#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া যথাসম্ভব চেষ্টা করে নিজেকে সামলানোর। কিন্তু সেটা কিছুতেই পারছেনা। বরাবরের মত এবারও প্রিয়ার ছলছল করা চোখ ফাহাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনি। ফাহাদ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ফুলও থেমে যায়। ফাহাদ জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে প্রিয়া?”
“কিছুনা।”
“মিথ্যা বলছো কেন? তোমার চোখে পানি কেন তাহলে?”
“কই?”
“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। বলো কি হয়েছে?”
“আসলে আপনার আর ফুলের খুনসুটি দেখে আমার ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আপনি তো জানেনই বাড়িতে প্রবলেম হওয়ার পর থেকে ভাইয়ার সাথে তেমন করে আর কথা বলিনা। তাই আগের কথা মনে পড়ে খারাপ লাগছে।”
প্রিয়া সম্পূর্ণ কথাটাই মিথ্যা বললো। কারণ সত্যিটা যে একদমই প্রিয়ার গলা দিয়ে বের হবেনা। ফাহাদ কিছু না বলে এখনো তাকিয়ে আছে। ফাহাদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, প্রিয়ার চোখমুখ মিথ্যা বলছে আর কিছু একটা লুকাচ্ছে। এদিকে প্রিয়াও আর বসে থাকতে পারছেনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। আচমকা প্রিয়া ফাহাদের হাত ধরে বলে,
“প্লিজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন প্লিজ।”
“মানে কি? মা তোমাকে না খেয়ে যেতে দিবেনা।”
“প্লিজ!”
কান্নায় প্রিয়ার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। খুব হার্ট হয়েছে প্রিয়া। ফাহাদ আর কিছু বললো না। কাউকে কিছু না বলেই প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসলো।
প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসার পথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাসায় আসার পরই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সবাই দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। ফাহাদের মা রেগে বললো,
“ফাহাদ, তুই কোন আক্কেলে মেয়েটাকে এভাবে বাসায় দিয়ে আসলি? আমাকে কিছু জানালিও না।”
“মা ওর মন খারাপ ছিল। তাই কিছু বলিনি।”
ফাহাদের বাবা বললো,
“আরেকদিন বাড়িতে এনো।”
“হুম।”
সবাই যে যার মত খাওয়া শুরু করলো। ফাহাদের মা ভীষণ রেগে আছে নিজের স্বামী আর ছেলের ওপর। ফাহাদ ভাবছে প্রিয়ার কথা। হুট করেই কি হলো মেয়েটার! মেয়েদের হুটহাট মুইড সুইং এর একটা বিষয় আছে যেটা ফাহাদ জানে। কিন্তু প্রিয়াকে দেখে তো তেমন মনে হলো না। খেতে খেতে ফাহাদের বাবা বললেন,
“তা ফাহাদ বিজনেসের তো আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক উন্নতি করে ফেলেছো। এবার বাড়িতে একটা বউ আনো।”
ফাহাদ মুচকি হেসে বললো,
“হুম আব্বু এবার আর বিয়েতে না করবো না।”
“তাহলে মেয়ে দেখা শুরু করি?”
“না আব্বু। আমার পছন্দ করা মেয়ে আছে।”
“কে সে? প্রিয়া?”
ফাহাদ মাথা চুলকে বললো,
“হুম! ভেবেছিলাম আজ পরিচয় করিয়ে দিবো। কিন্তু….”
পুরো কথা বলার আগে তিনি বললেন,
“যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।”
“বুঝলাম না আব্বু।”
“না বুঝার মত তো কিছু বলিনি ফাহাদ। দেখো, তুমি এখন বাচ্চা নও। ভালোমন্দ বোঝবার মতন যথেষ্ট জ্ঞানবুদ্ধি আছে তোমার। আমি আশা রাখবো, তোমার চয়েসটাও সেরকমই হবে।”
“আব্বু তুমি প্রিয়াকে চিনো না তো তাই এমন বলছো। প্রিয়া অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর মত মেয়ে অনেক কম আছে।”
“আমি প্রিয়াকে খারাপ বলিনি ফাহাদ। শুধু মেয়ে দেখলেই তো আর হবেনা। মেয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, আমাদের ফ্যামিলির সাথে ওদের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস ম্যাচ করে কিনা সেটাও তো দেখতে হবে। তাছাড়া তোমার মায়ের কাছে শুনলাম মেয়েটা তোমার অফিসের ওয়ার্কার। আর একজন ওয়ার্কারের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কেমন সেটা অবশ্যই তুমি জানো। তাই বলছি, আর আগানোর দরকার নেই। যতদূর এগিয়েছো বাদ দাও। অন্য কোনো মেয়ে দেখো। প্রয়োজনে আমি তোমায় হেল্প করবো।”
“এনাফ আব্বু! এতক্ষণে আমি ক্লিয়ার হলাম প্রিয়া কেন এমন হুট করেই চলে গেলো। সত্যিই আব্বু তোমার মানসিকতা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমি আরও অবাক হচ্ছি যে, আমি এতদিন গর্ব করে বলতাম আমার আব্বু আমার আইডল। কিন্তু তোমার মানসিকতা এত্ত নিচু সেটা আমি জানতাম না।”
“ফাহাদ!!!”
