই ব্যাথা হয়ে গেছে এখন।
শাহেদ আবারও আগের জায়গায় বসে পূর্ণতার আসার অপেক্ষা করছিল সেসময় কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেলো।মতিন পেঁয়াজ কাটা বাদ দিয়ে ছুটে গেছে দরজা খুলতে।দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুশ্রী তরুণী।পরনে হলুদ থ্রি পিস,
চুলগুলোকে ছেড়ে দেয়া।সব দিক দিয়ে ঠিকঠাকই লাগলো।মতিন সালাম দিয়ে জানতে চাইলো কাকে চাই।মেয়েটি হাসি মুখে বললো,’আমার ভাইয়া আর আপু এই বাড়িতে এসেছে।আমার আসতে দেরি হয়ে গেলো একটু।’

মতিন জিভে কামড় দিয়ে বলে,’ওহ তাহলে আপনে ফারাজ ভাইয়ের হবু বউ?’

এটা বলে মতিন ওকে ভেতর ঢোকার জন্য জায়গা করে দিলো।
মেয়েটি ভেতরে গিয়ে জনসমক্ষে সালাম দিতেই সবাই এক সাথে তার দিকে তাকায়।
ফারাজ ও তাকিয়েছিল।শাহেদ হেসে বললো,’ঐ তো আমার বোন মিফতু এসে গেছে।’

ফারাজ একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলেছিল।মেয়েটি শাহেদের পাশে গিয়ে বসেছে।শাহেদ ফারাজকে বললো তার দাদাজানকে ডাকতে এবার।
মিসেস সোনালী রান্নাঘর থেকে মিফতুকে দেখছিলেন।
তার কাছেও ভালই লাগলো মেয়েটিকে।পূর্ণতাকে ডেকে ওকেও দেখালেন।পূর্ণতা খুশি হলো।অবশেষে তাকে আর ফারাজকে বিয়ে করতে হবেনা।বাঁচা গেলো।ফারাজ তার দাদাজানকে ডাকতে উঠে চলে গেছে।
মানিক সাহেব তার রুম থেকে বেরিয়েছেন হইচই শুনার পর।নিচে এসে সোনালীর কাছে জানতে পারলেন ফারাজকে দেখতে একটা মেয়ের পরিবার এসেছে।তিনি বেশ আগ্রহ দেখিয়ে ওনাদের সাথে কথা বলতে সামনে এগোলেন।পূর্ণতা উঁকি দিয়ে দেখছিল মিফতুকে।এদিকে শাহেদ ঠিক সেময় মুগ্ধ চোখে পূর্ণতাকে দেখে যাচ্ছিল।
ফারাজ দাদাজানকে ডেকে নিজে আর আসতে চাইলোনা কিন্তু দাদাজান তো ওকে নিয়ে আসা ছাড়া আসবেনই না।জোর করে ধরে নিয়ে এসেছেন। মিফতু ফারাজের দিকে তাকিয়ে বারবার হাসছিল।ফারাজের কাছে বিষয়টা কেমন যেন লাগছে।শাহেদ বলে উঠলো ফারাজ আর মিফতুকে একান্তে কথা বলতে দেয়া উচিত।

সবাই মেনে গেলো এক কথায়।তাদের দুজনকে বাগানে পাঠানো হলো তখন।ফারাজ যতই দূরে সরে আসার চেষ্টা করছে ততই মিফতু মেয়েটা কাছে আসার চেষ্টা করে।
মনে হয় যেন গায়ে পড়া স্বভাবের।কিন্তু চেহারা দেখে বোঝা যায়নি শুরুতে।
শেষে ফারাজ চেয়ার টেনে বসেই গেলো।কারণ যতক্ষণ সে দাঁড়িয়ে ছিল ততক্ষণ মিফতু মেয়েটা ওর কাছে ঘেঁষে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল।
——
‘আচ্ছা আপনার গার্লফেন্ড কয়টা ছিল?’

‘১’

‘রিয়েলি?বিশ্বাস করলাম না।’

‘কেন বিশ্বাস করলেন না?’

