#তনুশ্রী♥
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_৫
সন্ধ্যা নেমেছে। কিছুক্ষণ আগেই তনু আর তূরের ভাত কাপর হয়ে গেছে। কাল তূর সহ তনু আজিদ বাড়ি যাবে। শাশুড়ী বলে দিয়েছেন দুদীনের বেশি যেন এক মুহুর্ত না থাকা হয়। তনু বাধ্য মেয়ের মতো মাথায়। রিমি নিজ ঘরে আর তনু নিজ ঘরে চলে আসে। ভাত কাপরের পর থেকে তূরের দেখা নেই। কোথায় গেছে কে জানে? তনুর তিনজন চাচাশ্বশুরকে তনু এখনো একবার প্রদক্ষিণ করেনি। ওনারা ছিলেনও না বৌ-ভাত অনুষ্ঠানে। জাকজমক ভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে অনুষ্ঠান। তনুর মনে ঘোর প্রশ্ন জাগছে তারা কোথায়? তনু একলা ঘরে মোটেও ভালো লাগছে না। তাই বাইরে বের হয় তনু। উপরতলাতেই সকল মোড়ল বাড়ির বৌ রা থাকে। তনু প্রথমে জুঁইয়ের ঘরে যায়। জুঁই হলো তনুর ছোট চাচা শাশুড়ী। ঘরের সামনে গিয়ে হাঁক ছাড়ে,
– আছেন? ‘
জুঁই উত্তরে বলে,
– তনু নাকি? ‘
– হ! ‘
– আয়ো! ‘
তনু নির্বিকারে ঘরে ডোকে। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন জুঁই। তনুকে দেখেই উঠে বসে। তনু জিজ্ঞেস করে,
– শুয়া আছিলেন মনেহয়?
– হুম। ক্লান্ত লাগতাছে তাই গা হেলাই দিসি।
– ও। আসলে একখান কতা কওয়ার লাগি আইছিলাম, আমার চাচাশ্বশুরে কই? মানে দেখলাম না তো এহনো। তাই! ‘
ফ্যাকাশে প্রলেপ বুলিয়ে বলেন জুঁই,
– তিনারা কাজে গেছে। আইলেই আমি দেহা করাই দিমু ঠিক আছে?
অন্যকেউ হলে কড়াভাবে এ বিষয়ে উত্তর দিতো। কিন্তু জু্ঁই নরম স্বভাবের। অল্পতেই তার কান্না আসে। কথাগুলো গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনা তনুর কাছে। সে মুচকি হাসি হাসে বেড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে। তনুর হটাৎ বেড়িয়ে যাওয়া কেমন যেন লাগে জুঁইয়ের মনে। তনু বাইরে এসে আরেকবার তাকায় জুঁইয়ের রুমের দিকে। কেমন একটা রহস্যকর ব্যপার। তনু মনে করেছিলো এ বিষয়ে জুঁই অন্তত কিছু বলবে কিন্তু সেও সরাসরি মিথ্যে কথা বলে দিলো! কাজের জন্য বাইরে গেলেও তো বিয়েতে একবার আসতো!
– আরে নতুন বউ এখানে যে?
তনুর মেজো দেওর দাড়িয়ে। মাথার ঘোমটা ঠিক করে নেয় তনু। বলে,
– চাচী শাশুড়ীর ঘরে গেছিলাম আরকি।
– জুৃঁই?
– হু।
তনু আর তির্থের মাঝে নিরবতা কাটে কিছুক্ষণ। তনু ভালো করে লক্ষ করে তির্থকে। তির্থ চিন্তিত কিছু নিয়ে। কিন্তু এখনি তো ঠিকিই ছিলো। হঠাৎ কি হলো? তনু জিজ্ঞেস করে,
– আমার চাচাশশুড়েরে একবারও দেখলাম না। তারা কই?
চোখ বড়বড় করে তাকায় তির্থ। দুদীন যেতে না যেতেই শুন্যতা বুঝতে পারছে মেয়েটা। যতটা বোকার মতন থাকে ঠিক ততটা বোকা নয় এই মেয়েটা। ভাবতে ভাবতেই বলে তির্থ,
– আরে কি হয়েছে, তারা কাজে ব্যাস্ত। কাজ পাগল মানুষরাতো নিজের বৌ মরে গেলেও সেখান থেকে আসতে চায় না। তেমন কিছু না তুমি যাও। ‘
তনু ধির পায়ে নিজ ঘরের দিকে এগোয়। লক্ষ তার তির্থের দিকে। সে এখন কোথায় যায় সেটাই লক্ষের বিষয় তনুর কাছে। তনু ঘরের সামনে যেতেই তির্থ জোড়ে ঘরে ডুকে পড়ে। তনু তা দেখে অবাক ভাবে দাড়িয়ে রয়। শরীরে বাড়ছে উত্তেজনা! চম্পার ঘরে না গিয়ে তির্থ জুঁইয়ের ঘরে গেলো কেন? তনু দিশেহারা হয়ে ছুটে যায় জুঁইয়ের দরজার সামনে। তনুর পা মৃদুরুপে কাপছে। তনু আড়ালে আড় পাতে,
তির্থ ঘরে ডুকতেই জুঁই হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। মুখ ধারন করে ভয়ার্ত! দৃষ্টিতে কাঁপুনি! তির্থ এতটুকুতেই ঘেমে গেছে। গলা খিচে বলে তির্থ,
– তুই মা* তনুরে কিছু বলছিস?
