পর্ব ৩+৪
#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–3
#Arishan_Nur
লাল শাড়ি পড়ে প্রমিতি ঢাকা শহরের ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোডের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে এলো। কিন্তু সে কি করবে তাই বুঝে পাচ্ছে না। কার কাছে যাবে সে? আর কার কাছে চাইবে সাহায্য। এই এতো বড় রাস্তায় বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত কতো শত মানুষ যে অতিক্রম করল তার নেই কোন হিসেব। আচ্ছা ঢাকায় এতো মানুষ কেন। পুরা জায়গাটা গিজগিজ করছে। আর কারো দিকে কেউ একবারো ঘুরেও তাকায় না। এতো নির্জীব কেন এই শহরটা? কোন মায়া কিংবা আবেগ নেই কি এই শহরের?
যে শহরেরই মাঝেই কোন আবেগ নেই সেই শহরের বাসিন্দা যে আবেগহীন হবে তা বুঝাই যাচ্ছে। প্রমিতির হাতে মোটামুটি সাইজের একটা ব্যাগ। এইখানে তার বাবা-মায়ের স্মৃতিগুলি আছে আছে। আর পাচ হাজার টাকা। এখন আর পাচ হাজার টাকা নেই। তিন হাজার টাকা আছে। এই টাকায় ঢাকায় সে একদিন ও চলতে পারবে না। কারন সে বিকেলের নাস্তাই ধানমণ্ডির বিবিকিউ বাংলাদেশে৷ রেস্টুরেন্টে খেয়েছে। একজন খেয়েছে তাও একটা প্লাটার, সেটাই সাত শ টাকা। তাও নাকি সেখানে অফার চলছে৷
প্রমিতি বুঝে পায় না ঢাকার মানুষের এতো টাকা! কারণ রেস্টুরেন্টটায় অনেক ভীড় ছিল। তবে রেস্টুরেন্টটার ওয়েটার দের বিহেইভ খুব ভালো ছিল৷
সে এতোক্ষন ওইখানেই বসে ছিল৷ বাইরে বএর হতেই দেখল, লাল সিগন্যাল পড়ে গেছে আর একে একে সব গাড়ি, বাস থেমে গেল। সে গাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তার কান্না পাচ্ছে। সে কোন দিন একা একা কলেজ ছাড়া কোথাও যায় নি। আর আজকে একা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শহরে। তাও রাতের বেলা। তবে মনেই হচ্ছে না এখন রাত। চারপাশে এক বিন্দু ফাকা নেই। গাড়ি আর গাড়ি। আর যেখানে গাড়ি নেই সেখানে মানুষ, ছোট ছোট দোকান পাট।
প্রমিতির চোখ গেল একটা ছোট দোকানে। সেখানে অনেক ভীড়। কোল্ড কফি বেচা হচ্ছে। কোল্ড কফি দেখে তার খেতে মন চাইলো।
সে দোকানদার কে গিয়ে বলে, আমাকে ও একটা দেন।
–আচ্ছা। বলে দোকানদার কোল্ড কফি মগে ঢালা শুরু করল।
প্রমিতি ভেবেছিল এই লোক তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে যে সে একা কেন? এভাবে দাঁড়িয়ে কেন কিংবা শাড়ি পড়ে আছে কেন?
কিন্তু নাহ। কিছুই জিজ্ঞেস করল না। তার মতো কাজ করেই যাচ্ছে।
প্রমিতি কোল্ড কফিটায় চুমুক দিল। খেতে বেশ মজা। ৬০ টাকা রেখেছে দাম। কিন্তু সাধ খুব মজা। রাস্তার ধারে অনেকেই মজা করে খাচ্ছে।
প্রমিতি আশেপাশে তাকালো। রাত এগারোটা বাজতে চলল। ভীড় আস্তে আস্তে কমে আসছে।জ্যাম কমলেও একেবারে যে কমেছে গেছে তা না। রেস্টুরেন্ট গুলো ও খোলা আছে। আচ্ছা ঢাকায় কি চব্বিশ ঘণ্টাই সব খোলা থাকে।
প্রমিতি ফুটপাতে বসে পড়ল।ব্যাগ থেকে পানি বের করে একটু খেয়ে নিল।
রোহান তাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সে পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেছে। তারপর বাস স্টেশন এসে ডিরেক রংপুর টু ঢাকা। ভাগ্যিস দুপুরের একট বাস ছিল যেটা ঢামাগামী ছিল। নাহলে আরো ঝামেলা হতো। বাসা থেকে বিয়ের শাড়ি পড়েই বেরিয়ে ছিল। সেটা আর চেঞ্চ ও করেনি সে। ওভাবেই পালিয়ে আসে। আজকে বাস সাই সাই করে এসেছে। এক ফোটা জ্যাম পায় নি সে। তাইতো এতো দ্রুত পৌছে গেল ঢাকায়।
প্রমিতি আশেপাশে তাকালো। সে দেখতে পেল বেশ কয়েকটা মেয়ে এই সময় কোথা থেকে যেন বের হয়ে রাস্তায় হাটছে। প্রমিতি ভাবতে লাগে এরাও কি তবে তার মতো বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে?
