#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_50
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
আরিয়ান কে ড্রয়িংরুমের সোফায় খুব আয়েশ করে বসে থাকতে দেখে থমকে গেলো বর্ষা। আরিয়ান বর্ষাকে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বর্ষা আরিয়ানের দেখে হতবিহ্বল হয়ে এগিয়ে এলো। ওর বুঝতে আর বাকি নেই ওর জীবনের এই পরিণতির জন্য দায়ী কে। এই মানুষটার কথা ও একদম ভুলে বসে ছিলো। তূর্য কেও আরিয়ানের সম্পর্কে কিছু বলা হয়ে উঠেনি কি বোকামি টাই না করলো। এগিয়ে কাছাকাছি আসতেই আরিয়ান বলে উঠলো,
‘ তোমার মতো বোকা আমি দেখেনি মিসেস বর্ষা । ওই তূর্যর নামকে তুমি গলে পানি হয়ে গেলো ইটস নট ফেরার। এতো অন্যায় করেছে তবুও তুমি তাকে অন্ধ বিশ্বাস করে সংসার করতে যাচ্ছিলে। আমি তা হতে দিতে পারিনা তাই তো কায়দা করে তোমাকে ফিরিয়ে আনলাম। কতো উপকার করলাম দেখো তো এবার আমি একটা থ্যাংক্স তোমার পাইই পাই।’
জ্বলন্ত চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে বর্ষা। ওর মন চাইছে লোকটাকে খুন করে ফেলতে। এমনিতেই ওর এতো বড় সর্বনাশ করেছে এখন আবার তার জন্য কিনা ধন্যবাদ চাইছে। এই লোকটার কথা শুনে আমি তূর্য কে মারতে গিয়েছিলাম ভাবা যায়। সময় মতো শাওন না এলে আর আমার ভুল না ভাঙালে আমি কতো বড় ভুল করে ফেলতে আল্লাহ। এখনো মনে পরলে তার অন্তর কেঁপে উঠে। এর কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো একদম। একদিকে তূর্যের ভালোবাসায় ডুবে ছিলাম অন্যদিকে হুট করেই বাবার মৃত্যুতে আরিয়ান এর কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। আর সেই টারই সুযোগ নিয়েছে লোকটা।
বর্ষা রাগে গজগজ করতেছে। কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিবে তখন নিবিড় আহমেদ এসে উপস্থিত হোন। আর আরিয়ান কে দেখে বিরক্তের সাথে রাগ হয়। ছেলেটাকে একটু ও পছন্দ করেন না। যেচে পরে কথা বলতেই আসে। একবার আদিল কে বিশ্বাস করে ঠকেছে তাই আর আরিয়ান কে সহ্য করতে পারেনা। তার মধ্যে মেয়েকে আরিয়ানের কাছে দাঁড়ানো দেখে আরো রেগে যায়। কঠিন গলায় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ বর্ষা তুমি এখানে কি করছো যাও এখানে থেকে।’
বর্ষা বাপির আওয়াজ পেয়ে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় না। নিজ রুমে চলে আসে আর তূর্য কে কল করতে যায়। কিন্তু নাম্বার বন্ধ একটু আগেও না কথা বললাম। পর পর তিনবার কল করে ও বন্ধ দেখে বাড়ির নাম্বার রে কল করলো। শান্তা রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো তূর্য কোথায়? শান্তা বললো এই মাত্র নাকি তূর্য গায়ে শুট বুট পরে বেরিয়ে গেছে কিছু বলে যায়নি আর না খেয়েছ। বর্ষা ফোন কেটে দিলো। চিন্তিত মুখে বসে রইলো।
বাইরে উকি মেরে দেখতে পেলো। বাপি আরিয়ান কে ধমকের সুরে কি যেন বলছে দূর বিধায় কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো না বর্ষা। সিঁড়ি বেয়ে নিচে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে চেষ্টা করছে বর্ষা।
নিবিড় আহমেদ রেগে বললো আরিয়ান কে, ‘ আর যেনো তোমাকে আমার বাড়ির আশেপাশে না দেখি। গেট আউট।’
আরিয়ান ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফেটে পরছিলো কিন্তু সামনে প্রকাশ করলো না।
‘ আমি আপনার এতো হেল্প করছি আর আপনি আমার সাথে এই ব্যবহার করছে। আমি আরো অনেক ভালো আপনাকে সাহায্য করতে পারবো। অফিসার আদিল একজন মাফিয়া ও অনেক বাজে চক্রের সাথে যুক্ত আছে সব প্রমাণ আমি আপনাকে এনে দেবো। আপনি দেশ থেকে একজন কালপ্রিট কে উচিত শাস্তি দিয়ে পারবেন সাথে আপনার মেয়ের উপর করা অত্যাচারের….
