#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💞
#পর্ব- ৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্রের হাত ধরে মেহেভীন ছাদের কিনারে নিয়ে আসে। অভ্র মেহেভীন হাত টেনে, নিজের কাছে এনে রাগে চিৎকার করে বলে, ‘তুই আমাকে কেন নিয়ে এলি? ‘রাগে এখনো অভ্রের শরীর টগবগ করছে।
মেহেভীন অভ্রের হাত ছেড়ে দূরে সরে আসে। অভ্র এখনো রাগে ফুশছে। মেহেভীন ঠিক এখন অভ্রকে কি বলবে,ঠিক বুঝতে পারছে না। মেহেভীনের মনে পড়ে যায়, কিচ্ছুক্ষন আগের কথা।
আশিক শয়তানী হাঁসি দিয়ে মেহেভীনের দিকে এগোতে থাকে। মেহেভীন পিছাতে পিছাতে বলে,
‘আশিক ভাইয়া আপনি এতো রাতে আমার ঘরে এসেছেন কেন? কি চাই আপনার? ‘
আশিক মেহেভীনের একেবারেই কাছে এসে বলে,
‘কেন মেহুরানী তুমি কি বুঝো না? আমার যে তোমাকে বড্ড চাই গো। আমার চোখের চাহনী দেখে কি তুমি বুঝতে পারো না? দেখো শুধু একটা রাত তোমাকে কাছে চাই। এর বদলে তোমাকে মোটা অংকের টাকা আমি দিবো। ভেবে দেখো এই আশিকের সাথে রাত কাটানোর জন্যে মেয়েরা ঘুড়ঘুড় করে। সেখানে এই আশিক নিজে থেকে তোমাকে অফার দিচ্ছে। তোমার তো খুশি থাকা কথা। ‘
অভ্রের বন্ধুর কাছে এমন কটুক্তি মূলক ঘৃনিত বাক্য শুনে, মেহেভীন নামক রমনী মুখ ঘুড়িয়ে বলে,
‘ছিহ! আশিক ভাইয়া। আমি তো আমার বোনের মতো। আর আপনি কিনা আমাকে এইসব নোংরা প্রস্তাব দিতে আপনার বিবেকে একটুও বাঁধলো না? ‘
আশিক নামক লোকটা ভয়ংকরভাবে হেঁসে উঠে মেহেভীনের কথা শুনে। তারপর চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘আমাকে প্লিয এইসব বিবেকের কথা বলো না।
এতোদিন তো অভ্রের সাথে রিলেশনে গিয়ে,ঠিকই তার বিছানার সঙ্গী হয়েছো। কিন্তু অভ্র শেষে কি করলো? তোমাকে কয়েকদিন ব্যবহার করে ছেড়ে দিলো। আরে ডার্লিং আমি এমন না। আমার রাতের সঙ্গী হলে আমি তোমাকে টাকায় টাকায় ভরিয়ে দিবো। অভ্রের মতো ছেড়ে দিবো না। ‘
মেহেভীন আর সহ্য করতে পারলো না আশিকের এইসব অসভ্যতা। সে জোড়ে ঠাস করে আশিকের গালে চর বসিয়ে দিয়ে বললো,
‘একদম অভ্রকে নিজের মতো ভাববেন না। অভ্র আর যাই হোক। যত খারাপই হোক অভ্র, কিন্তু আপনার মতো মানুষ রুপী পশু না। আপনি জানেনই বা কতটুকু? আমার এবং অভ্রের সম্পর্কে? আমি অভ্রের…
কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায় মেহেভীন। সে অভ্রের স্ত্রী এইটুকু সে বলতে পারবে না। কেননা রাত পোহালেই একটা সামান্য সাইনের মাধ্যমে তার এবং অভ্রের স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কে দীর্ঘ অবশান ঘটবে। শুরু হবে অভ্র এবং মায়রার নতুন দাম্পত্যের জীবন।
আশিক কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘এতোক্ষন ধরে খুব ভালো করে তোকে বুঝাচ্ছিলাম। এইবার দেখবি এই আমার আসল রুপ। আমাকে পশু বললি না? এইবার দেখ পশু কাকে বলে। ‘
আশিক মেহেভীনের দিকে এগোতে নিলে, মেহেভীন দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যায়। আশিকও মেহেভীনের পিছন পিছন ছুটতে থাকে।
এদিকে,
অভ্রকে গাড়ি থামাতে দেখে, মায়রা প্রশ্ন করে বসে,
‘কি হলো অভ্র? তুমি গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছো না কেন? ‘
‘আমার যেতে হবে। ‘
‘কেন? ‘
অভ্র মেহেভীনের জানালার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
‘আমি আমি আমার ঘরে মানিব্যাগটা রেখে এসেছি। তাই সেটা নিয়ে আসছি। তুমি একটু অপেক্ষা করো জান। আমি এখুনি আসছি। ‘