‘কারণ আপনাকে দেখে অতিরিক্ত সাধাসিধা মনে হয়।আর এমন সাধাসিধা গুলাই বেশিরভাগ মিচকা শয়তান হয়।ভেতরে ভেতরে একশোটা প্রেম করে।তাই আমার ধারণা আপনারও সেম’

‘আপনার ধারণা ভুল,আমি প্রেম করলে একটাই করেছিলাম।এর আগে পরে আর নেই’

‘স্বীকার না করলে কি করার আছে?আচ্ছা,আমার কাছে জানতে চাইবেন না?’

‘নাহ।অতীতে কি ছিল না ছিল তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছে আমার নেইই’

‘গুড।তবে যেহেতু আমাদের বিয়ে হবার চান্স আছে, আপনার তো জানা উচিত ‘

‘বললাম তো অতীত নিয়ে জানতে চাইনা।’

মিফতুু এবার চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,’বিয়ের জন্য সাদামাটা ছেলেরাই বেস্ট।বেশি চাল্লু গুলা ভাল না’

‘এই যে বললেন সাদাসিধা গুলা প্রেম করে বেশি?’

‘প্রেম করে তবে সবসময় সিরিয়াসলি করে।মানে যখন যে প্রেম করে তখন সেটা সিরিয়াসলি নেয়’

‘আপনার কথা তো দু রকম হয়ে গেলো।’

‘এখনই দোষ খুঁজছেন?’
———
পূর্ণতা উঁকি দিয়ে দেখছিল ফারাজ আর মিফতুকে।ওমনি পেছন থেকে শাহেদের গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে পেছনে ফিরে তাকালো সে।শাহেদ বললো,’আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল’

‘জ্বী বলুন’

‘আসলে আমার বোনের বিয়ের আগে আমি চাচ্ছি আমার বিয়েটা হয়ে যাক।’

‘তো করুন না।সমস্যা কোথায়?’

‘আসলে আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করেছি কিন্তু সে আমায় মেনে নেবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবনায় পড়ে আছি’

‘তাকে বলুন আপনার অনুভূতির কথা।’

‘বলেছি,সে উল্টা বুঝেছে ‘

‘কি বুঝেছে?’

‘আমি আসলে আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছি।’

পূর্ণতা চোখ বড় করে শাহেদের মুখের দিকে চেয়ে রইলো।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।শাহেদ আবার বললো,’আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল ম্যাচিউর একটা মেয়েকে ঘরের বউ করে আনবো।যদিও খুঁজিনি তবে মনে হয় পেয়ে গেছি’

‘ততততততত’

‘ততততত কি?’

‘তো কি বলতে চাইছেন?’

‘বিয়ে।’

‘অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠলে আশেপাশের যত মানুষ আছে সবাই বিয়ে নামক শব্দ ছাড়া আর কিছু নিয়ে আলোচনা করতে পারেনা?আমি ইদানিং বিয়ে শব্দটা এত এত শুনছি যে ঘুমের ঘোরেও বিয়ে বিয়ে বলছি।আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।’

‘দেখুন পূর্ণতা,এই সময়টা মোক্ষম সময় বিয়ে করার।আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার পড়াশুনার ক্ষতি হবে,তা কিন্তু না।আমি আপনাকে পড়ালেখায় পুরো সার্পোট দিবো।’

‘সেটা নয় আমি তৈরি না আসলে’

‘তবে কথা হয়ে থাকুক, যেদিন তৈরি হবেন সেদিন বিয়ে হবে’

‘দেখুন শাহেদ ভাই,আমি বাবার সাথে দেশ ছেড়ে চলে যাবো।এখন এসব নিয়ে ভাবছিনা একেবারে’

শাহেদ মন খারাপ করে থাকলো।আর কিছুই বললোনা।

পূর্ণতা পালিয়ে চলে গেছে বাবার কাছে।এখানে আর থাকা যাবেনা।দেখা গেলো দাদাজানের কানে কথা গেলে উনি একই স্টেজে দুই জোড়ার বিয়ে পরিয়ে ছাড়বেন।
———-
মিফতু ফারাজকে পেরেশান হতে দেখে আবার বললো,’আপনি কি চিন্তা করছেন?আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি বুঝি?’

