তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -১৩+১৪

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

পরের দিন সকাল বেলা।সবাই রেডি হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।অধরার নানি মিনারা বেগমকে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছেন।আশরাফুল চৌধুরী অধরা কে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাবে।এর জন্য তাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে।মাঝ রাস্তায় এসে,মিনারা বেগম আবার অস্বাভাবি আচরণ করলে লাগলো।মিনারা বেগমের পাশে আকাশ বসে ছিলো।আকাশকে নিজের পাশে বসে থাকতে দেখে আকাশের চুল ধরে মারতে লাগলো।উপায় না পেয়ে আকাশকে অধরার পাশে বসিয়ে দিলো।সন্ধ্যার দিকে সবাই যে,যার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।

রাতে ফ্রেশ হয়ে সবাই খেতে বসেছে।আকাশ’কে দেখে চৌধুরী বাড়ির কাজের মেয়েটি কেমন জানি করছে।সবার খাওয়া শেষ।সবাই উঠে চলে গেলো।সুযোগ বুঝে।কাজের মেয়েটি কাকে একটা এসএমএস করে দিলো।সাথে সাথে মেয়েটির ফোনে কল আসলো।কলটি রিসিভ করে মেয়েটি বলল।

–আকাশ যদি সবাইকে সত্যি বলে দেয়।তাহলে আমরা সবাই ধরা পড়ে যাব।

–আকাশ যাতে মুখ খুলতে না পারে,তুমি তাড়াতাড়ি সেই ব্যবস্তা করো।না হলে আমি তোমার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

–কিন্তু আমি কি করবো আপনি বলেন।আকাশকে কি মেরে ফেলবো।

–একদম না।ছোট বাচ্চা ও।ওর তো কোনো দোষ নেই।তাহলে কেনো শুধু শুধু শাস্তি পাবে।ছেলেটা বাজে ভাবে জড়িয়ে গেছে।তুমি ছেলেটাকে ভয় দেখাও।বলো তুই যদি সত্যি কথা বলে দিস।তাহলে তোর আপাই মরে যাবে।ভয় দেখিয়ে কয়টাদিন রাখো।

–আর আকাশের মা।

–ওনার কথা তোমার চিন্তা করা লাগবে না।ওনার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

–আকাশকে তিতলির সাথে ঘুমাতে বলা হয়েছে।প্রথমে তিতলি রাগ করলে।বাবার রাগের কারণে চুপ হয়ে যায়।

–এই ছেলে একদম আমার রুমের কোনো জিনিসপত্রে হাত দিবি না।চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়।বলল তিতলি।

–আচ্ছা আপু।বলেই আকাশ চুপচাপ শুয়ে পড়ল।তিতলি অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বাধ্য ছেলে,কথা বলার সাথে সাথে শুনলো।মুখে মুখে তর্ক করলো না।এত সুন্দর শিক্ষা কে দিয়েছে ওকে।

অধরার নানি মিনারা বেগম-কে কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।মিনারা বেগম কিছু বলছে না।চুপ বসে আছে।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে।কি এমন ক্ষতি হতো,এই ভালোবাসাটা মনিরের সাথেও দেখাইতো।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই খাওয়া করছে।অধরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে।রেডি হয়ে নিলো।

–তুমি রেডি হয়ে নিচে আসলে যে,কোথাও যাবে মা।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–হ্যাঁ আমি অফিসে যাব স্যার।আপনার থেকে টাকা নিয়ে ছিলাম।ওটা তো আমার কোনো কাজেই আসে নাই।কিন্তু টাকা টা আমি হারিয়ে ফেলছি।এখন যদি অফিস না করি।তাহলে টাকা শোধ করবো কি করে।

–আমি বলছি কি মা।এখন তোমার মনের অবস্থা খারাপ।কয়টা দিন বাসায় থাকো।পরে না হয় অফিস শুরু করবে।

–সরি স্যার অধরা কারো দয়ায় বাঁচে না।ঋন যখন নিয়েছি।সেটা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার।বলেই গটগট করে চলে গেলো।

অফিসের আসতে-ই আদিল অধরার দিকে এগিয়ে আসলো।আদিলের সাথে মিমি,রিয়াও ছিলো।মিমিকে দেখে একটু ভাব নিয়েই চলে গেলো অধরা।

