তুমি যে আমার পর্ব -১৮+১৯

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_18

‘আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! সত্যি করে বলুন!’

‘আর একটা কথা বললে, এখানে একটা আছাড় মারবো কিন্তু! বাচাল মেয়ে এতো কথা বলতে পারে।’

‘কি আপনি আমাকে বাচাল বললেন?’

‘বাচাল কে বাচাল বলবা না তো কি বলবো!’

‘আমাকে চোখ বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন মেরে ফেলার প্লান করেছেন নাকি? বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে মারার প্ল্যান করছেন।এখন আবার বাঁচাল বলছেন!’

তূর্য রেগে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দিলো। বর্ষা গলা জরীয়ে রাখা হাত সরিয়ে নিয়েছিল। এবার তূর্যের হাতের বাধন আগলা করায় পড়ে যেতে নিয়ে ভয় আর জাপ্টে ধরে গলা। আর ভয়ার্ত গলায় বলে,

‘আপনি তো খুব বাজে মানুষ। আমাকে সত্যি ফেলে দিতে চাইছেন!আমি কি আপনার কোলে উঠতে চেয়েছি! তাহলে কেন কোলে নিয়েছেন! আর এখন আবার ফেলে দিতে চাইছেন!’

‘তোমার মুখটা অফ রাখ। না হলে ফেলেই দেবো।’

ভয়ে বর্ষা আর কথা বললো না। ছাদে এনে তূর্য ওকে কোলে থেকে নামালো। বর্ষা ছাড়া পেতেই নিজের চোখের বাধন খুলে দিল তাড়াতাড়ি করে।
চোখ খুলে মৃদু আলোয় বুঝতে পারল ওরা ছাদে আছে। ও সবার আগে আকাশের দিকে তাকাল। খোলা আকাশ! কতদিন পর খোলা আকাশের নিচে আসলো! ওর আর তূর্য এর দিকে নজর নেই। তূর্য পাশের দোলনায় বসে ফোন টিপতে লাগলো। বর্ষা আবছা আলোতে পুরো ছাদ স্ক্যান করছে। খুবই বোরিং একটা ছাদ। একটা ফুল গাছের আকার বিকার ও নাই।ওর নিজের ছাদের কথা মনে পরে গেলো। ওর সমস্ত পছন্দের ফুল গাছ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে ছাদ‌। ছাদে গেলেই মনটা ভালো হয়ে যায় বর্ষার। ফুলের গন্ধে ম ম করে ওর ছাদ‌। এই ছাদে একটা ফুল নাই। খুব মিস করছে নিজের ছাদটাকে। কতদিন ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখা হয়না! কি অবস্থায় পড়ে আছে কে জানে! ওর ফুল গাছে ও ছাড়া কারো হাত দেওয়া নিষেধ।
মন খারাপ হয়ে গেল বর্ষার। ছাদের এক পাশে চলে এলো হাঁটতে হাঁটতে। সেখানে শুধু কয়েকটা ক্যাকটাস গাছ দেখতে পেলাম।বর্ষা রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালো। জঙ্গলে ঘেরা। মনে হচ্ছে একটা ভূতুড়ে বাড়িতে আছে! চারপাশে শুধু জঙ্গল! এমন জায়গায় কেউ বাড়ি করে। ও ভয় পেয়ে গেলো হালকা। তূর্য এর থেকে অনেক টা দূর চলে এসেছে বর্ষা। কিছুটা এগিয়ে এসে কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ালো। মুক্ত আকাশের দিকে তাকাল আজকে জোসনা নাই। কেমন যেন মেঘলা হয়ে আছে আকাশ। এখনতো বৃষ্টির সময় না। তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে বৃষ্টি হবে খুব বৃষ্টি হবে! শাড়ি পরে হাঁটা কষ্টকর তাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছে। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে বর্ষা। হুট করে এক ফোঁটা পানি এসে ওর নাকের ওপর পরল। ও ফট করেই চোখ মেলে তাকালো।

