#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_20
কথা অনুযায়ী আজকে বর্ষা কে ওর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোথায়! সারাদিন তো তার পাত্তা নাই। বিধ্বস্ত অবস্থায় বর্ষা যখন ঘুম ভেঙ্গে খাটের উপর বসে। ও নিজেকে একা পায় বিছানায়। এত কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে। আজকে ও বাড়ি ফিরে যেতে পারবে সেই খুশিতে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর বিকেল রাত হয়ে যায় কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটি আর আসে না। তাহলে কি লোকটা বর্ষাকে ধোঁকা দিলো। বর্ষার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।নিজের সর্বস্ব হারিয়ে কি এখনো এখানেই থেকে পচে গলে মরতে হবে নাকি।
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আজকে বর্ষা নিজের হাতে কেটে ফেলল। হাত দিয়ে রক্ত বের হতেই ও দরজা ধাক্কা দেওয়া বাদ দিয়ে দরজায় কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল। রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে ব্যথায় কুঁকড়াতে লাগলো।
ওইভাবেই কখন বিছানায় এসে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় নিজেও জানেনা।
তূর্য শাওন এর সাহায্যে বাসায় প্রবেশ করে। হাঁটতে ওর কষ্ট হয়। বর্ষার রুম এর কাছাকাছি আসতেই তূর্য বলে,
‘তুই তোর রুমে যা।’
‘তোকে এখানে রেখে। না চল রুম পর্যন্ত দিয়ে আসি। আর ড্রেসিং ও তো করাতে হবে। অনেকটা ক্ষত হয়েছে।’
‘কিছু হবে না তুই যা। আমি বর্ষার রুমে যাব।’
‘এখন এই রুমে যাওয়ার কি দরকার?’
‘দরকার ছাড়া কি আমার যাওয়া বারণ?’
‘আরে তা না। অনেক পেশার গেছে তোর উপর দিয়ে তাই এখন রেস্ট নেওয়াটা বেটার।’
‘সেসব আমি দেখে নেব।’
অজ্ঞতা চলে গেল শাওন। তূর্য এর সাথে তর্ক তে পেরে উঠবে না। ও চলে যেতেই তুর্য বর্ষার রুমে এলো। এলোমেলো হয়ে বর্ষা বিছানার পরে ঘুমিয়ে আছে। তূর্য বর্ষার কাছে গিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বর্ষার চোখের কোনে জল জমে আছে। তূর্য বিন্দু জলের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা ঝুঁকিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য এর বুকে ব্যথা করছে এখানে অনেকটা কেটে গেছে। শার্টের বোতাম খুলে ক্ষতস্থানের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্লান্তিতে চোখে ঘুম চলে আসছে। বর্ষার পাশেই শুয়ে পড়ল তূর্য।
বর্ষার ঘুম ভাঙ্গে কারো গোঙ্গানির শব্দে। ওপাশ ফিরে তাকাতেই গরম কিছুর সাথে স্পর্শ লাগে হাত। ঝট করে হাত সরিয়ে নেয়। তূর্য কে নিজের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে যায়। সাথে রাগ হয় কিন্তু তূর্যের দিকে তাকিয়ে রাগটা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। তূর্য যে শীতে কাঁপছে। আর মুখ দিয়ে শব্দ করে যাচ্ছে। বর্ষা বুঝে উঠতে পারছে না এমন কেন করছে! ওর চোখ তূর্যের বুকের দিকে যেতেই আতকে উঠে। রক্তে দেখা যাচ্ছে জায়গাটা। কালো শার্ট এজন্য বুঝা যায়না শার্ট দেখে। ওপরে দুটো বোতাম খোলা এজন্য ফর্সা বুকে লাল রক্তের ছড়াছড়ি। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষা। এজন্য লোকটা কুকড়াচ্ছে ব্যথায়।বর্ষা কাঁপা হাতে বুকের কাছে নিতেই ওর হাতেও রক্ত লাগে। ও মৃদু চিৎকার করে ওঠে ভয়ে।
এই অবস্থা কি করে হলো লোকটার? এখন আমি কি করব ওনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তো আমি বাসায় ফিরে যাব কি করে? বর্ষা তূর্য কে ডাকতে লাগল।
তূর্য উঠছে না দেখে এক হাত ধরে ঝাকাতে লাগলো। আগুনের মতন গরম হয়ে আছে শরীর। জ্বর এসেছে। তূর্য তাকাচ্ছে না। বর্ষা উঠে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো, কেউ আছেন দরজা খোলেন?
