তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -৩৭+৩৮

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–এতক্ষণ লাগে তোদের আসতে,আপন সেই কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।বলল তিতির।

নিমিষে-ই আহানে’র হাসোজ্জল মুখে মেঘের আধার ঘনিয়ে এলো।বহুকষ্টে নিজের রাগ সংযত করে যাচ্ছে।ধীর পায়ে আহান বাসার ভেতর প্রবেশ করলো।অধরা আহানে’র পাশে দাঁড়ালো।আপন এসে দৌড়ে আহান’কে জড়িয়ে ধরে বলল।

–কেমন আছিস ভাই আমার।আমাকে কি ভুলে গেছিস।এখনো আমার ওপরে অভিমান জমিয়ে রেখেছিস।আহান ধাক্কা দিয়ে আপন’কে দূরে সরিয়ে দিলো।

–আমাকে ছুঁইয়ে দেখিস না আপন।তুই আমাকে ছুঁইয়ে দিলে,ঘৃণায় আমার পুরো শরীর রি রি করে উঠে।এখন-ই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা’।

–কি রে’ আহান তুই এমন করে কথা বলছিস কেনো আপনে’র সাথে,ছেলেটা কতদিন পরে আসলো বল তো।কি রে আপন তুই এতদিন কোথায় ছিলি।আপনে’র প্রতি তিতরে’র ভালোবাসা-ই হয়ে উঠলো বিষ।আহান নিজে’র নিয়ন্ত্রণ ক্ষনে ক্ষনে হারিয়ে ফেলছে।অধৈর্য হয়ে নিজে’র প্রাণ প্রিয় বোনকে বলে’ই ফেললো।

–তোমার যে,আজ শশুর বাড়ি যাওয়া’র কথা ছিলো।তা গেলে না যে’।

আহানে’র মুখে এমন কথা শুনে,তিতির অবাকে’র শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।সে,সত্যি দেখছে।তার প্রাণ প্রিয় ভাই তাকে এমন কথা বলল।আহান সে,দিকে পাত্তা না দিয়ে আপনে’র কলার ধরে শাসিয়ে বলল।

–রাসকেল কোন সাহসে,চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করেছিস।এখন-ই বেড়িয়ে যা’।দারোয়ান চাচা তোকে কিভাবে বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে দিলো।আমি বলে ছিলাম না।আপন নামের কোনো ব্যক্তি চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করবে না।তবে কেনো এই জানোয়ারটা’কে বাসার মধ্যে নেওয়া হলো।

অধরা ড্যাব ড্যাব করে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।সম্পূর্ণ নতুন আহান’কে দেখছে।এটা কি সেই আহান একদম শান্তি-শিষ্ট খুব সহজে রেগে যায় না।অধরা’র ভাবনার মাঝে-ই আপন লালসার দৃষ্টিতে অধরা’র দিকে তাকায়।আহানে’র কাছে এসে বলল।

–এটা কে’ রে’ আহান নিশ্চয়ই তোর বউ অধরা তাই না।দেখতে মাশাল্লাহ রুহি’র থেকে-ও দিগুন সুন্দরী।তোর বউ আমাকে বুকের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে দিলো রে’।এই দেখ আমার বুকের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।তোর বউকে আমার চাই।কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে আহান আপনে’র গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।গলা চেপে ধরে বলল।

–জানোয়ার,একদম এক ভুল দ্বিতীয়বার করার চেষ্টা করিস না।প্রথমবার ছেড়ে দিয়েছি।এবার জানে মেরে ফেলবো।তুই যে,চোখ দিয়ে আহানে’র প্রাণে নজর দিয়েছিস।আজ আমি তোর দু-চোখ উপরে ফেলবো।

আপন আহানে’র কথার উত্তর দিতে পারলো না।খুব শক্ত হাতে-ই আহান গলা চেপে ধরেছে।আপনে’র অর্ধেক জিভ বের হয়ে এসেছে।এখনই আহান’কে না থামালে,আপনে’র মৃত্যু অনিবার্য।অধরা ধরতে গেলে,আহান অধরা’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।এতটাই হিংস্র হয়ে গেছে আহান।আহানে’র এমন হিংস্রতা দেখে বাড়ির প্রতিটি মানুষের কলিজায় দাগ কেটে গেলো।আহান আপন’কে ছেড়ে দিতেই আপন কাশতে কাশতে নিচে পড়ে গেলো।মুখ দিতে রীতিমতো রক্ত উঠতে,শুরু করে দিয়েছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আপন।বাসার সবাই নীরব দর্শকের মতো ভূমিকা পালন করছে।আহানে’র রাগ সম্পর্কে বাসার সবাই বেশ অবগত।ছেলেটা খুব সহজে রাগে না।আপনে’র সাথে কি এমন হয়েছে।যার,জন্য ছেলেটা এতটা হিংস্র হয়ে উঠলো।হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে,তিতির দৌড়ে এসে,
আপন’কে টেনে তুলল।তারপরে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো।আহান চাকু হাতে ড্রয়িং রুমে আসতে-ই আপন’কে দেখতে না পেয়ে বিকট শব্দ করে,চিৎকার দিয়ে উঠল।কেঁপে উঠলো চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোণা।ড্রয়িং রুমে’র কাঁচের টেবিল’টা লাথি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো।কয়েক মিনিটে’র মধ্যে পুরো ড্রয়িং রুম তছনছ হয়ে গেলো।

–আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে কাজ-টা একদম ঠিক করলে না আপু।এর পরিনাম খুব ভয়াবহ হবে।আহানে’র শহরে বেইমান প্রবেশ নিষিদ্ধ।আজ তুমি সেই বেইমানে পালাতে সাহায্য করলে।আজ আমার অধরা’র দিকে কুনজর দিয়েছে।ওর চোখ তুলে ফেলতাম।কেনো করলে আপু।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না আপু।কখনো না।বলে-ই আহান নিজের রুমে চলে গেলো।হাসোজ্জল বাড়িটা নিমিষে-ই স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারো মুখে কোনো কথা নেই।পিনপিনে নীরবতা চলছে ড্রয়িং রুমে,সবার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছে।অধরা’র কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।তার শান্ত-শিষ্ট বরটা’র মাঝে-ও এতটা হিংস্রতা লুকিয়ে আছে।কই আগে তো কখনো প্রকাশ করে নি।আহানে’র ভালোবাসা পরিমান এতটাই গভীর।এতটা ভালোবাসা মানুষের মধ্যে।এত ভালোবাসা আমার জন্য লুকিয়ে রেখেছে।কই কখনো প্রকাশ করে নি তো’।যে,ছেলে তার বউয়ের দিকে কুনজরে তাকানো’র শাস্তি এভাবে দিতে পারে।কেউ যদি তার বউ’কে ছুঁইয়ে দেয়।তাহলে তার কি অবস্থা হবে।ভাবতে-ই অধরা’র পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।নীরবতা কাটিয়ে আশরাফুল চৌধুরী বললেন।

–ড্রয়িং রুম’টা পরিষ্কার করিয়ে দাও।ছেলেটা আমার এত রেগে গেলো কেনো”?আপন কানে কানে কি জানি বলল।শুনে’ই রেগে গেলো।সুখের সংসারে আবার নতুন অশান্তি চলে এলো।এখন আহান’কে কেউ বিরক্ত করবে না।মাথা ঠান্ডা হলে,আস্তে ধীরে শুনে নিব।সবাই সন্মতি জানালো।সবাই মিলে,ড্রয়িং রুম পরিষ্কার করে নিলো।আজ কারো মুখে কোনো কথা নেই।সবাই ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে বসে আছে।আহান ওপরে গিয়ে দরজা লাগিয়েছে।আর রুম থেকে বের হয় নাই।ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁই ছুঁই আহান দরজা খুলছে না।দেখে,অধরা’র মনে অজানা ভয় ধরা দিলো।দৌড়ে গেলো আহানে’র দরজার সামনে।নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না।

–আহান দরজা খুলুন।সেই কখন ওপরে এসেছেন।প্লিজ দরজা খুলুন।আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।এভাবে নিজে’কে কষ্ট দিবেন না।কি হয়েছে আমাকে বলুন।আমি আছি না,আপনার সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দিব।একবার শুধু দরজা’টা খুলুন।

জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চিৎকার করে কথাগুলো বলছে।আহানে’র কোনো সাড়াশব্দ নেই।অধরা’র মনে ভয় জেঁকে বসেছে।রেগে গিয়ে বলল।

