তুমি যে আমার পর্ব -৪৬+৪৭

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_46

(“কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ”)

বর্ষা তুর্যকে ঘৃণা করলেও এখন যে সেই ঘৃণার মাত্রা ছাড়িয়ে সেই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছে। আর এই মানুষটিকে ছাড়া থাকা এখন ওর পক্ষে একদমই অসম্ভব। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তূর্য যখন এখন আর ওর পরিবারের সাথে খারাপ কিছু করে না তাহলে সে সেটা চেষ্টা করবে এই মানুষটাকে নিজের করে ভালোবেসে ভালো পথে রাখার। তার সাথে একটা সংসার তৈরি করার। তূর্য ও হয়তো ওকে ভালোবেহে ফেলেছে। সে যদি ভালো হয়ে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে চাই তাহলে তো তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। আপন করে নেওয়া যায়। সব কিছু ভুলতে পারলেও বর্ষা সেই রাতের কথা বলতে পারেনা। তূর্য বলে ও নাকি এখনো ভার্জিন সাথে কিছুই হয়নি। তাহলে কি সেই রাতে আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল না। কিন্তু আমি কেন কিছু মনে করতে পারছিনা। তূর্য সেই রাতে কিছু করেছে কি না করেনি তা আমি জানিনা কিন্তু যদি করেও থাকে তাহলে এখন সেই মানুষটা আমার স্বামী। সেই সব ভুলে তাকে আপন করার চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে আমার ওপর আমার বাপির ও্উপর তূর্য এর কি জন্য এত রাগ ছিল? কিসের প্রতিশোধ তিনি নিতে চেয়েছিল ? যে করে হোক আমাকে তূর্য এর কাছ থেকে সবকিছু জানতে হবে। আমি না চাইলে বাকিটা জীবন আমাকে তার সাথে কাটাতে হবে। তাকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা না করলে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না। এইভাবে বাঁচা যায় না। বর্ষা নিজেকে অনেক কিছু বুঝালো।

এদিকে তূর্য ও সব প্ল্যান করে ফেলেছে। বর্ষাকে সবকিছু খোলস করে বলে দেবে তারপর নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবে। নিজের মনের কথা বর্ষা কে জানিয়ে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করবে। ভালোবাসায় ভরপুর একটা ছোট্ট সংসার সৃষ্টি করবো। তূর্য এর চোখেমুখে খুশি উপচে পড়ছে শাওন পাশে বসে নিজের ব্রোয়ের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। ব্রো কে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে শাওন। সব সময় ব্রো কে কষ্ট পেতে দেখেছে‌। কিন্তু বর্ষা ভাবির জন্য তার মুখে হাসি ফুটেছে। দেখে তার খুব ভালো লাগছে।
ব্রো সব কিছু জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব ভালো করেছ। ব্রোয়ের সাথে ভাবির সম্পর্ক ভালো হলে তিনি আমাকে ও আর ঘৃণা করবে না। এখন তো ভাবির সামনে যেতেই আমার লজ্জা করে কেমন করে তাকায় থাকে।

বর্ষা আর তূর্য দুজনেই মনে মনে এসব ভাবছে। আপন করে নেওয়ার চেষ্টায় মেতে আছে। দুজনেরই ইচ্ছা পূরণ হলে তাদের জীবনে নেমে আসবে অফুরন্ত সুখ আর ভালবাসা।
কিন্তু এত সহজেই কি ওদেরকে সুখী হতে দেবে? শকুনের নজর অলরেডি পড়ে গেছে সেটা যে ওদের দুজনের অজানা। তুর্য আর বর্ষা ভাবতে পারছেন ওদের সামনে কত বড় ঝড় আসতে চলেছে। কালবৈশাখী ঝড়। সেই ঝড়ে দুজনকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভুল বুঝাবুঝি সব শেষ করে ভালোবাসার সংসার আর স্থাপন করা হবে না তূর্য এর। ও হয়তো কিছু বলার সুযোগ পাই পাবে না। এতগুলো বছর পর শাওন তার ব্রো এর মুখের হাসি ধরে রাখতে পারবে না। সেটা কি সে জানে?
তাদের সুখ শান্তি কেড়ে নেওয়ার জন্য যে একজন মোক্ষম প্ল্যান করে ফেলেছে। তুর্যকে ধ্বংস করতে পারলেই যার শান্তি। আরিয়ান তূর্য আর বর্ষার একটা ছবির দিকে তাকিয়ে ছক কষছে। আর মুখে ভয়ঙ্কর শয়তানি হাসি। হাসি দেখলে বর্ষায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলত কোন মানুষের হাসি এতো ভয়ঙ্কর হতে পারে। আরিয়ান বর্ষার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘খুব শীঘ্রই আপনার সাথে দেখা হচ্ছে মিসেস তূর্য। আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে আমার জীবন ধ্বংস করে ওই বাস্টার্ড কে আমি সুখে শান্তিতে সংসার করতে দেব এটাতো হতেই পারে না। তূর্য তোর মুখটা আমাকে দেখিয়ে তুই যে কি বড় ভুল করেছিস তা তুই হাড়ে হাড়ে টের পাবি।’

বলেই শয়তানের মতো হাসতে লাগলো। আরিয়ানের হাসির শব্দে বিল্ডিং কেঁপে উঠল। আরিয়ান তুর্য উরফে আদিলের বায়ো-ডাটা সম্পর্কে সব জেনে নিয়েছি। কিভাবে বর্ষার সাথে অন্যায় করেছে আবার কিভাবে উপরে উপরে ভালো সেজে ওকে বিয়ে করেছে বর্ষা যে ওকে দুই চোখে দেখতে পারেনা সেটা আরিয়ান জেনে নিয়েছে। আর সব জানার পরে ওদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ আর হাতের নাগালে চলে এসেছে। তূর্য কে শেষ করার অস্ত্র হিসেবে সবচেয়ে আপন মানুষ টাকেও ব্যবহার করবে। হা হা হা তখন তূর্য ওর হাতে কিভাবে অস্ত্র তুলে নিজেকে রক্ষা করবে?

বর্ষা নিজেকে প্রস্তুত করেছিলো আজ তূর্য এর সাথে ভাল করে কথা বলবে। কিন্তু তার আগে বাপি এসে হাজির হলো। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখানে আসার পর যে কয়বার গেছি বাড়িতে থাকা হয়নি বেশিদিন। আম্মু নাকি আমার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। আবার সকাল থেকে নাকি জ্বর এসেছে। নিয়ে যাওয়ার জন্য বাপি পাঠিয়ে দিয়েছে। বর্ষা তূর্য কে জানানোর জন্য কল করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ পেলো। তাই জানাতে পারলাম না শ্বশুরের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে শান্তাকে বলে বেরিয়ে গেলাম।

তূর্য রাতে যেতে পারে সে আশায় বসে রইলাম এই বাসায় এসে। আগে যতবার কলেজ থেকে আমিএ বাসায় এসেছে সেই দিনটা তূর্য এসে পড়েছে রাতে।তাই এবারও আসবে সেটাই ওর বিশ্বাস।
ব্যালকনিতে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে আছি।এই বুঝি তূর্যের গাড়ি এল ঘুম পাচ্ছে আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি।

এদিকে তূর্য বাসায় আসার পথে একটা কল পেল কল রিসিভ করে কথা শেষ করে শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

‘আজ রাতে কানাডা যাওয়ার কোন টিকেট ম্যানেজ কর আমার ইমিডিয়েটলি সেখানে যেতে হবে।’

‘হোয়াট কিন্তু কি দরকারে ব্রো? তুমি তো আজকে ভাবির সাথে সবকিছু শেয়ার করতে চেয়েছিলে!’

‘ সেটা পরেও করা যাবে। কিন্তু জসিম খান কে আগে ধরতে হবে।’

‘ জসিম খান তিনি তো কক্সবাজারে আছেন তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে।

‘ ছিলো কিন্তু গার্লফ্রেন্ড কে খুন করে কানাডা পালিয়েছে।’

‘ ও মাই গড!’

তূর্য বাসায় এসে জানতে পারলো বর্ষা কে ওর বাবা নিয়ে গেছে শুনেই নিশ্চিন্ত হলো। ও না আসা পর্যন্ত ওখানেই থাকা সেভ। বর্ষাকে কল করলো গাড়িতে বসে। বিদেশে যাওয়ার কথাটা বললো না কিন্তু নিজের খেয়াল রাখতে বলে রেখে দিলো।
ফোন রেখে স্ক্রিনে বর্ষার একটা ছবির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
শাওনকে এদিকের খেয়াল রাখতে বললো।

বর্ষা ফোনের দিকে থ মেরে তাকিয়ে আছে। ফোন দিয়ে শুধু একটা কথাই বলেছে তূর্য,

‘ বর্ষা মনি নিজের খেয়াল রাখবা। আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসব। আমি না আসা পর্যন্ত ওই বাসায় থাকো। ওকে টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফেজ।’

বর্ষা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলো। একথা বললো কেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসব
তাহলে কোথায় আছেন উনি? আমিতো গাড়ির শব্দ পেলাম তার মানে উনি গাড়িতেই আছেন। এই কথার মানে বোঝা যাচ্ছে আজকে উনি আসবে না কোথায় যাবেন? পরদিন তিশারা আমাদের বাসায় এল জানতে পেরেছি আমি বাসায় এসেছি। জোর করেই কলেজে নিয়ে আসলো।
বর্ষা কলেজ আসার পর থেকে লক্ষ্য করলো কেউ একজন ওকে ছায়ার মতো ফলো করে যাচ্ছে। ঘটনাটা বুঝতে পেরেছে বাসায় আসার পর থেকে। রিক্সা করে বাসায় আসার সময়ও দেখেছে বর্ষা। দেখেছে ওদের গাড়ির পেছনে একটা কালো মাইক্রো গাড়ি আসছে এতটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এই রাতের বেলাও যখন দেখলো সেই গাড়িটা বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে তখন ভয় পেয়ে গেলো। এইটা তো সেই গাড়ি এই গাড়িটা এইখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন?

