#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব- ২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
হাতে কোন পুরুষের স্পর্শ পেতেই,মেহেভীন লাফিয়ে উঠে দেখে তার পাক্তন অভ্র। বিয়ের আগের রাতে অভ্র হঠাৎ মেহেভীনের ঘরে কেন?মেহেভীনকে এইভাবে উঠতে দেখে, অভ্রও খানিক্টা চমকে যায়। মেহেভীন তো ঘুমিয়ে ছিলো, তাহলে জেগে গেলো কীভাবে? মেহেভীন ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে রাত ২টো বাজে। কাল অভ্রের বিয়ে, অথচ এতো রাতে অভ্র মেহেভীনের ঘরে কেন? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে বসে মেহেভীন।
অভ্র মেহেভীনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘তুই ঘুমাস নি? ‘
‘হ্যা ঘুমিয়েছিলাম, কিন্তু রুমে তোমার উপস্হিতি টের পেয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার ঘুম বরাবরই কাঁচা। তুমি আমার ঘরে এতো রাতে কেন? ‘
মেহেভীনের প্রশ্নে অভ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না।
মেহেভীন নিজের ফোসকা পরা হাতের দিকে তাঁকিয়ে দেখে, তাতে ওষুধ লাগানো। অভ্রের হাতেও ওষুধ। তার মানে এতো রাতে অভ্র তার হাতে ওষুধ লাগাতে এসেছিলো। মেহেভীনের ফোসকা পরা হাতের দিকেও অভ্রের নজর ঠিক গিয়েছিলো।
‘তুমি আমার হাতে এতো রাতে ওষুধ লাগাতে এসেছিলে? ‘
অভ্র এখন কী বলবে?
সে তখন ডিভোর্স পেপার দিতে এসে, খেয়াল করছিলো মেহেভীনের ফোসকা পরা হাতটি। মেহেভীন যেই মেয়ে নিজের হাতের দিকে সে একটুও যত্ন নিবে না। তাই অভ্রই তার হাতে ওষুধ লাগাতে ঘরে এসেছিলো। সত্য কথাটি লুকিয়ে, অভ্র বলল,
‘আসলে আমি এই ঘরে একটা ওষুধ নিতে এসেছিলাম, তারপর দেখলাম তোর হাতটায় ফোসকা পড়ে গেছে। তাই ভাবলাম ওষুধ লাগিয়ে দেই। আর তেমন কিছু না।
মেহেভীন ছলছল চোখে বলে উঠলো,
‘আমার মনের ক্ষতে ওষুধ কীভাবে লাগাবে অভ্র? তুমি শুধু আমার হাতের ক্ষতটাই দেখলে, অথচ আমার মনের ক্ষতটা দেখলে না।
আমার মনে যে বিশাল বড় ক্ষত তুমি করে দিয়ে গেছো। সেই ক্ষতে কোন ওষুধেও যে কাজ হবেনা।
আমার বুকটা কতটা পুড়ছে সেই খবর তুমি রাখো? ‘
অভ্র কিছু বলতে গিয়েও, বললো না। মেহেভীনের বানীগুলো তার কেন যেন সহ্য হচ্ছে না।
অভ্রের ফোনটা বেজে উঠলো। মায়রা ফোন করেছে। মারয়া আবদার করেছে, আজ সারারাত অভ্রের সাথে লং ড্রাইভিং এ সে যাবে। বড়লোক বাবার মেয়ে মারয়া। যা আবদার করবে, সেই আবদারই তার পূরন করতে হবে। অভ্রের ফোনে ‘মায়রা ‘ নামটি দেখে , মেহেভীন বিদ্রুপ হেঁসে বলে,
‘তোমার হবু স্ত্রীর ফোন এসেছে অভ্র। তুমি এখন রুম থেকে যাও। কালকে তোমার বিয়ে। বাড়িতে আত্বীয়স্বজন গিজগিজ করছে।
এতো রাতে আমার ঘরে তোমাকে দেখে, আত্বীয়স্বজন নানা কথা রটাবে। আমার নামের দুশ্চরিত্রার ট্যাগ বসাতেও তারা ভাববে না। কিন্তু তোমার কিছুই হবে। তাই বলছি আমার রুমে তুমি এসো না। ‘
মেহেভীন এইরকম কড়া কড়া জবাবে অভ্রের নাক মুখ খিচে দাঁড়িয়ে গেলো। আজ-কাল মেয়েটা শুধু তাকে কড়া কড়া বানী শুনিয়ে দিচ্ছে। কই আগে তো মেয়েটা এমন ছিলো না। তার কথায় একপ্রকার মিষ্টতার আভাস পেতো অভ্র। তাহলে সেই মিষ্টতা কী অভ্রের করা প্রেমের ছলে হারিয়ে গেলো? হয়তো।
অভ্র আর কিছু ভাবতে পারছে না। মায়রা বার বার ফোন করছে। মেয়েটা অনেকক্ষন ধরে,নীচে গাড়ি নিয়ে অভ্রের জন্যে অপেক্ষা করছে। না মেয়েটাকে আর অপেক্ষা করানোর ঠিক হবে না।
