#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_এগারো
নীলাভ্রর কপাল বেয়ে চুইয়ে র*ক্ত পড়ছে। চোখ গুলো ফুলে লাল টকটকে হয়ে আছে। অশ্রুসিক্ত চোখ। ঠোঁট কাপঁছে বেগতিক হারে। ব্যান্ডেজে পেঁচানো হাতটা শক্ত করে মুঠোয় বন্দি করে রেখেছে। চোখে, মুখে সে কি অসহায় ভাব? হৃদপিন্ড ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে নীলাভ্রর। বার বার চোখের সামনে বেলী আর রাফিনের চেহারা ভেসে উঠছে। সেই সকাল থেকে এখন অব্দি নিজের রুমে বসে আছে। ছেলেরা কাঁদতে পারেনা। দুমড়েমুচড়ে ভেঙে গেলেও কাঁদতে পারেনা। ভাঙা মন নিয়েও অভিযোগবিহীন সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে। নীলাভ্র আজ কাঁদছে না। শুধু বে’*হায়া চোখের অশ্রুগুলো ঝড়ছে। আটকাতে পারছে না। দুই বছর ধরে অজস্র কষ্ট, যন্ত্রণা বুকের ভেতর চা’পা দিয়ে রেখেছে। চাইলে প্রকাশ করতে পারেনি। চিৎকার করে উঠলো নীলাভ্র, সে কি হৃদবিদারক চিৎকার? পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠলো বুঝি সে চিৎকারে? বলে উঠলো,
“আমি পারছিনা রে বেলীপ্রিয়া। আমি সত্যি আর পারছিনা। ম’*রে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। আমি হেরে গেছি। সব পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। নতুন করে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারছিনা।”
বলে নিঃশব্দে কান্না করে উঠলো। নীলাভ্রর একেকটা নিশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে চারদিকের বাতাস। বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা। অনেক ক্ষণ কেটে গেলো এভাবেই। চোখের পানি টুকু মুছে নিয়ে নীলাভ্র বললো,
“আজ থেকে তুই আর আমার বেলীপ্রিয়া না। আজ থেকে তুই শুধুই আমার ‘ফুফাতো বোন ‘। শুধু বেলী।তুই তো দিব্যি ভালো আছিস? তাহলে, আমি কেনো পারব না। আমিও পারব। আমিও ভালো থাকব। খুব ভালো থাকব। প্রমিস”
বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
—
দুপুর দুইটা। কড়া রোদে খা খা করছে চারদিক। বেলীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। পুরো মুখে বিরাজ করছে ক্লান্তি। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আইরিন বেলীকে দেখে বলে উঠলো,
“এখানে একটু বস আমি ঠান্ডা পানি এনে দিচ্ছি।”
বেলী বারন করার জন্য কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সীমা ঠেস মে’রে বললো,
“ও কি এমন রাজ্য জয় করে ফিরেছে যে ওকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখাতে হবে? তোরা পারিস ও বটে।”
সীমার কথায় আইরিন কিছু বললো না। চুপচাপ ফ্রীজের দিকে পা বাড়ালো। বেলী সোফার মধ্যে বসে আঁচল দিয়ে ঘাম মোছার কাজে ব্যস্ত হলো। আইরিন ঠান্ডা এক গ্লাস পানি এনে দিতেই, বেলীর মুখে হাসি ফুটলো। পানি খেতে খেতে প্রশ্ন করলো,
“নীলাভ্র ভাই কি বাসায় ফিরেছে মেজো মামি?”
বেলীর প্রশ্ন করতে দেরি হলো কিন্তু সীমার গর্জে উঠতে দেরি হলো না। বললো,
“আমার ছেলেকে দিয়ে তোর কি কাজ?”
