তুমি গহীন অনুভব পর্ব -০৫

#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ইরজা মন খারাপ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আইজান গিয়ে ইরজার পাশে দাঁড়ালো। আর বলল,,

“সে কি জানে তার প্রেমিক পুরুষ তার মন খারাপ সহ্য করতে পারে না।”

ইরজা আকাশ পানে চোখ রেখেই বলল,,

“সে জানে বলেই তো মন খারাপ করে না। কিন্তু প্রেমিক পুরুষ কি জানে তার ব্যক্তিগত চাঁদ মন খারাপ করে না মুগ্ধ চোখে রাতের শান্ত প্রকৃতি অনুভব করছে।”

“এটা কিন্তু অন্যায় তার প্রেমিক পুরুষ কে রেখে একা একা প্রকৃতি অনুভব করছে।”

“তার প্রেমিক পুরুষ যে তার শুভ্রপরীর দিকে তাকিয়ে গহীন অনুভব এ ব্যস্ত ছিল তাই তো তাকে ডাকেনি।”

ইরজা এবার আইজানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কারন আইজান পেছন থেকে তার শুভ্রপরীর দিকেই তাকিয়ে ছিল। আইজান ওর হাসি দেখে বলল,,

“মাশাআল্লাহ চাঁদের আলোয় তো আমার ব্যক্তিগত চাঁদ কে দারুন লাগছে। মনে হচ্ছে এক টুকরো চাঁদ মাটিতে নেমে এসেছে।

“যাকে ভালোবাসা যায় তার সবকিছুই ভালো লাগে।”

“তো মাই ডিয়ার শুভ্রপরী চলেন একটু নিশি রাতে নির্জনে হেটে আসি!’

“এখন?”

“হুম এখন! তুমি জানো না স্ত্রীর সাথে নির্জনে হাঁটা সুন্নত।”

“সেটা জানি তো কিন্তু এখন বাজে রাত এগারোটা তার ওপর আপনার নানাবাড়ি এখন কিভাবে বের হবো?কেউ যদি টের পায়”

“আরে টের পেলেই কি। আমি কি অন্যের বউকে নিয়ে যাচ্ছি নাকি আমি তো আমার বউকে মানে আমার ব্যক্তিগত চাঁদ কে নিয়ে যাচ্ছি তাতে কার বাপের কি!”

“কারো বাপের কিছু না কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে ব্যাপারটা বাজে দেখাবে।”

“ধুর কিছু হবে না চলো তো? এই সত্যি করে বলো তো তুমি আমার সাথে যেতে চাইছো না!”

“আরে যেতে তো চাইছি।আমারো মন চাচ্ছে প্রকৃতি টাকে আরো কাছে থেকে দেখতে।”

“তাহলে ভাবছো কি তোমার জামাই তোমার সাথে আছে চলো।”

আইজান ইরজার হাত ধরে ড্রয়িংরুমে আসলো কাউকে না দেখতে পেয়ে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আইজান আর ইরজা রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ইরজা আইজানের এক হাত জরিয়ে ধরে হাঁটছে। তা দেখে আইজান বলল,,

“আমার হাত দুটো তোমার এত ভালো লাগে কেন? যখনি সুযোগ পাও আমার হাত ধরো!”

“আপনার হাত ধরলে কেমন যেন শান্তি লাগে। এই বিশ্বস্ত হাতটাই তো আমার শক্তি আমার আস্থা !

“একটা গান গাইবে শুভ্রপরী।”

“আমি তো তেমন গান পারি না মূলত আমি গান শুনি না। আপনি গান আমি শুনি!”