–দেখলে কেমন অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেলো।বলল মিমি।

–অ্যাটিটিউড না।অধরার মনের অবস্থা এখন ভালো না।আর তুমি এসব বলছো মিমি।বলল রিয়া।

–অধরার জন্য দরদ উথলে পড়ছে।যে,মেয়ের বাবা মারা গেছে।সেই মেয়ের এতভাব আসে কই থেকে।বলল মিমি।

–নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্যের অবস্থা কখনো বোঝা যায় না।যেদিন নিজের সাথে ঘটবে।সেদিন বুঝতে পারবে।চলো রিয়া আমরা অধরার সাথে দেখা করে আসি।বলেই আদিল চলে গেলো।

–অধরা কেমন আছো।বলল রিয়া।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা কাজ বাদ দিয়ে।আমার সাথে কথা বলতে আসছো।স্যার দেখলে রেগে যাবে।

–তুমি কি রাগ করছো অধরা।

–না রাগ করবো কেনো।তোমরা কাজ করো যাও।ভালো ভাবেই বলল।

ওরা আর কিছু বলল না।চুপচাপ চলে গেলো।একটু পরে আহান আসলো।কোনো কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে গেলো।অধরা একগাদা ফাইল নিয়ে আহানের কাছে গেলো।অনুমতি নিয়ে আহানের রুমে প্রবেশ করলো।

–স্যার অনেক গুলো ফাইল জমা হয়ে গেছে।প্লিজ এগুলো সাইন করে দিন।তাহলে অনেক গুলো কাজ কমে যাবে।

–এখানে তো অনেক গুলো ফাইল আছে।সময় লাগবে।তুমি বসো আমি সাইন করে দিচ্ছি।

–আমার আরো কাজ আছে স্যার।সাইন করা হলে বলবেন।আমি এসে নিয়ে যাব।

–এমন করছো কেনো।কতবার আসা যাওয়া করবে।একটু বসো,আমি করে দিচ্ছি।

অধরা কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসলো।আহান ফাইলগুলো দেখে দেখে সাইন করছে।

–একটা কথা বলবো।

–আপনি একটা কথা বলবেন।তা-ও আবার অনুমতি নিচ্ছেন।

–না মানে তুমি বাসায় আমার সাথে কথা বলো না।অফিসে এসে বললে,তার আর কি।

–আপনার ফাইলগুলো,সাইন করা হয়ে গেছে।

–হ্যাঁ।

–তাহলে আমি আসছি।বলেই চলে গেলো।

রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে আহান।নিজেকে আজকাল বড্ড বেশি অপরাধী মনে হয়।সে,আসলেই খুব খারাপ,ভীষণ খারাপ।আজ তার জন্য অধরা তার বাবাকে হারিয়ে ফেলল।তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ছেড়ে চলে গেলো।আহান তার বাবা-মাকে কষ্ট দিলো।সে,আসলে কোনো কিছু হবার যোগ্যই না।না পেড়েছে ভালো সন্তান হতে,না পেড়েছে ভালো স্বামী হতে,না পেড়েছে কারো ভালোবাসার মানুষ হতে।জীবনে কষ্ট ছাড়া কাউকে কিছুই দিতে পারে নাই আহান।আজ নিজের তার ব্যর্থ মনে হচ্ছে।আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে।এবার নিচের দিকে তাকালো।এখানে থেকে যদি লাফ দেওয়া যায়।তাহলে আজকেই আমার সব কাহিনি শেষ।তাহলে অধরা’ও শান্তি পাবে।ছাঁদের রেলিং ধরে উপরের দিকে উঠতে যাবে।তখনি হাতে টান অনুভব করতে পারলো আহান।পেছনে অধরাকে দেখে চমকে উঠলো।আহান কিছু বলতে যাবে।অধরা কড়া কণ্ঠে বলে উঠলো।

–কি করতে যাচ্ছিলেন।এত রাতে ছাঁদে কি আপনার।

–না মানে কিছু না।ঘুম আসছিলো না।তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম।আজকের চাঁদ টা অনেক সুন্দর তাই না বলো।