‘নাহ সেটা নয়।’

‘চিন্তা তো আমাদের মেয়েদের করা উচিত।আপনি ছেলে হয়ে এত চিন্তা করছেন?কি ভাবছেন এত?

‘ভাবছি কি করে আপনার পরিবারকে মানা করবো’

এটা বলে ফারাজ উঠে চলে গেলো।মিফতু তাজ্জব হয়ে বসে আছে।তার পরিবারকে মানা করার কোনো কারণ সে দেখছেনা।তাহলে ফারাজ কেন মানা করবে?
————
সারথিকে আনাফের খালা দেখছেন ভাল করে।সারথি তখনও জানেনা তাকে কয়েকজন মানুষ গভীর ভাবে দেখে যাচ্ছে।খালা মামিকে ফিসফিস করে বললেন,’মেয়েটাকে আনাফ এনেছে?’

মামি বললেন,’হুম তাই তো মনে হয়।আনাফের গার্লফ্রেন্ড নাকি?’

‘হয়ত তাই।নাহলে এর আগে তো এমন ঘটনা দেখিনি’

ফিসফিস আওয়াজ সারথির কানে আসলো তাও সে চুপ করে থাকলো।ভেতরের রুম থেকে আনাফকে নিয়ে নানু বের হতেই সোফায় সারথিকে দেখে জানতে চাইলেন ও কে।
আনাফ সোজা কথায় বললো সে এই মেয়েটিকে কয়েকদিন পর বিয়ে করবে।এই শুনে বাড়ির সবাই সারথিকে ঘিরে বসে পড়েছে।
মামি আনাফের দিকে চেয়ে ধীরে বলেন,’কি ব্যাপার?মেয়েটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কেন?আমাদের দিকে তাকায় না কেন?লজ্জা পাচ্ছে নাকি?’

‘আসলে মামি ও অন্ধ’

এটা শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে।নানু অমনি আনাফের হাত ধরে সোজা বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলেন।শক্ত গলায় জানতে চাইলেন আনাফ কি সত্যি এই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়,
তার কি মাথা আছে নাকি গেছে।তিনি এর আগে এই গ্রামের বিশটা মেয়েকে রিজেক্ট করেছেন আনাফের উপযুক্ত না বলে, শেষে আনাফ কিনা এমন একটা মেয়েকে পছন্দ করে নিয়ে আসলো সবাইকে দেখাতে।

আনাফ স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলো সে যা বলেছে তার সবটাই সত্যি।
নানু মুখ গোমড়া করে চলে গেছেন।আনাফ তার পিছু পিছু আসলো, খালা সারথির চোখের সামনে হাত নাড়াচাড়া করে টেস্ট করছিলেন আসলেই সে চোখে দেখে নাকি দেখেনা।
আনাফ তখন বললো,’সারথি আমার সংসার জীবনে সুখ সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে আর তাই ওকে আমি জীবনসঙ্গী বানাতে যাচ্ছি,এটা ফাইনাল’

খালা আনাফের কাছে এসে বললেন,’আপা জানে তুই যে চোখে দেখতে পারেনা এমন একটা মেয়েকে বউ করবি?’

‘জানেনা,তবে জানবে’

‘জলদি জানা।আপা রাজি থাকলে আমরা কেউ তোকে কিছু বলবোনা।তোর জীবন তোর ডিসিশান’

‘একদম ঠিক।মাকেও এটা মানতে হবে।আমার জীবন,আমার ডিসিশান আমি কাকে বিয়ে করবো নাকি করবোনা’
————-
শাহেদ ভাবলো পূর্ণতা মেয়ে মানুষ হয়ত লজ্জায় বারবার কথাটাকে এড়িয়ে চলছে, সে বরং এ বিষয়ে ওর বাবার সাথেই সরাসরি কথা বলবে।তাই কৌতূহল বশত সে দাদাজানের কাছে পূর্ণতার বাবার কথা জানতে চাইলো।তিনি সোজা দেখিয়ে দিলেন উপরের তলায় রেডিওতে গান শুনছে এখন।শাহেদ বললো সে কথা বলতে চায়।এই বলে সে উপরের দিকে চলে গেলো।ঐদিকে ফারাজ ছুটে এসে দাদাজানের সামনা সামনি বসে বললো,’আমার জরুরি কথা আছে দাদাজান’

‘জানি কি বলতে চাও’

‘জানেন?’