“একদম চেঁচাবে না আমার ওপর। সত্যিটা মুখের ওপর বলার মত সৎ সাহস আমার আছে।”
“তুমি আমায় ভুল বুঝছো ফাহাদ। একবার নিজেই বিষয়টা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।”
“একবার কেন? আমি হাজার বার ভেবেছি। কিন্তু তোমার মানসিকতায় যা এসেছে, আমার মানসিকতায় তা আসেনি। আমার মন বারবার এটাই বলেছে আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর একটা জিনিস আমি বুঝিনা, তুমি কি জন্মগতভাবেই এত সম্পত্তির মালিক ছিলে? আচ্ছা তোমার কথা বাদই দিলাম। আমার কথাই বলি। আমি কি জন্মগতভাবেই বড়লোক? তোমার টাকায় ফুটানি করলেই আমি বড়লোক হয়ে গেলাম? সেজন্য কি আমি পরিশ্রম করিনি? যখন তোমার এত এত সম্পত্তি ছিল না তখন তো তুমি এসব স্ট্যাটাস নিয়ে ভাবোনি। তাহলে আজ কেন? আজ কেন ধনী-গরীব বিষয়টা আসছে? তুমিই তো আমায় বলতে, গরীবদের যেন কখনো অবহেলা না করি, তাদের সাথে কোনো অন্যায় না করি। সবাইকে সমান চোখে দেখি। তাহলে আজ তোমার সেই শিক্ষা কোথায় গেলো? ছেলের বউ হলে এত সমস্যা চোখে পড়ে? বিয়ের পর কি আমরা ওর বাড়িতে গিয়ে শুয়ে-বসে থাকবো? থাকবো না তো। তাহলে কেন ওর বাড়ি নিয়ে, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নিয়ে টানাটানি করছো? আর বাকি রইলো সমাজ, আত্মীয়-স্বজন? কোনো একটা বিজনেসে লস খেয়ে বা সব সম্পত্তি হারিয়ে বিছানায় পড়ে দেখো তো সমাজ তোমাকে বিপদ থেকে তুলতে আসে নাকি। আত্মীয়-স্বজন কয়দিন দেখবে তোমাকে? একদিন? দুইদিন? সর্বোচ্চ একমাস? ব্যাস এরপর তারা উধাও। তাহলে এসব কারণকে কেন এত প্রায়োরিটি দিতে হবে? শোনো বাবা, এরপরও তুমি কি করবে না করবে আমি জানিনা। আমি ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি, আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর যাই হয়ে যাক আমি প্রিয়াকেই বিয়ে করবো।”
কথাগুলো বলেই ফাহাদ বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
.
.
ছাদে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। আগে একটা সময় ছিল যখনই বৃষ্টি হতো প্রিয়া ছুটে যেত বৃষ্টিতে। বৃষ্টিতে ভিজতো আনন্দে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা প্রিয়াকে ডাকতো ভেজার জন্য। আর প্রিয়াও মরিয়া হয়ে পড়তো ভেজার জন্য। মায়ের কড়া নজর এড়িয়েও যে কত বৃষ্টিতে ভিজেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এমনও সময় গিয়েছে প্রিয়াকে ঘরে তালা দিয়েও রাখা হয়েছে। কিন্তু হাড় মানেনি তখনও প্রিয়া। জানালা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যেন প্রিয়ার ছিলই না। লাস্ট বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করে চোখের পানি লুকানোর জন্য। এরপর আর তেমন ভেজা হয়নি। আজ অনেক অনেক দিন পর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে প্রিয়া।ভাগ্যিস চোখের পানির কোনো রং নেই। বৃষ্টির সাথে সাথে চোখের প্রতিটা ফোঁটা পানি ধুয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া এটাই ভেবে পাচ্ছেনা যে, প্রিয়া কেন কষ্ট পাচ্ছে। ফাহাদের বাবা তো ভু্ল কিছু বলেনি। ঠিকই বলেছে। তাহলে কেন কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার। এমনও তো নয় যে প্রিয়া ফাহাদকে ভালোবাসে। ভালোবাসে! নাকি বাসেনা! নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা প্রিয়া। এবার শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই বসে পড়ে। পেছন থেকে সবটা দেখছে ফাহাদ। আস্তে আস্তে করে এগিয়ে যায় প্রিয়ার কাছে। সামনে গিয়ে প্রিয়ার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়া সামনে মাথা তুলে তাকাতেই চমকে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আপনি?”
“অন্য কাউকে আশা করেছিলে?”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“নিজের চোখে দেখতে আসলাম।”
“কি?”
