তুমি কেন আগে আসোনি পর্ব ৭

“তুমি কেন আগে আসোনি?”

৭.
সায়ান এগিয়ে এসে সিনথিয়ার পাশে দাড়ালো। সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “ঠিক সেইম কথা যদি আমি তোমার ক্ষেত্রে বলি তাহলে?”
— “মানে?”
— “মানে এই যে, আমি কাল গিয়ে তোমাকে হাতেনাতে ধরেছি কোনো এক পুরুষের সাথে।”
— “কিসব বলছেন আপনি? এসব মিথ্যে।”
— “তুমি যে সত্য বলছো তার তো কোনো প্রমাণ নেই।”
— “আমি নিজের চোখে দেখেছি আপনাকে ওই অবস্থায়।”
— “এখন যদি বলি আমি তোমাকে নিজের চোখে দেখেছি নগ্ন অবস্থায়। তাহলে?”
— “আপনি এসব বলতে পারেন না।”

সায়ান এবার সিনথিয়ার পরিবারের দিকে ফিরে বললো,

— “দেখুন আমি যে এরকম কিছু করেছি এটার কোনো প্রমাণ সিনথিয়ার কাছে নেই। হতেই তো পারে ও মিথ্যে বলছে। আপনারা সকলেই জানেন সিনথিয়া আমাকে শুরু থেকেই পছন্দ করতো না। বিয়ের পর প্রায় ডিভোর্সের কথা বলতো। আমি ওকে বুঝাতাম। কিন্তু সিনথু ওর সিদ্ধান্তে অটল ছিলো। আমাকে থ্রেড দিয়েছিলো যে করেই হোক ও আমার থেকে মুক্তি নিবে।”

সিনথিয়া যানপরানই অবাক হলো। উত্তেজিত হয়ে বললো,

— “এসব মিথ্যে। আমি এরকম কিছুই বলিনি। হ্যাঁ এটা সত্যি আমি আপনাকে কখনোই চাইনি বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ের পর আমি কখনোই এসব বলিনি আপনাকে।”
— “তুমি বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করোনি বলো?”
— “হ্যাঁ করেছি কিন্তু..!”
— “তোমাকে যেদিন আমাদের ফ্ল্যাট ঘুড়াতে নিয়ে গেছিলাম সেদিন তুমি আমাকে চড় মারো নি? যাতে আমি বিয়ে ভেঙে দেই? এসব তোমার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না?”
— “আমি..ত..ব..অ..!”
— “ইভেন আমাকে প্রতিসময় যা নয় তাই বলে অপমান করেছে। বিশ্বাস না হলে আপনারা ওকে জিজ্ঞেস করুন।”

কথার মাঝখানে আরশিও বললো,

— “এতদিন আমিও চুপ ছিলাম। নিজের ভাইয়ের মেয়ে তাই তোমাদের কিছু বলিনি। শুধু সায়ানের সাথে এমন করতো তা নয়। সায়ান চলে যাওয়ার পর আমার সাথেও এমন করতো। কোনো কথা বললে ঝারি মারতো। বিড়বিড় করে গালি দিতো। আমার পিছনে না জানি কি বলেছে। আর কাল তো..!”

আরশি ন্যাকা কান্না শুরু করেছে। সিনথিয়া একেবারেই হতভম্ব। তৎক্ষনাৎ কোনো কথা যুগালো না ওর মুখে। কেবল চেয়ে রইলো আরশির দিকে ফ্যালফ্যাল করে। আরশি আবার চোখ মুছে বললো,

— “ভাই তুমিতো জানো আমি গরম পানি ছাড়া গোসল করতে পারি না। সিনথিয়াকে প্রতিদিন বলি আমাকে যেনো সময় মতো পানি দিয়ে যায়। কিন্তু ও কি করে জানো? নিজে আগে গোসলে চলে যায়। আমার গোসলের যেনো দেরি হয় সেজন্য রুম থেকে দেরি করে বের হয়। আর আমার গোসল করতে করতে বিকেল হয়ে যায়।”

সিনথিয়ার পায়ের নিচের জমিন দুলতে শুরু করেছে। ওর শ্বাশুড়ি মা ইনস্ট্যান্ট কিভাবে এতো মিথ্যে বানিয়ে ফেললো সিনথিয়া ভেবে পাচ্ছে না। নাকি আগে থেকেই এসব কথা রেডি করে রেখেছিলো কে জানে। তবে এটা সত্য গোসল করতে করতে বিকেল হয়। তবে সেটা আরশির নয়। সিনথিয়ার।

