#তুমিই_আমার_আষাঢ়_শ্রাবণ
#Part_3
#লেখনীতে_Nusrat_Hossain
সেদিনকার ঘটনায় নাফিয়া খুবই অপমানবোধ করেছিল। বলতে গেলে এতোটা অপমানিত কোনোদিন হতে হয়নি তাকে। তাও আবার শপিংমলের মানুষজনের সামনে! পরে যদিও নাফিয়া সব ভুলে থাকার চেষ্টা করে নিজের স্বাভাবিক লাইফে ফিরে আসে। তবে এই ঘটনার রেশ নাফিয়ার মন থেকে পুরোপুরি কাঁটেনি। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই সেদিনের ঘটনা মনে পরলেই নাফিয়া আঁতকে উঠত। তখন অজান্তেই হাতটা গালে চলে যেত৷ চড়টা খুব জোড়েই লেগেছিল। চাইলেও ভুলতে পারেনা নাফিয়া সেদিনের ঘটনাটা।
___________
ঘুমের মাঝে তীক্ষ্ণ আলো অনুভব করতেই নাফিয়ার চোখজোড়া কুঁচকে উঠে। নাফিয়া বিরক্ত হয়ে চোখজোড়া খুলতেই নিজেকে অচেনা একটা জায়গায় পেল। সামনের চেয়ারে বসা সেই অসভ্য ছেলেটাকে দেখে নাফিয়ার চোখজোড়া কপালে উঠে গেল। সে চিৎকার করে উঠার আগেই অসভ্য ছেলেটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
‘ডোন্ট শাউট ।’
গম্ভীর গলাটা শুনতেই নাফিয়া একটা ঢোক গিলল৷ সে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ক্ কি চাই ?’
স্পর্শ নাফিয়ার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলনা। বরং ঠিক রোবটের মতো হয়ে এক দৃষ্টিতে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। স্পর্শের এমন রোবটের মত ভাবভঙ্গি দেখে নাফিয়ার ভয়টা যেন আরো বেড়ে গেল। নাফিয়া এবার গলাটা কঠিন করে বলল,
‘ আমায় কোথায় নিয়ে এসেছেন?আমি কোথায়?’
স্পর্শ এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে নাফিয়ার কাছে আসতে লাগল। স্পর্শ কাছে আসাতে নাফিয়া ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে বিছানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে চাইল। কিন্তু পারলো না। তার আগেই স্পর্শ খপ করে নাফিয়ার হাতটা ধরে ফেলে।নাফিয়া ভয় পেয়ে এবার কেঁদেই ফেলল। নিজের হাতটা স্পর্শের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল ,
‘আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ। এই যে কানে ধরলাম এই জীবনে আর কোনোদিন কোনো ছেলেকে থাপ্পড় মারবোনা। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আমার কোনো ক্ষতি করবেননা। দয়া করে আমায় যেতে
দিন ।’
নাফিয়া একের পর এক অনুরোধবানী শোনাতেই লাগল স্পর্শকে। নাফিয়ার আকুতিভরা কন্ঠ স্পর্শের মন গলেও যেন গলল না। উল্টো সে আরো নাফিয়ার খুব কাছে এসে নাফিয়ার কানে ফিসফিস করে বলল,
‘ সরি। ‘
স্পর্শের মুখে সরি শব্দটা শুনে নাফিয়া বড়বড় চোখ করে তাকালো স্পর্শের দিকে।
স্পর্শ নাফিয়ার থেকে কিছুটা সরে এসে বলতে লাগলো,
‘ঐ দিন তোমায় থাপ্পড় মারার পর থেকে আমি একটুও শান্তি পাইনি জানো? ট্রাস্ট মি ! আমি আমার জীবনে কোনোদিন কোনো মেয়েকে অজান্তেও চড় মারেনি। কিন্তু তোমায় চড়টা মারতে হয়েছে ।এতে কিন্তু তোমার-ও দোষ আছে ।তুমি আমায় প্রথম চড় মেরেছিল ।তা-ও আবার বিনা কারনে ।ঐদিন আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তোমার চেহারায় সিগারেট ছুড়ে মারিনি ।তোমার কিছুটা দূরে যে ডাস্টবিনটা ছিল সেখানে সিগারেটটা ছুড়তে গিয়ে , দুর্ভাগ্যবশত তোমার চেহারায় গিয়ে সিগারেটটা পরে ।আর এতেই তুমি আমার উপর ক্ষেপা বাগিনী হয়ে আমায় চড়টা মারলে ।আর এটা আমি কোনোদিনও মানতে পারছিলামনা ।তাই আমিও রেগে গিয়ে হিসাব বরাবর করার জন্য শপিংমলে তোমায় চড়টা মেরে দিই ।যদিও দোষটা তোমার ছিলনা ।আমি নিজেই ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমার সাথে ধাক্কা খাওয়ার অভিনয়টা করি আর তারপর !’