‘তুমি যে পূর্ণতাকে পছন্দ করে ফেলেছো তাই এখন কাউকেই তোমার পছন্দ হবেনা,এবং আমি এটাও জানি তুমি মিফতুকে বিয়ে করবেনা এটা বলতে এখন ছুটে এসেছো’

‘নাহ কথা সেটা না।মিফতুকে মানা করে দেয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে আমার কাছে। ‘

‘কারণ তো দেখাবেই।ঐ যে বললাম একজনকে চোখে ধরলে সামনে বিরাট সুন্দরী বসে থাকলেও বলবে এ তো সুন্দর না’

‘দাদাজান ভুল ভাবছেন, আমি আসলে পূর্ণতাকে পছন্দ করিনা’

‘তাহলে এত ভাল পরিবারের এত সুন্দর একটা মেয়েকে মানা করার পেছনে কি কারণ আছে তোমার কাছে?’

‘আমি ওর সাথে কথা বলেছি এগারো মিনিট।এই এগারো মিনিট আমার দম বন্ধ ছিল।অস্বস্তিতে ছিলাম।’

‘এই আর এমন কি?বিয়ের পর দম ছুটে যাবে😂’

চলবে♥#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪৪
#আফনান_লারা
________
“বিয়ে সেই পবিত্র বন্ধন যেখানে দুজন সঙ্গী শান্তি খুঁজে পায়।একজন আরেকজনের পরিপূরক ও হতে পারে।তাই আমরা তাকেই বিয়ে করি যার দ্বারা শান্তি পাবো,যাকে নিয়ে জীবনটাকে স্বাচ্ছন্দ্যে পার করা যাবে।সেখানে মিফতুর সাথে কথা বলে আমার মনে হলোনা সে আমার সেই জীবনসঙ্গী।আমায় মাফ করবেন দাদাজান,ওকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা।’

‘হয় তুমি মিফতুকে বিয়ে করবে নাহয় পূর্ণতাকে।আমি এর বেশি কিছু শুনতে চাইনা’

এই কথা বলে দাদাজান উঠে চলে গেছেন।ফারাজ মন খারাপ করে পাশ ফিরে বসতেই দেখলো মিফতু এসে হাজির।হাসিমুখে সে ফারাজের পাশে ধপ করে বসে পড়ে বললো,’কি হলো?সবাইকে বলে দিছেন যে আমায় বিয়ে করবেন না?’

ফারাজ চুপ করে মিফতুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।পূর্ণতা সেসময় মাথার বেনি ঝুলিয়ে হাতে কমলার বাটি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।ফারাজ মিফতুর থেকে চোখ সরিয়ে পূর্ণতার দিকে চেয়ে থেকে বলে,’ধরুন একটা মানুষকে আপনি অনেকদিন ধরে চিনেন।মোটামুটি তার স্বভাব,ব্যবহার আপনার জানা হয়ে গেছে।আর আরেকটা মানুষকে আপনি চিনেনই না।এবার আপনি ঐ মূহুর্তে বিয়ে করতে হলে কাকে বিয়ে করবেন?’

মিফতু গালে হাত দিয়ে অনেক ভেবে বললো,’যাকে চিনি তাকেই বিয়ে করবো।কারণ অচেনা মানুষকে যদি বিয়ে করে এরপর দেখি তার আচরণ মিল খাচ্ছেনা তখন তো ভুলটা আমারই হবে।তাই যাকে চিনি তাকেই বিয়ে করবো’

ফারাজ উঠে চলে গেলো তখনই।
পূর্ণতা রান্নাঘরে থেকে মাথা বের করে মিফতুকে দেখছে।মনে হয় বেশি লম্বা না।পায়ে উঁচু জুতা পরেছে।তবে গায়ের রঙ ফর্সা একদম।দারুণ মানাবে ফারাজের সাথে।কমলার কোয়া মুখে পুরে এসবউ ভাবছিল সে ওমনি মিফতু ওকে দেখে ফেলে।সোফা থেকে উঠে পূর্ণতার কাছে এসে সে নিজেই এবার পূর্ণতাকে দেখছে।অনেকক্ষণ দেখাদেখি করে বললো,’তুমি কে হও এই বাড়ির?’