সিনথিয়ার বড় ভাই হামিদ রূঢ় কণ্ঠে বললো,

— “সিনথিয়া এসব কি সত্যি?”
— “ভাইয়া..আমি…।”
— “থামো সিনথিয়া! সব এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। যেদিন প্রথম সিনথু আমাদের বাড়ি আসে বিয়ের প্রথম দিনই সবার সাথে তর্ক শুরু করেছে। ওকে যাই করতে বলা হয়েছে ও সবকিছুই করতে অস্বীকার করেছে। কেনো করেছে এমন ভাবুন। যাতে ওকে ছেড়ে দেয়া হয়।” সায়ান বললো।
— “সিনথিয়া এগুলো কি সত্যি?”
— “হ্যাঁ আমি মানা করেছি। কিন্তু তাতে অনেক কারণ ছিলো। আ..।”

সিনথিয়াকে থামিয়ে দিয়ে সায়ান বললো,

— “এখানেও শেষ হয়নি। ওকে জিজ্ঞেস করুন স্ত্রীর কোন দায়িত্ব ও পালন করেছে? যখনই আমি কোনো আবদার করেছি তখনই সব রিজেক্ট করেছে। আমার তো ইচ্ছে জাগে নাকি বউয়ের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাই। কিন্তু সিনথিয়া সবসময় আমাকে ইগনোর করেছে। বেডরুমের কথা বলতে লজ্জা লাগছে আমার। কিন্তু তাও বলতে হচ্ছে আজ।”

সায়ান একটু থামলো। সবাই সায়ানের বলার অপেক্ষায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অবশেষে সায়ান বলতে শুরু করলো,

— “আমি সারাদিন বাইরে কাজ করে বাসায় আসি। আমারও তো একটু রিল্যাক্স এর প্রয়োজন আছে। রিফ্রেশমেন্ট এর প্রয়োজন আছে। সিনথুকে জিজ্ঞেস করুন কোনদিন ও নিজ থেকে আমার কাছে এসেছে? সবসময় আমার জোর করতে হয়েছে। এরকম একদিন, দুইদিন মানা যায়। কিন্তু বিয়ের এই ছয়মাসে প্রতিদিন যদি এমন হয় তাহলে কোন পুরুষটা এসব সহ্য করবে বলুন তো?”

সিনথিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এসব সত্য। তবে পরিস্থিতি ছিলো অন্যরকম। প্রতিটা সময় যেভাবে ওকে মানসিক টর্চার করা হতো দিন শেষে আর শক্তি এবং ইচ্ছে কোনোটাই থাকতো না। আর সায়ান কোনোদিন ওকে বুঝতে চায়নি। সায়ানের ভালোবাসা কখনো পায়নি। ভালোবেসে কাছে ডাকলে অবশ্যই সিনথিয়া সাড়া দিতো। কিন্তু কোথাও ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও ছিলো না। সবসময় ক্ষোভ, রাগ আর হিংস্রতা ছিলো সায়ানের মাঝে। সিনথিয়ার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রুকণা। নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো সায়ানের অভিযোগ শুনে,

— “আমি যখনই ওকে আমার সাথে কোথাও যেতে বলেছি তখনই সিনথিয়া মানা করে দিয়েছে। রাগ দেখিয়েছে, বিরক্ত হয়েছে। ও বাইরে যেতে চায়না তাই আমি বেশ কয়েকদিন বাড়ির ছাদে পার্টির আয়োজন করেছি। কিন্তু তাতেও সিনথিয়াকে আমি খুশি করতে পারিনি। সেসব পার্টিতেও যায়নি ও আমার সাথে। মা এসে অনেক বলতো তাতেও ও রেসপন্স করতো না। বেশকিছু দিন ধরে আমি ওকে আমার সাথে কিছু ফাইভ স্টার হোটেলের পার্টিতে যেতে বলেছি, ওর জন্য ড্রেসও নিয়ে এসেছি তখনও সিনথিয়া আমার সাথে রাগ দেখিয়েছে। এতোকিছুর পরেও আমি ওকে কিছু বলিনি। না আপনাদের কিছু বলেছি। যখন এতেও কাজ হয়নি তাই কাল ও আমাকে যা নয় তাই বলেছে। আমার মাকে গালি দিয়েছে। আমার মা ওর হাত ধরেছিলো ও ধাক্কা দিয়ে আমার মাকে ফেলে দিয়েছে। আমাকে চড় মেরেছে। আর এখন এসব অপবাদ দিচ্ছে।”