কারো সারা শব্দ পাওয়া গেল না। শব্দ শুনবে কি করে কেউ এই রুমের বাইরে যে ওর কথা যায়নি। বেশি ধাক্কাতে পারলো না কারণ ওর হাতে ব্যথা। আবার ফিরে এসে তূর্য এর পাশে বসলো। লোকটা শীতে কাঁপছে। বর্ষা উঠে ফ্লোরে ফেলে রাখা চাদর তুলে নিল হাতে। এটা ও রেগে ফেলে দিয়েছিলো। চাদর দিতে গিয়ে দেখল তূর্য এর পায়ে কাদা মাখা জুতা। নিজে টেনেটুনে জুতা খুলল তারপর চাদর টেনে দিল পেট অব্দি।বুকের রক্তে দিকে তাকিয়েই কাঁপা হাতে শাটের সবগুলো বোতাম খুলতে লাগল। খোলা হতেই শার্ট সরাতেই ফর্সা উন্মুক্ত শরীর বেরিয়ে এলো। চোখ কুঁচকে ইস বলে উঠলো। বুক থেকে পেট পর্যন্ত একটা ছুরির আঘাত। এত বড় আঘাত নিয়ে লোকটা এখানে পড়ে আছে কেন হসপিটালে না গিয়ে। বর্ষা কি করবে ভাবছে আঘাতটা খুব গভীর মনে হচ্ছে। আঘাতের জন্য জ্বর এসেছে। কিন্তু এই রক্ত মুছে একটু ড্রেসিং করতে পারলে ভালো হতো। লোকটা অর চরম শত্রু তা ও তার সেবা করতে হচ্ছে কি অদ্ভুত! বর্ষা কি ভেবে জানো তূর্য এর প্যান্টের পকেটে হাত দিলো আর সাথে সাথে ফোন পেলো। সবাইতো ফিংগারপিন ইউজ করে লোকটার সিঙ্গার দিয়ে ট্রাই করে দেখি। তূর্যর ডান হাতের একটা আঙ্গুল ছোঁয়াতেই ফোনের লক খুলে গেলো। বর্ষার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
কললিস্টে গিয়ে প্রথমেই শাওন নাম দেখতে পেল ওর সাথে সাথে সে নাম্বারে কল করলো। ও সিউর এটা ওর পরিচিত শাওন।
ঘুমের মাঝে শাওন কারো কল দেখে বিরক্ত হলো কিন্তু তিশা ভেবে রিসিভ করে নিলো।মেয়েলি কন্ঠ আসছে কিন্তু এটাতো তিশা না। নাম্বার চেক করে ঘুম ছুটিয়ে দেখে এক তূর্য এর নাম্বার। একি তূর্য এর নাম্বার থেকে মেয়েদের কথা আসছে কি করে? চমকে বিছানা থেকে উঠে বসে।
‘হ্যালো কে ? তূর্য এর ফোন তোর কাছে গেলো কি করে?’
‘আপনি কি শাওন? ফোনের মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে আপনি তাড়াতাড়ি আসুন!’
‘ফোনের মালিক অসুস্থ হয়েছে মানে কে অসুস্থ হয়েছে তূর্য!’
বর্ষা তূর্য নামের কাউকে চেনে না তাহলে কি এই লোকটার নাম তুর্য! হতে পারে। না হলে এই নাম্বার থেকে কল গেছে তাই তুর্য বলছে কেন?
‘হ্যাঁ! আমি বর্ষা!’