“আমার শুভ্রপরী যখন বলেছে তাহলে তো গাইতেই হয়। এই গানটা আমার শুভ্রপরীর জন্য।” বলেই আইজান গান শুরু করলো।

আমারও পরানো যাহা চায়,
তুমি তাই তুমি তাই গো!
আমার ও পরানো যাহা চায়,

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বর্ষ মাস!
যদি আরো কারে ভালোবাসো,
যদি আর ফিরে নাহি আসো,
তবে তুমি যাহা চাও,
তাই যেনো পাও আমি যতো দুঃখ পাই গো
আমার ও পরানো যাহা চায়,
তুমি তাই তুমি তাই গো,,

পুরো গানটা আইজান ইরজার চোখের দিকে তাকিয়ে গাইলো। গান গাওয়া শেষে আইজান দেখলো ইরজাও ওরা দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আইজান বলল,,

“কি মিসেস হাড়িয়ে গেলেন নাকি?’

ইরজার হুস আসতে ইরজা বলল,,

“হুম হাড়িয়ে গিয়েছিলাম প্রেমিক পুরুষ এর সুখের রাজ্যে। কিন্তু আমি আর কারে ভালোবাসবো।আর আপনাকে ছাড়া কোথায় যাবো যেখান থেকে ফিরে আসবো না।”

“আরে ওটা তো গানের মাঝে ছিল। আমি থাকতে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারবে না। কারন আমি দেব না। তোমার প্রেমিক পুরুষ কিন্তু দয়ালু নয়। সে তোমার ব্যাপারে অনেক স্বার্থপর। মিসেস ইরজা আজরিন চৌধুরী শুধু ফুয়াদ আইজান চৌধুরীর ব্যক্তিগত চাঁদ তার শুভ্রপরী।”

“তাই বুঝি!”

“হুম তাই!”

আইজান কিছু বললো না মুচকি হেসে তার ব্যক্তিগত চাঁদের সাথে চলতে লাগলো। ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে এসে পড়েছে। ওখানেই একটু দূরে একটা চায়ের দোকান দেখতে পেল। আইজান ইরজাকে দার করিয়ে দু কাপ চা নিয়ে এলো। ইরজার হাতে এক কাপ দিয়ে খেতে খেতে বলল,,

“নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে এককাপ চা খাওয়ার অনুভূতি কিন্তু মন্দ নয়।”

তখন ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“সঙ্গে যদি থাকে ভালোবাসার মানুষটি তাহলে তো কথাই নেই।”

“এটা ঠিক বলেছো ভালোবাসার মানুষটি সঙ্গে থাকলে সবকিছুই ভালোলাগে।”

“তা মিসেস মিস থেকে তো মিসেস হয়ে গেলে এখনো তো বললে না ভালোবাসি।”

“সে কি অনুভব করে না তার ব্যক্তিগত চাঁদ তাকে ভালোবাসে কিনা!”

“সে তো তার ব্যক্তিগত চাঁদ কে সর্বদা গহীন অনুভব করে। তবে কি বলোতো মাঝে মাঝে প্রকাশ টাও করতে হয় তাহলে নাকি সম্পর্ক অনেক মিষ্টি হয়।”

“আমাদের সম্পর্ক তিতা ছিল কবে? সবসময় তো মিস্টিই ছিল।’

“ইস দিলে তো নিরামিষ মহিলা আমার রোমান্টিক মুহুর্তটাকে নষ্ট করে। কি সুন্দর মিস্টি কথা হচ্ছিল আর তুমি সেখানে তিতা নিয়ে এলে।”

এ কথা শুনে ইরজা হেসে উঠলো। আর আইজান অসহায় ফেস করে বলল,,

“তোমার সাথে কথা নেই আড়ি!”

তা শুনে ইরজা আইজান কে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল,,

“ভালোবাসা অনেক দামী শব্দ। ভালোবাসি বললেই শুধু ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা হচ্ছে দু’টো মনের গহীন অনুভব।”

“আমাকে একটু ভালোবাসি বললে কি হয় শুনি।”

“অনেক কিছু হয় আপনি বুঝবেন না। এখন চলুন বাড়ি ফিরে যাই।”

“হুম চলো !”