বর্ষা উঁকিঝুঁকি মেরে ভয় পেয়ে বারান্দার দরজা আটকে রুমে চলে এলো।
রুমে আসতে ওর ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল এলো। বর্ষা কখনো আননোন নাম্বার থেকে কল রিসিভ করেনা। আজও করল না। পরপর কয়েকবার কল এলো। রিসিভ করলো না তখন ওপাশ থেকে একটা মেসেজ এলো মেসেজ দেখে বর্ষার হাত থেকে ভয়ে ফোন বিছানায় পড়ে গেল। এবার কল আসতেই কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করল। আধা ঘন্টার মত কথা বলা হলো ফোনে। বর্ষা খালি একবার হ্যালো বলে ছিল। আর কোন কথা বলিনি। বাকি আধাঘন্টা অপরিচিত কণ্ঠস্বর থেকে কিছু কথা ভেসে এলো তিনি এক নাগাড়ে অনেক কথা বলল। তার কথা শুনার সময় বর্ষার চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পারছিলো।
লোকটার কথা শেষ হতেই বর্ষার চিৎকার করে বলল,’ আমি আপনার কোন কথা বিশ্বাস করিনা।’

তখন লোকটা হাসতে হাসতে বললো, ‘ আমি জানতাম এতো সহজে আমার কথা আপনি বিশ্বাস করবেন না‌! ওকে প্রমাণ কাল হবে।

বলেই ফোন কেটে দিলো। বর্ষা ফোন ফেলে কাঁদতে লাগলো।

পরদিন বর্ষা বাপি মাম্মা কে চোখ চোখে রাখছে একটু চোখের আড়াল হলেই ছটফট করে উঠে এই বুঝি কিছু হয়ে গেলো। রাতে ভালো ঘুম হয়নি বিধায় বিকেলে ঘুমিয়ে পরেছিলো বর্ষা।এটাই ওর কাল হয়ে দাঁড়ায়। ঘুম ভাঙ্গে মায়ের চিৎকারে। বর্ষা দৌড়ে বাইরে এসে দেখে বাপির মাথায় ও পায়ে আঘাত পেয়ে সোফায় বসে আছে। ছোট একটা এক্সিডেন্ট করেছে বাবা। এই কাজ কে করেছে বুঝতে আর বাকি রইল না বর্ষার। ছুটে এসে সেই নাম্বারে কল করল বর্ষা।

‘কী মিসেস তূর্য দেখা করবেন না আমার সাথে?’

‘করবো।’

‘ ওকে গুড গার্ল বাই!!!’
পরদিন ফোনের লোকটার সাথে বর্ষা দেখা করলো। কোথায় দেখা করবে সেটা মেসেজে জানিয়ে ছিলো।

ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে কফিশপে এসে বসে বর্ষা। অজানা ভয়ে বুক ধুকপুক করছে।

‘ হাই মিসেস তূর্য!’

কারো কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পরলো বর্ষা। ওর সামনে একটা উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের লোক দাঁড়িয়ে আছে। যার মুখে শয়তানি হাসি। লোকটা হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও ঢোক গিলে সালাম দিলো। আরিয়ান তা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। আর চেয়ার টেনে বসে পরলো। আর বর্ষাকে ইশারায় বসতে বললো। বর্ষা ঘোমটা আরো টেনে জড়োসরো হয়ে বসলো। আরিয়ান বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাহনী দেখে বর্ষা গা গুলিয়ে আসছে। লোকটার চাহনী ভালো না। খুব খারাপ। শরীরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কেমন বিচ্ছিরি নজরে। সামনে বসে থাকতেও পারছে না বর্ষা। কিন্তু উপায় ও নাই। বর্ষা ওরনা টেনে টুনে নিচ্ছে আবার কোন দিকে কিছু বেরিয়ে আছে কিনা ভেবে।
আরিয়ান তা দেখে বললো, ‘ গায়ের রং ফর্সা না হলেও তূর্য এর ব‌উ দেখছি ভালোই হট, সেক্সি!’

বর্ষা রাগী চোখে আরিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আপনি যা বলতে ডেকেছেন তাই বলুন।’

বর্ষা পার্স টা আগলে রাখছে খুব করে কারণ পার্সে ও চাকু আর মরিচ গুঁড়া নিয়ে আসছে। নিজেকে প্রোটেক্ট করতে।

আরিয়ান বর্ষার দিকে নিজের ফোন এগিয়ে দিলো। বর্ষা বললো,

‘ ফোন দিচ্ছেন কেন?’

আরিয়ান বললো, ‘ দেখো।’

বর্ষা কাঁপা হাতে ফোনটা নিলো ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে কিছু বাজে নগ্ন ছবি। তূর্য ও পরিচিত মেয়ে‌‌। যাদের সাথে খুব ক্লোজ হয়ে ছবি তুলেছে। পোশাক নাই বলতে গেলে এমন একটা ছবি দেখতেই বর্ষা ঠাস করে আছড়ে ফেললো ফোন। আরিয়ান বর্ষার মুখের দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।

‘ এসব কি তূর্য এটা হতেই পারে না। এসব ইডিট করা ছবি। আমাকে বোকা পেয়েছেন তাই না!’ রেগে চিৎকার করে ফেললাম বর্ষা।

আরিয়ান বললো,
‘ ওরে বাবা এতো ভালোবাসা কিন্তু আমি তো জানতাম তুমি ওকে ঘৃণা করো। আর তূর্য যা করেছে তোমার সাথে তাতে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে।’

‘ আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে?’

‘ সেসব না জানলেও চলবে কিন্তু আমার কাছে আরো বড় প্রমাণ আছে বলেই আরেকটা ফোন বের করলো। এবার ফোনে ভিডিও দিয়েছে

‘ আবার কি আমি এসব বিশ্বাস করিনা চলে যান।’

জোর করেই দেখালো ভিডিও দেখে বর্ষা স্তব্ধ হয়ে গেলো। ছবি না হয় ইডিট করা যায়। কিন্তু এই ভিডিও এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তূর্য একটা মেয়ের সাথে আছে। তূর্য কে মাতাল লাগছে কিন্তু মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগছে কেন। মেয়েটা তূর্য কে পেছনে থেকে জাপটে ধরে আছে। মেয়েটা এবার সামনে চলে এলো তূর্য এর কোর্ট খুলে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। এবার আমি মেয়েটার মুখ স্পষ্ট দেখলাম এটা তো জেসি। শার্ট খুলে ফেলে দিলো তারপর তূর্য কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে ও ঝাঁপিয়ে পরলো ওর উপর এটুকু দেখেই বর্ষা চোখ বন্ধ করে ফেললো আর বলল,

‘ সরান এটা। আমি আর দেখতে চাই না।’ বর্ষার বন্ধ চোখের কোনে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। তূর্য কে ভালোবাসে ফেলেছে ও এখন তাকে অন্য নারীর সাথে এতোটা অঙ্গরঙ্গ ভালো ও সহ্য করতে পারছে না। তার মানে জেসির সাথে উনার সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আমাকে বলেনি। বলেছে ওনাকে নাকি জেসি ডিসটার্ব করে। কি মিথ্যুক! আমি জানতাম তূর্য খারাপ খুব খারাপ! খারাপ না হলে কি আমার সাথে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাইতো। সব জেনেও আমি এই মানুষটার উপর দূর্বল হয়ে গেলাম। আবার তাকে মেনে নিতেও চাইলাম। ছিঃ এতো ভালোবাসার লোভী কেন আমি। এমন মানুষের সাথে থাকা সম্ভব না।
নিজের কাজ হয়ে গেছে বুঝতে পেরে আরিয়ানের আনন্দ দেখে। বর্ষা এলোমেলো পা ফেলে বাসায় চলে এলো।
বর্ষার বডি গার্ড যাকে তূর্য হায়ার করেছিলো সে সব দেখেছে তাই সে তূর্য কে সব বলার জন্য ফোন করলো তূর্য কে কিন্তু রিসিভ হ‌ওয়ার আগেই একটা গুলি এসে তার বুক বরাবর লাগলো আর লোকটা সেখানেই প্রাণ হারালো।

নিদ্রা আর অভ্র হানিমুনে গেছে মালদ্বীপ। ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দুজন দুজনকে মেনে নিজেদের ভালোবাসার ডুবে আছে।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_47(১ম অংশ)

(“কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ”)

বর্ষার বাবা-মা দুজনের মেয়ের বিষন্ন আর মলিন মুখটা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়ের কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও তেমন আশানুরূপ কোনো উত্তর পায় না। বর্ষার মা বিছানায় জ্বরে পড়ে থাকলেও মেয়েরা মন অবস্থা দেখে তিনি চিন্তিত। আর তখনই বর্ষাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? কিন্তু বর্ষা উত্তরে কিছুই বলেনা!

‘বর্ষা’

মায়ের ডাকে বর্ষা হাত থামিয়ে দেয়। বর্ষা মায়ের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ মায়ের ডাক শুনে চমকে ওঠে বলে, ‘ হ্যা মাম্মা!’

‘তোর কি হয়েছে সত্যি করে বলতো আমাকে?

‘আমার আবার কি হবে কিছুই তো হয়নি!’

‘মিথ্যে বলিস না তুই আমাকে। আমি জানি তোর কিছু একটা হয়েছে। কি লুকাচ্ছিস জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস??’

