#তুমিই_আমার_পূর্নতা–[২]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
🚫(কপি একেবারে নিষিদ্ধ)🚫
___________________________
সাগর অফিসে চলে যেতেই আমি চিৎকারের আওয়াজ শুনে বাহিরে গেলাম। গিয়েই দেখতে পেলাম কলি ডাইনিং টেবিলের কাছে পড়ে আছে! আমাকে দেখেই সে বলতে লাগলো,
-‘ হয়তো আমাকে আপনার পছন্দ নয় কিন্তু তাই বলে এভাবে প্রতিশোধ নিবেন আপা এটা আমি কল্পনাও করিনি! এরকমটা কেনো করলেন?’
কলির কথায় আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বানানো চা, নাস্তা নিজেন নাম করে সবাইকে দিলো তা-ও কিচ্ছু বললাম না আর এখন এই নতুন নাটক করছে!
-‘ আমি তো কিছুই করিনি কলি। খামোখা আমার নামে দোষ দিচ্ছো কেনো তুমি?’
-‘ তুমি কিচ্ছু করোনি? তুমিই তো এখানে তেল ফেলে রেখেছিলে যাতে আমি পড়ে ব্যাথা পাই। ‘
-‘ ভূলে যেও না আজকে আমি ডাইনিং টেবিলের পাশে আসিই নি সকাল থেকে। সবটা তো তুমিই করেছো।’
-‘ হু সেইজন্য তো আপন প্রতিশোধ নিলেন এরকম টা করে! আমি এবার সবটা বুঝেছি।’
কলির কথায় বোঝা গেলো ও বেশ চালাক মেয়ে! বাড়িতে আসতে না আসতেই সবার সামনে আমাকে খারাপ করার চেষ্টা করছে অথচ আমিই কি-না ওকে সাহায্য করেছি সকালবেলা।
-‘ বলি বউমা গায়ের রঙের মতন তোমার মনটাও এতো কু’চু’টে কেনো বলো দেখিনি? একটু বদলাতে পারো না নাকি? মেয়েটা আসতে না আসতে শুরু করে দিয়েছো। এরকম কেনো করো?’
-‘ আহ্ রাজিয়া! তুমি বউমাকে এভাবে বলো না তো ওর মনেও তো কষ্ট হয় নাকি?’
-‘ এই তোমান জন্য হ্যাঁ তোমার জন্যই তো আমার ছেলে ওকে বিয়ে করে এনেছে!’
-‘ রত্ন চিনলা না রাজিয়া বুঝলে? খালি চকচক করলেই সোনা হয় না সেটা তো এতোদিন বুঝোনি কিন্তু আমি আজকের পরিস্থিতি দেখে এটা বুঝতে পারছি চকচকে সোনা চিনতে তোমার আর বোধহয় দেরি হবে না।’
বাবার কথা শুনে মা রে’গে উপরে চলে গেলেন! এই বাড়িতে বিয়ে হবার সুত্রপাত ধরতে গেলে আমার শশুড়মশাই। উনি নিজে পছন্দ করে এনেছিলেন আমাকে। উনার ব্যাবহারে কখনো মনে হয়নি আমি আমার বাবাকে পায়নি। আমার বাবা মারা গেছে কয়েক মাস আছে। মা এখন ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। বাবা থাকতে ঢাল হয়ে ছিলো আমার পাশে । বাবা এখন নেই বাবার জায়গাটা বেশ শুন্য শুন্য লাগলেও এই শশুড় মশাই সেই অভাব খানিকটা পূরন করে দিয়েছে। উনি আমার মা’থায় হাত রেখে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো উপরে!
এতোক্ষণ বাড়ির এক কোনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার নিজের রুমে গেলাম। রুমে যেতেই রাজীবকে দেখে চমকে ওঠলাম! কি সুন্দর করে সে আমার বেডের উপর বসে আরামে ফোন টি’পেছে! অবাক হলাম উনি এই বাড়িতে হঠাৎ করে? তাও একেবারর আমার রুমের ভেতর!
-‘ আপনি আমার রুমের ভেতর আসলেন কখন?’
-‘ ওই তো তুই কোথাও যেনো ছিলিস। তোর শশুড় মশাই আমাকে বললো তোর রুমে যেতে কারন আসার সময়ই তোদের ওই ড্রয়িং রুমে একটক মেয়েকে বসে থাকতে দেখেছিলাম। পরে জানতে পারি সাগর এটাকে কালকে বিয়ে করে এনেছে মানে এক কথায় তোর সতীন!’