স্পর্শ শান্তগলায় বলল , ‘আ’ম সরি নাফিয়া ।’
নাফিয়া স্পর্শের কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেল ।সে অবাক হওয়ার ভান করে বলল ,
‘ শুধুমাত্র সরি বলার জন্য আপনি আমায় এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন ?আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কলেজ থেকে ফুপির বাড়ি গিয়েছিলাম , ফুপির বাড়ি বেশি দূর না তাই হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলাম ।তারপর কেউ পেছন থেকে এসে আমার মুখে রুমাল চেঁপে দেয় ।বিশ্বাস করুন ঘুনোক্ষরেও তখন মনে হয়নি সেই ব্যক্তিটা আপনি ? কি অদ্ভুত আপনি !শুধুমাত্র সরি বলার জন্য এত কাহিনী করার কি প্রয়োজন ছিল ? আপনার কোনো ধারনা আছে আমার বাবা মা আমাকে না পেয়ে কতটা চিন্তা করছে ?’ শেষের কথাটা নাফিয়া বেশ রেগেই বলল ।
স্পর্শ নাফিয়ার পাশে ধপ করে বসে ভাবলেশহীন গলায় বলল,
‘আমি যদি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমায় সরি বলতাম , তাহলে কি তুমি এক্সেপ্ট করতে ? উল্টো আমার গালে আরো একটা চড় পরত ।তোমার তো আবার হাতটা বেশি চলে ।তাইতো এত কাহিনী করতে হলো ।এখন জলদি জলদি সর্যিটা এক্সেপ্ট করো তো আমার নিজেরই বিরক্ত লাগছে তোমার সামনে বসে থাকতে ।’
শেষের কথাটায় স্পর্শ বিরক্ত কন্ঠে বললেও তার উদ্দেশ্য ছিল নাফিয়াকে রাগিয়ে দেওয়া ।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নাফিয়া একটুও রাগলোনা ।বরং শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করল ,
‘ আমরা এখন কোথায় ? আমায় জলদি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসুন ।আমি বাড়ি যাবো ।বাবা , মা , ভাইয়া আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা করছে হয়ত ।’
স্পর্শ নাফিয়ার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করলনা ।তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে , সে মনে মনে কি যেন একটা ভাবছে ।স্পর্শের ইচ্ছে হচ্ছে আরেকবার নাফিয়ার তেজী রূপটা দেখতে ।রেস্টুরেন্টে প্রথম দেখেছিল নাফিয়ার এই তেজী রূপটা ।অদ্ভুতভাবে , মেয়েটাকে রাগলে খুব সুন্দর লাগে ।স্পর্শের জানামতে , গৌর বর্নের মেয়েরা রাগলে ওদের চেহারা লাল হয়ে যায় ।যেমন ওর মা মিসেস তানিয়া মাঝেমধ্যে রেগে গেলে চেহারাটা লাল হয়ে যায় , বিশেষ করে মায়ের নাকটা !কিন্তু নাফিয়া রেগে গেলে ওর চোখমুখ সম্পূর্ন কুঁচকে যায় । স্পর্শ ঐ দিন লক্ষ্য করছিল নাফিয়ার শ্যাম বর্নের চেহারাটা ।আচ্ছা ? প্রত্যেকটা শ্যামবর্নের মেয়েরা রাগলে , তাদেরকেও কি এতোটা সুন্দর লাগে ঠিক নাফিয়ার মত !
‘ কি হলো কিছু বলছেন না যে ?’
নাফিয়ার কথায় স্পর্শ ভাবনা থেকে ফিরে এল ।সে নিজেকে প্রস্তুত করে বলল,
‘ এখন আমরা সুন্দরবনে আছি ।তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব না ।এসব বলে এখন কোনো লাভ নেই ।’
রাগে নাফিয়ার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল কথাটা শুনে ।সে রাগে কোনোকিছু না ভেবেই স্পর্শের উপর হামলা করে বসল ।যার ফলে , দুজনেই অপ্রত্যাশিতভাবে বিছানায় গিয়ে পরল ।অজান্তেই দুজন দুজনের অনেকটা কাছে এসে পরল ।
চলবে,
@Nusrat Hossain
(দু:খিত এতক্ষণ ওয়েট করানোর জন্য ।)