‘ তোমাকে আমার আমার মেয়েকে নিয়ে ভাবতে হবে না। যা করার আমি নিজে করবো তোমার কোন হেল্প এর প্রয়োজন আমার নাই। আগে বাড়িয়ে আমাকে সাহায্য করতে আর এসো না।’
বর্ষা বাপির প্রতি কিছুটা সন্তুষ্ট হলো। আরিয়ানের সাথে বাপির তাহলে ভালো সক্ষ্যতা হয়নি। বাপিও আরিয়ান কে সহ্য করতে পারে না। আরিয়ান দূর থেকে বর্ষাকে লুকিয়ে থাকতে দেখলো। রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
আরিয়ানে ক্ষুভে ফেটে পরছে। নিবিড় চৌধুরী এই ভাবে অপমান করলো এর শাস্তি তো ও এই ব্যারিস্টারকে দিয়েই ছাড়বে। এখন একবার লোকটার বিশ্বাস অর্জন করা দরকার ফাইলটা আমার লাগবেই। একবার হাতে নিলেই আমাকে জেল থেকে কেউ বের করতে পারবে না। সব প্রমাণ ওইখানেই আছে। আগের বার তো সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলাম। কিন্তু ওই তূর্য আমাকে গোল খাইয়ে নিজে হাতিয়ে নিয়েছিল ওই বর্ষার মাধ্যমে। আমি তখনো বুঝতে পারিনি ব্যারিস্টারের মেয়ে নিয়ে ভেগেছে ওই তূর্য। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ভাবছে আরিয়ান যে ভাবেই হোক ফাইলটা হাতাতেই হবে। কি ভাবে? গাড়িতে উঠে নানান পরিকল্পনা করতে লাগলো হঠাৎ একটা আইডিয়া আসছেই বাঁকা হাসলো আরিয়ান।
তূর্য গিয়াসউদ্দিনের খোঁজ পেয়েই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন কে খুঁজতে এসে যে এমন কিছু খোঁজে পাবে কল্পনার বাইরে ছিল। গিয়াসউদ্দিন ও মিনহাজুল দুজনে বসে আছে ক্লাবে। খুব সিরিয়াস মুখ করে কথা বলছে আর এলকোহলে চুমুক দিচ্ছে। তূর্য ছদ্রবেশে তাদের উপর নজর রাখছে। ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। মিনহাজুল কে শেষ করার জন্য হাত নিসপিস করছে। শাওন তূর্য কে শান্ত রাখছে,
‘ ব্রো কুল এখানে কিছু করো না। শিকারি নিজে ধরা দিয়েছে এদের আমরা আস্তানায় নিয়ে যাব। তুমি মাথা ঠান্ডা রেখে বসো। এখানে কিছু করলে আমরা ফেঁসে যাব আর তুমি একজন পুলিশ অফিসার তাই কাউকে হঠাৎ এটাক করতে পারো না।’
‘ আমি শান্ত থাকতে পারছি না। ওই জানোয়ার আমার চোখের সামনে আমার মাকে কেড়ে নিয়েছে আমি তখন কিছু বলতে পারিনি। চুপ করে দেখা ছাড়া। কিন্তু আজ আমি সেই দূর্বল ভীতু বাচ্চাটি আর নেই। এখন আমি এই বাস্টারের সাথে লড়তে প্রস্তুত আছি। আমার মায়ের মৃত্যুর শাস্তি আমি ওকে দিয়েই ছাড়বো। ও যন্ত্রনায় বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করবে।’
তূর্য আস্তে আস্তে কন্ট্রোল লেস হয়ে পরছে বুঝতে বাকি নেই শাওন এর। ও তূর্য কে টেনে টুনে বাইরে নিয়ে এলো। আর বললো আমি যা করার করছি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।
বলেই ভেতরে চলে গেলো।
.
বর্ষা নিবিড় আহমেদ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার হাতে বাপির ফোন। বর্ষা আচমকা নিজের বাপির হাত নিয়ে মাথায় চেপে ধরলো।
‘ বাপি তুমি উনার কোন ক্ষতি করতে যাবে না কথা দাও আমাকে।’
‘ বর্ষা কি করছো তুমি এসব। হাত ছাড় আমার। আদিলের মুখোশ আমার বের করতেই হবে না হলে ও আরো অনেকের সাথে এমন করবে। তা আমি চাইনা।’
‘ উনি কারো ক্ষতি করে বাপি। যারা খারাপ তাদেরকেই শাস্তি দেয় এ ছাড়া আর কিছু না। আর এই আরিয়ান ও খুব খারাপ ও চায়না উনার ভালো হোক। আরিয়ান উনার ক্ষতি চায়। তুমি উনাকে ক্ষমা করে দাও উনি এতোটাই খারাপ না যতটা তুমি ভাবছো।’
‘আমার ভাবনার থেকে ও ‘
‘ তুমি উনার মারাত্মক ভুল বুঝেছো। কিন্তু তোমার ভুল খুব তারাতাড়ি ভাঙবে দেখো। কিন্তু তার আগে আমি তোমাকে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দেবো না।’
নিবিড় আহমেদ কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। বর্ষা বাপি কে থামিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
সারা রাত দিন কল করেও তার খোঁজ পেলো না। শাওন কেও পাওয়া যায় নি। নিদ্রা আপুর সাথেও কথা বলেছে তিনি দুশ্চিন্তা করছেন। শান্তা বললো কাল রাতে বাসায় ও আসে নি। বর্ষা রাত থেকে না খেয়ে আছে। তূর্য এর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। কিন্তু লোকটার সাথে কন্টাক্ট করতেই পারছে না। কোথায় আছে কিভাবে আছে কে জানে? অজানা ভয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে ওকে। শুধু একটা প্রার্থনায় করছে লোকটা যেখানেই থাকুক সুস্থ থাকে যেন।
কল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু তার রেসপন্স নাই। এত মাঝে বর্ষার ফোনে আরিয়ানের কল এসেছে। লোকটাকে কড়া কিছু কথা বলে ব্লক করে দিয়েছে নাম্বার।
বর্ষার মা মেয়ের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছেন। বর্ষা মায়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে বলেছে,
‘ মাম্মা তূর্যর সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারছি না। উনি কোথায় আছেন? ঠিক আছেন তো কিচ্ছু জানতে পারছি না। আমার খুব ভয় করছে উনার তো অনেক শত্রু যদি কোন ক্ষতি হয়ে থাকে উনার আমি কি করবো? উনার কিছু হলে আমি মরে যাবো মাম্মা। উনাকে তুমি আমার কাছে এনে দাও না।’
মেয়ের এমন আহাজারি শুনে বর্ষার মা স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু বলার ভাষা খুজে পান না। খালি একটা কথায় মনে আসে তা হলো জামাইয়ের থেকে আলাদা করে যে সুখ দিতে চাইছিলেন তারা এটা তো মেয়ের কাছে সুখ নয় নরক যন্ত্রণা। তারা যে ভুল করেছে দুজনকে আলাদা করে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন।
.
