পর্ব ৫+৬
#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–5
#Arishan_Nur
নিরব বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কারন এবার ডাক্তারটা তাকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করছে যে নিজের স্বামীর সাথে থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটার সাথে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটলো।
নিরব কি উত্তর দিবে? সে আমতাআমতা করে বলে, আ,,,,আব,,আসলে ঝ,,ঝগড়া। হ্যা আমাদের মাঝ ঝগড়া হয়েছিল। (হুট করে মাথাই যা এলো তাই বলে ফেলল নিরব)
ডাক্তারটা ভ্রু কুচকে বলে, মানে? কিসের ঝগড়া?
বরকত ও নিরবের দিকে তাকালো।
নিরব হালকা হেসে বলে, আসলে, আমার বউ হানিমুনে বালি যেতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি প্যারিস যেতে চাচ্ছিলাম, এই নিয়ে দন্দ্ব চলছিল৷ এক সময় ও প্রচুর রেগে যায় এবং বাসা থেকে বের হয়ে হাটা ধরে। আমিও ওর পেছন পেছন আসছিলাম,,,,,,এর মধ্যে ও আমাকে দেখে আরো রেগে গিয়ে মেইন রোড ধরে জোরে জোরে হাটছিল আর হঠাৎ এই দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
ডাক্তার বলল, যাইতেন বালি। সমস্যা কি ছিল? এই যে ঝগড়া করলেন শুধু শুধু। লাভ কি হলো? শেষেমেষ তো বউকেই কষ্ট দিলেন।
বউ কে কষ্ট দিলেন কথাটা শুনে কেমন জানে লাগতে শুরু করে নিরবের। হাসফাস লাগতে শুরু করল তার। নাহ, এখন পানি না খেয়ে চলবে না। পানি খেতেই হবে। কি করবে সে?
আশেপাশে তাকালো নিরব। এখন মনে হচ্ছে একবার ওয়াশরুমে গেলে ভালো হয়৷
সে নরম গলায় বলে, আমি ওয়াশরুমে যাব।
বরকত সাথে সাথে বলে, তো যা না। তুই কি বাচ্চা যে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে।
নিরব বেশ বিরক্ত হয়ে বলে।,ইউ নো না! আমি কমোড ছাড়া যেতে পারি না। আর পাবলিক টয়লেটের কমোডে বসব না। নিরব চৌধুরি যে-সে বাথরুমে যেতে পারবে না।
এবার বরকত বলল, তো চাপে রাখ!
নিরব হতাশ হয়ে বলে, আমি বাসায় যাই৷
ডাক্তারটা বলল, কেমন স্বামী আপনি? এদিকে আপনার ওয়াইফের লাইফ ডেঞ্জারে আর আপনি পাবলিক টয়লেট ইউস করেন না জন্য এখন বউকে রেখে বাসায় গিয়ে বাথরুম করবেন? আপনার মতো পুরুষের জন্য আজকে আমরা নারীরা এতো টা অবহেলিত। আপনার জন্য আপনার বউয়ের জীবনের চেয়ে আরাম করে বাথরুম করা বেশি ইমপোর্টেন?
নিরব মিইয়ে গেল। সে একবার বরকতের দিকে তাকালো তারপর লেডি ডাক্তারটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, মহিলা তার উপর বেশ ক্ষ্যাপা!
সে নরম গলায় বলে, আমার কাছে আমার বউ বেশি ইমপোর্টেন না! কি অবাক হচ্ছেন যে বউ কে কম প্রাধান্য দিচ্ছি? আজ্ঞে না! আমার বউয়ের সাথে বেশি বা কম প্রাধান্য দেওয়া শব্দটি বেমানান। কারন ও আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। আর অস্তিত্বকে কেউ প্রাধান্য দেয় না। বরং এটা ছাড়া জীবন চলবে না। আমার জন্য ও আমার বউ খুব বেশি একটা জরুরি না কিন্তু ওকে ছাড়া আমি অচল!
বরকত তো হা হয়ে গেল। নিরবের মুখে এমন কথা শুনে। সে তো ইতিমধ্যে বিষম খেল৷
ডাক্তারটা একবার নিরবকে দেখে নিল আর বলল, আপনার কথাটা ভালো লাগলো। আসলে ওল ম্যান আর ডগ হলেও কেউ কেউ লয়াল!