‘দূর সম্পর্কের আত্নীয়’

‘ওহ!ফারাজের সাথে কথা হয় তোমার?’

‘হুুম।অল্প’

‘কেমন উনি?আসলেই এমন সাদাসিধা নাকি নাটক করছে?’

‘নাটক করবেন কেন?উনি এমনই’

‘আমি ওনাকে বিয়ের পর টাইট দিয়ে ঠিক করে ফেলতে পারবো।এটা কোনো বড় ব্যাপার না।’

পূর্ণতা অবাক হয়ে মিফতুর কথাটা শুনলো।দেখে একেবারে পাকা মনে হয় মেয়েটাকে।যাই হোক,ভালই হলো।উনি যে রকম মানুষ, ওনার আসলেই এমন টাইট দেয়া মেয়ে দরকার।বুনো ওলের জন্য বাঘা তেঁতুলই ঠিক আছে’

পূর্ণতা মুচকি হেসে মিফতুর দিকে চেয়ে থাকলো।শায়লা মিসেস সোনালীর সাথে কথা বলছিল এতক্ষণ।কথা শেষে মিফতুকে এখানে দেখে হাত ধরে এক কোণায় নিয়ে আসলেন।ফিসফিস করে জানালেন পূর্ণতাকে শাহেদ পছন্দ করে।

এই শুনে মিফতু অবাক হয়ে পূর্ণতাকে আবারও চেয়ে দেখলো এরপর বললো,’তা কি করে হয়?আম্মু তো রাজি হবেনা,মেয়ে আমার মতন বেশি সুন্দর না তো’

‘সেটাই তো তোর ভাইরে বুঝাইলাম,বুঝেইনা।কি জাদু করছে এই মেয়ে কে জানে!’

‘আচ্ছা বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দাও।আমি দেখছি।’
——-
শাহেদ অরিন্দমের রুমের বাইরে এসে দাঁড়ায়।সাহসে কুলিয়ে পারছেনা।এ প্রথম কোনো মেয়ের বাবার কাছে সে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
দরজার কড়া নেড়ে সে সালাম দেয় অরিন্দমকে।অরিন্দম মাথা তুলে তাকিয়েই আছে।শাহেদ হালকা কেশে অনুমতি চাইলো ভেতর আসার।অরিন্দম দিলো অনুমতি।
শাহেদ এবার ওনার কাছাকাছি এসে চেয়ারে বসে পড়েছে।

‘কে বাবা তুমি?’

‘আমি শাহেদ।শাহেদ হোসেন।আমার বোনোর জন্য ফারাজকে আজকে দেখতে এসেছিলাম পরিবার নিয়ে’

‘ওহ হো তাই?বেশ বেশ।খুব ভাল।ফারাজ খুব ভাল একটা ছেলে’

‘হুম।’

‘তা আমায় কিছু বলবে নাকি?’

শাহেদ এবার আমতা আমতা করছে।কি থেকে কি বলবে তার শুরুটা কেমন হবে অনেক ভেবে সাহস নিয়ে বলেই ফেললো,’আমি পূর্ণতাকে বিয়ে করতে চাই’

এ কথা শুনে অরিন্দম চোখ বড় করে ফেললেন।এরপর স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইলেন শাহেদ কিসে চাকরি করে।কতদূর পড়ালেখা করেছে।
শাহেদ তখন সানন্দ্যে বলা শুরু করে দিলো নিজের ব্যাপারে সবটা।
যে সে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে।মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে।সব খুঁটিনাটি যা যা বলার সব বললো সে।