–আমি জানতাম চাঁদ আকাশে থাকে।এখন আপনার থেকে প্রথম জানলাম চাঁদ মাটিতে থাকে।দেখি সরুন আমি দেখি আপনি কেমন চাঁদ দেখছিলেন।

–না,দূরে সরো পড়ে যাবে।

–এই কথাটা একটু আগে আপনার মনে ছিলো না।আপনি চাঁদ আকাশে না দেখে মাটিতে দেখছিলেন কেনো।আচ্ছা আপনি এমন কেনো।রাগ তো ঠিকি করতে পারেন।আর একটা মানুষের মন গলাতে পারেন না।আত্নহত্যা করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।আপনি এত ভিতু কেনো।এর থেকে আমার ছোট ভাই আকাশ বেশি সাহসী।একটা কিছু হতেই পারে না।টুক করে মরার জন্য তৈরি হয়ে যান।আরে নিজের জীবন কি এতটা সস্তা নাকি।ছেলে মানুষ এত দুর্বল হলে চলে।আমি তো জানতাম ছেলে মানুষ সব সময় সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকে।তাদের অনেক সাহস হয়।তারা সব সময় সব কিছুর সাথে যুদ্ধ করতে পারে।আপনার বেলা উল্টো কেনো।দেখা গেলো রাস্তায় একদল পাজি ছেলে এসে আমাকে পিটাচ্ছে আর আপনি আমাকে রেখে দৌড়ে পালাচ্ছেন।

আহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।অধরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।অধরার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আহানের স্পর্শ পেয়ে।আগে কখনো কোনো ছেলের এতটা কাছাকাছি যায়নি সে।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার।কাঁধে গরম পানির স্পর্শ পেতেই অধরা খেয়াল করলো আহান কান্না করছে।

–আচ্ছা আপনি এমন কেনো।ছেলে মানুষ হয়ে কান্না করেন।কখনো দেখেছেন ছেলে মানুষ কান্না।

–ছেলেরা তো মানুষ না।তাদের মন নেই।তাদের কান্না করতে ইচ্ছে করে না।তাদের কষ্ট প্রকাশ করার অধিকার নেই।ছেলে হয়েছি বলে কান্না করা পাপ নাকি।

–এতক্ষণ এই বড় বড় কথা কোথায় গিয়েছিল।আমি না আসলে টুস করে নিচে পড়ে যেতেন।

–তাতে তোমার কি।তোমার শান্তি হতো।প্লিজ অধরা তুমি আমাকে মাফ করে দাও।বিশ্বাস করো আমি আর এই অপরাধের বোঝা নিয়ে বেড়াতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হয়।আমি সে দিন তোমাকে যেতে না দিয়ে কি যে,বড় অপরাধ করেছি।ক্ষমা চাওয়ার কোনো ভাষা আমার নেই।

–হতেও পারে আপনি সে,আমাকে যেতে না দিয়ে অনেক বড় উপকার করেছেন।আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।

–মানে।

অধরা কিছু বলতে যাবে।তখনি একটি ছোট গোলাকার লাল আলো এসে তাঁদের দুজনের উপরে এসে পড়লো।অধরা আহান কে নিয়েই নিচে শুইয়ে পড়ল।

–কি হলো নিচে শুইয়ে পড়লে কেনো।

অধরা আহানের কানে কানে বলল।

–ভাবছি জামাই এর সাথে বাসর করি নাই।আজ রাতে এই ময়লার মধ্যে বাসর করবো।কেমন হবে।

অধরার কথায় আহান কেমন জানি লজ্জা পেলো।আস্তে করে বলল।

–এই ময়লার মধ্যে লাল আলো।

–এই ময়লার মধ্যে লাল আলো মানে।বলল অধরা।

–তুমি দেখলে অধরা কেউ আমাদের ছাঁদে টার্গেট লাইট দিয়ে টার্গেট করছে।

–আরে না সামনে বাসায় একটা টাকলা কাকু আছে।ওনার বিয়ে হয় নাই।আমরা প্রেম করছি।তাই ওনার সয্য হচ্ছে না।তাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।কোনো কথা বলবেন না।শুয়ে শুয়ে সিঁড়ির কাছে চলুন।