আমি বর্ষা শুনেই শাওন ফোন কেটে দেয় ও বুঝে গেছে। ছুটে বর্ষার রুমে আসে আর চাবি দিয়ে লক খুলে ভেতরে ঢুকে হন্তদন্ত হয়ে।
‘ কি হয়েছে তূর্য এর?’
বলেই কোন দিক না তাকিয়ে বিছানায় তাকায়। তূর্য কে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বর্ষা যে আছে খেয়াল নেই। দরজাও লক করেনি।
বর্ষা দেখতে পাচ্ছে তূর্য লোকটার জন্য শাওন কতো চিন্তিত। ওর নিজেও কষ্ট লাগছে তূর্য এর জন্য লোকটা ওর সাথে এতো অপরাধ করেছে তবুও তার জন্য ওর কষ্ট হচ্ছে। শাওন ডাক্তার কে কল করলো। এর মধ্যে বর্ষার চোখ গেলো দরজার দিকে। দরজা খোলা দেখেই ওর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। একটা আশার আলো দেখতে পেলো।ওর হাতে তূর্য এর ফোন এখনো ও ফোন হাতেই পালানোর চিন্তা করছে। তূর্য এর শুকনো মুখটা দেখে মায়া লাগছে। লোকটাকে এই অবস্থায় রেখে পালাতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আমাকে পালাতে হবে। মায়া বাড়িয়ে থাকলে আমি কখনো বাড়ি যেতে পারবো না।ওনি উনার কথা না ও রাখতে পারে।বর্ষার পরনে সাদা প্লাজো আর লাল গেঞ্জি ও এলোমেলো চুল হাত দিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এলো। শাওন তূর্য কাছে বসে আছে। এদিকে ওর খেয়াল নেই। এটাই সুযোগ আমার পালিয়ে যাওয়ার। আল্লাহ এর নাম নিয়ে বর্ষা ছুটে বাইরে চলে এলো।
বাবার নাম্বার মুখস্থ ওর ও আড়ালে এসে তূর্য এর নাম্বার দিয়ে কল করলো বাবাকে।
কালকে বর্ষার মাকে বাসায় আনা হয়েছে। আনার পর থেকে উনি মেয়েকে দেখার ধরে পাগলামো করে যাচ্ছে।
ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে কেবল নিজে শুয়ে চোখ বন্ধ করেছে। তখন ফোন বেজে উঠে এতো রাতে আবার কে কল করলো? ফোনের আলো জ্বালিয়ে দেখে চারটা বাজে আননোন নাম্বার। না ধরে কেটে চোখ বন্ধ করে এখন ঘুমানো প্রয়োজন আজেবাজে কল রিসিভ করে আর সময় নষ্ট করবে না। কিন্তু অপর প্রান্তে লোকটা নাছোড়বান্দা একের পর এক কল করেই যাচ্ছে।
ফোনটা বন্ধ করতেই হবে কোন উপায় নাই।
নিবিড় চৌধুরী ফোন বন্ধ করার জন্য হাতে নেই।
বর্ষা কাঁপা হাতে ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই বুঝি কেউ দেখে ফেললো সেই ভয়ে। বাপি কল কেন রিসিভ করছে না?#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_21
ফোন অফ করতে গিয়ে ভুলে ফোন রিসিভ করে ফেললো। বিরক্ত হয়ে নিবিড় চৌধুরী কাটতে যাবে তখন অপর পাশের ব্যক্তি কন্ঠ শুনে নিবিড় চৌধুরীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হন্তদন্ত হয়ে ফোন কানে ধরে,
কান্নাও ভয় মিশ্রিত কণ্ঠ কানে এসে বাড়ি খায় নিবিড় চৌধুরীর। এতদিন পর মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কথা বলতে পারছেন না। এটা কি করে সম্ভব! তার মেয়ে তাকে ফোন দিয়েছে কিভাবে এটা হলো! কাঁপা গলায় তিনি বলেন,
‘প্রিন্সেস?’