প্রমিতি বিষ্ময়ভরা চোখে তাদের দিয়ে তাকিয়ে রইল, সে দেখল একটা বড় মাইক্রোকার আসল এবং বেশ কয়েকটা মেয়ে সেই গাড়িতে উঠে বসল। তারা উঠে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল।
প্রমিতি মনে মনে বলল, আমার জন্যও যদি কোন গাড়ি আসত আর আমি সেই গাড়িতে উঠে বসতাম আর গাড়িটা সাথে সাথে উড়াল দিত কোন বরফের দেশে!
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এমন সময় পেছনে থেকে কেউ বলে উঠে, কি রে, ধান্দায় নতুন নাকি?
প্রমিতি কারো কন্ঠস্বর শুনে পেছনে তাকালো এবং বলল, সর্যি কি বললেন, বুঝলাম না?
–বলি, কাস্টমার পাস নি একটাও?
প্রমিতি ভ্রু কুচকে বলে, কিসের কাস্টমার?
–এ্যাহ! আইসে ঢং করতে। বলতেছে যা করতে আইসোস তা না করে বইসা আছোস কেন? কাস্টমার না পাইলে আমারে বল। মেলা কন্ট্রাক্ট হাতে আছে।
প্রমিতি কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। সে বুঝতে পারছে মহিলাটা ভালো না। তাই উঠে দাড়ালো এবং বলল, আপনার কোন ভুল হচ্ছে। আপনি অন্য কোথাও যান।
–কেন রে মাইয়া! ঠিকই তো শাড়ি-চুরি, পইড়া কাস্টমার খুজোস আর আমাগো সামনে ঢং মারস।
বলে মহিলাটা প্রমিতির দিকে এগাতে লাগে।
প্রমিতি ভয় পেয়ে বলে, আগাচ্ছেন কেন। বলছি দূরে থাকেন। আমি এমন মেয়ে না। একটা কাজে এসেছি রংপুর থেকে।
মহিলাটা বললেন, বুঝছি তোর কাজ কোন থাকতে পারে।
বলে উনি খপ করে প্রমিতির হাত ধরে ফেলে।
প্রমিতি চিৎকার জুড়ে দেয়।
মহিলাটা হোহো করে হেসে কাকে যেন ফোন দিয়ে বলে, স্যার, একটা নিউ কালেকশন আছে। লাগবে নাকি?
প্রমিতি ভ্রু কুচকে ভাবে, তাকে নিউ কালেকশন কেন বলছে এই মহিলা।
মহিলাটা ওপাশের ব্যক্তিকে বলল, জি স্যার। আমার সাথেই আছে। দেখতে একদম আসমানের হুরের মতো। এখনি পাঠায় দিই? আচ্ছা, আচ্ছা। বলে ফোন রেখে প্রমিতির উদ্দেশ্য তিনি বললেন, শোন মেয়ে, তোর ভাগ্য বদলে দিব৷ খালি এই শহরের হাওয়া দশ দিন লাগা, মহারানীর হালে জীবন কাটাবি। বুঝলি? স্যার আসতেছে। খুব বড় লোক। একবার ওনাকে ইম্প্রেস করতে পারলে লাইফ সেট তোর।
প্রমিতি কেদে দিয়ে বলে, আমি এমন মেয়ে না। আমি ভদ্র পরিবারের মেয়ে। প্লিজ আমাকে এসবের সাথে জড়াবেন না। তাহলে আমি কিন্তু আইনের সাহায্য নিব।
মহিলাটা হেসে বলে, আইনের বহু লোক আমার পুরান কাস্টমার। কিছু ই হবে না আমার। বুঝলি?