বৃষ্টি হবে তাহলে আজ অনেকদিন পর এই খোলা আকাশের নিচে এসেছে। আর আজকে বৃষ্টি এই বৃষ্টিতে আজ বর্ষা ভিজবে খুব করে বুঝবে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি ওর জন্য আসছে। ওর এই কষ্টের মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা কিছুটা সুখ নিয়ে আসছে।বৃষ্টি মানুষকে বরাবরে আনন্দ দেয় বর্ষার বৃষ্টি খুব একটা পছন্দ না হলে আজকে বৃষ্টির আগমনকে আনন্দ দিচ্ছে ওকে। বৃষ্টি ওর পছন্দ না হ‌ওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে জামাকাপড় ভিজে নষ্ট করে দেয়। এমন অনেক সময় গেছে বৃষ্টির জন্য ওর স্পেশাল দিন তাতে স্পেশাল জায়গায় যেতে পারেনি ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে ওর সাজ নষ্ট হয়ে গেছে। সাজগোজ নিয়ে খুব সিরিয়াস বর্ষা। কোথাও গেলে অনেকটা সময় ধরে সাজতে বসে যায়। আর তখন যদি রাস্তায় বৃষ্টি হয় তো ও এক পা বাইরে রাখতে পারে না গাড়ি থেকে। জামাকাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে যায় আর বিচ্ছিরি একটা কাণ্ড ঘটে।
এই একটা কারনে ওর বৃষ্টি পছন্দ না অসময়ে বৃষ্টি এসে ওকে বিপদে ফেলে।

হাতে টান পরায় চমকে উঠে। তূর্য বৃষ্টি নামতে দেখে দৌড়ে এসে বর্ষার হাত ধরে টেনে সাইটে নিয়ে আসে। কিছু বলে উঠতে পারেনি বর্ষা। এভাবে টেনে আনায় ওর কুচি খুলে গেছে। এতে বর্ষা রেগে সাথে আবার আজ বৃষ্টি তে ভিজতে ইচ্ছে হয়েছে ওর।আর লোকটা কিনা ওকে নিয়ে এলো।
বর্ষা রেগে হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো।

‘আপনি আমাকে টেনে আনলেন কেন এভাবে?’

‘টেনে আনব না তো কি করব বৃষ্টি হচ্ছে ডাকি শোনো না কেন? এজন্যইতো টেনে আনতে হল!’

‘আমি কি বলেছি আমাকে বৃষ্টির মাঝখান থেকে টেনে আনুন। আমিতো বৃষ্টিতে ভেজার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আপনার বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে নাই আপনি এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন আমাকে ডাক দিতে গেলেন কেন?’

‘হোয়াট এ রাতের বেলা তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে!’

‘হ্যাঁ ভিজবো তো কি হবে!আর আপনার এই টানাটানির জন্য আমার শাড়ি কি হলো? আপনার জন্য আমার শাড়ি খুলে গেছে! কতো সাবধানে শাড়িটা সামলে রেখেছিলাম আর আপনি পুরো লন্ডভন্ড করে দিলেন সহ্য।’

অন্ধকারে শাড়ির কুচি তুলে অন্যদিকে ফিরে বর্ষা শাড়ি গুজে নিল উল্টাপাল্টা করেই।
তারপর আবার ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

পেছন থেকে তুর্য বলে উঠলো, ‘আবার কোথায় যাচ্ছ?’

‘বললাম না আমি বৃষ্টিতে ভিজবো আর আপনি আমাকে বাধা দিবেন না। কারন আপনি বলেছেন আমাকে কিছু সময় নিজের মতো কাটাতে দিবেন।’

তূর্য আর কিছু বলতে পারলো না বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। বর্ষা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ছাদের মাঝখানে গিয়ে দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করছে, লাফালাফি করছে। চিৎকার করছে। বৃষ্টিকে এভাবে অনুভব করা হয়নি কখনো বর্ষার। আজ এই বৃষ্টির পানিতে ভিজে কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত কষ্ট ভুলে গেছে। প্রাণ খুলে হাসছে বর্ষা। বৃষ্টির টিপটপ শব্দ আর সাথে বর্ষা প্রাণখোলা হাসির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ছাদ। বর্ষা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। তূর্য পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে‌। বৃষ্টির মধ্যে একটু পর পর অন্ধকার পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠছে ছোট ছোট বাজ পরায়। আর তাতে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে বর্ষা শরীরের প্রতিটা ভাঁজ। ওর শরীরে পাতলা শাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীর এর সাথে লেপ্টে আছে। আলোকিত হতেই তা স্পষ্ট ভাবে তূর্য এর চোখে ধরা দিচ্ছে। ঘোর লাগা চোখে তূর্য তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে এভাবে দেখে তূর্য ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ঘোরের মধ্যে ও মৃদু পায়ে হেঁটে বর্ষার একদম নিকটে চলে আসে।

কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বর্ষা চমকে উঠে। চোখ মেলে নিজের খুব কাছে তূর্য কে দেখে। তূর্য ওর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর্ষা তা দেখে ঢোক গিলে। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তূর্য ওর এক হাত বর্ষার শাড়ি ভেদ করে কোমর ধরেছে। আরেকহাত বর্ষার গালে।

‘ক ক কি করছেন? তোতলাতে তোতলাতে বললো।

তূর্য ওর আঙুল বর্ষার পাতলা ভেজা ঠোঁটের উপর রেখে বলে, হুশশ

বর্ষা চুপ করে যায়। নিজের ঠোঁটের ওপর তূর্য এর হাতের স্পর্শে ওর সারা শরীর কেঁপে ওঠে। তূর্য বর্ষার ঠোট থেকে হাত গলা পর্যন্ত টেনে নামিয়ে আনে। বর্ষা শক্ত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার ঠোঁট কামড়ানো দেখে তূর্য এক সেকেন্ড সময় নেয় না বর্ষার অধরে নিজের অধর নিতে।

বর্ষা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে। তূর্য ওর ঠোটে একের পর এক চুমু খেয়েই যাচ্ছে। না কিছু বলতে পারছেন না সইতে পারছে। তূর্য বর্ষার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বর্ষার ঠোট কামড়ে ধরে। ব্যথায় বর্ষা চোখ কুঁচকে ফেলে। আর বাধ্য হয়ে ওকে ও সাড়া দিতে হয়। বৃষ্টির মধ্যে দুজন দুজনের অনেক টা কাছে চলে আসে। তূর্য ওর ঠোট থেকে সরে আসতেই বর্ষা ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। আর হাঁপাতে লাগে।

তূর্য এগিয়ে এসে বলে, ‘ নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গেছো নাকি? তোমার নিজে থেকে কাছে আসার কথা ছিল।’

‘আমি কিছুই বলিনি!’

‘তাহলে সরিয়ে দিলে কেন?’

‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এতো সময় কেউ নেয়।’

‘হোয়াট।’

‘হুম’

তূর্য মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার এখন শীত লাগছে। ও জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বৃষ্টিতে আছে।
তূর্য ওর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ও বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে।

‘এখন কাঁপছো কেন ভেজার শখ মিটে গেছে নাকি?’

বর্ষা কিছু বলল না। তূর্য ও কিছু আর কিছু না বলে ভেজা শার্টটা ঝুঁকিয়ে নিলো। বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। বর্ষা দিকে তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না খুব বাজেভাবে আকর্ষণ করছে মেয়েটা ওকে। ও আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে। এগিয়ে এসে বর্ষাকে কোলে তুলে হাঁটা দিলো রুমের দিকে।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_19

দুই দিন কারো সাথে অভ্র কথা বলল না। নিদ্রার
ও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায় নি। ওকে ওর মতোই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আর না।আমি কি এতটাই খারাপ দেখতে, এতটাই অযোগ্য যে ওর আমাকে মেনে নিতে হবে বলে সবার উপরে এভাবে অভিমান করে আছে। আজকে বাসায় এলে ওর আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। কিন্তু এগারোটা পর্যন্ত বসে থেকে ও অভ্র আজ বাসায় ফিরল না। নিদ্রা ওর নাম্বারে কল দিলো। প্রথমবার ফোন রিসিভ না করলে ও। দ্বিতীয় বার ফোন রিসিভ করে তাড়াহুড়া করে একটা কথা বলে ফোন রেখে দিল।