–আপনি দরজা খুলবেন।নাকি আমি দরজা ভেঙে ফেলবো।

এবার’ও আহানে’র কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না।অধরা’র কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে,সবকিছু কেমন জানি বিষাক্ত লাগছে অধরা’র কাছে।দরজা ধাক্কিয়ে নিস্তজ হয়ে,নিচে বসে পড়ল অধরা।সময়ে’র সাথে কান্নার বেগে বেড়ে চলেছে।সবাই এসে,আহান’কে ডেকে গেলো।কারো ডাকে সাড়া দেয় নি আহান।কয়েক বছর আগে আহান এমন করতো।যখন রুহি চলে গিয়েছিল।আজ আবার’ও এমন পাগলামি করছে আহান।তবে কি আহানে’র পাগলামি রুহিকে নিয়ে নয়।অন্য কিছু নিয়ে।কি সেটা কেউ রহস্যের সমাধান করতে পারলো না।অধরাকে সবাই মিলে কত করে বোঝালো।সকালে আহান ঠিক দরজা খুলবে।আজকে’র রাতটা অন্য রুমে পার করে দাও।অধরা মানতে নারাজ জেদ ধরে।আহানে’র রুমে দরজা’র কাছে বসে রইলো।ঘড়ির কাটা প্রায় রাত তিনটা ছুঁই ছুঁই,আহান দরজা খুলে বাহিরে আসলো।চোখ গেলো দেওয়ালে’র সাথে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকা অধরা’র দিকে।বুকের ভেতরে কেমন জানি মোচর দিয়ে উঠলো আহানে’র।একটা জানোয়ারে’র জন্য নিজে’র প্রিয় মানুষ গুলো’কে কষ্ট দিলো।আহানে’র চোখ গুলো ভীষণ ভাবে লাল হয়ে আছে।চোখ মুখ ফুলে উঠেছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।বিধ্বস্ত চেহারা’র নিয়ে অধরা’র পাশে এসে বসলো।দু’বার আস্তে করে ডাক দিলো আহান।কিন্তু অধরা’র থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না।কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা।আহানে’র আর ইচ্ছে হলো না।মেয়েটাকে জাগিয়ে তুলতে।অধরা’কে কোলে তুলে নিলো।রুমে এসে অধরা’কে শুইয়ে দিলো।অধরা’র পড়নে এখনো বোরকা পড়া আছে।আহান খুব যত্ন সহকারে হিজাব আর বোরকা খুলে দিলো।অধরা একটু নড়েচড়ে উঠলো।আহান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।তারপরে একটা পাত্রে পানি নিয়ে এসে,অধরা’র মুখ মুছিয়ে দিতে লাগলো।মেয়েটা প্রচুর কান্না করছে।চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছে।কিন্তু তার দাগ স্পষ্ট রয়ে গেছে।আহান অধরা’র মুখ মুছিয়ে দিয়ে,নিজে’ও অধরা’র পাশে শুইয়ে পড়ল।পরের দিন সকাল বেলা আহানে’র আগে ঘুম ভাঙলো।সবার আগে গেলো তিতিরে’র রুমে,কালকে নিজের প্রান প্রিয় বোন’কে খুব বেশি-ই কষ্ট দিয়ে ফেলছে।দরজার কাছে এসে বলল।আপু আসবো।তিতির তখন ব্যাগ গুছাচ্ছিলো।এত সকাল বেলা আহান’কে দেখে বেশ অবাক হলো।শান্ত কণ্ঠে বলল।

–আয়’।

আহান রুমে’র মধ্যে এসে,সোজা নিজের বোনে’র কোলে মাথা রাখলো।ভাঙা গলায় বলল।

–আপু তুমি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছো।আমি তোমাকে ওভাবে বলতে চাই নাই।কালকে আপন’কে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।তুমি প্লিজ চলে যেও না আপু।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু।এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে যেও না আপু।

–বিয়ে হয়ে গেছে।পর হয়ে গেছি আমি।এখন তোরা আমার কেউ নস।আমি তোদের বাড়ির মেহমান।দু’দিনের জন্য এসেছি।ঘুরে চলে যাব।তুই তো ভুল কিছু বলিস নাই।আমি কিছু মনে করি নি’।তোর দুলাভাই আসছে।আমাকে তৈরি হতে দে’।

–আপু তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।তুমি জানো না।আমি কারন ছাড়া কিছু করি না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আপু।ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করে দিলো আহান।ছেলেদের কান্না যে,বড়ই বেমানান।আহানে’র কান্না তিতিরে’র মনে আঘাত করলো।যতই হোক ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে আহান’কে।পৃথিবীতে মায়ের পরের স্থানটি হলো বড় বোনে’র।এত আদর,যত্ন দিয়ে ভাইকে মানুষ করেছে।ভাইয়ের কান্না সয্য করতে পারলো না তিতির’।ভাইয়ে’র মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল।

–হয়েছে আমি তোকে মাফ করে দিয়েছি।তুই না বললে-ও এখন থেকে আমি এই বাসায়-ই থাকবো।কালকে তুই ওভাবে বলার পরে খুব কষ্ট হয়েছিল জানিস।রাগ করে ভাড়া বাসা ঠিক করেছি।সেখানে গিয়ে’ই থাকতাম।তুই জানিস তোর ভাইয়ের নিজের কোনো বাসা নেই।তোর ভাই তার বড় আব্বুর জমির ওপরে থাকতো।এখন তাড়া এসেছে।তাদের আমানত তো তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

–এখন তাহলে তোমরা থাকবে কোথায়।

–কেনো তোর আর তোর বউয়ে’র ঘাড়ে বসে খাব।দুই স্বামী-বউ মিলে কামাই করিস।কম টাকা তো কামাস না।আমরা না একটু বসে বসে ধংস করবো।আহান হেঁসে দিয়ে বলল।

–তুমি আমার জীবনটা নিয়ে নিলে-ও আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না আপু।

–তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

–কি সারপ্রাইজ আপু।

–ঐ তো বলবো না।সময় হলে জানতে পারবি।এখন বল কালকে এমন পাগলামি করলি কেনো।তারপরে আহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবকিছু বলতে শুরু করলো।সবকিছু শুনে,তিতির স্তব্ধ হয়ে গেলো’।ছোট বেলা থেকে,ভাই আমার দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষে রেখেছিলো।সময় মতো ছোবল বসিয়ে দিলো।আমার ছোট আহান ভেতরে ভেতরে এতটা কষ্ট পেয়েছে।আর আমরা গুন অক্ষরে-ও টের পেলাম না।আমরা মনে,করতাম রুহি’কে হারানোর জন্য আহান এমন করেছে।তিতির ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

–আমাকে তুই মাফ করে দিস ভাই।আমি না জেনে তোকে ভুল বুঝেছি।আমার জন্য কাল আপন তার শাস্তি পাই নি’।আমি একটা বেইমান’কে কাল পালাতে সাহায্য করেছি।আবার অধরা’র দিকে বাজে নজর দিয়েছে।কাল তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস।এভাবে সব সময় অধরা’কে আগলে রাখিস ভাই।অধরা’র কথা মনে হতে-ই আহানে’র মনে হলো অধরা কাল রাত থেকে না খেয়ে আছে।

–আপু তুমি আমাকে মাফ করে দিয়েছো তো’।

–আমি কি’ তোর ওপরে রাগ করে থাকতে পারি।

–আমাকে ছুঁইয়ে কথা দাও।তুমি এ’ বাড়ি থেকে চলে যাবে না।তিতির হেঁসে আহান’কে কথা দিলো’।

–আপু অধরা কাল রাত থেকে না খেয়ে আছে।আমি অধরা’কে কিছু খাইয়ে দিয়ে আসি।বলে-ই রুমে ত্যাগ করলো আহান।খাবার নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো আহান।অধরা উঠে বসে আছে।দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।চোখ-মুখ ফুলে গেছে।আহান ব্যস্ত হয়ে অধরা’র কাছে গেলো’।অধরা’কে ছুঁইতে যাবে,তখনই অধরা ঝাড়ি দিয়ে আহানে’র সরিয়ে দিলো।আহান হালকা হাসলো।

–আমার অভিমানী’র বুঝি বড্ড অভিমান হয়েছে আমার ওপরে’।

অধরা কোনো কথা বলল না।আগের ন্যায় নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।আহান আরো একটু এগোতে চাইলে,অধরা সরে বসলো।আহানে’র মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি এসে হানা দিলো।

–জানো অধরা পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসছে।ভাড়াটিয়া আন্টি’র মেয়েটা কি যে,সুন্দর ভাবছি কি’।আর বলতে পারলো না।অধরা কান্না করা বাদ দিয়ে ভেজা চোখ নিয়ে আহানে’র দিকে তাকিয়ে আছে।রেগে বলল।

–তাহলে তার কাছেই যান।আমি আর আপনার কাছে থাকবো না।আমি আজ’ই নানিদের বাসায় চলে যাব।বলে’ই হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।কালকে এমনিতেই আহানে’র চিন্তায় অধরা’র প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তার ওপরে আহানে’র এমন ধরনের মজা অধরা আর নিতে পারলো না।অধরা বিছানা থেকে নেমে যেতে লাগলে।আহান খপ করে ধরে ফেললো।

–কোথায় যাচ্ছো।অধরা’র কাছে থেকে কোনো উওর আসলো না।কান্নার জন্য মেয়েটা ঠিক মতো নিশ্বাস-ও নিতে পারছে না।আহানে’র আর সয্য হলো না।তার অভিমানী’কে পরম যত্নে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।অধরা খুব শক্ত করে-ই আহানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।ছেড়ে দিলে-ই আহান পালিয়ে যাবে।অনেক কষ্টে অধরা’কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খেতে রাজি করাতে সক্ষম হলো আহান।ভালোবাসা পেলে কে-ই বা না রাজি হয়ে থাকতে পারে।আহান নিজের হাতে যত্ন করে অধরা’কে খাইয়ে দিচ্ছে।অধরা চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছে।মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রাখছে অধরা।আহান বহু কষ্ট নিজের হাসি চেপে রেখেছে।মেয়েটা’র হাসলে মেয়েটা আর একটা দানা’ও মুখে নিবে না।
#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সময়ে’র নিয়মে সময় চলেছে।সময় কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।স্রোতের মতো নির্ধারিত সময়ে বেয়ে চলে যায়।আহান আর অধরা’র বিয়ে’র আজ ছয়মাস পূর্ণ হলো’।বউ আমার রাগ করে,নানি বাড়ি চলে,গেছে।বউ’কে নিরামিষ বলা’ই ভেবে ছিলাম।আমিষে পরিনত হবে।আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিয়ে,নানি’র বাসায় চলে গেছে।তবু’ও ভালোবেসে দিবে না।আসলে-ই নিরামিষ বউ নিয়ে সংসার করছি।তবু’ও এই নিরামিষ বউটা-ই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ।এই নিরামিষ মেয়েটা’কে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে যায়।তাই যাচ্ছি অভিমানীর অভিমান ভাঙাতে।কলিং বেলে’র শব্দ হতে-ই আকাশ এসে দরজা খুলে দিলো।দুলাভাই’কে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল।

