#তুমিই_আমার_আষাঢ়_শ্রাবণ
#Part_4
#লেখনীতে_Nusrat_Hossain
রাগে নাফিয়ার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।সে রাগে কোনোকিছু না ভেবেই স্পর্শের উপর হামলা করে বসল ।যার ফলে , দুজনেই অপ্রত্যাশিতভাবে বিছানায় গিয়ে পড়ে ।ইচ্ছামতো স্পর্শকে কিল , ঘুষি , চড় থাপ্পড় মারতে লাগল ।স্পর্শ নাফিয়াকে আটকানোর চেষ্টা করছে ।কিন্তু নাফিয়া যেন হুশে নেই ।সে রাগে পারছেনা স্পর্শকে মেরে ফেলতে ।স্পর্শ খুব ইনজয় করছে নাফিয়ার এই রাগীরূপটা ।এক পর্যায় খপ করে ধরে ফেলল নাফিয়ার হাতটা ।নাফিয়া হাতটা স্পর্শের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল।কিন্তু পারলোনা স্পর্শের শক্তপোক্ত হাতদুটোর সাথে ।স্পর্শ নাফিয়ার হাতদুটো আরো শক্ত করে ধরে বলল ,
‘ উইল ইউ মেরি মি নাফিয়া ? ‘
নাফিয়া কথাটা শুনতেই স্পর্শের দিকে তাকিয়ে একটা গরম চাহনি দিয়ে বলল,
‘আমি বাসায় যাবো ।আমায় বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসুন ।’
উহ ! তোমায় কিছু তো একটা বলতে হবে ।আমি জানতে চাই স্পর্শ উত্তেজিত হয়ে বলল ।
নাফিয়া এবার হার মেনে বলল ,
‘বলব ।তার আগে বলুন , আমায় বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন ?’
নাফিয়ার হাতের বাধন হালকা করে স্পর্শ বলল ,
‘ প্রথমত , আমরা এই মুহূর্তে সুন্দরবনে অবস্থান করছিনা ,তোমায় আমি মিথ্যে বলেছি ।দ্বিতীয়ত , আমি তোমায় সহিহ সালামত বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবো ।তবে তার আগে আমি আমার উত্তরটা চাই ।’
নাফিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘বেশি দিন হয়নি আপনি আমাকে চিনেন !মাত্র দুদিন-ই আমাদের দেখা হয়েছে , তা-ও আবার খুব-ই তিক্ততার সাথে ।তো , এই দু’দিনের পরিচয়ে আপনি আমায় কেন বিয়ের প্রপোজ করলেন ? সেটা আমি আগে জানতে চাই ।’
স্পর্শ একটা দীর্ঘ দম নিয়ে বলতে শুরু করল ,
‘বিয়ে করার জন্য দীর্ঘদিনের পরিচয় হতে হয়না ।অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা বিয়ের দিনই নিজের বর , কনের সাথে পরিচিত হয় ।বিশেষ করে , এ্যারেঞ্জ ম্যারিজের কথা যদি বলি !সেক্ষেত্রে বর ,কনেদের কিন্তু আগেই আলাপ পরিচয় থাকেনা ।বর কনে তাদের পরিবারের মাধ্যমে একে অপরের সাথে পরিচিয় হয় , তারপর বিয়ের পিড়িতে বসে ।সেইক্ষেত্রে আমাদের অলরেডি দু’দিন দেখা হয়ে গেছে ।হোক , তিক্ততার সাথে ।কিন্তু দেখা তো হয়েছে !ধরলাম তুমি এই ক’দিনে নাহয় আমায় একটুও ভাবোনি । কিন্তু আমি !আমি এই কয়দিন তোমায় ভেবে ভেবে একটুও শান্তি পাইনি ।তাহলে এটাকে তুমি কি বলবে নাফিয়া ? আমার মন মস্তিষ্কে এ ক’দিনে তুমি কতটা জায়গা করে নিয়েছো , তুমি কি ভাবতে পারছো ? এখনো কি তুমি সব শুনে ‘দুইদিনের পরিচয়ের ‘ যুক্তিটা দিবে ? সব শুনে এখন অন্তত এই যুক্তিটা দিওনা ।তাহলে , এ ক’দিনে তোমার সম্পর্কে আমি যা ধারনা করেছিলাম , সব ধারনা ভুল হয়ে যাবে ।আমি মনে করি , তুমি খুবই বুদ্ধিমতি একজন মেয়ে ।তাইতো তোমার মত একজন চমৎকার মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে চাচ্ছি ।আশা করি , এখন আমি আমার সন্তুষ্টজনক উত্তরটা পাবো ।’