“তোমাকে। ভালোবাসো অথচ বলো না।”
“আমি কাউকে ভালোবাসিনা। ভালোবাসা আমার জন্য না।”
ফাহাদ প্রিয়ার কোমড়ে ধরে কাছে টেনে বলে,
“কিন্তু তুমি যে আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়া ধাক্কা দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দেয়।
“একদম আমার কাছে আসবেন না। ভালোবাসিনা আমি। চলে যান আপনি এখান থেকে।”
“কেন এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? আমার বাবার জন্য? তুমি বাবার কথাগুলোই শুনলে আমার ভালোবাসা দেখলে না? এতগুলা মাস যে পাগলের মত ভালোবেসেছি সেটা চোখে পড়েনি তোমার?”
“আমি আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না। চলে যান আপনি এখান থেকে।এইসব ভালোবাসা আবেগ। আজ আছে, কাল নেই। একটা সময় ঠিকই বাবার কথাগুলোকে প্রায়োরিটি দিবেন। তখন বলবেন, আসলেই ভুল করেছি ভালোবেসে।”
ফাহাদ একবার এদিক-সেদিক তাকালো। প্রিয়ার হাত ধরে বললো,
“চলো।”
“কোথায়?”
“আমার সাথে।”
“আমি যাবো না কোথাও।”
“আমিও একা কোথাও যাচ্ছি না।”
ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
গাড়ি থামায় একটা খোলামেলা জায়গায়। এখানেও বেশকিছু কাপল দেখা যাচ্ছে। কোনো কাপল এক ছাতায় হাত ধরে হাঁটছে। কেউ কেউ ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ টং দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কোনো কোনো কাপল আবার শখে ভিজছেও। সবার সামনে খোলা জায়গায় দাঁড় করালো প্রিয়াকে। প্রিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি করতে চলেছে ফাহাদ। ফাহাদ এবার প্রিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সবার দৃষ্টি এবার জোগান দিলো। কয়েকজন কিছুটা কাছেও এগিয়ে আসে। রাস্তায় ফুল বিক্রি করা পথশিশুগুলা বড় বড় কচু পাতায় মাথা ঢেকে ওদের কিছুটা সামনে আসে। প্রিয়া আশেপাশে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হয়। সবাই কিভাবে দেখছে! আস্তে আস্তে আরো অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ফাহাদ জোড়ে জোড়ে বলা শুরু করে,
“আমি আমার বাবার কথার ধার করিনা। আমি তোমায় ভালোবাসি। সারাটা জীবন আমি তোমার সাথে কাটাবো। তাই আমি কাকে আমার জীবনসঙ্গী করবো সেটার ডিসিশন শুধু আমিই নিবো। সিদ্ধান্ত তো আমি সেদিনই নিয়ে নিয়েছি, যেদিন তোমায় বৃষ্টির মধ্যে দেখি। তোমার স্নিগ্ধ ভেজা চোখমুখ তখনই আমার মনটা উইল করে নিয়েছে। আমি তখনও ভাবিনি এর পরিণতি কি হতে পারে। আমি এখনও ভাববো না এর পরিণতি কি হবে।আমি শুধু ভাববো কি করে তোমাকে আমার করবো। কি করে তোমার ঐ দুটি হাত সারাজীবন আমার হাতের মুঠোয় রাখবো। তুমি যদি একটা বার বিশ্বাস করে তোমার হাত দুটি আমার হাতে দিতে পারো তাহলে কথা দিচ্ছি এই বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে, এই এতগুলো মানুষকে সাক্ষী রেখে সব বাঁধা-বিপত্তি পেড়িয়ে শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে রাখবো। বাসবে আমায় একটু ভালো?”
ফাহাদের কথা শেষ হতেই একটা ছেলে একগুচ্ছ কদম ফাহাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়,
“ব্রো!”
ফাহাদ মুচকি হেসে ফুলগুলো ধরে। ফুলগুলোতে চুমু খেয়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
“কে কি বলে, বলবে সব ভুলে দাও না হাতটা বাড়িয়ে। বিশ্বাস করো ভালোবাসার বিনিময়ে কখনোই কষ্ট দিবো না। ভালোবাসবে একটু? বিয়ে করবে আমায়?”
প্রিয়া চুপ! ফাহাদ আবারও বললো,
“উইল ইউ ম্যারি মি প্রিয়া?”
প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। সবাই এবার জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,
“হ্যাঁ বলো, হ্যাঁ বলে দাও।”
চারপাশ থেকে একই ধ্বনি ভেসে আসছে। প্রিয়া কান্নার জন্য উত্তর দিতে পারছেনা। ফাহাদের হাত থেকে ফুলগুলো নেয়। ফাহাদ উঠে দাঁড়াতেই প্রিয়া ফাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফাহাদকে। কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“ভালোবাসি ফাহাদ ভালোবাসি।”
চারপাশ থেকে এবার সবার করতালি ভেসে আসে। ফাহাদ প্রিয়ার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
“আজই শেষ। এই চোখে আর কোনোদিন পানি দেখতে চাইনা। এই চোখে শুধু আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই।”
প্রিয়া তখনও কাঁদছে। ফাহাদ হালকা ধমক দিয়ে বললো,
“কাঁদতে বারণ করলাম না?”
