#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ২২
#Mst_Liza
মায়া কাঁদতে কাঁদতে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে।আর রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে থাকে।ভাবতে থাকে মাহিরের বলা প্রত্যেকটা কথা।যা মনে পরতেই মায়ার নিজেকে খুব একা মনে হয়। ইচ্ছে করে মরে যেতে।মায়া আজ সম্পূর্ণ নিঃস্ব।কারণ পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যাকে ভালোবেসেছে, বিশ্বাস করেছে, সেই মায়াকে ঠকিয়েছে।মাহিরের বলা প্রত্যেকটা কথা মায়ার ভেতরটাকে ভেঙে চুরে রেখে দিয়েছে।যেই কথাগুলো মায়ার কল্পনার বাইরে ছিলো।সেগুলো শুনার পর মায়ার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মাহির তাকে এভাবে বলেছে।এতো অপমান করেছে একটা মেয়ের জন্য।কিন্তু এটাই যে সত্যি।যা মানতে কস্ট হলেও কিচ্ছু করার নেই।মায়া চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বড় ট্রাক মায়ার খুব কাছে চলে এসেছে।ট্রাকটা এতোক্ষণ হর্ণ বাজাচ্ছিলো কিন্তু মায়া আনমনা হয়ে দৌড়াতে থাকায় আসেপাশের আর কিছুর দিকে খেয়াল নেয়। ট্রাকটা মায়াকে যেই ধাক্কা দিতে যাবে সেই মায়া নিজের চোখদুটো আস্তে করে বন্ধ করে নেয়।কারণ মায়ার ভেতরে আর কিছু কাজ করে না।এমন সময় কেউ একজন এসে মায়ার হাতটা ধরে টেনে রাস্তার এক সাইটে নিয়ে আসে।মায়া চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে রুসা আর আবির দাড়ানো।
রুসাঃ একি ভাবি? এইভাবে আনমনা হয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে হাঁটছ! যদি কিছু হয়ে যেত? ভাইয়ার কি হতো,, বাড়ির সকলের কি অবস্থা হতো একবার ভেবে দেখেছো?
রুসার প্রশ্নের মায়া কোনো উত্তর দেয় না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুসাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। যেটা দেখে রুসা আর আবির কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।রুসা আবার মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,
রুসাঃ ভাবি কি হলো কাঁদছো কেন? ভাইয়া কি কিছু বলেছে? ভাইয়ার কাছেই তো লাঞ্চ নিয়ে গিয়েছিলে বলনা আবার ঝগড়া হয়েছে তোমাদের মাঝে?
মায়া তবুও কিছু বলে না।রুসাকে ছেড়ে একটা অটো ডেকে উঠে পরে।আর কাঁদতে থাকে।আবির রুসাকে মায়ার সাথে চলে যেতে বলে।তারপর আবিরকে বাই বলে রুসা মায়ার সাথে বাড়িতে চলে আসে।
বাড়িতে সবাই আজ খুব আনন্দে আছে।এতোদিন পর এ বাড়ির মেয়ে আবার বাড়িতে ফিরে এসেছে।মিরার শূণ্য কোল আজ আবার ভরে উঠেছে।তাই সবার মনেই আজ খুশীর ঝলক। আজকের মেনুতে মায়ার পছন্দের খাবার আইটেম সব রান্না করা হয়েছে। মুফতি খান আর সাহেদ খানের দুপুরে আসার কথা ছিলো কিন্তু তারা এখনো আসে নি তাই নিয়ে রাইশা আর মিরার মধ্যে কথা চলছে।তাদের ফোন দেওয়া হয়েছে অনেকবার কিন্তু ফোনটাও বন্ধ।
মায়া বাড়িতে এসে সোজা দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। দরজার ওপাশ থেকে হেলান দিয়ে বসে কাঁদতে থাকে। আর বাইরে থেকে সবাই মায়াকে ডাকে।মায়ার কাছে জানতে চায় কি হয়েছে,, রুসা মায়ার সাথে এসেছে বলে সবাই রুসাকেও প্রশ্ন করে কিন্তু রুসা কিছুই বলতে পারে না।এমন সময় মাহির স্নিগ্ধার হাত ধরে এসে রুমের সামনে দাড়ায়।
মাহিরঃ কি হলো,, আমার রুমের সামনে এতো ভীর কেন?
মাহিরের কথা শুনতে পেয়ে সবাই পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে মাহির আর স্নিগ্ধা হাত ধরাধরি করে দাড়িয়ে আছে। আর স্নিগ্ধার হাতে একটা ব্যাগ। মাহির আবার বলে,
মাহিরঃ মায়া কি আমার রুমে আছে? থাকলে ওর যা কিছু আছে সব নিয়ে এক্ষুনি বের হতে বলো।আমি এখন থেকে স্নিগ্ধাকে নিয়ে আমার রুমে থাকবো।
মাহিরের কথা শুনে ভেতর থেকে মায়ার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে।ভাবে অনুভব এতোটা নিচে নেমে গেছে যে স্নিগ্ধার সাথে একই রুমে থাকবে!
মিরা এসে ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মাহিরের গালে।
মিরাঃ লজ্জা করছে না তোর এমন কথা বলতে? এই জন্য বুঝি আমার মেয়েটা এতো কস্ট পাচ্ছে। ছিঃ মাহির ছিঃ তোকে না আমি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি।এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে আমি? এভাবে বড়দের সামনে বলতে তোর মুখে কি একটুও আটকালো না?