‘তেমন কিছু না মাম্মা। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছ আমার কিচ্ছু হয়নি।’

‘আমি তোর মা। আর মায়ের চোখে সন্তানেরা এত সোজা ফাঁকি দিতে পারেন আমি জানি তোর কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু তুই সেটা আমাদের জানাতে চাস না। এতটাই বড় হয়ে গেলি যে এখনি কথা লুকাতে শিখে গেছিস।’

‘ উফফ মাম্মা কিছু হয়নি বললাম তো। তুমি অযথা চিন্তা করছো ঘুমাও তো চুপচাপ।’

বলেই বর্ষা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল আর বেরিয়ে গেল রুম থেকে। এদিকে বর্ষার মা-মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল,,
‘একমাত্র আদরের মেয়েটা আমাদের কি হয়ে গেল তার জীবন! হাসিখুশি প্রানবন্ত মেয়েটা এতটা চাপা স্বভাবের আর হুট করে যেন বড় হয়ে গেলো। কয়দিন আগে যে মেয়েটা বাচ্চাদের মত গাল ফুলে রাখতো কিছু চেয়ে না দিলেই কান্না করতো। আজ সে কষ্ট মুখে হাসি ফুটিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কি এত কষ্ট মেয়েটার? আমরা কি মেয়েটাকে ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পারলাম না! জামাই তো খুব ভালো তাহলে মেয়েরা এত কষ্ট কেন।’

শাওন একবার এসেছিল এই বাসায়। বর্ষার খোঁজ নেওয়ার জন্য।কিন্তু বর্ষা তাকে বাসাতেই ঢুকতে দেয়নি খবর আর কিভাবে নেবে এরপর আর শাওন সাহস করে আসতে পারেনি। আর এদিকে আরিয়ান ফোন হোয়াটসঅ্যাপের নাম্বার সবকিছু কিভাবে পেয়ে যাচ্ছে কে জানি। আর ফোন করে তূর্য এর সম্পর্কে অনেক অনেক কথা বলেছে বর্ষাকে বর্ষা শুনতে না চাইলেও তা শুনেছে আসলে ফিফটি পার্সেন্ট শোনার ইচ্ছা আর ফিফটি পার্সেন শোনার ইচ্ছা নাই তাই দুইটাই আর করা হয়েছে।আরিয়ান এর মাধ্যমে তূর্য এর বিষয়ে অনেক কিছু বর্ষাকে জানতে পেরেছে। আর যত শুনেছে ততই তূর্যের প্রতি ঘৃণা টা বেড়েছে ভালোবাসা যেটুকু এসেছিল সবাই যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে।কিন্তু তূর্য সামনে আসলে সেটা চলে হয়ে যায়। তূর্য কাছে থাকলেই অফুরন্ত ভালোবাসা তার থেকে পাওয়ার ইচ্ছা জায়গায় বর্ষার মনে। এই অনুভূতি যে হয়ে গেছে ঘৃণা করলেও যে মানুষটাকে ভালোবাসে। যতটা ঘৃণা করে ততটাই যে মানুষটাকে ভালোবাসে কি করবে বর্ষা এসব ভেবে আবার চিৎকার করে কাঁদে।

আরিয়ানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বর্ষা ওর নাম্বার সব জায়গায় ব্লক করে দিয়েছে।তবু কিভাবে যেন আরেক নাম্বার দিয়ে ওকে জালানো শুরু করে দেয়। এই লোকটার কথা শুনে মরে যেতে ইচ্ছে করে। এজন্য আরিয়ানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ফোন ধরায় অফ করে দিলো। তূর্য এর নাম্বার তো দুদিন আগেই ব্লক করে দিয়েছে। লোকটার কাছে আর ফিরে যাবে না বর্ষা এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকটা তাকে ভালোবাসে না শুধু প্রতিশোধের নেশায় বিয়ে করেছে। কিন্তু আমাকে অত্যাচার কেন করছে না আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। দুই দিন আগেও আমি ভেবেছিলাম হয়তো তূর্য আমাকে ভালোবাসে বলে বিয়ে করেছে বাবা মার উপর ও তো আর কোন কষ্ট অত্যাচার করেন না। আমাদের সাথে করেন না। তাহলে হয়তো বা আমাকে ভালোবাসে ভেবেছিলাম।কিন্তু না আমি তো জেনে গেছি তূর্য তার ভাই এর প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার উপর আমার পরিবারের উপর।তার ভাইকে তো আমারা বাপি না জেনেই শাস্তি দিয়েছিলো কিন্তু সেই শাস্তির জের ধরেই আমার বাপি কে দোষী সাব্যস্ত করেছে তূর্য। আর সেই প্রতিশোধ নিতে আমাদের জীবনটা নরক তুললো করে তুলেছে। আমাকে ভালোবাসে না আমাকে যদি ভালোবাসতো তাহলে বউ রেখে বাইরের মেয়ের সাথে মেলামেশা করতে পারত না। উনার ওই জেসির সাথে ও অ্যাফেয়ার আছে আরও কত শত মেয়ের সাথে আছে কে জানে। আগে উনি যেমন ই হোক এখন তো ভালো হতে পারতো কিন্তু না। আমাকে সমাজের চোখে ব‌উ করে বাইরে ঠিকই অন্য মেয়েদের সাথে ফূর্তি করে বেড়ায়। এমন চরিত্র হীনা একটা লোকের সাথে কিনা আমার সংসার হলো। আবার তার সাথে আমি থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন হায় আল্লাহ।

এদিকে তূর্য পাঁচদিন পর বাংলাদেশের এসেছে। এখানে আসার পর আর বর্ষার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি দেখা ও করতে পারেনি। জসিম খানের কেসটা নিয়ে খুব বিজি ছিল। বিদেশে গিয়ে জসিম খানকে ধরতে পারলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তাকে বাংলাদেশে আনার আগেই খুন করা হয়। তূর্য জসিম খান কে কখনো খুন করতে চাননি তাকে জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশ আনতে চেয়েছিলো। তার মাধ্যমে একজন বড় কালপিট কে ধরা যেত। কিন্তু সেই তো এতোটা কাঁচা না তাই তো তারা জসিম খান কে কায়দা করে খুন করে দিয়েছে।
জসিম খানের গার্লফ্রেন্ড পূজা দাস দুজনের লাশ ইনভেস্ট করতে হয়েছে। জসিম খানের স্ত্রীর সাথে দেখা করেছে তূর্য। জসিম খানের স্ত্রীর মালতি বেগম। যার সাথে দেখা করে অবাক হয়েছে তূর্য স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়েও তার মধ্যে কষ্টের ছাপ দেখতে পায়নি তূর্য। জসিম খানের দুই জমজ ছেলে দুজনেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। তারা বাবাকে খুব একটা ভালো বাসেন বলে মনে হয় না। এখবর শুনে তারাও চুপটি মেরে ছিল তারা যে মা ভক্ত দেখে বোঝা গেছে। এর অবশ্য কারণ আছে জসিম খান সন্তান এবং স্ত্রীর উপর খুব অত্যাচার করতেন। জসিম খানের বহু নারীর সাথে মেলামেশা ছিল এজন্য তার স্ত্রীর সাথে সবসময়ই দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত।তিনি খুব কাজ পাগল মানুষ ছিল টাকা পয়সা ছিল অফুরন্ত।
স্ত্রী সন্তানের প্রতি সবসময় কঠোর ছিলেন। শুধু সময় মত টাকা পয়সা দিতেন এছাড়া ভালোবাসা ছিল না তাদের প্রতি।মালতি বেগম স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাসায় এসে থাকতে শুরু করেন।তারপরে থেকে ছয়মাস ধরে তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই যোগাযোগও নাই। ডিভোর্স না হলেও তাদের ডিভোর্স এর মত সরাসরি সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু অফিশিয়াল ডিবোর্সে রূপান্তরিত হয় নি।

এদিকে পূজা দাস অত্যন্ত সুন্দর একটা নারী। যিনি টাকা পাগল।যেখানে টাকা আছে সেখানেই তিনি আছেন। টাকার জন্য তিনি আগের দুই স্বামী কে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছেন। তারপরে নজর পড়েছে জসিম খানের ওপর জসিম খান ও সুন্দরী পূজাকে দেখেই পাগল প্রায়। এজন্য তো মুসলিম হয়েও হিন্দু পূজার জন্যি পাগল হয়ে যায়। দুজনেই গভীর প্রেমে লিপ্ত হয়ে যায়। ভালোই চলছিল তাদের প্রেম লীলা। শেষবার তো কক্সবাজারে বেড়াতে ও গিয়েছিলেন। কিন্তু কি এমন হল যে জসিম খান তার প্রেমিকাকে মেরে ফেললেন এটা কারো মাথায় আসছে না।সবাই বলছে পূজা দাসকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে কিন্তু তূর্যের লাশ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। মারার খবর শোনার পর অনেকেই বলছেন।জসিম খানের সাথে প্রেমে লিপ্ত হওয়ার পর ও নাকি জসিম খান তাকে শর্ত দিয়েছিল পূজাকে আর কারো সাথে সম্পর্ক করা যাবে না এমন কথা বলেছিলো কিন্তু পূজা স্বীকার করেও আড়ালে লুকিয়ে অন্যদের সাথে মেলামেশা করেছে। যা জেনেই নাকি এমন কান্ড করেছে।
এই কাজ কাজ করে তুর্য বর্ষার খোঁজ নিতে পারছে না এদিকে বর্ষার জন্য যে লোকটাকে হায়ার করা হয়েছিল তিনি আচমকা খুন করা হয় এটা যে আরিয়ান করেছে তার কোন সন্দেহ নাই। আরিয়ান বর্ষার খোঁজ পেয়েছে ও যে কোন ঘাপলা না করে বসে থাকবেনা সেটা তূর্য খুব ভালো করে জানে। তূর্য কপালে আংগুল রেখে নানান কথা ভাবছিলো। বর্ষা দেখার জন্য ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ওর চোখদুটো তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। কতদিন ধরে প্রিয়তমাকে দুচোখ ভরে দেখি না। কাজ বাদ এখন শুধু প্রিয়তমার কথা ভাববে তূর্য। আগে তাকে সব জানিয়ে মনের কথা খুলে বলে আপন করে নেবে তারপর বাকি সব।
যেই ভাবা সেই কাজ তূর্য থানা থেকে বেরিয়ে আসে। আর দু দিনের ছুটি নিয়ে আসে।গন্তব্য এখন শ্বশুর বাড়ি যাওয়া আর বউয়ের রাগ ভাঙ্গানো। বউ তাকে যতই বলুক কেয়ার করিনা কিন্তু এতদিন না যাওয়ার জন্য যে তার ব‌উ রাগ করে গাল ফুলিয়ে আছে সেটা সে খুব ভাল করেই জানে।