তূর্য মিনহাজুল কে কারেন্টের শক দিচ্ছে। সাথে চোখ দুটো উপড়ে ফেলেছে। এই চোখ দিয়েই তো তার মায়ের দিকে নোংরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিল। তাই এই চোখ আগে উপড়েছে। গিয়াসউদ্দিন কে হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে ও নিজ হাতে মারতে ইচ্ছা থাকলেও তূর্য তা করতে পারে নি। কারণ গিয়াসউদ্দিন কে কোটে চালান করতে হবে। মিনহাজুল কে খুন করা হয়েছে এমন কথা জানিয়েছে তূর্য। আর এই খুন করেছে গিয়াসউদ্দিন। এভাবেই কেসটা থেকে মিনহাজুল কে সরিয়ে নিজের কবজায় রেখে তূর্য। মিনহাজুল কে তিলে তিলে কষ্ট দিবে।
মিনহাজুল হক মরন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। উনি বুঝতে পারছে না কে এই ছেলে আর হঠাৎ ওকে এভাবে তুলে এনে এমন অত্যাচার কেন করছে। ওনার সাথে এই ছেলের কি শত্রুতা?
এক সপ্তাহ হলো তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন সাত বছর পর। যাওয়ার আগে এমপির মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলো আর তা নিয়ে ফেঁসে যাচ্ছিলেন তার ভয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাড়ি জন্মায় বিদেশে। গিয়াসউদ্দিন এর জন্য শুধু মাত্র এদেশে এসেছে। লোকটা একসময় তার খুব কাছের ছিলো। তার সব অপকর্মের সময়ে বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। তাই যখন গিয়াসউদ্দিন নিজের আগাম বিপদের কথা বললো। তার পেছনে নাকি অচেনা এক শত্রু ছায়ার মতো ঘুরছে। তাকে মারতে। পুলিশ ও পেছনে লেগেছে তিনি দেশে শান্তিতে থাকতে পারছে না ভয়ে। সাহায্য এর মতো কেউ নাই। একবার বিদেশে গিয়েছিলেন কিন্তু সে দেশ পর্যন্ত পুলিশ চলে গিয়েছিলো। ওই দেশেও থাকা দুষ্কর হয়ে পরে তাই আবার লুকিয়ে জাল পাসপোর্ট এর মাধ্যমে দেশে এসে গা ডাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকে কোন রকম বাঁচাতে এগিয়ে আসতে বলেছে।
এসব শুনে তিনি বাংলাদেশের আসার সিদ্ধান্ত নেয়। কারন এতো বছরে হয়তো তার কেসটা থামা চাপা পড়ে গেছে। এসব ভেবেই তিনি সাহস করে আসেন। তার ইচ্ছা গিয়াসউদ্দিন কে নিজের সাথে নিয়ে যাবেন। কিন্তু একি হচ্ছে এখানে এসে যে তিনিই বিপদে পরেই গেলেন তার মন বলছে এই ছেলেটার হাতেই মৃত্যু লেখা আছে। তার দৃষ্টি তাই বলছে।
উনি ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারালো।
.
দুইদিন পর বর্ষা তূর্যর খবর জানতে পারলো। তাও ওর সাথে কন্টাক্ট করেনি তূর্য। তূর্য কে ও খবরে দেখেছে। সবাই তূর্যর সাহসীকতা নিয়ে কথা বলছে কারণ গিয়াসউদ্দিন একজন অনেক বড় মাপের মানুষ। যার অপকর্মের শেষ নাই। তাকে ধরার জন্য অনেক দিন ধরেই মিশন চলছিলো। তা তূর্য করে দেখিয়েছে।
প্রত্যেকটা খবরে শুধু একটা নাম জ্বলজ্বল করছে আদিল। আর তূর্য এর ক্লান্ত মাখা মুখটা।
বর্ষা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। দুইদিন পর মানুষটাকে দেখলো। অভিমানী মনটা হু হু করে উঠলো। এমন পাষাণ কেন লোকটা। আসার সময় দিন কতো ভালোবাসা দেখালো। আমাকে ছাড়া নাকি থাকতেই পারবে না। আর এখন দুইদিন না দেখে না কথা বলে কিভাবে আছেন উনি। বর্ষা অভিমানী চোখে তাকিয়ে রইলো।
কিন্তু তবুও মনটা কিছুটা শান্ত হয়েছে।
তূর্য যেভাবেই থাকো সুস্থ আছে এটায় বর্ষার জন্য স্বস্তিকর।
অভিমান করেই আর তূর্য কল করার পর ও রিসিভ করলো না বর্ষা। বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রতিটা রিংটোনের শব্দে ওর বুকের ভেতর তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু ও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে। রিসিভ করেনি। তূর্যর কথা শোনার জন্য ব্যাকুল হয়েছিল ওর মনটা। কিন্তু তবুও নিজেকে সংযত করেছে। অভিমানের পাল্লা যেনো খুব বাড়ি হয়েছে সেটাই প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে বর্ষা।
খাটে হেলান দিয়েই বর্ষা ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে। দু রাত নির্ঘুম কাটিয়ে ওর দুচোখে ঘুম নেমে আসে।
ঘুম ভাঙলো কোমল স্পর্শ পেয়ে। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে তূর্যর উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেল। তূর্য এখানে কি করছে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি? বর্ষা নিজেকে চিমটি কাটলো। না তূর্য এখনো আছে আর অপলক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ষা চোখ উঁচু করে দেয়ার ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে। দরজার বাইরে বাপির মাম্মার কন্ঠ ভেসে আসছে। ও ফ্যালফ্যাল করে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ আ–প–নি এখানে কি করেছেন?’ তোতলাতে তোতলাতে বললো বর্ষা।
তূর্য কথা বলল না। বর্ষার আরো নিকটে এগিয়ে এসে দুইহাতে বর্ষার ছোট মুখটা ধরলো। আর ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ হোয়াই ডিড নট ইউ রিসিভ মাই কল? জানো কতটা ভয় পেয়েছিলাম কিভাবে আমি গাড়ি ড্রাইভ করে এখানে এসেছি। সেটা তুমি জানো। তোমার রুমে আসতে আমার কতটা কষ্ট করতে হয়েছে দেখো বলেই হাত উঁচু করে দেখালো। ছুলে গেছে হাত চামড়া উঠে সাদা চামড়া বের হয়ে গেছে।
‘এসব কীভাবে হলো আপনি এখানে কেন এসেছেন?’