নিরব মুখ বাকালো। সে বুঝতে পারছে এই মহিলার সাথে ঝামেলা করা মানে ই কুকুরের লেজে পা দেওয়া। সে চুপ করে থাকল৷
ডাক্তারটা বলল, আপনার বউয়ের মাথায় অনেক জোড়ে চোট লেগেছে। সিরিয়াস কন্ডিশন। কালকের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আইসিইউতে রাখতে হবে। বুঝেছেন?
নিরব মাথা ঝাকিয়ে বলে। জি। কিন্তু এখনি চাইলে আইসিইউতে রাখতে পারেন। মানি ডাস নট ফ্যাক্ট টু মি, ডক্টর!
ডাক্তার টা বিরক্ত হয়ে বলে, আমার সামনে টাকার গরম দেখাবেন না । গুলশানে আমার দুইটা ফ্লাট আছে। টাকার গরম অন্য কোথাও দেখান।
নিরব বেশ খেপে গেল। মহিলার গুলশানে মাত্র দুইটা ফ্লাট আছে তাতেই এতো ঢং দেখাচ্ছে। তার তো ছয়তলা বিল্ডিংই আছে তাহলে সে কেন ভাব দেখাবে না। নিরবের খুব করে বলতে মন চাচ্ছে, যে তার ও গুলশানে ছয় তলা বাড়ি আছে৷ কিন্তু নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখল কারন এসব মেয়ালি স্বভাব। মেয়েরাই গল্প-গুজব করতে করতে বলে, ভাবি জানেন, আমার গুলশানে ছয়তলা যেই বাড়ি আছে না সেই বাড়ির ছাদে লেবুর গাছ লাগিয়েছি কি যে রস না ভাবি লেবুগুলোয়। নেক্সট বার ভাড়া তুলতে গেলে আপনার জন্য এক ডজন আনব,,,,,,
কিন্তু সে ছেলে তাই এসব গোসিপিং তার সাথে মানায় না।
ডাক্তারটা চলে গেল। নিরব শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, বাচলাম!
বরকত বলল, তুই চাইলে যেতে পারিস বাসায়।
–না রে। সকাল তো হয়েই আসছে ডাইরেক অফিসে যাব৷
–চাচি টেনশন করবে তো।
–ওহো, বাসার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুই বস। আমি মাকে কল করে জানাই যে আজকে আর ফিরছি না৷
–হুম। তাড়াতাড়ি কল দে চাচিকে।
নিরব এক সাইডে গিয়ে তার মাকে কল লাগায়। কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠে, এতোক্ষণ পর তোর মায়ের কথা মনে হলো?
–আরে, মনে হওয়ার কথা কেন তুলছো? ঝামেলায় পড়ছি তাই বাসায় আসতে পারি নি। ডিরেক কালকে সন্ধ্যায় অফিস করে আসব।
–বাসায় আসার কি দরকার? বাইরেই থাক। আসতে হবে না তোর বাসায়।
–শুধু শুধু রাগ কেন করছো? বললাম না একটু প্রবলেম হইসে। বাদ দাও, জেগে ছিলে তুমি?
–তো? রাত বারোটায় আসার কথা তোর? অথচ এখন সাড়ে চারটা বাজে। টেনশন করব না আমি? এই রকম সিচুয়েশনে কি করে আমি ঘুমাই?
–সর্যি মা। আমার উচিত ছিল তোমাকে জানানো। বাট এতো বেশি ঝামেলায় জড়ায় গেছি যে কি বলব,,,,,
–থাক। সাফাই দিতে হবে না। কোথায় আছিস এখন?
–হাসপাতালে।
–ও আল্লাহ! কেন রে? কি হইসে তোর বাবা?
–আরে আরে আমার কিছু হয় নি। আসলে আমি ভুলে একটা মেয়েকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি।
–মেয়েটা এখন কেমন আছে?
–ভালোই আছে মা। (মিথ্যা বলল)
–মেয়েটা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুই হাসপাতাল থেকে নড়বি না৷
–আচ্ছা।রাখি
নিরব ফোন রেখে দিল। এবং মেয়েটার বেডের কাছে গেল।
নিরব এই প্রথমবার মেয়েটার চেহারা দেখল!
চোখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। কালো ঘন চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে।
নিরব একটু ঝুকে মেয়েটাকে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো।
খুব মিস্টি দেখতে মেয়েটা! গোলাপি রংয়ের ঠোঁট। খুব একটা ফর্সা না । বোচা নাক। নিরব এক ধ্যানে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইল।
এদিকে সকালের আলো ফুটতে শুরু করল। প্রায় সাতটা বাজতে চলল। নিরব এখনো মেয়েটার কাছে বসে আছে।বরকত বাইরে বসে আছে।
নিরব কি মনে করে মেয়েটার ব্যাগটা বেডের নিচ থেকে বের করল। যদিও কারো পারসোনাল জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয় কিন্তু তবুও নিরব ব্যাগের চেইন খুলল। কারন তার মধ্যে এতোটা ভদ্রতা নেই।
সে এক এক করে সব জিনিস বের করতে লাগলো৷ অতি আগ্রহের সাথে। প্রথমে একটা পেন্সিল পেল। সে কিছুটা অবাক হয়ে ভাবল, পেন্সিল কেউ কেন রাখবে ব্যাগে।
এরপর আরেকটা জিনিস বের করল, সেটা একটা সোনার চেইন। ইংরেজি অক্ষরে পি লেখা লকেট।
আরো কিছু জিনিস পেল। সব মেয়ালি জিনিসপত্র। হুট করে নিরব ব্যাগের তলানিতে দেখল একটা ডায়েরী।
সে দ্রুত ডায়েরীটা খুলল। প্রথম পেজেই গোপালী কলমে গুটি গুটি করে লেখা “প্রমিতি”
নিরব মনে মনে তিনবার প্রমিতি নামটা আওরালো। বেশ সুন্দর তো নামটা!
Part–6
#Arishan_Nur
এবার নিরব বসা থেকে উঠে দাড়ালো এবং প্রমিতির সামনে ঝুকে আস্তে করে প্রমিতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে , কেমন আছো প্রমিতি!
নিজের করা এহেন কান্ডে নিরব নিজেই আহাম্মক হয়ে গেল। আশ্চর্য ! সে একটা অজ্ঞান মেয়ে, যার কোন জ্ঞান নেই তাকে জিজ্ঞেস করছে যে সে কেমন আছে? এটা কি আদৌ যৌক্তিক ?নিরবের তো এমনটা মনে হয় না।
সে আবারো মেয়েটার দিকে তাকালো । তার কেন যেন প্রমিতিকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে।
আমরা কিছু কিছু কাজ মনের অজান্তেই করে ফেলি! নিরবের বারবার প্রমিতিকে দেখাটাও মনের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে৷
নিরব ভাবতে লাগলো , আমরা কোন সব কাজ মনের অজান্তেই করি?
উত্তর টা নিরব নিজেই দিল তা হলো, যেসব কাজ আমাদের ব্রেইন চায় না আমরা করি সেইসব কাজ আমরা মনের অজান্তেই করে বসি। নিরবের কাছে এমনটাই মনে হয়। এখন অন্যদের কাছে অন্য কিছু লাগতে পারে। নিরবের মনে হয় তার ব্রেইন আর মন দুইজন দুইজনের শত্রু! মন যদি বলে ডানে যাই তাইলে ব্রেইনে বলল, শালা, বামে যা!
নিরব আবারো প্রমিতির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?
একথাটা বলে সে অজ্ঞান প্রমিতি র দিকে তাকিয়ে তার মুখের সামনে ফু দিল। এবং ফ্যানের বাতাসে প্রমিতির মুখে কিছু সংখ্যক চুল পড়ে ছিল। সেগুলো আলতো করে নিরব তার হাত দিয়ে সরালো। তার এক ধ্যানে প্রমিতি কে দেখতে লাগলো ।
হুট করে নিরব কারো হাতের ছোয়া তার কাধে পেল। সে তড়িৎ গতিতে প্রমিতি থেকে দূরে সরে এসে পেছনে তাকায়৷
সে দেখল বরকত তার সামনে দাড়িয়ে আছে৷
নিরব জোড়পূর্বক হাসি হাসল।
বরকত বলল,তুই মেয়েটার এতো কাছে কি করছিলি?