আইজান আর ইরজা চা শেষ করে বিল মিটিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখন ওরা দেখলো পরশ একটা ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। এটা দেখে ওরা একটু দূরেই দাঁড়িয়ে রইল যাতে ওদের না দেখতে পায়। ও যেতেই আইজান বলল,,

“ইরজা তুমি ভেতরে যাও আমি দেখছি পরশ এতো রাতে কোথায় যায়। এতো রাতে যখন যাচ্ছে তাহলে নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে। এমনিতেও আমার মনে হয় ও কোন অবৈধ কাজ করে। তুমি যাও আমি দেখছি।”

“আপনি একা যাবেন কেন? যদি কোন বিপদ হয়।”

“তোমার জামাই কে ভুলে গেলে বুঝি। আমার কাছে সবসময় রিভলবার থাকে। তুমি ভেতরে যাও আমি দেখছি।”

“আমিও যাই না। এমনিতেও ভেতরে গিয়ে আরো টেনশন হবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

____________________

“কিরে পরশ এসেছিস কেউ দেখতে পায় নি তো?”

“হ্যা ছোট বস কেউ দেখতে পায় নি।”

“মাল এনেছিস!”

“হুম এই ব্যাগে সব আছে! তিনটা লেটেস্ট মডেলের বড় বন্দুক আর অনেকগুলো ড্রাগস।”

“সাবাশ! ! ”

“এগুলো সব তো বস এর কাছে ছিল। আমি ওগুলো আনতে গেছিলাম। ওগুলো আনার পর কিছুদূর যেতেই একটা গুলির আওয়াজ শুনি। পরে ওদিকে গিয়ে দেখি বস পরে আছে। কেউ বসকে গুলি করছে।”

এ কথা শুনে পরশের সামনে থাকা লোকটা বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে লাগলো আর বলল,,

“ওর সময় ফুরিয়ে গেছিল তাই মরে গেছে। এমনিতেও ভালো সময় বেশি দিন থাকে না। এখন আমি আর তোদের ছোট বস নাই আমি হলাম তোদের একমাত্র বস বুঝতে পারলি।

“আপনি কি জানেন ওনাকে কে মারছে।”

“আমি মেরেছি আর আমি জানবো না।”

একথা শুনে পরশ এক পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,,

“কি আপনি মেরেছেন।”

“হুম তুই যদি মুখ খুলিস তাহলে মনে কর আজই তোর শেষ দিন।”

একথা শুনে পরশ ভয় পেয়ে গেল। আর ভয়ে বলল,,

“না না বস আমি কাউকে বলবো না। কিন্তু আপনি তারে মারলেন কেন?”

“টাকার জন্য আর সবার ওপরে উঠার জন্য। শাওন ও তার বসরে মারছিল বস হওয়ার জন্য তাই আমিও ওরে মারলাম বস হওয়ার জন্য। অন্ধকার জগতের বস‌। ওরে মারার জন্য ১ কোটি টাকা দিছে আমারে।”

সব শুনে পরশ অবাক হয়ে বলল,,

“কে দিছে ?”

তখন লোকটি ধমক দিয়ে বলল,,

“তোর এত জানতে হবে না। তুই তোর মতো কাজ করে আর ভুলেও যদি আমারে ধোঁকা দেওয়ার কথা ভাবোস তাহলে সে গুড়ে বালি।”

“না না আমি কাউরে বলবো না আমি ধান্ধায় ঢুকছি টাকার জন্য। কে কেমনে কি করলো তার জানার দরকার নাই।”

“না দরকার হইলেই ভালো এই নে তোর ভাগের টাকা এখানে দশ লাখ আছে । কাল যদি এগুলো পাচার করতে পারোস তাহলে আরো দশ লাখ পাবি এহন যা।আমি বুঝিনা তোর মতো পোলা এরকম কাজ করে কেন?