‘ তুমি আমাকে ইগনোর করছিলে। আমি না এসে থাকতে পারিনি। আমি জানি দুইদিন তোমার সাথে যোগাযোগ না করায় তুমি আমার উপর রাগ করে আছে। কিন্তু তাই বলে আমাকে ইগনোর করবে এটা আমি আশা করিনি। আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার পরিস্থিতিতে থাকলে কখনো কন্টাক্ট না করে থাকতাম না। আমি খুব টেনশন আর প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ছিলাম। তখন আমি তোমাকে কল করার অবস্থায় ছিলাম না।’
‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কতোটা মিস করেছি জানেন আপনি সুস্থ সুরক্ষিত আছেন কিনা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কোন খোঁজ নিতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই আপনাকে নিউজে দেখে শান্ত হতে পেরেছি কিন্তু আপনি আমার কল রিসিভ করেনি ফোন অফ করে রেখেছিলেন এসব আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাই তো অভিমান করে কল রিসিভ করেনি।’
‘ অভিমান ভাঙানোর সু্যোগ না তুমি আমায় ইগনোর করছিলে বর্ষা। এটা কিন্তু ঠিক না। তোমার আমার কল রিসিভ করে আমার খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।আমি কতটা যন্ত্রণায় ছিলাম জানো। সেই সময়টা আমার তোমাকে পাশে দরকার ছিল কিন্তু তুমি ছিলে না। তোমার বাপি তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে আজ তোমার সাথে দেখা করতে আসতে আমাকে চোরের মত লুকিয়ে পাঁচিল টপকে আসতে হলো। যেখানে আমার সদর দরজা দিয়ে মাথা উঁচু করে আসা উচিত।’
তূর্যর কথা শুনে বর্ষা খুব ইমোশনাল হয়ে গেল। তূর্য যেভালো ছিল না জানে ও। লোকটা কতটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে ওর জন্য। সে সব বুঝতে পারে। ওর ভেতর টা হাহাকার করতে লাগলো যন্ত্রণায়। ও এগিয়ে এসে তূর্য কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। সরি বললো। তারপর মাথা তুলে তূর্য এর ক্লান্ত শুকনো মুখটার দিকে তাকালো। বর্ষার খুব কষ্ট হতে লাগলো অযথা রাগ দেখানো উচিত হয়নি কতো কষ্ট করেই এসেছে লোকটা। বর্ষা তূর্য দুগালে হাত রেখে সারা মুখে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলে। তূর্য চোখ বন্ধ করে প্রিয়তমার আদর স্পর্শ গ্ৰহণ করতে লাগলো। বর্ষা দরজার ককর্শ আওয়াজ শুনে ছিটকে সরে দাঁড়িয়ে পরে।
‘ এখন কি হবে বাপি মাম্মা তো ডাকছে। আপনাকে এখানে দেখলে সর্বনাশ হবে। ‘
‘ কেনো এতো ভয় পাচ্ছ কেন? আমি কি কোন পরপরুষ আমি তোমার হাসবেন্ড আমি তোমার রুমে আসতে পারি স্বাভাবিক। তুমি দরজা খোলো। আমি খুব টায়ার্ড সাথে ক্ষুধার্ত কিছু খেতে দাও খেয়ে আমি একটু রেস্ট নেবো।’
বর্ষা চোখ কপালে তুলে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনি পাগল হয়েছেন বাপি আপনাকে এখন একটু সহ্য করতে পারে না এখন বাপি আপনাকে এখানে দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান।’
‘ আমি কোথায় যেতে পারব না এখন, এই মুহূর্তে! আমি এখানেই থাকব। তোমার সাথে।’
‘ পাগলামো কেনো করছেন একটু বোঝার চেষ্টা করো আমার ব্যাপারটা। আপনি এমন করলে আমি বাপিকে আপনার হয়ে কিছুই বুঝাতে পারবোনা। তখন না সারা জীবনের জন্য আমাকে হারিয়ে ফেলতে হয় আপনার। সাময়িক আনন্দের জন্য কি আমি সারা জীবন কষ্টে থাকতে পারবেন?’
তূর্য অসহায় মুখ করে তাহলে বর্ষার দিকে।
আহত গলায় বললাম,’ আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো না প্লিজ আমাকে থাকতে দাও।’
বর্ষা তূর্যর এমন অসহায় মুখ দেখে চুপ করে গেলো। তারপর হঠাৎ টেনে দাঁড় করিয়ে বললো,
‘ আপনি বাথরুমে ভিতরে ঢুকে লুকিয়ে পরুন। আমি বাপি কে কিছু বলে ম্যানেজ করে আসছি।’
বলেই টেনে তূর্য কে বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো বর্ষা। তারপর বুকে ফু দিয়ে দরজা খুলল।
‘ এতক্ষণ কি করছিলে? কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি?’
বাপির দিকে তাকিয়ে হালকা ঢোক গিলে বর্ষা বললো, ‘ বাপি আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই।’
‘ খাবে না?’