সব শুনে অরিন্দমের বেশ ভাল মনে হলো।শাহেদ দেখতে শুনতেও ভাল।অতোটাও খারাপ না।এখন সব চাইতে বড় ভাববার বিষয় হলো পূর্ণতা কি রাজি হবে?সে তো সবসময় বিয়ের ব্যাপারে মানা করে দেয়।শাহেদের বেলায় ও মানা করবেনা তার কি গ্যারান্টি?
শাহেদ উত্তরের অপেক্ষায় ছিল বলে অরিন্দম বললো,’আচ্ছা আমি পূর্ণতার সাথে কথা বলে তোমায় জানাবো’

‘ঠিক আছে আঙ্কেল।’

এই কথা বলে শাহেদ উঠে চলে আসলো বাইরে।
শায়লা অপেক্ষা করছিল শাহেদ আসার।
ও আসতেই চেপে ধরলেন ।জানতে চাইলেন শাহেদ পূর্ণতার বাবার সাথে গোপনে কি এমন কথা বললো এতক্ষণ ধরে।

‘আমি বিয়ে নিয়ে কথা বললাম’

‘তোকে না বললাম এই মেয়েটাকে মা পছন্দ করবে না’

‘করবে।অবশ্যই করবে।মানিয়ে নিতে হবে’

শায়লা নিজের কপালে নিজে চড় দিতে দিতে মিফতুকে গিয়ে ধরলো শাহেদকে বোঝানোর জন্য।
কিন্তু শাহেদ মিফতুর কোনো কথাই শুনলোনা।
তার কথা হলো সে বলেছে পূর্ণতাকে বিয়ে করবে তার মানে ওকেই করবে।কারো কোনো কথা সে শুনবেইনা।
——–
পূর্ণতাকে এর আগে মিফতু শ’খানেক প্রশ্ন করে চলে গেছিলো।আগে কোথায় থাকতো?প্রেম-টেম ছিল কিনা সব খবর সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করে তারপর গেছে।
পূর্ণতার কাছে মিফতুর এই স্বভাব একটুও ভাল লাগেনি।কেন যেন একবারের জন্য মনে হলো সে ফারাজের যোগ্য না।
ফারাজকে শান্তিতে থাকতে দেবেনা।কথা দিয়ে আঘাত করতে জানে।
————-
ফারাজ তার মাকে খুঁজছে।একমাত্র মা পারবে দাদাজানকে রিকুয়েস্ট করে বিয়েটা আটকাতে। অনেক খোঁজার পর ছাদে সে মাকে পেয়ে গেলো।মা ছাদ থেকে শুটকির ডালা নিয়ে ফিরছিলেন। ফারাজকে দেখে হাসি মুখে বললেন,’বউ হলো নিচের তলায়, উপরের তলায় কি করিস শুনি?’

‘মা আমার একটা কথা আছে ‘

‘কি কথা?’

‘একটু দাঁড়াও না’

ফারাজ মায়ের হাত ধরে আটকে রাখলো।হাতের ডালাটা রেখে মাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,’মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়নি’

‘কেন কেন??এত সুন্দর একটা মেয়ে,কি ভাল পরিবার।কি সমস্যা? আচ্ছা সত্যি করে বল দেখি,তুই কি পূর্ণাকে পছন্দ করে ফেলেছিস?’

‘সবাই এক কথা কেন বলছে!ওকে কেন পছন্দ করবো?আমার কাছে মিফতুকে ভাল লাগেনি তাই বিয়ে করছিনা এর মাঝে পূর্ণতা কেন আসছে?’

‘কারণ মিফতুকে মানা করবার তো কোনো কারণ আমরা কেউ দেখছিনা’

‘সব কারণ চোখে দেখা যায়না।ওর সাথে কথা বলে আমার ভাল লাগেনি আর তাই আমি বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা।তুমি দাদাজানকে বোঝাও আমার পক্ষে মিফতুকে কোনো মতেই বিয়ে করা সম্ভব না’
———
চলে যাবার আগে শাহেদ আরও একবার পূর্ণতার কাছে আসলো।পূর্ণতা তখন টেবিলের উপর থেকে নাস্তার প্লেট সরাচ্ছিল।

‘একটা কথা বলি?’