নাফিয়া মন দিয়ে স্পর্শের প্রতিটা কথা শুনল ।তার যুক্তিটাকে স্পর্শ সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিল ।নাফিয়া বুজতে পারল স্পর্শের সাথে সে কথায় পেরে উঠবেনা ।সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ,
‘আপনি আমার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল দিন ।যদি আমার বাবা , মা,আর ভাই বিয়েতে মত দেয় তাহলে আমার-ও আপনাকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই ।’
স্পর্শ বোধহয় তার সন্তুষ্টজনক উত্তরটা পেল ।সেটা তার ঠোটের মুচকি হাঁসিটাই বলে দিচ্ছে ।সে হাঁসিটা ঠোটে ঝুলিয়ে হাত দিয়ে চুলগুলো ব্রাশ করতে করতে বলল ,
‘চলো , তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি ।আমার শ্বশুর শ্বাশুরি চিন্তা করছে তো !”
স্পর্শের শেষের কথাটা শুনে , নাফিয়া ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল স্পর্শের দিকে ।বিয়ে হওয়ার নাম নেই এখন-ই শ্বশুর শ্বাশুরি বানিয়ে দিল ?
স্পর্শ নিজের গাড়ি করে নাফিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিল ।নাফিয়াকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল ,
তাহলে , খুব শিগ্রই আমাদের দেখা হচ্ছে ।
নাফিয়া স্পর্শের দিকে তাকিয়ে কাষ্ঠ হাঁসি দিল । বিনিময় স্পর্শ -ও মুচকি হাঁসল ।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল ।নাফিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল , স্পর্শের গাড়িটার দিকে ।
____________________
পরেরদিন বিকেলে , সত্যি সত্যি স্পর্শ তার মা বাবাকে সাথে করে নাফিয়াদের বাড়ি প্রপোজাল নিয়ে এসেছে ।নাফিয়া সেই মুহূর্তে হতবাক হয়ে গিয়েছিল ।সে ভেবেছিল স্পর্শ হয়ত কয়েকদিন টাইম নিবে ।কিন্তু তার ধারনা ভুল করে দিয়ে স্পর্শ তার পরেরদিন-ই মা বাবা নিয়ে হাজির হয়ে গেছে তাদের বাড়ি ।স্পর্শের বাবা , মা খুব-ই অমায়িক ।তাদের আচরনে বোঝা যায় ,তারা তাদের ছেলেকে ঠিক কতটা ভালোবাসে ।এই বিষয়টা নাফিয়াসহ নাফিয়ার মা , বাবা , ভাই-ও লক্ষ্য করেছে ।তাদের খুব-ই ভালো লেগেছে স্পর্শ আর স্পর্শের পরিবারকে ।তাদের ধারনা , যারা নিজের ছেলেকে এতোটা ভালোবাসে , তাদের মেয়ে নাফিয়াকেও হয়ত ঠিক এতোটাই স্নেহ করবে ! তাই তারা এত ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে চায়না ।দুইদিন চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে নাফিয়ার বাবা , মা , ভাই-ও বিয়েতে মত দিলেন ।বিয়ের ডেট ঠিক হল এক সপ্তাহ পর ।আর বিয়ের ডেট টা-ও ঠিক হয়েছে স্পর্শের কথামত-ই ।এইবার নাফিয়া হতবাকের একদম চরম পর্যায় চলে গেছে ।এত দ্রুত তার বিয়ে হয়ে যাবে , সে একদমই ভাবতে পারেনি ।তা-ও আবার এক সপ্তাহ পর !