‘ হুম।’
‘আচ্ছা নিচে আস।’
বলেই নিবিড় আহমেদ চলে গেলো। বর্ষার মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসার চেষ্টা করতেই বর্ষা দরজা আটকে তার হাত ধরে টেনে নিচে চলে এলো।
কোন রকম খেয়ে ঘুমাবে বলে রুমে চলে এলো।
তূর্য তখন বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। বর্ষা তারাতাড়ি দরজা আটকে কাছে এলো। তূর্য চোখ খুলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ মাথাটা একটু টিপে দিবে? খুব ব্যাথা করছে!’
বর্ষা তূর্য মাথার কাছে বসে চুল টেনে দিতে লাগলো।
তূর্য খেতে চাইলো কিন্তু কি করে খাবার রুমে আনবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। লোকটার মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে তূর্য খুব ক্ষুধার্ত।
তূর্য চোখ মেলে বর্ষাকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে বর্ষা মাথা নেড়ে কিছু না বললো।
তূর্য মাথা উঁচু করে গালে চুমু খেলো। তারপর বললো,
‘ আমি একটু ঘুমাই!’
‘ আচ্ছা।’
তূর্য চোখ বন্ধ করে নিলো বর্ষা তূর্য এর ঘুমন্ত মুখের দিকে বসেই রইলো। এগারোটা বাজতেই দরজা খুলে অন্ধকারে বেরিয়ে এলো বর্ষা। সোজা রান্না ঘরে গেলো। ফ্রিজ থেকে খাবার খুব সাবধানে বের করে গরম করতে লাগলো ভয়ে হাত পা কাঁপছে যদি বাপি মাম্মা কেউ দেখে ফেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে আর কাজ করছে। গরম করে তারাতাড়ি প্লেট হাতে রুমের দিকে হাটা দিলো উষ্টা খেয়ে পরতে পরতে বেঁচে যায়। বর্ষা দৌড়ে রুমে এসে দরজা আটকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
সিঁড়ি কাছে একজন বর্ষার কান্ডকারখানা পরোক্ষ করছিলো তিনি আর কেউ না বর্ষার মা। বর্ষা দরজা আটকে দিতেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। সন্দেহ টা তার আগেই হয়েছিল এখন বিশ্বাসে পরিণত হলো।
বর্ষা তূর্য কে ডেকে তুলে বিছানায় বসালো।
‘ তারাতাড়ি হাত ধরে এসে খেয়ে নিন।’
বলেই খাবারের প্লেট সামনে রাখলো। তূর্য খাবারের দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলো। আর হা করে বর্ষার দিকে মুখ নিয়ে বললো,
‘ খাইয়ে দাও।’ বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো।
বর্ষা নিঃশব্দে হাত ধরে এসে খাবার মেখে খাইয়ে দিতে লাগলো। তূর্য তৃপ্তি করে খাচ্ছে আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_51
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
এক মাস হয়ে গেলো বর্ষা এখনো বাবার বাসায় আর আছে। তূর্য এই নিয়ে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছে নিবিড় আহমেদ এর সাথে কিন্তু বর্ষা বলতে দেয়নি। বর্ষার বাবা ইদানিং খুব অসুস্থ। ভেতরে ভেতরে তিনি ভেঙে পরেছেন। মেয়ের দিকে তাকাতে পারে না। আবার তূর্যর মতো একটা গুন্ডাকে ও ভরসা করে মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারছেন না।তিনি খুব দুটানায় পরে গেছে। বিষন্ন মুখে থাকেন। আর আফসোস করেন। বর্ষা নিজের বাবার এমন মুখ দেখে তূর্য কে সামনে আসতে মানা করে দিয়েছে নিজেও কিছু বলে না। বাবার জন্য ও সব ছারতে পারবে কিন্তু ওর জন্য ওর বাবার কোন কষ্ট হোক এটা ও মানতে পারবে না। বাবা মা কে ও পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি ভালো বাসে তাদের মনে দুঃখ ও দিতে পারবে না কিছুতেই না।
তূর্যকে এসব বলার পর তূর্য খুব রেগে গিয়েছিলো। সেদিন রাতেও আবার এসেছিলো। আর রেগে বর্ষার বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলেছিলো,
‘ তুমি আমাকে ছাড়ার প্লান করেছো বর্ষা এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি। আমি এখন ভালো হয়েছি তাই বলে ভেবো না আমার ভালোবাসা ত্যাগ করে আমি মহান হয়ে থাকবো এতোটা ভালো মানুষ আমি না। আমি আমার ভালোবাসাকে নিজের কাছে রাখার জন্য সব করতে পারি। তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোমাকে নেওয়ার জন্য এবার আর আমাকে কিডন্যাপ করতে হবে না। মাথা উঁচু করেই আমি আমার বউকে নিয়ে যেতে পারবো। তোমার কথা ভেবে আমি চুপ আছি কিন্তু তাই বলে তোমাকে আমি জীবনে ও ছারবো এমনটা ভেবো না। তুমি যদি এমনটা করবে ভেবে থাক নিজের বাবা মার জন্য তাহলে আমিও আমার খারাপ রুপটা আবার তোমাকে দেখাতে বাধ্য হবো। আমি চাই তুমি এমনটা করো না। আমাকে তোমার বাপির সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে দাও আমি সব ঠিক করেই তার সম্মতিতে তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাব। এই বুকে তোমাকে জায়গা দিয়েছি তার মানে তুমি রাখবে আশা করবো।’