“কান্না পেলে আমি কি করবো?”
ফাহাদ মুচকি হাসলো। কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
“ভালোবাসি।”
চারপাশে সবাইকে দেখে প্রিয়া খুব লজ্জা পায়। ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ফাহাদ বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
“লজ্জাবতী!”
যে ছেলেটা কদম ফুল এগিয়ে দিয়েছিলো সে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“হেয় ব্রো, ফ্রি হলে একটু কথা বলতাম?”
প্রিয়া তো লজ্জায় মাথা তুলেই তাকাতে পারছেনা। ফাহাদ বললো,
“হ্যাঁ শিওর।”
“আমায় চিনেছেন তো?”
“তুমিই একটু আগে ফুল দিলে না?”
“হ্যাঁ ব্রো। গার্লফ্রেন্ডের জন্য এনেছিলাম। কিন্তু আপনাদের দেখে মনে হলো ফুলগুলো আপনাদের কাছেই শোভা পাবে। আসলে ভাই এমন প্রপোজ খুব কমই দেখেছি। সচারচর ভালোবাসার জন্য প্রস্তাব দিতে দেখা যায়। কিন্তু আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তাও এত মানুষের সামনে। জিনিসটা আমায় খুব মুগ্ধ করেছে।”
ছেলেটার গফ পিঠে একটা কিল দিয়ে বললো,
“তুমি তো আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে না।”
“বিয়ের প্রস্তাব দিবো না। বিয়ে করে নিয়ে আসবো।”
ফাহাদ হেসে বললো,
“যাকে ভালোবাসি তাকে এভাবে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা। বউ করেই ভালোবাসবো। কত কষ্ট দিয়েছে জানোনা। সব সুদে-আসলে শোধ তুলবো।”
“কিভাবে?”
“ওটা সিক্রেট! বলা যাবেনা।”
বলেই হো হো করে হাসলো ফাহাদ। সাথে ঐ ছেলেটাও। এদিকে ছেলেটার গফ আর প্রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ফাহাদ বুঝতে পেরে কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“আমি ফাহাদ। আর ও আমার হবু বউ প্রিয়া।”
“আমি নিহান। আর ইনি আমার গার্লফ্রেন্ড থুক্কু হবু বউ রেসী।”
“তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো। বৃষ্টি না থাকলে বসে কফি খেতাম। কিন্তু প্রিয়াকে আর বেশিক্ষণ ভেজানো যাবেনা। ঠান্ডা লেগে গেলে তো সমস্যা বুঝোনা! আমি তো এখন ওর সাথে থাকি না যে সেবা করবো।”
নিহান হেসে বললো,
“এটা আমার নাম্বার।”
ফাহাদ নিজের নাম্বারটাও দিয়ে বললো,
“একদিন সময় করে আমরা অবশ্যই কফি খাবো একসাথে ওকে? আর আমাদের বিয়েতে কার্ডও পাঠিয়ে দিবো।”
“খুশি হলাম ভাই।”
“ধন্যবাদ তোমাদের। আজ আসি। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।”
ফাহাদ আর প্রিয়া হাঁটা ধরলো। দুজনের মাঝে সামান্য দূরত্ব। ফাহাদ প্রিয়ার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ঠুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে হাতের পিঠে একটা চুমু খায়। প্রিয়া মুচকি হেসে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়….
চলবে….
#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদের বাবার মুখোমুখি বসে আছে প্রিয়া। প্রিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। কথা বলাটা ফাহাদের বাবাই শুরু করলেন।
“তুমি কি তাহলে ফাহাদকেই বিয়ে করছো?”
“ইনশাআল্লাহ। যদি ফাহাদ না মত বদলায় তাহলেই।”
“তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার অতীতের কথা। তোমার কি মনে হয় এসব জানার পরও ফাহাদ তোমার সাথে থাকতে রাজি হবে?”