–ভাইয়া ভেতরে এসো।কতদিন পরে এলে বলো তো’।আমাদের ভুলে গেছো।

–আমার যে,একটা পাকনা শালা আছে।সে,কথা কি আমি ভুলতে পারি।বলে-ই চকলেটে’র বক্স বের করে দিলো।আকাশ খুব খুশি হলো,ছেলে মানুষ হয়ে চকলেট পছন্দ করে আকাশ।অদ্ভুত লাগলে-ও সত্যি।মিনারা বেগম জামাই’কে দেখে এগিয়ে আসলো।

–বাবা তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো”?আকাশ তোর কান্ড জ্ঞান নেই।ভাইয়া’কে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস।

–না মা আকাশ দাঁড় করিয়ে রাখে নি’।আমি আকাশে’র সাথে কথা বলছি।কতদিন আসি না বলেন তো’।আপনারা কি খুব রাগ করেছেন।আমার ওপরে’।

–ছিঃ বাবা এভাবে বলছো কেনো”?মা হয়ে কি সন্তানে’র ওপরে রাগ করতে পারি।মিনারা বেগমে’র কথা শুনে,আহান মিষ্টি হাসি দিয়ে,তার সাথে নিয়ে আসা জিনিস গুলো মিনারা বেগমে’র হাতে ধরিয়ে দিলো।

–এসব নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো বাবা’।

–আমি আমার মা-ভাইয়ে’র জন্য নিয়ে আসতে পারি না।আপনারা কি আমার পরিবার না।

–হ্যাঁ ওরা-ই তোমার পরিবার আমি কেউ না।বলল রুবিনা বেগম।আহান রুবিনা বেগমে’র কাছে গিয়ে বলল।

–না গো’ ডার্লিং তুমি আমার সব’।এমন ভাবে বলো না।বুকের বা-পাশে লাগে।আমার যদি অপশন থাকতো।তাহলে অধরা’কে ছেড়ে তোমাকে’ই বিয়ে করে নিতাম।আহানে’র কথা শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো।এই কয়দিনে আহানে’র অধরা’র নানি’র বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠেছে।নিজে’র রুম থেকে সবকিছু শুনছিলো অধরা।রেগে বলল।

–আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার নানিকে বিয়ে করে নিলে-ই তো’ পারেন।

–এভাবে হেঁসো না ডার্লিং তুমি হাসলে,তোমার মুগ্ধতায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে।তোমার একটা হাসি আমাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।রুবিনা বেগম আহানে’র কান ধরে বলল।

–আমাকে এভাবে পটিয়ে লাভ নেই।যাকে গলানো’র দরকার,দেখো গিয়ে গলাতে পারো কি না’।জানি না মনে করেছো।দু’টি আবার ঝগড়া করেছো।যাও গিয়ে বউয়ে’র মান ভাঙা’ও।আহান সবার সাথে কুশল বিনিময় করে,অধরা’র রুমে’র দিকে গেলো।অধরা শাড়ী গুছিয়ে রাখছিলো।আহান গিয়ে সোজা অধরা’কে জড়িয়ে ধরলো’।অধরা রাগী দৃষ্টিতে আহানে’র দিকে তাকালো।

–পাশে’র বাসার আন্টির আমিষ মেয়ে’কে নিয়েই থাকতেন।হঠাৎ কি মনে,করে এই নিরামিষ মেয়ে’র কাছে আসলেন।

–আসার সময় পাশে’র বাসার আমিষ মেয়েটা’র সাথে দেখা হয়েছিল।মেয়েটা দেখতে কি মাশাল্লাহ’।

–হ্যাঁ তিন তলার ছেলেটা’ও জোস।একদম পুরাই আগুন।

আহান ভ্রু কুঁচকে অধরা’র দিকে তাকালো।মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলল।

–ছেলে মানে,তুমি কোন ছেলে’র কথা বলছো।তুমি ছেলেদে’র দিকে তাকিয়েছো।অধরা’র থেকে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াল আহান।দু’হাত পকেটে গুজে দিয়ে অধরা’র উত্তরে’র অপেক্ষা করছে আহান।

–হ্যাঁ আমাদে’র ছাদ থেকে তিনতলা দেখা যায় না।সেখানে নতুন ভাড়াটিয়া আসছে।একটা ছেলে-ও আছে।দেখতে একদম জোস।পুরা’ই আগুন।

–ছেলে দেখার জন্য তোমার ঐ দু-চোখ যদি না থাকে,তখন কি করবে অধরা।

–পাশের বাসার আন্টি’র মেয়ে’কে দেখার জন্য আপনাকে নিচে নামতে হয়।এখন নিচে নামার জন্য যদি আপনার পা’দুটি না থাকে।তখন আপনি কি করবেন।চৌধুরী সাহেব।