সায়ান এবার থামলো। সিনথিয়া কিছুটা তেজি স্বরে বললো,

— “এসব মিথ্যে। আপনি মিথ্যে বলছেন। আমি কোনো অপবাদ দেইনি। না আমি মাকে ধাক্কা দিয়েছি। আপ…!”
— “কোনটা মিথ্যে সিনথিয়া?”
— “সব মিথ্যে।”
— “আচ্ছা এটা বলো, তুমি পার্টিতে যেতে মানা করোনি?”
— “হ্যাঁ করেছি কারণ..!”
— “কাল আমাকে চড় মারোনি?”
— “হ্যা..আম..!”
— “আমাকে গালি দাওনি? আমার মাকে নিয়ে বাজে কথা বলোনি?”
— “আ..ম..!”
— “আমার মা তোমার হাত ধরেছিলো কিনা বলো?”
— “হ্যাঁ..কিন্তু..!”
— “মা নিচে পরে যায়নি?”
— “কিন্তু…!”
— “তাহলে মিথ্যে হয় কি করে?”
— “আমি..!”
— “সিনথিয়া প্লিজ আর মিথ্যে বলো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার অবহেলা, অপমান মেনে নিচ্ছি। আর তুমি আমাকে অপবাদ দিচ্ছো? কেনো ছেড়ে যেতে চাও আমাকে বলো?”

আরশি বললো,
— “ভাই তুমি তো জানো আমার কেনো ডিভোর্স হয়েছে। তোমার মেয়ে কাল আমাকে এসব নিয়ে যা নয় তাই বলে খোটা দিয়েছে। আমি নাকি চরিত্রহীন। তাই স্বামীর ভাত খেতে পারিনি। আমার সায়ানও নাকি আমার অপকর্মের ফলে হয়েছে। ওকে আমি বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু তোমার মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কতটা ব্যাথা পেয়েছি সেটা শুধু আমিই জানি।”

আরশি হিচকি তুলে কাঁদছে। আরশ বোনকে শান্ততা দিচ্ছে। সিনথিয়ার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বললো,

— “জানোয়ারের বাচ্চা কি বলেছিস তুই এসব আমার বোনকে? বেশি তেজ বেড়ে গেছে তোর শুয়োরের বাচ্চা। কোন সাহসে এসব বলেছিস? শুন আমি এখনো ভুলিনি তোর আর ফাহিমের সম্পর্কের কথা। নষ্টা মেয়ে সব মনে আছে আমার। নিজের চরিত্রে ঠিক নেই তুই আবার আমার বোনের চরিত্র নিয়ে কথা বলিস।”

সিনথিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। বাবার কথা শুনো অবাক এবং আহত চোখে তাকালো। ওর অতীত নিয়ে খোটা দিবে তাও ওর বাবা সিনথিয়া এটা মানতে পারছে না। চোখ থেকে টুপটাপ পানির ফোঁটা গড়িয়ে পরছে মেঝেতে। সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— “আচ্ছা সিনথিয়া এমন নয়তো তোমার এখনো ফাহিম নামের ছেলেটার সাথে সম্পর্ক আছে?”
সিনথিয়া ভাঙা গলায় বললো,
— “কিসব বলছেন? আমি এরক..!”
— “আচ্ছা সত্যি করে বলো তো কাল তুমি হোটেলে কেনো গেছিলে?”

সিনথিয়া অবাক হয়ে বললো,
— “একটু আগেই তো বললাম।”
— “সেসব তো মিথ্যে ছিলো। কাল তুমি বেরিয়ে যাওয়ার পরই আমি বাসায় এসেছি দরকারি ফাইল নিতে। টানা দুইঘন্টা তোমার জন্য বসে ছিলাম। তারপর তোমাকে খুজতে বেরিয়েছি।”
— “এসব মিথ্যে। আপ..আপনি..আসে..আসেননি।”

আরশি কিছুটা রেগে বললো,
— “তুই জানিস আমার ছেলে বাসায় এসেছি কি আসেনি? তুই তো কোন নাগড়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গেছিলি। তোর যাওয়ার পরপরই সায়ান বাসায় এসেছে।”
— “হুম! এখন বুঝেছি। তোমার সাথে ফাহিমের এখনো সম্পর্ক আছে। তাও আবার খুব গভীর সম্পর্ক। যার কারণে তুমি আমার সাথে কোথাও যেতে চাওনা। নিজেকে বস্তায় ভরে রাখো। মুখ লুকিয়ে চলো। এই হলো তোমার পর্দার আসল কাহিনি। এম আই রাইট?” সায়ান বললো।

সিনথিয়ার বড় ভাবি মিম বললো,

— “হ্যাঁ আসলেই সত্যি মা। ফাহিমের সাথে ধরা খাওয়ার পর থেকেই সিনথিয়া এরকম ভূত সেজে চলা শুরু করেছে। কলেজ যাওয়ার নাম করে না জানি কোথায় কোথায় গেছে আর কি কি করেছে। আমাদের সামনে তো এমন ভাবে থাকতো যেনো কিছুই বুঝে না। আর এখন দেখছি তলে তলে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।”

সায়ান সিনথির দিকে ফিরে করুন স্বরে বললো,

— “সিনথিয়া কেনো তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাও বলো? আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ ফাহিমকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কখনোই ওসবের জন্য খোটা দিবো না। তবুও পরকিয়া থেকে বেরিয়ে এসো।”

সিনথিয়া কেঁদে ফেললো। কেঁদে বললো,
— “আপনি কেনো মিথ্যে বলছেন? আমি এরকম কিছুই করিনি।”
— “কি করেছিস আর কি করিসনি সেসব আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং বুঝতেই পারছি।” সিনথিয়ার মা আসমা এগিয়ে এসে বললো।”
— “মা!!”