বর্ষার নরম মনটা তখন কেঁদে উঠে। লোকটা খুব কষ্ট পেয়েছে তার কথায় বুঝতে বাকি নাই বর্ষার। ওমন কথা বলার সময় ওর ও যে কতোটা কষ্ট হয়েছে লোকটা কি বুঝবে। তাকে ত্যাগ করা আর এই প্রাণ ত্যাগ করা যে বর্ষার কাছে সমান। এই লোকটাকে এক নজর দেখার জন্য তীর্থ কাকের মত করে বসে থাকে কবে বাপির মত বদলাবে আর সব আগের মতো হয়ে যাবে।
তূর্য বর্ষার মুখ ধরে বললো,
‘ আরিয়ান কে আমি কিছু করতে পারছি না তোমার বাপির জন্য। তোমার বাপিকে ও বলে রেখেছে ওর কোন ক্ষতি হলে সেটা নাকি আমিই করবো। কারণ আমার সব চেয়ে বড় শত্রু নাকি এখন ও। ওর জন্য আমি আমার চাল নষ্ট হয়েছে। তোমার বাবা সব জেনে গেছে। তাই তোমার বাবা ওকে নিজের প্রটেকশন এ রেখেছে। একবার ওকে হাতের কাছে পেলে আই সো এ্যাট ওকে আমি খুন করে ফেলতাম।’
অনেক কষ্টে সেদিন বর্ষা তূর্য কে শান্ত করে। তূর্য সেদিনই জানিয়ে যায় এখন থেকে রাতে ও এখানেই আসবে। বর্ষা যেন জাগ্রত থাকে। বর্ষা না করলেও শুনে না। উল্টা বলে,
‘ এটা না মানলে কিন্তু আমি আমার শশুর এর সাথে এখনি সব কথা শেষ করবো।’
তখন বর্ষা মানতে রাজি হয়।
এইভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে আসা যাওয়া চলছেই আর সময় ও গরিয়ে যাচ্ছে।
সকাল ঘুম থেকে উঠে বর্ষা বাসা থমথমে অবস্থা দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। গতকাল তূর্য আসেনি আগে জানিয়ে দিয়েছিল আজ আসবে না। মা বাবা কাউকে কোথাও না দেখে ওর কপাল কুঁচকে যায়। দুজনকে একসাথে কোথায় গেলো এই পাত সকালে? আর আমাকে না জানিয়ে বা এমন হঠাৎ করে কোথা গেলো। কাজের বুয়া আসে আটটায় এখন সাড়ে সাতটা আরো পরে আসবে। বাপি মাম্মা তো রুমেও নাই কোথায় গেছে। বর্ষা চিন্তিত মুখে সোফায় বসলো। তারপর রুমে এসে ফোন খোঁজে লাগলো অদ্ভুত ফোন কোথায়? কাল তো বালিশের নিচে রেখেই শুয়েছিলাম। ড্রয়িংরুমের লাইন্ড ফোন থেকে কল করতে এলাম। বাপি মাম্মার ফোন যেহেতু বাসায় নাই কল করে দেখি। ফোন যাচ্ছে না। কেমন জানি খটকা লাগতে শুরু করলো। বর্ষা তূর্য কে কল করতে গেলো নাম্বার মুখস্থ ওর কিন্তু এটায় ও যাচ্ছে না। দুই তিনটা বাড়ি মেরে মেইন ডোর খুলতে গেলো। ফোনের সাথে বাইর মানুষ ও গায়েব কি হচ্ছে এসব। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে দরজা খুলে ফেলে।
দাড়োয়ান কাকাকে জিজ্ঞেস করে দেখি বাপিরা কখন বের হয়েছে আর কোথায় গেছে। দরজার বাইরে এক পা রাখতেই একটা স্পে করা হয় বর্ষার মুখে বর্ষা ঝাপসা চোখে দেখতে পায় কেউ ওকে ধরে ফেলেছে। বর্ষা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এইটুকু ভিডিও দেখেই বর্ষা বাবা চিৎকার করে উঠে,
‘ আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও। কারা তোমরা কি চাও আমার কাছে?’
বর্ষার বাবাকে আর মা কে আজ সকালে আরিয়ানের লোক কিডন্যাপ করেছে। ওদের উদ্দেশ্য নিবিড় আহমেদ এর কাছে কিছু ডকুমেন্ট যেগুলোতে আছে আরিয়ানের সব অপকর্মের প্রমাণ যেটা হাতানোর জন্য আরিয়ান বেশ কিছু মাস আগে নিবিড় আহমেদ কে প্রাণে মারার প্লান করেছিলো। কিন্তু তূর্য যেটা জানতে পেরে বর্ষাকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নেয় আর নিবিড় আহমেদ কে বাচিয়ে দেয়। তূর্য ফাইলটা নিয়ে আরিয়ান কে অনেক ভাবে হেনস্তা করেছে। দিবে বলেও দেয়নি। সেটা আবার বিশ্বাস যোগ্য হতে তূর্য নিজেই নিবিড় আহমেদ কে ফিরিয়ে দেয়।
এসব আরিয়ান পরে জেনেছে। দুইদিন বাদে ওর কেস আবার সামনে আসবে সেটা নিবিড় আহমেদ আদালতে বলছে। তাই আর দেরি না করে কিডন্যাপ করেছে নিবিড় আহমেদ কে ভয় দেখিয়ে ফাইল নিবে। কিন্তু তা হলো না লোকটা এতো কঠিন একটুও ভয় নাই। জীবনের ভয় ও নাই তিনি নাকি মরতেও রাজি আর বউ সে ও তো স্বামী যা বলে তাতেই হু হা করে। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো ওই বর্ষাকে নিজের কবজায় আনবে এক ডিলে দুই পাখি মারার প্ল্যান এটা। একদিন তূর্য আরেকদিন এই ব্যারিস্টার। দুজনকেই জব্দ করবে আজ আরিয়ান। অনেক নাটক করছে নিবিড় আহমেদ এর সামনে কিছু খাইস্টা লোক আমাকে একটুও বিশ্বাস করেনি। খালি অপমান অবজ্ঞা করেছে। সব সুদে আসলে বুঝে নিবো আজ।