–শুনো পাশের বাসা’র আন্টির কোনো মেয়ে নেই।আমি মরিয়ম আন্টির মায়ের কথা বলছি।তুমি জানো ওনার বয়স কতো।পঁচাশি বছর বয়স।আর তুমি সত্যি সত্যি আমার কথা বিশ্বাস করে নিলে,তোমার মনে হয়।আমি ঘরে বউ রেখে অন্য মানুষে’র পেছনে ঘুরবো।

–আপনি-ও কিভাবে ভাবলেন,আমি ঘরে জামাই রেখে অন্য ছেলেদের দিকে তাকাবো।ছেলেটা’র বয়স মাত্র এগারো বছর।আকাশের সাথে পড়ে।দুজনের খুব ভাব হয়েছে।আমাদের বাসায় আসে।আকাশে’র সাথে খেলতে।দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ।তাই জন্য বললাম।আপনি আমাকে রাগিয়েছেন।আমি’ও আপনাকে রাগিয়েছি।হিসাব বরাবর।

–তাহলে এখন দৌড়ে আমার বুকে চলে আসো।

–আমিষ ছেলে হয়ে,নিরামিষ মেয়ে’র কাছে আসছেন।লজ্জা করছে না।

–সে,আমার কোনোদিনই ছিলো না।তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই।তোমার প্রিয় চকলেট নিয়ে এসেছি।খাবে নাকি আকাশ’কে দিয়ে দিব।বলে’ই পকেট থেকে চকলেট বের অধরা’র সামনে ধরলো।অধরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আহান আকাশ’কে ডাক দিলো।ছুটে এলো ছোট আকাশ।

–ভাইয়া আমাকে ডাকছো।

–চকলেট খাবে আকাশ।

–এটা আবার বলা লাগে ভাইয়া।বলে-ই আহানে’র হাত থেকে চকলেট নিতে যাবে।তখনই অধরা আকাশ’কে ধমক দিয়ে বলল।

–তুই খালি চকলেটে হাত দিয়ে দেখ’।তোর হাত আমি ভেঙে দিব।তোর কত চকলেট খাওয়া লাগে’।একটু আগে-ই না তোর ভাই তোকে এক বক্স চকলেট দিলো।সেগুলো এত তাড়াতাড়ি খেয়ে শেষ করে ফেললি।

–ধুর আপু কি যে,বলো না।ঐ কয়টা চকলেট খেয়ে পেট ভরে।অধরা আকাশে’র কান ধরে বলল।

–চকলেট কি পেট ভরে খাওয়া’র জিনিস।মা কি তোকে ভাত খেতে দেয় না।ভাত খাওয়া’র নামে নাম নেই।বাহিরে’র উল্টা পাল্টা খাবার খাওয়া’র বেলায় ওস্তাদ।

–চলো আকাশ বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।

–চলো ভাইয়া ঘুরে আসি।এই পাগলের কথা শুনো না।বলল আকাশ।

–আকাশ দেব একটা থাপ্পড় লাগিয়ে।দিন দিন সাহস খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে।

–ভাইয়া যতক্ষণ আছে।আমার কোনো ভয় নেই।চাইলে’ও তুমি আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না।

–হ্যাঁ আকাশে’র ভাইয়া থাকতে,আকাশে’র কোনো ভয় নেই।এমনিতে-ই নিরামিষ মেয়েটা’র কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে না।বলে’ই বিছানার ওপরে চকলেট গুলো রেখে চলে গেলো।

অধরা’র নানি রান্না করছিলেন।আকাশ আর আহান’কে বাহিরে যেতে দেখে বলল।

–ভরদুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি’।

–এই তো ডার্লিং একটু মোরে যাব।ঘুরে-ই চলে আসবো।তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো।

–আসার সময় আমার জন্য পান নিয়ে এসো।তাহলেই হবে।আর কিছু লাগবে না।

–পানখোর ডার্লিং আমার তুমি চিন্তা করো না।হুকুম যখন করেছো তখন সঠিক সময়ে,তুমি তোমার পান পেয়ে যাবে।দু’জন মিলে বেড়িয়ে পড়ল।