‘আমার আজ বাসায় ফেরা হবেনা চিন্তা করিস না ঘুমিয়ে পড়।’

নিদ্রা কে কিছু বলার সুযোগ দিল না। নিদ্রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পরল।
ভোর তিনটায় অভ্র বাসায় ফিরলো। নিজের কাছের এক্সট্রা চাবি দিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিদ্রার আরেক পাশেই ঘুমিয়ে পড়ল। ক্লান্তিতে ও খেয়াল করল না এক পাশে নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে। না হলে সোফায় ঘুমাতো। রাতে একটা অপারেশন ছিল। ইমার্জেন্সি পেশেন্ট। এজন্য আজকে রাতে আস্তে লেট হয়েছে। আগে থেকে জানা ছিল না এজন্য বাসায় জানিয়ে যাওয়া হয় নি।

বিছানায় মাথা রাখতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল অভ্র। শত রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিলো ওর চোখে। আজানের শব্দে নিদ্রার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে তাকানোর আগে নিজের কানের কাছে একটা শব্দ পেল। ওর কানের টিপটিপ শব্দ করছে। সাথে যেন কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথা উঁচু করে ও চমকে ওঠে। অভ্র ওকে দুই হাতের বাঁধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। একটা শীতল হাওয়ার সারা শরীরে বয়ে যায়। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। এতোক্ষণ অভ্রর বুকের ধুকপুক ওর কানে লাগছিলো।

এসব কি হচ্ছে অভ্র বাসায় আসলো কখন। আর বিছানায় ঘুমালো কখন! ও তো বাসায় আসবে না বলেছিলো।
শত চিন্তা করেও কোন উত্তর খুঁজে পেলো না। অভ্রর ভারী নিঃশ্বাস ওর চোখে পরছে এখন।এতো কাছ থেকে কখনো ওকে দেখবে কল্পনা করেনি।

যেভাবেই হোক এই মুহূর্তটা ও নষ্ট করতে চায়না। পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। কি কিউট লাগছে দেখতে। নিদ্রা অভ্রর গালে চুমু দেয় আস্তে করে। ও আবার ওর বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভ্রকে। এখন উঠতেই হবে নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ওর উঠতে মন চাইছে না। তবুও খুব সাবধানে নিদ্রা অভ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে যায়। ফ্রেশ হয়ে হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজ শেষ করে। নিদ্রা বিছানায় হাটু ভেঙে অভ্রর পাশে বসে ওর মুখে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

‘ তুই আমাকে কেন ভালোবাসিস না রে অভ্র। তোকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না। কিন্তু আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তুই যদি আমাকে মেনে না নিস তাহলে আমি এবার তোর থেকে চলে যাব। বেহায়ার মত তোর কাছে পড়ে থাকবো না। আমার জন্য তুই পরিবারের সবার সাথে মান অভিমান করবি এটা আমি মেনে নিব না।’

নিদ্রার চোখ ছলছল করে উঠলো। ছল ছল চোখের
অভ্রর ঘুমন্ত মুখটা দিকে তাকিয়ে আছে।

শুক্রবার হ‌ওয়ায় আজকে শাশুড়ি মার সাথে রান্নাঘরে এসেছে নিদ্রা।
চিংড়ি মাছটা নিদ্রা রান্না করলো। অভ্রর মা সাহায্য করছে। রান্না শেষে সব খাবার ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রাখলো নিদ্রা কাজের লোকের সাহায্যে।

একে একে সবাই খাবার টেবিলে এসে ভীড় জমালো। অভ্রর বড় ভাইয়ের বউ। আমার আর অভ্রর বিয়ে পরদিন ই বাপেরবাড়ি চলে গেছিল সে কাল এসেছে। এখন বাড়িতে একজন বাচ্চা আছে। আমার কাছে এসে ছোট আম্মু বলে চেঁচিয়ে উঠে। নাতাশা ভাবী রান্নাঘরে একদম যায় না গেলে নাকি তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
খাবার টেবিলে আমার শশুর মশাই অভ্রর হাতে একটা কাজ এগিয়ে দিলেন। অভ্র কাগজটার দিকে তাকিয়ে অবাক সুরে বলল,

‘এইসব কি আব্বু?’