বাবা কল ধরেছে বর্ষা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বাবা মুখে প্রিন্সেস ডাক শুনে অর চোখে জল ভরে ওঠে।
‘বাপি…
‘আমার প্রিন্সেস। তুমি কোথায় আম্মু? তুমি এটা কার ফোন থেকে কল করেছো? এটা কার নাম্বার? তুমি কোথায় আছো তাড়াতাড়ি বলো আমাকে। কে তোমায় নিয়ে গিয়েছিলো? তুমি ফোন কিভাবে করলে? সব বলো আমাকে।’
‘ বাপি প্লীজ শান্ত হও তোমার প্রেসার হাই হয়ে যাবে।’
‘আমার কিচ্ছু হবেনা। আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। তোমার জন্য আমরা পাগল হয়ে গেছি আম্মু। তাড়াতাড়ি তুমি কোথায় আছো বলো আমাকে। এখনি তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে আসব।’
‘বাপি আমি কোথায় আছি? আমি জানিনা।আমাকে একটা ভুতূড়ে টাইপের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করে এই ফোনটা চুরি করেছি। আর তোমাকে ফোন করেছি সাথে সাথে। তুমি আমাকে এখান থেকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাও বাপি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি এখন লুকিয়ে আছি এই বাসায় কিভাবে আমি এই বাসার বাইরে বের হব তাও জানিনা।অনেক সিকিউরিটি গার্ড আছে বাসায়। সবার হাতে বন্দুক থাকে। আমার খুব ভয় লাগে। নাম্বারটা ঐ লোকটার যে আমাকে কিডন্যাপ করেছে। তিনি অসুস্থ আর আমি সেই সুযোগে তোমায় ফোন করেছি। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার আগে তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’
‘তোমার কিচ্ছু হবে না আম্মু। তুমি ভয় পেয়ো না। বাপি আছে তো বাপি তোমার কিছু হতে দেবে না।’
‘আই মিস ইউ সো মাচ বাপি।’
নিবিড় চৌধুরী ফোন কেটে দিলেন তাড়াতাড়ি।বিছানা থেকে নেমে দ্রুত চশমা পরে পুলিশ কে কল করল আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ডাক্তার এসে তূর্য কে দেখছে। পেটে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তূর্য আস্তে আস্তে চোখ মেলে। শাওন রুমে দাঁড়িয়ে আছে আর ডক্টর ওষুধ লিখে দিচ্ছে। অসুস্থতার মাঝেও তূর্য বর্ষাকে খোঁজ করে। শাওন এসে জলপট্টি দেওয়ায় জ্বর অনেক কমে এসেছে। তূর্য রুমের চারপাশে চোখ রেখে বর্ষাকে খুঁজে কিন্তু পায় না। বর্ষা পালিয়েছে। কথাটা মস্তিষ্কে আসতে তূর্য শরীরের সমস্ত অসুস্থতা দূর করে বিছানায় উঠে বসে আর বুকে হাত রেখে আর্তনাদ করে ওঠে। শাওন দৌড়ে এসে কাঁধ ও বাহু চেপে ধরে বলে,
‘ কি করছিস?’
শাওন এর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায় তূর্য।
‘কি হয়েছে এমন করছিস কেন? তুই অসুস্থ শুয়ে পড়েছিস। তোর পাকনামি জন্য তখন ডাক্তার দেখানো হয়নি। ড্রেসিং করানো হয়নি। এখন সারারাত কিভাবে পড়েছিলে দেখ।’
‘বর্ষা কোথায়?’সরাসরি জিজ্ঞেস করে তূর্য।
তূর্য এর কথা শুনে চমকে উঠে শাওন।ও সারা রুমে একবার স্ক্যান করে দেখে বর্ষা নাই কোথাও নাই আর দরজাটাও ভুলে লক করা হয়নি।এই রুমে আসার পর থেকে তার রুম লক করা হয়নি। তূর্য এর ওই অবস্থায় দেখে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল শাওন। বর্ষার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। শাওন ঢোক গিলে তূর্য এর দিকে তাকায়।
‘আনসার মি।’
‘তূর্য আসলে আই এ্যাম সরি। আমি ভুলে দরজা লক করিনি এই সুযোগে মনে হয় বর্ষা পালিয়ে গেছে।’
‘ও কোথাও পালাতে পারেনি।বাসায় কোথাও ই আছে গার্ডদের চোখ এড়িয়ে বাসার বাইরে একপাও রাখতে পারবে না সারা বাসা চেক কর কুইক।’
‘হ্যাঁ করছি!’