আরিয়ান কে দেখে নিবিড় আহমেদ খুব একটা অবাক হলেন না এই ছেলে প্রথম যেদিন তার কাছে এসেছিলো তার পরেরদিনই এর সম্পর্কে সব জেনে গেছিলো। এজন্য নিজেকে আর নিজের পরিবারকে এর থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে।
আদিল কে নিয়ে বলা সব কথাই সত্যি ছিলো। এজন্য মেয়েকে নিজের কাছে এনেছে আর গোপনে তিনি আদিলের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাতে আদিলের এর খারাপ কাজের দিকটা দেখতে পায়নি। অপরাধীকেই সে ওই রুপে আঘাত করেছে আর মৃত্যু না দিয়ে তাকে জেলে ঢুকিয়েছে শুধু মিনহাজুল কে পাওয়া যায় নি। সেই দোষটা দেওয়া হয়েছে গিয়াসউদ্দিন কে। কিন্তু এটা যে ঠিক না তিনি জানেন কারণ গিয়াসউদ্দিন এর সাথে মিনহাজুল এর সম্পর্কে খুব বন্ধুত্ব পূর্ণ তিনি এই কাজ করেননি। করেছে আদিল। সব অপরাধীকে থানায় এনে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয় কিন্তু তাকে কেন নিজে হাতে মারলো। সব উওর আছে আদিলের কাছে তাই আজ তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো।
আদিলের খোঁজ খবর নিয়ে তিনি মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে চাইছো কারণ মেয়ে যে তার ওইখানেই আটকে গেছে তার আরো ভালো চাইতে গিয়ে তিনি আর কষ্ট দিতে চায়নি। এক মাত্র মেয়ে তার তাকে সব সময় আগলে রাখতে চেয়েছিল সুখের চাদড়ে মুড়িয়ে কিন্তু তার সেই কলিজার টুকরা কিনা পদে পদে আঘাতে জর্জরিত হচ্ছে তাও তারই জন্য তাই তিনি ভেঙে পরেছিলো। আদিল তো খারাপ কিছু করছে না আর আদিল তার মেয়েকে যে পাগলের মতো ভালো বাসে তা তিনি সকাল বিকেল রাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পান। গাড়িতে হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বর্ষার বেলকনিতে।
বর্ষার অগোচরেই আদিল কতোবার আমার কাছে এসেছে তার একটা বাক্যই বলেছে সে আমার কলিজাকে ভালোবাসে। এক সময় তা প্রতিশোধ থাকলেও পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। আর ভালোবেসে ফেলেছে বর্ষাকে।
কিন্তু তিনি মানেননি। আদিল তো তার সামনে মাথা নত করে পায়ে ও হাত দিয়ে নিজের সুখ হিসেবে আমার বর্ষা কে চেয়েছে।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিলো। আর আজ সকালেই কয়েকজন লোক তাদের বাসা থেকে কিডন্যাপ করছে তখন তারা বাগানে ছিলো নামাজ পরে আজ স্ত্রীর সাথে হাঁটতে এসেছিলেন তখনি এমন ঘটনা। তারপর হাত পা বাঁধা অবস্থায় পায়। ফাইলটার কথা আসতেই তিনি বুঝতে পারেন এক আরিয়ান। কারণ আগেই ওই ফাইল দেখে ফেলেছেন আর ওই আরিয়ানের মুখোশ খুলে গেছে। তাই তো কোর্টে এই ফাইল আগে তুলেছেন।
কিন্তু এখন তিনি কি করে নিজের মেয়েকে রক্ষা করবে। বাবা হয়ে মেয়েকে রক্ষা করতে তিনি বার বার ব্যর্থ হয়।
আরিয়ান তূর্য কে কল করে একটা কথা বলেই ফোন রেখে দিলো,
‘ তোর প্রাণ ভোমরা তো আমার কাছে রে তূর্য। অনেক হেনস্তা করেছিস এবার আমি তার হিসেব নেব। কু* বাচ্চা তোর জন্য আমি আমার নিদুকে পাইনি আজ তোর ভালোবাসা কেও আমি তোর থেকে পারা জীবনের জন্য কেড়ে নিব। নিদুকে তো আমার জীবন থেকে সরিয়েছিস আমি বর্ষাকে এই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবো। কিন্তু তার আগেই একটু টেস্ট না করলে হয় বল যতই হোক তোর পছন্দ করা মেয়ে। এই ঝামেলায় অনেক দিন ধরেই এমন স্বাদ নেওয়া হয়না এবার একটু মন ভরে নেওয়া যাবে কি বলিস।’
তূর্যর কপালের রগ ফুলে উঠেছে আরিয়ানের কথা শুনে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে। আরিয়ান তূর্য কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিয়েছে তূর্য থানায় বসে ছিলো। ওর সামনে বসে আছে একজন জুনিয়র অফিসার নাম মিলন। তূর্য ফোন হঠাৎ ই জোরে আছাড় মেরে দাঁড়িয়ে পরে। মিলন ভয়ে এক কোনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ স্যারকে রাগতে দেখে ও ভরকে গেছে।ওর কোন কথায় কি স্যার রাগ করলো এতোক্ষণ তো স্যার হাসি মুখে ছিলো আচমকা কি এমন শুনলো ফোনে যে এতোটা রেগে গেলো। তূর্য একটা লাথি মারলো চেয়ারে তারপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে উন্মাদের মতো বেরিয়ে এলো। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তূর্য এর যাওয়ার পানে। এমন বিহেভ এর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কেউ।
.