শাড়ির আচল খিচে নেয় জুঁই। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো জুঁই,
– না তো! আমি কিচুই কই নাই ওরে। ওয় খালি জিজ্ঞেস করছিলো আমি…’
– ওরা তিনজনে যে এখন ওপরওয়ালার কাছে তা ভুলেও যেন বাড়ির কেউ জানতে না পারে। যদি কেউ একটা টু শব্দ জানতে পারে তো তোরা তিন বৌ খতম! ‘
বলেই তির্থ জড়িয়ে নেয় জুঁইকে। তা দেখে বুক কেঁপে ওঠে তনুর। এটা কি করছেন উনি? জুঁইকে ছেড়ে দিয়ে তির্থ বাইরের দিকে আসে। তনু এবার কি করবে? পর্দার আড়ালে অতি তড়িঘড়ি লুকায় তনু। কিন্তু বাইরে কেউ আসে না। বরং দরজা লাগানোর আওয়াজ ভেসে আসে। বেড়িয়ে আসে তনু আড়াল থেকে। ছুটে যায় দরজার সামনে। দরজা লাগানো! কলিজা পানিশূন্য তনুর! যখন তখন কেউ চলে আসতে পারে। একদম সামনা সামনি পাঁচজনের ঘর। হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসে জুঁইয়ের গলাফাটা চিৎকার!
________________
রাত্রি দ্বিপ্রহর! তূর এখনো ঘরে আসেনি। তনুর চোখে ঘুম নেই। তির্থ আর জুঁইয়ের ভেতরে কি হয়েছে তনু বুঝতে পেরেছে। তখন থেকে বিছানায় গুটিয়ে শুয়ে আছে। হাত পা কেমন অদ্ভুতভাবে কাঁপছে। ঘরে কত সুন্দর ফুটফুটে বউ চম্পা থাকতে শেষে কিনা নিজের চাচার বউয়ের সাথে…ছিহ্! ভাবলেই তনুর গা ঘিনঘিন করে ওঠে। আর তিনজনই মারা গেছে! তাহলে কেন লুকোচুরি করছে? কাউকে কেন বলতে দিচ্ছে না তির্থ? সকল বৌই জানে অথচ তারা চুপচাপ? কেন কেন কেন? প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তনুর মাথায়!
মধ্যরাতে তূর ঘরে ডোকে। তনুর পাশে শুতেই তনু জাপটে ধরে তূরকে। আকস্মিক ঘটনায় হযবরল অবস্থা তূরের। তনুকে ছাড়িয়ে বুকে মিশিয়ে নেয় তূর তনুকে। কাঁপা-কাঁপি কিছুটা কমে তনুর!
_________
সকাল সাতটা! তনু আর তূর রেডি হয়ে নিচ্ছে। তনুর মনে আনন্দের ঝিলিক মারছে। দুদীন যেন দু জনম হয়ে উঠেছিলো তনুর কাছে। শাশুড়ীর আদেশে মইনুল সহ সকলকে সালাম করে বেড়িয়ে পড়েছে ওরা দুজনে। গরুর গাড়ি দুলছে আর চলছে! দুলছে তনুর মনও। তনুকে আনন্দিত দেখে তূর হেসে ফেললো। কাল রাত থেকে তনুর প্রতি কেমন একটা সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে তূরের মনে। পিচ্চি মেয়েটাকে বড্ড আপন লাগছে তূরের কাছে। তনু বোরখা পড়েছে, তবুও যেন তনুর আনন্দ ঠাউর করতে পাচ্ছে তূর। গরুর গাড়ি লতিফার বাড়ির সামনে এসে থামে।
তূর আর তনু চলে যায় বাড়ির ভেতরে। লতিফা মেয়েকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে নেন বুকে।
– কেমন আছোত?
– আলহামদুলিল্লাহ আম্মা,আপনি কেমন আছেন?
– আছি ভালা। ঘরে চল। জামাই চলো।
সকলকে ঘরে নিয়ে যান লতিফা। ব্যাগ নিয়ে আসে আজিদ। তনু আর তূর কলপাড় থেকে হাত পা ধুয়ে ভেতরে আসে। লতিফা আসন পেতে বসিয়ে খেতে দেন জামাইকে। তনু দূরে দাড়ায়। লতিফা খাবার বেড়ে দিয়েই উঠে আসেন তনুর কাছে। হাত ধরে টেনে আরেকটা ঘরে নিয়ে যান।
– আম্মা কি হলো?
– ওই বাড়িতে কিছু চোখে পড়ছে?
তনুর মুখের হাসি মিলিয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। মুখ ভার করে বলে,
– হু।
– কি দেখছোত?
লতিফার স্বরে গাম্ভীর্যের ভাব। তিনি কড়া গলায় বললেন,
– চুপ ক্যান? ক কি দেখছিস?
– ওনার ছোড ভাইয়ের লগে ওনার ছোট চাচী…!
– ও খালি এতটুকুই? জানোস ওরা কি করে?
তনুর চোখ চিকচিক করে ওঠে। তার মা নিশ্চয়ই কিছু জানে। তনুর স্বরে উৎফুল্লতা,
– কি আম্মা?
– চোরা চালানকারী ব্যাবসা! বড়বড় শহরে তারা…
লতিফা কথা থামিয়ে তিক্ন চোখে দরজার আড়ালে একবার তাকান। সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায় ছেলে মানুষের ছায়া। রৌদ্রের কারন সেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো কেউ ছিলো। লতিফার বুক ছ্যাত করে ওঠে মুহুর্তেই। খাওয়া ছেড়ে তূর উঠে আসেনি তো? শুকনো ডোক গিলে তিনি ধির পায়ে বাইরে বেরোন। মুখচোখ শক্ত, চেয়াল খেচা, ঠোঁট জোড়া টেনে ক্রোধ অপনয়ন করতে ব্যাস্ত তূর। লতিফা ঘর থেকে বেরোতেই তূর হামলা করে ওঠে..
#চলবে….
‘