বলেই শাওন ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তূর্য ও বিছানা থেকে নামতে গেল তখন ডাক্তার কাকা ডেকে উঠলো,
‘একি তুমি এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’
‘আমাকে এখন যেতেই হবে।’
‘তোমার শরীরের কন্ডিশন ভালো না। আবার জ্বর আসতে পারে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারো। তাই রেস্ট করো।’
‘এখন আমি রেস্ট কিছুতেই করতে পারবোনা।পাখির খাঁচা থেকে পালিয়ে গেছে। আমার খাঁচার পাখি আমি ছাড়া না পর্যন্ত সে পালাতে পারে না। আমি তাকে পালাতে দেবোনা।এই সাহসিকতা দেখানোর জন্য তার জন্য আমার স্পেশাল শাস্তি তো পাবেই।’
বলেই তূর্য রুমের বাইরে চলে এলো।বর্ষা এদিকে নিচু হয়ে নিচে নেমে এলো। বিশাল বড় এই বাসা। ওদের বাসার থেকে ও বড় আর কি সুন্দর সাজসজ্জা। হা করে তাকিয়ে রইলো। দরজা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। অনেক কষ্টের মেইন ডোর পেল। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হলো না। এটাতো আর সিম্পল দরজা না। লক করা দরজা আমি এর পাসওয়ার্ড জানব কি করে। সোফার আড়ালে লুকিয়ে পরলো তাড়াতাড়ি বর্ষা। একটা সার্ভেন্ট কে দেখে। ভয়ে ওর হার্টবিট লাফাচ্ছে। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সার্ভেন্ট রান্নাঘরের দিকে চলে যেতেই বর্ষা সোফার আড়াল থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে ই শাওন সেখানে এলো দৌড়ে। শাওন আশেপাশে তাকাতেই বর্ষা সাথে সাথে বসে পড়লো একটুর জন্য বেঁচে গেছে এখনই ধরা পড়ে যেতো।
ধরা পড়লেও তূর্য লোকটা ওকে খুন করে ফেলবে। বাপি আমাকে বাঁচাতে পারবে তো। শাওন সোজা মেইন ডোর খুলে ঘরের বাইরে চলে গেল। এটা দেখে বর্ষার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও লাফিয়ে উঠে ছুটে গেল বাসার বাইরে। তূর্য ল্যাপটপের কাছে বসে আছে। সিসি ক্যামেরা চেক করতে। মাথা ঝিমঝিম করছে ওর।
বর্ষা বাইরে এসে শুধু সবুজ ঘাসের ভড়া জঙ্গল দেখতে পেল মৃদু আলোতে। এখন ওর হাতে তূর্যের ফোন ধরা। শাওন সবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে কাউকে বাইরে যেতে দেখেছি কিনা।
আর সবাইকে জরো করে বোঝাচ্ছে যেন ভালো করে গার্ড দেয় বর্ষা পালিয়েছে এটা ও বলে। তূর্য সিসি টিভি ফুটেছে সবার আগে শাওনকে দেখল ও বাসার বাইরে চলে গেছে। রাগে ওর শাওনের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে। মাথা মোটা একটা ও বাইরে কি করছে? ও আগের ফুটেজ দেখতে লাগে আর বর্ষাকে দেখে কিভাবে ওর অসুস্থ অবস্থায় দেখে মেয়েটা চিন্তিত হচ্ছিলো। ওকে ডাকছিলো। ভয় পাচ্ছিলো। বুদ্ধি করে শাওন কে কল করেছে। ওর জন্য বর্ষাকে চিন্তিত মুখে দেখে কেন জানিনা তূর্যের ভালো লাগছিলো। কিন্তু সাথে সাথে ওর চেয়াল শক্ত হয়ে যায়। বর্ষা লুকিয়ে বাইরে চলে আসে আর বারান্দায় লুগিয়ে ওর বাপির সাথে কথা বলে।
সম্পূর্ণ দেখে ও দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
নিবিড় চৌধুরী পুলিশ কে সব জানায়। পুলিশ তূর্য এর নাম্বার ও নেয়। আর নাম্বার ট্যাগ করে ফেলে।
ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে বর্ষা তখন কেউ ওর বাহু শক্ত করে ধরে টেনে ধরে ও চমকে উঠে।
সামনে অসুস্থ তূর্য কে দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।
‘ আআআপনি…
তূর্য কিছু না বলে ঠাস করে চড় মেরে বসলো বর্ষা কে আর হাত দিয়ে ধরে টেনে হেঁচড়ে নিতে লাগলো।
‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! ছাড়ুন আমাকে! আমি কোথাও যাবো না। আমার বাপি এখনি আমাকে নিতে আসবে।’
তূর্য বর্ষাকে নিয়ে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে। বর্ষাকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। গাড়ি লক করে তূর্য শাওনের কাছে এসে ওকে কিছু একটা বলে গাড়িতে উঠে যায় তূর্য।
বর্ষা ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। ওর হাতে এখনো তূর্য এর ফোন সেখানে বাপির নাম্বার থেকে কল আসছে ও হতভম্ব হয়ে আছে। তখন তূর্য গাড়িতে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে। আর চট করেই বর্ষার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়।আর দ্রুত সিম বের করে ভেঙে ফেলে। তারপর জানালা খুলে ভাঙা টুকরো গুলো ফেলে ছিলো। বর্ষা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। তূর্য এগিয়ে এসে বর্ষার সিট বেল লাগিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একবার তারপর গাড়ি চলতে শুরু হয়। কিছুটা আসতেই থেমে যায়। আর একটু হেলে পরে বর্ষা। তূর্য জানালা খুলে নিজের ফোনটা সজোরে আছড়ে ফেলে সেখানে। চমকে বর্ষা তূর্য এর রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ওর নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ করে যাওয়ার অবস্থা। ওর সাথে কি ঘটবে ভেবে কুঁকড়ে ওঠছে।
পুলিশ নাম্বার ট্যাগ করে যে ঠিকানা পেয়েছে সেই খানে আস্তে তিন ঘন্টা লাগলো। অর্থাৎ সকাল সাতটার তারা আসলো।এখানে এসে তারা একটা পুরাতন জঙ্গলে ঘেরা বাংলো পেলো। নিবিড় চৌধুরী ভেতরে ঢুকতে পাগল প্রায়।
পুলিশ বললো,
‘ এই বাসায় কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বহুদিন কারো পা পরে না এখানে।’
‘ আমার মেরে এখানেই আছে। তারাতাড়ি ভেতরে চলুন।’
‘জ্বি চলুন।’
ভেতরে গিয়ে সবাই অবাক হয়ে গেলো।
.
ঘুমের মধ্যে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলো নিদ্রা।
রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো নিদ্রার। অভ্রকে ছেড়ে যেতে হবে সাথে ও এই স্বপ্ন টা দেখে।
সকালে ব্যাথা শরীর নিয়ে রেডি হয়ে গেলো নিদ্রা অভ্র এসবের কিছুই জানেনা। নিদ্রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিলো। শরীর কাঁপছে ওর কিন্তু অসুস্থতার কথা বলে আর এই বাসায় থাকতে চায় না।
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অনেক চেষ্টা করেও নিদ্রা সফল হতে পারলো না। মাথা ঘুরে নিচে পড়ে গেলো।
অভ্র বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিদ্রাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে ছুটে আসলো ওর কাছে।
#চলবে……..
#চলবে…………