অভ্র নীচে চলে গেলো। মেহেভীন দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
অভ্র সদর-দরজার কাছে গিয়ে, চাবি বের করে দরজাটা খুলতে গিয়ে দেখলো, তার বন্ধুরা সবাই পুরো ড্রইং রুম জুড়ে নিজেদের রাজত্ব বিস্তার করে ঘুমাচ্ছে। তাদের দেখে মৃদ্যু হেঁসে, অভ্র ড্রইং রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভ্রকে বেড়িয়ে যেতে দেখে, আশিক উঠে গেলো। এতোক্ষন সে ঘুমের ভান ধরে ছিলো। অভ্র এখন বাড়িতে নেই। বাকি বন্ধুরা ও আত্বীয়স্বজনরা এখন ঘুমাচ্ছে। এই সুবর্ন সুযোগ আশিক হাতছাড়া করতে চাইছে না। অনেক মেয়ের সাথে সে রাত কাটিয়েছে। কিন্তু মেহেভীন একটা মেয়ে বটে। তার শরীরটা দেখলেই, আশিকের পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যায়। আজকে সে মেহেভীনকে নিজের করেই ছাড়বে। আশিক পৌচাশিক হাঁসি দিয়ে, মেহেভীনের রুমের দিকে যেতে থাকে।
_______
অভ্রকে দেখে মায়রা অন্যদিকে মুখটা ঘুড়িয়ে দেয়।
সে আজ অভ্রের সাথে বড্ড রাগ করেছে। এতোক্ষন ধরে তাকে অপেক্ষা করিয়ে নীচে দাঁড় করিয়ে রেখেছে অভ্র। কি এমন মহাকার্য করছিলো অভ্র? যে তাকে আদাঘন্টা ধরে নীচে দাঁড় করিয়ে রাখলো।নিজের প্রেয়সীর রাগ হয়েছে বুঝতে পেরে, অভ্র পিছন থেকে মায়রাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আমার মায়ু বেবীর বুঝি খুব রাগ হয়েছে? ‘
‘হুম খুব হয়েছে। আজকে তো তোমার মায়ু বেবী তোমার সাথে কথাও বলবে না। ‘
‘তাহলে আমার কি হবে? আমার মায়ু বেবী যদি আমার সাথে কথা না বলে, তাহলে তো এই ‘অভ্র ‘ নামক বেচারা প্রাণীটার দুর্দশা হয়ে যাবে। তোমরা মুখে মিষ্ট বানী আমার কানে না পৌঁছালে, আমার অন্তরটা যে জ্বলে-পুড়ে যাবে। তখন কি হবে? ‘
অভ্রের এমন কথা শুনে, ‘মায়রা ‘ নামক রমণীর সব রাগ গলে জল হয়ে গেলো। সে হেঁসে উঠলো অভ্রের কথায়। নিজের প্রেয়সীকে হাঁসতে দেখে, অভ্রও হেঁসে উঠলো। মায়রা অভ্রের বুকে মাথা রেখে বলো,
‘তুমি সারাজীবন আমার হয়েই থেকো অভ্র। কখনো বদলে যেও না। তুমি বদলে গেলে, আমি যে নিজের অস্তীত্বকে হারিয়ে ফেলবো। ‘
মায়রার কথা শুনে অভ্র মুচকি হেঁসে, অভ্র মায়রাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আমি তো সবসময় তোমরাই আছি এবং তোমারই থাকবো। বিয়ের আগে আমার প্রমিজ তোমার কাছে মাই ডার্লিং। ‘
জানালা দিয়ে এইসব কিছুই দেখে যাচ্ছে মেহেভীন।
অভ্র তো এই বুকে তাকেও জায়গা দিয়েছিলো। এই বুকে মেহেভীনকে জড়িয়ে কত-শত ভালোবাসার কথা বলেছিলো। কত প্রতিজ্ঞা দিয়েছিলো। সেসব কি আজ মিথ্যে হয়ে গেলো? সবকিছুই অভ্রের নাটক ছিলো? এতোটা নিখুঁতভাবে মানুষ অভিনয় করতে পারে? কই মেহেভীন তো এই মিথ্যে অভিনয় গুলো ধরতে পারেনি। তার মানে কি মেহেভীন বোকা ছিলো বলে, অভ্র এতোটা নিখুঁতভাবে ১১টা মাস ধরে ভালোবাসার অভিনয় করে, মেহেভীনকে ব্যবহার করে গেলো অভ্র। আচ্ছা এই ১১ মাসের মিথ্যে ভালোবাসার নাটকে, অভ্রের মনে কী মেহেভীনের জন্যে এইটুকুও জায়গাও হয়নি? হয়তো না।
মেহেভীনের চোখ থেকে টুপটুপ করে পড়তে থাকলো।চোখের জলগুলো বড্ড অবাধ্য। নিজের মতো পড়তেই থাকে। মেহেভীন আকাশের পানে, তাঁকিয়ে বললো,
‘আচ্ছা প্রতারকগুলো সবসময় কেন ভালো থাকে?