“আপনার কথার উত্তর দেওয়াটা হয়তো বেয়াদবি দেখাবে। কিন্তু আপনি তো মূলত উত্তর জানার জন্যই আমায় ডেকেছেন তাই বেয়াদবি হলে মাফ করবেন। আপনি যেটা বলছিলেন। আমার অতীতের কথা। হ্যাঁ আমি, আমার অতীত খুব ভালো করেই জানি। শুরু থেকে শেষটা জানি। যেটা বিস্তারিত আমার পরিবারের বাহিরের মানুষ জানেনা। আর আমার এমন আহামরি কোনো অতীত না যে, ফাহাদের খুব বেশি সমস্যা হতে পারে। ভালোবাসা তো অপরাধ নয়। আমি ভালোবেসেছিলাম আর ভাগ্য আমায় নিয়ে খেলেছে। এখানে তো আমার কোনো হাত ছিলো না। তবুও আমার এই ছোটখাট কোনো অতীতই আমি ফাহাদের থেকে লুকাবো না। যার সাথে সারাটা জীবন থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি তার অধিকার আছে আমার অতীত, বর্তমান জানার। এরপর যদি ফাহাদের মনে হয় সম্পর্ক আগাবে তাহলে স্যরি, আমি ফাহাদকে ছাড়তে পারবো না। মোট কথা, ফাহাদ নিজে থেকে যদি আমায় না ছাড়ে তাহলে আমি কখনোই ফাহাদকে ছাড়বো না।”
“আমি রাজি না জেনেও তুমি বিয়ে করবে?”
“আমার পরিবার আমাকে একা বিয়ে করার শিক্ষাী দেয়নি। আমি বলেছি, আমি ফাহাদকেই বিয়ে করবো। তার মানে এই নয় যে, আপনাদের কিংবা আমার পরিবারের কারো অমতে। যেদিন আপনি মেনে নিবেন সেদিনই বিয়ের বিষয়ে ভাববো আমরা। কিন্তু আমি আবারও বলছি আমি ফাহাদকে ছাড়তে পারবোনা।”
“যদি আমি কোনোদিনই না মেনে নেই?”
“প্রত্যেক বাবা-মা’ই চায় তাদের সন্তান সুখী হোক। এখন সন্তান কার সাথে সুখী হবে সেটাও তার বাবা-মাকে দেখতে হবে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো ডিসিশন চাপিয়ে দেওয়া মানেই বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করা না।”
“আমি তোমার সব কথাই মানছি। কিন্তু তুমি নিজেই একবার ভেবে দেখো, এটা কি কখনো হওয়ার মত? কোথায় তুমি আর কোথায় ফাহাদ? সোসাইটিতে ছোট হয়ে যাবো আমি।”
“যতদিন আমি ফাহাদকে ভালোবাসিনি ততদিন আমিও এটাই ভাবতাম বড়লোকদের সাথে গরীবদের কখনো ভালোবাসা, বিয়ের মত সম্পর্ক হতে পারেনা। কিন্তু যেদিন থেকে আমি ফাহাদকে ভালোবেসেছি সেদিন থেকে এসব ইস্যু তুচ্ছ মনে হয় আমার কাছে।আর বাকি রইলো সোসাইটি? জীবনের এই ছোট্ট বয়স থেকেই আমি সোসাইটি জিনিসটাকে ঘৃণা করি। এই সোসাইটি শুধু পারে খোঁচাতে, কিভাবে টেনে-হিঁচড়ে একটা মানুষকে নিচে নামাতে হয় সোসাইটি খুব ভালো করেই পারে সেটা। এরা তিলকেও তাল বানাতে পারে। প্রত্যেকটা মানুষেরই আগে দেখা উচিত মেয়ে কে! কি করে! কিন্তু তারা তা করে না। তারা আগে দেখে মেয়ের বাপের কি আছে। কয় তলা ফ্লাট আছে, কয় বিঘা জমি আছে, কয়টা বাড়ি আছে। এরপর দেখবে মেয়েকে। মেয়ে যদি হয় কোটিপতির তখন মেয়ে ট্যারা হলেও সোসাইটি কিচ্ছুই বলবে না। সোসাইটিতে বড় হলেও ছোট থেকেই আমি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছি। আমি তখনই যখন পাত্তা দেইনি আর এখন আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় শুরু হওয়ার সময় ভুলেও সোসাইটিকে পাত্তা দিবো না। সোসাইটি আমার বিপদে কখনো এগিয়ে আসেনি, এরা আমাকে একবেলা খাওয়ায়ও নি, আমাকে পড়াশোনা করায়নি। তাহলে কেন সোসাইটিকে মূখ্য বিষয় মনে করবো? সোসাইটি পেরেছে তিলকে তাল বানিয়ে বদনাম ছড়াতে, আমার সমালোচনা করতে। এরচেয়ে বেশি কিছুই সোসাইটি থেকে আমি আশা করিনা।”
ফাহাদের বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। তিনি প্রিয়াকে দেখে ভেবেছিলেন, যা বুঝাবেন তাই বুঝবে। কিন্তু এত চালাকচতুর তিনি প্রিয়াকে ভাবেননি। তবে প্রিয়ার কোনো কথাই ফেলে দেওয়ার মত না। প্রত্যেকটা কথা সত্যি এবং গুরুত্বপূর্ণ।
.
.
অফিসে গিয়েই প্রিয়া ফাহাদের রুমে যায়। ফাহাদ হাসিমুখে বলে,
“মাই হোয়াইট ফেইরি কাম টু মি।”
“আপনাকে কিছু বলার ছিল।”
“কিছু কেন? সব শুনবো। বলো কি বলবে?”