নিরব ঘাবড়ে গিয়ে বলে, কিছুই করছিলাম না৷ কি করব আবার?
–না। না। তুই কিছু করছিলি! চুমা-টুমা দিসোস নাকি?
–আরে না। কি যে বলিস না! আমি কি এমন নাকি,,,, আর কিছুই করছিলাম না আমি। লিনার সাথে কথা হলো তোর?
–না। ফোন রিসিভ করছে না ও।
–আবার দে কল। তোকে ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে না পেলে ম্যাডাম টেনশড হয়ে যাবে।
বরকত মৃদ্যু হেসে মনে মনে বলে, কিছু ই হবে না ওর। জানবেই না আমি বাসায় নেই।
–কি রে, কল দে।
–হু, দিচ্ছি৷
বলে বরকত কল দিতে লাগলো লিনাকে।
★★★
লিনা ঘুমাচ্ছিল। বেশ গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছিল সে। হুট করে ফোনের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে গেল। সে বেশ বিরক্ত হলো। কালকে রাতে বেশ টায়ার্ড ছিল সে। এখন মাত্র ভোর! আর কে তাকে কল করতে পারে এই সময় সেইটাই সে ভাবছে?
লিনা উঠে বসল এবং তার ফোনটা হাতে নিল। ফোনের স্ক্রিনে বরকতের নামট ভেসে উঠল। সে ভ্রু কুচকালো। পাশের রুম থেকে কল করার কি আছে? আজব!
ফোনটা কেটে গেল৷ সাথে সাথে লেখা উঠল, মিসড কল।
লিনা যেই না ফোনটা রেখে দিবে ওমনি আবারো বরকতের কল আসতে লাগে৷
এবার সে রিসিভ করে হাই বা হ্যালো না বলে ডিরেক বলে, সমস্যা কি? কল কেন দিচ্ছো? তাও এতো সকালে?
–আরে, আরে একবারে এতো প্রশ্ন কেন করছো? আস্তে আস্তে প্রশ্ন করো।
–সময় নেই আমার। কেন কল দিচ্ছো পাশের রুম থেকে ?
–আমি বাসায় নেই৷
–মানে?
–আসলে নিরব একটা সমস্যায় পড়েছিল তাই রাতে আমি বাসা থেকে বের হয়েছি। তুমি গভীর ঘুমে ছিলে, তার উপর ক্লান্ত ছিলে এবং জন্য আর ডাকি নি৷
–ডাকো নি যখন খুবই ভালো কথা কিন্তু এখন কেন কল করছো? (রেগে গিয়ে)
–রাগ কেন করছো। জানিয়ে দিলাম যে আমি নেই। তুমি সকালের নাস্তাটা একটু ম্যানেজ করে নিও৷ কেমন?
–হু।
বলে লিনা ফোন কেটে দিল।
বরকত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে ভাবতে লাগে, আজকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক থাকলে কি এমন কিছু হত? নাকি রাতে সে বাসায় ছিল না জন্য লিনা চিন্তা করত। কে জানে?
বরকত একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলল। সে মাথা নিচু করে হাসপাতালের সোফায় বসে পড়ে৷
এদিকে নিরব প্রমিতির বেড থেকে বের হয়ে বলে, চল, নাস্তা করে নিই।
–এতো জলদি?
–হু। খুদা লাগছে। চল খেয়ে নিই৷
–চল। ক্যান্টিনে চল।
নিরব শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে, চল।
বরকত আর নিরব ক্যান্টিনে গেল। পরোটা আর সবজি ওডার দিল।
কিছুক্ষন পর খাবার চলে এলো।
নিরব খেতে খেতে বলে, শোন আমাকে অফিসে যেতেই হবে৷
বরকত বলল, কিন্তু মেয়েটা যে,,,,,
–প্রমিতি নাম ওর!
–তুই কেমনে জানলি?