অভ্র দ্রুত গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। মায়রাকে একপ্রকার মিথ্যে বলেই অভ্র বেড়িয়েছে। মানিব্যাগটা অভ্রের পকেটেই আছে।
কেন যেন তার মনটা মেহেভীনের জন্যে খচখচ করছে। তাই মায়কে মিথ্যে বলে, অভ্র মেহেভীনের ঘরের দিকে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য মেহেভীনকে একপলক দেখে, অশান্ত মনটাকে শান্ত করা।
_______
মেহেভীন দৌড়ে চিলেকোঠা ঘরের দিকে এসে পড়ে। শরীরটা বেশ দুর্বল, তাই মেহেভীন দৌড়াতেও পারছে না। পিছন থেকে আশিক মেহেভীনে ওড়না নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
‘এইবার কোথায় পালাবে ডার্লিং? ‘
মেহেভীন এখন কি করবে? কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। চিৎকারটুকুও তার পক্ষে সম্ভব না। চিলেকৌঠার ঘরটা বেশ কোনায় হওয়ায়, এখন থেকে শব্দ বাইরে পৌঁছাবে না। কেউ শুনতে পাবে না মেহেভীনের আর্তনাদ। আশিক মেহেভীনের ওড়নাটা আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে, মেহেভীনের দিকে এগোচ্ছে। মেহেভীন নিজের ওড়নাটা আশিকের থেকে টেনে নিয়ে,নিজেকে ঢাকার জন্যে প্রচেস্টা করে যাচ্ছে।
মেহেভীনের চোখে পানি চলে আসে। তাহলে কী ‘ আশিক ‘নামক পশুরের হাতে তাকে নিজেকে বিলিন করে দিতে হবে।
তখন পিছন থেকে অভ্র আশিককে ঘুসি দিয়ে ফেলে দেয়। অভ্রকে দেখে যেন সস্হি পায় মেহেভীন। অভ্র মেহেভীনকে ঘরে দেখতে না পেয়ে, চিলেকোঠার দিকে এসে, আশিকের করা কান্ডে তার মাথায় রক্ত চড়ে বসে। সে অনাবরত আশিককে মেরে যাচ্ছে।মারতে মারতে অবস্হা খারাপ করে দিচ্ছে।
অভ্র আশিকের নাক বরাবর ঘুসি দিয়ে বলে,
‘তোকে আমি ওয়ার্ন করেছিলাম আশিক। তারপরও তুই মেহেভীনের দিকে কুনজর দিচ্ছিস? তোর সাহস কী করে হয়? মেহেভীনের দিকে হাত বাড়ানোর?তোকে আজ মেরেই ফেলবো। ‘
আশিক মার খেতে খেতেই বলে,
‘এতো কিসের দরদ তোর মেহেভীন এর জন্যে? কাল
তোর বিয়ে আর আজ তোর প্রাক্তনের জন্যে দরদ উত্তলে পড়ছে। তা কী মায়রা জানে? আমি তো শুধু
অফার করেছি। কিন্তু এই মেয়ে নিশ্চই রিলেশন থাকা অবস্হায়, তোর সাথে ফস্টিনষ্টি করেছে তাইনা? এই মেয়ে তো তোর সো ক্লড রক্ষিতা। ‘
অভ্র আশিকের কলার চেপে ধরে বলে,
‘দেখ আশিক মুখ সামলে কথা বল। তুই জানিস মেহেভীন আমার কে?
অভ্রের কথার মাঝেই, আশিক আবারো বলে উঠলো,
‘ আগে তুই বল কে হয় এই মেহেভীন তোর? যার জন্যে এতো দরদ উতলে পড়ছে তোর।’
আশিক প্রশ্নে অভ্র চুপ হয়ে, অসহায় দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে তাঁকায়। মেহেভীন হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে।
মেহেভীন তো তার স্ত্রী। হ্যা মেহেভীনকে সে ভালোবাসে না, কিন্তু পরিস্হিতির চাপে পড়ে হলেও সে মেহেভীনকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলো। সমস্যা হলো এই কথা আশিককে কিংবা দুনিয়ার কারো সামনে অভ্র বলতে পারবে না। অভ্রের ভাবনার মাঝেই, আশিক অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে, কোনরকম পালিয়ে যায়। অভ্র আশিককে ধরতে গেলে, পিছন থেকে মেহেভীন অভ্রের হাত ধরে ছাদে নিয়ে আসে।
__________
অভ্র ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘তুই আমাকে ছাদে নিয়ে আসলি কেন? আশিক পালিয়ে গেলো। ‘
‘আশিক পালিয়ে না গেলে, তুমি আশিককে ঠিক কি উত্তর দিতে অভ্র? আমি তোমার কে? তোমার বিয়ে করা রক্ষিতা। ‘
সঙ্গে সঙ্গে অভ্র জোড়া চিৎকার করে বলে,