“আপনি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন?”
“হ্যাঁ। এখনও বাসি।”
“কাকে?”
“আমার সাদা পরীকে।”
“আমি সিরিয়াস।”
“ভালোবেসেছি বলতে কলেজ লাইফে একটা রিলেশন ছিল।”
“পরে?”
“পরে আর কি! মেয়েটা পরবর্তীতে অন্য রিলেশনে যায়।”
“আপনি কিছু বলেননি?”
“কি বলবো? এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা। হঠাৎ এসব কথা তুলছো কেন?”
“আপনার ইচ্ছা হয়না আমার সম্পর্কে জানার?”
“যেই মানুষটাই আমার তার সম্পর্কে জানার এত কিউরিসিটির কি আছে।”
“তবুও আমি জানাতে চাই।”
“আমি জানতে চাইনা। অতীতে যাই হয়ে থাকুক তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। যাই হোক আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
“তবুও…”
“শসসসসস!!”
ফাহাদ প্রিয়ার ঠোঁটে এক আঙ্গুল রেখে বলে,
“চুপ! আর কোনো তবুও না। ভালোবাসি।”
প্রিয়া হেসে দেয়।
“আমিও ভালোবাসি।”
“তুমি কম ভালোবাসো।”
“কিভাবে?”
“কম সময় ধরে তো আর ঘুরাওনি আমায়।”
“হিহিহি।”
“এভাবে হেসো না তো। বুকে লাগে।”
“লাগুক।”
“লাগুক তাই না? লাগলেই বা তোমার কি?”
“হয়েছে এখন আর ঝগড়া করতে পারবোনা। কাজ জমা হয়ে আছে।”
“ধুর! শুধু কাজ কাজ আর কাজ। আমার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।”
“হুহ ঢং।”
অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতে দেখে ফাহাদ নেই। প্রিয়ার খুব অভিমান হলো। একবার বলে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো। দেখাও হলো না। কাজ শেষ করে বাসায় চলে যায় প্রিয়া। বাসে থাকাকালিন বেশ কয়েকবার কল দেয় ফাহাদ। কিন্তু প্রিয়া রিসিভড করেনি। এটাই ওর শাস্তি।
রাতের খাবার খেয়ে প্রিয়া মায়ের রুমে শুয়ে গল্প করছিলো। রাত তখন ১০টা বাজবে। প্রিয়ার বড় বোন লামিয়া এসে প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে প্রিয়ার রুমে নিয়ে আসে।
“আরে এভাবে টানছিস কেন? কি হয়েছে? ঘুমাসনি কেন এখনো তুই?”
লামিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে প্রিয়াকে ব্যালকোনিতে নিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে। প্রিয়া হাত বরাবর তাকাতেই চমকে যায়। ফাহাদ এখানে। প্রিয়া একবার নিচে তাকায় আরেকবার ওর বোনের দিকে। লামিয়া হেসে দিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়। প্রিয়া ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ কান ধরে বললো,
“স্যরি।”
স্যরি বলাটা আসলে শোনা যায়নি। কিন্তু ফাহাদের মুখভঙ্গিতে এটাই বোঝা গিয়েছে। প্রিয়া এবার অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। আড়চোখে আবার ফাহাদকেও দেখছে। ফাহাদকে এভাবে দেখে প্রিয়ার পেট ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু কোনোরকমে তা চাপিয়ে রেখেছে। প্রিয়া রুমের ভেতর চলে আসলো। ফাহাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মন খারাপ করেই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো। প্রিয়া ফাহাদকে ম্যাসেজ করলো,
“ছাদে আসো।”
প্রিয়ার এই ম্যাসেজ দেখে ফাহাদ খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। ফাহাদ সাথে সাথে ছাদে আসে। প্রিয়া কিছুক্ষণ পর যায়। প্রিয়াকে দেখেই ফাহাদ জড়িয়ে ধরে।
“স্যরি স্যরি। আসলে আর্জেন্ট একটা কাজ থাকায় হুট করেই চলে যেতে হয়েছে। প্লিজ স্যরি প্লিজ।”
প্রিয়া ধাক্কা দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দেয়। তখন ফাহাদের মুখটা দেখার মত ছিল। যদিও প্রিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিল কিন্তু কোনোরকমে হাসি আটকে বললো,
“আপনার ঢং আমার একদম পছন্দ না। এখানে ডেকেছি আদিক্ষেতা করার জন্য নয়। এত রাতে বাড়ির সামনে আসতে বলেছিল কে? কাল অফিসে বলা যেতো না? এসব করে কি প্রমাণ করতে চান? আপনি আমায় খুব ভালোবাসেন?”
“তুমি এভাবে কেন কথা বলছো প্রিয়া?”