খুব দ্রুত গতিতে দিনগুলো যেন পার হয়ে যাচ্ছে ।দুই পরিবার-ই নাফিয়া আর স্পর্শের বিয়ে নিয়ে খুব-ই ব্যস্ততার সময় কাটাচ্ছে ।আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করা , মার্কেট করা , বাড়ি ডেকোরেশন করা , এক কথায় তাদের ছেলে , মেয়ের বিয়ের জন্য সব ধরনের আয়োজন করছে এই দুটি পরিবার ।এই সাতদিনে স্পর্শের সাথে তেমন একটা দেখা হয়নি ।শুধু একবারই দেখা হয়েছে স্পর্শের সাথে বিয়ের কেনাকাটা করার সময় ।
_______________
ফাইনালি , সাতদিন পর সেই শুভদিন টা এসেই গেল ।স্পর্শের এবার অপেক্ষার অবসান ঘটল ।খুব শান্তিপূর্ণভাবে নাফিয়া আর স্পর্শের বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেল ।নাফিয়াকে মায়ের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আনা হল ।নিস্তব্ধ রাত , সারাদিনের বিয়ের ঝট ঝামেলা শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে নিজ নিজ বিছানায় ঘুমিয়ে আছে ।ঘুম নেই শুধু দুজন মানব , মানবীর চোখে ।বারান্দার চেয়ারে বসে তারা একে অপরকে নিজেদের সুখ , দুঃখ বিলাতে ব্যস্ত ।
-জানো নাফিয়া ? আমি আমার বাবা , মায়ের নিজ সন্তান নই ।শিশুকালে তারা আমায় এক এতিমখানা থেকে এডপ্ট করেছে ।তারা ভাবে , আমি হয়ত কিছুই জানিনা ।কিন্তু তারা তো জানেনা , আমি দশ বছর বয়সে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের সব কথা শুনতে পাই আর তখনি জানতে পারি আমি তাদের এডপ্টেড সন্তান বলেই স্পর্শ নিজের ঠোট প্রসারিত করে একটুখানি হাঁসল ।সেই হাঁসিতে বিষন্নতা ছিল কিনা জানা নেই নাফিয়ার ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে স্পর্শের দিকে ।আর স্পর্শের দৃষ্টি রাতের বিশাল আকাশটার দিকে ।
স্পর্শ হ্ঠাৎ নাফিয়ার দিকে হাতটা বাড়িয়ে মোহনীয় গলায় বলল ,
সব সময় আমার পাশে থাকবে তো নাফিয়া ? আমায় কখনো ছেড়ে যেওনা ।আমার চোখের আড়াল হয়োনা কোনোদিন ।
নাফিয়ার কি হলো সে জানেনা ? তার ইচ্ছে করছে স্পর্শের হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে , আমি কখনো চোখের আড়াল হবোনা আপনার ।কিন্তু লজ্জা লাগছে এটা করতে ।স্পর্শ তখনো নাফিয়ার দিকে হাতটা বাড়িয়ে আছে।স্পর্শ বলল ,
কি হলো আমি ওয়েট করছি তো ?
নাফিয়া লজ্জাবতী চেহারা নিয়ে স্পর্শের হাতের উপর হাতটা রেখে অস্ফুট স্বরে বলল ,
আমি সব সময় আপনার পাশে থাকবো ।
স্পর্শ খুশি হয়ে নাফিয়াকে দুই হাতে আগলে জড়িয়ে ধরল ।আর নাফিয়াও কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শেকে জড়িয়ে ধরল ।আজকে থেকে শুরু হল তাদের একসাথে পথ চলার ।শুরু হলো এক নতুন যাত্রার ।
সমাপ্ত
@