বেলী ছোট করে উত্তর দিলো,
“কিছুনা বড় মামি। এমনেই।”
এইটুকু বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রিতা এই সময় স্কুলে থাকে। বেলী রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। জোহরের নামাজ আদায় করে, ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিলো। মাথার মধ্যে সকালের ঘটনাটা বাজে ভাবে গেঁথে গেছে। নীলাভ্র কি ভাবলো? রাফিন কেনো ফিরে আসতে চাইছে? রাফিন হঠাৎ কেনো ক্ষমা চাইলো? এইসব ঘুরছে। যতক্ষণ রাকিব আর তানিশার সাথে থাকে ততক্ষণ অব্দি সব চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারে। বাসায় আসলেই রাজ্যের ডিপ্রেশন, অশান্তি ঘিরে ধরে। নীলাভ্রর শরীর এখন কেমন আছে? জানার জন্য অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে। মনের অস্থিরতা কাটানোর জন্য নীলাভ্রর রুমের দিকে গেলো। দরজায় নক করার কয়েক সেকেন্ড পর নীলাভ্র দরজা খুলেই সোজা প্রশ্ন করলো,
“এখানে কি চাই তোর?”
নীলাভ্রর হঠাৎ এমন রগচটা প্রশ্নে বেলী থতমত খেলো। শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি বাসায় ফিরলেন কখন? হাতের কি অবস্থা এখন নীলাভ্র ভাই?”
নীলাভ্র সাথে সাথে ধমকের স্বরে উত্তর দিলো,
“আমার খবর নেওয়ার জন্য কি তোকে আমি চাকরিতে রেখেছি?”
হঠাৎ অহেতুক আচরণ বেলী বুঝতে পারলো না। অসহায় চোখে তাকালো নীলাভ্রর দিকে। নীলাভ্রর চোখে বিরাজ করছে বিরক্ত। কি হয়েছে মানুষটার? কেনো এমন করছে? বেলী মনের জমানো প্রশ্ন গুলো আটকে রাখতে পারলো না। মুখ ফুটে বলে ফেললো,
“কি হয়েছে আপনার? কেনো এমন করছেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি নীলাভ্র ভাই?”
নীলাভ্র সোজা প্রশ্ন,
“কৈফিয়ত চাইছিস? ”
বেলী সাথে সাথে মাথা নাড়ালো। বললো,
“কৈফিয়ত কেনো চাইবো? আমি শুধু জানতে চেয়েছি, যে কেনো এমন করছেন?”
“তোকে বলতে বাধ্য নই আমি।”
বলে বেলীর মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো নীলাভ্র। বেলী অসহায় পথিকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ইতিমধ্যেই চোখের অবাধ্য অশ্রুকণাগুলো হানা দিচ্ছে।
নীলাভ্র দরজাটা আটকে দিয়েই চোয়াল শক্ত করে নিজে নিজেই বলে উঠলো,
“আমাকে ভেঙে চুড়ে টুকরো কাচের মতো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলি তাইনা? ভেবেছিলি আমি মুখ থুবড়ে পড়বো, চলার পথে হোঁচট খাবো। কিন্তু তুই হয়তো ভুলে গেছিস, অতি আঘাতে কেউ ম’রে যায়না। বরং শক্ত হয়ে যায়, ব্যাথা সহ্য করতে শিখে যায়। ”
—
নিজের রুমের মধ্যে বসে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে বেলী। এর মধ্যেই ডাক পড়লো খেতে যাওয়ার জন্য। চোখের পানি গুলো তড়িঘড়ি করে মুছে নিলো বেলী। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। ওর মধ্যেই হঠাৎ কেউ ওকে ঝাপটে ধরলো। ভয়ে পেয়ে বেলী ভ্যাবাচেকা খেলো। কিন্তু পরক্ষণেই চেনা মুখ দুটো দেখে বেলীর মুখে বিশাল হাসি ফুটলো। দুই হাতে দুইজনকে জড়িয়ে ধরে হাস্যজ্জল মুখে বললো,
“মেরিনা, ইশু তোরা কখন ফিরলি?”