পরশ যেমন চোরের মতো এসেছিল তেমন-ই চোরের মতো চলে গেল। অবশ্য ব্যাগটা রেখে গেল। এদিকে আইজান আর ইরজা সব কিছু শুনলো সাথে সব রেকর্ড ও করে নিল। সব শুনে আইজান কাউকে কল করলো। আর কথা শেষ করে বলল,,

“আল্লাহ তায়ালা একটা দরজা বন্ধ করলে আরেক দরজা খুলে দেন। আমরা এতক্ষন মন খারাপ করছিলাম কোন ক্লু পাচ্ছিলাম না বলে কিন্তু এখন।”

তখন ইরজা মুচকি হেসে বলল,,
আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,
-আল্লাহ যদি আপনার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার মতো কেউ নেই।
[সূরা ইউনুস : ১০৭]

তা শুনে আইজান বলল,,

“হুম! তো চলো এবার কাজে লেগে পড়ি। ওরাও এসে পরবে। কিন্তু দুঃখ লাগছে ব্যাটা আজকেই নতুন বস হলো ১ কোটি টাকাও পেল কিন্তু ভোগ করতে পারলো না। সত্যিই এটা দুঃখজনক।”

ইরজা কিছু বললো না মুচকি হাসলো।

___________________

পরের দিন সকালে ইরজা আর আইজান নামাজ পড়ে ড্রয়িংরুমে বসে কফি খাচ্ছে। কফিটা আইজান-ই বানিয়েছে। এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠে নি। ওরা কাল রাতে একটুও ঘুমাই নি। এতে অবশ্য তাদের সমস্যা হচ্ছে না। তবে ইরজার চোখদুটো একটু লাল হয়ে আছে। আইজান আর ইরজা কিছু বলছে আর কফি খাচ্ছে। তখন আয়েশা চৌধুরী আইজানের বড় মামী ছোট মামী নিচে নামলো। আর ওদের এভাবে দেখে আইজানের বড় মামী বলল,,

“তোমরা কখন নিচে এসেছো?”

তখন আইজান বলল,,

“এই তো মামী একটু আগেই। নামাজ পড়ে কফি খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই কিচেনে এসে বানালাম তুমি কিন্তু আবার কিচেনে ঢোকার জন্য মাইন্ড করো না।”

“কফি খেতে ইচ্ছে করছিল আমাদের ডাকবে না । আমরা বানিয়ে দিতাম।”

“ধুর মামী তুমি যে কি বলো না। কফিই তো এর জন্য আবার তোমাদের ডাকবো।”

তখন আয়েশা চৌধুরীর চোখ গেল ইরজার দিকে উনি ইরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ইরজা মা রাতে ঘুম হয় নি বুঝি চোখদুটো কেমন লাল হয়ে আছে!”

তখন ইরজা আমতা আমতা করে বলল,,

“আসলে মা নতুন জায়গা তো তাই ঠিকমতো ঘুম হয় নি। সমস্যা নেই মা।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“গ্ৰামের মেয়ে তো তাই ভালো পরিবেশে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। তা গ্ৰামের ইনি দেখি আবার কফিও খায় দেখছি।”

এ কথা শুনে সবাই পেছনে তাকালো ওখানে প্রিয়া আর ওর মা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পেছনে রুপা নিপা পালক, তিশা আর ফায়জা। এবাড়ির সকলেই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। ফজরের নামাজ পড়ে। আইজানের রাগ হলেও ও কিছু বললো না। কারন সে দেখতে চায় ইরজা কি বলে। ইরজা মুচকি হেসে বলল,,

“একটু অস্বস্তি তো হচ্ছে তবে পরিবেশ দেখে না আপনার কথা শুনে। আর বাকি রইল কফির কথা! কেন আপু কফির প্যাকেটে কি লিখা ছিল এটা শুধু শহরের মানুষদের জন্য। গ্ৰামের মানুষদের জন্য নয়।”