শ্বশুরবাড়ি এসে কলিং বেল দিতেই শাশুড়ি মা দরজা খুলে দাও। বর্ষার মা দরজার বাইরে একমাত্র মেয়ের জামাইকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। মেয়ের জামাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তূর্য সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।2 মিনিট শাশুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এদিক-ওদিক তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি ফেলল প্রিয়তমাকে দেখার জন্য। কিন্তু তূর্যর ব্যাডলাক বর্ষা তখন এখানে ছিলই না তাই তাড়াতাড়ি রুমে যাওয়ার চিন্তা করল। এদিকে বর্ষা সারাদিন খাইনি আর না গোসল করেছে।ফোনের মধ্যে তূর্য এর ঘুমন্ত একটা ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের জল ফেলেছি। মানুষটাকে ঘৃণা করলেও এত কেন ভালবাসি। এটাতো আমার অন্যায়।তূর্যকে ভালোবেসে ফেলেছি যখন তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না বুঝতে পারলাম তখন তাকে মেনে নেওয়ার কথা ভাবলাম। তখন ঘুমন্ত তূর্য এর ঐ মায়াবী মুখটা দেখে একটা ছবি তুলে নিয়েছিলাম ফট করে। ঘুমালে মানুষটাকে এত সুন্দর লাগে যে ছবি তুলেই ক্ষান্ত হয়নি কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়েছিলাম।
বর্ষায় কান্না মাখা মুখ নিয়ে বাবা মায়ের সামনে যেতে চায় না এ জন্য বাথরুমে চলে গেল শাওয়ার নেয়ার জন্য। অন্যমনস্ক হয়ে বাথরুমে যাওয়া পোশাক নিতেই ভুলে গেল বর্ষা।

এদিকে তুর্য বড় বড় পা ফেলে বর্ষার রুমে ঢুকে যায়। বর্ষা গোসল করার আগে দরজা খুলে গিয়েছিল। এ জন্য তূর্য এর রুমে ঢুকতে বেগ পেতে হয়নি। রুমে ঢুকে দরজা আটকে পেছন ফিরে রুম সম্পূর্ণ খালি দেখে। বর্ষা কোথায় ভাবতেই বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসে। আর তাতেই বুঝতে পারে বর্ষা বাথরুমে আছে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ভেতর ঢুকে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয়। আর শার্ট খুলে ফেলে।
এদিকে বর্ষা গোসল শেষ করে দেখে পোশাক আনেনি। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে কোন রকম তোয়াল পেচিয়ে বেরিয়ে আসে। এলোমেলো ভেজা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। রুমে যে কেউ উপস্থিত আছে সেটাও লক্ষ্য করে না। আর এদিকে বর্ষাকে এই লুকে দেখে তূর্য এর হার্টবিট বেড়ে যায়। দমবন্ধ করা অনুভূতি হয়।থমকানো দৃষ্টিতে প্রিয়তমার এই লুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। বর্ষার হাটু সম্পন্ন দেখা যাচ্ছে উন্মুক্ত করা। সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। একটুখানি জায়গা জুড়ে তোয়াল জড়িয়ে রেখেছে। ভেজা চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ে ফ্লোরে ভিজে যাচ্ছে। বর্ষার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের সাদা তোয়াল টাও মারাত্মক লাগছে। প্রিয়তমার এমন লুক দেখে তুর্য বুকে হাত চেপে ধরলো অস্থির লাগছে ওর। এই মেয়ে ওকে মেরে ফেলারও প্ল্যান করেছে। না হলে এত দিন পর আমার সামনে এই ভাবে এসে মারতে চাই তো না নিজের রূপের আগুনে। হা করে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নেশা লেগে গেছে বর্ষার এই রুপ দেখে তূর্য এর। ভালবাসার নেশা। এখন আর ওর কোন দিকে ধ্যান ধারনা নাই। হা করে প্রিয়তমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো। একদম বর্ষার পিঠ ঘেষে বুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।

বর্ষা আয়না দিকে তাকাতেই পেছনে তূর্য এর নেশাতুর দৃষ্টি দেখে থমকে যায় এই লোকটা এখানে কখন এলো? ও কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই তূর্য এর কোমড় জড়িয়ে জাপটে ধরেছে। বর্ষা কেঁপে ওঠে‌। ওর সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। এইভাবে তূর্য এর সামনে থাকতেও লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তার উপর চেপে ধরায় আরো দমবন্ধ করা অবস্থা হয়।
তাও বর্ষা কাঁপা কাঁপা গলায় টেনে টেনে বলে,

‘ আ–প–নি কখন এলেন?’ বর্ষা প্রশ্নের কোন উত্তর পেলো না। তূর্য উত্তর দেয়ার মত অবস্থাতেই নেই। সে তো এখন ডুবে আছে তার প্রিয়তমার নেশায়।তার এখন দুনিয়ার কোনো খবর নাই। তূর্য বর্ষার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়। বর্ষা অস্বস্তিতে ছটফট করছে। তূর্য হঠাৎ বর্ষার চুলগুলো সরিয়ে দেয় পিঠ থেকে উন্মুক্ত করে দেয় কাঁধ। মাথা ঝুঁকিয়ে কাঁধে ঠোঁট চেপে ধরে। সাথে সাথে বর্ষা চোখ বন্ধ করে নেয়। আর খামছে ধরে তূর্য এর হাত। তূর্য বর্ষার পেট জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো হাত সেই হাতের উপর বর্ষা খামচে ধরেছে।

তূর্য এর সেদিকে খেয়াল নেয় সে আছে বর্ষার মাঝে ডুবে। বর্ষার কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে থাকে এক নাগাড়ে উন্মাদের মত। বর্ষা তাকে আজকে মারাত্মক ভাবে জড়িয়ে নিয়েছে। পাগল করে তুলেছে। বর্ষা চোখ খিচে বুজে আছে। আর ঠোট কামড়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। বর্ষা তূর্য করা অন্যায় কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেছে। ও তূর্য এর ভালোবাসায় ডুবে চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করছে। তূর্য ফট করেই মাথা তুলে আয়নার দিকে তাকিয়ে বর্ষার মুখের দিকে তাকায় আর সাথে সাথে এক টানে ঘুরে নিজের দিকে ফেরায়। বর্ষা চোখ খুলে তাকিয়ে আছে তূর্য এর মুখের দিকে। তূর্য এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কতোদিন পর দেখছে নিজের ব‌উটাকে। মুখে উপর আসা এলোমেলো চুলগুলো হাত বাড়িয়ে সরিয়ে দেয়। বর্ষা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে তূর্য কে দেখছে। তূর্য বর্ষার কোমরে চাপ দিয়ে নিজের আরো কাছে এনে কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়। বর্ষা সাথে সাথে চোখ বুজে নেয়। তূর্য তা দেখে বর্ষার চোখের পাতাও চুমু খায়।
বর্ষা কেঁপে উঠে। এবার তূর্য ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। পাতলা চিকন ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে তা ছুয়ে দেওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে। তৃষ্ণার্ত কাকের মতো তাকিয়ে আছে ছুঁয়ে দিতে। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে তূর্য কিন্তু ওর সমস্ত প্ল্যান বন্ড করে দিলো। হঠাৎ বর্ষা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো তূর্য কে আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। দৌড়ে আলমারির থেকে পোশাক নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে ফেললো। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে বর্ষা।

এদিকে তূর্য আহাম্মকের মতো বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর হঠাৎ কিছু ভেবে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বিছানায় গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই বর্ষার চেহারাটা ভেসে উঠলো।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_47(২য় অংশ)

রাতে ডিনার করার সময় তূর্য বর্ষাকে খুব জ্বালাতন করলো। বর্ষা দাঁত চেপে সহ্য করেছে। তূর্য এর ঝন্ত্রণায় রুমে যায়নি। সেই যে ড্রেস পরে বের হয়েছিলো আর ঢুকে নি। খাওয়া শেষে তূর্য বাপির সাথে আড্ডা দিচ্ছে। বর্ষা এই সুযোগে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল ঘুমানোর জন্য। জেগে থাকলে তূর্যের ঝন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে যাব। ঘুম ঘুম ভাব হতেই চমকে চোখ মেলে তাকালো গুনগুন করে কান্নার আওয়াজ শুনে। ধরফরিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। আমি দেখতে পেলাম রুম ফাঁকা। আশেপাশে তূর্য কে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কোথায়? আর এমন করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কে? কান্নার আওয়াজ বর্ষা নিজের রুমের বেলকনি থেকে পাচ্ছে। বর্ষা তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। কান্নাটা পুরুষ এর মনে হচ্ছে কন্ঠ টাও পরিচিত। কেন জানি এই কান্নার আওয়াজ শুনে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না।
বেলকনিতে গিয়ে আমি আরেক ঝটকা খেলাম। তূর্য কাঁদছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কি যেন বলছে আর কাঁদছে। আমি এগিয়ে একদম তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালাম। কথা শুনার জন্য কিন্তু তূর্য হয়তো বুঝে ফেলেছে আমার উপস্থিতি।
আর তাই তো কথা অফ করে আমার দিকে ঘুরলো। আমি ভয় পেয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বকা দিবে নাকি? কিন্তু আমাকে কিছু বললো না আচমকা দুহাত দিয়ে আমার কোমর পেঁচিয়ে জরিয়ে ধরলো। আমি শিউরে উঠলাম। আমার কামিজ ভেজা অনুভব হচ্ছে।
তূর্য কি কাঁদছে? কিন্তু কেন?
বর্ষা তূর্য কে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি হয়েছে কাঁদছেন কেন?’

তূর্য কোন কথা বললো না। চুপ করেই আছে।

বর্ষা আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘ না ঘুমিয়ে এখানে বসে কাঁদছেন কেন? সমস্যা কি?’