‘হানিমুন টিকেট!’

‘এটা দিয়ে কি করব?’

‘কি করে মানুষ হানিমুনের টিকেট দিয়ে! তোদের বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়ে গেলো। বাসায় আছিস কোথাও বেড়াতে যাওয়া হলো না। তাই আমাদের সবার পক্ষ থেকে এটা তোদের জন্য গিফট।’

‘হোয়াট আমি কোথাও যেতে পারবো না!আর এই বিয়েটা আমি যেহেতু মানি না তাহলে হানিমুনে যাওয়ার প্রশ্ন কেন আসছে?’

‘কি বললি তুই?’পাশ থেকে অভ্রর মা চেচিয়ে উঠলো।

‘আম্মু আমি…

‘কালকে তুই আমার মাথা ছুঁয়ে কি প্রতিজ্ঞা করেছিস! তারপরে তুই এই কথা কিভাবে বললি! বিয়েটা কি তোর ছেলেখেলা মনে হয়।’

‘কিন্তু আম্মু আমি তো বর্ষা….

‘ওই মেয়ের কথা আমি শুনতে চাইনা। কোথায় না কোথায় আছে! এখন অব্দি বাড়ি আসে নাই। কে না কে তুলে নিয়ে গেছে। সেই মেয়ের জন্য তুই বসে আছিস। মেয়েটার ভালো চাই। মেয়ে যত তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক বাসায়। তাই বলে তাকে আমি আমার ঘরের বউ করব না। তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমার বাড়ির বউ এক মাত্র নিদ্রাই থাকবে। এটা আমার শেষ কথা।’

অভ্র চুপ করে বসে আছে খাবার খাচ্ছে না। নিদ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অভ্র খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল। কারো খাবারের ভালো মতো হলো না। আমার জন্য এই পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সবসময় অশান্তি লেগেই আছে। নিজের সুখের জন্য আমি অভ্রর ঘাড়ে জোর করে চেপে বসে থাকতে পারিনা।

সবাই চলে গেছে শুধু বসে আছে বড় ভাবি নাতাশা। তিনি খুব আয়েশি ভঙ্গিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। এই সবে তার তোয়াক্কা নাই বললেই চলে। নিদ্রা হাতের ওল্টা পিঠ দিয়ে চোখ মুছে রুমে চলে এলো। রুমে এসে অভ্রর সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

‘তোর সাথে আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা আছে!’

‘হ্যাঁ বল!’
অভ্র মাথা তুলে কথাটা বললো।

‘ডিভোর্স লেটার তাড়াতাড়ি তৈরি কর আমি আজকে চলে যাব। ওই বাসায়।ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিস আমি সাইন করে দেবো। সারাদিনের এসব ঝামেলা আর ভাল লাগেনা। আমার জন্য তোর জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেলো।’

‘এখানে তোর তো কোন দোষ নাই। আমার পরিবারই তো তোর সাথে আমার বিয়ে টা দিলো জোর করে। আর এখন আমাদের এই মিথ্যে বিয়েটাকে সত্যি করতে বলছে। আমি কিছুতেই ওদের বুঝাতে পারছি না। আমি যদি মানার চেষ্টা করি ও তুই তো আমাকে মানতে পারবি না। তুই তো শুধু আমাকে বন্ধু ভাবিস। আমার পরিবারের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।’

‘আচ্ছা অভ্র তোকে একটা কথা বলি।’

‘বল।’

‘তুই কি বর্ষা কে ভুলে আমাকে তোর স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিস না। বন্ধু বলে কি আমরা স্বামী-স্ত্রী হতে পারি না। আমরা কি সংসার করতে পারিনা! দুই বন্ধু কি হাসবেন্ড ওয়াইফ হয়ে তাদের সংসার সাজাতে পারে না।’

‘কি সব বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছিনা!’

‘কিছু না। যে বোঝেনা তাকে আর জোর করে বোঝানোর চেষ্টা না করাটাই ভালো। তুই আমার উপর খুব বিরক্ত হয়ে গেছিস তাই না?’