এইবার মেরিনা আর ইশরাত দুজনেই বেলীকে আরো শক্ত করে ঝাপটে ধরলো। মেরিনা গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,
“আপনার তো পাত্তাই পাওয়া যায়না কেশবতী। ”
ইশু ও সেই সুরে সুর মিলিয়ে বললো,
“তোর জন্য আমরা সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে ছিলাম। আর তুই রুমের মধ্যে ঘাপটি মে’রে বসে ছিলি।”
বেলী ওদের দুজনের কথা শুনে হাসলো। দুই হাতে দুজনের গাল টেনে বললো,
“আমি কি জানতাম আমার কিচিরমিচির পাখিগুলো বাসায় ফিরেছে?”
মেরিনা বেলীর হাত ধরে টানতে টানতে সোফায় এনে বসালো। তারপর ইশু আর মেরিনা দুজন বেলীর দুইদিকে বসলো। মেরিনা বলে উঠলো,
“তোর সাথে কত কথা জমে আছে জানিস?”
বেলী হাসতে হাসতেই বললো,
“সব শুনবো। আগে বল তোদের ট্যুর কেমন হলো? কেমন মজা করলি? আমাকে তো একদম ভুলে গেছিলি। একটা ফোন অব্দি দেস নি।”
বলে গাল ফুলালো বেলী। তা দেখে ইশু বেলীর গালের সাথে গাল মিলিয়ে বলে উঠলো,
“স্যরি সোনা। নেট ছিলো না ফোনে। ”
বেলী মিছে মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
“বুঝি, বুঝি আমি সব বুঝি। ”
মেরিনা বললো,
“তোকে কত করে বললাম। আমাদের সাথে চল, পাহাড় ঘুরে আসবি, মন ভালো থাকবে।”
বেলী আফসোস স্বরে বললো,
“কি করবো? ভার্সিটি খোলা ছিলো তো। যাক ব্যাপার না। নেক্সট টাইম আমরা সবাই মিলে লম্বা একটা ট্যুর দিব ইন-শা-আল্লাহ। ”
বেলীর সাথে ওরা দুজন একমত হলো। এর মধ্যেই নীলাভ্রর কন্ঠস্বর ভেসে আসল,
“তোরা কখন ফিরলি?”
নীলাভ্রর গলা শুনতেই বেলীর বুক ধক করে উঠলো। চেয়ে দেখলো নীলাভ্র প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে মেরুন কালার টি-শার্ট। ইশু আর মেরিনা এইবার দৌড়ে গিয়ে নীলাভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
“ভাইয়্যু! কত মিস করছি তোমাকে জানো?”
নীলাভ্র দুজনের চুল টেনে ধরে বলে উঠলো,
“ন্যাকামি হচ্ছে? আমি জানি তোরা আমাকে কচু মিস করেছিস?”
বলে ওরা তিনজনেই হেসে উঠলো। বেলী বসে বসে ওদের দেখছে। আইরিন খাওয়ার জন্য ডাকতেই ওরা তিনজন সেদিকে পা বাড়ালো। বেলীও বসে না থেকে সেদিকে গেলো। বেলী খাবার টেবিলে বসার জন্য তৈরি হতেই নীলাভ্র কড়া গলায় বলে উঠলো,
“তুই এখানে বসছিস কেনো?”
হঠাৎ নীলাভ্রর এমন প্রশ্নে ইশু আর মেরিনা দুজনেই নীলাভ্রর দিকে অবাক চোখে তাকালো। বেলীর অসহায় চাহনী দেখে নীলাভ্রর কন্ঠস্বর কঠিন থেকে নরম হলো। আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলো। ইশু অবাক হয়ে বললো,
“তুমি এভাবে বললে কেনো ওকে?”
নীলাভ্র ইশুর প্রশ্নে গম্ভীরভাবে জবাব দিলো,
“কেমন করে বললাম?”