–জানছি কোন একভাবে।
–তোর বউ হয় না! তুই তো জানবিই।(মজা করে)
নিরব বাকা হাসি হেসে একটা সিগারেট ধরালো । তা দেখে বরকত বলে, হাসপাতাল এটা। এখানে এসব না খাওয়াই হলো। বাচ্চা-কাচ্চা থাকতে পারে। ওরা দেখে ফেলবে,,,,,
নিরব বলল, তোর এইসব নীতিবান কথা ভার্সিটি গিয়ে বলিস। আমার সামনে না। বুঝলি? আমি এখন উঠছি। বিকেলে এসে মেয়েটাকে তার বাসায় পাঠায় দিব। তুই যা বাসায়৷
বলে নিরব চলে গেল।
কিন্তু বরকত গেল না। তার মন সায় দেয় নি। সে ঠিক করল আজকে ভার্সিটি যাবেনা। বরং প্রমিতির সাথে থাকবে।
সে নাস্তা করে প্রমিতির বেডের কাছে গেল। মেয়েটা এখনো অজ্ঞান।
সে হাসপাতালের বারান্দায় গেল। সেখানে পায়চারি করতে লাগলো। মেয়েটা মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত পেয়েছে। কি যে হয়।
★★★
রোহানের গালে একটা প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় বসালেন আমেনা৷
রোহান ভেজা বেড়ালের মতো বলল, খালা আমার কি দোষ? মেয়ে যদি আমাকে বোকা বানায় পালায় যায় সেখানে আমার দোষ কোথায়?
–এটাই তোর দোষ । কিভাবে ও তোকে বোকা বানালো? আহাম্মক একটা। (হুংকার দিয়ে)
–খালা। ও পার্লারে সাজতে যাওয়ার নাম করে সামনের গেট দিয়ে ঢুকে পেছনের গেট দিয়ে পালাইসে।
–আর তুই বসে বসে আঙুল চুষলি? কই যাইতে পারে প্রমিতি ?
–জানি না।
–ওর সব ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে দেখ। কোথায় লুকিয়ে আছে ও।
–আচ্ছা।
বলে রোহান বাসা থেকে বের হয়ে গেল প্রমিতি কে খুজতে৷ সে ঠিক করল, সারা রংপুর খুজবে সে। তবুও তার প্রমিতিকে চাই-ই-চাই! কালকে বিকেলে সে পার্লারে গিয়ে দেখে প্রমিতি নেই। পালারের মহিলা গুলো বলে।,প্রমিতি অনেক আগেই চলে গেছে।
রোহান যখন চিল্লা-পাল্লা শুরু করে তখন সব মহিলা মিলে পুলিশ ডাকে আর বলে সে নাকি তাদের ডিস্টার্ব করছিল। ব্যস পুলিশ ও তাকে থানায় নিয়ে যায়। অনেক ঝামেলা পোহায় সে আজকে সকালে ছাড়া পেয়েছে।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে ভর দুপুর হতে চলল।
নিরব সবে মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে ঢুকল। তখনি বরকতের কল এলো৷
সে দ্রুত রিসিভ করে বলে, হ্যা বল৷
–দোস! প্রমিতির জ্ঞান ফিরেছে৷
–আলহামদুরিল্লাহ!
–কিন্তু।
— কিন্তু কি? (ভ্রু কুচকে)
বরকত বিচলিত হয়ে বলে, কিন্তু ওর কিছু মনে নেই৷
–কিহ? কি বললি?
–বললাম ওর কিছু মনে নাই। ও সব আগের স্মৃতি ভুলে গেছে।
একথা শুনে নিরব হোহো করে হেসে বলে , নাইস জোক, ম্যান।
–জোক না। আমি সিরিয়াস। তুই আয় জলদি।
—আসছি।
বলে নিরব হাসপাতালে চলে এলো খুব তাড়াতাড়ি।
এসেই প্রমিতির কেবিনে গিয়ে থমকে গেল৷
কারন প্রমিতি বসে আছে। চোখ দুইটা খোলা। কি যে অদ্ভুত সুন্দর সেই চোখ জোড়া!
নিরবের বুকের মধ্যে কেমন যেন তোলপাড় শুরু হলো।
একজন নার্স প্রমিতির উদ্দেশ্য বলল, ম্যাম, আপনার নাম কি?
প্রমিতি কেদে দিয়ে বলে, জানি না। আমি কিছু মনে করতে পারছিনা।
নিরব প্রমিতির কন্ঠ শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। অন্য এক জগতে ট্রাভেল করতে চলল সে।
চলবে৷