–আমি কেনো তোমার কথা শুনতে যাব।আমি এখন উঠে নিজের রুমে যাব।

–আমার কথা না শুনলে একদম জানে মেরে দিব।

–তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।

–কাজে প্রমাণ দেখিয়ে দিব।একটু আগে বাঁচিয়ে দিয়েছি।এখন আমি-ই মেরে দিব।

আহান অধরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত এক চাহনি।চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট।আহানের কাছে অধরাকে নতুন মনে হচ্ছে।

–কাল খালি অফিসে যাই।তোমাকে আমি দেখে নিব।বলেই হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ির কাছে চলে গেলো।অধরা’ও আহানের পিছু পিছু গেলো।

আহান সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর বকবক করছে।বেশি কথা বলা অধরা একদম পছন্দ করে না।এই ছেলে তো রীতিমতো তার মাথা খেয়ে দিচ্ছে।অধরা অদ্ভুত ভাবে পেছনে তাকালো।তারপরে বলল আহান পালান ভূত বলেই দৌড়ে দিলো।

–অধরা দাঁড়াও আমাকে রেখে যেও না।আমার ভয় লাগে।বলে’ই সেও দৌড় দিলো।তখন কষ্ট থেকে এসেছিলো আহান।তেমন কিছু মনে হয় নাই।কিন্তু অধরা এসে তাকে বোঝানোর পরে হিতাহিত জ্ঞান আসছে।কেনো যে,আসতে গেলাম।

অধরা রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।আহান খুলতে বললেও খুলছে না।তখনি আকাশ আসে।

–আহারে দুলাভাই আপু ঘরে নিচ্ছে না তোমাকে।

–তুমি এখানে কি করছো এতরাতে।

–আমার রাতে অনেক ক্ষুদা লাগে।তাই জন্য তিতলি আপুকে বলছিলাম।তিতলি আপু আমাকে নুডলস রান্না করে দিচ্ছে।

আহান ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো।তারপরে বলল।

–আকাশ তুমি আমার সাথে মজা করছো।রান্না তা-ও আবার তিতলি করছে।এটাও আমার বিশ্বাস করতে হবে।

–তুমি আমার বান্ধবী লাগো আমি তোমার সাথে মজা করবো।

–আমাকে কি তোমার মেয়ে মনে হয়।যে,বান্ধবী বলে সন্মধোন করলে।

–সরি ভাইয়া।

–ঠিক আছে।নিজের রুমে যা-ও।

আকাশ কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

অধরা রুমে বসে ভাবছে।তার নানির মেয়ে তিন টা।একটা তার মা।আরেকটা স্বামীর সাথে আমেরিকায় থাকে।তাহলে আরেকটা মেয়ে কোথায় থাকে।এটা তো আগে কখনো মাথায় আসে নাই।তার নানি’কে বলতে হবে।তার নানি নিশ্চয় জানবে।এটা এতদিন মাথায় আসে নাই কেনো।ভিষণ অস্থিরতা কাজ করছে অধরার মাঝে।কেনো যে,এতদিন মাথায় আসে নাই।এই ছোট বিষয় টা।ভাবতে ভাবতে খেয়াল হলো।আহান দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।দরজা খুলে দেখলো আহান দরজার কাছে নেই।ড্রয়িং রুমে আসতেই অধরার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আকাশ,তিতলি,আহান তিন মিলে লুডু খেলছে আর নুডলস খাচ্ছে।অধরা তিতলির এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক।মনে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হে।অধরা কোনোকিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।

পরের দিন সকাল আশরাফুল চৌধুরী সবাইকে ডাকলেন।সবাই ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।তারপরে তিনি বলতে শুরু করলেন।

–আমি ঠিক করেছি।আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যাব।অধরা মা’র মন’ও খারাপ থাকে।ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে।আর সবাই মিলে ঘোড়াও হয়ে যাবে।এখন সবার মতামত চাচ্ছি।

–আমার অনেক দিনের শখ বাবা।আমি কক্সবাজারে ঘুরতে যাব।আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না বাবা।আমি ঠিক কতটা খুশি হয়েছি।বলল তিতলি।

–রোহান ক’টাদিন হলেই বলছে ঘুরতে যাবে।ওর বাবার কাজের জন্য নিয়ে যেতেই পারে না।গেলে খুব একটা খারাপ হবে না বাবা।বলল তিতির।