“এখানে বসতে না করলে কেনো?”
ইশুর পাল্টা প্রশ্নে নীলাভ্র সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো,
“আমি আমার পাশে বসতে বারণ করেছি। ”
বেলীর মনে হচ্ছে কেউ ওর বুকের মধ্যে ছু’ড়ির আঘাত করছে। নীলাভ্র এমন করে কথা বলছে ও ভাবতেই পারছে না। ইশু আর মেরিনা দুজনেই অবাক। নীলাভ্র বেলীকে কতটা ভালোবাসে? তা আর কেউ না জানলেও ওরা দুজন খুব ভালো করে জানে। তাহলে, হঠাৎ কি হয়েছে? এর মধ্যেই সীমা আর আইরিন খাবার নিয়ে আসতেই ওরা সবাই চুপ হয়ে যায়। বেলী মেরিনার পাশে গিয়ে বসে। খাবারের মধ্যে ইশু, মেরিনা, নীলাভ্র অনেক কথা বললেও বেলী চুপ ছিলো।
—-
নীলাভ্র খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে জোরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বেলীর অসহায় চোখের চাহনী ওর হৃদযন্ত্রটা ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। দরজাটা আটকে দেওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই দেখলো, ইশু দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ্র বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই এখানে কেনো? কি দরকার?”
ইশু উত্তর দিলোনা। ভেতরে ঢুকে নিজেই দরজাটা আটকে দিলো। নীলাভ্রর হাত ধরে নিয়ে খাটে বসলো দুজনে। নীলাভ্র ইশুর কান্ডে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। বললো,
“কি হয়েছে?”
নীলাভ্রর প্রশ্ন শুনে, ইশু বললো,
“এই প্রশ্নটা আমার করা উচিত ভাইয়্যু? তোমার কি হয়েছে? কেনো এমন করছো?”
ইশুর প্রশ্নে নীলাভ্রর কপাল কুঁচকে এলো। অবাক স্বরে বললো,
“মানে! আমার কি হবে?”
ইশু চোখ গরম করে নীলাভ্রর দিকে তাকালো, বিরক্ত হয়ে বললো,
“তুমি বেলীর সাথে কেনো বাজে ব্যবহার করছো?”
নীলাভ্র এবার থমকালো। ইশুর চোখের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। বললো,
“আমি ঘুমাব। তুই এখন যা।”
ইশু বাঁধা দিলো। বললো,
“আমি কোথাও যাবো না ভাইয়্যু। তোমাকে আজ বলতেই হবে? তুমি বেলীকে ভালোবাসো। তাহলে কেনো ওকে নিজের করতে পারছো না? কিসের এত দূরত্ব তোমাদের?”
নীলাভ্র চুপ রইলো। উত্তর দিলো। ইশু বিরক্ত হলো। প্রচন্ড বিরক্ত। জোরেই বললো,
“ভাইয়্যু আজ তুমি চুপ থাকবে না। আমার সব প্রশ্নের উত্তর আজ তুমি দিবে?”
নীলাভ্র চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“কি উত্তর দিবো? কোন প্রশ্নের উত্তর দিবো? বেলীকে কেনো নিজের করে নিতে পারছিনা? বেলীকে ভালোবাসি কিনা? তাহলে শোন, আমি কাকে নিজের করে নিব? যে এখনো তার প্রাক্তন স্বামীকে ভালোবাসে তাকে?”
ইশুর বিস্ফোরিত স্বরে বলে উঠলো,
“ভাইয়্যু! কি বলছো কি এইসব?”