হুম বুঝেছি হয়তো তারা মানুষের মন ভেঙ্গে পৌচাশিক আনন্দ পায়।
অথচ তারা যাদের মন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। তারাই দিনশেষে বুকে কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে। হ্যা পৃথিবীতে আজ শুধুই প্রতারকদের রাজত্ব। তারা সবসময় বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুড়িয়ে বেড়ায়। ‘
মেহেভীন দ্রুত নিজের চোখের জলটুকু মুছে বলে,
‘না আমি কিছুতেই কাঁদবো না। আমিও দেখিয়ে দিবো অভ্র আহমেদকে আমিও পারি। আমিও আমার জীবনে মুভ অন করবো। ‘
মেহেভীন ড্রয়ার থেকে ডিভোর্স পেপারটা বের করে,
কলমটা হাতে নিয়ে সাইন করতে গিয়েও থেমে যায়।
হাত টা প্রচন্ড রকমের কাঁপছে তার। এই একটা সাইন বিয়ের মতো বন্ধনটাকে শেষ করে দিতে, যথেষ্ট। পাশে অভ্রের সাইন জ্বলজ্বল করছে। আচ্ছা অভ্র যখন সাইনটা করেছিলো তখন তারও কি হাত টা কেঁপে উঠেছিলো? জানেনা মেহেভীন।
মেহেভীনের হাত থেকে কলমটা পড়ে যায়। অভ্র নামক বিশ্বাসঘাতকের কোন জায়গা নেই মেহেভীনের জীবনে। কিন্তু এই কথাটি কিছুতেই সে তার মনকে বুঝাতে পারছে না। মন যে বড্ড অবুঝ। সে মানে না কোন বাঁধা। সে শুধু তার নিয়মেই চলে।
মেহেভীন মাথাটা কেমন যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো। শরীরে তেমন জোড় পাচ্ছে না। গ্লাসের পানিটুকু নিয়ে, ডক্টরের দেওয়া ওষুধ বের করে খেয়ে ফেললো। মেহেভীন তার মায়ের ছবিটা বের করে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘মা কোথায় তুমি? তোমার মেয়ের যে বড্ড প্রয়োজন তোমাকে। কোথায় হারিয়ে গেলে মা? মা গো। এইসময় তোমার বুকে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদলে বোধহয় আমার ব্যাথাটা হাল্কা হতো। ‘
মেহেভীন ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। এই কষ্ট যে তার সহ্য হচ্ছে না।
মেহেভীন বিছানায় বসে পড়লো, পুনরায় ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিবে, তখনি কেউ বলে উঠলো,
‘মেহুরানী? ‘
কারো কন্ঠস্বর শুনে মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে আশিক। এতো রাতে আশিককে দিকে মেহেভীন কিছুটা ভয় পায়। দ্রুত ডিভোর্সের পেপারটা লুকিয়ে ফেলে সে।
আশিক শয়তানী হাঁসি দিয়ে, মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসছে।
__________
এদিকে,
অভ্র ও মায়রা গাড়িতে উঠে বসে। অভ্রের চোখ বার বার মেহেভীনের জানালার দিকে যাচ্ছে। জানালাটা খুলে রাখা। সচারচর মেহেভীন ঘুমানোর সময় ঘরের জানালা খুলে ঘুমায় না। তাহলে কী মেহেভীন এখনো ঘুমায় নি? অভ্রের ভাবনার মাঝেই মায়রা বলে উঠে,
‘কি হলো অভ্র? গাড়ি স্টার্ট দাও। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
‘ওহ হ্যা দিচ্ছি। ‘
অভ্র গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়েও, কি মনে করে জেনো থেমে যায়। কেমন যেন বুকে খচখচ করছে অভ্রের। এমনটা হওয়ার হঠাৎ কারণ অভ্র খুঁজে পাচ্ছে না।
চলবে….কী?
গল্পটার বেশিরভাগ অংশেই থাকবে কাল্পনিক। তাই কেউ দয়া করে বাস্তবের সাথে গল্পের মিল খুঁজতে যাবেন না। 🙂
[কেমন হয়েছে। অবশ্যই জানাবেন]