‘জ্বী’

‘ আমি আপনার বাবার সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলেছি।উনি রাজি আছেন যতদূর বুঝলাম।এবং এখন আপনার সাথে কথা বলবেন এ ব্যাপারে।আপনি যদি রাজি থাকেন তবে বলবেন ওনাকে।ধরাবাঁধা নেই। ‘

‘ঠিক আছে’

‘আমি যাই?’

‘যান’

‘জান??জান বললেন আমায়?’

‘হুম যান বলেছি’

‘চলে যাবার যান নাকি আদর করে ডাকা জান?’

এই কথা শুনে পূর্ণতা চোখ বড় করে পেছনে তাকালো শাহেদের দিকে।শাহেদ জিভে কামড় দিয়ে সরি বলতে বলতে চলে যাচ্ছে।

হাসি পেলো ভীষণ।এমন ভদ্র,চুপচাপ লাজুক স্বভাবের মানুষ ও যে মজা করতে জানে তা পূর্ণতার জানা ছিলনা।
“”””আসলে কিছু মানুষ আসলেই অবাক করার মতন হয়।
তাদের বাইরেটা দেখে ভেতরটা বোঝা যায়না।মিফতু মেয়েটা কতই না সুন্দর তাও তার ব্যবহার কেমন যেন!!
আর এই লোকটা!!
ফারাজকে নিয়ে তো কি বলবো আর!একটা মেয়েকে নিজের সবটা দিয়ে ভালবেসেও পেলেননা।এখন তিনি কাউকে বোঝাতে পারছেন না কেন তিনি বিয়ে করতে ইচ্ছুক না”””””
———–
আনাফের কথা শুনে সবাই নিরাশ হয়ে বসে আছেন।তাদের ধারণা সারথিকে কোনো কিছুতেই আনাফের মা পছন্দ করবেন না।সারথির সব ঠিক থাকলেও সে চোখে দেখতে পায়না।এটা অনেক বড় একটা বিষয়।নানুর নিজেরই এই বিষয় নিয়ে মেজাজ গরম হয়ে আছে।আনাফের আম্মু এটা জানলে কি হবে তা ভাবতে গিয়েই দোটানায় পড়ে আছেন তিনি।
আনাফ কিছু সময় থেকে এবার বললো সে চলে যাবে। নানু ওকে বললেন আরও কিছু সময় থাকতে কিন্তু আনাফ রাজি হয়নি।সারথিকে নিয়ে চলে গেলো।গাড়ীতে কিছুদূর যাবার পর সারথি মুখ খুললো।বললো,’আপনি কেন সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন??আমি নিজেও চাইনা এই বিয়েটা হোক।আপনার সাথে আমাকে মানায় না।আপনি আরও ভাল কিছু পাবার যোগ্যতা রাখেন।তার পরেও সমাজকে কটু কথা বলার সুযোগ কেন করে দিচ্ছেন?’

‘লাইফটা তো আমার,সমাজের না।আমি জানি আসলে আমার জন্য কি ভাল হবে,আর কি হবেনা’

‘আপনি আপনার মায়ের কথা শুমবেন না?আমি সবসময় চাইতাম আমার শাশুড়ি আমায় খুব ভালবাসবে।তেমন পেয়েছিলাম ও।
সজীবের আম্মু আমায় অনেক ভালবাসেন’

‘সজীব তো ভালবাসেনা।সবসময় পারফেক্ট কিছুই হয়না।শাশুড়ি ভালবাসলে স্বামী ভালবাসেনা।স্বামী ভালবাসলে,শাশুড়ি ভালবাসেনা।তোমার বেলায় এবার সেটায় হবে।
তবে আমার মনে হয়না মা বেশিদিন তোমায় ভাল না বেসে থাকতে পারবে।তোমায় মা অল্প দিনের মধ্যেই ভালবেসে ফেলবে’

সারথি বিরক্ত হয়ে বললো,’চাপাচাপি তে বিয়ে করতে চাইনা আমি’

‘তবে তাই হোক।আগে মা মেনে যাক।তারপর নাহয় বিয়ে করবো?অপেক্ষা করানোই তো তোমার স্বভাব।বয়স পার হয়ে যাচ্ছে আমার সেদিকে তোমার খেয়াল নেই। শুধু অপেক্ষা করিয়েই যাচ্ছো’

‘আপনাকে যে আমি বিয়ে করবো তার সিউরিটি কোথায়?’