এবার তূর্য মাথা তুলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে বর্ষা। এই সময় এই তারিখে আমার মাকে আমি মৃত্যু গ্ৰহণ করতে দেখেছি‌‌। কি নির্মম সেই দৃশ্য। আমার শরীর কাঁপছে ভয়ে দেখো।’

বলেই তূর্য বর্ষার দিকে হাত উঁচু করে দেখালো। সত্যি কাঁপছে তূর্যের হাত। এই মানুষটা ও ভয় পেতে পারে জানা ছিলো না বর্ষার ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে।

তূর্য মাকে নিয়ে অনেক কথা বলছে তাদের পরিবারের কথা যা বর্ষার একদম অজানা ছিলো। তূর্য রা ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা মা তিন ভাই বোন নিয়ে। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। তূর্য এর মায়ের খুব ইচ্ছে ছিলো দু ছেলের একজন কে পুলিশ অফিসার করবেন। বড় তূর্য ছিলো তাই আশাটা তাকে নিয়েই ছিলো। খুব টাকা পয়সা না থাকলে ও তাদের পরিবারে ছিল অফুরন্ত সুখ, ভালোবাসা। কিন্তু সেই পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় একজনের কালো ছায়ায়।
তূর্য এর বাবার অফিসের অফিসার মিনহাজুল চৌধুরীর বিবাহ বার্ষিকীতে তূর্যদের ফ্যামিলির সবাইকে ইনভাইট করে। এত বড়লোকের বাসায় দাওয়াত খেতে যেতে চায় না তূর্যের বাবা-মা কিন্তু তাদের অতিরিক্ত অনুরোধে যেতে বাধ্য হয়। সেই যাওয়াটাই কাল হয়ে দাড়ায় ওদের জীবনে। তূর্যের মা মোহিনী মিনহাজুল চৌধুরীকে দেখে চমকে উঠেন। মিনহাজুল চৌধুরীকে তিনি আগে থেকেই চেনেন এই তো সেই লোক যিনি ভার্সিটিতে লেখাপড়া কালীন তিন বছর তার পেছনে পাগলা কুকুরের মতো ঘুরেছে। ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। সুযোগ পেলে হাত ধরে টানাটানি শরীর এ হাত দেওয়ার ও কয়েকবার চেষ্টা করেছে। এজন্য তো কতোবার থাপ্পর ও মেরেছে। কিন্তু খুব ঠোঁট কাটা ছিলো এই লোকটা। কিন্তু তিনি কখনো তার ডাকে সাড়া দেয়নি। সব সময় ইগনোর করে গেছেন।
10 বছর পর আবার সেই লোকটার সাথে দেখা হওয়ার বিব্রত বোধ করতে থাকেন তিনি। তাকে দেখে মিনহাজুর চৌধুরী ও প্রচুর অবাক হোন। কিন্তু অনুষ্ঠানে কেউ কারো সাথে কথা বলে না দূর থেকেই দৃষ্টি দিতে থাকে মিনহাজুল চৌধুরী। মোহিনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে কিন্তু তার চোখে মুখে অস্বস্তি। মিনহাজুল এর স্বাভাবিক কথাবার্তা শুনে তিনি মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হয়তো অতীত ভুলে গেছেন। এসব ভেবে তিনি অনুষ্ঠানটা উপভোগ করে। কিন্তু কদিন পরে তার চিন্তাভাবনা সব ভুল প্রমাণ করে মিনহাজুল একদিন তার বাসায় আগমন করে। তূর্য এর বাবা অফিসে ছিলেন। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে মিনহাজুল চৌধুরীকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে। সেদিন বুঝতে পারে লোকটা এখনো ভালো হয়নি। সেদিন মোহিনীকে আবার বাজে প্রস্তাব দেয়। বিয়ে হয়েছে সন্তান আছে দুজনের‌ই তবুও লোকটার চরিত্র ঠিক হয়নি। তার মুখে এমন বাজে প্রস্তাব আর বাজে কথা শুনে সেদিন মোহিনী আবার গায়ে হাত তোলে। রাগে গজগজ করতে করতে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে চায় তখন মিনহাজুল বলে,

‘তোমার হাজবেন্ড যে আমার অফিসে কাজ করে সেটা হয়তো তুমি ভুলে গেছো মোহিনী সোনা! আমার কথায় তুমি রাজি না হলে কিন্তু তোমার হাজবেন্ডের বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাবে।’

মোহিনী একথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। তূর্য তখন নিজের রুমে পরছিলো। বাসায় কারো চিৎকার ও নিজের মায়ের হুংকার শুনে দৌড়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে উঁকি মেরে দেখে একটা লোক মায়ের সাথে তর্ক করছে। বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যায় মোহিনী ও মিনহাজুল।
মিনহাজুল মোহিনীর দিকে তাকিয়ে বলে,
।’আমি রুমে গিয়ে লুকিয়ে পড়ছে আমাকে যদি বাসায় কেউ দেখে দুর্নাম তোমার হবে আমার না। তাই আমাকে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না। আমার প্রস্তাব এ ভালোই ভালোয় রাজি হয়ে যাও এই কথা তোমার হাজব্যান্ড বা অন্য কেউ জানতে পারবে না সবকিছু হবে সবার আড়ালে। আমি তোমার হাজব্যান্ড কে বড় পদে করে দেবো অনেক টাকা পাবে তোমাদের এই অভাব-অনটনের সংসার কেটে যাবে। তার জন্য শুধু আমাকে খুশি করো তাহলে তোমাকে টাকার বিছানায় শুয়ে রাখবো সোনা। এতো বছর পরও আমি তোমার জন্য কতো পাগল দেখছো এখনো তুমি আগের মতোই সুন্দরী আছো। খালি একটু মোটা হয়েছো বাট আই লাইক ইট। ‘

বলেই বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। রুমে প্রবেশ করলো পাশের বাসার তানিয়া ভাবি ও তূর্য এর বড় বোন আলিশা প্রাইভেট পরে এসেছে। আলিশা রুমে আসতেই তূর্য বোনকে পেয়ে সব খুলে বলল। যে একটা লোক এসেছে আম্মুর সাথে তিনি রাগারাগী করছিলো। এখন তোমাদের আওয়াজ আব্বু আম্মুর রুমে লুকিয়ে বসে আছে। আলিশা আড়াল থেকে দেখেই চিনে ফেললো ওইদিন অনুষ্ঠানে লোকটাকে ঐ দেখেছে। তূর্য তা ভুলে গেছে কারণ ওর ছোট মস্তিষেকর সব বলতেই তুর্য চিনে ফেলল। আহান ঘুমিয়ে আছে তূর্য এর ছোট ভাই‌। এদিকে তানিয়া ভাবি যাচ্ছে না বলে মিনহাজুলকে বাসা থেকে বের করতে পারছে না। তার জন্য না জানি তার সংসার ভেঙ্গে যায় সেই ভয়ে তিনি কুঁকড়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ কে ডেকে বলছে মানুষটা বাসায় আসার আগে যেনো এই বিপদকে বাসা থেকে বের করতে পারি।
তানিয়া ভাবি সন্ধ্যা আজানে পরে বাসা থেকে বের হলো। তূর্য যে রুমে ছিলো সেই রুমের সামনে যাওয়ার সময় মোহিনী দরজা আটকে যায়।নিকৃষ্ট লোক তাকে বাসা থেকে বের করার জন্য তাঁকে মুখ খারাপ করতে হবে চিৎকার করতে হবে সেসব শুনে যদি ছেলেমেয়ে আবার বেরিয়ে আসে তাই এমনটা করলো। এদিকে আলিশা রান্না ঘরে ঢুকেছে খাবার নিতে দুপুর আজ একটা রুটি খেয়েই চলে গিয়েছিলো তাই ওর খিদে পেয়েছে।

রাগে গজগজ করতে করতে রুমে গিয়ে দেখে মিনহাজুল বিছানায় শুয়ে আছে। মোহিনী গিয়ে বললো,

‘তাড়াতাড়ি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যান!’

‘আমার প্রস্তাবে তুমি রাজি হয়েছ সোনা। তাহলে আসো তোমাকে একটু আদর করে যাই। এখন তো তোমার ওই সো কল স্বামী বাসায় আসবে না। আসতে আসতে আটটা বাজবে এক ঘন্টা টাইম আছে। সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট আমি। কতো বার কাছে যেতে চেয়েছি তুমি সব সময় আমাকে দূর-দূর করেছো। এত বছর পর তোমাকে দেখে আবার আমার সেই পুরনো প্রেমটা জেগে উঠেছে। তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার নেশাটা আমাকে পাগল করে তুলছে।সেদিন দেখার পর আমি এক ফোঁটাও ঘুমাইতে পারি নি সবসময় তোমাকে ভেবেছি।কাছে আসো একটু আদর করে নিজেকে শান্ত করি।’

মিনহাজুল এর কথা শুনে মোহিনীর সারা শরীর ঘৃণায় কাঁপতে লাগলো। মন চাচ্ছে এই লোকটাকে খুন করে ফেলতে। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

‘আরেকটা বাজে আছে কথা বললে আমি তোকে খুন করে ফেলবো। বের হ শয়তান আমি তোর কোন প্রস্তাবে রাজি হয়নি। না আগে রাজি ছিলাম আর না কখনো হবো। তোর ওই মুখ দেখলেই আমার থু থু দিতে মন চায়। এই তোর না মেয়ে আছে ব‌উ আছে তবু ও তুই এইসব করতে এসেছিস তোর লজ্জা করে না। জানোয়ার তুই কি মানুষ। এতো দিনেও একটু সুদ রাসনি আগের মতোই জানোয়ার রয়ে গেছিস।’

মোহিনীর কথা শুনে মিনহাজুল রাগে ফেটে পড়লো।
বিছানা থেকে উঠে মোহিনীকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় যেতে বলল,

‘ আগের মতোই তেজ আছে দেখছি। তোর তেজ না কমলে আমার স্বভাব পাল্টাবে কেন রে। এতোক্ষণ ভালোই ভালোই বলেছি এখন তোকে জোর করে হলেওআমি ভোগ করেই ছাড়বো। তোর এই শরীর আমার চাই ই চাই। আমি মিনহাজুল বললে হাজার হাজার মেয়ে আমার সাথে বেড শেয়ার করতে রাজি হয়ে। আর তুই আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিস। কথায় কথায় থাপ্পর মেরেছিস। অবহেলা করেছিস এত কিছুর পরও আমি তোর পেছন এ পড়ে থেকেছি। আজ আমি সব অপমানের শোধ তুলেই ছাড়বো। এদিকে তূর্য দরজা লাগানোর শর্তে দরজা ধাক্কাচ্ছে বের হওয়ার জন্য।

মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে আলিশা মায়ের কাছে যায়। আর সেখানে গিয়ে যা দেখে তা দেখে ওও চিৎকার করতে থাকে।

‘আঙ্কেল তুমি আমার আম্মুকে মারছো কেন? আম্মুর শাড়ি টেনে নিচ্ছ কেন ছাড় আম্মু কে আম্মু কাঁদছে তো।’ বলেই আলিশা আটকাতে যায়। আলিশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আলিশা ছিটকে ফ্লোরে পড়ে কেঁদে ওঠে। মোহিনী মেয়ের কান্নার আওয়াজে সেদিকে তাকাতেই তার শরীর এ অনেক জোর চলে এলো যেন শাড়ি টানা বাদ দিয়ে মেয়ের কাছে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দরজা আটকে মিনহাজুল কে বন্দি করতে চায়। কিন্তু তার আগেই চলে আসে তাই দরজার আটকানো বাদ দিয়ে ড্রইং রুমে চলে আসে। জানালা দিয়ে তূর্য বোন ও মায়ের মন অবস্থা দেখে চিৎকার করতে লাগলো। এদিকে মিনহাজুল এসেই আবার মোহিনীর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। আলিশা তাদেরকে বাঁচাতে ছোটাছুটি করতে লাগে।
মিনহাজুল রেগে আছে তার মধ্যে এই পুচকি মেয়ের ঝন্ত্রণায় রেগে এমন জোরে ধাক্কা দেয় যে আলিশা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

তূর্যর বোন ও মায়ের জন্য কাঁদতে থাকে আর দরজায় লাথি মারতে থাকে। শেষ মূহুর্তে উপস্থিত হয় তূর্য এর বাবা। তিনি এসে এসব দেখে মিনহাজুল কে মারতে লাগে। মিনহাজুল ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে আসে। স্ত্রী মেয়ের অবস্থা দেখে ভেঙে পরেন। তারাতাড়ি মেয়েকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে ডাকতে লাগে। মোহিনী ও পায়ে আঘাত পেয়েছে তাই খুড়াতে খুড়াতে উঠে এগিয়ে আসে। আলিশার জ্ঞান ফিরে না কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। তাই তারা তারি উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তিনি হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আর এদিকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে যান যেনো ওই শয়তানটা ভেতরে আসতে না পারে। এদিকে মিনহাজুল রাগে বেরিয়ে ওর গোন্ডা বাহিনীকে কল করে আজকেও তূর্য এর বাবাকে খুন করবে। সেই জন্য বাসায় যাওয়ার আর প্রয়োজন পরে না কষ্ট করে। রাস্তায় দেখতে পাই মেয়েকে কোলে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে গাড়ির খোঁজ করছে। শয়তানি হাসি দিয়ে কিছু ইশারা করতেই একটা গাড়ি পায় তূর্য এর বাবা।যেটা মিনহাজুল পাঠিয়েছে।ভুল করে সেই গাড়িতে উঠে পড়ে আর দুর্ঘটনা সেখানেই ঘটে। মিনহাজুল বাসার দিকে রওনা দেয়। তূর্য ততক্ষণ রুমে থেকে বেরিয়েছে। মোহিনী দরজা খুলে দিয়েছে। মায়ের কাছে বসে পড়ে ভাইকে নিয়ে। মোহিনী শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ছেলেদের জাপ্টে ধরে কাঁদতে লাগে আস্তে আস্তে উঠে রুমে চলে যায়। বোরকা পরে ব্যথা শরীর নিয়ে ছেলেদুটোকে পাশের বাসার আন্টির কাছে রেখে দিয়ে মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়। কিন্তু তা আর করতে পারেনা।তার আগেই দরজা খট করে কেউ ভেঙে ফেলে। সেই শব্দে তূর্য আহানকে জাপ্টে ধরে দরজার আড়ালে লুকিয়ে কাঁপতে থাকে। মোহিনী ভয়ে আতকে উঠে। অজানা ভয়ে বুকের ভেতর ধুকপুক করতে লাগল। সব বাদ দিয়ে মেয়ের কথা ভাবে।‌ মেয়েটার মতো যদি এখন ছেলে দুটোকে ও কিছু করে তখন না না। এখন কি করবো? ভাবতে ভাবতৈ তালা এনে ছেলেদের ভেতরে শব্দ না করে লুকিয়ে থাকার কথা বলে তালা লাগিয়ে দেয়।

ততক্ষণে মিনহাজুল রা ভেতরে চলে এসেছে। তন্ন তন্ন করে সারা বাসা মোহিনীর স্বামীকে খুঁজতে লাগে। না পেয়ে চিৎকার করে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে লাগে। মোহিনী দরজায় খিল এঁটে বসে আছে। মিনহাজুল দরজার কাছে এসে লাত্থি মেরে ভেঙে ফেলে দরজার কাছে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছিল মোহিনী।তাই দরজা ভাঙার সাথে সাথে সিটকে খাটের কোনায় মাথায় বারি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। মায়ের আর্তনাদ শুনে দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে মায়ের রুমের দিকে উঁকি মারতে লাগে মায়ের এমন অবস্থা দেখে মা বলে চিৎকার দিতে গিয়ে চুপ করে যায়। মা কথা বলতে মানা করেছে না হলে আমাকে আর ভাইকে মেরে ফেলবে কথা বলা যাবে না। পাঁচ বছরের তূর্য ভাইকে বুকে চেপে ফুপাতে লাগে।
কিন্তু যখন মায়ের সাথে নির্মম মৃত্যু খেলা নিজের চোখে দেখে তখন আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা মা বলে চিৎকার করে ওঠে। মিনহাজুল মোহিনী কে মারতে চায়নি খুব পছন্দ করতে একে। কিন্তু রাগের মাথায় ওর হাজবেন্ড এর জায়গায় ওকেই খুন করে একটু আফসোস করে। মৃত্যু হলো কিন্তু একে নিজের বেডে নিতে পারলো না। মৃত মোহিনীর উপর ঝাপিয়ে পরে কাজ চালাতে চেষ্টা চালায় কিন্তু বাচ্চাদের চিৎকার শুনে কান খাড়া করে ফেলে তখন তূর্য দের জানালা দিয়ে দেখে ফেলে আর ওদেরকেও মারতে এগিয়ে আসতে যায়। কিন্তু পারে না। আশেপাশের বিল্ডিং থেকে তূর্য এর আওয়াজ চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে বাসায় তা দেখে মিনহাজুল একবার মোহিনী দিকে তাকিয়ে দলবল নিয়ে অন্ধকারে ছুটে পালায়। মার্ডার কেসে ফাসার আগে পালিয়ে যাওয়া মঙ্গল মনে করে।

বর্ষার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। তূর্য বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে রুমে চলে গেলো। বর্ষা সেখানেই বসে র‌ইলো। তূর্য ওর জন্য অজান্তেই খুব খারাপ লাগছে। নিজের মায়ের মৃত্যু দেখা কি কম কষ্টের কিভাবে সয্য করেছে তূর্য।
পরদিন না চাইতেও তূর্য এর সাথে বাসায় থেকে বের হতে হলো বর্ষাকে। বর্ষা আর তূর্য এর সাথে সম্পর্ক রাখবে না ভেবেছিলো কিন্তু কালকে ওসব জানার পর অজান্তেই আবার মনটা নরম হয়ে গেছে। উনার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী আজ সেটা জানার পর আর আমি চেয়েও উনাকে মানা করতে পারিনি। বিকেলে উনি কোথায় নিয়ে যাবেন তাই গাড়ি বসে আছি।
কালকের সব শুনার পর আমার আলিশা আপু আর তূর্য এর বাবার কি হয়েছিলো জানতে মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু আমি বললেই কি তিনি বলবে নাকি অসম্ভব। গাড়ির দরজা লাগানোর শব্দে বর্ষার ধ্যান ভাঙল। তূর্য ভেতরে এসে বসেছে।

বিকেলের সময়টা কাটলো অন্যরকমভাবে তূর্য যে এমন একটা জায়গায় বর্ষাকে নিয়ে আসবে বর্ষা ভাবতেও পারেনি‌। তূর্য এর কাণ্ডকারখানা দেখছিল শুধু। এই মানুষটাকে হাসিখুশি কোমল ভাবে খুব কমই দেখেছে বর্ষা। সব সময় গম্ভীর রাগী বলেই যাকে দেখেছে আজ তার এই রুপ দেখে কিছুটা ভরকে গেছে বর্ষা। তূর্য বর্ষাকে অনাথ আশ্রম এ এনেছে। এটা নাকি তূর্য এর তৈরি। এতিমখানা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক দিল তূর্য। সামনে শীতে আসছে তাই শীতের পোশাকে দিল সবাইকে। সবার সাথে কি মিষ্টি ব্যবহার। এই মুহূর্তে তূর্য কে দেখে কেউ বলতেই পারবে না তার আরেকটা ভয়ংকর রুপ আছে। বা থাকতে পারে। সন্ধ্যায় বেরিয়ে এলাম আশ্রম থেকে।

গাড়িতে উঠে তূর্য আমাকে বললো, ‘ কোন বাসায় যাবে?’

বর্ষা চোখ তুলে তূর্য এর দিকে তাকালো। তূর্যের কথায় হকচকিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আর আমতা আমতা করতে লাগলো। কোথায় যাবে সেটা নিজেই বুঝতে পারছে না। তূর্য তা দেখে হাসতে লাগলো। বর্ষা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে। লোকটা নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে। হাসছে কেন? আগে এতো হাসতো না‌ এমন হুটহাট। আজ সব বিষ্ময় দিয়ে আমাকে মারার প্ল্যান করেছে নাকি?