মাহিরঃ না আটকায় নি।মায়া তোমার মেয়ে তাই তুমি এমন কথা বলছো। তোমার খারাপ লাগতেই পারে।কিন্তু আমি পারি না ওর সাথে এক মুহূর্তও থাকতে।আমি স্নিগ্ধাকে ভালোবাসি।খুব শ্রীঘই মায়াকে আমি ডিভোর্স দিয়ে স্নিগ্ধাকে বিয়ে করবো।
মিরা মাহিরের গালে আরেকটা চর মারে।তারপর বলে,
মিরাঃ মায়া যদি আমার মেয়ে নাও হতো তবুও তোকে আমি এইভাবে মারতাম।তোকে শাসন করে বোঝাতাম তুই ভুল করছিস মাহির।এখনো সময় আছে বাবা ফিরে আয় এই ভুল থেকে।
মাহিরঃ কোনো ভুল করছি না আমি।তোমাদের যদি ভুল মনে হয় তাহলে তাই।আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।মানতে হয় মানো নয়তো আমি স্নিগ্ধাকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।
কথাটা বলে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে মাহির আর স্নিগ্ধা মনে মনে বলে, মাহির যেন বাড়ি ছেড়ে ওকে নিয়ে না যায়। কারণ চলে গেলে তো মায়ার প্রতি অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।এমন সময় মায়া রুম থেকে বেড়িয়ে এসে মাহিরকে পিছনের থেকে ডাকে।
মায়াঃ দাড়ান অনুভব!
মায়ার ডাকে স্নিগ্ধা আর মাহির পিছনে ঘুরে দাড়ার।দেখে মায়ার হাতে একটা ব্যাগ।
মায়াঃ আমি এই রুমে থাকবো না।দেখুন আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। আপনি তবুও এ বাড়ি ছেড়ে যাবেন না।যান আপনার রুমে স্নিগ্ধা নিয়ে যান।
মায়ার এমন কথায় মাহিরের রাগ হতে থাকে।ভাবে চলেই তো যাচ্ছিলাম কেন ডাকলে তুমি মায়া।স্নিগ্ধা যে এবাড়িতে থাকলে তোমাকে খুব অপমান করবে।আমি পারবো না সেটা দেখতে কিন্তু আমার কাছে যে আর কোনো উপায় নেয়। তোমার বাবা-মাকে স্নিগ্ধার কবল থেকে বাঁচাতে আমাকে এই নাটকটুকু করতেই হবে।তারজন্য বাড়ির সকলের কাছে নিচে নামতে হলে হবো।তবুও প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।
মায়া এগিয়ে এসে মাহিরের সামনে দাড়ায়।তারপর বলে,
মায়াঃ আপনি আমাকে একটুও ভারোবাসেন না।কাল যা কিছু হয়েছে সবটাই আপনার অভিনয় ছিলো।ঠিক আছে আমি আপনার রুম থেকে চলে এসেছি এই দেখুন।আপনার জীবন থেকে চলে যাবো।মরে যাবো আমি।তবুও কখনো বলবো না আমাকে ভালোবাসুন।
মায়ার মুখে মরে যাওয়ার কথাটা শুনে মাহিরের কস্ট হতে থাকে।কিন্তু স্নিগ্ধার সামনে কিচ্ছু বলতে পারে না মাহির।মায়া আবার বলে,
মায়াঃ বিশ্বাস করুন অনুভব আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।আর এতোটা ভালোবাসি যে এখন আপনাকে না দেখেও থাকতে পারবো না।আপনি এবাড়িতেই থাকুন।স্নিগ্ধার সাথে থাকুন।আমি না হয় রুসার রুমে চলে যাচ্ছি। কিন্তু ডিভোর্স! ডিভোর্সের কথা আমাকে বলবেন না। আপনি চাইলে স্নিগ্ধাকে বিয়ে করে ওর সাথে সংসার করুন কিন্তু আমি মরে গেলেও আপনাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না।কারণ আপনি আমাকে স্ত্রী না মানলেও আমি আপনার স্ত্রী। আর যতোদিন বেঁচে থাকবো আপনার স্ত্রীর পরিচয়েই বেঁচে থাকবো।যদি দরকার পরে তাহলে নিজেকে শেষ করে দেবো তবুও আপনাকে ডিভোর্স দেবো না।
মাহিরঃ মায়া!
মায়াঃ বলুন?
মাহির পাশ ফিরে স্নিগ্ধাকে দেখে আর কিছু বলতে পারে না।
মায়াকে টেনে রাইশা কিছুটা দূরে নিয়ে আসে।
রাইশাঃ তুই কি পাগল হয়ে গেলি মা? এতো কিছুর পরও মাহিরকে এবাড়িতে থাকতে বলছিস?
মায়াঃ হ্যাঁ, বলছি।কারণ তোমার ছেলে এবাড়িতে না থাকলেও যেখানেই থাকুক ওই স্নিগ্ধার সাথেই থাকবে।তুমি কি চাও তোমার ছেলে ওই মেয়েটার সাথে থাকুক? ওকে বিয়ে করুক?
রাইশাঃ না যদি এটা হয় তাহলে আমি ভুলে যাবো আমার কোনো ছেলে ছিলো।
মায়াঃ তাই তো বলছি। একটু ভরসা রাখো।ওদেরকে থাকতে দাও এখানে।আমাদেরকে এমন কিছু করতে হবে যাতে স্নিগ্ধা নিজেই অনুভবকে ছেড়ে চলে যায়।
চলবে,,,,,,