বর্ষা একটা অপরিচিত বিছানায় শুয়ে আছে দেখে চমকে ওঠে বসলো। সব মনে পরতেই আরো ভয়ে কেঁপে উঠলো। এটা কোথায় আছে বুঝতে পারছে না ও এমন ঘটনা আগেও হয়েছে ওর সাথে। ও ভাবছে যত কিডন্যাপ করার সবাই কি আমাকেই করে নাকি। এবার ও কি তূর্য কিডন্যাপ করেছে? বর্ষা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে একটা পোশাকের দিকে। লাল টকটকে শাড়ি। ও উঠে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে শাড়িটা হাতে নিলো। ওয়াও বলে উঠলো। শাড়িটা মারাত্মক সুন্দর। এক দেখায় পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু এইভাবে কিডন্যাপ করে বিছানায় যত্ন সহকারে শুইয়ে রেখেছে আবার শাড়ি খাবার ও রেখে গেছে। এটা তূর্য ছাড়া কেউ হবে ই না। সিউর বাপির উপর রাগ করে তূর্য এমনটা করছে আবার আমাকে কিডন্যাপ করেছে। কিছুটা হাসি পেলেও বর্ষা রাগ করলো তূর্য এর সাথে এমন ভাবে সকালে ভয় দেখানো হয়েছে তাকে আবার বাপির অনুমতি ছাড়া এসব করেছে আজ সামনে আসুক কথায় বলবো।
শাড়িটা রেখে খেতে বসে গেলো। ইদানিং ওর খালি খিদে পায়। এতো পেটুক কি করে হলো ও নিজেই অবাক হয় নিজের কান্ডে। খাবার দেখলে তো না খেয়ে থাকতেই পারবে না তার মধ্যে দশটা বাজে। খিদে ও পেয়েছে। বর্ষা আয়েশ করে খাচ্ছে সাথে দুশ্চিন্তা ও হচ্ছে সকালে বাবা মা গেছিলো কোথায়?
তূর্য এতো সব করলে বাপি জানলে তো কষ্ট পাবে যদি অসুস্থ হয়ে পরে?
খাওয়া শেষ করে চিন্তিত মুখে তূর্য এর অপেক্ষায় বসলো। দরজা জানালা এমন বন্ধ করে রেখেছে কেন ও বুঝতে পারছে না। তবুও শান্ত হয়ে বসে আছে মাঝে মাঝে পায়চারী করছে বাপির চিন্তায়।
হঠাৎ বর্ষার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। ও সাথে সাথে বিছানার হাতল ধরে বসে চোখ বন্ধ করলো কেমন জানি লাগছে। মাথাটা খুব ঘুরছে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে তূর্য বলে চিৎকার করে বিছানায় পরে গেলো।
.
বর্ষা যখন চোখ মেললো নিজেকে হসপিটালের বেডে পেলো তূর্য ওর হাত ধরেই বসে ছিলো। বর্ষা চোখ মেলেই তূর্য কে দেখে উঠে বসলো। আর জিজ্ঞেস করলো,
‘ আমি হসপিটালে কেন? আপনি না আমাকে একটা রুমে আটকে রেখেছিলেন! এখানে নিয়ে এসেছেন কখন। আপনি আবার বাপির অনুমতি ছাড়াই আমাকে কিডন্যাপ করেছেন কেন? বাপি কিন্তু খুব রাগ করবে আপনার কাছে আমাকে আর যেতে দেবে না।’
‘ তুমি শান্ত হও। আমার কাছ থেকে আমার আত্মা কে আলাদা করার কারো সাহস না। তোমার ওই বাপিও ও না।’
‘ আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন বাপির অনুমতি ছাড়া আমার সাথে এমন করবেন না। আমি বাপিকে কষ্ট দিয়ে আপনার কাছে যেতে পারবে না’
‘ জানি তো। ‘
‘ আমার তখন কি যেন হয়েছিলো হঠাৎ মাথা ঘুরছিলো তারপর কিছু মনে নেয়। আপনি কখন এসেছিলেন?’
তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ একটু পরেই। ‘
‘ সামান্য মাথা ঘুরানোতে হসপিটালে এনেছেন কেন? আমার কি বড় কোন অসুখ হলো নাকি? আমার না কয়েকদিন ধরেই খালি খিদে পাচ্ছিল, মাথা ঘুরাচ্ছি শরীর ভাল লাগছিলো! এসব কি কোন বড় রোগের লক্ষণ আপনার মুখটা এমন শুকনো একটু খানি হয়ে আছে কেন? বাপি মাম্মা কি জানে আমি হসপিটালে আ..’
তূর্য বর্ষার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।
‘ চুপ করো জান। এতো কথা বলো না উত্তেজিত হয়না। তোমার কিছু হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর হবে।’
‘ মানে?’ অবাক হয়ে বললো বর্ষা।
তূর্য বর্ষার ঠোঁটের উপর ছোট করে চুমু খেয়ে নেয়।
‘ আরে এই হসপিটালে কি করছেন আপনি। সরুন।’
খানিক রেগে বললো বর্ষা।
তূর্য সরে এসে বললো, ‘ আমার বউকে আমি যেখানে খুশি সেখানে আদর করবো তোমার কি?’
‘ আপনি এতো নির্লজ্জ কেন?’
‘ নির্লজ্জ না হলে কি আমি আজ বাবা হবার খবরটা শুনতে পেতাম।’
বলেই তূর্য বর্ষার পেটের কাছে মুখ নামিয়ে নিলো। আর কামিজের উপর দিয়েই ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।বর্ষা তূর্য এর এমন কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলো। বিস্ময় হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে।
‘ বর্ষা আমরা বাবা মা হতে যাচ্ছি। এমন একটা দিনে এমন খবর শুনতে পারবো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে তোমাকে বুঝাতে পারবো না জান। তোমার এই ছোট পেটে আমার অংশ আছে ভাবতেই আমার অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে। আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না বর্ষা।’
বর্ষা তো থমকেই গেছে ওর মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে যেন। হঠাৎ দরজা দিয়ে একজনকে আসতে দেখে বর্ষার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো। তূর্য তখন ও বর্ষার পেটে মুখ গুজে আছে। বর্ষা ভয়ার্ত চোখ সামনে তাকিয়ে আছে। ওর হাত পা কাঁপছে। বর্ষার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়।
#চলবে……
চলবে……