প্রমিতি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। সে দেখতে পেল কয়েকটা ছেলেও তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে৷
সে মাথা ঘাটালো। এই ছেলেগুলো যদি এই মহিলার লোক হয় তাহলে তার সাথে অনেক কিছু হয়ে যাবে৷ এর আগেই এখান থেকে পালাতে হবে।
প্রমিতি হুট করে নিচে বসে পড়ে এবং রাস্তা থেকে একটা ইট কুড়িয়ে নিয়ে মহিলাটার মাথায় আঘাত এবং নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মহিলাটাকে একটা ধাক্কা মেরে তার ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দেয় এক দৌড়। তাকে দৌড়াতে দেখে ছেলেগুলোও তার পেছনে পেছনে আসতে লাগে। তারা বেশ খানিকটা পিছনে থাকায় প্রমিতিকে ধরতে পারছে না। এদিকে প্রমিতি শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে এমন একটা জায়গায় আসল যার বাম পাশেও রাস্তা গেছে, ডান পাশেও। সে কোন কিছু না ভেবে ডান দিকে ই আগালো।
★★★
পিলখানা রোড ক্রস করে অনেক জোড়ে গাড়ি নিয়ে কেবি স্কয়ারের সামনে আসল নিরব।ফোন একাধারে বেজেই চলেছে৷ সেদিকে হুশ নেই তার৷ সে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। আবারো ফোন বাজতে লাগলো। নিরব এক প্রকার বিরক্ত হয়েই ফোন উঠালো এবং ধমক দিয়ে ওপাশের ব্যক্তিকে বলল, কতোবার বলেছি আমি একবারে ফোন না ধরলে আর দিবা না। কথা কানে যায় না কেন?
ওপাশ থেকে বলল, সর্যি স্যার। খুব আর্জেন্ট তাই কল দিলাম।
নিরব গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, কি কথা?
–মিটিংয়ে আসলেন না যে স্যার,,,,,
নিরব আবারো ধমক দিয়ে বলে, ধানমন্ডির ওই রেস্টুরেন্টের মিটিংয়ের কথা বলছো?
–জি স্যার।
–তুমি জানো না নিরব চৌধুরি এইসব কমদামি রেস্টুরেন্টে যায় না৷ আমি ওয়েস্টির্ন, লে মেরিডিয়ান, আমারি আর ফোর সিজন বাই শেরাটোন ছাড়া যাই না। ধানমন্ডির এইসব সস্তা রেস্তোরাঁয় নিরব চৌধুরি ঢোকে না। গেট ইট?
–জি স্যার।
–রাখলাম।
বলে নিরব ফোন কাটলো। তাকে বাসায় যেতে হবে। আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে। সে ফোন রাখতে গিয়ে ফোনটা নিচে ফেলে দিল। গাড়ি চালাতে চালাতে নিরব সামনে তাকালো। রাস্তা সম্পূর্ণ ফাকা। তাই সে ব্রেক না মেরেই নিচ থেকে ফোন তুলে সামনে তাকাতেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল৷
তার গাড়ির সাথে একটা মেয়ের ধাক্কা লেগে, মেয়েটা রাস্তায় পড়ে গেল।
নিরব ড্রাইভিং এ খুব দক্ষ। তাই ব্রেক কষতে সময় নিল না। আজকে ড্রাইভিং এ দক্ষ না হলে মেয়েটার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিত৷
নিরব গাড়ি থামিয়ে এক প্রকার মেজাজ গরম করে বলে, হুয়াট দ্যা হেল!ঢাকা শহরে নতুন নাকি যে গাড়ির সামনে এসে পড়বে? রেডিকুলাস!