“কারণ এরচেয়ে ভালো করে কথা বলতে পারিনা তাই।”
ফাহাদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ার কথায় যে ফাহাদের মন খারাপ হয়েছে সেটা প্রিয়া বুঝেছে। ফাহাদ কোনোরকমে বললো,
“তুমি কি বিরক্ত হয়েছো?”
“হ্যাঁ হয়েছি। খুব বিরক্ত হয়েছি।”
“আচ্ছা আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। তবুও প্লিজ রাগ করো না। আমি আসছি।”
ফাহাদ চলে যাওয়ার জন্য এগোতেই প্রিয়া হাত টেনে ধরে ফাহাদের বুকে মুখ লুকায়।
“কেন বিরক্ত হয়েছি সেটা তো জিজ্ঞেস করলেন না? বিরক্ত এজন্যই হয়েছি কেন আসেননি আরো আগে আমার জীবনে? কেন এত ভালোবাসেননি আগে?”
এবার ফাহাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।
“বিয়ের পর সবটা পুষিয়ে দিবো।”
রেলিং ঘেষে দুজনে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদের এক হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে প্রিয়া। অপর হাতের আঙ্গু্ল ফাহাদের হাতের আঙ্গুলে সীমাবদ্ধ। মাথার উপর মস্তবড় একটা চাঁদ। চাঁদের আলোতে ফাহাদকে দেখছে প্রিয়া। ফাহাদ যখনই তাকায় তখনই প্রিয়া চোখ সরিয়ে নেয়। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে প্রিয়া বললো,
“আচ্ছা একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“সবসময়ই এভাবে ভালোবাসবেন তো?”
“না।”
“কিহ্?”
“এরচেয়েও অনেকবেশি ভালোবাসবো।”
“প্লিজ কখনো চেঞ্জ হয়ে যাইয়েন না। তাহলে ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস সারাজীবনের জন্য উঠে যাবে।”
“সারাজীবন ভালোবাসবো।”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রিয়া বললো,
“জানেন, একটা ছেলেকে খুব বেশি ভালোবাসতাম।”
ফাহাদ এবার প্রিয়াকে সামনে দাঁড় করিয়ে অবাক হয়ে বললো,
“তুমি ভালোবাসতেও জানতে? আমি তো ভাবতাম তুমি খুবই আনরোমান্টিক। ভালোবাসায় এলার্জি আছে তোমার।”
“ভালোবাসা নিয়েই আমার সমস্যা শুরু থেকেই ছিল। মাঝখানে ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করি।”
“তারপর?”
“তারপর…..”
প্রিয়া হারিয়ে যায় সেই শুরুর দিকে….
তখন ক্লাস টেনে পড়ে প্রিয়া। সারাদিন বান্ধবীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, ঘুরাঘুরি, আড্ডা দেওয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। প্রিয়াদের ফ্রেন্ডের একটা গ্যাং ছিল। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিল যারা রিলেশন করতো। রিলেশনের প্রথম কয়েক মাস ভালোই যেত। বান্ধবীরা চুটিয়ে প্রেম করতো। এরপর একটা সময় থেকে মনমালিন্য, ঝগরা লেগেই থাকতো। ক্লাসে বসে বসে কাঁদতো, মন খারাপ করে থাকতো। এইসব বিষয়গুলো খুব বিরক্ত লাগতো প্রিয়ার। এসব ভালোবাসা নাকি আজাইরা সময় কাটানো প্রিয়া ভেবে পেতো না। বান্ধবীদের জন্য খারাপও লাগতো। এদের মধ্যে প্রিয়ার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী ছিল রাহা। একটা সময়ে রাহাও রিলেশন করে। প্রিয়া বারবার বারণ করা সত্ত্বেও শুনেনি। রাহা বলতো ছেলেটা আমায় খুব ভালোবাসেরে। রিলেশনের চার মাস পর্যন্ত খুব প্রেম চললো দুজনের মধ্যে। এরপর আবারও সেই ঝগরার পর্ব শুরু। প্রিয়া ক্লাসে এসে দেখে রাহা কাঁদছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে রে?”
কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছেনা রাহা। পাশ থেকে সীমা বললো,
“মনে হয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগরা হয়েছে।”
“হলে হয়েছে। তো? ফ্যাসফ্যাস করে কান্নার কি আছে?”
প্রিয়া রাহাকে ধমক দিয়ে বললো,
“এই কান্না বন্ধ কর। একশোবার বলেছিলাম এসব রিলেশনে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। শুনেছিস আমার কথা? এখন কেন কাঁদছিস?”