-‘ হু সেই যাই হোক না কেন? আপনার কি? আপনি কেনো এসেছেন এখানে?’
-‘ এখনো আগের মতন খারাপ ব্যাবহার করছিস? হা হা এই জন্যই তোর কপালে সতীন জুটেছেরে প্রিয়তা বুঝলি তো? ছিলিস তো কালো মেয়ে তাও আবার এতো কিসের দে’মা’গ তোর সেটাই তো বুঝছি না! এবার দেখ কেমন লাগে, তোর অবস্থা দেখতেই এসেছি বুঝলি। আমাকে যে অপমান,করেছিস না? বারবার ফিরিয়ে দিয়েছিলি এখন বুঝ সেটার মজা। দেখ কেমন লাগে সতীনের সংসার করতে! এ তো কেবল শুরু দেখ সামনে তোর জন্য ঠিক কি অপেক্ষা করছে!’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেই রাজীব বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। আমি বুঝলাম না উনি ঠিক কি কারনে এসেছে এই বাড়িতে আমাকে কথা শোনানোর জন্য? নাকি আমার করুন পরিস্থিতি দেখবার জন্য? যাই হোক উনি যে চলে গেছেন এতেই আমার শান্তি! উনাকে দেখলেই অসহ্য লাগে একেবারে। বাবা থাকতে সবসময়ই আমাকে এই ব’দ লোকটার হাত থেকে রক্ষা করেছে। রাজীব ভাইয়া সম্পর্কে আমার বড়ো চাচাতো ভাই হয়। আমাদের বাড়ি ছেড়ে আধা ঘন্টার দুরত্বে ছিলো উনাদের বাড়ি। উনি মোটেও কোনো সুবিধার মানুষ নন। উনি চাইতেন আমি উনাকে বিয়ে করি, স্কুল, কলেজের রাস্তা আটকে কতোবার উনার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আমাকে কতো বার যে বিরক্ত করেছে ঠিক নেই! উনার একটাই কথা আমার গায়ের অতো ফর্সা নয় তবুও কেনো আমি উনাকে তুচ্ছ তাছিল্য করছি? আমার তো উনাকে সাদরে গ্রহন করা উচিত। কিন্তু উনি যে ঠিক কি রকম স্বভাব চরিত্রের সেটা আমার বাবা বেশ ভালো করেই জানতো। উনি যে কি পরিমান ব’দ লোক সেটা উনি আমাকে হারে হারে বুঝিয়েছেন। কম বিপদে পড়িনি উনার জন্য! কতো চ’ড় থা’প্প’ড় মে’রে’ছি অপমান করেছি তার হিসবে নেই। শেষমেশ বাবা সাগরের সমন্ধটি আসতেই আমার বিয়ে দিয়ে দেন। প্রতিবেশীরা নানান কথা বললেও আমার স্বামী কখনো আমাকে কালো বলে কোনো কথা বলেনি, আমার শশুড়মশাই ছিলেন আমার দিত্বীয় বাবা। জায়ের সঙ্গে সেরকম ভালো সম্পর্ক না থাকলেও তিক্ততার সম্পর্কও নেই বলতে গেলে। আমার দেবরেরও বিয়ে হয়েছে এইতো সবে সবে। মাস চারেক হবে বোধহয়। সব মিলিয়ে ভালোই ছিলাম কিন্তু সুখ হয়তো আমার কপালে বেশিদিন সহ্য হয় না যার উদাহরন স্বরুপ কলি!