সিনথিয়ার গালটা জ্বলে উঠলো। খুব জোরেই মেরেছে ওর মা। তাল সামলাতে না পেরে ধপ করে নিচে বসে পরেছে। এবার সালেহা বানু আবার শুরু করলেন,

— “তোমারে আমরাও কম কই নাই নিজেরে একটু ঠিক করতে। কিন্তু তোমারে কিছু কইলেই আমাগো উপরে চিল্লাও। কিসব হাদিস কও। সবসময়ই তোমার মোল্লাগিরি ভাব চলে আসে। এহন দেহি তোমার চরিত্রে দোষ আছে। এই তোমার ধর্ম মানা? তোমার বোরকার নিচে তো দেহি সব শয়তান। ঘোমটার নিচে খোমটা নাচে। আরে সায়ান দেইক্কা তোমারে এহনো রাখছে। অন্য পুরুষ হইলে তোমারে আরো আগে বাইর কইরা দিতো।”
— “মোল্লাগিরি বলতে কি করেছে ও আবার?” আসমা বললো।
— “কি আর করবো? সায়ান কুনু জাগাত যাইতে কইলে কইবো এসব ভালা না। ওয় দেমাগ দেখায়। আরো কত কিছু। সায়ান একটা ভালা জামা আইনা দিলে হেডি পিনবো না। কামের বুয়া সাইজা ঘুরবো সব জায়গায়। যাতে সায়ান বিরক্ত হইয়া যায়। হুনো মাইয়া, ঘরের বউ যদি এমুন কইরা চলে পুরুষ মাইনষের চোখ বাইরে যাইবোই। তোমার এমন কামের লাইগাই সায়ানের চোখ বাইরের দিকে গেছে। আর এহন তুমি ওর দোষ দিতাছো। দোষ তো তোমারই দেখতাছি।”

আসমা এবার আরো রেগে গেলো। সিনথিয়া বসে ফুপিয়ে কাঁদছিলো। আসমা সিনথিয়ার দিকে ঝুকে ওর মাথার তালুর চুল, হিজাব সহ খামছে ধরে। সিনথিয়া ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। হাত ছাড়ানোর জন্য ওর মায়ের দিকে তাকায়। আসমা আরো দুটো চড় দেয় সিনথিয়াকে। টেনে হিঁচড়ে সিনথিয়ার হিজাব ছিঁড়ে ফেলে। বাকি সবাই তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। সবার সাথে সায়ানও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আসমা সিনথিয়ার গাল দুটো চেপে ধরে বললো,

— “এরপর থেকে যদি আর কোনো অভিযোগ আসে তোর নামে তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তোকে উলঙ্গ করে রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখবো। বেশি রূপবতী মনে করিস নিজেকে? ভালো করে আয়নায় দেখিস নিজেকে রিকশাওয়ালাও কিনে নিবে না তোকে।”

সিনথিয়া আগে থেকেই ধারণা করেছিল এরকম কিছু হবে। পরে যখন ওর বাবা-মা ওর পক্ষে কথা বলছিলো তখন একটু আশার আলো দেখতে পেলো। আর এখন সবকিছু আবার অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। সিনথিয়ার বাবা হুঙ্গকার দিয়ে বললো,

— “এই! তোর চরিত্রের আবার এই অবস্থা?”
— “মা..মানে?”
— “মানে আর কি? আবার শুরু করেছিস বেহায়াগিরি?”
— “ক..কি করে..করেছি?”

আরশ উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা খুজতে খুজতে বললো,

— “সেবারও তোর জন্য আমার সম্মান নষ্ট হয়েছিলো। এবারও তোর জন্য সম্মান নিলামে উঠতে যাচ্ছে। ভাগ্যিস বিয়েটা বোনের বাড়িতে হয়েছিলো। নাহলে মুখ দেখাতে পারতাম না।”
— “আহ..!”