রাহা কোনোরকমে কান্না থামিয়ে বললো,
“তুই কি বুঝবি? তুই তো কখনো কাউকে ভালোইবাসিসনি। যেদিন কাউকে ভালোবাসবি সেদিন বুঝবি।”
“এসব ফালতু প্রেমের ওপর আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই বুঝলি। এখন চল ফুসকা খাবো।”
“আমি খাবো না।”
“আরে টাকা আমি দিবো।”
“বললাম তো খাবো না। মন ভালো নেই।”
“গলায় পাড়া দিয়ে খাওয়াবো। চল তাড়াতাড়ি।”
রাহাকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে প্রিয়া। ফ্রেন্ডসরা মিলে জমিয়ে আড্ডা দেয় আর ফুসকা খায়। ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে কারো মন খারাপ থাকলে কেউই কখনো স্কুল মিস দিতো না। কারণ একমাত্র ওরাই ছিল যারা মন খারাপের ওষুধ ছিল। বিশেষ করে প্রিয়া! প্রিয়া বকবে খুব বকবে প্রথমে। এরপর আদর করে ফুসকা, আচার, আইসক্রিম খাওয়াবে। হাসাবে।
কিছুদিন পর রাহার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাহার ঝগরা মিটে যায়। টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু রাহার বয়ফ্রেন্ড একেবারের মত ব্রেকাপ করে দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে যায়। রাহা এটা মানতে না পেরে সুইসাইড এটেম্প নেয়। তখন ওর বাড়ির সবাই ওর বিয়ে দিয়ে দেয়। রাহার আর এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া হয়না। এই ঘটনার পর প্রিয়ার আরো রাগ আর ক্ষোভ হয় ভালোবাসার প্রতি। প্রিয়ার ধারণায় জন্ম নেয় ভালোবাসা মানেই কষ্ট! দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা এসে পড়ে। খুব ভালোভাবে সব পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর আস্তে আস্তে ফ্রেন্ড সার্কেলের অনেকেরই বিয়ে হয়ে যায়। যে কয়জন থাকে সবাই আলাদা আলাদা কলেজে ভর্তি হয়। স্কুল লাইফের পরিচিত গ্যাং আলাদা হয়ে যায়।
কলেজের প্রথমদিনেই ভালোবাসার অধ্যায়ে পা দিয়ে ফেলে প্রিয়া।
গেটের সামনে অনেক মানুষ। প্রিয়ার বাবা কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। প্রিয়া গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই কয়েকটা ছেলে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। হাসির কারণ কি প্রিয়া বুঝলো না। এমনিতেই কলেজের প্রথম দিন। তারমধ্যে আবার একা। খুব আনইজি ফিল করে প্রিয়া। ছেলেগুলো শিহাবকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“মামা! তোর বোন এসে পড়েছে দেখ! তোর শেষ বোনই কিন্তু এটা।”
শিহাব হা করে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে। শিহাবের বন্ধু রোমান চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“ঐ শালা! আমাদের গেমসের রুলস অনুযায়ী মেয়েটা তোর বোন লাগে। সো এভাবে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে হয়না।”
“চুপ কর! সব মেয়ে যদি বোন হয় তাহলে বউ হবে কে?”
“আরে! এভাবে পল্টি খাচ্ছিস কেন? কথা ছিল এই মার্ক করা জায়গায় প্রথম যেই ১০ জন মেয়ে পা রাখবে তারা তোর বোন। এটা হলো দশ নাম্বার মেয়ে। বাকিগুলোকে তো বোন বানাতে ঠিকই রাজি হয়েছিস।”
“পরবর্তী আরো কয়েকশো মেয়েকে বোন বানাতে রাজি আছি। শুধু এই মেয়ে বাদে।”
“প্রেমে পড়লি নাকি?”
“বন্ধু হয়েছিস কি করতে? বন্ধুর মনের কথা বুঝিস না?”
“কিন্তু!”
“আবার কিন্তু কি? যা মেয়েটার সব খোঁজখবর জোগার কর।”
প্রিয়া ক্লাসে আসার পর থেকেই দেখছে গেটের সেই ছেলেগুলো উঁকিঝুঁকি মারছে। ক্লাস থেকে স্যার বের হওয়ার সাথে সাথে রোমান প্রিয়ার কাছে গিয়ে বললো,
“শিহাব তোমাকে দেখা করতে বলেছে।”
“কে শিহাব?”
“আমার বন্ধু।”
“আমি চিনিনা।”
“আমি চিনিয়ে দিচ্ছি। চলো।”
“পারবোনা।”
“শিহাব আসলে কিন্তু সিনক্রিয়েট করবে।”
প্রিয়া খুব বিরক্ত হয়। বাধ্য হয়েই শিহাবের কাছে গিয়ে বলে,
“আঙ্কেল আমায় ডেকেছেন?”
আঙ্কেল ডাক শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না শিহাব। বন্ধুরা সব হাসাহাসি করছে। শিহাব রেগে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়। রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগোতে থাকে। কলেজের মাঠের মধ্যে এমন এক অবস্থা সবাই তাকিয়ে আছে। প্রিয়া এবার ভয় পাচ্ছে। শিহাব এমন এক কাণ্ড করলো সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে…….
চলবে….