বলে গাড়ির স্টেয়ারিং এ একটা কিল মেরে নিজের রাগকে কমানোর চেষ্টা করল। এরপর জোড়ে করে একটা শ্বাস নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে মেয়েটার কাছে গেল।
মাথায় লেগেছে সম্ভবত মেয়েটার। রক্ত ঝড়ছে। রাস্তায় লাল রক্ত পড়ে আছে।
নিরব মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়াতেই পায়ে কিছু বাজলো। সে নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ব্যাগ।
নিরব হাটু গেড়ে বসে পড়ে। মেয়েটার পরনে শাড়ি। তাও আবার লাল।
সে ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে। তার কেমন যেন লেগে উঠল। মাথায় একটা সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করল নিরব৷
মেয়েটাকে দুই হাত দিয়ে একটু উচু করে ধরল। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কেমন যেন লাগতে শুরু করে নিরবের। সে ভ্রু কুচকেই বসে থাকে।
মেয়েটা পিটপিট করে তার দিকে তাকালো এবং কাপা কাপা হাতে তার শার্টের কলার ধরল।
নিরব মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে, নিরব চৌধুরির গায়ে হাত দিলা!
Part–4
#Arishan_Nur
নিরব মেয়েটার দিকে কিছুক্ষন সেভাবেই তাকিয়ে থাকে। সে বাম হাতের ঘড়ি থেকে সময় দেখে নিল। ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুইছুই। এই সময় তো কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ের বাইরে বের হওয়ার কথা না। তবে কি মেয়েটা প্রস্টি,,,,,,,,
নিরব আর কিছু ভাবল না। এটা তার দেখার বিষয় না৷ মূলত এই সময় তাকে মেয়েটাকে হসপিটালে নিতে হবে। এটাও একটা ঝামেলার কাজ। এখন এই মেয়েকে হসপিটালে নিলে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে। আর যদি কেউ জানে নিরব চৌধুরির গাড়িতে লেগে কেউ আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যস তাইলে হইসে কাম। মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই তার বারোটা বাজানোর জন্য প্রস্তুত থাকবে। এক বিন্দু ছাড় দিবে না তাকে।
নিরব আশেপাশে তাকালো, কেউ দেখেছে কিনা। মেয়েটা ভালোই চোট পেয়েছে। সামান্য পান থেকে চুন ঘষলেই তার উপর সব বন্যা যাবে। তাই বন্যা আসার আগেই বাধ দিতে হবে।
সে বুঝে পাচ্ছে না কি করবে। তাই আবারো মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো ঠিক তার হার্ট বরাবর হাত দিয়ে শার্ট খামচে রেখেছে।এই হার্ট বরাবর যে হাত রেখেছে ব্যাপারটা নিরব আগে খেয়াল করেনি। মাত্র করল। সে মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালো। চুল গুলো মুখের উপর পড়ে আছে। হাতে চিকন দুইটা সোনার চুরি।
নিরব সোনার চুরিটা ধরে দেখল। তারপর মনে মনে বলল, বাহ বেশ ভালো মানের সোনা তো! বাইশ ক্যাডেট হলেও সৌদি আরবের সোনা মনে হচ্ছে।
যাগ গে , সে এবার মেয়েটাকে রাস্তায় শোয়ালো। রক্তে রাস্তা লাল হয়ে গেছে৷ আপাতত আবেগী হলে চলবে না। আবেগী হওয়া আর চোখ বন্ধ করে রাস্তা পাড় হওয়া একই কথা। সে গাড়ি থেকে পানি বের করল। তারপর গাড়ির হেডলাইন জ্বালানো এবং ফোনের ফ্লাশ অন করে দেখল কোথায় কোথায় রক্ত পড়ে আছে। ঠিক সেই সেই জায়গায় পানি ঢেলে দিল। এবং পা দিয়ে মোটামুটি রক্ত সাফ করল। বেশি রক্ত ঝড়েনি—মনে মনে আওড়ালো নিরব।
গাড়িতে বেশ বড় সাইজের একটা পানির বোতল রাখে জব্বার। আজকে কাজে দিল।
সে ফোন হাতে নিয়ে বরকত কে কল দিল। কিন্তু বরকত ফোন ধরছে না।
নিরব এবার বিরবির করে বলে, কাজের সময় কেউ ফোন উঠায় না। সে আবারো ট্রাই করতে লাগলো।
এক সময় ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে কেউ হ্যালো বলতেই নিরব ধমক দিয়ে, এদিকে আমি ঝামেলায় পড়ছি আর তুই হ্যালো নিয়ে পড়ে আছিস, আহাম্মক!