–তুমি যা ভালো মনে করো,তাই করো বাচ্চারা যদি খুশি হয়।তাহলে আমি’ও খুশি।বললেন মিসেস আফরোজা চৌধুরী।

–আমি যাব না।আমি সাঁতার জানি না।ওখানে অনেক পানি।আমার ভয় লাগে।বলল অধরা।

–আপাই এমন করে বলিস না।তুই ঘুরতে অনেক ভালোবাসিস।আমি জানি কক্সবাজারে যাওয়ার তোর কতটা ইচ্ছে ছিলো।এখন তুই না করতে পারবি না।

–বাবা ঘুরতে যাবে।সাথে ঝগড়াটে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার।দেখবে ওখানে গিয়েও সবার ঝগড়া করছে।বলল আহান।

–আপনি আমাকে ঝগড়াটে বললেন।বলল অধরা

–আমি কি একবারো তোমার নাম উল্লেখ করেছি।কোথায় আছে না।পড়লো কথা সবার মাঝে যার কথা তার মনে বাজে।সেই অবস্থা হয়েছে তোমার।এতগুলো মানুষ থাকতে তোমার কেনো মনে হলো আমি তোমাকে বলছি।তুমিই বা আমার কথা ধরলে কেনো।

–আমি ভাতমাছ খাই।ফিডার খাই না যে,এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারবো না।

–তোমার যেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি যাবে না,এমন করে পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছো কেনো।

–মিথ্যা কথা বললেন কেনো।আমি কোথায় আপনার পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছি।দেখাইতে না পারলে এবার সত্যি সত্যি আপনার পায়ের ওপরে উঠে দাঁড়াবো।

–কি ঝগড়াটে মেয়ে রে বাবা।এখন তো তোমার সাথে পারবো না।তুমি খালি অফিসে আইছো।তখন তোমাকে দেখাবো মজা।

–আপনি-ও এটা মনে রাখবেন।অফিস শেষ করে দিনশেষে আপনাকে আমার কাছেই আসতে হবে।তখন আপনাকে কে বাঁচাবে।বলেই গটগট করে চলে গেলো অধরা।

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হাঁসছে।

–আমি ঠিক করেছি,আমরা সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠবো।তাহলে সকালের মধ্যে পৌঁছাতে পারবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আচ্ছা বাবা তাহলে আমরা সবকিছু গোছগাছ করে নেই।চল আকাশ বলেই চলে গেলো তিতলি।

সবাই যে,যার মতো চলে গেলো।আশা বাপের বাড়ি গেছে।আশাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হলো।আহানের বড় ভাই অফিস থেকে ছুটি নিলো।সবাই আনন্দে গোছগাছ করছে।আহান ও অধরার পিছু পিছু অফিসে চলে গেলো।মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

–অধরা কাজ করছিলো।তখনি আহান নিজের রুমে ডাকে।অধরা অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

–জ্বী বলুন স্যার আমাকে কি করতে হবে।

–বেশি কিছু না।পা আর মাথাটা ব্যাথা করছে একটু টিপে দিবে।

–স্যার আপনার গলা ব্যাথা করে না।

–কেনো।

–তাহলে আপনার গলাটা একটু টিপে দিতাম।

আহান গলা চেপে ধরে বলল।

–কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা।অধরা তুমি ভুলে গেছো।আমি তোমার কে।

–আপনি আস্ত একটা বলদ।চার পা আলা দেব।ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা।আর আমার একমাত্র অফিসের বস।

–কিছু বললে!

–সরি স্যার।

অধরা কোনো কথা না বলে আহানের মাথা টিপে দিতে লাগলো।ইচ্ছে করছে গলাটা একটু টিপে দেই।তাহলে শান্তি লাগতো।অধরার বিরক্তি দেখে আহান মনে মনে হাসলো।ত্রিশ মিনিট পরে আহান বলল।

–যা-ও আমার ক্ষুদা লাগছে।আমার জন্য হালকা কিছু খাবার নিয়ে আসো।অধরা চুপচাপ খাবার নিয়ে আসতে চলে গেলো।আজ খালি বাসায় ফিরুক।তারপরে মজা দেখাবো।আহান অধরার জন্য অপেক্ষা করছিলো।তখনি আশরাফুল চৌধুরী ফোন করলেন।