আমি মুগ্ধ হয়ে তূর্য এর হাসির দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। তূর্য তা দেখে আমার একদম কাছে এসে বললো, ‘ তুমি ফেঁসে গেছো বর্ষা মনি। এবার তোমার কি হবে?’
একটু থেমে আবার বলল, ‘ এই অসভ্য মানুষটার সাথে কাটাতে পারবে তো সারাজীবন? এবার কিন্তু আমি আর তোমাকে ছার দিবো না বর্ষা মনি। একদম বাচ্চার মা বানিয়ে ফেলবো। তারাতারি বলো কোথায় যাবে আজ তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম। তুমি কি এই খারাপ মানুষটার হাত ধরে সারা জীবন কাটাতে চাও। নাকি ঘৃণা নিয়ে মুখ ফেরাতে চাও। তোমার ইচ্ছেকে আজ প্রাধান্য দিতে চাই। আমি না আর জোর জবরদস্তি করতে চাইনা। আমি চাই ভালোবাসা। আমার এই অভিশপ্ত কালো জীবনে ভালবাসার ফুল ফোটাতে তোমাকে চাই। তোমার ভালবাসায় সিক্ত হতে চায়। আমি নতুন জীবন শুরু করতে চাই। যেখানে থাকবে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা, সুখ‌। এইভাবে তোমার চোখে ঘৃণা নিয়ে আর আমি থাকতে পারছি না। হয় তুমি ভালোবেসে আমাকে গ্রহণ করো। না হলে মুখ ফিরিয়ে চলে যাও পিছন ফিরো না কখনো। তাহলে আমি আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। আমিও তোমাকে আটকাবো না আজ। অনেক জোর করেছি ধরে বেঁধে তোমাকে আটকে রেখেছি কিন্তু বিনিময়ে তোমার চোখে ঘৃণা ছাড়া আমি কিছুই দেখতে পাইনি। এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে চোখে ঘৃণা দেখলে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করে। আমি একটু শান্তি চাই ভালোবাসা চাই। একটু ভালোবাসা দাও। আর এইভাবে আমি পারছি না। আজকে হয় আমরা ভালোবাসা সিক্ত হবো না হয় বিচ্ছেদ ঘটাবো। সিদ্ধান্ত তোমার বর্ষা।”
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_47(৩য় অংশ)
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)

বর্ষা মলিন মুখে তাকিয়ে আছে তূর্য’এর দিকে। তূর্য কথা বলেই যাচ্ছে,

‘ আজকে তুমি যদি আমার হাত ছেড়ে দাও বর্ষা মনি। আই প্রমিস আই উইল নেভার সো ইউ মাই ফ্রেস।’

তূর্য এর গলা কাঁপছে। তবুও থামলো না মনের সব কথা বলেই গেলো।

‘ আমি কখনো চাইনি তোমার মায়ায় পড়তে। তোমার ওই চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে। ওই কালচে খয়েরি ঠোঁটের নেশায় পরতে! তোমার ওই ভীতু মুখটার প্রেমে পরতে বিলিভ মি বর্ষা! চাইনি ভালোবাসতে! কিন্তু আমার কিছু করার নাই না চাওয়া সত্বেও আমি এসবে জরিয়ে গেছি। এই তোমাকে আমি ঘৃণা করতাম এজন্যই তো তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম তোমার বাবার জন্য তোমাকে আমি ঘৃণা করতাম। কষ্ট দিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে তোমাদের ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে দেখার পর আমার প্রতিশোধের নেশার আগুন কিভাবে যেন ধপ অরছি নিভে গেছিল। আমি চেয়েও তোমার ক্ষতি করতে পারিনি। কষ্ট দিতে পারিনি।যেটুকু কষ্ট দিয়েছি পড়ে নিজেই তার জন্য নিজেকে আঘাত করেছি। বুকের ভেতর তোমার ওই চোখে এক ফোঁটা জল দেখলেই কষ্টে আমার বুক জ্বালাপোড়া করেছে। আমি তোমার কষ্ট, এক ফোঁটা অশ্রু ও সহ্য করতে পারিনি। এতোটা ভালোবেসে ফেললাম যখন বুঝলাম তখন তোমার ওই চোখে আমার জন্য শুধু আমি ঘৃণা দেখতে পেয়েছি। যা আমার জন্য তীব্র যন্ত্রনা আমি তা সহ্য করার ক্ষমতা রাখিনা। সত্যি রাখিনা। তুমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না একটুও। তাই তো তোমার বাবার সাথে সম্পর্ক ভালো করে তার বিশ্বাস অর্জন করলাম তারপরে তোমাকে নিজের করে নিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে তুমি সব ভুলে আমাকে ভালবাসতে শুরু করবে। কারণ বাঙালি নারীরা স্বামী যতই খারাপ হোক তাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে জানে। কিন্তু এত দিন হয়ে গেল তার কিছুই হলো না। আস্তে আস্তে তুমি শুধু আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো। কাছে আর আসছোনা।’

তূর্য একটু দম নিলো। বর্ষা এক দৃষ্টিতে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য ফট করেই বর্ষার এক হাত নিজের বুকে চেপে ধরলো। বর্ষা চমকে উঠলো। হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে গিয়ে ও থেমে গেলো তূর্য কথা বলতে শুরু করেছে আবার,

‘আমি জানি তুমি আমাকে বেছে নেবে না। ছারিয়ে নিবে আজ আমার হাত। চলে যাবে আমার থেকে অনেক দূরে। এটাই তো সবসময় চেয়েছ আজকে আমি একটা সুযোগ করে দিলাম তুমিতো মনে মনে খুব খুশি তাই না। কিন্তু বিলিভ মি বর্ষা আমি একটু শান্তি পাব না। তোমার শূন্যতা আমাকে যন্ত্রণা দিবে ভেতরে ভেতরে কষ্ট দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে। তুমি একটু অনুভব করো আমার প্রতিটা হার্টবিট তোমাকে চাইছে। তোমার ভালোবাসা যাচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দন শুধু একটা কথাই বলছে, আই লাভ ইউ সো মাচ ব‌উ। থেকে যাও এই খারাপ মানুষটার সাথে। মানুষটা যতই খারাপ থাকুক না সে ভালোবাসায় কখনো এই খারাপ চেহারাটা আসতে দিবেনা।তোমাকে এতো এতো ভালোবাসা দেবো যে তুমি খারাপ মুহূর্তগুলো ভুলে যাবে সেখানে থাকবে শুধু আমাদের ভালোবাসার মুহূর্ত। আমাকে বেছে নিয়ে তুমি কোন ভুল করবেনা। আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে আফসোস করতে হবে না। আমি সেই সুযোগটাই দেবো না। একবার হাতটা শক্ত করে ধরো। আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ো। একবার বিশ্বাস করে দেখো।’

বর্ষা চুপ করে নিস্পলক চোখে চেয়ে আছে তূর্য এর দিকে। তূর্য আবেগ অনুভূতি সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে বর্ষার সামনে। আকুল চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার মুখ পানে। বর্ষার উওর শুনতে। কিন্তু বর্ষা পাথরের মত তাকিয়ে আছে কোন কথা বলছে না। তূর্য এর ক্ষীন আশাটা নিভে গেলো ধপ করেই। বর্ষা হাত টেনে তূর্য এর বুকে বা পাশ থেকে টেনে নিলো। কোলের উপর হাত রেখে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললো,

‘আমি বাসায় যাব।’

তূর্য এর দিকে আর তাকালো না বর্ষা। তাকালে দেখতে পেতো একজোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ। তূর্য কিছু বলতে গিয়েও বললো না। ও জানতো এমন কিছুই হবে। তবুও ক্ষনিকের জন্য মন বলছিলো বর্ষা তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। তূর্যর চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে। ফর্সা মুখটা নিমিষে লাল টকটকে হয়ে গেল। ও বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া করছে আজকে তাহলে এই মুখটা ওর শেষ দেখা। বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব করছে মন চাচ্ছে আবার জোর করে বর্ষাকে নিজের কাছে আটকে রাখতে কিন্তু একটু আগের কথা কিভাবে ফিরিয়ে নেবে? এই মুখটা না দেখেও কিভাবে থাকবে। তূর্য চোখ বন্ধ করে পাঁচ মিনিট চুপ করে সিটে হেলান দিয়ে র‌ইলো। এর মাঝে বর্ষা একবার আড়চোখে তূর্য কে পরোক্ষ করে নিয়েছে। ওর ঠোঁটে হাসি রহস্যময়ী‌। তূর্য এর এই কাতর মুখটা দেখে ওর ভেতর প্রশান্তি ঢেউ খেলে যাচ্ছে।

তূর্য চোখ খোলার আগেই বর্ষা দৃষ্টি সরিয়ে মুখ গম্ভীর করে ফেললো। মাথার ওরনা নিচে পরে গেছিলো। নীল রঙা ওরনাটা টেনে মাথা ঢেকে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল। তূর্য বর্ষার বাসায় সামনে এসে গাড়ি থামালো। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা আস্তে এক ঘন্টা লাগিয়েছে তূর্য। এটা ও ইচ্ছে করেই করেছে আজকের পর আর বর্ষাকে কাছ থেকে দেখতে পাবে না সেই জন্য আজ সময়টা দীর্ঘ করার চেষ্টা। কিন্তু তবুও যেন খুব তাড়াতাড়ি ই পৌঁছে গেলো। বাসাটার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। অসহায় মুখে তাকালো বর্ষার দিকে। নামার কোন লক্ষণ দেখছে না ও। বর্ষা নির্বিকার ভাবে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। দুই মিনিট তাক তাকিয়ে র‌ইলো তূর্য কিন্তু বর্ষাকে কোন রকম বের হ‌ওয়ার ভাব লক্ষ্য করলো না। এবার কপাল কুঁচকে কথা বললো।

‘ কি হলো নামছো না কেন? চলে এসেছি তো।’ ধরা গলায় বললো।

তূর্য কথা বলতেই বর্ষা ওর দিকে ঘুরে বললো, ‘আমার গন্তব্যে তো এখনো আসিনি তাহলে এখানে নামবো কেন?’