‘তোর উপর বিরক্ত হব কেন?’

‘হয়েছিস‌ই তো। দুইদিন কার সাথে কথা বললি না। এমনকি আমার সাথেও কথা বললি না।’

‘আমার মন মেজাজ খারাপ ছিল! তাই কারো সাথে কথা বলিনি! মা কিরকম শুরু করেছে দেখতে তো পাচ্ছি।’

‘হ্যাঁ।’

‘তুই আজকে সত্যি চলে যাবি?’

‘যেতে তো হবেই। আমি এখানে থাকলে আরো ঝামেলা হবে। সবাই খালি তোকে আমায় মেনে নিতে বলবে। আর তোর রাগ হবে।তার থেকে ভালো আমি চলে যাই তুই সবাইকে বলে দিস আমি এই বিয়েটা থেকে মুক্তি চাই। তাহলে আর তোকে কেউ জোর করতে পারবে না।বর্ষা ফিরে আসলে তুই তোর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকিস।’

‘তোর পরিবার ও তো জেনে গেছে বিয়ের কথাটা। তোর ঝামেলা হবে নাতো।’

‘কি আর হবে। তারা তো আমাকে নিয়ে যেতে এসেছিল। ফিরে গিয়ে বলব তাদের কথা রাখতে চলে এসেছি।’

‘এমনিতেও তারা তাকে সহ্য করতে পারে না। যদি তোর ওপর অত্যাচার করে।’

‘করলে করবে তাতে তোর কি? সেসব আমি বুঝি নেব তোর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।’

নিদ্রা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আর কখনো অভ্রর সাথে যোগাযোগ করবেনা যোগাযোগের পথ রাখবে না। ওকে দেখে আর নিজের ভেতরে যন্ত্রণাটা বাড়াতে চায় না। অভ্র মাকে যেভাবেই হোক বোঝাতে হবে।তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে মেয়ের মত ভালবেসেছে কিন্তু আমি তার মেয়ে হয়ে থাকতে পারলাম না আমার কপাল খারাপ।

‘শোন!’

‘বল কি বলবি?”

‘বলি তুই আজকে যাইস না। আজ থেকে যা কালকে আমি তোকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো।’

‘তার কোন প্রয়োজন নাই। আমি একা যেতে পারবো ?’

‘এভাবে কথা বলছিস কেন? তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?’

‘রেগে নাই!আমি একাই যেতে পারব! তোর শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।’

‘তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোকে আমি কতটা ভালোবাসি তুই তো জানিস। আমি তোকে নিজে পৌঁছে দিয়ে না আসলে আমার খুব চিন্তা হবে প্লিজ দোস্ত।’

‘তুই কি সত্যিই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড?’

‘কি বলছিস?’

‘এমনি বললাম আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড তো বেস্ট ফ্রেন্ডই মনের খবর জানে তুই আমার মনের সব খবর জানিস?’

‘মনের খবর বলতে?’

‘কিছু না।’

‘মনের খবর বলতে কি জানিনা আমি বল আমাকে।’

অভ্র এগিয়ে এসে নিদ্রার দুই কাঁধে হাত রেখে প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘এমনি মজা করলাম সব কথা সিরিয়াসলি কেন নিস?’

‘তোর কথাটা আমার একদম মজা মনে হয় নি।’

‘তাহলে কি মনে হয়েছে?’

‘মনে হয়েছে সত্যি তোর মনের কিছু কথা আমি জানিনা! বল না কি আমি জানিনা আমি তোর মনের কথা। আমি তোর সাথে সব শেয়ার করি! তাহলে তুই কেন লুকিয়ে রাখছিস?’

‘আরে আমি মজা করছি আমি ও তো সব বলি।(সরি তোকে মিথ্যে বলার জন্য।)’

‘আচ্ছা মজা অনেক হয়েছে। আজকে তুই যাচ্ছিস না এটাই ফাইনাল। আমি তাকে কালকে দিয়ে আসবো।’

‘কিন্তু….

‘এটা আমার শেষ কথা আর তুই আমার সাথে কথায় পেরে উঠবিনা ভাল করেই জানিস।’

‘হুম।’

#চলবে…..
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here