“যা বলছি একদম ঠিক বলছি, সত্যি বলছি।” নীলাভ্রর দৃঢ় কন্ঠস্বর। ইশু রাগী স্বরে বলে উঠলো,
“না ভাইয়্যু। নিজের মন মতো কিছু ভেবে নেওয়াকে সত্যি বলে না।”
নীলাভ্র এবার নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ধমকে বললো,
“দেখ ইশু মাথাটা গরম করিস না। আমার রুম থেকে যা।”
ইশু নীলাভ্রর হাতটা আঁকড়ে ধরে, শান্ত স্বরে বললো,
“তোমার বেলীপ্রিয়া তোমাকেই ভালোবাসে ভাইয়্যু। অনেক বেশি ভালোবাসে। ”
এইটুকু কথা যেনো নীলাভ্রর কানে ঢুকলো না। বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করলো। বললো,
“তুই ভুল জানিস। বেলী শুধু মাত্র রাফিন কে ভালোবাসে।”
নীলাভ্রর কন্ঠস্বর শান্ত শুনালো। ভাইয়ের চেহারাটা দেখে ইশুর কান্না পাচ্ছে। তার ভাইটা যে কষ্টে কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই কষ্টের শেষ কোথায়? কেনো ভালোবাসার মানুষগুলো এত কষ্ট পায়? ইশু জড়ানো কন্ঠে বললো,
“ভাইয়্যু! বেলী তোমাকে ভালোবাসে বিশ্বাস করো তুমি।”
নীলাভ্র এইবার সারা ঘর কাঁপিয়ে ধমক দিলো ইশুকে। ইশু আঁতকে উঠলো। ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠলো। নীলাভ্র চিৎকার করে বলতে লাগলো,
“চুপ একদম চুপ। আমাকে বোকা পেয়েছিস তুই? আমি বলদ? আমাকে যা বুঝাবি আমি তাই বুঝব? বেলী যদি আমাকে ভালোবাসতো, তাহলে, সেদিন কেনো আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিলো? কেনো বলেছিলো ওর প্রথম ভালোবাসা রাফিন? আর ও রাফিনকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে। বল কেনো বলেছিলো? আমি তো রাস্তার ভিক্ষুকের মতো ওর কাছে হাত পেতেছিলাম ভালোবাসার জন্য, কেনো ফিরিয়ে দিয়েছিলো? উত্তর দিতে পারবি?”
নীলাভ্রর কথা শুনে ইশুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ওর ভাইটা যে অতি কষ্টে পাথর হয়ে গেছে। কান্নারত স্বরে ইশু বললো,
“ভাইয়্যু তুমি সব জানো না। আমি ভেবেছিলাম তুমি সব জানো তাই এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম, তুমি সব জানো না। আমাকে সবটা বলতে দাও ভাইয়্যু প্লিজ।”
নীলাভ্র ইশুর হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলো,
“আমার আর কোনো কিছু জানার দরকার নেই। তোর কোনো কিছু বলতে হবে না। আমি শুনব না।”
বলে ইশুকে টেনে দরজার বাইরে বের করে দিলো। দরজাটা আটকাতে আটকাতে বললো,
“শুনে রাখ, নীলাভ্র এখন আর বেলীপ্রিয়াকে ভালোবাসেনা। ঘৃণা করে। প্রচন্ড ঘৃণা।”
বলে ধপ করে দরজাটা আটকে দিলো। ইশু মুখ চেপে ধরে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে নীলাভ্রর দরজায় নক করে বলতে লাগলো,
“ভাইয়্যু তুমি তোমার বেলীপ্রিয়াকে ভুল বুঝছো। ভাইয়্যি প্লিজ দরজাটা খোলো। আমি তোমাকে সব বলতে চাই। তুমি সব জানো না ভাইয়্যু। প্লিজ দরজা খোলো।”
ওপাশ থেকে নীলাভ্র চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“ইশু এখান থেকে যা প্লিজ। আমাকে একা থাকতে দে বোন। প্লিজ যা।”
#চলবে
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। একটা গঠনমূলক মন্তব্য পাইনা এত কষ্ট করে লিখে? হতাশ লাগে মাঝে মাঝে। ]