তূর্য বর্ষার কথার মানে বুঝতে না পেরে বলল, ‘গন্তব্যে আসোনি মানে? তুমি না বাসায় যেতে চাইলে! তো কোথায় যেতে চাও তুমি? এটা তোমার বাবার বাসা দেখো ভালো করে।’

‘আমি কি বলেছি আমি বাপি বাসায় যাব?’

মানে?’

‘ মানে আবার কি? এত্তো ভাষণ শুনাতে পারলেন আর এখন বুঝতে পারছেন না কোথায় যাওয়ার কথা বলছি?’

তূর্য গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে ও বর্ষার কথার মাথামুন্ড কিছু বুঝতে পারছেনা। তূর্য ফট করেই বর্ষার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ তুমি কি আমার বাসায় যাওয়ার কথা বলেছো?’ উত্তেজিত গলায় বলল।

বর্ষা অভিমানী গলাতেই বললো, ‘ আপনার বাসা মানে আবার কি? আপনার একার বাসা নাকি? আপনি আমার বিয়ে করা বর তাই ভুলে যাবেন না আপনার একার বলে কিছু নাই। সব কিছুতে আমাদের হ… ‘

তূর্য যা বুঝার বুঝে গেছে এক নিমিষেই। ও বর্ষার কথা শেষ করতে দিলো না। বর্ষা ওকে বেছে নিয়েছে আর কি চায় ওর। ও আচমকা ঝাঁপিয়ে পরলো বর্ষার উপর। বর্ষা চমকে উঠলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো তূর্য বর্ষাকে। আর পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো বর্ষাকে। বর্ষা চোখ খিচে বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। তূর্য দুহাতে জাপটে ধরে আছে ওকে‌। চেয়েও নড়তে পারছে না বর্ষা।
তূর্য কোমল গলায় বলল, ‘থ্যাংক ইউ সো মাচ ব‌উ আমাকে বেছে নেওয়ার জন্য। আই লাভ ইউ ব‌উ।’
বলেই বুকে জরিয়ে নিলো। বর্ষা চোখ বন্ধ করে শান্ত ভঙ্গিতে তূর্য এর বুক মাথা রেখে আছে।

.
বর্ষা চোখ বন্ধ করে আছে ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। ওর পাশেই বসে আছে শাওন। ল্যাপটপ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আর বললো,

‘ আসছি।’

বর্ষা নরলো না। চুপ করে বসে আছে। শাওন চলে গেলো। বর্ষা উঠে তূর্য এর রুমে ঢুকে গেলো। তূর্য ঘুমন্ত অবস্থায়। ঘুমের মধ্যে ও যেন লোকটা হাসছে। ভ্রু কুটি করে কিছু বিরবির করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। বর্ষা এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসে বসলো ওর খুব কাছে। কানটা এগিয়ে নিয়ে গেলো মুখের কাছে। তূর্য ঘুমিয়ে ও বর্ষা কে ভালোবাসি বলছে। অনুভূতি মেশানো বলি আওড়াচ্ছে। যা শুনে বর্ষার চোখ আরো ভিজে উঠলো। এতো ভালোবাসে লোকটা ওকে ওর জন্য এতো কিছু করেছে আর ও কিনা তাকে ভুল বুঝে ওই শয়তানটার কথা শুনে ঐসব করতে গিয়েছিলো। ছিঃ সময় মতো শাওন না আসলে কি ঘটে যেতো ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো বর্ষার। ছুড়িটার দিকে তাকিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো। ঘুমের মধ্যে শব্দ পেয়ে তূর্য নড়ে উঠলো। কিন্তু জাগলো না। বর্ষা চোখ মুছে দুহাত বাড়িয়ে তূর্য এর মুখটা ধরলো। তারপর কোন কিছু না ভেবেই সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো। এই মানুষটাকে ও খুব ভালোবাসে খুব। কিন্তু উনার করা সব খারাপ কাজের জন্য সব সময় নিজের অনুভূতি চাওয়া পাওয়া লুকিয়ে গেছে ও কিন্তু আজ যখন সব জানতে পেরেছে তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না বর্ষা। এই মানুষটাকে ও খুন করতে এসেছিলো ওই আরিয়ানের কথায় ছিহ নিজের স্বামীকে কিভাবে খুন করার কথা ভাবতে পারলো ও। এতো জঘন্য কবে হয়ে গেল। যে আমি একটা মাছি মারতেও ভয় পেতাম সেই আমি কিনা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে মারতে চেয়েছিলাম। কিভাবে!

তূর্য ঘুমের মধ্যে নিজের উপর আক্রমণ টের পায় এটা সেই আক্রমণ না এটা চুমুর আক্রমণ। কেউ তার নরম ঠোঁটের পরশ দিয়ে চলেছে‌। ও চোখ মেলে তাকালো সারারাত বর্ষাকে দেখে ছে না ঘুমিয়ে। কাল বর্ষার ফিরে আসায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় ও। এজন্যই তো সকাল সকাল ঘুম এসে হানা দিয়েছে ওর চোখে। কিন্তু আচমকা এরকম ভাবে ঘুম ভাঙায় অবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়। বর্ষার কাছে হতবাক হয়ে গেল। বর্ষা ওকে তাকাতে দেখেও থামলো না তৃষ্ণার্ত পাখির মত ঝাপিয়ে পড়ল ওর ঠোঁটের উপর। এতে তূর্য আরেকধাপ ধাক্কা খেলো। বর্ষা এসব করতে পারে ওর জানা ছিলো না। ও অবাক এতোটাই হয়েছে যে বর্ষাকে সারা দিতে পারছে না। বর্ষা যখন বুঝতে পারলো তূর্যর মন এদিক নেই তখন ও তূর্য এর ঠোট কামড়ে দিলো। সাথে সাথে তূর্য সম্মতি ফিরে পেলো। আর নিজেও বর্ষার সাথে তাল মেলাতে লাগলো।
এবার বর্ষার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তূর্য কোন ভাবেই ওকে ছাড়ছে না। অনেক টা সময় পর ছাড়তেই বর্ষা ও তূর্য দুজনেই হাঁপাতে লাগলো। তূর্য বর্ষার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘ কি ব্যাপার বলোতো? সকাল সকাল এতো রোমান্টিক মুড? যে তুমি আমায় কাছে ঘেঁষতে দিতে না এক দিনে এতো পরিবর্তন যে একদম ঠোঁটে আক্রমণ করলে?’

বর্ষা লজ্জা চোখ বন্ধ করে আছে। তূর্য আরেকটু এগিয়ে বর্ষার মুখের উপর ঝুঁকে বললো,

‘ প্রতিটা সকাল এমন মিষ্টি মুখ করে ঘুম থেকে উঠতে চাই‌ বর্ষা মনি। আমার ইচ্ছেটা পূর্ন করবে তো?’

বর্ষা লজ্জায় বিছানা থেকে উঠতে চাইলো তূর্য উঠতে দিলো না বিছানায় চেপে সুইয়ে দিলো। বর্ষা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে তূর্য তা দেখে বলো, একটু আগে তো ঠিকই আমা নিজে থেকে চুমু খেলে আর এখন পালিয়ে কোথায় যাচ্ছো? তুমি একাই কি শুধু আদর দেবে নাকি আমি কি দেবো না। ইটস নট ফেরার বর্ষা মনি‌। এতদিন পর বিয়ে করা ব‌উয়ের চোখে নিজের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছি। আজ তো আমি তোমাকে ছাড়বো না। নিজের ইচ্ছায় যে আগুন জ্বালিয়েছো বুকে সেই আগুনে তোমাকে না পুড়িয়ে তো তোমাকে আমি ছাড়বো না বর্ষা মনি।’
বলেই চোখ টিপলো তূর্য।

বর্ষা দরজার দিকে তাকিয়ে বললো, প্লিজ ছারুন দরজা খোলা আছে। যে কেউ চলে আসতে পারে।’

তূর্য শুনলো না মুখ এগিয়ে নিলো বর্ষার গলার দিকে। বর্ষা তূর্য কে ধাক্কা দিতে চাইলেও লাভ হলো না কারণ তূর্য অনেক আগেই ওর দুহাত বন্দি করে ফেলেছে। তূর্য গলায় এলোপাথাড়ি ভাবে চুমু খাচ্ছে। বর্ষা চেয়ে ও ওকে আটকাতে পারছে না। তাই নিজেকে সঁপে দেওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করতেই একটা আওয়াজ এলো কানে কোন একটা সার্ভেন্ট এর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে যে জরুরি তলব বলে তূর্য কে ডাকছে। তূর্য সেদিকে খেয়াল দিচ্ছে না তার সমস্ত খেয়াল এখন বর্ষার মাঝে। বর্ষা কাল তূর্য এর সাথে এ বাসায় আসার পর তূর্য এর কথায় শাড়ি পরেছিলো এখনো সেটাই ওর গায়ে। তূর্য এক টানে আঁচল সরিয়ে বুকের মুখ গুজে দিলো। ওর হাত বর্ষার খোলা পেটের বিচরণ করছে। বর্ষা তূর্য কে বলেই যাচ্ছে কেউ ডাকছে ছাড়ুন আমাকে। হঠাৎ সার্ভেন্ট একটা কথা বললো যা শুনে তূর্যর মেরুদন্ড সোজা হয়ে গেল। দরজার বাইরে থেকে সার্ভেন্ট কথা বলছিলো। তূর্য তার সব কথা শুনেছে কিন্তু পাত্তা দেয়নি শুধু বিরক্ত হয়েছে এই সুন্দর মুহূর্তে সার্ভের বিরক্ত করায়। কিন্তু এই মাত্র কথাটা শুনতেই ওর সব ধ্যান ধারণা বদলে গেলো বর্ষাকে এক ঝটকায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বর্ষা ছাড়া পেতেই আঁচল টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো। আর দৌড় দিলো তূর্য এর পেছনে। তূর্য খালি গায়েই বের হয়েছে রুমে থেকে। তূর্য কখনো পোশাক বিহীন কারো সামনে যায় না আজকেই প্রথম এমনটা করেছে তাই মহিলা সার্ভেন্ট গুলো হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য এর অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই।

#চলবে…
চলবে…
#চলবে…
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here