অধরা নিজে’র রুমে বসে বসে চিন্তা করছে।যে,কাজের জন্য আসলো।সে,কাজ-ই তো করা হলো না।আহান থাকলে নিজে’র কাজ সফল করবে,কি করে সে,ছেলেটা এমন হয়ে গেছে।বউ ছাড়া একটা দিন ভালো মতো থাকতে পারলো না।অধরা ক’টাদিন থাকার জন্য এসেছিলো।আহান তার পরিকল্পনা’তে পানি ঢেলে দিতে চলে এসেছে।এখন কি বুঝিয়ে আহান’কে বাসায় পাঠাবো।এক রাত মানুষটা আমাকে ছাড়া থাকতে পারলো না।যদি বলি একমাস আমাকে ছাড়া থাকতে হবে।তাহলে মনে হয় বউয়ে’র শোকে দেবদাস হয়ে যাবে ছেলেটা।যে,মেয়েটা’কে একটা সময় দেখতে পারতো না।এখন সেই মেয়েটা’কে এতটা ভালোবাসে কেনো’?ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।অপ্রিয় মানুষকে প্রিয় করে তুলে,এই প্রিয় হয়ে ওঠার অনুভূতিটা খুবই স্নিগ্ধ হয়।অধরা গোসল করে এসে,মায়ের রুমে এলো।

–মা তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।

–কি কথা মা’।

–মা শারমিন খালা কোথায়’।

মেয়ে’র কথায় চমকে উঠলেন,মিনার বেগম।কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো’।

–আমি জানি না।

–মিথ্যা কথা বলো না গো’ মা’।তুৃমি সবকিছু বলে দাও মা’।সবকিছু জানা আমার জন্য খুব দরকার।

–বললাম তো আমি জানি না।

–তবে সেদিন যে,তোমাদের বাসায় ডক্টর শারমিন’কে দেখলাম’।

–কবে দেখেছিস।মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর’।কিসব ভুলভাল বকছিস।ওটা তোর সাবিনা খালা ছিলো।তুই তো জানিস তোর শারমিন খালা আর সাবিনা খালা প্রায় একই রকম দেখতে’।

–তাহলে আমার বড় খালা কোথায় মা’।তোমরা না তিন বোন।সে,হিসেবে আমার বড় খালা কোথায়।

মিনারা বেগমে’র কলিজা কেঁপে উঠলো।মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।পুরো শরীরের রীতিমতো কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে।তবে সত্যিটা সামনে আসার সময় হয়ে গেলো।যে,ভয়টা এতদিন মাথায় বয়ে বেড়িয়েছেন।সেই ভয়টা তাকে এভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।

–তোর বড় খালা তার স্বামীর সাথে,আমেরিকায় থাকেন।জেনে শুনে তুই এমন প্রশ্ন করসিছ কেনো”?

–মিথ্যা বলছো মা তুমি।কেনো মিথ্যা কথা বলছো।আমি তোমার দু’টি পায়ে পড়ি মা’।সত্যি কথাগুলো বলে দাও না মা’।

মিনারা বেগম রেগে অধরা’কে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলল।

–এখন-ই আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যা’।তোর মুখ আমি দেখতে চাই না।মায়ে’র হালকা ধাক্কাতে’ও অধরা পড়ে যেতে লাগছিলো।আজকাল অধরা’র শরীরটা-ও খুব একটা ভালো যায় না।নিজে’কে খুব দুর্বল মনে হয়।খাবারে’র প্রতি অনীহা বেড়ে’ই চলেছে।আজকাল কিছু কিছু খাবারে’র গন্ধ’ও সয্য করতে পারে না।বমি আসে,সবকিছু জেনে’ও ক্লান্ত শরীরটা’র ওপরে জোর খাটিয়ে চলেছে অধরা।দেরি হয়ে যাবার আগে সবকিছু সামনে নিয়ে আসতে হবে।দেওয়াল আঁকড়ে কোনোরকম নিজে’কে রক্ষা করলো অধরা।অধরা’র এমন দুর্বল শরীর দেখে মিনারা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন।দৌড়ে মেয়ের কাছে আসলেন।

–খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলছি মা’।কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস।

–মনে’র আঘাতে’র কাছে,শরীরে’র এতটুকু আঘাত কিছু না মা’।যেদিন সত্যি কথা গুলো বলতে আসবে।সেদিন আমার সাথে কথা বলবে।তোমার সাথে অধরা আর কথা বলবে না মা’।তুমি ভালো থেকো।নিজের লড়াই নিজে-ই লড়তে জানে অধরা।বলে-ই নিজে’র রুমে দিকে যেতে লাগলো অধরা।হঠাৎ করে-ই অধরা’র মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।পরে যেতে নিলে,আবারো দেওয়াল আঁকড়ে ধরলো।মিনারা বেগম মেয়ে’কে আঁকড়ে ধরলে।অধরা আস্তে করে মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।মিনারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লো।আমি তোকে আর আকাশ’কে হারাতে পারবো না রে অধরা।আমি কিছুতে’ই তোকে সত্যি কথা বলতে পারবো না।ওরা আমার কাছে থেকে তোদের কেঁড়ে নিয়ে চলে যাবে।তোদের নিয়ে চলে গেলে,আমি কি নিয়ে বাঁচবো রে অধরা।আমার মনির-ও আজ আমার সাথে নেই।ডুকরে কেঁদে উঠলেন মিনার বেগম।