সিনথিয়া ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো। বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের উরুর অংশ চেপে ধরে। ডান হাত দিয়ে ঝাড়ুর বাড়ি ফিরাতে গিয়ে হাতে প্রচন্ড আঘাত পায় সিনথিয়া। আরশ রেগেমেগে গালাগাল শুরু করেছে। সিনথিয়ার চুলের মুঠি ধরে টেনে দাড় করিয়ে বললো,

— “মা** কোন সাহসে তুই আমার বোনকে এতো কথা বলিস? বেশি দেমাগ তোর? ব্যা** মা** পিরিত মারাস বাইরের বেডার লগে? আর জামাইর লগে নোখরা করছ? কোন সাহসে ঘরের বাইরে পা ফেলস? চরিত্রহীনা ব্যা** মা**।”

আরশ আবার সিনথিয়াকে ছুড়ে মারলো। সিনথিয়া মেঝেতে পরে গেলো। চোখ, মুখ কুচকে ফেলেছে।

— “বাবা আমি যে এরকম কিছু করেছি এটাও তো প্রমাণ হয়নি। তাহলে শুধু ওদের কথার রেশ ধরেই এতোটা অত্যাচার করছো আমার উপর? আমিও তো একই কথা বলেছি। কই তখন তো তেমন রিয়েক্ট করো নি। যে দোষী তাকে নির্দোষ বানিয়ে দিলে? কেনো বাবা?”

সিনথিয়ার মনের কথা আর মুখ দিয়ে বেরুলো না। চাপা আর্তনাদে ভেতরটা কষ্টে ফেটে যেতে লাগলো। মেঝেতে পরে রইলো নিষ্ক্রিয় ভাবে। সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বললো,

— “আল্লাহ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। খুউব!”

“আমি জানি তারা যা বলে, তাতে তোমার অন্তর ভেঙে যায়।” — সূরা হিজর :৯৭
“এবং আমিই যথেষ্ট তোমার জন্য বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে।” — সূরা হিজর:৯৫

তামাশা শেষ। সবাই চলে গেলো। আসমা যাওয়ার আগে সায়ান এবং আরশিকে বললো,

— “এই মেয়ে যদি আর নোখরা দেখায় সাথে সাথেই আমাকে ফোন দিবা। আমি এসেই ওর নোখরা ছুটাবো।”

___________________________
হন্তদন্ত হয়ে ছাদের দিকে ছুটলো সিনথিয়া। এখনই হয়ত বৃষ্টি নামবে। সায়ানের অনেকগুলো কাপড় শুকাতে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি সেগুলো হাতে নিলো। কোণার দিকের কাপড়টা নিতে নিতে রেলিং-এর বাইরে উঁকি দিলো। দেখলো আরশি উপুড় হয়ে পলিথিন থেকে কিছু একটা নালায় ফেলছে। সিনথিয়া সেদিক থেকে সরে এসে অন্য কাপড় নিয়ে চলে যেতে গিয়ে পা থেমে গেলো।

আবার ফিরে এলো রেলিং-এর দিকে। নিচে তাকাতে দেখলো আরশি পলিথিন থেকে ভাত ফেলছে। সিনথিয়া ওর জায়গায় জমে গেছে। চোখ থেকে টুপটাপ অশ্রুকণা গড়িয়ে পরলো। এইজন্য দুপুরে পাতিলে ভাত পায়না? খিদেয় পেট জ্বালা করে খুব। কাজ করতে কষ্ট হয়। আর এদিকে আরশি ভাত নালায় ফেলছে। সিনথিয়া আকাশের দিকে তাকালো। তারপর চোখ বন্ধ করে নিলো।

“বারবার তোমার আকাশের দিকে তাকানোকে আমি লক্ষ্য করি।” — সূরা আল-বাকারা :১৪৪

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। সিনথিয়া ব্যথিত মন নিয়ে ফিরে এলো রুমে। কাপড়গুলো সোফায় রেখে পেছন ফিরতেই সায়ানের মুখোমুখি হলো। সিনথিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সেদিনের ঘটনার পর থেকে সিনথিয়া আর কোনোকিছুতেই কোনো রয়েক্ট করে না। যে যাই বলে চুপচাপ শুনে যায়। সায়ান যাই বলে, যাই করে সবই নিরবে মেনে নেয়।

সায়ান সিনথিয়ার থুতনি ধরে বললো,

— “সিনথু বেব আজকে তোমার জন্য কয়েকটা ড্রেস এনেছি। আজ একটা পার্টি আছে। ড্রেসটা পরে দেখো তো।”
— “হু..!”

সায়ান ড্রেসগুলো সিনথিয়ার সামনে ধরলো। হিমশীতল একটা বাতাস সিনথিয়ার শিরদাঁড়া বয়ে গেলো। নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো ড্রেসগুলোর দিকে। সায়ান ভ্রু দিয়ে ইশারা করে বললো,

— “কেমন?”
— “ভা..ভালো।”
— “আমি আজ হোয়াইট পরবো। তাই আজ সব হোয়াইট ড্রেস এনেছি তোমার জন্য। তুমি এখান থেকে যেকোনো একটা সিলেক্ট করে নাও।”

সিনথিয়াকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সায়ান নিজেই একটা ড্রেস চুজ করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলো। সিনথিয়া ড্রেসটা ভালো করে দেখে অন্য ড্রেসগুলোতে একটু নজর দিলো। সেখানে ফুলস্লিভ একটা গাউন দেখে সেটা হাতে নিয়ে বললো,

— “আমি এটা পরি?”