–আজকে দুপুরে বাসায় চলে এসো আহান।এটা বলার জন্য ফোন করেছিলাম।

–আচ্ছা বাবা চিন্তা করো না।

–এই নিনি আপনার খাবার।

–তুমি আমার রুমে অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করলে কেনো।আবার দরজার কাছে যা-ও।তারপরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে।

অধরা বিরক্ত হয়ে আবার গেলো।অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলো।আহানের খাওয়া শেষ হলে সেখানে থেকে বেড়িয়ে আসলো।

দুপুরের দিকে সবাই যে,যার মতো খাওয়া দাওয়া করছে।অধরা নিজের মতো কাজ করছে।আহান এসে বলল।

–চলো বাসায় যাব।

–এখনি কেনো।

–সেই কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিব।

–আমি যাব না।আমার অনেক কাজ পরে আছে।

–তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলছো।

–সরি স্যার।তারপরে সবকিছু গুছিয়ে অধরা আহানের সাথে বাসায় ফিরে গেলো।

আহান গোসল করার জন্য জামাকাপড় ওয়াশরুমে রেখে আসলো।বেলকনিতে বসে বসে ফোন চালাচ্ছে।এই সুযোগে অধরা আহানের জামাকাপড় সরিয়ে ফেললো।আহান আসছে না দেখে অধরা নিজেই গোসল করার জন্য ওয়াশরুম যাবে।তখনি আহান আসে।হয়তো অধরার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

–চলে আসলেন পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য বলল অধরা।

আহান কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।শরীরে কয়েক মগ পানি ঢালতেই খেয়াল করলো তার জামা কাপড় নেই।আরে এখানেই রেখে গিয়েছিল।গেলো কই।ওয়াশরুম থেকে চিৎকার করে বলল।

–অধরা তুমি আমার জামা কাপড় সরিয়েছো।

অধরা কোনো উওর দিলো না।দেখ ব্যাডা কেমন লাগে।অফিসে আপনি আমার বস হতে পারেন।আপনার রাজত্ব শুধু মাত্র অফিসে।এখন আপনার কি হবে আহান চৌধুরী।বাসায় তো আপনার হুকুম চলবে না।উওর না পেয়ে আহান আবার বলল।অধরা এবার উত্তর দিলো।

–সর্বনাশ আহান চৌধুরীর জামা কাপড় চুরি হয়ে গেছে।বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিছু করে নাই।

–দেখো মজা করো না।আমার জামাকাপড় দাও।সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠতে হবে।এখন গোসল করে আমি একটু ঘুমাবো। আমার ঘুমের দরকার আছে।

–দিতে পারি একটা শর্ত আছে।আপনি আগে আমাকে সরি বলুন।

–কেনো কিসের জন্য সরি বলবো।

–সকালে আপনি আমাকে ঝগড়াটে বলছিলেন।

–আচ্ছা বলবো।তুমি একহাতে জামাকাপড় দিবে।আমি তোমাকে সরি বলবো।

অধরা জামা কাপড় দিতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত টেনে ধরে ওয়াশরুমের মধ্যে ফেলে দিলো।তারপরে বালতির পানির মধ্যে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য অধরার মুখ চেপে ধরলো।অধরাকে ছেড়ে দিতেই অধরা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।আহান জামা কাপড় নিয়ে চলে যেতে লাগলে অধরা পা বাঁধিয়ে আহানকে ফেলে দিয়ে বলল।

–অধরার সাথে ধোঁকা বাজি।এবার আপনি দেখবেন আহান চৌধুরী আপনাকে আমি কি করি।

–তুমি আমার কচু করবে।তুমি আমার সাথে মারামারি লাগবে নাকি।যে,ভাবে তাকিয়ে আছো।

–দরকার পড়লে তাই লাগবো।

–ওকে দেখা যাক,কে জিতে।আমি তোমাকে হারিয়ে দিব।

আহান অধরার দিকে এগোতে যাবে।তখন অধরা সরে যায়।আহানের মাথা গিয়ে বালতির সাথে বাড়ি খায়।

অধরা মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বলল।

–আহারে বেচারা আহান চৌধুরী মারামারি শুরু করার আগেই টুস।আহান উঠতে যাবে।তখনি অধরা আহানকে ফ্লোরে শুয়ে আহানের পিঠের উপরে শুয়ে পড়ে।