বরকত ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, তুই ঝামেলায় পড়ছিস এটা আমি কেমনে জানব?
নিরব বলল, ভালোই তো ঘুমাচ্ছিলি আরাম করে বউয়ের সাথে তাই না?
বউয়ের সাথে কথাটা শুনে মনটা বিষিয়ে গেল বরকতের। সে তবুও বলে, কি ঝামেলা হইসে সেটা বল?
নিরব এবার বলে, একটা মেয়েকে ধাক্কা মারসি।
বরকত ওপাশ থেকে এক্সাইটেড হয়ে, আল্লাহ, সিরিয়ালে যে রোম্যান্টিক সিনে দেখায়, ওই ভাবে ধাক্কা মারছিস আর মেয়ে তোর কোলে গিয়ে পড়ছে নাকি?
–না। গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারছি আর মেয়ে আমার কোলে না রাস্তায় পড়ছে।
বরকত বিচলিত হয়ে বলে, হায়, আল্লাহ! এখন কি করবি?
–ওইজন্য ই কল দিসি। কি করব? খবরটা লিক হইলে সামনে ইলেকশন, সব যাবে গা!
–শোন, চেপে যা ব্যাপারটা।
–মানে? মেয়েটাকে রেখে চলে যাব? গুড আইডিয়া।
–ছিঃ! আমি এই কথা কখন বললাম রে?
–মাত্র ই বললি।
–আমি মোটেও এই কথা বলি নি। তুই,,,
নিরব আর কিছু শুনল। তার কানে পুলিশের সাইরেনের শব্দ ভেসে উঠ৷ মানে আশেপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে। তাকে যদি দেখে ফেলে তাইলে তো আরো বড় বিপদ হবে।
সে ফোনে বরকতকে বলল, সাইরেন বেজে উঠল।
বরকত বলে।,এটা বুঝি যৌগিক বাক্য।
–জাস্ট সাট আপ! পুলিশ আসতেছে! কি করব বল!
–কালকের হেড লাইন হবে, ধানমন্ডিতে একটা পথচারীকে রাস্তায় ধাক্কা মারার দায়ে নিরব চৌধুরি জেলে। এতো এতো ধারায় তাকে অভিযুক্ত পেলে শাস্তি দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে হাই কোর্ট নিশ্চিত করেছে।
–মজা পাইসোস? নাকি বউয়ের আদর খেয়ে তোর মাথা গেছে?
বরকত আবারো বউয়ের আদর কথা শুনে কষ্ট পেল। এমন সুভাগ্য হলে তো কথাই ছিল না৷।
সে একদন্ড ভেবে বলে, মেয়েটাকে গাড়িতে উঠা। আর সোজা পপুলারে যা।
–ডোমিনোস এর উল্টা দিকে না পপুলার?
–হো। হো। তুই যা। আমি রওনা দিচ্ছি।
–আচ্ছা।
বলে নিরব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মেয়েটাকে আবারো পাজ কোলে নিল। মেয়েটা এখনো কালো ব্যাগটা ধরে রেখেছে।
নিরব ব্যাগটা ফেলতে চাইলেও ফেলল না। পরে এই ব্যাগ রেখে গেলে পুলিশের হাতে পড়লে ঝামেলা হবে।
সে ব্যাগ এবং মেয়ে দুইজনকেই গাড়িতে তুলে মারল এক টান!
সোজা পপুলার হসপিটালটির সামন এসে থামল।
সে মেয়েটাকে কোলে করে ইমার্জেন্সিতে ঢুকল। যেহুতু জরুরি ভিত্তিতে ঢুকেছে তাই কেউ কিছু এখনো জিজ্ঞেস করেনি। তবে কয়েকজন তার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।
সে পাত্তা দিল না। কারন নিরব চৌধুরি পাবলিক ফিগার। এক কথায় সেলিব্রেটির মতোন! তাকে দেখতেই পারে মানুষজন!
সে ফোন বের করে বরকতকে কল দিয়ে আবারো এক দফা ঝাড়ি মেরে, কই তুই?