সায়ান ড্রেসটা দেখে হাসলো। সিনথিয়া মাথা নিচু করে নিয়েছে। সায়ান ইশারায় সিনথিয়াকে কাছে ডাকলো। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো সায়ানের দিকে। সায়ান ওর গালে স্লাইড করে বললো,

— “তুমি যাই গায়ে জড়াও সেটাতেই তোমাকে বেশ আবেদনময়ী লাগে। যাও পরে নাও। আজ কিন্তু চুল ছাড়া দিবে ওকে?”
সিনথিয়া থেমে থেমে বললো,
— “চু-ল ছে-ড়ে রা-খ-বো? হি-জা-ব প-রে নে-ই?”

সায়ান গা দুলিয়ে হাসলো। যেনো সিনথিয়া কোনো জোক বলেছে। সিনথিয়া চুপচাপ আবার মাথা নিচু করে নিয়েছে। কারণ সায়ান যখনই এভাবে হেসেছে তখনই ওর জন্য বিপদ এসেছে। সায়ান সিনথিয়ার চুল খুলে দিয়ে বললো,

— “গাউনের সাথে হিজাব পরে ফাইভ স্টার হোটেলে পার্টিতে গেলে সবাই তোমাকে এলিয়েন ভাববে। ইউ নো, ওখানের সাথে এসব হিজাব টিজাব যায়না।”
— “ওহ..!”
— “যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
— “জ্বী।”

সিনথিয়া গাউনটা পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। সায়ান ইতিমধ্যে রেডি হয়ে গেছে। সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সিনথিয়া ধীরপায়ে হেটে সায়ানের সামনে আসলো। সায়ান ইশারায় ওকে ড্রেসিং টেবিলের দিকে যেতে বললো। তখনই একটা মেয়ে ভেতরে এলো। সিনথিয়াকে সাজাতে লাগলো। সিনথিয়াও চুপচাপ হয়ে রইলো। শুধু চোখের কানায় কানায় নোনাজলে ভর্তি হয়ে এলো। মেয়েটা সিনথিয়ার লম্বা চুলগুলো কিভাবে কিভাবে করে বেধে দিলো। সাজানো শেষে মেয়েটা ওর বিল নিয়ে চলে গেলো।

সায়ান ওর সামনে দাঁড়িয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সিনথিয়াকে ভালো করে দেখলো। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নতুন কিনা পারফিউম সিনথিয়ার দিকে পুস করতেই মিহি কণ্ঠে উত্তেজিত হয়ে বললো,

— “মেয়েদের সুগন্ধি মাখা নিষেধ। প্লিজ আম…।” সায়ানের দিকে তাকিয়ে থেমে গেছে সিনথিয়া। সায়ান হেসে সিনথিয়াকে পারফিউম লাগিয়ে দিলো। আয়নার দিকে ঘুড়িয়ে দিয়ে ওর পেছনে দাড়ালো সায়ান। সিনথিয়াকে বললো,

— “লুক এট ইউরসেল্ফ। ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস।”

সিনথিয়া একনজর নিজের দিকে তাকালো। এই গাউনটায় ওর শরীরের প্রতিটা মেদ এবং ঢেউ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সিনথিয়া চোখ সরিয়ে নিলো নিজের থেকে। গোপনে একটা ঢোক গিলে কান্না গিলে ফেললো। এতোক্ষণ কান্নাটা গলায় আটকে ছিলো।

.
যথাসময়ে দুজনেই পৌছে গেলো ওদের তথাকথিত জাক ঝমকপূর্ণ সেই পার্টিতে। সায়ান সিনথিয়ার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। ভেতরে যেতেই চাপা অস্বস্তি, ভয়, লজ্জায় সিনথিয়া একেবারে গুটিয়ে গেলো। পা দুটো থেমে গেছে। একেবারেই চলছে না। সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেনো প্রথম তারা মেয়ে দেখছে। সায়ান ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

— “সিনথিয়া সিনক্রিয়েট করো না। ভেতরে চলো।”
সিনথিয়া মিনমিনে স্বরে বললো,
— “আমরা বাড়ি ফিরে যাই চলুন। এখানে খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমার।”
— “সিনথু রিল্যাক্স। আমার সাথে ভেতরে চলো।”
— “(—-)”
— “চলো।”

সায়ান জোর করে সিনথিয়াকে ভেতরে নিয়ে গেলো। পার্টি বেশ ভালোই চলছে। সায়ান ওকে রেখে কোথায় যেনো গেলো। সিনথিয়া বারের একপাশে একটা চেয়ারে বসে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে বারবার। টিস্যুটা চোখের কোণে বারবার চেপে ধরছে।

— “হেই, ওয়ানা ডান্স?”