এ কথা শুনে প্রিয়া একটু থতমত খেয়ে গেল। বাকি সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। প্রিয়া নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“না সেটা লেখা নেই তবে গ্ৰামের লোকেরা এসব কফি চোখে দেখেছে নাকি। এই কদিনেই দেখি বড়লোকি আদব কায়দা শিখে গেছো।”

“কেন চোখে দেখবে না কেন? গ্ৰামে কি কোন দোকান পাট নেই যে গ্ৰামের মানুষ কফি চোখে দেখবে না। আচ্ছা আপনি কি কখনো গ্ৰামে গেছেন। এখন গ্ৰামে গিয়ে দেখবেন সব গ্ৰামই এখন অনেক উন্নত হয়ে গেছে। আসলে দেশ উন্নতির দিকে গেলে কি হবে মানুষের মন তো উন্নত হতে পারে নি।”

এ কথা শুনে অপমানে প্রিয়ার মুখ থমথমে হয়ে গেল। তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“ইরজা প্রথম দিন থেকেই কফি খায়। আমার বউমাকে একদম কিছু বলবে না প্রিয়া। কিছু বলছি না বলে ভেবো না বারবার তোমাকে বারবার ছেড়ে দিব। আর ওর বড়লোকি আদব কায়দা ওর শিখতে হবে না কারন ও জন্ম থেকেই,,

তখন আইজান বলল,,

“এই তোমরা সকাল সকাল কি শুরু করেছো। আর প্রিয়া তোকে বলেছি না আমার বউয়ের সাথে বুঝে শুনে কথা বলতে। করে নিলি তো বেইজ্জতি। চলো বউ এখন তো কফি খাওয়া শেষ আমরা রুমে যাই।”

আইজান ইরজার হাত ধরে রুমে চলে গেল।আর আয়েশা চৌধুরী কে ইশারা দিয়ে বলল যাতে কিছু না বলে। প্রিয়াও রেগে মেগে ওখান থেকে চলে গেল।পেছন থেকে ফায়জা তিশাকে বলল,,

“মা ঠিক কি বলতে চাইছিল বলো তো তিশা আপু। ভাবির বড়লোকি আদব কায়দা শেখার প্রয়োজন নেই ভাবি জন্ম থেকেই?”

“আমিও বুঝতে পারছি না। সব মাথার ওপর দিয়ে গেল। আর তোর খালাতো বোনও কি রকম সবসময় ভাবিকে নিয়ে এটা ওটা বলতেই থাকে। অবশ্য ভাবিও আমাদের কম যায়না মুখের ওপর জবাব দেয়।”

ওরা অন্য কথা বলতে বলতে চলে গেল। তখন আয়েশা চৌধুরী কে তার বোন বলল,,

“আয়েশা তুই তোর ছেলের বউয়ের জন্য আমার মেয়েকে কথা শুনালি।”

“কেন আপা তোমার মেয়ে কি অনেক ভালো কাজ করেছে যে তাকে বাহবা দিব। দেখো আমার বউমার নামে আমি কিছু শুনবো না। আমার বউমা কোথা থেকে এসেছে কি করেছে সেটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। তাই তোমাদের কেউ বলছি একদম ইরজাকে কিছু বলবে না।”

আয়েশা চৌধুরী ওখান থেকে চলে গেল আর ওনার বোন ও রেগে মেয়ের মতো চলে গেল।

__________________

নাস্তা খাওয়ার সময় আইজান ওর নানাভাই কে বলল,,

“নানাভাই আর্জেন্ট একটা কাজ পড়ে গেছে আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা ফিরতে হবে।”

আইজানের কথা শুনে সকলে আইজানের দিকে তাকালো নাহিদ তালুকদার বলল,,

“আজকেই যেতে হবে কাল-ই তো এলে। আর তোমার তো আরো দুদিন ছুটি ছিল।”

“আসলে নানাভাই আমি অনেকদিন যাবৎ একজন কে ধরার চেষ্টা করছিলাম ফাইনালি কাল রাতে তাকে ধরতে পেরেছে আমার টিম। স্যার বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে কারন তার সব কিছুর ডিটেলস আমার কাছে। আমি না গেলে তারা কিছুই করতে পারছে না।”