‘রক্ষিতা মানে? মেহেভীন তোর মাথা ঠিক আছে? নিজেকে আমার বিয়ে করা রক্ষিতা বলছিস? হ্যা আমি তোর সাথে বিয়ের মিথ্যে নাটক করেছি। ভালোবাসাকে হাতিয়ার করে, আমি তোকে ঠকিয়েছি,কিন্তু তোকে কখনো খারাপভাবে স্পর্শ করেনি আমি। ‘
‘হয়তো করো নি। কিন্তু তুমি কী জানো ? মেয়ের জীবন ঠিক কতটা কষ্টের হয়ে থাকে? আজ আশিক আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। কাল গোটা সমাজ করবে।এই সমাজ যে বড্ড খারাপ। তারা সত্যটা না জেনেই মন্তব্য করা শুরু করবে। আমাকে বানিয়ে দিবে রক্ষিতা। তুমি আমাকে আমার আসাল পরিচয় সমাজের সামনে দিতে পারবে না? উহু একদম ই পারবে না। যেমন আজকে পারো নি।
তুমি শুধু পারবে আমাকে দিনের পর ব্যবহার করতে। ‘
অভ্র আর মেহেভীনের এতো কঠোর বাক্যবানী নিতে পারছে না। তাই সে ছাদের এক কোনায় বসে পড়ে বলল,
‘প্লিয মেহু তুই থাম। আমি সত্যি নিতে পারছি না। ‘
মেহেভীন অশ্রুসিক্ত চোখে তাঁকিয়ে বললো,
‘আমি তো এখনো কিছুই বলেনি অভ্র। কাল তুমি ঠিকই ঢ্যাং ঢ্যাং করে নতুন বিয়ে করতে চলে যাবে। কিন্তু আমার কী হবে? সেইটা একবারও ভেবে দেখেছো? এই বিষয়ে আমি তোমাকে দোষ দিতেও চাইনা। দোষটা আমার। আমি ব্যর্থ হয়েছি। ‘
আমার সবথেকে বড় ব্যর্থতা কী জানো অভ্র? আমি অযোগ্য মানুষকে ভালোবেসেছিলাম। ‘
অভ্র মেহেভীনের দিকে তাঁকালো। কথাটা তাকে ঘিড়েই ছিলো। মেহেভীন তাকে অযোগ্য উপাধি দিচ্ছে। অভ্র রাগ-ক্ষোভ নিয়ে হাত মুঠো করে বসে রইলো।
‘তোমার ডিভোর্স পেপার আমি কাল ঠিক তোমাকে সাইন করে পাঠিয়ে দিবো৷ ‘
মেহেভীন কথাটি বলে ছাদ থেকে চলে গেলো। অভ্র সেখানেই ঠায় বসে রইলো। মায়রা ফোন করছে,হয়তো অভ্র এতো দেরী করছে কেন,তা জানতে। অভ্র ফোনটা রিসিভ করে মায়রাকে জানিয়ে দিলো, তার শরীরটা খারাপ তাই সে যেতে পারবে না। মায়রা যেনো এখন বাড়ি চলে যায়। অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
___________________________
প্রায় ভোরবেলাই মেহেভীন রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। কাল সারারাত তার চোখে ঘুম ধরা দেয়নি। দিবে কীভাবে? নিজের ভালোবাসার মানুষের অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। এই কথাটি মেহেভীনের জায়গায় যেকোন মেয়ের, মানতে কষ্ট হবে। মেহেভীন
বাড়িটার দিকে ভালো করে তাঁকায়। বাড়িটা একটু পরেই,বিয়ের সজ্জায় সজ্জিত হবে। মায়রা ও অভ্রের বিয়ের এই আয়োজনে মেহেভীন থাকতে পারবে না। যতই হোক সাইন না করা পর্যন্ত,অভ্র তার স্বামী। মেহেভীন কিছুতেই তার স্বামীর বিয়ের আয়োজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবে না। মেহেভীন বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে, ডক্টর জেসমিনের চেম্বারে উদ্দেশ্য। ডক্টর জেসমিন নাইটে ডিউটি করে, সকাল ১১টার দিকে তিনি বাড়ি চলে যান। তাই ভোরেই মেহেভীন হসপিটালে এসেছে।
_______
ডক্টরের কেবিনে মেহেভীন বসে আছে। কেমন যেন নার্ভাস ফিল হচ্ছে তার। ডক্টর জেসমিন মেহেভীনের রিপোর্ট চেক করছে বার বার। গম্ভীর মুখে জেসমিন বলে উঠেন,
‘আপনার বাড়ির লোক কেউ আসেনি? ‘
‘না। আমার রিপোর্টে কি এসেছে ডক্টর? ‘
‘আসলে আমি কীভাবে যে বলবো। ‘
কিছুটা সংকচ নিয়ে, ডক্টর জেসমিন বললেন।
‘আপনি কোনপ্রকার সংকচ করবেন না ডক্টর। প্লিয ডক্টর বলুন। রিপোর্টে কি আছে? ‘
এইবার৷ ডক্টর জেসমিন এমন কিছু বললেন, যা শুনে একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গেলো মেহেভীন।
চলবে…কী?
গল্পটার বেশিরভাগ অংশেই থাকবে কাল্পনিক। তাই কেউ দয়া করে বাস্তবের সাথে গল্পের মিল খুঁজতে যাবেন না। 🙂