সিনথিয়া ফিরে তাকালো। ছেলেটার ওর থেকে দুইহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সিনথিয়া মাথা নাড়িয়ে না বললো। ছেলেটা এবার ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

— “অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তুমি এখানে একা বসে আছো। চলো আমার সাথে ডান্স ফ্লোরে। অনেক ইনজয় করতে পারবে।”
— “ন..না। আপ..আপনি যান।”
— “আরে চলো তো।” বলেই ছেলেটা ওর হাত টেনে ধরলো। সিনথিয়া জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো। উদ্দেশ্য সায়ানকে খুজবে। কিছুটা সামনে আসতেই সায়ান ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

— “কি হয়েছে? কোথায় যাচ্ছো?”
— “কোথাও না। আপনাকেই খুজচ্ছিলাম। বা..।”
— “হেই গার্ল। লেটস গো।” কথাটা বলেই ছেলেটা সিনথিয়ার পাশে এসে দাড়ালো। সায়ান সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো। মৃদু স্বরে বললো,

— “ওয়ানা ড্যান্স উইথ মাই ওয়াইফ?”
— “ইয়াহ..!”
— “অল রাইট, দেন টেক হার।”
— “সায়…।”

সিনথিয়া কিছু বলার আগেই ছেলেটা ওর হাত ধরে টানলো। সায়ান সিনথিয়াকে বললো,

— “গো বেব। ইনজয় ইউরসেল্ফ।”

সিনথিয়া সায়ানের বাম হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল গুজে শক্ত করে ধরে রাখলো। চোখে হাজারো আকুতি। সায়ান সেসব পাত্তা দিলো না। জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিলো। লোকটা ওকে টেনে নিয়ে এলো ডান্স ফ্লোরে। ওর মুখোমুখি হয়ে বেশ অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,

— “জানো আমি কেনো তোমাকে আমার ডান্স পার্টনার করেছি?”
সিনথিয়া মুখ তুলে তাকালো। লোকটা বললো,
— “এই পার্টিতে শুধু তোমাকেই পেলাম যে কারো প্রতি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছো না। এন্ড আই লাইক ইট।”

লোকটা সিনথিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। সিনথিয়া বারবার ছাড়িয়ে দিতে চাইছে। লোকটা সেটা দেখে হাসলো। তারপর খামছে ধরলো সিনথিয়ার কোমড়। সিনথিয়া ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। চোখ থেকে একফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। তা দেখে লোকটা বললো,

— “গর্জিয়াস..!”

নাচের একপর্যায়ে লোকটা হাত উপরে তুলে ঘুড়াতেই সিনথিয়া কারো বাহুতে আবদ্ধ হলো। গায়ের ঘ্রাণে বুঝলো এটা সায়ান। অস্বস্তি ভাবটা কেটে গেলেও মনের ব্যাথাটা একটুও কমলো না। সায়ান আলতো করেই ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে দুলতে শুরু করেছে। সিনথিয়া পলকহীন চেয়ে রইলো সায়ানের মুখের দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সায়ান জিজ্ঞেস করলো,

— “কি হয়েছে?”
— “কিছু না।”

সিনথিয়া নজর সরিয়ে নিলো। সায়ান ওকে নিয়ে একটা রুমে এলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে বেডে বসিয়ে ওর সামনে বরাবর মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে বললো,

— “কি হয়েছে বলো?”

সিনথিয়া কিছু বললো না শুধু তাকিয়ে রইলো সায়ানের দিকে। সায়ান ওর হাত হালকা ঝাকি দিয়ে বললো,

— “কি হয়েছে সিনথিয়া?”
— “কিছু না। চলুন পার্টিতে। নাহলে সবাই আবার আপনাকে খুজবে।”

সায়ান উঠে দাড়াতেই সিনথিয়া আগে আগে বেরিয়ে গেলো। এমন লোকের সাথে অভিমান করে কি লাভ যে চোখের ভাষা তো দূর মুখের ভাষাও বুঝে না।

.
সিনথিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর কোমড়ের সেই জায়গায় হাত বুলালো যেখানে ওই বেয়াদব লোকটা চেপে ধরেছিলো। সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে সিনথিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

— “কি হয়েছে তোমার। তখন থেকেই কেমন উইয়ার্ড বিহেব করছো।”
— “কিছু না।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।