“তাহলে আর কি করার যেতে যখন হবে তাহলে যাও। তবে নাতবউ যাবে না।”

“না নানাভাই তোমার নাতবউকে আমার সাথে যেতে হবে। মা বাবা ফায়জা আর তিশা থাকুক। আমাদের দুজনকে যেতে হবে।”

তখন আইজানের নানুমনি বলল,,

“তোমার কাজ আছে কিন্তু নাতবউয়ের তো নেই। তাই নাতবউ কোথাও যাচ্ছে না। তাছাড়া নাতবউ এর সাথে আমার কতো কথা বাকি।”

“সরি নানুমনি তোমার কথা রাখতে পারলাম না। তা কথা বলবে সব তিশার বিয়ের জন্য রেখে দাও তখন করে নিও।”

“এই নাতবউ তুই কিছু বল?”

তখন ইরজা বলল,,

“আমি কি বলবো নানুমনি আপনার নাতি কি আমার কথা শুনবে।”

তখন নাহিদ তালুকদার বললেন,,

“কালও না শুনলো তাহলে আজ শুনবে না কেন?”

তখন আইজান বলল,,

“তোমরা যাই বলো না কেন আমি আমার বউকে রেখে যাচ্ছি না।”

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

“সবাই এতো করে বলছে তখন রেখে যা না। দুদিনের তো ব্যাপার।”

তখন নাহিদ তালুকদার বললেন,,

“আইজান সবাই চাইছে ইরজা থেকে যাক তাহলে রেখে যাও না। তোমরা তো আর রোজ রোজ এখানে আসো না।”

“সরি নানাভাই মাফ কারো আমি এখন কারো কথা রাখতে পারলাম না।

কিন্তু,,

তখন ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

“বাবা ওদের যেতে দিন আইজান যখন এতো মানা করছে তাহলে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আইজান আর ইরজা খাবার খেয়ে ওপরে চলে গেল। ইরজা ওপরে যেয়ে বলল,,

‘সবার মন খারাপ করে এভাবে যাওয়া কি ঠিক হবে।”

“ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। কারন যাওয়া টা জরুরি তাছাড়া তুমি তো সব জানোই। তাছাড়া ও জেনে গেছে আমরা সিলেট আছি। আর আমি সিওর তোমাকে ও চেনে তাই রিস্কের মধ্যে তোমাকে রেখে যাবো না।তুমি কে সেটা না জানলেও তুমি আজাহার মির্জার মেয়ে সেটা সে জেনে গেছে। তারওপর পরশের ও তো কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। এতো রিস্কের মধ্যে তোমাকে রেখে গেলে আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারবো না। সবসময় ভয় হবে তোমার কিছু হয়ে গেল না তো।”

“হুম বুঝতে পেরেছি।”

ওরা রেডি হয়ে নিল তারপর বিদায় নেওয়ার জন্য নাহিদ তালুকদার এর ঘরে গেল। ওরা যেতেই আইজানের নানুমনি এক জোড়া বালা ইরজার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল,,

“এটা আমি আইজানের বউয়ের জন্য রেখেছিলাম।”

ইরজা মুচকি হেসে উপহার গ্ৰহন করলো। তখন নাহিদ তালুকদার বললেন,,

“এবার তো তোমাদের সাথে সময় কাটাতে পারলাম না। কাল এলে আর আজই চলে যাচ্ছো।”

তখন ইরজা বলল,,

“নানাভাই এইবার তো সময় কাটাতে পারলাম না। কিন্তু এরপরের বার অনেক সময় নিয়ে আসবো। তখন আপনার নাতি বারন করলে ওনাকে রেখে আসবো।”

এ কথা শুনে নানাভাই হেসে ফেললো আর বলল,,

“খুব ভালো থেকো তোমরা।”

আইজান আর ইরজা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here