এসব কথা না ভেবে রুমের জানলার দিকে চেয়ে বসে আছি। কি সুন্দর প্রকৃতি? কি হতো যদি আজকের সকাল টাও যদি এরকম সুন্দর হতো? ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। যা হবার নয় তা হয়তো কোনোদিনই হবে না। বেলা দশটার ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে। এখনো কিছু খাইনি পেটে ক্ষিদেও লেগেছে। রান্নাঘরে গিয়ে দু’টো রুটি খেয়ে কাজে লেগে পড়লাম।আমাকে সাহায্য করতে পাখি মানে আমার জা এসেছে। সমস্ত কাজ কর্ম শেষ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে রয়েছি নিজের রুম বলতে সাগরের রুমে নয় একটা অন্য রুমে এসেছি। পাখিকে বলে দিয়েছি সবাইকে খাবার পরিবেশন করার কথা। নিজের রুমে এসে শুয়ে রয়েছি।
————————————
সাগর কাজ থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম প্রিয়তার রুমে যায়। গিয়েই দেখতে পায় প্রিয়তা ঘুমাচ্ছে আরাম করে। সেই যে দুপুরে ঘুম দিয়েছে এখনো ওঠেনি! হয়তো কালকে রাত্রে নির্ঘুম এর ফলে আজকে এই সস্তির ঘুম।প্রিয়তার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে সাগরেরও বুঝতে বাকি নেই ঠিক কোন কারনে প্রিয়তার এই অবস্থা! সাগর প্রিয়তার মা’থায় হাত রাখলো। কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিলো যাতে প্রিয়তা টের না পায়।
-‘ আমি সব ঠিক করে দেবো প্রিয়তা। এই সব দিন শ্রীঘই বিদায় নিবে আমাদের জীবন থেকে। শুধু ওই কুৎসিত লোকটাকে একবার খুঁজে তো পাই! তারপর সকল আধার কেটে যাবে আমাদের জীবন থেকে।’
সাগর প্রিয়তার রুম ছেড়ে নিজের রুমে গেলো। সেখানে কলি বসে রয়েছে। সাগরের কলিকে এখন এই রুমে দেখে বিরক্ত লাগলেও যে কিচ্ছু করবার নেই। কলি ও তো তারই মতন পরিস্থিতির স্বীকার! সাগর ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপে বসে কিছুক্ষণ কাজ করলো! পাখি এসে খেতে যাবার জন্য ডাকলেও সাগর খেতে যায় না। ফলে পাখি রুমে এসে খাবার দিয়ে যায় সাগর সে খাবারের দিকে ফিরেও তাকায় না। সে মনোযোগ দিয়ে আবার আগের মতন কর কাজ করে যাচ্ছে।
-‘ খাবারের কি দোষ বলুন? খেয়ে নিন। খাবার তো আর কোনো কিছু করেনি।’
সাগর এবার রে’গে গিয়ে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলো! কলি সাগরের আকস্মিক কান্ডে ভড়কে গেলো!
-‘ তাহলে কি আমার দোষ বলো কলি? আমি কি করেছি? সবদিক দিয়ে সাফার করছি আমি! নিজের স্ত্রীর থেকে দূরে গিয়ে তোমার সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। প্রিয়তা যে কতোটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা কি আমি জানি না বলো? জানি না ও খেয়েছে কিনা? আর আমি এখানে খে য়েদেয়ে শান্তিতে ঘুমাবো?’
-‘ আপনার মতন আমিও যে অসহায় রাজীব। কিচ্ছু করার নেই আমাদের হাতে এখন শুধু ওই লোকটিকে খুঁজে আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হবে।’
সাগর কলির কথার কোনো প্রতিত্তোর না করেই বিছানা থেকে একটা বালিশ আর কাঁথা হাতে নিয়ে নিলো। যা দেখে কলি সাগরকে প্রশ্ন করলো,
-‘ আপনি কাঁথা বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? ‘
-‘ কলি একটা কথা ভূলে যেও না প্রিয়তা আমার স্ত্রী তুমি নও! সুতরাং এসব কথা বলবে না। এই বিয়ে না করেও বিয়ে বিয়ে নাটকটা যে কি কারনে করতে হয়েছে আমাদের, সেটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়? যখন জানোই অজানা নয় তাহলে ফের এসব বলবে না। তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো আমি বারান্দায় শুয়ে পড়ছি।’
-‘ ঠিকআছে, যেমনটি বলবেন আপনি। আমারও ভালো লাগছে না এসব করতে, জানিনা কবে পরিত্রাণ পাবো। এই রাতের আধার কেটে যেমন সকাল আসবে ঠিক তেমনিভাবেও একদিন আমাদের দু’জনের জীবনে আলো আসবে। সেই প্রতীক্ষাই করছি আমি।’
সাগর নিঃশব্দে বারান্দায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। দু চোখের পাতা এক করার চেষ্টা করেও পারছে না! বারংবার প্রিয়তার মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে। ব্যবসায়ের কারনে দূরে থাকলেও সাগর ঘুমানোর কখনোই প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া ঘুমাতো না। আজকে যেনো প্রিয়তা থেকেও না থাকার কষ্ট হচ্ছে খুব করে। শুধু মনে মনে প্রার্থনা করে যাচ্ছে শ্রীঘই যেনো সেই লোকটিকে খুঁজে পায়। কারো যেনো কোনো বিপদ না ঘটে।
#চলবে
]