সায়ান ওর কোমড় হালকা চেপে ধরতেই সিনথিয়া ‘ও মাগো’ বলে আর্তনাদ করে উঠলো। সায়ান তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিলো। সিনথিয়ার কামিজ উঠিয়ে সেই জায়গায় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। সিনথিয়া বুঝলো না সায়ানের চোখের ভাষা। ভ্রু কুচকে সায়ান জিজ্ঞেস করলো,

— “এটা কিভাবে হয়েছে? আমি এমন করেছি বলে তো মনে পরে না।”

সিনথিয়া সায়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে কামিজ নামিয়ে ম্লান হেসে বললো,

— “ওসব কিছুনা। আপনার ওই বন্ধুটা একটু টাইম স্পেন্ড করেছে আমার সাথে। তাই এই দ..দাগ।”

সায়ান তাকিয়ে রইলো সিনথিয়ার দিকে। হয়ত ওর মন একটু নরম হয়েছে। সিনথিয়া সরে গিয়ে বিছানায় বসতে নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলো। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সিনথিয়ার কার্যকলাপ দেখছে। সিনথিয়া আবার সায়ানের সামনে এসে বললো,

— “আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি কি ঘুমাতে পারি? নাকি এখন আপনার মনোরঞ্জন করতে হবে?”
— “হঠাৎ এভাবে কথা বলছো কেনো?”
— “আমি যাই করি তাতে আপনার মন ভরে না। আপনি রিফ্রেশমেন্ট ফিল করেন না। তাই…।”
— “যাও ঘুমাও।”
— “ধন্যবাদ। আজকে ছাড় দিয়ে খুব উপকার করেছেন।”

সিনথিয়া বিছানায় গড়িয়ে পরলো সায়ান এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কেমন যেনো লাগছে সিনথিয়াকে। মানুষ মন থেকে একেবারে গুড়িয়ে গেলে যেমন হয়ে যায় সিনথিয়ার অবস্থাও তাই। কিন্তু সায়ান সেটা বুঝতে পারলো না।

____________________________
কালকের লোকটার সাথে প্রচন্ড ধস্তাধস্তি করে সিনথিয়া কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। আজকে আবার অন্য একটা পার্টিতে এসেছে ওরা। সিনথিয়াকে আজ লাল গাউন পরতে হয়েছে। একটু আগেই সায়ান আসছি বলে কোথায় যেনো হাওয়া হয়ে গেলো। সিনথিয়া সায়ানকে খুজতে খুজতে এইদিকটায় চলে এসেছিলো। তারপরই এই বদ লোকটার কবলে পরেছে।

একটু আগে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে সেদিক থেকে চলে এলো। ধাক্কা খেয়ে পরতে নিলেই কেউ ধরে ফেললো। সায়ানকে দেখেই সিনথিয়া ঝাপিয়ে পরলো ওর বুকে। সায়ান বেশ অবাক হয়েছে। এরকম কখনো হয়নি। আজ হঠাৎ সিনথিয়া এভাবে জড়িয়ে ধরায় সায়ান অবাকের চূড়ায় পৌছে গেছে। সিনথিয়াকে একটা রুমে নিয়ে এলো। বেডে বসিয়ে দিয়ে বললো,

— “কি হয়েছে সিনথু।”

সিনথিয়া বেশ কিছুক্ষণ সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “সায়ান আমি যদি কখনো ধ..ধর্ষিত হই আপনি কি আমাকে রাখবেন? মানে ঘৃণা হবে না আমার শরীরের প্রতি? হবেই তো। আমারও ঘৃণা হয়েছিলো আপনার ছোয়ায়। আচ্ছা আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন তখন?”
— “সিনথু কিসব বলছো? কিছুই বুঝতে পারছি না।”
— “ক..কিছু না।”

সিনথিয়া মাথা নিচু করে নিরব হয়ে গেলো। সায়ান আসলেই কিছু বুঝে নি। সায়ান কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও সিনথিয়ার থেকে কোনো উত্তর পায়নি। আজ কি হয়েছে সেটা জানালে হয়ত সামনে আসা ঝড় থেকে সিনথিয়া বেঁচে যেতো। যেই ঝড় সিনথিয়াকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাবে। কিন্তু সিনথিয়া বুঝতে পারেনি। ভেবেছে সবকিছুর পেছনে সায়ানের হাত আছে। আর এখন না বুঝার ভান করছে। এটাই ছিলো সিনথিয়ার সবচেয়ে বড় ভুল। যেই ভুলের কারণে ওর চরিত্রে আরো একবার দাগ পরবে। আর এই দাগ আগের তুলনায় বেশ গাড়ো হবে। আরো একবার চুরমার করে দিবে সিনথিয়ার অস্তিত্বকে।

চলবে,,,,
® ‘নুরুন নাহার’

[সবার কাছ থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here