–আম্মু তোমার ছেলেকে বাঁচাও।একটা হাতি এসে তোমার ছেলের উপরে পড়েছে।

–আমাকে কোন দিক দিয়ে আপনার হাতি মনে হয়।

–সব দিক দিয়ে।এখন আমার পিঠ থেকে আল্লাহর রস্তে নামো।

–আগে হার শিকার করবেন তারপরে।

–আমি চাইলে কিন্তু তোমাকে ফেলে দিতে পারি।ভালো ভাবে বলছি সরো।

–সরবো না।পারলে ফেলে দিয়ে দেখান।

আহান হাত বাড়িয়ে ঝরনা ছেড়ে দিলো।মুখে উপরে পানি পড়তেই অধরা কাত হয়ে গেলো।সাথে সাথে আহান হালকা উঠে পর।ফ্লোরের সাথে অধরার এক চেপে ধরলো।অধরার এক হাত অধরার পিঠের নিচে।

–এখন কোথায় যাবেন মিসেস অধরা চৌধুরী।এতক্ষণ তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলেন।এবার আপনাকে কে বাঁচাবে।

আহানের চুল থেকে টপ টপ করে পানি ঝরে অধরার মুখে পড়ছে।অধরা পিঠের নিচে থেকে এক হাত বের করে।আহানের চুলগুলো টেনে নিচে শুয়ে ফেলতে চেয়েছিলো।কিন্তু উল্টা হয়ে গেলো।আহান সোজা অধরার গায়ের উপরে পরে গেলো।

–তোমার এত সাহস আমার চুল টেনে আমাকে ফেলে দিতে চেয়েছিলে।এখন যদি তোমার একটা চুলও আমি আস্ত না রাখি।অধরার কানের কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল আহান।আহানের এমন শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো অধরার মনে ঝড় তুলে দিয়েছে।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার।ধীর কণ্ঠে বলল।

–দেখি সরুন।ঠান্ডা লাগছে আমার।

–সরবো না।পারলে আমাকে সরিয়ে দেখাও।

–ভালো ভাবে বলছি।

–সরবো না।

অধরা কোনো কথা না বলে আহানের গলায় নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দিলো।সাথে সাথে আহান লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

–দেখছেন কথা না শুনলে কি করে কথা শোনাতে হয়।

–পেতনী সত্যি সত্যি আমাকে খেয়ে ফেলবে নাকি।মা’রে কি জোরে কামড়ে দিয়েছে।লাল হয়ে গেছে।এখন আমি সবাইকে মুখ দেখবো কি করে।বলেই দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।অধরা কোনো কথা বললো না।এটাই সুযোগ পালিয়ে যাওয়ার।অধরা উঠে দাঁড়ালো দরজা খুলতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত ধরে অধরার দিকে এগোতে লাগলো।আহান কি করতে চাইছে।তা বোঝার চেষ্টা করছে অধরা।আহান অধরার অনেক টা কাছে চলে এসেছে।অধরা কিছু বলতে যাবে।আহান অধরাকে ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে।বাহিরে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা বাহিরে থেকে লাগিয়ে দিলো।

–হারামি ছেলে একটা।এই ছিলো তোর মনে।আমার জালে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলো।একবার খালি বের হই তারপরে আছে।

দরজার ওপাশ থেকে আহান বলল।তুমি হার শিকার করলে আমি দরজা খুলে দিব।এর আগে না।এখন তুমি ঠিক করো তুমি কি করবে।

–আচ্ছা আমি হার শিকার করলাম।দরজাটা খুলে দিন।আহান কাপড় চেঞ্জ করে এসে দরজা খুলে দিলো।অধরাও চেঞ্জ করে ফেললো।

সন্ধ্যা বেলা সবাই যে,যার ব্যাগ নিয়ে নিচে আসলো।

–সবাইকে দেখছি।অধরাকে তো দেখছি না।অধরা কোথায়।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–অধরা ঘুমিয়ে ছিলো বাবা।আসছে।ওর একটু দেরি হয়ে গেছে।বলল আহান।তারপরে অধরা আসলে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়ল।

চলবে…..
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here