–আসতেছি! দুই মিনিট সময় দে।
–আয়। (বিরক্ত হয়ে)
নিরব আবারো আশেপাশে তাকালো। তার পিপাসা পেয়েছে। সে পানি খাবে ভাবল। কিন্তু কোথা থেকে খাবে? চোখের সামনে একটা ফিল্টার আছে। আর কয়েকটা প্লাস্টিকের গ্লাস। এইসব দেখে আর রুচি হল না পানি খাওয়ার। বাঙ্গালী যে জাতি! দেখা যাবে কেউ গ্লাসে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়ে না ধুয়েই আবার রেখে দিয়েছে গ্লাস।সুতরাং পানি খেতে চাইলে এইসব নোংরা গ্লাসেই খেতে হবে। তাই পানি খাওয়ার কথা পরিকল্পনা বাদ দেয় নিরব।
নিরব ফোন হাতে নিয়েই বরকতের অপেক্ষা করতে লাগে।
কিছুক্ষন পর বরকত হাপাতে হাপাতে এসে বলে, সর্যি! সর্যি! রিকশা পাচ্ছিলাম না।
নিরব ভ্রু কুচকে বলে, রিকশা!
–হু। একটা যা পাইলাম অর্ধেক আসে বলে আর যাব না। বল তো কেমন লাগে?
–এতো বড় বিসম্যান ওম্যানের জামাই হয়ে তুই রিকশায় ঘুরস ক্যান? ল্যাম্বারগিনিতে ঘুরবি, বুঝলি?
বরকত অসহায়ের হাসি হাসল। এবং কিছু বলল না।
তাকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বলে,আমার ঝামেলাটার একটা সমাধান দে।
–আচ্ছা। মেয়েটা কোথায়?
–ওয়ার্ডে মেবি।
বরকত মাথায় হাত দিয়ে বলে, জেনারেল ওয়াডে কেন রাখলি? কেবিনে রাখ!
–কেন?
–বুঝবি না। চল।
বলে বরকত ডাক্তারের কাছে গেল এবং বলল, ভাই, আপা কেমন আছে?
ডাক্তারটা বলে, কোন আপা?
বরকত বলল, আরে, ওইযে নিয়ে আসলো। এক্সিডেন্ট কেসটা।
–ও। আপনার কাছেই যেতাম। পুলিশ ডাকব৷
পুলিশের কথা শুনে নিরব ভয় পেল।বরকত মৃদ্যু হেসে বলে, পুলিশ কেন ডাকবেন?
ডাক্তারটা বলে, কেন আবার। আপনার এক্সিডেন্টে করবেন আর আমি হাত গুটিয়ে থাকব। ভিকটিমের ক্ষতির দায় কে নিবে? আপনার ওই নেশাঘোর বন্ধু?
নিরব মনে মনে ডাক্তারটাকে গালি দিয়ে বলে, আমি মোটেও নেশা করি না।
ডাক্তারটা নিরবের উদ্দেশ্য বলে, আর জনাব আপনি! গাজা খাবেন ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে ড্রাইভ কেন করবেন। ভিকটিমের এই ক্ষতিটা কে পূরন করবে?
বরকত বলল, একজ্যাক্টলি স্যার। সবচেয়ে বড় ক্ষতি তো আমার বন্ধুর হলো।
–মানে?
–মানে হলো নতুন বিয়ে করল। কই যাবে হানিমুনে তা না যেয়ে আসতে হলো হসপিটালে।
নিরব বরকতের সাথে সাড়া দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলে, কি বললি?
বরকত বলল, থাক। দোস্ত টেনশন করিস না। ভাবির কিছু হবে না।
নিরব বড়সড় একটা শক খেল। কে ভাবি? মাথা ঠিক আছে তো বরকতের?
ডাক্তারটা বলল, মানে? উনি পেশেন্ট এর কে হন?
বরকত খুবই কনফিডেন্সের সাথে বলে, আমার বন্ধু পেশেন্টের হাসবেন্ড হয় আর পেশেন্ট আমার বন্ধুর বউ হয়। ক্লিয়ার?
–ওহ। ওনারা হাসবেন্ড- ওয়াইফ?
–জি।
নিরব হ্যাবলার মতো বরকতের দিকে চেয়ে রইল। চেনা নেই জানা নেই, একটা মেয়ে নাকি তার বউ? এতো সস্তা নাকি নিরব চৌধুরির বউ হওয়া?
চলবে।