‘না করলে জোর করে বিয়ে করবো।সিরিয়ালের নায়কদের মতন উঠিয়ে নিয়ে এনে ধরে বিয়ে করে বাসর সেরে ফেলবো।মুহাহাহাহাহাহা’

‘ভয় পেলাম না একটুও’

‘ভয় পাও নাই,তো পাইবা।যখন উঠিয়ে আনবো, তখন ভয় পাইবা।এখন কেন ভয় পাবা?’

সারথি আর কিছু বললোনা।তবে হাসলো অন্যদিকে ফিরে।আনাফ বুদ্ধি করে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছে।যাতে পৌঁছাতে দেরি হয় আরও বেশি।
রাত হয়ে গেছে অনেক।সারথি ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমিয়ে পড়ে শেষে।আনাফের ও ঘুম আসছে।এরই মাঝে ওর কলিগ ফোন করে জানিয়েছে আনাফের কেবিনে রুগী এসে ভরে যাচ্ছে অথচ অানাফ নেই বলে তাকে রুগী দেখতে হচ্ছে।তার জন্য চাপ হয়ে যাচ্ছে এটা।সে যেন জলদি কাজে ফিরে আসে।
——
সম্ভবত নানু মাকে খবর পৌঁছে দিয়েছে যার কারণে বাসায় যাবার আগেই মায়ের ফোন আসা শুরু হয়ে গেলো।
আনাফ পরে অধরার কাছে না গিয়ে আগে মায়ের কাছে যাবে বলেই ঠিক করে।গাড়ী ঘুরিয়ে সে মায়ের কাছে যাচ্ছে এবার।সারথি জানেও না সে তার হবু শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।

বেশ কিছু সময় পর একটা ধাক্কায় সারথি জেগে যায়।চোখ ডলে বলে,’ আমরা এখনও পৌঁছাইনি?’

‘আমরা মায়ের কাছে যাচ্ছি’

এই কথা শুনে সারথি অবাক হয়ে গেলো।জানতে চাইলো কি কারণে।
আনাফ জানালো সবটা।সারথি ভয়ে শেষ।মা আনাফের সাথে সাথে ওকেও ঝাড়বেন এটা সে নিশ্চিত। সে বলছে তাকে অধরার কাছে নামিয়ে দিয়ে আসতে কিন্তু আনাফ শুনছেনা কিছুতেই।সে গেলে সারথিকে নিয়েই যাবে।
———
কলিংবোলের আওয়াজ পেয়ে মা এসে দরজা খুললেন।আনাফ মুচকি হেসে এগিয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।আনাফ ঝুঁকতেই তার পেছনে সারথিকে দেখলেন তিনি।এরপর গাল ফুলিয়ে আনাফকে ছাড়িয়ে সোফায় এসে বসলেন।

সবাই চুপ করে বসে আছে ওখানে।অনেকক্ষণ পর আনাফের মা বললেন,’তোর কি মাথা গেছে??আমি ঐদিন সজীবকে বাসায় দেখলাম।একটা বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করবি তুই?সজীব জানলে কি হবে ভাবছিস?’

‘ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে মা’

‘অন্য কোনো অন্ধ মেয়ে হলেও হতো।বেছে বেছে সামনের ফ্ল্যাটের এই মেয়েটাই তোর চোখে পড়লো?তাও বিবাহিত! ‘

‘মা ওকে আমি ভালবাসি’

‘তোর থেকে এইসব বাচ্চামি আশা করিনি’

‘সারথি যে ভাল এটার সার্টিফিকেট মনে হয় তোমায় দিতে হবেনা।কারণ তুমি আগ থেকেই জানো ও কেমন ।’

‘এটাও জানি সারথি নতুন এই বাড়িতে আসায় সজীব আর ওর বাসর আমাদের বাগানের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল।আর সেই ফুল গাছ শখ করে তুই লাগিয়েছিলি’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here