অধরা নিজে’র রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে পড়ল।অন্য দিনে’র তুলনায় শরীরটা আজ বেশি খারাপ লাগছে।হয়তো অতিরিক্ত টেনশনের কারণে।অধরা’র খেয়াল হলো সে,সকালে খায় নাই।সেজন্য হয়তো আরো বেশি খারাপ লাগছে।নিচে নামতে যাবে।তখন-ই চোখ যায়,আহানের দেওয়া চকলেট গুলোর দিকে।আনমনে হেঁসে উঠে অধরা।চকলেট গুলো নিয়ে খেতে শুরু করে।অধরা’র খুব ভালো লাগে,অধরা যখন অভিমান করে,আহান ছোট ছোট উপহার দিয়ে অধরা’র অভিমান ভেঙে দেয়।সুখ,দুঃখ,রাগ,অভিমা,ঝগড়া করে বেশ যাচ্ছে,তাদের সুখের সংসার।যতই সময় যাচ্ছে।অধরা’র ভয় ততই তীব্র হচ্ছে।আচ্ছা আহান তাকে ভুল বুঝবে না তো’।আহান যদি সবকিছু জানার পরে অধরা’কে ঘৃণা করে।যার চোখে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা দেখেছি।তার চোখে ঘৃণা দেখলে সইবো কেমনে,বাঁচতে পারবি না অধরা।গভীর চিন্তায় মগ্ন অধরা।

আহান ঘুরে এসে সোজা অধরা’র কোলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ল।হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে,আহানে’র দিকে তাকালো।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে আহান।অবাধ্য এলোমেলো চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে থেকো না।প্রেমে পড়ে যাবে।

–আমার বইয়ে গেছে।টো টো করা শেষ দু’জনের।দেখুন তো রোদের মধ্যে গিয়ে।চেহারা’র কি নাজেহাল অবস্থা করে নিয়ে এসেছেন।

–কেনো এখন বুঝি ভালো লাগছে না আমাকে।

অধরা আহানে’র কথা শুনে,হেঁসে বলল।

–আপনি যেমন-ই হন না কেনো’?আপনি সব সময় আমার কাছে সুন্দর।

শার্টের ওপরে’র দু’টো বোতাম খুলে দিলো আহান।প্রচুর গরম লাগছে।ক্লান্ত চোখে বলল।

–একটু স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারছো না।দেখছো জামাই ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।কোথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিবে।তা-না করে,আমার সাথে ঝগড়া করছো।কিছু জানো না তুমি।অধরা হেঁসে শাড়ির আঁচল দিয়ে আহানে’র মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলল।

–হ্যাঁ আমি কিছু জানি না।আপনি না-হয় আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে আপনার মনের মতো বানিয়ে নিবেন।মনে’র মতো মানুষ পাওয়া,সেটা ভাগ্য।আর নিজের মনের মতো বানিয়ে নেওয়াটা’ই হচ্ছে ভালোবাসা।

–তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে মনে হয় না।নিরামিষ বউ একটা।

–আপনি তো’ আমাকে ভালোবাসেন।আচ্ছা আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন।

–আমার ভালোবাসা’র গভীরতা মাপতে যেও না অধরা।আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপতে গিয়ে,তুমি সেই অতল গভীরে তলিয়ে যাবে।

–আপনি আমাকে কখনো ঘৃণা করবেন না তো’।কিছুটা ভীত হয়ে বলল অধরা।

–তোমার শরীরে’ ক্যান্সারে’র জীবানু পেলে-ও একজীবন কাটিয়ে দেওয়া’র প্রতিজ্ঞা করতে পারি।কিন্তু প্রতারণা’র গন্ধ পেলে এক সেকেন্ড’ও নয়।

আহানে’র কথায় পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।সমস্ত ভয় জেঁকে ধরেছে অধরা’কে।অধরা’র হাত কাঁপছে দেখে আহান অধরা’র হাত ধরে বলল।

–তোমার কি শরীর খারাপ অধরা’।তোমার পুরো শরীর কাঁপছে কেনো’?তুমি কি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করছো।তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো।আমি আছি না।তোমার কষ্টে’র ভাগ আমি নিতে পারবো না ঠিকি।কিন্তু তোমার হাজারো অশান্তির মাঝে,আমি তোমার শান্তি’র কারন হবো। কথা দিলাম।অধরা আহান’কে জড়িয়ে ধরে কান্না
করে দিলো।মানুষটা’ তাকে এতটা বুঝে কি করে।এই মানুষে’র ঘৃণা আমি কেমনে সইবো।এই মানুষটা’র থেকে ঘৃণা পাওয়া’র চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।অধরা’র কষ্ট কারন খুঁজে বের করছে পারছে আহান ঠিকি।কিন্তু অধরা’র এমন কষ্ট আহানে’র ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।মেয়েটা কি দেখতে পাচ্ছে না।তবে কেনো এত কষ্ট দিচ্ছে তাকে’।

চলবে…..

(সবাই রেসপন্স করবেন।🙂)
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here